অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব : ২

গল্পের_নাম : #অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব : ২( #crazy_for_you )
Writer : #Mimi_Muskan🖤
||||

🍁…….
সারাদিন মজা করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল নিশি”র। রায়হান কল করে আরিফা”কে নিয়ে আসতে বলে। তাই নিশি আরিফা”কে সাথে করে নিয়ে আসে। কলিং বেল বাজাতে”ই ফারহানা বেগম এসে দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে সোফায় বসেন। । কেমন একটা পরিবেশ ঘরে। সবাই কেমন চুপচাপ। নিশি ঘরে”ই ঢুকে না বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। ওর দাঁড়িয়ে থাকা দেখে আরিফা”ও দাঁড়িয়ে থাকে।।

আরিফা : কিরে …?? ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছিস যে,,, ঘরে ঢোক…??
নিশি : আরিফা আমি কি কিছু করেছি বল তো…??
আরিফা : ( ঘাড় ঘুরিয়ে নিশি”রং দিকে তাকিয়ে ) তুই কি করেছিস না করেছিস তা আমি কিভাবে বলবো…?? আর এরকম মনে হওয়ায় কারন”টা কি…??
নিশি : ঘরের পরিবেশ দেখেছিস…?? কেমন নিশ্চুপ।। কিছু তো একটা হয়েছে…!!
আরিফা : তুই করলে কি শুধু কিছু করবি…! বড় কিছু”ই করবি আমি নিশ্চিত…!!
নিশি : তাল গাছের পেত্নী তুই আমার বন্ধু না শত্রু।।।
আরিফা : আরে বন্ধু”ই তো তাই তোর গুনগান করলাম আর কি..!! আচ্ছা তুই কল করে বলেস নি আমাদের আসতে দেরি হবে।।
নিশি : আরে বলেছি তো তখনই বাপি বললো তোকে নিয়ে আসতে…!
আরিফা : তাহলে তুই নিশ্চিত কিছু করেছিস। আমার মনে হয় তোর রাশি”তে শনি ঘুরছে…!! ( হেসে )
নিশি : আমি এখানে টেনশনে মরছি আর ওকে দেখো…!
আরিফা : আচ্ছা তুই যদি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকিস তাহলে কিভাবে বুঝবি কিছু হয়েছে…?? চল ভিতরে।।

.
আরিফা নিশি”কে টেনে ঘরের ভিতর নিয়ে যায়। নিশি”কে ভিতরে ঢুকতে দেখে ফারহানা বেখম রান্না ঘরে ঢুকলেন ।
আর রায়হান আহমেদ খবরের পেপার পড়ছিলেন। নিশি রায়হান আহমেদ”র সামনে গিয়ে…..
নিশি : বাপি…. আরিফা”কে তুমি ডেকেছিলে…!!
.
রায়হান আহমেদ খবরের কাগজ”টা টেবিলে রেখে বললেন…..
রায়হান : বসো আরিফা…!
আরিফা : জ্বি আংকেল..!
রায়হান : কেমন আছো তুমি..? আর তোমার বাবা মা..??
আরিফা : ভালো আছি আংকেল। আর আব্বু আম্মু ও ভালো আছে।। আপনি কেমন আছেন…!
রায়হান : আমার আর ভালো থাকা। আমার মেয়ে যা করলো..? তাতে ভালো থাকবো কি ভাবে…??

.
নিশি চমকে উঠে…..
নিশি : বাপি আমি কিছু করেছি…??
রায়হান : অনেক কিছুই করেছো মামনি…!
আরিফা : ( ফিসফিসিয়ে ) বলেছিলাম না তুই করলে বড় কিছু করবি…!!
নিশি : ( ফিসফিসিয়ে ) চুপ থাক পেত্নী । জিঙ্গেস কর কি করেছি..??
.

আরিফা : আংকেল কি করেছে নিশি…!
রায়হান : (একটা পেপার আরিফা কে দিয়ে) নিজেই পরে দেখো তোমার বান্ধবীরা কান্ড।
.
আরিফা পেপার”টা খুলে পরা শুরু করল। পেপার”টা সে‌ অবাক হয়ে নিশি”র দিকে তাকিয়ে রইল।
আরিফা : নিশি…
নিশি তো আরিফা”র এরকম ভাবে তাকাতে রেগে গেল।এতো সাসপেন্স ভালো লাগে না তার ‌।
নিশি : কি..? কি আছে এই পেপার”রে দেখি…!
নিশি আরিফা”র হাত থেকে পেপার টা নিয়ে পড়া শুরু করল। নিশি নিজেও অবাক। এমন সময় ফারহানা বেগম নিশি”র ঘাড়ে হাত রাখে। নিশি তাকিয়ে দেখে ফারহানা বেগম” র মুখে হাসি। তিনি পায়ের”র বাটি”টা নিশি”কে দিয়ে বললেন,,,
– মিষ্টি মুখ কর আগে…!
রায়হান আহমেদ ও ওঠে আসলেন নিশি”র কাছে। এসে নিশি”র মাথায় হাত রেখে বললেন…..
– তুই আসলেই আমার মেয়ে । আজ তা প্রমান করলি…!
আরিফা ওঠে নিশি”র সামনে দাঁড়িয়ে….
– কনগ্রেচুলেশন ইয়ার। কি করলি তুই এটা। একবারে নকআউট…! চৌধুরী কোম্পানি ‘তে জব”র এপ্লিকেশন কবে করলি তুই বললি না তো..! আর পেয়েও গেলি। কত লাকি তুই জানিস…!
.
নিশি সবার খুশি দেখে খুশি কিন্তু এই জব”টা সে করতে চায় নি। বাপি”র কথায় এমনেতেই ইন্টারভিউ”টা দিয়েছিলাম। তবে অনেক বড় কোম্পানি এটা। যেদিন ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম সেদিন ও অনেক মানুষ এসেছিল ‌। আর তাদের কোয়ালিফিকেশন অনেক ভালো ছিলো । আমি তো ভেবেছিলাম জব”টা পাবো না। পেয়েগেলাম কিভাবে বুঝলাম না। এর মাঝেই বাপি বলে ওঠল……
– আমি জানতাম আমার মেয়ে পারবে…!
নিশি : কিন্তু বাপি আমার কোয়ালিফিকেশন মতে এই জব”টা আমি কিভাবে পেলাম..? এখনও তো অর্নাস কমপ্লিট করে নি।
আরিফা : আরে নিশি শোন। অর্নাস কমপ্লিট করিস নি তো কি..? তোর রেজাল্ট তো খারাপ না। অনেক ভালো আর তুই এটা ডির্সাভ ও করিস…!!
রায়হান : আরিফা ঠিক বলেছে নিশি। আর তুই জব”টা যখন পেয়েছিস আর কি কর..! আমি তো চাই তুই নিজের মতো নিজের জীবন সাজা। লাইফে কিছু কর। আর সেটা এটা দিয়েই শুরু কর ‌।
নিশি : আচ্ছা বাপি। তুমি যখন চাও আমি এই জব”টা করবো। বাট পড়াশোনা..?
আরিফা : তুই পড়াশোনা কবে করিস ‌ । পড়িস তো পরীক্ষার ১ দিন আগে। তাও সবসময় হাই লেভেলের রেজাল্ট ‌। আর জব তো বিকাল ৫ “টা অবদি। বাকি সময় ‌করবি তুই…!
রায়হান : পড়াশোনা”র সমস্যা হলে আমি জোর করবো না।
নিশি : না বাপি আরিফা ঠিক বলেছে। এভাবে আর ‌আলসেমী না করে কিছু করি।
ফারহানা : তাহলে এখন একটু মিষ্টি খা নে….
আরিফা : আরে আন্টি আমি খাবো আমাকে দাও..!
ফারহানা : এই নে…..

।।

রাতে _______
হাতে একটা কফি নিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে নিশি। কালকে থেকে তার জিবন গল্প”টা অন্যরকম। একটু খারাপ লাগছে জিসানের সাথে দেখা হবে না আর। কিন্তু তাতে কি কথা তো হবে..!
হঠাৎ করেই আকাশে চোখ পরল। রাতের আকাশ”টা আসলেই সুন্দর। আকাশে অনেক তারা চিকচিক করছে। ঠান্ডা বাতাস এসে শরীরে লাগছে। এই সময়”টা চোখ বন্ধ করে উপভোগ করা”টা আসলেই ভালো লাগার মতো। নিশি চোখ বন্ধ করে । হঠাৎ তার কানে”জান পাখি” বাক”টা ভেসে আসল। শিউরে উঠলো নিশি”র শরীর। হার্টবিট বেড়ে গেলো তার। নিশি চোখ খুলে আশপাশ তাকাতে লাগল । কিন্তু কেউ নেই..! তাও কেমন জানি লাগছে তার।

।।

সকালে_______
তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে নেয় নিশি। যাই হোক আজ তার দেরি হলে চলবে না। শাওয়ার নিয়ে একটা কালো রঙের থ্রি পিস পরে নিশি। তার সাথে কালো রঙের চুড়ি, সাদা স্টোন বসানো কালো রঙের ছোট কানের দুল, চোখে হালকা কাজল। স্লিকি কালো রঙের ওড়না”টা গলায় নিয়ে নেই নিশি। মাথায় মাঝখানে সিঁথি করে চুল গুলো ছেড়ে দেয়।
তারপর নাস্তা করেই স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে যায় নিশি।
.
অফিসে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই একটা গাড়ি”র সাথে ধাক্কা লাগে নিশি”র । স্কুটি নিয়ে পরে যায়। কোনোমতে ওঠার চেষ্টা করলে কেউ একজন হাত বাড়িয়ে দেয় তার দিকে। সে নিশি”কে তুলে ওঠায়। নিশি ওঠে তাকে পা থেকে মাথা অবদি পর্যবেক্ষণ করে। কালো রঙের স্যুট পরা। ভেতরে একটা সাদা টি – শার্ট দেখা যাচ্ছে। গলায় একটা সাদা টাই। চোখে সানগ্লাস আর চাপদাড়ি ও আছে ‌। চুল গুলো ব্রাউন কালার করা। তবে লাইট না। কিন্তু চু্ল গুলো খুব সিল্ক আর বড়ো। বাতাসে ওড়ছে । নিশি তাকে দেখেই যাচ্ছে। এই প্রথম জিসান ছাড়া অন্য কোনো ছেলে”কে দেখছে নিশি। হঠাৎ করেই সে বলে ওঠে…….
– দেখে চলতে পারো না…??
তার কথায় নিশি”র ধ্যান ভাঙে।
নিশি : সরি..! দোষ”টা আপনার আমার না। চোখ কোথায় রেখে গাড়ি চালান আপনি। আপনার জন্য”ই আমার স্কুটি”র এই অবস্থা। বাপি কালকে”ই এটা আমাকে কিনে দিয়েছিল। আর আপনার জন্য আমার নতুন স্কুটি নষ্ট হয়ে গেল।
– ……( নিশ্চুপ ) শুধু নিশি’র কথা শুনছে আর ওকে পর্যবেক্ষণ করছে। নিশি”র কথা বলা। তার চোখ রাঙানো, তার সিল্কি চুল গুলো বাতাসে ওড়ছে।

নিশি : ( কোমরে হাত রেখে তার সামনে গিয়ে ) কি হলো কথা বলছেন না কেন..? নাকি নিজের দোষ বুঝতে পেরেছন। কোনো”টাই তো বলছেন না। আপনারা বড়ো লোক”রা তো এমনিই। রাস্তায় এক্সিডেন্ট করে চলে যাবেন কিন্তু তাতেও আপনাদের কোনো দোষ নেই….!! ( কি ব্যাপার এতো কিছু বলছি উনি কিছু বলছেন না কেন? )
.

হঠাৎ করেই সে চোখের সানগ্লাস খুলে নিশি”র কাছে আসতে লাগল। নিশি ভয়ে পিছুতে লাগল। নিশি”র হার্টবিট বাড়তে থাকে।
নিশি : আরে উনি এমন ভাবে এগুচ্ছে কেন। ( আশপাশ তাকিয়ে ) কেউ তো নেই রাস্তায়। যদি কিছু করে ফেলে। কিছু করলেই আমি চিৎকার করবো হুহ।‌।
.
একটা সময় এমন অবস্থা হলো পেছনে স্কুটি”র আর পেছনে যাওয়ার আর জায়গা নেই। কিন্তু সে তো সামনে এসতে থাকে। ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিল নিশি। হঠাৎ করেই বুঝতে পারল সে নিচে নিশি তাঁকিয়ে দেখল সে তার স্কুটি ওঠিয়ে দিচ্ছে।
নিশি : ( মাথায় বাড়ি দিয়ে ) কী না কি ভাবছিলাম…!
.

সে স্কুটি”টা ওঠিয়ে দিয়ে নিশি”র হাতে টাকা দিয়ে বলল,,,,,
– তা ক্ষতি হয়েছে ঠিক করিয়ে নিও।
তারপর গাড়িতে গিয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট করে চলে গেল।
নিশি হা করে তাকিয়ে আছে। কিছু বলার সুযোগ”ই পেল না সে।
রাগে টাকা গুলো মুঠ করে,,,
– দেখে নেবো আপনাকে…!!
.
এদিকে সে গাড়ি চালাতে চালাতে বলল…..
– দেখে নিও জান পাখি। এখন তো শুধু আমাকেই দেখবে তুমি..!!

.
স্কুটি ঠিক করে অফিসে আসতে আসতে অনেক লেট হয়ে গেল। এর মধ্যে লাগল আরেক ঝামেলা। সিকিউরিটি আমাকে ঢুকতে দিচ্ছে না ‌। কারন আমি ড্রেস আপ করে আসে নি। অফিসে”র নিয়ম সবাই কালো রঙের স্যুট পরবে। যখন ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম তখন দেখেছি মেয়েরা কালো রঙের স্যুট পরেছে, চুল গুলো উঁচু করে ঝুটি করা,সবার ঠোঁটে লাল রঙের লিপস্টিক আর চোখে সানগ্লাস। তখন খুব ইচ্ছে করছিল এভাবে যদি আসতাম। কিন্তু আমি তো জব”টা কাল”ই পেলাম। আর আজ”কেই আসতে হলো। এতো কম সময়ে”র মধ্যে ড্রেস টা গুছাতে পারি নি। কিন্তু আমি তো ম্যানেজার”কে কাল রাতে”ই এ কথা বলেছি। উনি বলেছেন সমস্যা নেই। অন্য ড্রেস পরে চলে আসতে। কিন্তু এখন তারা তো আমায় ‌ঢুকতে দিচ্ছে না। আর না ভেবে ম্যানেজার”কে কল করলাম। উনি এসে আমাকে নিয়ে গেল। একটু বকাও দিলো। কিন্তু বেশি না ‌। এমনে”তেই লেট আর তার মধ্যে জব”টা হলো স্যার এর পি এ। স্যার এসে পরেছে কিন্তু তার ক
পি এ এখনো আসে নি। ভাবতেই অবাক লাগছে। আজকেই না বের করে দেয় আমায়।
.
স্যার এর দরজায় নক করলাম। উনি ভিতরে যেতে বললেন। দেখি চেয়ারে উল্টো মুখ করে বসে আছে। মনে মনে ভাবলাম ভালোই এই রাগী চেহারা”টা দেখা লাগবে না আর।
স্যার : লেট হলো কেন মিস……
নিশি : স্যার নিশিতা আহমেদ। আপনার নতুন পি এ।
স্যার : পি এ কি স্যার এর পরে অফিসে আসে মিস নিশিতা…??
নিশি : সরি স্যার আসলে … ( না রাস্তার কথা বলা যাবে না। ) আমার ড্রেস আপ এর জন্য সিকিউরিটি আমাকে ঢুকতে দিচ্ছিল না তাই…!
স্যার : বাহ খুব ভালো মিথ্যে বলতে পারেন আপনি মিস নিশিতা।
বলেই চেয়ার ঘুরাল । আর তাকে দেখে আমি আমার সব কথা ভুলে গেলাম। ৪২০ ভোল্টের একটা ঝটকা খেলাম। এখন বুঝলাম রাস্তায় তখন কেন কিছু বলে নি। কি চালাক এই ব্যাটা…!!
স্যার চেয়ার থেকে উঠে কাছে আসতে লাগল। নিশি পিছুতে লাগল।আর বলতে লাগল……
– আসলে স্যার, মানে, হয়েছিল”টা কি। মানে স্যার। সরি স্যার আসলে। মানে…!!
দেওয়ালে পিঠ লেগে গেল। স্যার এক হাত দেওয়ালে রাখছে। ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় নিশি।

চলবে…..🖤

( কালকে অনেক ব্যস্ততার কারনে গল্প দিতে পারিনি। এখন থেকে রেগুলার গল্প পাবেন। কেমন লাগল জানাবেন ) ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here