অস্তিত্বের খোজে
লেখকঃ নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ২
.
.
– গলায় ওড়না বেধে দাড়িয়ে আছি আর
ঝুপ ঝুপ করে কাঁদছি নিশব্দে।
যদি চিৎকার করে কাঁদতে পারতাম
তাহলে কষ্ট কমে যেত। আমার যে মা
নেই। কার কোলে মুখ লুকিয়ে কাঁদব।
– আল্লাহ্ আমি আর পারছিনা সহ্য করতে
বুকে খুব কষ্ট হচ্ছে। তুমি কি আমার কষ্ট
বোঝনা।
.
.
– গলা থেকে ফাঁস খুলে ফেলে বসে
পরলাম।
– আল্লাহ্ তুমি না বল তুমি যা কর
বান্দার মঙ্গলের জন্য কর। কিন্তু আমার
কি এমন মঙ্গল হল! জবাব দাও বলে ডুকরে
কেদে উঠলাম।
– মোট ৬ বার চেষ্টা করলাম কিন্তু
পারলাম না সুইসাইড করতে।
– শেষে ডিসিসন নিয়ে ফেললাম কিছু
মানুষের অপরাধে আমি কেন আমাকে
জাহান্নামে ফেলে দিব।
– ওদের তোহ আমি দেখে নিব আল্লাহ
যদি বাঁচিয়ে রাখে বলে নিচে
নেমে আসলাম।
.
.
.
– ৩ টা চিঠি লিখলাম চাচা-চাচী, ২
বোন এবং সব পড়াপ্রতি বেশির উদ্দেশ্য।
.
.
– লাষ্টে একটা কথায় লিখলাম
” দুনিয়ার বাস্তবতা করুন
যার বাবা-মা নেই তার কেউ নেই
মাথার উপরে ছাতা থাকা যে কতটা
জরুরি সবাই আমাকে দেখে শিখুন”
.
.
– নিজের সাটর্টিফিকেট , মায়ের
হাতের ২ টা চুর আর নিজের পোষাক
ব্যাগে ভরে বাসা থেকে বের হলাম।
– গন্তব্য অদুরে রেলস্টেশন।
– বাইরে নেমে বুঝতে পারলাম
আকাশের অবস্থা খুব ভাল নয় তাই পা
দ্রুত চালালাম।
.
.
.
– ২০ মিনিটের ভিতর রেলস্টেশনের মধ্য
চলে এলাম।
– একটা বেঞ্চিতে বসলাম আর এমন সময়
খুব জোড়ে বৃষ্টি নেমে আসল।
টিনের চালায় এত্ত জোড়ে বৃষ্টি
পড়ার শব্দ হচ্ছিল যে নিজের কথা
নিজেও শুনতে পাবনা মনে হয়।
.
.
– একটু দুরে ৩ টা মধ্যবয়সী মানুষকে
দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম। যারা
বিশ্রী ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে
আছে।
– আমার আর বুঝতে বাকি রইল না
সামনে মহা বিপদ।
– যেগুলো দোয়া জানি সেগুলো
পড়তে থাকলাম আর আল্লাহর কাছে এই
বিপদ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা
চাচ্ছিলাম।
– এমন সময় আযানের শব্দ কানে আসতেই
মাথায় বুদ্ধি চলে এলো। যেই ভাবা
সেই কাজ। দৌড়াইতে লাগলাম
মসজিদের দিকে
ওরাও আমার পিছে পিছে দৌড় শুরু করল।
.
.
.
– আমি বৃষ্টির মধ্যই দৌড়ে মসজিদের
গেটের মধ্য ঢুকে পড়লাম।
– ওরা ভাবতেও পারেনি আমি এই কাজ
করব।
মসজিদের বারান্দায় দাড়িয়ে আছি।
মুয়াজ্জিন আযান শেষ করে আমাকে
দেখতে পেল।
– উনি আমার কাছে এসে জিঙ্গাসা
করলেন কিছু সমস্যা মা!
– আমি থরথর করে কেপেই যাচ্ছি। এতেই
উনি বুঝলেন আমি সমস্যায় পড়েছি।
– উনি বাহিরে উকি দিতেই ওরা
লুকিয়ে পরে।
– আমি ওনাকে বললাম চাচা একটু
রেলস্টেশন অবদি পৌছে দিবেন!
আমার খুব ভয় করছে।
.
.
.
– উনি আমাকে এগিয়ে দিয়ে চলে
গেলেন। স্টেশনে এর মধ্য কিছু যাত্রী
চলে এসেছেন তাই হাফ ছেড়ে
বাচলাম।
– মাথায় ভাল করে ওড়না দিয়ে বড়
ঘোমটা টানলাম যাতে সহজে কেউ
চিনতে না পারে।
.
.
– ৫/৭ মিনিট পড় ট্রেন চলে আসল এবং
আমিও জলদি উঠে একটা জানালার
কাছে বসে পড়লাম।
–
–
–
– – একটু পর ট্রেন ছেড়ে দিল। আমার
জন্মস্থান যেখানে বড় হয়েছি। যেটা
আমার মাতৃভূমি সেই স্থান ছেড়ে চলে
যাচ্ছি সারা জিবনের জন্য। জানিনা
কোন দিন ফিরে আসবো কিনা… এই
কথা ভাবতেই ২ চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়তে
লাগল।
.
.
.
– পরীর চাচা আসরাফ ফযরের নামায
পড়তে উঠে বাহিরে এসে দেখে মেইন
গেট খোলা।
– পরীর চাচী রোকেয়া কে জোরে
হাক ডাক দিলে বাসায় সবাই উঠে
আসে শুধু পরী ছাড়া।
– পরীকে দেখতে না পেয়ে আসরাফ
নিশাকে বলল দেখতো পরী কোথায়?
– নিশা দৌড়ে গিয়ে ওর রুমে গেল
কিন্তু ওকে পেলনা শুধু টেবিলে ৩ টা
চিঠি পেল।
.
.
.
– বাবা পরী নেই ও মনে হয় চলে গেছে
বাসা থেকে। আমাদের উচিত ছিল আজ
অন্তত ওকে দেখে রাখা। যা ওর উপর
দিয়ে ঝড় গেল বলেই কেঁদে উঠল নিশা।
.
.
– আসরাফ ধপ করে বসে পড়ল মাটিতে।
সকাল হতে না হতেই রটে গেল পরী
বাসা থেকে পালিয়েছে। কিন্তু কেন
পালিয়েছে সেটা বুঝেও কেউ বুঝল
না।
.
.
– প্রতিবেশী আফজাল মিয়া এসে বলল
আসরাফ চল থানায় একটা জিডি করে
আসি।
– রোকেয়া খেকিয়ে উঠে বলল আমরা
কি ওকে তাড়িয়ে দিছি? ও নিজে
থেকে চলে গেছে। রুপের বাহার তো
আর কম নেই! গিয়ে দেখ কোন নাগরের
সাথে চলে গেছ।
শোন নিপার বাবা যদি তুমি থানায়
গেছ আমি এই এক কাপড়ে বাড়ি ছাড়া
হব।
.
.
.
– আল্লাহ্ কে ভয় কর রোকেয়া তোমার
ঘরেও ২ টা মেয়ে আছে। এই চোখে
অনেক কিছু দেখেছি কম অত্যাচার তো
তোমরা কেউ করো নি ওকে বলেই
আফজাল মিয়া চলে গেল।
– শুধু নিপা আর নিশাই কেঁদে যাচ্ছে
তাদের এতিম চাচাতো বোনটার জন্য।
.
.
.
১৬/১৭ বয়সী মেয়ে বৃষ্টিতে আধা
ভিজা জানালার পাশে বসে ফুফুয়ে
কাঁদছে সেটা ট্রেনের কামরার
কারো চোখ এড়াই নি।
– সবাই কেমন জানি করে তাকিয়ে
আছে।
.
.
.
– আমি লোকদের ওভাবে তাকিয়ে
থাকতে দেখে নিজেকে সংযত করে
নিলাম। চোখ মুছে মাথায় কাপড় দিয়ে
বসে থাকলাম।
.
.
– কিছুক্ষন পর টিটি আসল টিকিট চেক
করতে আসল। আমি বেশ ভয় পেয়ে
গেলাম। আমার কাছে কোন টাকা বা
টিকিট কিছুই নেই। ওরা কি আমাকে
পুলিশে দিবে এই ভেবে কুকড়ে
গেলাম। বাহিরের সম্পর্কে আমার
ধারনা তেমন নেই বললেই চলে।
.
.
– এই মেয়ে তোমার টিকিট দেখি বলে
টিটি আমার দিকে তাকাল।
– আমি ওদের দিকে চুপ করে তাকিয়ে
আছি।
– এই মেয়ে জলদি দাও তোমার কাছে
কি আমাদের বসে থাকলে হবে?
আমাদের কি কোন কাজ নাই বলেই খুব
জোড়ে ধমক দিল।
–
– আমার বুকের ভিতর দুম দুম করে শব্দ
বেজেই যাচ্ছে ভয়ে। এবার কি করব?
.
.
– মেয়েটি আমার সাথে আসছে
এখানে আসুন বলে কেউ টিটিকে
ডাকলো।
– আমি তাকিয়ে দেখলাম একটি ৭০/৭৫
বছরের লোক কোট টাই পড়া আমার
সামনে বসা। বেশ রুচিশীল ভদ্র লোক
উনি আমার ভাড়াটি দিয়ে দিল।
.
.
– স্যার উনি আপনার সাথে সেটা
বললেই পারত আমরা এরকম ব্যবহার করতাম
না।
– ওকে
.
.
-আমি ভদ্র লোকটির দিকে তাকাতেই
একটু দুরে সেই ৩ টা লোক কে দেখলাম।
এতে আমি বেশ চমকে গেলাম। এখন
আমি এদের টার্গেট সেটা বেশ বুঝেই
গেছি।
– অভাগা যেদিকে যায় সেদিকে
সাগর পুরাই।
– অসহায় ভাবে লোকটির দিকে
তাকালাম আবার ঐ ৩ জনের দিকে
একবার।
– ছোট মানুষ আমি কিভাবে কি করব
বুঝতেই পারছিনা।
.
.
.
– দুপুরের নাগাত ট্রেনটি ঢাকা
কমলাপুরে থামল।
– ভদ্র লোকটি হঠাৎ আমায় এসে বলল চল
আমার সাথে। ভয় করনা।
– ওনাকে একটু ভরষা পেয়ে ওনার
সাথে নেমে পড়লাম। সাথে সাথে ৩
টি লোক ও নামল।
– এই প্রথম ঢাকাতে আসলাম। সম্পূর্ন
অচেনা শহর আমার কাছে।
– উনি বলল মা যদি কিছু মনে না কর তুমি
আমার সাথে আসতে পার। তোমার মত
আমার একটা নাতনী ছিল যে ১ সপ্তাহ
আগে একটা দুর্ঘটনাবশত মারা গেছে
বলেই চোখের জল মুছলেন।
.
.
.
– আমি কোন কথা না বাড়িয়ে ওনার
সাথে একটা রিকশাই উঠলাম। এছাড়া
কোন উপায় নেই আমার কাছে।
– আমার যাওয়া দেখে ৩ টি লোক
তাদের নিজেদের হাত কামড়াচ্ছিল।
.
.
.
– রাস্তায় উনি আমার সাথে
স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলার চেষ্টা
করলেন।
– আমি ওনাকে সব বললাম এবং ফুফিয়ে
কেঁদেই চললাম।
– মনে মনে একবার ভাবলাম উনি
আমাকে বিক্রি করে দিবেন না তো!
.
.
– আমার ধারনা ভুল করে দিয়ে অনেক
বড় বিশাল একটা বাসার সামনে
রিকশা থামালেন।
– ভাড়া মিটিয়ে বললেন আমাদের ৪
টা গাড়ি আছে তবুও রিকশাতে চড়ার
মজাই আলাদা বুঝলে!
– আমি শুধু ঘাড় নারালাম।
.
.
– দাড়োয়ান গেট খুলে দিলে বাসায়
ঢুকলাম। এতো বড় শহরে এত বড় বাড়ি তার
উপর এতবড় জায়গার উপর দেখেই অবাক।
নিশ্চয় ওনারা জমিদার টাইপের ছিল
হয়ত।
.
.
.
– কলিং বেল দিতেই এক মহিলা এসে
দরজা খুলে দিল।
– আমাদের দেখেই চিৎকার দিয়ে বলে
উঠল গিন্নী মা এসে দেখুন কি ঘটনা
ঘটছে।
– লোকটি ধমক দিয়ে বলল এই কি হয়েছে
চিল্লাচ্ছিস কেন!
.
.
.
.
– একটি মহিলা যার সিঁথি ভরতি সিদুর,
কপালে সিঁদুরের ফোটা এবং খুবই
অভিজাত মহিলা সে এসে আমাকে
দেখেই চিৎকার করে ডুকরে কেঁদে
উঠে বলল ও বউ মারা তোমরা কে
কোথায় আছো এদিকে এসে দেখ
তোমাদের শশুর কি কান্ড টাই করেছে।
এই বয়সে আবার বিয়ে করে এনেছে
বলেই সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেল।
– কাজের মহিলাটি ওনাকে ধরে বলল
কর্তা এটা আপনি কি করলেন। একদম ঠিক
করেননি। বুড়া বয়সে ভিমরতি!
–
আরো অনেকে আমাদের সামনে এসে
অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে
রইল।
– লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে
লজ্জায় পড়ে গেলেন।
– আমি একটা হিন্দু বাসায় এসে পড়ছি।
অহ আল্লাহ আবার সেই যন্ত্রনা।
জানিনা কি আছে কপালে। আমার
জিবনে যে আরও চমক আছে এই বাসাতে
আমি তা কখনই ভেবে দেখিনি………..
চলবে…….