অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব : ১

হঠাৎ করেই জ্ঞান ফিরল নিশি”র । সে বুঝতে পারল একটা বিছানায় শুয়ে আছে সে। কিন্তু তার সাথে আরেক একটা জিনিসও সে বুঝতে পারছে। আর তা বুঝতে পেরে”ই তার শরীর শিউরে উঠে। তার শরীরে একটা চাদর ছাড়া আর কিছুই নেই। মাথায় অসহ্য যন্ত্রনা। চোখেও সব ঝাপসা দেখছে। নিজেকে একবারে অসহায় মনে হচ্ছে তার। কোনোমতে বিছানা ছেড়ে ওঠার ব্যর্থ চেষ্টা করছে সে। এমন সময় আকাশে জোরে মেঘ ডাকতে শুরু করল। মনে হচ্ছে বাইরে খুব জোরে বৃষ্টি হচ্ছে । নিশি একটু উঁচু হয়ে ঝাপসা চোখেই সামনে কাউকে দেখতে পেল। কেউ একজন আছে সামনে,হয়তো তার দিক থেকে উল্টো করে দাঁড়িয়ে আছে বেলকনিতে। তার খালি পিঠ দেখা যাচ্ছে। নিশি আরেকটু ওঠতে যাবে তখনই আবার পরে যায় বিছানায়।
নিশি : আহ্….!!
.
নিশি”র আওয়াজ শুনে সে সামনে ঘুরে নিশি”র কাছে আসলো । নিশি এখনও তাকে ঝাপসা দেখছে। সে এসে নিশি”র গালে হাত দিয়ে বলতে থাকে…..
– জান পাখি….!! জান পাখি…..!!
নিশি শুধু তার আওয়াজ শুনতে পারছে। সে তাকে জান পাখি বলে ডাকছে। তার ডাকে নিশি হার্টবিট বাড়তে থাকে। তার ছোঁয়ায় নিশি”র শরীর শিউরে উঠতে।

।।

ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে পরল নিশি। এটা একটা স্বপ্ন ছিলো। এই প্রথম এরকম একটা স্বপ্ন দেখল সে। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে আর পুরো শরীর কাঁপছে। এই “জান পাখি” ডাকটা তার কানে ভেসে আসছে। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। কি আছে এই “জান পাখি” ডাকে। এই ডাক”টায় জেনো পাগল করা ভালোবাসা লুকিয়ে আছে।‌ কিন্তু এটা কেমন স্বপ্ন। কি অর্থ এই স্বপ্নের। ভাবতে থাকে নিশি।
.
ফজরের আজান ভেসে আসে নিশি”র কানে। তার মানে এটা ভোরের স্বপ্ন। আর ভোরের স্বপ্ন তো সত্যিই হয়। তাহলে কি এটাও। না না আমি এইসব কি ভাবছি…!! এরকম কিছু না।
আর এইসব না ভেবে ওযু করে নামাজ পরে নিলো নিশি।
তারপর পড়ার টেবিল বসে ভাবতে লাগল। কিন্তু স্বপ্নের কথা নয়। আজকের কথা। আজ তার ভার্সিটিতে প্রথম দিন। প্রথম বর্ষের স্টুডেন সে । ভাবতেই ভালো লাগছে এতোদিন পর স্বপ্ন পূরণ হবে। আর নিশি সেই ভার্সিটিতে পরবে ‌যেই ভার্সিটিতে জিসান পরে। জিসান এবার চতুর্থ বর্ষের স্টুডেন। ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড ও বলা যায়। কিন্তু বন্ধুদের বেশি দিন হয় নি। এই দু”বছর ‌হবে । কিন্তু এই দু”বছরে জিসান নিশি”র প্রিয় মানুষ”টার জাগয়া নিয়ে ফেলেছে। জিসান”কে তার খুব ভালো লাগে। কিন্তু আজ পর্যন্ত বলতে পারে নি শুধু বন্ধুত্বের ভয়ে। তাই বা কম কি…!!জিসান খুব কেয়ার করে তার । এতেই সে অনেক খুশি।। এইসব ভাবতে ভাবতে আবারও ঘুমিয়ে পরল সে।

।।

সকাল ৭টা_____
মা”র ডাকে ঘুম ভাঙল নিশি”র । নিশি”র মা ফারহানা বেগম শিক্ষিত একজন মহিলা তিনি। তিনি একজন গৃহিণী। নিশি তার একমাত্র মেয়ে। তার স্বামী রায়হান আহমেদ বেসরকারি একটা ব্যাংকে চাকরি করে। মধ্যবিও পরিবারের মেয়ে নিশি । কিন্তু তার পরিবারে খুশি”র সীমা নেই।
নিশি ঘুম থেকে উঠেই তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নেয়। কোনোমতে আজ লেট হলে চলবে না তার। একটা সাদা রঙের লং ফ্রক পরে নেয় নিশি। তার সাথে একটা স্কার্ফ গলায় ঝুলিয়ে নেয়। চুল গুলো কোমর ছাড়িয়েছে। চুল গুলো ছেড়েই রাখে সে। ঠোঁটে”র নিচ বরাবর একটা তীল তার মুখের হাসি”কে ফুটিয়ে তুলে। ডান হাতে একটা ব্রেসলেট আর বা হাতে একটা চেইন ঘড়ি পরে সে। চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দেয়। তার ঠোঁট গুলো এমনিতেই গোলাপি । তাও সব দিক থেকে আজ পারফেক্ট দেখাতে হবে তাকে।
.
কিছুক্ষণ”র মধ্যেই এসে পরে নাস্তা পরতে। রায়হান আহমেদ খবরের কাগজ পরছিলেন। নিজের ছোট্ট পরি”টাকে আসতে দেখে একগাল হাসি নিয়ে বলে…..
– গুড মর্নিং মামনি….!!
– গুড মর্নিং বাপি…!! ( রায়হান আহমেদ”দের গলা জড়িয়ে )
– আজকে তোমার প্রথম দিন ভার্সিটিতে…!! এতোদিন যেমন আমার মান সম্মান রেখেছো এখনও সেভাবে রেখো।।
– yep বাপি। তোমার সম্মান যাবে তোমার মেয়ে এমন কাজ কখনো করবে না।
– I know মামনি। নাও নাস্তা করো ‌ তারপর আবার বেরোতে হবে। নাহলে লেট হয়ে যাবে।।
– ওকে বাপি।
নিশি যেয়ে টেবিলে বসল। ফারহানা বেগম এসে নাস্তা দিয়ে গেলেন তাকে। নিশি টেবিলে তার হাতে”র কাছে একটা চাবি দেখতে পেলো। কিন্তু এটা কিসের চাবি। চাবি”টা হাতে নিয়ে রায়হান আহমেদ”কে জিজ্ঞেস করতে লাগল।।

– বাপি এটা কিসের চাবি।
– তোমার সারপ্রাইজ মামনি। হেটে হেটে যাবে নাকি ভার্সিটিতে।।
– তার মানে এটা স্কুটি”র চাবি।।
– হ্যাঁ।
– thank you bapi. And Love you soo much. You are the great. তুমি জানো আমার এটা কতো দিনের স্বপ্ন ছিলো।
– হুম মামনি। খুশি এবার তুমি…!.
– এতোগুলা।।
– আচ্ছা বাবা আর মেয়ের অনেক কথা হয়েছে এবার খেয়ো নাও পরে তো লেট হয়ে যাবে।
– হুম মা খাচ্ছি।

নিশি খেয়ে দেয়ে বের হয়ে গেল। নতুন স্কুটি চালিয়ে। অনেক দিনের”র শখ ছিলো তার। মাঝে মাঝে তার বেস্টু আরিফা”র টাহ চালাতো। এখন তার নিজের টাই আছে। আর কোনো চিন্তা নেই।
সঠিক সময়”ই এসে ভার্সিটিতে এসে উপস্থিত হলো নিশি। এসেই দেখল আরিফা ক্যাম্পাসে বসে আছে। নিশি তার কাছে গেলো।
আরিফা : বাহ ম্যাম আজ সঠিক টাইমে এসেছে…!!
নিশি : আরে মেরি আরু পাগলি আজ প্রথম দিন লেট করি কিভাবে বলো তো।
আরিফা : তা তো বুঝলাম কিন্তু আজ এতো সেজে গুজে কাকে দেখাতে এসেছো।
নিশি : সাজগোজ করলাম কোথায়। আর কাকেই বা দেখাবো।
আরিফা : আমার জিসান দুলাভাই আছে না তাকে।
নিশি : আরিফা”বাচ্চা । তোকে তো আজ আমি দাঁড়া তুই…!!
.

আরিফা আর নিশি দৌড়াতে লাগল। নিশি আরিফা”কে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরাল । এরপর হাঁপিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। নিশি এসে আরিফা”র ঘাড়ে হাত রেখে হাঁপাতে লাগল।
.
ঠিক এইসময় ৩”টা‌ বাইক ডুকল ভার্সিটিতে। সবার নজর তাদের দিকে। তারা বাইক থামিয়ে একে একে নিজের হেলমেট খুলতে লাগল। সবার মতোই নিশি আর আরিফা তাদের দিকে তাকিয়ে রইল। প্রথমে মেহেদী আর তারপর রৌদ্দুর হেলমেট খুলে । তাদের পরনে কালো জ্যাকেট আর কালো জিন্স।
সবার শেষে হেলমেট খুলে জিসান । তার ফর্সা গায়ের রং, এলোমেলো স্লিকি চুল। একটা কালো রঙের জ্যাকেট আর জিন্স পরা সে। সবার তাকিয়ে আছে তার দিকে। আর রইল তার মেয়েদের পাগল করা মিষ্টি হাসি ।
নিশি কতোক্ষণ এক‌ধ্যানে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। আরিফা তা দেখে খোঁচা মারে নিশি”কে ……!!!
.

আরিফা : দেখ তোর প্রিয় মানুষ”টা এসে পেরেছে। সবাই কিভাবে গিলে খাচ্ছে তাকে ‌।
নিশি লক্ষ্য করলো আসলেই সবাই জিসান”কে কিভাবে যেন দেখছে। আর জিসান কি সুন্দর হেসেই যাচ্ছে। আজব তো এতো হাসছে কেন।

নিশি রেগে নিচে চলে আসে। জিসান মেহেদী”র‌ সাথে কথা বলতে থাকে। তখন রৌদ্দুর জিসান”কে ইশারায় নিশি”র দিকে তাকাতে বলে……
জিসান দেখে নিশি আসছে তার কাছে। দেখতে সুন্দর”ই লাগছে তাকে। কিন্তু না নিশি জিসান”রং কাছে এসেও ওর সাথে কথা না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। জিসান খুব রেগে যায় । সে ও নিশি”র পিছু পিছু যায়। নিশি”কে ডাকতে থাকে। কিন্তু নিশি কোনো উওর দেয় না। জিসান রেগে গিয়ে নিশি”কে টেনে দেওয়ালে আটকে দাঁড়ায়।
জিসান : কি হলো কথা বলছিস না কেন তুই…??
নিশি : তোর কি এতো সেজে আসা খুব দরকার। কেন সেজে আসোস তুই এতো হুম।
বলেই জিসান”রং চুল গুলো এলোমেলো করে দেয় ‌।
জিসান : আরে আরে কি করছিস…??
নিশি : একদম ঠিক কাজ করছি…??
জিসান : তুই আমার হেয়ার স্টাইল নষ্ট করে দিছিস ‌।
নিশি : আর সাজিস এভাবে আবার করে দেবো…!!
জিসান নিশি”কে দেওয়ালে ঠেকিয়ে বলে,,,,,,
– ওয়েট এখন আমার পালা ‌।
– জিসান না।
– তুই না বললেই হলো ‌
– জিসান…..
জিসান ও নিশি”র চুল গুলো ইচ্ছে মতো এলোমেলো করে দিলো।
এভাবেই দু’জন মিলে মারামারি করতে থাকে সারাদিন।।

।।

এদিকে নিশান বসে একে একে নিশি”র ছবি দেখতে থাকে। আজকে জিসান”র সাথে যখন ছিল সেই সব ছবি। নিশান ছবিগুলো দেখে বলতে থাকে…….
– জান পাখি….!! যত পারো মজা করে নাও। আর‌ তা শুধু আজকের জন্য”ই। কারন কাল থেকে তোমার দুনিয়াতে শুধু আমি ছাড়া আর কেউ থাকবে না।।

#চলবে……🖤

গল্পের_নাম অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব : ১ ( #crazy_for_you )
Writer : #Mimi_Muskan🖤

( ২য় পর্ব আপনাদের রেসপন্সের ওপর ভিত্তি করে দাওয়া হবে )।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here