গল্পের_নাম : #অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব : ৩ ( #crazy_for_you )
Writer : #Mimi_Muskan🖤
|| ||
🍂……..
স্যার চেয়ার থেকে উঠে কাছে আসতে লাগল। নিশি পিছুতে লাগল।আর বলতে লাগল……
– আসলে স্যার, মানে, হয়েছিল”টা কি। মানে স্যার। সরি স্যার আসলে। মানে…!!
– দেওয়ালে পিঠ লেগে গেল। স্যার এক হাত দেওয়ালে রাখছে। ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় নিশি।
.
নিশি”র মনে হয় তার চুল খুলে গেছে। আসলে অফিসে আসার আগে খুব গরম লাগছিল তাই চুল গুলো খোঁপা বেঁধে নেয়। কিন্তু এখন কেন জানি মনে হচ্ছে চুল সব খুলে গেছে। নিশি চোখ তুলে তাকাতেই দেখল স্যার তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তার চুল মুখের ওপর এসে পরছে। স্যার এক হাত দিয়ে চুল গুলো পিছনে গুজে দিয়ে বলেন,,,,,
– এখন পারফেক্ট লাগছে আপনাকে মিস নিশিতা…!
নিশি কিছু বলা”র ভাষা পায় না। তখন স্যার আবার বলা শুরু করে,,,,,
– আমি নিশান চৌধুরী। এই কোম্পানির নতুন এম ডি আর হ্যা আপনার বস। আর আপনি আমার পি এ। Is that clear. ( রাগি কন্ঠে )
নিশি : জ্বি স্যার।।
নিশান : তা আপনি তো খুব ভালো মিথ্যে কথা বলেন মিস নিশিতা।
নিশি : মানে স্যার।
নিশান : রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমার সাথে ঝগড়া করলেন তাই লেট হলো আর এসে সিকিউরিটি”ওপর দোষ দিয়ে দিলেন । বাহ..!
নিশি : স্যার আমি মোটেও ঝগড়া করে নি।
নিশান : আমার তো মনে হয় আপনি ঝগড়াটে…!
নিশি : না আমি ঝগড়াটে। আর না আমি ঝগড়া করেছি। দোষ”টা আপনার ছিলো। আমি শুধু সত্যি”টা বলেছি। ( কোমরে হাত রেখে নিশান”র সামনে গিয়ে ) আর লেট তো আপনার কারনে হয়েছে।আপনি যদি স্কুটি না খারাপ করে না দিতেন তাহলে এতো কিছু হতো’ই । আর সিকিউরিটি জন্যও আমার লেট হয়েছে। তারা আমাকে ভেতরেই আসতে দেয় নি। এখানে আমার দোষ কোথায়…! হুহ…!! আর আপনি আমাকে আপনি আপনি করবেন না তো। কি রকম লাগে শুনতে। আর হ্যাঁ মিস নিশিতা ও বলা লাগবে না। শুধু নিশি বললেও চলবে।আমাকে কেউ নিশিতা বলে না।
নিশান : তুমি আসলেই ঝগড়াটে। এক কথা বলায় কতো কথা বললে আমায়। আর বাই দ্যা ওয়ে ( নিশি’র কাছে যেয়ে । ) তুমি আমাকে ওর্ডার করছো।
নিশি : ( নিশান ওর কাছে আসলে কিছু”টা ভয় পেয়ে পিছু চলে যায় ) না স্যার মানে আমি শুধু বললাম আর কি। ( মাথা নিচু করে)
নিশান : প্রচুর কথা বলো তুমি। Talkative girl.একটা বললে ১০”টা বলো..!
নিশি : সরি স্যার।
নিশান : এইসব আমি পছন্দ করি না। ফার্স্ট দিন তাই কিছু বললাম না। নেক্সট টাইম করলে…..! ( রেগে )
নিশি : না না আর হবে না স্যার। সত্যি..!
নিশান : হুম এখন যেতে পারো। যখন আমার দরকার পরবে আমি বলবো।
নিশি : জ্বি স্যার।
।।
রুম থেকে বের হয়ে….
নিশি : উফ বাবা বাঁচলাম। যেভাবে কাছে আসল মনে তো হচ্ছিল আমাকে খেয়ে ফেলবে । দেখে তো মনে হয়”না এতো রাগি। কিন্তু তাও সাবধান নিশি। উল্টা পাল্টা কিছু করলেই আমি শেষ। প্রথম দিন তাই কোনো মতে বেঁচে গেছি। কেমন রাগি রাগি গলায় বলে……এইসব আমি পছন্দ করি না। ফার্স্ট দিন তাই কিছু বললাম না। নেক্সট টাইম করলে…..! হুহ। এমন ভাবে বলে যেনো উনাকে কেউ ভয় পায়। যতোসব উদ্ভোট কান্ডকারখানা। তারপর আমি নাকি বাচাল কতো বড় কথা। সালা নিজেই তো একটা রামছাগলের বাচ্চা আবার আমায় বলে আমি নাকি বাচাল। উহু।
.
নিশি ধপাশ ধপাশ করে হেঁটে নিজের কেবিনে গেল । সেখানে দিয়া আসলো।
– হেই আমি দিয়া
– আমি নিশি
– নতুন পি এ। রাইট..
– হুম।
– বাট তোমাকে এই পোশাকে ঢুকতে দিলো কিভাবে..?
– জানি না….
– যাই হোক। ফ্রেন্ড…
– ইয়াপ।
এরমধ্যে একটা ছেলে আসলো,,,,,
– হেই আমি রকি….
– হাই আমি নিশি।
– তুমি দেখতে খুব সুন্দর নিশি ।
– ( ফটকা বাজ ছেলে একটা ) আমি জানি। 😒
– তা তো জানবেই। তুমি যে সুন্দরী…!
নিশি অবাক হয়ে দিয়া”র দিকে তাকায়। দিয়া চোখ দিয়ে ইশারা করে চুপ থাকতে বলে……
নিশি : আচ্ছা আমার কাজ আছে। পরে কথা বলি আপনার সাথে..!
রকি : ওকে। I’m waiting for you. ( চলে গেলো )
.
রকি চলে যাওয়ায় নিশি আর দিয়া হেসে দিলো..!
– ও এমনই। সবার সাথে ফ্লাট করে।
– দেখেই বুঝছি..!
– ওর থেকেই দূরে থেকো always.
– হুম।
– আচ্ছা আমার কাজ আছে আমি আসছি।
– হুম।
.
সবাই চলে গেলো। এখন কি করবো। ওহ্ মনে পরলো স্যার কাজ করতে বলেছিল। দেখি কিছু…!
কিছুক্ষণ পর…..
– উফ্ কি বোরিং ইয়ার। ঘুম আসছে খুব। আমি বরং একটু ঘুমাই। বাকি”টা পরে দেখবো।
.
এদিকে নিশান এতোক্ষণ ধরে নিশি”কে দেখছিলো । ওর ক্যাবিন থেকে নিশি”কে দেখা যায়। কিন্তু নিশি কিছু দেখতে পারে না।
নিশান : বাহ ম্যাম তো ঘুমিয়ে গেছে। এখন ডাকব। না থাক একটু পর বারো”টা বাজাবো । জান পাখি…!! আমি আসছি…!
।।।
নিশান কেবিন থেকে ওঠে নিশি”র কেবিনে”র দিকে যায়। দিয়া নিশান”কে দেখেই নিশি”কে ডাকতে থাকে। কিন্তু নিশি ওঠেই না। নিশান নিশি”র কাছে যেতে”ই দিয়া আরো জোরে ডাকতে থাকে। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। নিশান চোখের ইশারায় দিয়া”কে থামতে বলে। নিশান নিশি”র দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয় । তারপর নিজে”ই নিশি”কে ডাকে।
– নিশি…! মিস নিশি..!
– …….
– ( নিশান নিশি”র কানের কাছে যেয়ে আস্তে করে বলে) জান পাখি…!
– ( নিশানের নিঃশ্বাস নিশি”র ওপর পরতেই নিশি”র
হার্টবিট বেড়ে যায়। তার ওপর জান পাখি বলায় তার শরীর শিউরে উঠে । সে লাফিয়ে ওঠে ) কে কে…??
( দিয়া অবাক হয়ে যায়। স্যার কি এমন বললো যাতে নিশি এভাবে উঠে দাঁড়ায় )
– আমি তোমার বস….!
– স্যা……র ।আপনি..!
– দু”মিনিটের মধ্যে আমার কেবিনে আসো। ( ধমকে )
– জ্বি…স্যার।
.
দিয়া : আজ তুই শেষ নিশি….!
নিশি : শাকচুন্নী, মামদো ভুতের নাতনি, ডাকিস নি কেন আমাকে…!
দিয়া : ডাকিনি অনেক ডেকেছি…! যা আর দেরি করিস না।
নিশি : যাচ্ছি।
নিশি গুটি গুটি পায়ে হেঁটে নিশানের কেবিনে”র দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যাবে না যাবে না ভাবছে।
এমন সময় পিয়ন যেয়ে নিশানের রুমে কফি নিয়ে গেলো।
নিশি তা দেখে বললো……..
আচ্ছা স্যার যদি গরম কফি আমার গায়ে ঢেলে দেয় তখন কি হবে। একটা সিরিয়ালে এমন দেখেছি আমি। না না বাবা আমি যাবো না। এর চেয়ে ভালো আমি বাসায় চলে যাই।
এ ভেবে পা উল্টো দিকে ঘুরালে মনে পরল। যদি চলে যায় তাহলে তো জব”টা থাকবে না। সবাই বলবে একদিন ও আমি জব”টা করতে পারলাম না। কি অপমান”টা হবে।
এমন সময় পিয়ন এসে বলে গেল স্যার যেতে বলেছে। কি আর করার। দোয়া- দূরদ তা পারতাম সব পরলাম।
.
নিশি ভিতরে ঢুকে দেখি নিশান দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে। নিশি ভয়ে ভয়ে গেলো নিশানের কাছে । নিশান হঠাৎ করেই নিশির কাছে আসতেই নিশি চোখ বন্ধ করে বলতে লাগল…..
– স্যার প্লিজ আমার গায়ে গরম কফি ঢালবেন না। আমি আর জীবনেও ঘুমাবো না। সত্যি স্যার । ( একদমে বলে ফেলে )
.
নিশান কি বলবে বুঝতে পারল না। বোকার মতো তাকিয়ে রইল। আর নিশি”কে দেখতে লাগল। সে চোখ বন্ধ করে হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে আছে।
এখনও গরম কিছু গায়ে না পরায় নিশি এক চোখ খুলে দেখে নিশান এক ধ্যান এ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। নিশি নিশানের চোখের সামনে হাত নাড়াতে লাগল।।
নিশান : কি হয়েছে এমন কেন করছো….??
নিশি : স্যার আপনি কিছু বলছেন না তাই…!
নিশান : কি বলবো..? তোমার কথা আমার মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে। তোমার মনে হয় আমি তোমার গায়ে গরম কফি ঢালবো। লাইক সিরিয়াসলি..!
নিশি : আসলে স্যার আমি এরকম সিরিয়ালে দেখেছিলাম তাই….!
নিশান : হাউ ফানি..! সিরিয়ালে দেখে দেখে তোমার মা বুদ্ধি ছিল তাও হাঁটু”র নিচে চলে গেছে। Idiot….!
নিশি : সরি স্যার ( মাথা নিচু করে )
নিশান : জ্বি স্যার, সরি স্যার ছাড়া আপনি আর কি বলেছেন আমায়…!
নিশি : ……..
নিশান : চুপচাপ ল্যাপটব নিয়ে আমার রুমে আসো। এখানেই। Right now ( চেঁচিয়ে )
নিশি নিশানের ধমক শুনে এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে বাইরে গিয়ে হাঁপাতে লাগল।
দিয়া : কিরে এমন হাপাচ্ছিস কেন…! স্যার কি বললো…?
নিশি : যেই ধমক”টা আমায় দিলো রে…! আমি তো আরেকটু হলে হার্ট অ্যাটাক করতাম।
দিয়া : তার মানে তুই fired…!
নিশি : maybe no…!
দিয়া : কি বলিস..? এখানে ছোট একটা ভুল করলেই তো fired. আর স্যার তোকে ছেড়ে দিলো..!
নিশি : কিভাবে বলবো বল তো…!
দিয়া : যাই হোক…! কি বলেছে…?
নিশি : ( মাথায় হাত দিয়ে ) হায় আল্লাহ বলেছে ল্যাপটব নিয়ে স্যার’র কেবিনে যেতে..! আর আমি…! ( বলেই আবার দৌড় দিল।
তারপর তাড়াতাড়ি করে নিশানের কেবিনে আসল।
নিশি : May I come in sir…?
নিশান : yes. বসুন এখানে আর কাজ করুন…!
নিশি : স্যার এখানে..!
নিশান : হ্যাঁ এখানে…! এখানে বসে কাজ করুন…..
নিশি : জ্বি স্যার..!
নিশি বসে কাজ করা শুরু করল…! অনেকক্ষণ কাজ করার পর কেন জানি মনে হলো নিশান ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু নিশি তাকিয়ে দেখে নিশান কাজ করছে।
নিশি : ধুর কি যে ভাবছি আমি।স্যার কেন আমাকে দেখতে যাবে। এটা আমার মনের ভুল…!
কিন্তু নিশান ঠিকই নিশি”কে দেখছে। কিন্তু নিশি তা বুঝতে পারছে না। নিশান আড়চোখে শুধু নিশি”কে দেখছে। এই কারনেই তো ওকে এখানে নিয়ে আসা…! শুধু মন ভরে নিশি”কে দেখবে। এতো দিন শুধু ছবি”তেই দেখেছে আজ সামনাসামনি দেখবে।
চলবে…..🖤