অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব_১৩

গল্পের_নাম : #অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব_১৩ ( #crazy_for_you )
লেখনিতে :#মিমি_মুসকান

কেবিনে গিয়ে নিশি আর কিছু বলে না। চুপচাপ বসে কাজ করে আর চুল ও খোঁপা বাঁধে না। নিশান ও এসে বসে পরে। প্রায় অনেকক্ষণ পর কাজ শেষ হলে নিশি এসে নিশান’কে দেখায়।

“নিশান : হুম ঠিক কাল এভাবেই তুমি মিটিং এ সবার সামনে এটা প্রেজেন্ট করবে ঠিক আছে।

“নিশি : হুম। স্যার একটা কথা ছিল?

“নিশান : হুম..

“নিশি : পরশু আমার ছুটি দরকার ছিল…

“নিশান : ( নিশি’র কথা শুনে নিশান’র বুকের পা পাশ’টা যেন খুব ব্যাথা করে। বার বার মনে হচ্ছে তার জান পাখি’কে হারিয়ে ফেলবে সে। )

“নিশি : স্যার…

“নিশান : হুম

“নিশি : আমার ছুটি..

“নিশান : হুম ঠিক আছে ।

“নিশি : ধন্যবাদ স্যার ( ব্যাপার কি আজ এতো সহজে মেনে গেলঝ যে। জিজ্ঞেস ও করলো না কারন’টা কি)

“নিশান : কালকে একটু আগেই আসতে হবে তোমাকে। এই ধরো ৭ টায়..

“নিশি : এতো সকালে….

“নিশান : হুম কারন মিটিং টা শহরের বাইরে হবে তাই..

“নিশি : ওহ্ আচ্ছা। ( এতো সকালে কে আমাকে ওঠাবে! আম্মু….)
.
নিশি’র অফিস টাইম শেষ হওয়ায় সে চলে যায়। নিশান ‌টেনশেন ব্যস্ত হয়ে পরে কি করবে সে।‌ তার ভালোবাসার কি হার মেনে যাবে। কি হবে তাহলে। হারিয়ে ফেলবে নিশি’কে সে।‌

“নিশান : আচ্ছা জান পাখি’কি সত্যি’ই ভালোবাসে জিসান’কে । কিন্তু আমি ওর চোখে জিসানের জন্য কোনো ভালোবাসা দেখতে পায়নি কেনো। নাকি এটা শুধু ওর আবেগ। জানি না আমি! কিন্তু আমার ওকেই চাই। বাঁচতে পারবো না ওকে ছাড়া। আমার অক্সিজেন জান পাখি। তাকে ছাড়া কি করে থাকবো আমি।।

।।

পরের দিন…
নিশি ‌সকালে ঠিক সময়ে চলে আসে অফিসে। নিশান গাড়ি’র সামনে দাঁড়িয়ে দেখে দূর থেকে নিশি আসছে। নিশি আজ রিক্সায় করে আসে। কালো রঙের একটা জর্জেটের শাড়ি পরা সে। দু’হাতে কালো রেশমী চুড়ি,চোখে ঘন কালো কাজল,কানে কালো রঙের স্টোন বসানো কানের দুল। মাথার চুল গুলো মাঝে সিঁথি করে ছেড়ে দিয়েছে। ঠোঁটে কিছু দেয় নি আজ তাও দেখতে বেশ লাগছে নিশি’কে।
.
নিশি সামনে এসে চুটকি বাজাতেই হুশ ফিরল নিশানের। এতোক্ষণ তার জান পাখি’কে দেখতে বিভোর ছিল সে।

“নিশি : স্যার যাবেন না।

“নিশান : হুম গাড়িতে বসো।
.
নিশি আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে বসে পরল। নিশান ও গাড়ীতে ওঠল। প্রতি বারের মতো গাড়িতে সিট বেল বেঁধে দেয় নিশির। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে যেতে থাকে নিজ গন্তব্যে। নিশান আয়নায় উঁকি মেরে বার বার নিশি কে দেখছে। কিন্তু নিশি’র সেদিকে মন নেই। সে তার মতো বসে বাইরের পরিবেশ উপভোগ করছে। সকাল সকাল বাইরে এরকম ঠান্ডা পরিবেশ খুব ভালো লাগে। সকালে ঠান্ডা থাকলেও একটু পর’ই তা গরম মানে ব্যস্ত হয়ে পরবে।‌ যাই হোক এরকম একটা পরিবেশে প্রিয় মানুষ’টার সাথে সময় কাটানোর মজা’টাই আলাদা। বাইরে সতেজ ঠান্ডা বাতাস, পাখির গান শোনা যাচ্ছে। অন্যদিন হলে তো গাড়ির হর্ন ছাড়া কিছুই শোনা যেত না। হঠাৎ’ই নিশি’র চোখে ঘুম নেমে আসে। সে ঘুমিয়ে পরে। নিশান আলতো করে তার ঘাড়ে নিশি’র মাথা রেখে দেয়। নিশি ঘুমাতে থাকে।
.
সকাল ৯ টা..

নিশান হঠাৎ করেই একটা রেস্টুরেন্টে সামনে গাড়ি থামায়। নিশি ঘুম থেকে ওঠে যায়। ভালোই একটা ঘুম দিল সে।‌ সে তাকিয়ে দেখে নিশানের ঘাড়ে তার মাথা। তাড়াতাড়ি সরে যায় সে।

“নিশি : স…সরি স্যার..

“নিশান : ঠিক আছে। ঘুমিয়ে ছিলে তাই!

“নিশি : আচ্ছা স্যার এসে পরেছি আমরা..

“নিশান : ঘুম ভাঙল তোমার!

“নিশি : হ্যাঁ কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি আমরা এসে পরলাম কি করে..

“নিশান : ঘুমের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে ধুরি ড্রাইভ করতে করতে ( দাঁত বের হেসে )

“নিশি : ( মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে ঘুরে )

“নিশান : আরে সকালের নাস্তা করতে। আমাদের যেতে আরো সময় লাগবে।‌এখান থেকে কিছু খেয়ে নেই then আবার রওনা হবো।।

“নিশি : ওহ্ আচ্ছা। কিন্তু স্যার আমাদের যদি যেতেই এতোক্ষণ লাগে তাহলে আসতে তো আরো সময় লাগবে…

“নিশান : ভেবো না তোমাকে বাসায় দিয়ে আসবো। এতো ভাবার কিছু নেই । তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবো না আমি!

“নিশি : আমি সেটা বলি নি..

“নিশান : হুম চলো এখন।
.
রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুইজনে খাবার খেয়ে আবার রওনা দেয়। নিশি’র এভাবে বসে থাকতে বিরক্ত লাগছে। এতোক্ষণ তো ঘুমালো আবার ঘুমাবে । না থাক এর চেয়ে ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করা যাক। ফোনে বেশি কিছু নেই শুধু কয়েকটা গেইম আছে। নিশি বসে বসে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলতে লাগল। ভালোই লাগে গেইম টা খেলতে। এর মধ্যে নিশান গান বাজাতে থাকে।
.
সকাল ১২ টায়…

নিশান আর নিশি চলে এসেছে নিজের গন্তব্য। অনেকটা জার্নি করে আসে তারা। মিটিং’টা একটা রেস্টুরেন্টে ছিল কিন্তু রেস্টুরেন্টে খুব সুন্দর করে সাজানো ছিল। মনে হচ্ছিল একটা ফুলের বাগানে এসেছে তারা।‌ পুরো রেস্টুরেন্ট জুরে শুধু ফুল আর ফুল। গোলাপ ফুলের সংখ্যা বেশি। এরকম একটা জায়গায় এসে দুইজনই মুগ্ধ হয়।‌ নিশি আর নিশান গিয়ে মিটিং শুরু করে। নিশি খুব সুন্দর করেই প্রেজেন্টেশন করে। নিশান খুব খুশি হয়। সে এরকম কিছু একটাই আশা করেছে নিশি থেকে।
মিটিং প্রায় অনেকক্ষণ চলে। নিশি আর নিশান মিটিং শেষ করে লাঞ্চ করে বের হয়।‌ নিশি’র গন্তব্য এখন বাসা কিন্তু নিশানের গন্তব্য অন্যকিছু।
.
বিকাল ৪ টা…

নিশান ড্রাইভ করছে হঠাৎ নিশি চেঁচিয়ে উঠল….

“নিশি : স্যার স্যার…

“নিশান : কি হয়েছে ( ড্রাইভ থামিয়ে)

“নিশি : ফুচকা খাবো ( দাঁত বের করে হেসে )

“নিশান : তাই বলে এভাবে চেনানোর কি আছে আস্তে বললেই তো হয়..

“নিশি : চলুন না.. ( বাচ্চা দের মতো করে )

“নিশান : আচ্ছা পাশে একটা রেস্টুরেন্ট আছে চলো ওখানে..

“নিশি : না না ( মাথা নাড়িয়ে )

“নিশান : কেন খাবে না এই না বললে খাবে

“নিশি : আমি ওখানের টা খাবো ( রাস্তার ওপারে হাত দেখিয়ে)

“নিশান : ওদিক তাকায় ( দেখল একটা ছোট ফুচকার দোকান )না ওগুলো ভালো না । তোমাকে আমি অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছি।

“নিশি : না গুলোই ভালো আমি খাবো! ওগুলো খুব ইয়ামি ইয়ামি..

“নিশান : নিশি না..

“নিশি : ( গাড়ি থেকে নেমে ) আপনি থাকুন আমি গেলাম

“নিশান : নিশি শোন..
.
নিশান কিছু বলার আগেই নিশি চলে যায়। নিশি রাস্তার এপার থেকে ওপারে যাবে কিন্তু কি করে। এভাবে রাস্তা পার হতে তার খুব ভয় করে কিন্তু ফুচকা সে খাবেই। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে ওই রামছাগল কখন জানি আবার ছোঁ মেরে নিয়ে যায় আমাকে। তার চেয়ে ভালো আমি আগেই ওই পারে চলে যায়।
নিশি ওপারে যাওয়ার জন্য পা বাড়াই। অর্ধেক পথ খুব ভালো করে আসলেও এখন সে পথের মাঝখানে। ভয়ে তার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। যাবার জন্য আবার হাঁটা শুরু করলেই পাশে তাকিয়ে দেখে একটা গাড়ি আসছে।‌নিশি ভয়ে সেখানেই চোখ বন্ধ আর হাত মুঠ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
.
হঠাৎ’ই তার মনে হলো সে কেউ’র বুকে। নিশি চোখ খুলে ওপরে তাকাতেই নিশানের খোঁচা খোঁচা দাড়ি দেখতে পায়।
“নিশি : ইস্ আমি কি ছোট তার থেকে। সে কতো লম্বা আমার থেকে আমি এখনও তার বুকের মধ্যে পরি। এ্যা মাআআ… এই রাম ছাগল স্যার এতো লম্বু কেন ।

নিশি খেয়াল করলো নিশান ওকে এক হাত দিয়ে খুব চেপে ধরে আছে। কিন্তু নিশান রাগে তাকিয়ে আছে কিন্তু তার দিকে না নিশি’র পিছনে। নিশি’র এবার বোধ হলো আসলে ব্যাপার’টা কি হচ্ছে। এতোক্ষণ’এ তার তো গাড়ি’র নিচে থাকার কথা সে নিশানের বুকে কি করছে। নিশি পিছনে তাকিয়ে দেখল ওই গাড়ি’টা থেমে গেছে নিশান তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নিশান’কে দেখে মনে হচ্ছে সে মারাত্মক রেগে আছে। কিন্তু সেই গাড়ি’র কাছে অনেক লোকজন। তাদের সবার পরনে এক ধরনের পোশাক। দেখে মনে হচ্ছে কারো গার্ড। তারা বেধোরে সেই গাড়ি’র ড্রাইভার’কে মারা শুরু করল।

নিশি এইসব দেখে ভয়ে নিশানের শার্ট আঁকড়ে ধরল। নিশান এবার নিশি’র দিকে তাকাল। নিশি প্রচুর ভয় পেয়ে আছে। নিশান ওই লোকগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলল…

“নিশান : That’s enough…
নিশানের বলার সাথে সাথে লোকগুলো মারা বন্ধ করে দেয়। গাড়ি’র ড্রাইভার কে মারা থামিয়ে দিয়ে নিশানের কাছে একজন আসে। নিশান তাকে বলে….
“নিশান : হসপিটালে নিয়ে যাও ওকে।

নিশি নিশানের কথা শুনে বিড় বিড় করে বলতে লাগল…
“নিশি : আরে যদি হসপিটালে নিয়ে যাবে তা এতো মারা’র দরকার কি ছিল। শুধু শুধু লোকটাকে কতো মার খাওয়ালো।

নিশান নিশির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল..
“নিশান : তোমার জন্যই খেয়েছে।
নিশানের কথা শুনে নিশি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল। সে নিশি’র কথা কিভাবে শুনল। আর তার জন্যই তাকে মারল কেন। নিশি আর না ভেবে জিজ্ঞেস করে..
“নিশি : আমার জন্য তাকে মারলেন কেন?

“নিশান : সেটা যদি তুমি বুঝতে তাহলে তো কোনো কথাই ছিল না। ( আমার জান পাখি’র ক্ষতি করতে চেয়েছে আর ওকে আমি ছেড়ে দেবো এমন’টা কি করে হতে পারে। আরেকটু দেরি হলেই সব শেষ হয়ে যেত যদি না তখন আমি আমার জান পাখি’কে গাড়ি’র সামনে থেকে সরিয়ে আনতাম। )

“নিশি : মানে?

“নিশান : কিছু না ।
বলেই নিশান নিশি’র হাত ধরে টানতে টানতে তাকে ফুচকার দোকানে নিয়ে বসাল।

নিশান জোরে ফুচকাওলাকে ডাক দিয়ে বলেন ১৫ প্লেট ফুচকা এখনই দিতে। নিশি’র প্রায় বেহুঁশ হওয়ার মতো অবস্থা। ১৫ প্লেট ফুচকা! কে খাবে এতোগুলো।

“নিশি : এতো ফুচকা কে খাবে!

“নিশান : কেন? তুমি খাবে.. অনেক খাওয়ার শখ তো তোমার যার জন্য শহিদ হতে গিয়েছিলে তা খাবে না কেন?

“নিশি : আমি কি এতো ফুচকা খাবো বলেছিলাম!

“নিশান : খেতে হবে খাওয়া ছাড়া এখান থেকে ওঠলে তোমার খবর আছে মাইন্ড ইট! ( রেগে )
.
নিশানের রাগ এখনও কমেনি। রাগে শরীর জ্বলছে তার ভাবতেই পারছে সে যদি আরেকটু দেরি করে আসত তাহলে কি হতো। নিশি’র দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। যেন এখনই গিলে খাবে ওকে। নিশি নিশানের চোখ রাঙানো দেখে গুটিশুটি মেরে সেখানেই বসে আছে। আজ জন্মের মতো শিক্ষা হয়েছে তার আর জীবনে ফুচকা খেতে চাইবে না সে।

চলবে…..

আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/385851129803332/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here