অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া পর্ব_১৫

#অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া পর্ব_১৫
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)

২২.
অতলস্পর্শীর বিরহে যাওয়ার নিপীড়ন কি সহজে ভুলা যায়। প্রতিটা মুহূর্তই দরুণ মনে জেরা করে উঠে। কপোতাক্ষ নদের তীরে অঢের জলের ঢেউ এর ধারপ্রান্তে পা ভিজিয়ে বসে আছে ইফদিয়ার। পায়ের টাখনু পর্যন্ত পা ভিজে গিয়েছে।
জুতাজোড়া বালির উপর রাখা। বোরকার নিচের অংশের পাড় হাটু অব্দি বেঁধে রেখেছে।
যশোরে মনকাতরতার চেয়ে মন উৎফুল্ল করার প্রধান মাধ্যম কপোতাক্ষ নদ।

বোর্ড পরীক্ষা শেষ হয়েছে একসপ্তাহ হলো। তিয়ানা ছাড়া নিঃসঙ্গতায় কাটলেও রুহিয়া ছিল একমাত্র মেয়ে। যে কিনা বান্ধবীর পরিবর্তে এলেও কখনো বুঝতে দিতো না বান্ধবী ছাড়া নিঃসঙ্গতার জড়তা। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
তিয়ানার সঙ্গে কথাও হয় নি। কারণ তার ফোন অসুস্থতার সময় ধরা বারণ। চিকেন ফক্স এর মত রোগ থেকে এখনো সেরে উঠতে পারিনি।
পরীক্ষা দিয়েছে বহু কষ্টে। বাসা থেকে পরীক্ষা দিতে এলে তাকে আলাদা কক্ষে বসিয়ে দেওয়া হতো। যে কক্ষে কোনো ছাত্র-ছাত্রীর প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা। আলাদা কক্ষে নিঃসঙ্গ নিরবতায় তার পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তাকে দূর থেকে দেখার সাধ্যতা পেয়ে ছিল ইফদিয়ার। তার কক্ষের বাহিরে গার্ড দেওয়ার জন্যে পিয়ন থাকত। তারা কড়া গাইড দিয়ে সকলকে তাড়িয়ে দিতো। ইফদিয়ার করুণ চাহনী দিনকে দিন তিয়ানার জন্যে জমাটবদ্ধ হয়ে উঠছিল।
শেষ পরীক্ষায় কাছে যেতে গেলেই তিয়ানা নিজ দায়িত্বে দূরে সরে গেল। তার অসুস্থময় চাহনীতে শুধু ছলছল চোখজোড়া লক্ষ করে ছিল ইফদিয়ার। এর মর্মই হলো যে অসুস্থতায় তিয়ানা ভোগছে সে অসুস্থতায় কোনোভাবেও নিজের বান্ধবীকে ভোগ করতে দিবে না। ফলাফল দুমুঠো চোখের জল ফেলে প্রস্থান করে।
অতএব বেশ চাপা কষ্ট মিটাতে না পেরে নদের পাড়ে চলে এলো ইফদিয়ার।
কিন্তু মস্তিষ্কের ইচ্ছার বিরুদ্ধ হলেও মনে চেয়ে ছিল একবার ভার্সিটির প্রবেশদ্বার দেখে আসতে। কিন্তু কোথাও না কোথাও মান-অভিমানের দুটানার আলিঙ্গন হৃদয় জুড়ে বিরাজমান ছিল। সময়টা এমন যে গৌধূলী বেলা আরম্ভ হয়েছে। আনমনে চেয়ে আছে গৌধূলীর লগ্নে। কপোতাক্ষ নদের মুগ্ধতর ঢেউয়ে মনে পড়ে যায় বিখ্যাত স্পর্শীময় কবিতা।

“সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে
সতত যেমনি লোক নিশার স্বপ্নে
শোনো মায়ামন্ত্র ধ্বনি তব কলকলে
জুড়াই এ কান ভ্রান্তির ছলনে।”

অসাধারণ কবিতাটি লিখতে গিয়ে মাইকেল মধুসূদন দত্ত কপোতাক্ষ নদকে ঘিরে নিজের সুখীকাতরতার মর্ম বুঝিয়েছেন। উনার দেশপ্রেমিকতার বক্ত করার মত ভাষা নেই মুখে। তবুও সেই স্পর্শীময়ী কবিতায় তিনি নদকে ঘিরে স্মৃতিচারণ করিলেও ইফদিয়ার মনে প্রিয়ম মানুষটির স্মৃতি ফুরফুরে উঠে।
মানুষটি কে ভুলতে চেয়েও পারে না। কেমনে পারবে জীবনে তার কাছে মা-ভাইয়ের পর ঐ মানুষটিই ছিল একমাত্র শেষ অস্তিত্ব। যার হাত ধরে নদ-নদীর কিনারায় হাঁটতে চেয়েছিল। তিমির আঁধারে কুহু ডাকের পাখির কলকাকলিতে চন্দন মাখাতে চেয়ে ছিল একে অপরের গালে। শত স্বপ্ন আজ স্বপ্ন রয়ে গেল। পূর্ণ হবার আকাঙ্ক্ষা আজও জেরা করে বেড়ায়। হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘাবড়ে গেল ইফদিয়ার। ভাবনাটাও বিচ্ছেদের মত ফুড়ৎ করে উড়ে গেল মন হতে। পাশ ফিরে দৃষ্টি মেলে দেখে ক্লাসের সেই বোকা ছেলেটি। যাকে সে বোকা বানিয়ে ছিল সিটে বসতে না দেওয়ার জন্যে। বোকা ছেলেটিকে পলক ফেলতে সম্মুখে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। নেকাপ শুদ্ধভাবে টেনেটুনে বোরকা টান টান করে ফেলে। ছেলেটি এখনো ভ্রু কুঁচকে ইফদিয়ার কান্ড কারবার দেখছে। যখন দেখল মেয়েটি নড়চড় করছে না। তখন গলা খাকড়ি দিয়ে প্রশ্ন করে।

‘তুমি ইদানিং চঞ্চলতার মাঝ থেকে হারিয়ে গেলে কেনো!’

ছেলেটির কথায় জবাব দিতে হিমশিম খাচ্ছে ইফদিয়ার। অস্বস্তিময়ী দৃষ্টিতে হাত মুচড়ামুচড়ি করে আমতা করে বলে,

‘দেখেন ঐদিনের জন্যে রিয়েলী সরি। সেসময়টা বাচ্চামো ভেবে মাফ করবেন। আল্লাহ হাফেজ আসি।’

কথা কাটিয়ে বুকের ঘাবড়ানো আঁটকে নদের পাড় থেকে চলে যায় ইফদিয়ার। ছেলেটি নিঃশব্দে জোরালো শ্বাস ছেড়ে বলে,

‘শরীরের প্রতিটা শিরা উপশিরায় শিরঃপীড়া বয়ে যাচ্ছে রমণী। তবুও তোমার সুরেলা কণ্ঠধ্বনিতে মিষ্টান্ন কথন আলাপ করার সুভাগ্য হলো না। এতটাই কি যোগ্য নয় আমি!’

আনমনা হয়ে নিজেকে প্রশ্ন করে ছেলেটি। উত্তর ভাবলেশনহীন হয়ে রইল। এর উত্তরটা যে কাঙ্ক্ষিত মানুষটি ছাড়া আর কেউ দিতে পারবে না। ‘ওয়াসিব’ কোনো পুরুষেলী সূক্ষ্ম কণ্ঠের মধ্যে নিজের নাম শুনে দৃষ্টিপাত করে উক্ত মানুষটির উপরে।
মানুষটি এসে উদাসীন ওয়াসিবকে দেখে হতাশের সুর টেনে বলে,

‘ওয়াসিব চল এবার। যার কাছে তোর মূল্য ক্ষুণ্ণ তার কাছে ভিক্ষা চাওয়ার কোনো মানে হয় না।’

ওয়াসিব অসহায় দৃষ্টিলব্ধে পুরুষটির দৃষ্টিতে দৃষ্টি রাখে। সূক্ষ্ম কাতর গলায় সে বলে,

‘ওরাইব ভাই আমি কি নিতান্তই অযোগ্য ঐসে রমণীর।’

‘এমন না ভাই তুই আর সে তফাৎ আকাশ-পাতালের। জানি মেয়েটির জন্যে তোর মনে স্ফট ফিলিংস আছে। কিন্তু আমার মনে হয় না তার মনে এর অনূভুতির কণাও আছে কিনা! কারণ মেয়েটিকে দেখলে মনে হয় কোনো বিষাদের ছাঁয়া নিয়ে সে চলছে। একবার সেই ছাঁয়া মায়ায় রুপ নিলে বোধ হয় বিরহের তৃষ্ণা ভালোবাসার মিলনে বেঁধে যাবে।’

ওরাইব এর মুখে আহ্লাদী অনুভবী কথা শুনে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে রুক্ষ মেজাজে ভরে উঠে ওয়াসিবের। কথাগুলো সহ্যহীন লাগছে তার কাছে। সে চাইছে কথাগুলো যেন ভবিষ্যৎ এ মিথ্যে প্রমাণ হোক। ওরাইবকে কতিপয় কথা বলতে বারণ করে আক্রোশে দ্রুত পা ফেলে নদের পাড় হতে চলে যায়। নিজ স্কুটির সামনে এসে হেলমেট মাথায় পড়ে নিল ওয়াসিব। তাকে রেগে চলে যেতে চিন্তার ভাঁজ কপালে ফুটে উঠে ওরাইবের। সেও ছুটে এলো ওয়াসিবের কাছে।
ওরাইবকে দেখেও অদেখার ভান করে তীক্ষ্ম গলায় বলে,

‘ওরাইব ব্রো আইম নট ইন্টারেস্টেড ফর লিসেন ইউর ব্লশীট টকিং।’

ওরাইব শুনে শুকনো ঢোক গিলে অপরাধী গলায় বলে,

‘আইম সরি ব্রো প্লিজ গিভ মি এ লিফ্ট।’

‘কাম ফাস্ট।’

গাম্ভীর্য কণ্ঠে বলার পরও ওয়াসিবের চুক্ষগোচরে মুচকি হাসে ওরাইব। সে জানে তার ভাইটা অত্যন্ত আবেগী মানুষ। সহজে কেঁদে ফেলে শক্ত মানুষী রুপ তার মাঝে নেই। কষ্ট পেলেও এত কাঁদে না যত না কষ্ট পাই প্রিয় মানুষের অবহেলায়। ওরাইব সাক্ষি তার ভাইকে সে দেখেছে কেমনে প্রতিটা রাত ওয়াসিব বিলাপ করেছে নিজের সঙ্গে। বলতে থাকতো যে কেনো সেই মাতাল করা রমণী তাকে সহ্য করে না। কেনো দূরে সরে থাকে! এমন আজগুবি কথা প্রায় ওয়াসিব রাতের আঁধারে আকাশপানে চেয়ে থেকে বলতো।

২৩.

ইসমাইল চেম্বারে বসে ছিল। দিনটায় বেশ ধকল যাচ্ছে। রবিবার হওয়ায় এক এক রোগীর আনাগোনা চলতেই আসে। টেবিলে রাখা ফাইলে ওষুধের নাম লিখছে। যা ইতিমধ্যে ফার্মেসী থেকে আনতে অর্ডার করবে সে। কিছুক্ষণ পর মেইল নার্স এসে বলে,

‘গুড আফটারনুর ড.।’

‘গুড আফটারনুর ব্রো। এনি অফ পেশেন্ট ওয়েটিং নাউ!’

উক্ত প্রশ্নে মেইল নার্স দরজা খুলে একবার বাহিরে উঁকি দিল। চেম্বারের বাহিরে বসার সিটে কোনো রোগী অপেক্ষায় নেই। আপাতত খালি পড়ে আছে। অন্যান্য চেম্বারের সম্মুখে রাখা সিটে মানুষ বসে আছে। দরজা ভিজিয়ে ইসমাইল এর দিকে শান্ত দৃষ্টি ফেলে আশ্বস্ত গলায় বলে,

‘নো ড. আপনি রেস্ট করতে পারুন।’

ইসমাইল সুখপ্রাপ্তির জোড়ে শ্বাস নিয়ে তার সামনে বসা রোগীকে প্রেসক্রিপশন এগিয়ে দিল। মেইল নার্সটিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘শুনো এই রোগীকে সঙ্গে করে ফার্মেসীতে যাও। প্রেসক্রিপশনে লিখা দুটি ওষুধই যেন তিনি পান।’

মেইল নার্স ‘ওকে’ বলে রোগী কে সঙ্গে আসতে ইশারা করে। রোগীটি বৃদ্ধ এক পলক ইসমাইল এর দিকে বিশ্বস্ত দৃষ্টিতে তাকায়। ইসমাইল মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। বৃদ্ধ রোগীকে আঁকড়ে ধরে মেইল নার্স ফার্মেসীর দিকে এগিয়ে গেল।
তৎক্ষণাৎ টেবিলে রাখা ল্যান্ডলাইনে কল আসে। ‘ঠুন ঠুন’ করে শব্দ করে কল আসছে তা জানান দিল ইসমাইলকে। ল্যান্ডলাইনের হ্যান্ডসেট পাঁচ আঙুলের ভাঁজে নিয়ে কানে ধরে। অপরপাশের ব্যক্তি সালাম দিল। কণ্ঠটি শুনে স্মিত হাসি ঠোঁটের ফাঁকে ফুটে উঠে তার। উৎসাহী কণ্ঠে বলে,

‘ওয়ালাইকুম আসসালাম ড. ইসমাইল স্পিকিং।’

‘কেমন আছো!’

‘আলহামদুলিল্লাহ আঙ্কেল। আপনি কেমন আছেন!’

‘আলহামদুলিল্লাহ বাবা তোমার কাছে একটি আবদার করব। পালন করবে!’

‘জ্বী বলেন বাবার সমান বয়সী আপনি আঙ্কেল। নিদ্বিধায় বলতে পারেন।’

‘বাবা তোমার থেকে এনজিও ক্যানভাসে আসা স্টুডেন্টদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারে আলোচনা করো। তাদের ধাপান্তর প্রতিটা চিকিৎসার ক্ষেত্রে কেমন তা একমাত্র তুমিই পারবে বুঝাতে।’

আঙ্কেলের কথা অমান্য করার সাধ্য ইসমাইল এর ছিল না। কারণ এই আঙ্কেলটা ছিল মায়ের পর দ্বিতীয় উদারচিত্ত ব্যক্তি। যিনি উৎসাহ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। মুচকি হেসে ‘ওকে আঙ্কেল’ বলে।

অপরপাশের ব্যক্তির কিছু মনে পড়তেই ‘ওয়েট বাবা শুনো শুনো’ বলে উঠলেন। ইসমাইল কল কেটে দিতো তখনি তিনি বলায় থেমে যায়। তিনি পুনরায় অনুরোধ কণ্ঠে বলেন,

‘বাবা মেডিক্যাল স্টুডেন্ট এর সঙ্গে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি উপবিভাগের ছাত্ররা এসেছে। তাদের বায়োজেনেটিক পদ্ধতিটা তোমার মাধ্যমে পর্যালোচনা করতে চাচ্ছি। আজ বিকালে ফ্রি থাকলে ঠিকানা দিবো চলে এসো। কয়েকদিন এখানে থাকতে হবে বাবা।’

শেষের কথাগুলো খুবই নম্র আর সরলভাবে বললেন। ইসমাইল প্রতিটা কথা মানলেও শেষ কথাটি মানতে তার মন বাঁধা দিচ্ছে। একটুখানি ভেবে দেখল বাসায় তার বোন,মা আর কাকীমা আছে। তিন নারী মানুষ একা থাকলে কোনো না কোনো দুঘর্টনার শিকার হতে পারে।
দুশ্চিন্তাময় কণ্ঠে সে বলে,

‘সরি আঙ্কেল আমার পরিবারে তিনজনই মেয়ে মানুষ। ওদের ছেড়ে এতদূর যাওয়া বোধ হয় ঠিক হবে না।’

অপরপাশের ব্যক্তি ভেবে বলেন,

‘শুনো আমি এনজিও ক্যানভাসের ঠিকানাসহ আমার বাসার ঠিকানা দিবো। সেখানে চলে যাও আজকের মধ্যে। রাতে পৌছেঁ যাবে আশা করি। বাসায় আমার স্ত্রী আর মেয়ে আছে। তারা তোমাদের আপ্যয়নে কমতি রাখবে না।’

‘থ্যাংকস আঙ্কেল চিন্তা করবেন না পৌঁছে কল দেবো আপনাকে। রাখি আল্লাহ হাফেজ। ‘

অপরপাশের ব্যক্তি স্মিত হেসে জবাবে ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলে কল কেটে দিলেন। ইসমাইল কল রেখে দেরি করল না। চেম্বার হতে বেরিয়ে গেল। এখন তার অফ ডিউটি হিসেবে দরজায় টোকান লাগিয়ে চলে যায়।

২৪.

রবিউল সাহেব লাঠি ভর করে হাতরিয়ে বাগানে হাঁটছেন। পকেটে ফোনের তীব্র ভাইব্রেশনের কারণে কেঁপে কেঁপে উঠছে। তিনি গিয়ে বসেন একটি দোলনার উপর। লাঠিটা পরম যত্নে পাশে রেখে কলটি কানে ধরেন।
অনেকদিন পর সেই অপেক্ষাতুর কাঙ্ক্ষিত মানুষটির নিঃশ্বাসের শব্দ শুনছেন। এই যে পরম মন ভুলানো হৃদয়ের আবেগ। কাঁপা কণ্ঠে আহ্লাদীময়ী হয়ে বলেন,

‘কেমন অাছেন!’

পুনরাবৃত্তি কল কেটে গেল। মুচকি হেসে ফোন পকেটে গুজে ভাবতে লাগলেন।

‘আজ ছেলেকে যদি বলতে পারতাম। ছোট থেকে কেউ তোর অপেক্ষার প্রহর গুণছে। তাহলে তুই দেরি করতি না তাকে আপন করতে। কেননা সে ছিল তোর চোখের একমাত্র কণিকা। যার মায়াবী চেহারা দেখে তোর হৃদয়হরণ হতে বাধ্য হতো। কিন্তু অন্ধকার চোখের ন্যায় অতীতটাও ভাঙ্গন হয়ে মুছে গেল। তোর হয়ত মনেও নেই সেই কণিকার কথা।’

অন্তরাল হতে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে পড়ে। সবুজ ঘাসে ঘেরাও করা রয়েছে বাগানের চর্তুদিক।
ছেলে কে ছাড়া যেন উনার দিন-রাত ফিকে পড়ে আছে। যাবিয়াজ এনজিওতে গিয়েছে আজ একসপ্তাহ হলো। কিন্তু তাদের প্রশিক্ষকদের অনুরোধে সময়টা বাড়ানো হলো। ফলস্বরুপ ছেলের স্পর্শ পাওয়ার ভাবনা ব্যর্থ রয়ে গেল উনার।

এনজিও ক্যানভাস….

যাবিয়াজ কম্পিউটিং ল্যাবে বসে অস্ট্রেলিয়ার ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যালে ফরম পূরণ করেছে নিজের বাবার জন্যে। নোটিশ পেয়েছে দুদিন হলো। নোটিশে ভিন্ন ধরনের নিয়মনীতি মেনে চলার আহবান করা হয়েছে। সে নোটিশগুলো বারংবার পড়ে সেখানে একজন ডক্টর কে নিজের বাবার ব্যক্তিগত চেকআপের জন্যে রিজার্ভ করে নিল।
ডক্টর লিওন এর নাম্বার কালেক্ট করে ফোন দিল যাবিয়াজ। অস্ট্রেলিয়ায় দিনের ৩.৪০মিনিট বাজে। কল দিল সে। লিওন চেম্বারের বেলকনিতে বসে কফি খাচ্ছিল। ল্যান্ডলাইনের তীব্র শব্দ আসায় মোটা ফ্রেমের চশমা খুলে টেবিলের উপর রাখে। হ্যান্ডসেট নিয়ে কানে ধরে সৌজন্যে বলে উঠে।

‘হ্যালো হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ মিস্টার!’

‘আইম যাবিয়াজ মেশরাফ। মাই ফাদার অপারেশন উইল বি হিল্ড দেয়ার।’

‘ওহ মিস্টার মেশরাফ নাইচ টু মিট ইউ। ইয়েস ইউ ক্যান ক্যারি ইউর ফাদার ইন আওয়ার হসপিটাল নেক্সট ম্যানর্থ।’

যাবিয়াজ শুনে চুপ হয়ে গেল। আনমনে শুকনো ডোক গিলে ঠোঁট ভিজিয়ে ভাবে।

‘পরবর্তী মাসে তার মানে বাবাকে নিয়ে পাসপোর্ট ভিসা বের করতে হবে। বেশি সময় নেই হাতে। এ যাত্রায় ড্যাডের চোখের রশ্নি ফিরে আসবে ইন শা আল্লাহ।’

তৃপ্তির শ্বাস ছেড়ে লিওনকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ওকে ড. আই উইল কাম ভেরি সুন।’

‘ওকে ইয়াংম্যান বাই।’

‘বাই।’

সৌজন্যেতার কাতিরে হাসি দিয়ে কল কেটে দিল।
চট জলদি উঠে ল্যাব থেকে বেরিয়ে বন্ধুমহলের দিকে পা ফেলে। এরফান বসে কোক খাচ্ছিল। এখন দেশে গরমের উত্তাপ সীমিত হলেও পর্যাপ্ত মনে হয়। যেদিন বর্ষণের নামনিশানা থাকে না সেদিন তীব্র গরমের উত্তাপ ভীষণ কড়া দেয়। ফেরদৌস হামি দিয়ে সামনে যাবিয়াজকে হাসিখুশি আসতে দেখে এরফানকে গুতা দিয়ে বলে,

‘দেখ কতদিন পর এই হাস্যজ্জ্বল চেহারা দেখছি যাবিয়াজের।’

এরফান ফট করে তাকায়। সত্যি শুভদিন বলে মনে হলো তার। যাবিয়াজ এসে জড়িয়ে ধরে তাদের। তৎক্ষণাৎ অন্য একজন দৌড়ে এসে তাদের উচু করে জড়িয়ে ধরে। তিনজন যেন ভূত দেখার মত চমকে গেল। ফেরদৌস হা হয়ে যায়। যাবিয়াজ স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় দেখেও ফোন বের করে টিপতে থাকে।

চলবে….

(রিচেক দেয়নি খুব ক্লান্ত লাগছে তাই। প্রাইভেট থেকে এসে গল্প লিখতে বসে ছিলাম। ভুলভ্রান্তির ক্ষমার চোখে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here