অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব_২৭

গল্পের_নাম : অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব_২৭ ( #crazy_for_you )
লেখনিতে :#মিমি_মুসকান

“নিশি : জিসান কোথায়?

“নিশান : কেন

“নিশি : জিসান কোথায়? কি করেছেন আপনি ওর সাথে?

“নিশান : চিন্তা করো না বেশি কিছু করি নি। ভুলে যেও না ও আমারও ভাই হয়

“নিশি : তাই বলে তো অনেক কিছু করেছেন। আসলে আপনার মতো মানুষ’কে ভালোবাসা যায় না

“নিশান : ঠিকই বলেছো তুমি, তাই হয়তো তুমি ভালোবাসতে পারো নি। দেখো না আমার মা ও ভালোবাসতে পারে নি তাই তিনি চলে গেছে আমাকে ছেড়ে। ( মুচকি হাসি দিয়ে )

“নিশি : ….. ( নিশ্চুপ )

“নিশান : জানো জান পাখি! আমার এই মা কিন্তু আমায় অনেক ভালোবাসে। তাই ভয় হয় যদি তিনি ও আমায় ছেড়ে চলে যান…
.
নিশি বুঝতে পেরেছে নিশান অনেক কষ্ট পেয়েছে তার কথায়। তাই নিশি আর কিছু বলে না। হঠাৎ করেই নিশান এসে নিশি’র কোমর জড়িয়ে ধরে। তারপর নিশির ঘাড়ে নিজের থিতুনি রেখে বলে…

“নিশান : জান পাখি! জানো যখন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম তখন কেন জানি বুকের বা পাশ’টা অনেক ব্যাথা করেছিলো আমার। আমি বুঝতে পারি নি কেন। আমি তখন আম্মু কে এসে বলেছিলাম তখন আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিলেন আমি নাকি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি তাই! সত্যি আমার মা ঠিক’ই বলেছিল আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। পাগল করা ভালোবাসা। আমার আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা। আমার মা খুব ভালো করে বোঝেন আমায়।

“নিশি : ….. ( নিশ্চুপ )

“নিশান : জান পাখি!

“নিশি : হুম..

“নিশান : কথা বলছো না যে

“নিশি : আমরা এই বাসায় কেন

“নিশান : এটাই তোমার বাড়ি

“নিশি : মানে আপনি আন্টি আংকেল এর সাথে থাকেন না

“নিশান : আন্টি আংকেল কি মা বাবা বলো শশুড় শাশুড়ি হয় তোমার। আর না আমি এই বাসায় থাকি এটাই আমার বাড়ি। আমার মা’র অনেক স্মৃতি আছে এই বাসায়। আমার মা মারা যাবার সময় বাবা ওই বাড়ি’টা কিনেছেন। কিন্তু আমার এই বাড়ি’টাই অনেক ভালো লাগে। মা’র অস্তিত্ব মিশে আছে এই বাড়ি’টাই। বাড়ি’র প্রত্যেক টা জিনিস আমাকে মা’র কথা মনে করিয়ে দেয়।

“নিশি : আমি আমার বাসায় যাবো। আম্মু – বাপি’র সাথে দেখা করবো

“নিশান : হ্যাঁ নিয়ে যাবো কিন্তু কিছুদিন পর..

“নিশি : কেন?

“নিশান : তোমার বিশ্বাস নেই যদি আবার ও পালিয়ে যাও

“নিশি : বিয়ের পরও..

“নিশান : ভালো তো আর বাসো না যে থাকবে..

“নিশি : ( একটা দীর্ঘশ্বাস )

“নিশান : জান পাখি! একটু ভালোবাসা যায় না আমায়!

“নিশি : আপনার মতো একটা নোংরা মানুষ কে আমি ভালোবাসতে পারি না। আপনি আমাকে অজ্ঞান করে আমার সুযোগ নিয়েছেন ( তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ) এরপরও আপনি আশা করেন আপনাকে ভালোবাসবো আমি..

“নিশান : বেসো না আমি বাসবো..
.
নিশান কিছুক্ষণ আগেই গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে। নিশি বেলকনিতে বসে রাতের আকাশে চাঁদ দেখছে। আকাশ আজ অনেক সুন্দর লাগছে কিন্তু গত কাল এই রাতের আকাশও তার জিবনের মতো ঝড় বয়ে গিয়েছিল।

একজন মহিলা প্রবেশ করলেন রুমে। নিশি তার উপস্থিতি পেলো না। সে তার মতোই এখনো বসে আছে। মহিলা’টা হঠাৎ করেই নিশি’র সামনে এসে দাঁড়ালো। নিশি তার দিকে তাকিয়ে…

“নিশি : আপনি…

– : ম্যাম আপনি নাকি আমায় খুঁজছিলেন..

“নিশি : তুমি কাল রাতের সেই মেয়ে’টা নাহ..

– : জ্বি ম্যাম..

“নিশি : আচ্ছা কাল রাতে স্যার আমার সাথে আর কোনো লোক কে আনে নি এই বাসায়

– না ম্যাম.. কাল রাতে স্যার আপনাকে নিয়ে এসেছিলেন কোলে করে। আর কাউকে আনে নি!

“নিশি : ওহ্ আচ্ছা ( তাহলে জিসান গেলো কোথায় )

– ম্যাম…

“নিশি : কিছু বলবে?

– ( নিশি’র সামনে একটা রিং ধরে ) ম্যাম এটা আপনাকে দেওয়ার ছিলো।

“নিশি : ( রিং টা হাতে ধরে অবাক হয়ে ) এটা তুমি কোথায় পেলো এটা তো আমার‌ হাতে ( হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে জিসানের রিং এর জায়গায় অন্য একটা রিং ) এটা কে পরালো। আর এটা তুমি কোথায় পেলে..

– ম্যাম.. কালকে স্যার আপনাকে যখন নিয়ে এসেছিল তখন আপনার জ্ঞান‌ ছিলো না। আর বৃষ্টিতে আপনার শরীর ভিজে একাকার। আমি স্যার এর সাথে সাথে এই রুমে এসেছিলাম। স্যার আপনাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আপনার হাতের এই আন্টি’টা খুলে আমায় দিয়ে অন্য একটা আন্টি আপনার হাতে পরিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর স্যার রুম থেকে চলে যান আর আমাকে বলেছিলো আপনার জামা কাপড় চেঞ্জ করিয়ে দিতে না হলে আপনার ঠান্ডা লাগবে। স্যার যাবার পর আমি আপনার জামা কাপড় চেঞ্জ করিয়ে দিতে হঠাৎ করেই আমার ফোনে কল আসে। আমি বাইরে থেকে কথা বলে এসে দেখি আপনার জ্ঞান ফিরে এসেছে। তাই আমি চলে যাই আর ম্যাম আমার মেয়েটা অনেক অসুস্থ তাই আমি আজ সারাদিন কাজে আসতে পারে নি। রহিমা আমাকে ফোন করে বললো আপনি আমাকে খুঁজছিলেন তাই আমি ভাবলাম হয়তো এই আন্টি’টার জন্য আমাকে খুঁজে ছিলেন। ম্যাম বিশ্বাস করেন এটা স্যার আমাকে দিয়েছিল আমার মনে ছিলো না রেখে যাবার কথা ম্যাম আমাকে কাজ থেকে বের করে দিবেন না ( কাঁদতে কাঁদতে )

“নিশি : আরে আরে তুমি কেঁদো না। তোমার চাকরি যাবে না আমি অন্য কারনে তোমাকে খুঁজছিলাম।

– সত্যি ম্যাম আমার কাজ টা থাকবো তো

“নিশি : হ্যাঁ থাকবে। তুমি এখন তোমার বাসায় যাও তোমার মেয়ে’র কাছে। ও অসুস্থ ওর দেখাশোনা করো।‌মেয়ে সুস্থ হলে কাজে এসো সমস্যা নেই।

– আচ্ছা ম্যাম…
.
নিশি এবার ভাবতে থাকে। তার মানে নিশান তার সাথে কিছু করে নি। তাহলে সে মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছিল নিশান কে। কিন্তু নিশান ও কিছু বলে নি কেন তাকে। আর এই রিং’ই বা কেন খুলে ফেলল সে। কেন করছে এরকম?

কিছুক্ষণ পর..
গাড়ির আওয়াজ আসছে তার মানে নিশান এসে গেছে। নিশি পাইচারি করছে আর কথা গোচ্ছাচ্ছে। নিশান কে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করার আছে তার।
নিশান রুমে ঢুকতেই নিশি নিশানের সামনে এসে দাঁড়ায়। নিশান নিশি’কে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বলে..

“নিশান : জান পাখি!

“নিশি : ( হাত’টা এগিয়ে ) কি এটা?

“নিশান : তোমার হাত!

“নিশি : আমিও জানি এটা আমার হাত। হাতে কি আছে সেটা দেখুন (রেগে )

“নিশান : ( নিশি’র হাত ধরে ) আঙ্গুল!

“নিশি : আঙ্গুলে ( রিং দেখিয়ে ) এটা কি? ( দাঁতে দাঁত চেপে )

“নিশান : রিং কেনো দেখো না তুমি!

“নিশি : হ্যাঁ চিনি কিন্তু এটা কার?

“নিশান : আমার..

“নিশি : এটা আমার হাতে কি করে আসল?

“নিশান : যখন আমার তার মানে তো আমি পরিয়েছি

“নিশি : কেনো? এখানে তো জিসানের দেওয়া রিং টা ছিলো

“নিশান : ( নিশি কোমর জড়িয়ে ) বউ তো তুমি আমার! তাহলে তোমার হাতে কি থাকবে আর না থাকবে সেটা আমি ঠিক করব। তাই নয় কি!

“নিশি : ‌( নিশান কে ধাক্কা দিয়ে ) একজন ঠক আপনি, মিথ্যুক আপনি! আপনি আমাকে মিথ্যে বলেছিলেন। প্রতারনা করেছেন আমার সাথে ( চেঁচিয়ে )

“নিশান : জান পাখি! কি হয়েছে?

“নিশি : কি হয়েছে জিজ্ঞেস করেছেন।‌ ( নিশানের কলার ধরে ) কি হয়েছিল কাল রাতে বলুন কি হয়েছিল?

“নিশান : জান পাখি শান্ত হও

“নিশি : আপনি বলুন কি হয়েছিল সেদিন।‌‌কেন করলেন আপনি আমার সাথে এরকম’টা কেন ( কাঁদতে কাঁদতে )

“নিশান : জান পাখি

“নিশি : আপনি কেন বলছেন না সেদিন রাতে কিছু হয় নি। আপনি আমার সাথে এরকম’টা কিভাবে করতে পারেন। ( চেঁচিয়ে )

“নিশান : নিশি থামো ( বাহু চেপে )

“নিশি : না ছাড়ুন আমাকে।‌ আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন, ঠকিয়ে বিয়ে করেছেন আমাকে। আপনি আমাকে নিয়ে খেলছেন। পুতুল মনে হচ্ছে আপনার আমাকে। থাকবো না আমি এখানে। চলে যাবো এখান থেকে। থাকবো না আপনার সাথে।

“নিশান : জান পাখি!

“নিশি : ( রুম থেকে বের হয়ে চলে যেতে নেয় )

“নিশান : জান পাখি ( নিশি’র সামনে দাঁড়িয়ে )

“নিশি : আমি থাকবো না এখানে, থাকবো না। আপনি আমাকে ঠকিয়ে বিয়ে করছেন! ( চলে যেতে নিলে )
.
নিশান : ( নিশি’র বাহু চেপে ধরে ) কোথাও যাবে না তুমি

“নিশি : আমি যাবো। থাকবো না আপনার মতো একটা মিথ্যুকের সাথে ( রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে যায় )

“নিশান : ( নিশি বাইরে চলে গেলে নিশান হাত ধরে নিশি’কে ভেতরে নিয়ে আসে )

“নিশি : ছাড়ুন আমায়

“নিশান : ( বিছানায় নিশি কে ছুড়ে ফেলে কোমরে হাত দিয়ে নিশি’র সামনে দাঁড়ায় ) রুম থেকে বের হবা না তুমি

“নিশি : আমি এই বাড়িতেই থাকবো না

“নিশান : তুমি জানো তুমি এই বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না।

“নিশি : ( নিশানের সামনে দাঁড়িয়ে ) মরে যাবো আমি তবুও আপনার সাথে থাকবো না

“নিশান : নিশি ( নিশি’র বাহু চেপে ) এরকম কিছু করার কথা ভাববে না বুঝলে তুমি ( চেঁচিয়ে )

“নিশি : …. ( নিশানের ধমকে ভয়ে চুপ হয়ে যায় )

“নিশান : ( নিশি’র গালে হাত রেখে ) জান পাখি পাগলামি করো না।‌মরে যাবো তোমাকে ছাড়া প্লিজ..

“নিশি : আপনি ঠকিয়েছেন আমাকে..

“নিশান : আমি ঠকায় নি তোমাকে। আচ্ছা তুমি বলো আমি তোমাকে কিছু বলেছি। তোমার কি মনে হয় তোমাকে অজ্ঞান করে আমি তোমার সুযোগ নিয়েছি। ( একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ) জান পাখি.. ভালোবাসি তোমাকে, তোমাকে ছোঁয়া যদি আমার ইচ্ছা হতো তাহলে আমি তোমায় এখনও নিজের কাছে রাখতাম। তুমি নিজেই ভেবেছো আমি তোমার সাথে এরকম কিছু করেছি। আমি তোমাকে কিছু বলেছি।

“নিশি : আপনার বলা উচিত ছিলো এরকম কিছু হয় নি

“নিশান : তাহলে তুমি থাকতে এখানে

“নিশি : তাহলে আপনি এই মিথ্যের সুযোগ নিয়ে এখানে রাখতে চেয়েছিলেন আমাকে..

“নিশান : ….. ( নিশ্চুপ )

“নিশি : কি হলো বলুন…

“নিশান : আমার কিছু করার ছিলো না

“নিশি : বাহ্ আর তাই আপনি আমার সাথে এরকম’টা করলেন…

“নিশান : জান পাখি শোন… ( নিশি’র গালে হাত রেখে )

“নিশি : একদম ছোবেন না আমায় ( নিশানের থেকে দূরে সরে গিয়ে )

“নিশান : তুমি বুঝবে না আমায়…
.
নিশান দরজা লক কলে চলে যায়। নিশি মেঝেতে বসে কাঁদতে থাকে।‌ কাঁদতে কাঁদতে এক সময় ঘুমিয়ে পরে।
মাঝরাতে নিশি’র ঘুম ভাঙে। নিজেকে নিশানের বুকে আবিষ্কার করে নিশি।
নিশান’কে দেখে খুব ঘৃণা হচ্ছে নিশি’র। নিশি’র দূর্বলতা’র সুযোগ নিয়েছে সে।‌এরকম’টা কিভাবে করতে পারে সে।
নিশি নড়াচড়া করতে থাকে।‌
নিশানের ঘুম ভেঙ্গে যায় কিন্তু তাও সে চোখ খুলে না। কারন জানে নিশি আবার ওর পাগলামি করবে। তাই ঘুমানোর ভান করে শুয়ে থাকে।
নিশি ওঠতে চাইলে ওঠতে পারে না কারন নিশান তাকে অনেক জোরে ধরিয়ে রেখেছে। বাধ্য হয়ে নিশি শুয়ে থাকে।
এরকম ভাবে আরো কয়েকদিন কেটে যায়। নিশি নিশানের সাথে এই কয়েকদিন একটা কথাও বলে না। নিশান খুব চেষ্টা করে কিন্তু নিশি কোনো কথাই বলে না।
হুট করেই একদিন নিশি’র চোখ বেঁধে দেয়। নিশি লাফালাফি করতে থাকে তবুও একটা কথা বলে না নিশানের সাথে। নিশান বুঝতে পারে নিশি কথা বলবে না তাই সে বলে ওঠে…

নিশান : জান পাখি তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে তাই চোখ বাঁধলাম। লাফালাফি করো না…

চলবে…..

আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/394133258975119/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here