অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব_২৯

গল্পের_নাম : অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব_২৯ #crazy_for_you )
লেখনিতে :#মিমি_মুসকান

হুট নিশান এসে নিশি’র হাত ধরে বলে…

“নিশান : চলো ফ্রেশ হয়ে নেবে..

“নিশি : ( এতোক্ষণ জিসানের দিকে তাকিয়ে ছিলো। নিশানের কথায় ধ্যান ভাঙে ) হুম!

“জিসান : ( শুধু তাকিয়ে দেখছে কিন্তু কিছু বলে না )
.
নিশান নিশি’র হাত ধরে রুমে নিয়ে যায়। তারপর নিশি’কে বলে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে। নিশি চলে গেলে নিশান ধপ করে বিছানায় বসে পরে। এ ভয়টাই পাচ্ছে সে। জিসান এখানে আর নিশি ও। নিশি’র ওপর যথেষ্ট বিশ্বাস আছে কিন্তু জিসানের ওপর একটুকু বিশ্বাস ও নেই তার। জিসান রেগে গেলে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে।‌কিন্তু নিশি কে কিছু বলাও যাবে না। ও কি ভাববে।

এসব ভাবতে ভাবতে নিশি ফ্রেশ হয়ে চলে আসে। একজন এসে বলে যায় নিচে খাবার খেতে ডাকছে। নিশান নিশি কে বসিয়ে রেখে ফ্রেশ হতে যায়। এসে দেখে নিশি আয়নায় দাঁড়িয়ে শাড়ি’র আঁচল ঠিক করছে। খুব মিষ্টি লাগছে নিশি কে। নিশানের সমস্ত চিন্তা মূহুর্তে দূর হয়ে যায়। সে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিশি কে। নিশি’র চুলে মুখ গুজে দেয়। নিশি নড়াচড়া করতে পারছে না কারন নিশান খুব শক্ত করে ধরে আছে ওকে।

“নিশি : কি করছেন ছাড়ুন। কেউ এসে পরবে

“নিশান : আমার রুমে কেউ পারমিশন ছাড়া আসে না

“আরিয়ান : শুধু মাত্র আমি ছাড়া। ওপস সরি সরি ( পেছনে ঘুরে )

“আরিফা : ( পেছন ঘুরে ) রোমান্স করতে হলে দরজা বন্ধ করে কর। এভাবে এসব করার মানে কি..
.
আরিয়ান আর আরিফা’র কথা শুনে নিশান নিশি কে ছেড়ে দেয়। নিশি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। আরিফা এভাবে শরম দিবে ভাবতে পারে নি সে।

“নিশান : ( আরিফা’র মাথায় টোকা দিয়ে ) না গো শালিকা আপনার বোন এতো রোমান্টিক না যে রোমান্স করবো

“নিশি : ( নিশানের কথায় আরেক দফা লজ্জা পেলো )

“আরিয়ান : তুই যে কম না সেটা আমরা সবাই জানি

“নিশান : ( মাথা চুলকিয়ে ) তা তোরা এখানে কেন

“নিশি : একসাথে!

“আরিয়ান আর আরিফা : ( একসাথে দাঁত বের করে হাসে )

“নিশান : সব ঠিক হয়ে গেছে

“আরিয়ান : ( মাথা নাড়িয়ে ) হ্যাঁ

“নিশি : কিহহহ ( চেঁচিয়ে ) কিভাবে?

“আরিফা : মানে…… ( সব ঘটনা বলল )

“নিশান : তলে তলে এতো কিছু

“আরিয়ান : দেখতে হবে না কার ফ্রেন্ড

“নিশি আর আরিফা : ( একসাথে ) আসলেই।

সবাই হেসে দিলো। এর মাঝেই জিসান এসে উপস্থিত হলো। জিসান কে দেখে নিশি জিসানের দিকে তাকিয়ে রইল। জিসান চোখ সরিয়ে বলল..

“জিসান : মম ডাকছে খেতে আয়..( নিশান কে উদ্দেশ্য করে )

“নিশান : আসছি! আরিফা আরিয়ান তোরাও আয়।

“আরিয়ান : আমরা খেয়ে এসেছি..

“নিশান : আবার খাবি চল..
.
নিশান টেনে আরিয়ান আর আরিফা’কে নিয়ে যায়। সবাই এক সাথে খাবার টেবিলে বসে। আরশিয়া সবাইকে খাবার সার্ভ করছে। নিশি ও তাকে সাহায্য করতে থাকে।‌
.
বিকালে…
ছাদে এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে নিশি তার সাথে আরিফা।

“আরিফা : তুই মেনে নিয়েছিস সব কিছু

“নিশি : না

“আরিফা : কিন্তু আর কি কিছু করার আছে

“নিশি : জানি আমি কিন্তু আমার পক্ষে এইসব মেনে নেওয়া সম্ভব না

“আরিফা : ( দীর্ঘশ্বাস ফেলে ) বলছিনা ভাইয়া যা করেছে ভুলে যা কিন্তু একটা সুযোগ দিতে তো পারিস

“নিশি : ( আরিফা’র দিকে অবাক চোখে তাকায় )

“আরিফা : কারো সাপোর্ট করছিনা কিন্তু তোর ভবিষ্যত এর কথা চিন্তা করে বললাম। কারন ভাইয়া তোকে কখনও ছাড়বেনা আর বিয়েটা হয়ে গেছে এখন আর কিছু করার নেই

“নিশি : আমার আর নিশানের মাঝে এখনো সেরকম সম্পর্ক নেই

“আরিফা : হতে কতোক্ষণ..

“নিশি : ( হাত মুঠো করে আকাশের পানে তাকিয়ে ) আমি কখনও এমন কিছু হতে দেবো না

“আরিফা : ভাইয়া স্বামী তোর। অধিকার তো একদিন চাইবে

“নিশি : আমি এই বিয়ে মানি না

“আরিফা : ( নিশি’র ঘাড়ে হাত রেখে ) বিয়ে টা হয়ে গেছে। সত্যি টা স্বীকার করে নে

“নিশি : পারছিনা আমি মেনে নিতে..

“আরিফা : আমি জানি নিশি এসব কিছু সম্ভব না কিন্তু চেষ্টা তো করতে পারিস।

“নিশি : ( নিশ্চুপ হয়ে কাঁদতে থাকে )

“আরিফা : এখানে না আসলেও পারতি এতো কষ্ট হতো না

“নিশি : …… ( কাঁদতে থাকে ‌)

“আরিফা : নিশি তুই কাঁদছিস ( নিশি’র দিকে ফিরে )

“নিশি : ( আরিফা কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকে ) আমার সাথে এমন টা কেন হলো আরু। কি করেছিলাম আমি। আমার ভাগ্য কেন আমায় এভাবে ধোঁকা দিলো

“আরিফা : নিশি থাম কাদিস না ( নিশি’র মাথায় হাত বুলিয়ে )

“নিশি : আমি পারছিনা আর আরু। কি করবো বুঝতে পারছি না। দ্বিধা দ্বন্দ্বে পাগল হয়ে যাচ্ছি।

“আরিফা : নিশি শোন, ভাগ্যের স্বভাব এইটা মানুষকে ধোঁকা দেওয়া, দ্বিধা দ্বন্দ্বে ফেলানো। তাই বলে কি তুই বসে থাকবি। নতুন করে আবার শুরু কর। ভাগ্য সবসময় সহায় হয় না। নিজের টা নিজেকেই দেখতে হয়।

“নিশি : ….. ( নিশ্চুপ )

“আরিফা : আচ্ছা তাড়াহুড়ো করিস না সময় নে। ভাবতে থাক। তাহলে বুঝতে পারবি!

“নিশি : ( মাথা নাড়ায় )

“আরিফা : ( নিশি’র চোখ মুছিয়ে দিয়ে ) এবার একটু হাসেন তো দেখি। পুরো পেত্নি লাগছে তোকে

“নিশি : ( মুচকি হাসি দিয়ে ) তোকে তো শাকচুন্নী লাগছে..

“আরিফা : যাক অনেক দিন পর শাকচুন্নী কথা টা শুনলাম

“নিশি : জানিস আমি অনেক খুশি তোর আর আরিয়ান ভাইয়ের জন্য

“আরিফা : ভাবতে পারি নি কখনো আবার এক হবো

“নিশি : ভাগ্য যাকে যেখানে নিয়ে যায় বল

“আরিফা : হুম ঠিক বলেছিস।

( নিশি আর আরিফা’র কথা এতোক্ষণ একজন খুব মনোযোগ দিয়ে শুনল। তারপর বাঁকা হাসি দিয়ে চলে গেলো। )
‌.
রাতে বারে…
জিসান আজ অনেক খুশি। তার এই খুশি দেখে মেহেদী আর রৌদ্দুর অনেকটা অবাক।

“মেহেদী : কিরে তুই কি দেবদাস হয়ে গেলি নাকি

“রৌদ্দুর : নাকি পাগল হলি

“মেহেদী : নিশি শোকে পাগল হয়ে গেছে বোধহয়

“জিসান : পাগল তাও আমি আবার কার শোকে নিশি’র। ওয়াট দ্যা ফানি জোক ইয়ার

“মেহেদী : তাহলে

“জিসান : দেখ যেটা আমার ভালো লাগে সেটা আমার হয় কিন্তু যেটা হয় না সেটা কেড়ে নেই।

“রৌদ্দুর : তা নিশি কে আবার তোর কবে থেকে ভালো লাগলো

“জিসান : ও আমার ভালো লাগা না আমার রাগ আমার জেদ। আমি হারতে পারি না

“মেহেদী : তুই অলরেডি হেরে গেছিস। নিশান এখন নিশি’র

“জিসান : কে বললো ( জোরে হেসে ) নিশি তো নিশান কে মানেই না

“রৌদ্দুর : তা তুই কি এটার সুযোগ নিবি

“জিসান : ( শয়তানি হাসি হেসে ) তা আর বলতে…

“মেহেদী : কি করবি

“জিসান : সময় হোক দেখতে পারবি!
.
নিশি চৌধুরী বাড়িতে এসেছে ১৫ দিন হয়ে গেছে। এই কয়েকদিন নিশি আর জিসান দুইজনেই সামনাসামনি হয়েছে কিন্তু কোনো কথা হয় নি। নিশান ব্যাপার টা খেয়াল করেছে। নিশানের চিন্তা এখন কমলো। সে ভাবল হয়তো নিশি সত্যি টা মেনে নিয়েছে। তাই সে চায় আজ তার জান পাখি কে প্রপোজ করবে তার ভালোবাসার নতুন করে সুচনা করবে।

নিশান বাড়ি’র ছাদ মোমবাতি দিয়ে নিজে সাজিয়েছে। তার সাথে লাল রঙের বেলুন আর গোলাপ ফুল দিয়ে। পুরো ছাদ লাইটিং করা। অনেক সুন্দর করে ডেকোরেট করিয়েছে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে আজ মনের কথা বলবে। যা হয়েছে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নেবে। কিন্তু নিশি কি মেনে নিবে।

সবকিছু সাজিয়ে ছাদ আটকে নিচে চলে আসে। নিশি কে একটা লাল রঙের জর্জেটের শাড়ি দিয়ে পরতে। নিশি শাড়ি’টার দিকে তাকিয়ে থাকে। সত্যি’ই দেখতে অসম্ভব সুন্দর শাড়ি টা। লাল রঙের জর্জেটের শাড়ি’টায় ওয়াট স্টোন বসানো চমৎকার কারুকাজ।

“নিশান : ( নিশি’র দিকে কিছু টা ঝুঁকে ) জান পাখি পছন্দ হয়েছে

“নিশি : ( অজান্তেই ) হুম

“নিশান : ( মুচকি হাসে ) পড়ে আসো

“নিশি : ( হেসে ) আচ্ছা।
.
নিশি তাড়াতাড়ি করে শাড়ি টা পরে আসতে যায়। নিশি’র পছন্দ হয়েছে শুনে নিশান অনেক খুশি হয়।‌
নিশি ওয়াসরুম থেকে শাড়ি’র আঁচল ঠিক করতে করতে রুমে ঢোকে দেখে নিশান একটা কালো স্যূট করা। গলায় একটা লাল রঙের বো টাই। স্যুটের পকেটে একটা কালো গোলাপ। সিল্কি চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। মুখে একটা মুচকি হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে নিশি’র দিকে।
নিশি তো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে কারন নিশান কে সত্যি’ই আছ অনেক সুন্দর লাগছে তার কাছে।‌তার ধ্যান ভাঙে যখন নিশান বলে ওঠে…

“নিশান : এরকম ভাবে কি দেখছো জান পাখি। আমি জানি আমি অনেক হ্যান্ডসাম! ( ভাব নিয়ে )

“নিশি : কচু

“নিশান : কিহহ

“নিশি : কিছু না আমরা কি কোথাও যাচ্ছি?

“নিশান : হ্যাঁ… ( নিশিকে হাত ধরে আয়নায় সামনে বসায় )

“নিশি : কোথায়?

“নিশান : গেলেই দেখতে পাবে। এখন একটু চুপ করো তোমাকে সাজাবো আমি

“নিশি : আপনি সাজাতে পারেন..

“নিশান : তুমি দেখোই না।
.
নিশান নিশি কে সাজাতে শুরু করে।‌ শাড়ি’র সাথে মেচ করে লাল স্টোন বসানো ডায়মন্ডের কানের দুল, দু হাতে লাল রঙের কাঁচের চুড়ি আর গলায় একটা ডায়মন্ড নেকলেস পরিয়ে দেয়।
তারপর নিশি’র সামনে একটা লিপস্টিক দিয়ে বলে..
– এটা দাও।
নিশি লিপস্টিক টা দিয়ে ঠোঁটে লাগায়, লিপস্টিক টা লাল গাঢ় রঙের যা নিশি’কে আরো রাঙিয়ে তোলে।চোখে গাঢ় করে কাজল দেয়। তার হরিনী চোখে বেশ লাগছে। তার দুধ ফর্সা শরীরে লাল রঙের এই আবরন তার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারপর নিশানের দিকে ফিরে বলে.. রেডি আমি।

“নিশান : ( মাথা নাড়িয়ে ) না

“নিশি : কেন সব তো পরেছি

“নিশান : ( মুচকি হেসে নিশি’র খোঁপা বাঁধা চুল টা ছেড়ে দিয়ে ) নাও পারফেক্ট

“নিশি : ( ঘুরে আয়নায় তাকিয়ে ) বলতে হবে আপনার পছন্দ আছে শাড়ি’টা আসলেই অনেক সুন্দর!

“নিশান : হুম আমার পছন্দ অনেক ভালো সেটা তোমায় দেখলেই বোঝা যায় ( আয়নায় দাঁড়িয়ে নিশি’র দিকে তাকিয়ে )

“নিশি : ( চোখ নামিয়ে ) আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি

“নিশান : ( পেছন থেকে নিশি’র কোমর জড়িয়ে ওর চুলে মুখ গুজে ) গেলেই দেখতে পারবে চলো।
.
নিশান নিশি’র হাত ধরে নিয়ে যায় ছাদে। নিশি ছাদ দেখে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে। রাতের আঁধারে পুরো লাইটিং করা চারপাশ। দেখতে চমৎকার কার লাগছে।‌ নিশান হঠাৎ করেই একটা গিটার নিয়ে গান বাজাতে থাকে।


Dekha hazaron dafa aapko
Phir beqarari kaisi hai
Sambhale sambhalta nahi ye dil
Kuch aap mein baat aisi hai

( গিটার হাতে নিয়ে ঘুরে নিশি’র চারপাশ ঘুরতে ঘুরতে )

Lekar ijazat ab aap se
Saansein ye aati jaati hain
Dhoondhe se milte nahi hain hum
Bas aap hi aap baaki hain

( গিটার রেখে নিশি’র সামনে এসে ওর দু হাত ধরে )

Pal bhar na doori sahein aap se
Betaabiyan yeh kuch aur hain
Hum door hoke bhi paas hain
Nazdeekiyan yeh kuch aur hain

( নিশি’র কোমর ধরে নিজের কাছে টেনে নাচতে থাকে। নিশি দু হাত নিশানের বুকের ওপর রাখে। নিশানের ছোঁয়া আজ কেমন জানি লাগছে তার। সে অবাক চোখে নিশান কে দেখে যাচ্ছে।)

Dekha hazaro dafaa aapko
Phir beqarari kaisi hai
Sambhale sambhalta nahi ye dil
Kuch pyar mein baat aisi hai

Aagosh mein hai jo aapki
Aisa sukoon aur paaye kahan
Aankhen humein ye raas aa gayi
Ab hum yahan se jaaye kahan

( খোলা আকাশের নিচে এভাবে নাচতে থাকে দুজন )

Dekha hazaron dafa aapko
Phir beqarari kaisi hai
Sambhale sambhalta nahi ye dil
Kuch pyar mein baat aisi hai
Mmm.. hmm..
Phir beqarari kaisi hai
Mmm.. hmm..
Kuch pyar mein baat aisi hai
.

গান শেষে নিশান নিশি কপালে গভীর ভাবে একটা চুমু দেয়। তারপর নিশি কে ছেড়ে হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসে। নিশি এখন বুঝতে পারে নিশান কি করতে চলেছে। নিশান বলতে শুরু করে….

চলবে….
আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/395562878832157/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here