গল্পের_নাম : অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব_২৫ ( #crazy_for_you )
লেখনিতে :#মিমি_মুসকান
নিশান বাড়ি থেকে বার হবার পর’ই আরিয়ান আরিফা’কে হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসে।
“আরিফা : আরে কি হচ্ছে কি ছাড়ুন আমাকে
“আরিয়ান : নিশি কোথায় বলো? ( আরিফা’র হাত শক্ত করে ধরে )
“আরিফা : নিশি কোথায় আমি জানি না। আর জানলেও আপনাকে বলবো না
“আরিয়ান : আমি জানি তুমি জানো। সুন্দর মতো বলে দাও নিশি কোথায়।
“আরিফা : বললাম না তো জানি না।
“আরিয়ান : ( আরিফা’র হাত চেপে ধরে ) আরিফা!
“আরিফা : আরিয়ান আমার লাগছে ছাড়ুন আমাকে
“আরিয়ান : নিশি কোথায় আরিফা!
“আরিফা : বলবো না।
“আরিয়ান : ( আরিফা’র ফোন টা নিয়ে ) আর বলা লাগবে না তোমার। তোমার ফোন এখন আমায় বলবো নিশি কোথায়? ( আরিফা’কে ছেড়ে দিয়ে )
“আরিফা : আ..আমার আমার ফোন দিন
“আরিয়ান : সেটার আশা ছেড়ে দাও আরু পাখি ( বাঁকা হাসি দিয়ে চলে যায় )
“আরিফা : ( আরিয়ান এর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ) এতো দিন পর আরু পাখি ডাকলেন আমায় ( মনে মনে )
.
শহরের থেকে বাইরে দূরে একটা রিসোর্টে রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে নিশি। বাইরের ঠান্ডা বাতাস তার গা ছুঁয়ে যাচ্ছে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভাবছে এখন কি হচ্ছে ওখানে।
“নিশি : কি হচ্ছে কে জানে? বাপি’র কি অবস্থা তা ও তো জানি না। ফোন করবো একটা আরিফা’কে। স্যার তো এতক্ষনে চলে গেছে মনে হয়।
“জিসান : ( পেছন থেকে হুট করে এসে নিশি’র কোমর জড়িয়ে ওর ঘাড়ে থিতুনি রেখে ) কি ভাবছিস এতো মনোযোগ দিয়ে
“নিশি : এটাই যে বিয়েটা ভেঙ্গে গেলো..
“জিসান : হ্যাঁ তো আফসোস হচ্ছে নাকি
“নিশি : জিসান!
“জিসান : আরে মজা করছি আমি জানি তুই বিয়েটা করতে চাস না তাই তো পালাতে রাজি হলি কিন্তু একটা কথা
“নিশি : আবার কি
“জিসান : তুই প্রথমে পালাতে মানা করলি পরে হ্যাঁ করলি কেন?
“নিশি : আম্মুর জন্য
“জিসান : শাশুড়ি মা ( নিশি’কে ছেড়ে দাঁড়িয়ে )
“নিশি : ( সামনে ঘুরে ) হুম মা.. কাল রাতে মা’কে আমি সব বলে দিয়েছিলাম।
“জিসান : তারপর…
“নিশি : আর কি মা আমাকে পালাতে সাহায্য করল! পার্লারে যাবার কথা বলে মা আমাকে বাইরে নিয়ে গেল তারপর তো চলে আসলাম তোর সাথে…
“জিসান : ( ভাব নিয়ে ) দেখতে হবে না কার শাশুড়ি!
“নিশি : আমারও মা… কিন্তু বাপি’র জন্য অনেক চিন্তা হয়েছে
“জিসান : ( নিশি’র কোমর ধরে ) চিন্তা করো না একটা নাতনি নিয়ে যাবো সাথে করে তখন আর কিছু হবে না!
“নিশি : সে আশায় বসে ঘুমান আপনি!
“জিসান : আচ্ছা ( চোখ টিপ দিয়ে )
“নিশি : জিসান…
“জিসান : আচ্ছা একটা কথা এখনো বুঝলাম না
“নিশি : কোনটা?
“জিসান : আমরা পালিয়ে গেলাম কিন্তু এখনো বিয়ে করলাম না কেন?
“নিশি : তুই আসলেই গাধা
“জিসান : আর তুই গাধা’র বউ গাধি । এখন বল কেন
“নিশি : আরে শোন স্যার তো এটা জানতোই আমরা পালাবো।
“জিসান : হ্যাঁ ডাউট তো করেছেই…
“নিশি : তো পালিয়ে কি করতাম। বিয়েই তো এটা কমনসেসন্স। আর আমি যতটুকু উনাকে চিনি উনি আগে থেকেই সমস্ত জায়গায় লোক রেখেছেন যাতে আমরা গেলে আমাদের ধরতে পারেন তাই আর কি আমি এটা ভাবলাম বিয়ে না করে আগে পালাই। বিয়ে টা পরে করবো বুঝলি
“জিসান : ভালো করেই চিনি’স ভাইয়াকে
“নিশি : বুঝতে হবে আমিও চালাক কম না।
“জিসান : জানি তো!
.
জিসানের হাব বদলাতে থাকে। ও নিশি’র কোমর আরো জোরে চেপে ধরে নিশি’র ঠোঁট’র দিকে আগাতে থাকে। কিন্তু নিশি তৎক্ষণাৎ জিসান’থেকে ছাড়িয়ে নেয়
“নিশি : জিসান প্লিজ বিয়ের পর এইসব..
“জিসান : ( মুচকি হেসে ) জোর করবো না তোকে…
“নিশি : আমি জানি!
.
বিকাল হয়ে গেছে। কিন্তু সূর্য মেঘে ঢেকে গেছে। মেঘের গর্জন শোনা যায়। হুট করেই মুষলধারে বৃষ্টি পরতে থাকে। নিশি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে থাকে। জিসান নিশি’র হাত ধরে বলে..
“জিসান : বৃষ্টি খুব প্রিয় তো তোর আয় বৃষ্টি’তে ভিজে আসি।
নিশি মুচকি হেসে জিসানের সাথে যায়। দুইজনেই ছাদে এসে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। নিশি বৃষ্টিতে লাফাতে থাকে। আর জিসান নিশি’কে দেখতে থাকে। কেন জানি ভালো লাগা কাজ করছে নিশি’র ওপর। এতো দিন এরকম কোনো অনুভূতি হয় নি নিশি’র ওপর। এই অনুভূতি টা অন্যরকম।
জিসানের ধ্যান এসে ভাঙে নিশি। জিসানের সামনে হাত নাচিয়ে বলে ‘কাকে দেখেছিস এতো মনোযোগ দিয়ে”। জিসান নিশি’র দুই ঘাড়ে হাত রেখে বলে”তোকে”।
হঠাৎ করেই দমকা হাওয়া বয়ে যায়। নিশি’র হার্টবিট বাড়তে থাকে। এমন সময় পাশ থেকে চেনা গলা ভেসে আসে…
– এই জান পাখি!
.
ডাক শুনেই নিশি পাশে ফিরে তাকায়। দেখে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিশান। পরনে একটা টি শার্ট আর জিন্স। নিশি নিশান’কে দেখেই ভয়ে জিসানের পিছনে লুকিয়ে পরে। নিশান এটা দেখে মুচকি হেসে নিশি’র কাছে আগাতে থাকে। নিশি পেছন থেকে জিসানের শার্ট আঁকড়ে ধরে।
“জিসান : ভাইয়া তুই..
“নিশান : এনি ডাউট…
“জিসান : ভাইয়া নিশি আমাকে ভালোবাসে..
“নিশান : আর আমি নিশি কে
“জিসান : ভাইয়া তুই তো এমন ছিলি না। যখন আমার যা ভালো লাগতো তুই আমাকে দিতি
“নিশান : তবুও কেড়ে নেবার স্বভাব টা গেলো না তোর।
“জিসান : ভাইয়া নিশি আমাকে ভালোবাসে
“নিশান : ভালো লাগা আর ভালবাসা এক না
“জিসান : ভাই…
(কিছু বলার আগেই একজন ইনজেকশন পুশ করে জিসান কে। জিসান সাথে সাথেই জ্ঞান হারিয়ে পরে যায়। নিশি জিসান কে ধরতে যাবে তখনই নিশান এসে নিশি’কে ধরে নেয়। কয়েকজন ধরে জিসান’কে নিয়ে যায় )
“নিশি : জিসান
“নিশান : মরে নি ভাই হয় আমার..
“নিশি : আপনি… আপনি এরকম’টা কিভাবে করতে পারেন
“নিশান : তুমি কিভাবে পারো বিয়ে ছেড়ে এখানে আসতে
“নিশি : আমি ভালোবাসি না আপনাকে। বিয়ে করবো না আমি ছাড়ুন আমাকে জিসানের কাছে যাবো আমি।
“নিশান : হুম তুমি আমার সাথে যাবে
“নিশি : যাবো না আমি ( ছটফট করতে থাকে
কিল ঘুষি মারে নিশানের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য )
“নিশান : ( নিশি’র গালে হাত রেখে ) সরি জান পাখি..
( বলেই নিশি’র ঘাড়ে একটা ইনজেকশন পুশ করে।
নিশি জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পরে নিশানের বুকে। )
.
কয়েক ঘন্টা পর…
বৃষ্টি এখনো কমে নি বরং বেড়েছে। নিশি’র জ্ঞান আস্তে আস্তে ফিরতে থাকে। নিশি মিটিমিটি চোখ খুলে আশপাশ তাকায়। তখন বুঝতে পারে সে বিছানায় আর তার শরীর শুধুমাত্র একটা চাদর। মাথা ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে তার। দূরে কাউকে দাঁড়ানো দেখতে পায়। সবকিছু পুরো স্বপ্নের মতো লাগে। তার সেই স্বপ্নের কথা মনে করিয়ে দেয় নিশি’কে। নিশি অনেক কষ্টে বিছানায় বসার চেষ্টা করে।
তখন সেই লোক’টা আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে আসে নিশি’র কাছে। নিশি এবার তাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। এ তো নিশান! নিশি চাদর টা আঁকড়ে ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে থাকে…
“নিশি : আ..প…নি… আপনি… এখানে আমার এই অবস্থা মানে!
“নিশান : জান পাখি। তুমি ঠিক আছো!
“নিশি : ( ছল ছল চোখে তাকিয়ে ) আপনি আমার সুযোগ নিয়েছেন।
“নিশান : জান পাখি…
.
এমন সময় কারো প্রবেশ হয় রুমে। একজন মহিলা হাতে কিছু কাপড় নিয়ে ভেতরে ঢুকেন। নিশি অবাক চোখে তার দিকে তাকায়। নিশান মহিলা’র হাত থেকে কাপড় গুলো নিয়ে তাকে চলে যেতে বলে। তারপর নিশি’র কাছে কাপড় গুলো দিয়ে বের হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর নিশান রুমে আসে। আর আসেই দেখে নিশি হাতে ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাত কাটতেই যাবে তখন নিশান বলে ওঠে..
“নিশান : জান পাখি! জান পাখি এমন টা করো না।
“নিশি: আপনি! আপনি আমার কাছে আসবেন না।
“নিশান : জান পাখি শোন ( নিশি’র কাছে আগাতে আগাতে )
“নিশি : আসবেন না বলে দিলাম আমি কিন্তু হাত কেটে ফেলবো। ( ছুরি হাতে রেখেই )
“নিশান : জান পাখি পাগলামি করো না
“নিশি : আমি বলছি হাত কেটে ফেলবো ( হাত কেটে ফেলে নিশি )
.
নিশান দৌড়ে নিশি’র হাত থেকে ছুরি টা ফেলে ওর হাত ধরে। রক্ত ঝরছে নিশি’র হাত থেকে। নিশি নিশানের থেকে ছাড়ানোর জন্য ছুটাছুটি করছে। নিশান এবার রেগে ঠাস করে একটা চড় মারে নিশি কে। নিশি গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে থাকে নিশানের দিকে। নিশান নিশি’র বাহু ধরে খাটে বসায় নিশি’কে। নিশি পুরো চুপ কারন নিশান চোখ দেখে ভয় পেয়েছে সে। রাগে লাল হয়ে আছে নিশানের চোখ। নিশান দৌড়ে ফাস্টবক্স এনে নিশি’র সামনে হাঁটু গেড়ে বসে হাত ব্যান্ডেজ করতে থাকে। নিশি কাঁদতে থাকে। ব্যান্ডেজ করা শেষ হলে নিশি’র দিকে তাকায়।
“নিশান : কান্না বন্ধ করো।
“নিশি : …( কেঁদেই যাচ্ছে )
“নিশান : আমি চুপ করতে বলেছি
“নিশি : ….
“নিশান : নিশি ( ধমকে )
“নিশি : ( নিশানের ধমকে ভয়ে চুপ হয়ে যায় )
“নিশান : ( নিশি’র গালে হাত রেখে ) জান পাখি! কেন করছো তুমি এমন। যদি কিছু হয়ে যেত। দেখো কতোটা কেটে গেছে।
“নিশি : …..
“নিশান : ( দীর্ঘশ্বাস ফেলে ) নাও সাইন করো। ( একটা পেপার দিয়ে )
“নিশি : ( নিশানের দিকে তাকায় যার অর্থ এটা কি )
“নিশান : বিয়ের কাবিন নামা। সাইন করো এটাই। তাহলে লিগালি তুমি ওয়াইফ হবে আমার।
“নিশি : আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।
“নিশান : তুমি সহজে কিছু বুঝতে চাও না। নাহ…
“নিশি : আমি বিয়ে করবো না মানে করব না।
“নিশান : নিশি যদি না চাও আন্টি আংকেল এর কিছু হোক তাহলে সাইন’টা করে দাও।
“নিশি : ( স্থির হয়ে নিশানের দিকে তাকিয়ে থাকে )
“নিশান : নিশি আমার পক্ষে তোমাকে আঘাত করা সম্ভব না। তাই বলছি…
.
নিশি আর কথা বাড়ায় না। চুপচাপ সাইন করে দেয় পেপার’টাই। ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে নিশান তার সাথে এমন কিছু করেছে।ভাবে নি কখনও নিশান এমন কিছু করতে পারে। নিশানের প্রতি ঘৃণা আরো বেড়ে যাচ্ছে তার। তার পক্ষে নিশান’কে আর ভালোবাসা সম্ভব না। নিশানের এমন আচরণ’র পর তো আর না।
সাইন করার সাথে সাথে নিশান পেপার’টা নিয়ে চলে যায় আর যাবার আগে নিশি’কে বলে যায় উল্টা পাল্টা আর কিছু না করতে। তাহলে খুব খারাপ হবে। নিশি মেঝেতে বসে কাঁদতে থাকে।
চলবে…..
আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/392778182443960/