অস্তিত্বের খোজে পর্বঃ ৪৪

0
2152

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৪৪



– পরী বলে কয়েকবার শুভ্র ডাক দেয়। কিন্তু কোন রেসপন্স নাই পরীর।
শুভ্র সোজা বেলকুনিতে গিয়ে দেখে পরী দেয়ালে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে। লম্বা চুল দিয়ে পানি টপ টপ করে পরে ফ্লোর ভিজে গেছে।

শুভ্রের নতুন শার্ট একবারও পড়েনি সেটা পড়ে বসে আছে সাথে ২ কোয়াটার প্যান্ট ও।


– পরী কিছু দিন যাবত এই কাজ করে আসছে। শুভ্রর উপর রেগে গেলে ওর শার্ট পড়ে বসে থাকে আর ভাল ভাল মুহুত্বগুলো মনে করে ওদের ২জনের। এতে অনেক কাজ দেয়। অভিমান মুহুত্বের মধ্য চলে যায়। সংসারে সমস্যা হতেই পারে তাই এটা করে ও।


– শুভ্র কোন কথা না বলে পরীকে কোলে নিয়ে রুমে এনে টাওয়াল দিয়ে ওর চুল গুলো মুছে দিচ্ছে আর বলছে কি হইছে বলবা তো! তাছাড়া আমি বোঝব কেমনে,,,, কেন আমার উপর রাগ করেছো?


– তুমি নাকি কখনও কারো সাথে রিলেশন করোনি কিন্তু তন্নীর সাথে তো বেশ ডেটিং করছো। কি আমি সত্যি বলছি। পরীর চোখ লাল হয়ে আছে।


– শুভ্র পরীর শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলল তন্নী বলেছে এসব কথা তাইতো!


– যা বলেছি সেটার জবাব না দিয়ে অন্য কথায় কেন যাচ্ছো!


– পরীর ভিজা শার্টটা খুলে শুভ্র বলল তোমার যা মনে হয় বিশ্বাস করতে পারো বলেই ওর শরীল মুছে দিল।


– এটার কোন জবাব হলনা শুভ্র আমাকে সঠিকটা জানাও। আমি কষ্ট পাচ্ছি। আমাকে প্লিজ বলবে সত্যটা কি!


– যাও ড্রেস পড় বলে শুভ্র ওয়াসরুমে যেতেই পরী চিল্লায় উঠল পড়ব না আমি। আমি এভাবেই থাকব যতক্ষন না জবাব পাচ্ছি।


– পরী! জান্নাতের যদি ঘুম ভাঙ্গে তাহলে কিন্তু তোমায় আস্ত রাখব না। যা বলছি তাই কর বলেই ওয়াসরুমে ঢুকল শুভ্র।


– বজ্জাত,শয়তান, তিতা করলা, পেঁচা, খাটাস্ বলে যা ইচ্ছা তাই গালি দিতে লাগল পরী। তোমার সমস্যা কি! একটা কথার জবাব দিতে পারো না?


– শুভ্র গোসল সেরে এসে দেখে পরীর শরীরে কোন কাপড় নাই।


– যখন তখন এভাবে থাকতে নেই পরী! আমি ছাড়াও শয়তান জ্বীন হয়ত তোমায় দেখছে। খারাপ আছড় করে এভাবেই মানুষকে তাই ড্রেস পরে নাও।


– তোমার নিজের সমস্যা হচ্ছে সেটা না বলে বেচারা জ্বীন দের কেন দোষ দিচ্ছো?


– বাজে কথা বাদ দিয়ে যা বলছি তাই কর।


– পরী শুভ্রর ধমক খেয়ে আবার শুভ্রর একটা পাঞ্জাবি পড়ে।


– শুভ্র এটা দেখে মুচকি হেঁসে বলল পারফেক্ট। এবার থেকে আমার পোষাকই পড় তুমি। দারুন লাগছে বলে শুভ্র চেঞ্জ করে বলল অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়। শুভ্র সুয়ে পড়ে।


– পরী এবার প্রচুর রেগে বেডে গিয়ে বলল আমার কথার জবাব দিবানা?


– পরী! তুমি আমার সম্পর্কে অন্যের কথা বিশ্বাস করে রুমে বসে কাঁদছো। আমাকে ভাল করে বললে কথা গুলোর রিপ্লাই দিতাম কিন্তু আমার এখন মনে হচ্ছে তোমাকে কিছুই বলা উচিত না। যা পারো তাই ভাব আমার কিছু যায় আসেনা বলেই শুভ্র চোখ বন্ধ করে ফেলল।


– পরী একদম শুভ্রের পেটের উপর বসে বলল তন্নী আপুর হাতে ৪ টা লম্বা কাটা দাগ দেখলাম। ওগুলো নাকি তোমার জন্য কাটছে। আমাকে বলল আমি এভাবে কাটতে পারব নাকি তোমার জন্য।

আমিও বলেছি কাল কেটে এনে আপনাকে দেখাব এখন কাটলে সবাই দেখবে। ভাবছি উনি ৪ টা কেটেছে আমাকে তো নিম্নে ১২ টা কাটতেই হবে। হাতে কাটলে বাসার সবাই দেখে বকা দিবে তাই পায়ে কাটি কি বল শুভ্র!


– শুভ্র পরীর কথা শুনে হতবম্ভ হয়ে গেল। এ কি দিয়ে তৈরী। ♥আল্লাহ্♥ এরে একটু আমার জন্য হলেও ঠিক কর।

হাত যদি কাটিস তাহলে তোকে আর আস্ত রাখবনা। আমার লাইফ থেকে তোকে বিদায় করে ছাড়ব। শোন,,,,,,,

” ফুল পাগলের মাফ আছে কিন্তু তোর মত হাফ পাগলের মাফ নাই কিন্তু”।

আর যখন তখন পেটে উঠিস কেন হুম…….. আমার পেট কি তোর জন্য সরকারী জায়গা নাকি?


– পরীর ওদিকে খেয়াল নেই শুভ্র কি বলল না বলল।
তন্নী আপুর একটা কথাও বিশ্বাস করিনি কিন্তু আমার মনে হয় তন্নী আপু আমার থেকেও তোমাকে বেশি ভালবাসে আমিতো তোমাকে ভালবাসতেই পারিনা তার মত বলেই পরীর টপটপ করে চোখের পানি পড়ল শুভ্রর বুকে।


– ♥ আল্লাহ্♥ এর ব্রেন ওয়াশ করতে চাইছিল তন্নী এক ভাবে আর এখন দেখছি অন্য ভাবে কাজে দিছে। আহারে বেচারী তন্নী সে জানেই না শুভ্র ওর বউকে এই ৩ বছরে নিজের মত করে গড়ে তুলছে। তাই সিম্পল কিছু কথায় শুভ্রকে যে পরী সন্দেহ করবেনা সেটা আগেই জানত শুভ্র।


– আমার খুব খারাপ লাগছে শুভ্র তন্নী আপু তোমার সম্পর্কে কত কি জানে আর আমি বউ হয়ে তোমার সম্পর্কে কিছু জানিনা। কত্তবড় বেখেয়ালি মেয়ে আমি।


– শুভ্র পরীকে নিয়েই উঠে বসে বলল এত্ত বুঝিস কেন হুম। কেউ কারো ক্ষতি করতে চাইলে তার বিষয়ে সব কিছু জেনেই মাঠে নামে। আমাকে লাইক করার আগে ওর অনেক বয়ফ্রেন্ড ছিল। দেখ ওদের জন্য হাত কাটছিল আর এখন তোকে সেগুলো দেখিয়ে ব্লাকমেইল করতে চাচ্ছে বলেই শুভ্র পরীর পান্জাবী টা খোলার চেষ্টা করছে কারন ওর এখন পরীকে একান্ত ভাবে চাই।


– পরী নিজেই পান্জাবী খুলে শুভ্রকে বলল আচ্ছা সেদিন তুমি কেন ওভাবে কাঁদছিলা?

– আমার নিজের মায়ের জন্য বলেই পরীকে বুকে টেনে নেয় শুভ্র।

– নিজের মা! এটা কেমন কথা?

– আমার জন্মদাত্রী আরও একটা মা আছে সেটা তুমি জানোনা। এবার শুভ্র পরীর গলায় একের পর এক কিস♥ করতে লাগল।


– পরীর অনেক কিছু জানার আছে তাই শুভ্রের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। অবশেষে পরী আবার জিঙ্গাসা করল,,,,,
বাবা কয়টা বিয়ে করেছে? তাহলে অনিতা মা কে শুভ্র?

– আমার পালিত মা। মাধুরী নামে আরও একটা আমার মা ছিল বলেই শুভ্র পরীর বুকে কিস♥ করল।


– পরী এবার শুভ্রর কাছ থেকে নিচেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল তুমিও কি আবার একটা বিয়ে করবা শুভ্র?

– শুভ্র অনেক বিরক্ত হয়ে গেল এবার। আমাকে আদর করতে দিচ্ছিস না তাই আর একটা বউ তো আমার দরকার বলেই শুভ্র আবার পরীকে টেনে নিল। একদম কথা বলবিনা আর এত্ত বিরক্ত কেন করছিস!

শুভ্র ওর কাজে মত্ত কিন্তু পরীর বেশ চিন্তা ভিতরে ঢুকে গেছে। শেষে পরী খুব কঠিন একটা কথা বলল যা শুভ্রের মনমানুষিকতা নষ্ট করে দিল।


– দেখ শুভ্র আমি থাকতে তুমি অন্য কারো সাথে সংসার করবা সেটা আমার জন্য খুব কষ্টকর। আমি জানি ছেলেদের এক বউ দিয়ে হয়না। তাই আমার উপর যদি তোমার রুচি উঠে যায় আর যদি তোমার বিয়ে করার ইচ্ছা জাগে তাহলে বল আমায়। আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাব তখন তোমাকে আর কেউ নিষেধ করবেনা।


– পরীর কথা শুনে শুভ্র প্রচন্ড রেগে গিয়ে পরী বুকে জোড়ে কামড় বসিয়ে দেয়।


– আহ্ বলেই পরী শুভ্রর দিকে অসহায় ভাবে তাকাল। প্রচন্ড ব্যাথা পাইছে। কয়েক ফোটা পানি চোখ দিয়ে বেয়ে গেল।

বারে আমিতো তোমার ভালর জন্যই বললাম আর তুমি এভাবে কষ্ট দিবে তাই বলে বলেই পরী উঠে বসে।


– শুভ্রও বুঝতে পারছে পরীর খুব জোড়ে লাগছে। পরী স্যরি……… এমন কথা কেন বল যেটাতে আমি কষ্ট পাই।


– পরী আর কোন কথা না বলে ফিকরে কেঁদে উঠল। একদম আমার কাছে আসবে না। তুমিতো ২ টা বিয়া কব্বা যাও ঐ তন্নীরে কর। কত্ত স্টাইলিশ্ মেয়ে সে…… তারেই তোহ্ তোমার ভাল লাগবো। আমাকে তোহ্ আর লাগবো না। আমিতো ভালা না ভালা লইয়াই থাকো…………


– তুই খুব বেশি কথা বলিশ বলেই শুভ্র পরীকে জোড় করে বুকে টেনে নিল আর পাগলের মত কিস♥ করতে থাকে। শুভ্র পরীর পেটে মুখ ডোবাল।


– পরীও আর নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে পাল্টা কিস♥ করতে থাকে শুভ্রকে।

পরী যখন শুভ্রর মাঝে পুরো দমে হারিয়ে গেল তখন শুভ্র পরীকে ছেড়ে দিয়ে বলল এই টুকুই এনাফ তোর জন্য। আমার সাথে পাঙ্গা নিতে আসিস!
ভাল করে ডাকলাম কাছে আসলি না। এখন মজা বোঝ বলেই শুভ্র উঠে ওয়াসরুমে চলে গেল।


– পরী প্রচন্ড রেগে গেল। একে তো চুরি তার উপর সীনা চুরি!


– শুভ্র ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে এসে দেখে পরী ওভাবেই বসে আছে।
জান! কোন লাভ নাই ও ভাবে বসে থেকে বলেই শুভ্র সুয়ে পড়ল।


– পরীও শুভ্রর পিঠে ইচ্ছা মত কিল মারল অনেকক্ষন। তারপর চুল ধরেও মাথা ঝাকালো। কিন্তু শুভ্রর কোন রেসপন্স নাই।
শেষে ইচ্ছা মত নিজের রাগ ঝেড়ে ড্রেস পড়ে বালিশ নিয়ে গিয়ে সোফায় ঘুমিয়ে পড়ল।


– শুভ্র আবার অনেকক্ষন পর উঠে গিয়ে সোফা থেকে ঘুমন্ত পরীকে বেডে এনে সুয়ে দিল। শুভ্র পরীর কপালে কয়েকটা কিস করে এবং ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।



– আজ অর্পিতার বিয়ে। সন্ধার পর বরপক্ষ আসবে তাই পুরো দিনে অনায়াসে সব কাজ কমপ্লিট করা গেল। পরী ঘুম থেকে উঠে শুভ্রকে আর দেখতে পায়নি কিন্তু নিজের নাকে নাকফুল টা ঠিকি দেখতে পেল। তার মানে রাতে শুভ্র ওকে পড়ে দিছে। শুভ্রর উপর সব রাগ মাটি হয়ে গেল।


– নিদ্রা আর পরী একই রকম লাল শাড়ী পড়েছে আজ। একই সাজ। ২জনকেই দারুন লাগছে। পরী জান্নাতকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আর বাঁকি কাজ দেখাশুনা নিদ্রা করছে। সব মেহমানে ভরা পুরো বাসা। রাত ৮ টার পর বর আসল। চারদিকে বাজি ফুটানোর শব্দে জান্নাত ভয় পেয়ে যাচ্ছে তাই ওকে নিয়ে রুমে চলে আসি। আমি কিছু জানিও না এদের কিকি রিতিনীতি আছে বিয়েতে তাই রুমে থাকাই আমার ভাল। জান্নাতকে রাতের খাবার খাওয়াই দিলাম তারপর ওকে ঘুমানোর চেষ্টা করালাম কিন্তু পাজি মেয়েটা তো ঘুমাচ্ছেই না। দেড় ঘন্টা ধরে চেষ্টা করার পর ঘুমাল।



– অনেকক্ষন সময় হয়ে গেল নিদ্রা পরীকে দেখতে না পেয়ে কল দিল।

– হ্যাঁ আপু বলেন।

– তুমি কোথায়! কখন থেকে তোমাকে খুজছি। সবাই তোমাকে দেখবে জলদি আসো।

– জান্নাত ঘুমাইছে আপু ওরে রেখে কেমনে যাব?

– ওকে নিয়েই আসো বলে কল কেটে দিল নিদ্রা।

– কি আর করা বাধ্য হয়ে এভাবেই জান্নাতকে নিয়ে বাসা থেকে বের হলাম। ছাতনা তলায় গিয়ে হাজির হলাম একটু পর নাকি বিয়ে শুরু হবে। কিন্তু আপুকে না পেয়ে আমি আবার কল দিলাম আপুকে। কই আপনি আপু?


– অর্পিতার কাছে এখানে আসো।

– রুমের ভিতর গিয়ে দেখি অর্পিতাকে সাজানো শেষ। ওর শরীরে এত্ত গহনা দেখে আমিতো টাষ্কি খেয়ে গেলাম। কি নেই পুরো শরীর মনে হয় সোনা দিয়ে মুরানো।

– অর্পিতা! তোমার ভারী লাগছেনা?

– প্রচন্ড ভারী বউদি। মনে হচ্ছে সব খুলে ফেলে দিই। বউদি জান্নাত কে আমার কাছে দিবা বলেই অর্পিতা কেঁদে উঠল।

– আমার নিজেরই কান্না পাচ্ছে তাহলে অর্পিতার কি হয়ে যাচ্ছে। আমি অর্পিতার কাছে জান্নাত কে দিতেই ও ফুফিয়ে কান্না করতে লাগল।

– অর্পিতা চুপ করতো কি শুরু করলা বলেই নিদ্রা ধমক দিল অর্পিতাকে।

– অর্পিতা জান্নাতকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিতেই ওর ঘুম ভেঙ্গে গেল। অর্পিতার দিকে চেয়ে আছে জান্নাত। হয়ত ওর ফুফিকে ওর কাছে আজ আজব লাগছে তাই।

– তোমার পিসি আর তোমার কাছে পুরোটা দিন থাকতে পারবেনা বাবা বলেই অর্পিতা জোড়ে কেঁদে উঠল। এটা দেখে জান্নাতও চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।

– পরী জান্নাতকে নিয়ে রুম থেকে বাহিরে গেল। শুভ্রকে কাছে আসতে দেখেই জান্নাত থেমে যায়। শুভ্র ওকে কোলে নিয়ে রুমের ভিতর যায়। একটু পর কৌশিকদা ও চলে আসে। তারমানে অর্পিতাকে নিয়ে যাবে এখন।


– শুভ্র পরীকে ডাকতেই পরী হাজির ওর কাছে। জান্নাতকে পরীর কোলে দিতেই জান্নাত শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে থাকে। মার কাছে যাবেনা। বাবা আমি এখন কাজ করব বলেই শুভ্র জান্নাকে আদর করে পরীর কাছে দিয়ে অর্পিতার কাছে যায়।


– ২ দাদা মিলে অর্পিতাকে নিয়ে যায় ছাতনা তলায়। বিয়ে শুরু হয়ে যায়। আমি আর নিদ্রা আপু একসাথে দাড়িয়ে আছি। পলা আন্টি জান্নাতকে নিয়ে আছে। শুভ দৃষ্টি, মালা বদল, কন্যাদান, সাত পাক ঘোরা সহ সব রিতি পালন হল। আমি আপু সবাই ফুলের পাপড়ি ছিটালাম। শুভ্র কখন আমার পাশে দাড়িয়ে আছে আমি বুঝতেই পারিনি। অনেক পরে বুঝতে পারলাম। শুভ্রের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখে পানি ছলছল করছে।


– সিঁদুর দানও হয়ে গেল। আমি আর থাকলামনা কারন জান্নাত ঘুমাবে বলে কান্না করেই যাচ্ছে। শুভ্র আমাকে রুমে যেতে বলল জান্নাতকে নিয়ে। রুমে এসে আর বের হইনি রুম থেকে। মা শুধু এসেছিল একবার। মা প্রচুর কান্না করছে।

রাতে আর শুভ্র রুমে আসল না। অনেক বার কল করলাম রিসিভ করলনা। শেষে মাসেজ করল ” ঘুমিয়ে পর আমার যেতে দেরি হবে”।
তবুও অনেক রাত অবদি পরী জেগে থাকে। যদি শুভ্র আসে। একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।


– সকাল ১০ টার দিকে পলা এসে পরীকে ডেকে নিচে নিয়ে গেল। অর্পিতা চলে যাচ্ছে। অর্পিতা প্রচুর কান্না করছে। শুভ্র কিছু দুরে দাড়িয়ে আছে অন্য দিক হয়ে। আমি ওর কাছে যেতেই জান্নাত শুভ্রর কোলে ঝাঁপ দেয়। আমার তো দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ভাগ্গিস শুভ্র ধরে ফেলেছিল। এই মেয়ে বাবার জন্য পাগল বুঝলাম তাই বলে ঝাপ দিবে!
শুভ্রর যদি মিসটেক হয়ে যেত তাহলে কি হত ভাবতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে।

শুভ্র মনে হয় পুরো রাত কাঁদছে। ওর চোখ দুটি ভিষন রকমের লাল। চেহেরা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ওকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল। শুভ্রর কাছে চুপ করে পরী দাড়িয়ে আছে।


– অর্পিতা সবাইকে জড়িয়ে ধরে কান্না করল। শুভ্র একবারও ওর কাছে যায়নি। অর্পিতাকে গাড়িতে তুলতেই বলল দাদাহ্…. দাদা,,,,, আমি দাদার কাছে একটু যাবো।



– শুভ্র অর্পিতার কাছে যেতে পরীও ওর পিছে পিছে গেল।

– শুভ্রকে অর্পিতা দেখে গাড়ি থেকে নেমে জড়িয়ে ধরেই কান্না করতে লাগল আবার।
দাদাহ্ শোন,,,,,,,,,,, আমার অনেক খারাপ লাগতেছে।
আমার বুকে ব্যাথা করছে দাদা। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে দাদা বলে শুভ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল অর্পিতা। অর্পিতা কেঁদেই চলছে।


– শুভ্রর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ে যাচ্ছিল। অর্পিতা জান্নাতকে নিয়ে অনেক গুলো কিস করে বলল আমি চলে যাচ্ছি মা ভাল থেক। বউদি দাদাকে কখনও কষ্ট দিওনা কিন্তু। আমার দাদা দুনিয়ার সব থেক বেষ্ট মানুষ তাকে কখনও কষ্ট দিও না বলে গাড়িতে উঠল।


– শুভ্র গাড়ির ডোরটা লাগিয়ে দিবে এমন সময় অর্পিতা বের হয়ে আবার শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে।
“সারা জিবনের জন্য থ্যাংকস দাদা আমাকে এত্ত ভালবাসা দেওয়ার জন্য” বলেই আবার কেঁদে ওঠে অর্পিতা। আমি কেমনে তোমাদের ছাড়া থাকব। শুভ্র অর্পিতার কাছ থেকে জোড় করে নিজেকে ছেড়ে নিয়ে অর্পিতার কপালে একটা কিস করে বলল গাড়ি থেকে যেন আর নামতে না দেখি বলেই ওকে গাড়িতে তুলে দিয়ে ডোর বন্ধ করে দিল।


– ওরা অর্পিতাকে নিয়ে চলে গেল। অর্পিতা চলে গেল সবাইকে কাঁদিয়ে। আসলে মেয়েদের নিজের বলতে কিছুই নেই। নিজের আপনজন ছেড়ে অন্য জায়গায় বসবাস করতে হয়। সেখানেও হাজার সমস্যা।


– পুরো বাসাটা খাঁ খাঁ করছে।সব জায়গায় অর্পিতার স্মৃতি। শুভ্র রুমে এসে ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে। একমাত্র আদরের বোন সেও চলে গেল আজ। চোখের পানি বাধ মানছেনা।


– পরী রুমে ঢুকে দেখে শুভ্র নিশব্দে কেঁদেই চলছে। বার বার চুপ করার কথা বলেও ও থামতে পারছেনা। পরীই ভয় পেয়ে গেল। ও এমন করছে কেন। শেষে কোন বুদ্ধি না পেয়ে জান্নাতকে ওর কোলে দেয় পরী।


– বাবা,,,,, বাবা বলে জান্নাত শুভ্রকে বার বার ডাকতে লাগল। জান্নাত ওর বাবার চোখের পানি মুছে দিচ্ছে আর গালে চুমা খাচ্ছে। বাবা না বাবা বাবা বলে কয়েকবার ডাকতেই শুভ্রর যেন হুস ফিরে আসে। শুভ্র জান্নাতের কপালে কিস করে বুকে জড়িয়ে ধরল। মেয়েটাও বাবার বুকে চুপটি মেরে থাকল। বাবাকে পেলে তার আর কিছু চাইনা। প্রতিটা মেয়ের কাছে তার বাবা একজন দুনিয়ার শ্রেষ্ট মানুষ ছোট্ট জান্নাতের কাছেও হয়ত তার ব্যাতিক্রম না।

চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here