অস্তিত্বের খোঁজে পর্বঃ৩

0
3581

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৩


– সবাই মহিলাটিকে ধরাধরি করে তুলতে গেল।
– এবার ভদ্র লোকটি বেশ জোড়েই সবাই কে ধমক দিলো।
– ওনার এক ধমকে সবাই চুপ। লোকটির পরিবারে বেশ দাপট দেখছি।
.
.
– এটা আমার বন্ধুর নাতনী। আজ থেকে এখানেই থাকবে। পড়াশুনার জন্য এসেছে। আসার সময় মাথায় রং পড়েছে। আর হাটুর বয়সী মেয়ে কে কোন দুঃখে বিয়ে করতে যাব।
.
.
– ওনা স্ত্রী চট করে চোখ মেলে বলল আপনি সত্য বলছেন।
– বিমলা তুমি যে ঙ্গান হারানোর নাটক করছো সেটা ভাল করেই জানি।
.
.
– উনি আমাকে নিয়ে সোজা ছাদে আসলেন সেখানে একটি রুম খুলে ভিতরে ঢুকে বলল যেহেতু তুমি মুসলিম তাই আমার স্ত্রী তোমাকে নিচে থাকতে দিবেনা। এখানে থাকতে পারবেনা!
– আমি ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম।
– কালকেই এসি লাগিয়ে দিব এবং যাযা দরকার। তুমি রেষ্ট কর। বলেই চলে গেলেন।
.
.
– বিশাল একটি অভিজাত বাসা। কি নেই এখানে!
– আমি ওয়াসরুমে গিয়ে গোসল করে বের হয়ে দেখি ওনাদের কাজের মেয়েটা খাবার নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

– সুনেছি তুমি নাকি মুসলিম ঘরের মেয়ে মানুষ। যেখানে সেখানে হাত দিবেনা বলছি। গঙ্গা জল দিয়ে আবার ধুতে হবে। ঠাকুর ঘরেতো একদম যাবা না।
– হুম….. দায় পড়েছে আপনাদের ঠাকুর ঘরে যেতে মনে মনে বললাম।
– আমি এই ঘরে ১২ বছর ধরে কাজ করছি। সবাই আমাকে পলা বলেই ডাকে।
– নাও খাবার আনছি খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর।
– আমি বিসমিল্লাহ বলে খাবার খেয়ে নিলাম।
– উনি চলে গেলেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। আমি খুব ক্লান্ত ছিলাম।

– ভদ্র লোকটির নাম নিতাই সেন। একজন রিটার্ড বারিষ্টার। একটাই ছেলে। তাদের আবার ২ টি ছেলে একটি মেয়ে।
.
.
– সন্ধার পর একটু মেয়ে এসে আমায় ডাক দিয়ে বলল এই তুমি এখনও ঘুমাচ্ছো দিদুন দেখলে বকা দিবে তো।
– আমি চোখ মেলিয়ে দেখি একটা মেয়ে। আমি ধরপড় করে উঠে বসলাম।
– তুমি কে?
– আমি অর্পিতা। তোমার নাম কি?
– পরী…… কিসে পড় তুমি?
– ক্লাস টেন।
– চল তোমাকে আমাদের পুরো বাসা দেখায় বলে হাত টেনে রুম থেকে বের করে আনল।
– মেয়েটি বেশ মিশুক।
.
.
.
– আমাকে একে একে সব দেখালো। এই পরিবারটা বেশ কিন্তু অর্পিতার দিদুন আর মা আমায় সহ্য করতে পারেনা।
– ব্যাপার না চাচী কত বার ভাতের থালা কেরে নিছে তা গুনে শেষ করা যাবে না।
.
.
.
– এভাবে ৭ দিন কেটে গেল। বেশ মানিয়েই নিয়েছি।
আমি নিচে খাবার খেতে শুধু যাই। কারন অনেকে আমায় পছন্দ করে না।
– অর্পিতা আর নিতাই দাদু এসে গল্প করে যায়।


– সেদিন সন্ধায় আমি ছাদে বসে ছিলাম। অর্পিতা এসে বলল আমার মেঝ ভাইয়া এসেছে। তুমি দেখবে তাকে?.
– না অর্পিতা পরে দেখব। আমার শরীর বেশ খারাপ।
– ওকে দাদুকে পাঠিয়ে দিচ্ছি বলে চলে গেল।
– আমি রুমে গিয়ে সুয়ে পড়লাম। জ্বর আসা আসা ভাব।
– সাড়ে ৮ টার দিকে নিতাই দাদু রুমে এসে বলল পরী তোমার নাকি শরীর খারাপ।
– না তেমন কিছু নয়।
– নিচে চল বলে আমাকে নিয়ে আসল।
– ডাইনিং টেবিলে আমি ওনার সাথেই বসি আর আমার পাশে অর্পিতা।
-আমি খাচ্ছিলাম। এমন সময় কেউ যেন বলল কি ব্যাপার অর্পিতা আমাকে ছেড়েই খাচ্ছিস?
– আমি তার দিকে তাকিয়ে যা দেখলাম এতে আমার গলায় ভাত আটকে যাওয়ার অবস্থা।
ভিষন জোড়ে বিষম খেয়ে উঠলাম। এ আর কেউ নয় যার জন্য আজ আমার এই পরিস্থিতি এটা সেই ছেলে।
.
.
– দাদু আমাকে পানি এগিয়ে দিয়ে বলল জল খাও আর ধীরে সুস্থে খাও।
– কি আর খাব চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরে যাচ্ছে।
– ছেলেটিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়ত চিনতে পেরেছে।
– আমি কোন মত খেয়ে উপরে চলে এলাম।

– শুভ্র রুমে বসে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে এসি রুমে থাকা স্বতেও। এটা কি ভাবে সম্ভব!
নিজের ফোন বের করে ভিডিও টি বের করে আবার দেখল। নাহ্ সেই মেয়েটাই। ও এখানে কি ভাবে আসল।


-রাত ১১ বাজে শুয়ে আছি। গায়ে জ্বর এসে গেছে ভিষন। এমন সময় দরজায় নক করল।
– আমি চুপ করেই আছি।
– পরী দি আমি অর্পিতা দরজা খোল।
– আমি জ্বরের ঘোড়েই দরজা খুলে দিয়ে না দেখেই আবার খাটে এসে সুয়ে পড়লাম।



– পরী দি দেখ দাদা আসছে তোমার
সাথে পরিচিত হতে।
– অর্পিতা আমার খুব জ্বর আসছে। আমার
সমস্যা হচ্ছে।
– ও আমার গায়ে হাত দিয়ে চমকে উঠে
বলল বেশ জ্বরতো আসছে। দাড়াও আমি
থার্মোমিটার আর মেডিসিন নিয়ে
আসছি বলে চলে গেল।
– আমি তাকিয়ে দেখি সেই
ছেলেটি।
– শুভ্র এক ঝটকায় পরীকে টেনে তুলে
বলল এই মেয়ে তুমি এখানে কিভাবে?
– আমার এত রাগ উঠল যে ওনাকে ঐ
অবস্থায় গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে
ঠাশশশ্ করে চড় মেড়ে দিলাম এবং
বললাম তোর সুখ হারাম করতে এসেছি
এই বাসায় আজারাঈল হয়ে। এবার বুঝবি
দেখ কেমন মজা লাগে।
তোর এই সুন্দর চেহারার পিছনে যে
কুকুরের চেহারা আছে সেটা তোর
পরিবার কে দেখাতে হবেনা!
.
.
– সিড়িতে কারো আসার শব্দ পেয়ে
আবার বসে পড়লাম খাটে।
– অর্পিতা আসতেই শুভ্র অপমানিত ও
রাগানিত হয়ে চলে গেল।
– জ্বর মেপে মেডিসিন খাওয়াই য়ে
অর্পিতা চলে গেল।
.
.
– আমি রাগে কেঁদে উঠলাম। আল্লাহ
আমায় কোন জায়গায় এনে ফেললে।
– সকালে ঘুম থেকে উঠে রুম থেকে বের
হয়েই দেখি শুভ্র দাড়িয়ে আছে।
– ওনাকে দেখে রুমে আসতেই উনি
আমাকে ডাক দিল।
– আমি দাড়িয়ে গেলাম।
– এমন সময় কাজের মেয়ে পলা বাটিতে
করে কি যেন নিয়ে এসে বলল একি
দাদা বাবু আপনি এখানে।
– শুভ্র কিছুটা হচকিয়ে উঠে বলল এই তো
সকালের বাতাশ ভাল লাগে তাই।
– পরী মিষ্টি খাও।
– কিসের মিষ্টি?
– ওমা তুমি জানোনা এতবড় খবর!
– আমি বিসিএস রিটেন পরীক্ষায় ১ম
হয়েছি কাল ১২ টার পর ফলাফল
প্রকাশিত হয়েছে সে উপলক্ষে।
.
.
– আমার হাতে মিষ্টি দিয়ে পলা চলে
গেল।
– পলা চলে গেলে মিষ্টি গুলো শুভ্রর
মুখের সামনে ছুড়ে মেরে বললাম
অমানুষ কখনও মানুষ হয়না বলেই রুমে দ্রুত
চলে আসলাম। দরজা লাগিয়ে দিয়ে
বসে ফুসে যাচ্ছি। খারাপ মানুষের এত
ভাল রেজাল্ট হয় কিভাবে।
.
.
.
– শুভ্র রাগে অপমানে পরীর রুমের
দরজায় গিয়ে ২ টা লাথি মেরে
নিচে চলে আসে।
.
.
– আমি সকালে নিচে নামতে বিমলা
দিদুনের সাথে ধাক্কা খেয়ে
গেলাম।
– উনি গলা খেকিয়ে উঠে বললেন নষ্ট
করে দিলিতো সব। আবার গোসল করতে
হবে।
– শুভ্র এসে বলল দিদুন এই মেয়ে কোথা
থেকে জুটেছে? ছোট লোক কিভাবে
বুঝবে হাই পরিবারের সাথে
কিভাবে চলতে হয়! বলে একটা
শয়তানি হাসি দিল।
.
.
– ওনার কথা শুনে এত্ত কষ্ট হল যে আমি
ওখান থেকে উপরে চলে আসলাম।
– অর্পিতা পরী আসেনি খাবার
খেতে। আমি ডেকে আনছি দাদু বলে
অর্পিতা চলে গেল।
– বাধ্য হয়ে নিচে নামতে হল।
– খেতে খেতে নিতাই সেন বলে উঠল
সামনে পুজা সবার যাযা কেনাকাটা
আছে আগে থেকেই করে নাও পরে
ভিড় হবে।
– দাদু তাহলে আজই যাব।
– তুই কেন একা যাবি আমরাও যাবতো
অর্পিতা।
.

.
– সবাই শপিং এ চলে গেছে। আমি আর
পলা আন্টি সহ আরও ২ টা কাজের লোক
বাসায়।
.
.
– আমি উপরে আমার রুমে ঢুকে ছিটকি
লেগে দিয়ে পিছন ফিরে দেখি শুভ্র
আমার বিছায় সুয়ে আছে।

– আমি পিছন ফিরে দরজার ছিটকি
খুলে দেওয়ার আগেই ও উঠে আমায় ধরে
ফেলল।
– আমি একবার চিৎকার দিতেই আমার
মুখ চিপে ধরল……. এবং বুকের সাথে
জড়িয়ে নিল…
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here