অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া বোনাস_পর্ব

অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া বোনাস_পর্ব

#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)

৩৪.
তিয়ানা ক্ষিপ্ত মেজাজে পায়চারী করছে। হাতে ঘড়ি থাকায় পরপর সময় দেখছে। তার থেকে কিছুটা দূরে রকিং চেয়ারে বসে আছে রুহিয়া। তিয়ানাকে রুমের এদিক থেকে ওদিকে বারংবার চলাফেরা করতে দেখে বিরক্তবোধ করল। রুহিয়া রূঢ় কণ্ঠে মুখ ফুলিয়ে বলে,

‘আবে তিয়ু শুন না কি চিন্তা করছিস। আমার সঙ্গে কোথায় শেয়ার করবি তা নয়! উল্টো নিজের পায়ের তেরোটা বাজাচ্ছিস।’

তিয়ানা উদাসীন দৃষ্টি নিয়ে রুহিয়ার দিকে তাকায়। রুহিয়া দেখে মুখ ফুলানো বাদ দিয়ে গম্ভীর ভাব করে বলে,

‘লুক আমাকে না বললে সমস্যার সমাধান পাবে কেমনে হুম!’

‘বোইন আমার শুন ইফদিয়ার কে ভীষণ মনে পড়ছে।’

রুহিয়া কথাটি শুনে থম মেরে দাঁড়িয়ে যায়। তিয়ানার চৌপাশ ঘুরে দাঁতে কিড়মিড় করে বলে,

‘আরে বলদী একবার বললেই পারতি। ইফদিয়ার আসতে কি বেশিক্ষণ লাগতো!’

‘লাগবে সময় কারণ ইফদিয়ার ভাইয়া যশোরের কেশবপুরে ট্রান্সফার হয়েছেন কাজের সূত্রে। উনাদের আগের বাসা বর্তমানে খালি পড়ে আছে। আর তুই জানিস মনিরামপুরে উনাদের নিজস্ব বাসা আছে। কাজের সূত্রে ভাইয়ার থেকে বাসা তালাবদ্ধ করে যেতে হয়েছে।’

রুহিয়া উন্মাদনার ন্যায় হা করে বলে,

‘আমি স্কুলে গিয়েও এ ব্যাপারে অবগত হলাম না। কিন্তু তুই ঘরে বসে কেমনে কি!’

তিয়ানা হুহু করে হেসে বলে,

‘ইফদিয়ার দোস্ত আমার। তার সঙ্গে দেখা হচ্ছে না যথার্থ। তথাপি মোবাইলে প্রতিদিন ভিডিও কল, অডিও কল হয়েই থাকে।’

রুহিয়া শুনে সরু দৃষ্টিপাত নিয়ে এগিয়ে গেল তিয়ানার। যা সে চৈতন্যে ভাবে ধরতেই রুহিয়ার দিকে নজর দিল। তার বোনের কড়া নজর দেখে আমতা আমতা করে বলে,

‘হয়ছে তুই টাকা পেয়ে যাবি। দোস্তের সঙ্গে একটু আধটু বলতে ওই আরকি। তোর ফোনের ব্যালান্স নিয়ে কথা বলছি।’

রুহিয়া মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে পুনরায় চেয়ারে বসে পড়ে। আহত নয়নে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,

‘এতদিন ভাবতাম আমার ব্যালেন্স বুঝি সার্ভিস খাইয়া ফালাই। এহন তো দেহি আসল আসামী তুই। আমার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যালেন্স আমারই চোখ ফাঁকি দিয়ে মারিস।’

তিয়ানা অট্টহাসি দিয়ে পেটে হাত রেখে ফুলা মুখ করে বলে,

‘সরি রে বোইন। বেহেন হমু মে বাড়াই কামিনী। বান্ধবীর সঙ্গে একটু আধটু না কথা বললে প্রাণবায়ু উড়াল মারার উপক্রম হয়। যেহেতু আম্মু ফোন ধরতে দেয় না। তাই চুরিচুপে তোরটাই শেষ করা লাগে।’

‘ধুর তোর জ্বালায় আমার টাকা খরচ হয়।’

‘এক কাজ কর খাতায় তোর খরচের হিসাব উঠিয়ে রাখ। সুস্থ হলে শোধে আসলে চুকিয়ে দিবো।’

‘মাইয়া রে ও মাইয়া রে তুই অপরাধী রে,
আমার যত্নে করা ব্যালেন্স দেয় ফিরাইয়া দেয়।’🙂

‘দিবো তোকে কোটিপতি জামাই দিবো রে।’

তিয়ানা বাণীটি রুহিয়ার কান বরাবর ছুঁড়ে মেরে চুপটি করে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। রুহিয়া বোনের কথায় চটে গেল। ‘তিয়ুউউউ’ বলে চিৎকার দিল। ওয়াশরুমে রুহিয়ার চিৎকার শুনে দরজায় ভর দিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেলে। বিড়বিড় করে বলে,

‘পাগলী বোন একটা।’

তিয়ানার মতে ইফদিয়ার পর যদি কেউ তিয়ানার সঙ্গে ফাজলামি করতে পারে সে হলো রুহিয়া।লেখিকা তামান্না(আল রাইয়ান)

_______

ইসমাইল প্রথমবার এনজিও ক্যানভাসে পা রেখেছে। এনজিও প্রবেশদ্বারের দুপাশে ফুলের পাপড়ির থলি নিয়ে বরণ করার জন্যে দাঁড়িয়ে আছে ছাত্র-ছাত্রীরা। তাদের দেখে ইসমাইল দৃঢ় শ্বাস ছেড়ে নিজেকে নরম করে এগিয়ে গেল। যাবিয়াজ দলের প্রধান মূখ্যকর্তা হওয়ায় ইসমাইল এর সঙ্গে কুশলাদি তারই প্রথম করতে হবে। ইসমাইলকে দেখে যাবিয়াজ এর যেখানে স্বাভাবিক থাকতে হবে। সেখানে তার ভেতরে চলছে সমীহ-আশঙ্কার যুদ্ধ। ঠোঁট কামড়ে মনে মনে ভাবে।

‘আল্লাহ আগে কেন সৎবুদ্ধি দান করো নি। ইসমাইল যে আমার বড়শালা হয়। আগে জানলে কখনো ইফদিয়ার কে দূরে ঠেলে দিতাম না। শেহ যাবিয়াজ তোর মত বলদ আসলেই কেউ নেই। ইসমাইল ভাই যদি আমাকে চিনে ফেলে! ওয়েট ইফদিয়ার কি আমার ব্যাপারে তার ভাইকে জ্ঞানতত্ত্ব দিয়েছে।’

এবার নিজের মনে কথাগুলো আউলে ভীষণ আতঙ্কে উঠল যাবিয়াজ। সে মনের কথা মনে বলেছে যেন নিজেকে শক্ত করে স্বাভাবিক রাখতে পারে মতন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সে শক্ত কম উল্টো আশঙ্কায় কেঁদে ফেলার মত অবস্থা।

এনজিও ক্যানভাসের মেয়েরা ইসমাইলকে দেখে হৈচৈ শুরু করে দিল। কারণ ছেলেটা দেখতে, শুনতে কোনোভাবেও মন্দ নয়। বরঞ্চ নজর কাড়ার মত রুপ তার। পুরুই চকলেট বয় লাগছে ছেলেটিকে। মেয়েরা ইসমাইল কে দেখে সামনে এগিয়ে যায় অটোগ্রাফ নিতে। এতে বেচারা ইসমাইল এর নাজেহাল অবস্থা। এতগুলো মেয়েকে হাত দিয়ে ঠেলতে তার রুচিতে বাঁধছে। নিজেকে শক্ত রেখে নম্র কণ্ঠে সকল মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘আপনারা নিশ্চিতে অটোগ্রাফ পাবেন। তবে পরে আমি এখানেই আছি আপনাদের ট্রেনিং দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে ক্যানভাসে এসেছি।’

ভার্সিটির হেডমাস্টার আর জগৎ শন্দ্রনাথ সরলতায় ক্যানভাসের হল রুম থেকে বেরিয়ে এলো। উনারা জানালা থেকে ইসমাইল এর গাড়ি দেখে অবগত হলেন। ক্যানভাসের প্রবেশদ্বারে ভীড় দেখে জগৎ শন্দ্রনাথ তার পুত্র সেনগুপ্ত কে আদেশ করেন।

‘সেনবাবা মাইক নিয়ে ভীড় কমানোর ব্যবস্থা করো। ইসমাইল বাবার ভীড়, ঠেলাঠেলি, ঘেঁষাঘেঁষি একদম অপছন্দের। কোনো না আবার ক্রোধান্বিত হয়ে ফিরে যায়। শিগগিরি যাও।’

সেন আর রৌশ হলো জগৎ শন্দ্রনাথ এর ছেলে। তারা দুজন বাবার সঙ্গে এনজিও পরিচালনা করে। এরা দুজনই হলো শ্রেয়িতার ভাই। সেন তার বাবার আদেশ মোতাবেক মাইক নিয়ে উচ্চ শব্দে বলে উঠে।

‘সবাই দূরে সরে আসো। না হলে কঠিন শাস্তি দিতে বাধ্য হবো।’

ছেলেমেয়েরা উল্লাসী মনোভাব তখনি ধুর করে ফেলল মন থেকে। এক নাগাড়ে পিছে সরে আসে ইসমাইল এর কাছ থেকে। সে যেন এবার অক্সিজেন নেওয়ার ব্যবধান পেল। মেয়েরা যেন তার শরীরের পাশ ঘেঁষে অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্যে উতলে পড়ে ছিল। যাবিয়াজ এর কাছে দৃশ্যটি মজার লেগেছে। ঠোঁট চেপে হাসি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করল। তার পাশেই দাঁড়িয়ে এরফান আর ফেরদৌস একই দৃশ্যপটে হাসি নিয়ন্ত্রণে মুখে হাত দিয়ে রাখে।
ইসমাইল নিজের শার্টের বাহুর ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে এগিয়ে এলো ছাত্রদের সন্নিকটে। ইতিমধ্যে যাবিয়াজ সটান হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। বুকটাও লাফানো শুরু করে দিয়েছে। ইসমাইল তার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়। দুজনের স্থীর চাহনী একে অপরের দিকে আবদ্ধ। কাঁধ থেকে কাঁধ বরাবর একই ভঙ্গিতে উদ্বিগ্ন দৃষ্টিকোণ যেন তাদের মাঝে আবদ্ধ। ইসমাইল নিজ উদ্দিনে হাত এগিয়ে আহ্লাদময় কণ্ঠে বলে,

‘আসসালামুয়ালাইকুম আমি ইসমাইল বুহিয়ান। আপনি নিশ্চয় যাবিয়াজ মেশরাফ!’

যাবিয়াজ ক্ষণপরে দৃষ্টি সরিয়ে ইসমাইল এর হাতের দিকে রাখে। মনে মনে অনুতপ্ত হয়ে বলে,

‘বড় শালাবাবুকে বউ এর নাগর বলে কত না অপদস্থ করেছি। সেই শালার সঙ্গে ছাত্রের মত হাত মিলাবো। ভবিষ্যৎ এ এই হাত ছোঁয়ে তারই বোনের হাত চাইতে কেমনে যাবো! যেদিন আমার সম্পর্কে জ্ঞানপূর্ণ হবে। সেদিন এই হাতজোড়া দিয়ে আঘাত করতেও দ্বিধাবোধ করবে না শালাবাবু।’

মনের কথাগুলি ভেবেই ক্ষীণ কাঠিন্যতা যাবিয়াজ এর মনবৃত্তিকে ক্ষিপ্রতায় ঘিরে ধরেছে। একরাশ আশঙ্কাকে ক্ষণিক সময়ের জন্যে দূরে ঠেলে যাবিয়াজ শুকনো হাসি দিয়ে হাত মিলায়। ঠোঁট নাড়িয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে,

‘ওয়ালাইকুম আসসালাম জ্বী স্যার আমিই যাবিয়াজ। আপনার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগকৃত।’

ইসমাইল ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভেবে যাবিয়াজ কে বলে,

‘হুম আমার সঙ্গে কেবিনে এসো।’

যাবিয়াজ এর সঙ্গে থাকা এরফান ফেরদৌস একে একে সকলে স্বাগত শুভপূর্ণ করায় ঝেঁকে ধরে। ইসমাইল এবার শান্তিভাবে সকলের সঙ্গে কথা বলে নিজ কেবিনে এলো। জগৎ শন্দ্রনাথ স্বয়ং কেবিনটি তৈরি করেছেন ইসমাইল এর জন্যে। দরজার বাহিরে নেইমপ্লেট দেওয়া ‘ইসমাইল বুহিয়ান’। ইসমাইল নিজের প্রাপ্তি সর্বাঙ্গে দেখতে পাচ্ছে। যে ইসমাইল একসময় এতিম বলে পাত্তাহীন ছিল। সে ইসমাইল আজ মানুষের মুখরচিত হয়ে বেড়ায়। অদ্ভুত দুনিয়ার নিয়মনীতি! তাচ্ছিল্যের হাসি দিল ইসমাইল।
কেবিনে ঢুকে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে। তার সঙ্গে পিছু এসেছে যাবিয়াজ, এরফান আর ফেরদৌস। অন্যদের আসা বারণ করে দিয়েছে জগৎ শন্দ্রনাথ। ইসমাইল কে চোখ বুজা অবস্থায় দেখে যাবিয়াজ গলা খাঁকড়ি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রয়াস করে। ইসমাইল চোখ উম্মুক্ত করে তিনজন ব্যক্তির দিকে চোখের নজর রাখে।
খুঁতখুঁতে মন নিয়ে মুচকি হেসে এরফানকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করে।

‘সো ব্রো তুমি পরিচয়টা দাও। তার পর তুমিও দিও। এন্ড সরি তুমি সম্বোধন করায়। বয়সে দরুণ ছোট। তদনুযায়ী তোমাদের তুমি করে ডাকলে আই হোপ নট হেভ এনি প্রব্লেম!’

‘নো স্যার উই উইল রেসপেক্ট ইউর টকিং। আমি এরফান হোসেন আর এই আমাদের আরেক বন্ধু ফেরদৌস শেখ।’

এরফানের কথার বিপরীত প্রতিক্রিয়া নিয়ে যাবিয়াজ সুপ্ত কণ্ঠে বলে,

‘স্যার উই থ্রি আর হাইয়ার্ড ফর ইউ স্যার।’

ইসমাইল শুনে ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘ডোন্ট কল মি স্যার। বয়স ম্যাটার না মন ভালো আর সায় দিলে তুমি-তুই করে কথা বলাটা ব্যাপার না। সবচেয়ে বড় কথা বন্ধুত্ব।
‘বন্ধুত্ব’ শব্দটি তোমাদের তিনজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ রুপে জড়িত। কেউ কাউকে দুঃখ ভাগাভাগি করে যেমন থাকো না তেমনি সুখ পেলে সেটা নিয়ে সেলেব্রেশন করতেও পিছপা হয় না। কিন্তু জানো তোমাদের তথ্য স্টাডি করতে গিয়ে কি জেনেছি!’

ফেরদৌস ভীতি মুখর দৃষ্টিতে ইসমাইল কে দেখে বলে,

‘কি জানলেন!’

‘জানছি যে তোমরা বিপদেও একে অপরের সঙ্গ ছাড়ো না। এমন বন্ধুত্ব পাওয়া দুরুহ সমাজে। এখন তো কে কাকে মেরেধরে স্বার্থ হাসিল করবে তার পিছেই পড়ে থাকে।’

যাবিয়াজ,এরফান আর ফেরদৌস একে অপরের দিকে বিস্ময়ময়ী হয়ে তাকাচ্ছে। তাদের মনে প্রশ্নের সঞ্চার মগজ ফেটে যাওয়ার প্রারম্ভে অবস্থান করছে। যাবিয়াজ এর মনে একটি বুদ্ধি চলে এলো। সে ইতস্ততঃ বোধ কাটিয়ে চট করে একটি প্রস্তাব রাখে ইসমাইল এর সামনে। কেবিনে থাকা চারজনের মধ্যে তিনজনের মুখে বিস্ময় চেহারা ফুটে উঠল। ইসমাইল বাদে দুজনের মুখ যেন হ্যাবলার মত হয়ে গেল। তাদের মুখ দেখে মনে হচ্ছে। তারা অসময়ে মুখ উতলে বলতে চাচ্ছে।

‘কি ভূতের মুখে রাম নাম! সূর্য পশ্চিমে আকাশে উঠেছে।’

এমনি সব আবুল-তাবুল বকার মত মুখ করে আছে এরফান আর ফেরদৌস। ইসমাইল গম্ভীর চাহনি পাল্টে হাসিমুখে বলে,

‘ওকে তোরাই আজ থেকে আমার আপন বন্ধু।’

যাবিয়াজ যেন মেঘ না চাইতেও জল পেয়ে গেল। ইসমাইল এর চুক্ষগোচরে শয়তানি হাসি দিয়ে ইফদিয়ার নামটি স্মরণ করে বলে,

‘অপ্সরীমনির পর্বত সমমাত্রিক অভিমানে ভাঙ্গন ধরাতে সময় লাগবে। কাঠখোট্টা সহ্য করতে হবে। যেহেতু আমিই দোষী সেহেতু শাস্তি পেয়ে উসুলও করব অপ্সরীমনি। কিন্তু একপাক্ষিক বিয়ের জন্যে জব্দ করে নেবো তোমার প্রাণপণ ভাইরে।’

ইসমাইল খুশি হলো তিনজনের আদিক্ষেতা আর ব্যক্তিত্ববোধের উপর। সে মূলত কাজে মনযোগ দেওয়ার জন্যে তিনজনকে যাওয়ার পরামর্শ দিল। যাওয়ার আগে যাবিয়াজকে ডাক দিল ইসমাইল। পুনরায় তার সামনে এলে ইসমাইল বলে,

‘তোমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্লাস কখন! লেকচার দিয়ে তারপর না হয় ল্যাবে বায়োজেনেটিক প্রক্রিয়া শিখাতে পারব।’

যাবিয়াজ নিজের প্যান্টের পকেট থেকে কাগজ বের করে। তার পকেটে রুটিন এর কাগজ সবসময় থাকে। যেনো কেউ যদি ক্লাস সমেত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। তখন যেন পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে কথার জবাব দিতে পারে মত। কাগজটি দেখে যাবিয়াজ বলে,

‘তোর লেকচার ক্লাস দুপুরের পর, প্রশিক্ষণ ক্লাস দিনের ৪টা ৩০ মিনিট এ। ল্যাব ভ্রমণ করে প্রশিক্ষণ ক্রিয়াকলাপ দেখাতে চাইলে রাতের ৯টায় এনজিও তে উপস্থিত থাকতে হবে।’

ইসমাইল শুনে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,

‘ওহ পেশেন্ট এর কি খবর কত হারে সুস্থ-অসুস্থ হয়ে এসেছেন, গিয়েছেন!’

‘এখন অব্দি ৪০% সুস্থ হয়ে রোগী নিজ বাসায় ফিরেছে। আর এসময়ে আরো ৬০% অসুস্থতার খাতায় নাম রয়ে গেছে রোগীর।’

ইসমাইল ফোঁস করে শ্বাস নিয়ে ছেড়ে আহত কণ্ঠে বলে,

‘তোরা ছাত্ররা সব সামলাতে পারছিস তো!’

যাবিয়াজ আশ্বস্ত কণ্ঠে ইসমাইল কে বলে,

‘ডোন্ট ওয়ারি উই ক্যান সি ইট!’

ইসমাইল আর ঘাঁটলো না। জরুরি তলবের সমাধান মিটাতে লেপটপ নিয়ে তার নিজের মেডিক্যাল এর কাজ সম্পন্ন করতে ব্যস্ত হলো।
যাবিয়াজ,এরফান আর ফেরদৌস এক সঙ্গে বসে আছে। এরই মাঝে ফেরদৌস গম্ভীর ভাবে লক্ষ করছে যাবিয়াজকে। ছেলেটা যেমন মনমরা হয়ে আছে তেমন অগোছালো খাপছাড়া ভাব নিয়ে বসে আছে। এর মানে কি ইফদিয়ার ছাড়া সে শূন্যতা অনুভব করছে! নিজের মনের প্রশ্নকে আর দমাতে না পেরে কৌতূহলী হয়ে ফেরদৌস জিজ্ঞেস করে।

‘যাবিয়াজ শুন সিরিয়াসলি বল কি সমস্যা হয়েছে তোর! কেন চুপচাপ অগোছালো হয়ে পড়লি।’

যাবিয়াজ পূর্বের ভঙ্গিতে টেবিলের দিকে দৃষ্টি ফেলে রেখেছে। তিনজন ক্যান্টিনের এক টেবিলে বসে অাছে। চৌপাশে মানুষের গুণাগণ অঢের। তাদের কথোপকথন যাবিয়াজ এর কান অব্দি পৌঁছালেও তার নিজের মনের অনুশোচনার কথন কিভাবে ইফদিয়ার কান পর্যন্ত পৌঁছাবে!
আজও কি মেয়েটা তার অনুশোচনার ফলস্বরুপ ক্ষমা দিবে!
ফেরদৌস কি জিজ্ঞেস করেছে। তা যাবিয়াজ শুনতে পেয়েছে কিনা বুঝতে পারল না সে। এরফান ভ্রু কুঁচকে হাতের স্পর্শে হালকা করে যাবিয়াজ এর বাহুতে নাড়া দিল। যুবক তৎক্ষণাৎ সম্মতি ফিরে পায়। আমতা আমতা করে চৌপাশে নজর বুলানোর ভান করে বলে,

‘কেনো তোদের কি মনে হয় আমি খাপছাড়া দিন পার করছি!’

‘মনে হয় না ডারেক্ট গ্যারান্টি দিতে পারি। আরে আগে যে ছেলেকে দেখলে আমাদের রসিকতা করতে মন চাইতো সে ছেলেকে দেখলে এখন দেবদাস নাম ছাড়া ডাকতে মন চাই না।’

‘উফ দোস্ত আমার মাথা শেষ হয়ে যাবে। পারছি না আর গোপনে সহ্য করতে।’

এরফান গম্ভীরতা ছেড়ে শান্ত্বনাময় কণ্ঠে যাবিয়াজ এর পিঠে হাতের স্পর্শ দিয়ে বলে,

‘শোন আমরা তোর ছোটবেলার বন্ধু। শেয়ার কর যদি সমাধান দিতে পারি।’

যাবিয়াজ দৃঢ় এক আহতময় শ্বাস ছেড়ে তার বন্ধুদের কাছে ইফদিয়ার সাথে বিগত কয়েক মাসের বিচ্ছেদ হওয়া, কেনো হলো, পরিশিষ্টে জানার পর অনুশোচনার কথা ব্যক্ত করলো। এরফান এর হাত আপনাআপনি মাথায় চলে যায়। ফেরদৌস ঢোক গিলে বলে,

‘তুই যার লগে যার জন্যে এত বাজে ব্যবহার করলি। বর্তমানে সেই আমাদের হেডমাস্টার এর পদে আছে। শালা আগে ভালো করে জেনে নিবি তো। না জেনে কাজ তোকে কে করতে বলল!’

যাবিয়াজ করুণ চোখে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো মত মুখ করে বলে,

‘দোস্ত বিশ্বাস কর ইফদিয়ার কে অন্য ছেলের সঙ্গে দেখে রাগ উঠছিল। তাই ছেলেটা কে জিজ্ঞেস করার কথাও মাথায় আসে নি। তখন শুধু ভালোলাগা মানুষটির প্রতি ভালোবাসা হওয়ার পরিণতি যে, হারানোর হবে তা মানতে পার ছিলাম না। তুই জানিস আমি বিয়ের আগ পর্যন্ত কোনো মেয়ের সঙ্গে প্রেম নামক অবৈধ সম্পর্কে জড়িত হয়নি। কেনো হয় নি বলতে পারিস! পারবি না কারণ একটাই আমি আমার অর্ধাঙ্গিনীকে পরিপূর্ণ ভালোবাসতে চাই। এটা ঠিক ইফদিয়ার প্রতি আমার সুপ্ত এক ভালোবাসাময় অনুভূতি আছে। সেটা নিশ্চিত প্রকাশ্যে নয় অন্তরালে আবদ্ধ রাখতাম। যদি উম্মুক্ত করার সাধ্য বা অধিকারবোধ থাকতো তাহলে কখনো ইফদিয়ার কে নিজ থেকে অবিশ্বাস বা হারানোর ভয় থাকতো না। তাকে নিজ থেকে দূর রাখার প্রধান কারণটাই হলো প্রেম নামক অবৈধ সম্পর্কে জড়িত না হওয়া। হয়ত দূর থেকে গুপ্ত প্রেমিক হয়ে থাকতাম। তাও ভালোই লাগতো। এক তরফা ভালোবাসার ন্যায় মনে হতো নিজের ভালোবাসাকে। এই জানার সত্ত্বেও যে অপর মানুষটি আমায় ভীষণ ভালোবাসে।’

যাবিয়াজ মনের কোণায় পুরু বর্ণনা চুপিয়ে রেখে ছিল কে জানতো! এরফান আর ফেরদৌস যেন কথার বলার কোনো ভাষা বা যুক্তি খুঁজে পাচ্ছে না। আজকারের যুগে বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড সহজে হওয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠে। সেখানে এই যুবক কোন মাটি দিয়ে গড়া! যে সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও পা দিয়ে মাটিচাপা দিল। তবে হ্যাঁ এরফান বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়। সে মুচকি হেসে যাবিয়াজের পিঠে চাপ্পড় দিয়ে বলে,

‘সাব্বাস তোর মত প্রেমিক পুরুষ শত খুঁজলেও পাওয়া দুরুহ।’

‘না রে প্রেমিক নয়। একজন আর্দশ স্বামী হতে চাই। তার আগে প্রেয়সীর সমমানীয় অভিমানকে টুকরো করে সাধারণ মৌলতে পরিণত করতে হবে।’

ফেরদৌস কৌতুকপ্রদ মনোভাব নিয়ে ঠাট্টার সুরে বলে,

‘তুই রাসায়নিক সাম্যবস্থায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুকে কি সংযোজন বিক্রিয়ায় ভাঙ্গবি নাকি বিয়োজন বিক্রিয়ায়!’

যাবিয়াজ শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,

‘না সংযোজন, না বিয়োজন অনলি প্রতিস্থাপন। কারণ তোদের মত গাধারাই সম-বিয়ো করবি। আর আমি প্রতিস্থাপন করব। এতে অধিক সক্রিয় মৌল আমি হলে কম সক্রিয় মৌল হলো ইফদিয়ার।’

এরফান ভ্রু কুঁচকে যাবিয়াজ এর বিপক্ষে হয়ে বলে,

‘তাহলে সংযোজন আর বিয়োজন কি গলদ কাম করল!’

‘সংযোজন বিয়োজন রে গুলি মার। সংযোজন করলে তৃতীয় মানুষ এসে নাক,হাত-পা গলাবে। জানোস না সংযোজন এর ব্যাখা!
দুই বা ততোধিক মৌল যুক্ত হয়ে নতুন যৌগ গঠণ করে তাকে সংযোজন বিক্রিয়া বলে। আ আমি ভাই রিস্ক নিতে পারব না। সংযোজন বিয়ের পর ইফদিয়ার সঙ্গে বিক্রিয়া করব। তখন তোরা ভাগ্নি বা ভাতিজা হিসেবে নতুন মৌল পাবি সিম্পল। তাই আমার ধারণা অনুযায়ী সংযোজন বিক্রিয়া বিয়ের পর।’

‘তো বিয়োজন কি দোষ করছে!’

ফেরদৌস এর কথায় চটে গিয়ে যাবিয়াজ বলে,

‘ওই হালার বিয়োজন এর একটা দিয়ে কুলাই না। ওর তো হাজারটা লাগে। কারণ ওর মৌল ভেঙ্গে একাধিক সরলতম মৌলে পরিণত হয়। পারব না এই হালা রে নিতে। বেচারী আমার ইফদিয়ার কি দোষ ওরে ভাগ করে একাধিক মাইয়া নিয়ে কি করব! যদি ওরেই না পায়। আমার শখও নাই বটে হাজার মেয়ের পিছু নেওয়ার। এবার নিছু নিলে শুধু জীবনসঙ্গিনীর নিবো।’

‘তার মানে তুই শেষমেষ প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ায় নতুন মৌল রুপে পথযাত্রায় অভিমানের পাহাড় ভাঙ্গতে লেগে পড়বি।’

যাবিয়াজ প্রত্যুত্তরে মৃদু হাসি দিল। এরফান আর ফেরদৌস একে অপরের সঙ্গে হ্যান্ডসেক করে হাসল। যাবিয়াজকে ইসমাইল ডাক দেওয়ায় সে উঠে চলে যায়।

৩৫.

এরফান আর ফেরদৌস দাঁড়িয়ে যায়। এরফান এর ফোনে কল এসেছে। সে কল রিসিভ করে কানে ধরে।

‘ওহ আপনি এসেছেন ওয়েট করেন আসছি আমরা।’

ফেরদৌস বন্ধুর চাহনি লক্ষ করে বলে,

‘যাক এবার বুঝি শ্রেয়িতার মানও ভাঙ্গানো যাবে। ওরে কল দিয়ে বল কেশবপুর রাকতিয়া কফিশপে এ আসতে।’

এরফান কথামত শ্রেয়িতা কে কল দিয়ে কফিশপে আসতে বলে ফটাফট কল কেটে দিল। অপরপাশে, শ্রেয়িতা শুনে বোকা বনে গেল। হঠাৎ তাকেই বা কফিশপে কেনো ডাকল! তার তো মাথা গরম করা উচিৎ এই ফাজিলদের উপরে। কিন্তু এই কি! উল্টা ওরাই মেজাজ দেখায় তাকে।
নাক-মুখ ফুলিয়ে বিড়বিড় করে বলে,

‘ফাজিলের দলের মন্দঘোষ।’

শ্রেয়িতা কফিশপে এসে বসে আছে। টেবিলটি সে কিছুক্ষণের জন্যে রিজার্ভ করে নিল। দু-তিন সেকেন্ড পর শ্রেয়িতার চোখে কেউ হাত রেখে বলে,

‘দোস্তানি কউ আমরা কেডা!’

‘ফাজিলের অাবার নতুন নামকরণ কেমনে করি!’

এরফান হাত সরিয়ে চেয়ার টেনে বসল। ফেরদৌসও এসেছে সঙ্গে নতুন একজন। তাকে দেখে যেন শ্রেয়িতার মুখ হা হয়ে গেল। এক পর্যায়ে দেখামাত্র টাস্কি খাওয়া যাকে বলে। তেমনটাই বোধ হয় সে খেল। এরফান দাঁত কেলিয়ে বলে,

‘কেমন লাগল মেহনাত স্যারকে নিয়ে আসার সারপ্রাইজ!’

শ্রেয়িতা অবাক হয়ে বলে,

‘মানে!’

‘মানে হলো তোর রাগ ভাঙ্গাতে আজ নতুন সূত্র প্রয়োগ করেছি। তোকে বিয়ের জন্যে স্যারকে রাজি করে ফেলেছি। উনিও নিঃসন্দেহে রাজি হয়েছেন। তুই এমনিই স্যারের উপর ক্রাশ খেয়ে বাঁচতি। এবার আজীবন স্যারের জীবন নিমপাতা বানানোর জন্যে প্রস্তুতি নিবি।’

শ্রেয়িতা অবাক হলো। এবার যেন তার মেজাজ টুঙ্গে উঠে। সে মেহনাত স্যার কে দেখে সৌজন্যে সালাম দিল। সেই সঙ্গে আহত কণ্ঠে বলে,

‘সরি স্যার আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি নয়। আমার যতটুকু ভাবনা আপনি কারো উপর নিজের অধিকার হস্তক্ষেপ করেন না।’

মেহনাত এতক্ষণ গম্ভীর ভাব নিয়ে বসে ছিল। শ্রেয়িতা কে সে নিজের ছাত্রীর মত দেখে শুদ্ধ কথা। তবে তার বন্ধুদের কথায় রাজি হয়ে ছিল। এর বিশেষ কারণ হলো শ্রেয়িতাকে ছাত্রীর নজরে দেখলেও রমণীর ব্যক্তিত্ব আর গুণাবলি নজর কাড়ার মত ছিল। যা মুগ্ধ করে তুলতো মেহনাত কে। কিন্তু কোনো দিনও চাইনি কারো মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করতে। আজও এর ব্যতিক্রম হলো না। শ্রেয়িতা নিজ মুখে যেহেতু বিয়েটা করতে অস্বীকার করেছে সেহেতু তারও কর্তব্য রমণীর কথাকে সম্মান দেওয়া। সে মুচকি হেসে উৎফুল্ল দৃষ্টি নিয়ে বলে,

‘থ্যাংকস এন্ড বি বিলিভ ইউর সেল্ফ।’

শ্রেয়িতা বুঝতে পেরেছে স্যার তাকে কেনো এই কথাটি বলল। কোথাও না কোথাও মেহনাত স্যারও আন্দাজ করতে পেরেছেন যে শ্রেয়িতার মনজুড়ে অন্য কারো বাসস্থান। সেখানে সে কি করে নিজের নাম বসাবে! ভেবেই যেন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মেহনাত স্যার তাদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে চলে যায়।
এরফান রাগি ভাব নিয়ে বলে,

‘করলা তুই। মতোর জন্যে মেহনাত স্যার কে গ্রামের থেকে আসতে বললাম। কলে তোর সম্পর্কে ভালো গুণগত গান গেয়ে গলা ফাটিয়ে দিলাম। আর তুই এক নিমিশেষে বিয়ে করার প্রস্তাবকে পিষে ফেললি। নট ফেয়ার দোস্তানি।’

শ্রেয়িতা দু ভাইয়ের মত বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে বলে,

‘ইটস ওকে তবে তোদের দুলাভাই অন্য কেউ হবে। আর সেটা আমার পছন্দমত। যার পুরু কারেক্টার এন্ড লুক ডিফারেন্ট।’

এটিটিউট ওয়ালা লুক করে রমণী বলার পর ফেরদৌস হে হে করে হেসে বলে,

‘তোর ডিফারেন্ট জামাই বুঝি বুড়া মেদওয়ালা। এমন কাউরে পছন্দ হয়ছে বললেই পারতি। আমরা আর কষ্ট করে মেহনাত স্যারের মত হ্যান্ডসাম বয় খুঁজতাম না। যাক তুই নিজেই বুড়া পছন্দ করলি আমাদের মাথার উপর থেকে বোঝা নামছে।’

শ্রেয়িতা ফেরদৌসের গাল জোরে টান দিয়ে ক্রোধে ফোঁস করে বলে,

‘ওই সে বুড়া না হ্যান্ডসাম বয়। তবে বিচ্ছেদ আছে বড়।’

এরফান মুচকি হেসে বলে,

‘ঐ বিচ্ছেদটা অনির্দিষ্ট।’

শ্রেয়িতার মুখমন্ডলের রঙ পাল্টে গেল মুহুর্তে। ছলছল দৃষ্টিতে এরফান এর দিকে তাকায়। এরফান বেশ আন্দাজ করতে পেরেছে শ্রেয়িতা কোন বিচ্ছেদ এর কথা বলেছে। ফেরদৌস শ্রেয়িতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

‘দোস্তানি বিল্লিকে কান্নায় নয় হাসিতে মানায়।’

তিনজন একে অপরের সঙ্গে সময় কাটাতে লাগে। কফি অর্ডার করে ‘সেই বিকেলের আড্ডা’ র মত মগ্ন হলো।

_______

ইসমাইল এর কেবিনে নক করে যাবিয়াজ। ইসমাইল গম্ভীর কণ্ঠে ভেতরে আসতে বলে। যাবিয়াজ ভেতরে প্রবেশ করে দেখে চেয়ারে একজন কিশোরী মেয়ে বসে আছে। বোরকা পরিহিত থাকায় বুঝা মুশকিল মেয়েটি কে!
যাবিয়াজ এর পায়ের শব্দ শুনে মেয়েটি চোখ ফিরিয়ে দেখে। দুজনের একই ভাবে চোখাচোখি হওয়ায় এক ধরনের ধুমকা হাওয়া দুজনের হৃদপিন্ডে বয়ে গেল। সেই একই চাহনি,একজনের চোখে ঘৃণা তো এখন অন্যজনের চোখে ঘৃণাকে নেশাক্ত ভালোবাসায় পরিণত করে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ভেসে উঠেছে। ইফদিয়ার ভাবতেও পারে নি তার ভাই ইসমাইল এর এসিস্ট্যান্ট যাবিয়াজ। কেননা তার ভাইয়ের ভাষ্যমতে উনার এসিস্ট্যান্ট এর নাম মেশরাফ। ইফদিয়ার কাছে এখন পুরু হিসাব মিলে গেল। তার ভাই যে মেশরাফ এর কথা বলল সে মেশরাফই হলো যাবিয়াজ মেশরাফ। কথাগুলো ভাবছে সঙ্গে আক্রোশে ফুলে উঠছে ইফদিয়ার। নেকাপের বর্হিভাগে থাকা কপালের উপর হাত রেখে চুপ করে রইল। ইসমাইল খেয়াল করে দেখে যাবিয়াজ চুপ করে স্থির দৃষ্টিপাতে কিছু একটা ভাবছে। সে শান্ত ভঙ্গিতে যাবিয়াজকে বলে,

‘কোনো সমস্যা আছে যাবিয়াজ!’

যাবিয়াজ এর সঙ্গে ইফদিয়ার হুঁশ ফিরে। তারা দুজন দুজনের মতিগতি আর অনুশোচনাময় ভাবনায় ধ্যানরত ছিল। ইসমাইল এর কথায় যাবিয়াজ হাসার চেষ্টা করে বলে,

‘না ভাই এমনি তুই ডাকছিলি বলে এলাম।’

‘ওহ হ্যা শোন এই হলো আমার বোন ইফদিয়ার বুহিয়ান। ওকে একটু কেশবপরের রঞ্জিতমলে ছেড়ে আয়। হেই রিকশা পাচ্ছে না। তোর কাছে বাইক আছে না যা দিয়ে আয়।’

ইফদিয়ার তৎক্ষণাৎ ‘না’ বলে দাঁড়িয়ে যায়। যাবিয়াজ কথা বলার সুযোগটা পেয়েও যেন নিমিশেষে হারিয়ে ফেলল। ইসমাইল ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘কেনো!’

ইফদিয়ার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে যাবিয়াজ এর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে,

‘ভাইয়া যার তার সাথে সঙ্গ দিতে নেই। বলা তো যায় না পাগলা কুকুর কখন না কখন আক্রমণ করে বসে। অবশ্য তারা পাগল বলে যাকে তাকে কামড়ে ফেলে। সামান্য হৃদয় বলতে তাদের নেই যতসব!’

ইফদিয়ার নিজ দায়িত্বে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। ইসমাইল হতবম্ভ হয়ে গেল। তার বোন তার এসিস্ট্যান্ট কে হাবিজাবি বলে নিচু দেখিয়েছে। বুঝতে পেরে ইফদিয়ার কে চেঁচিয়ে ডাক দেয়। কিন্তু ইফদিয়ার দুই পায়ে হেঁটে চলে যায়। সে থামতে চাই না থামলে বুঝি আবেগীয় চাপা কষ্ট অশ্রুসিক্ত হবে। ইসমাইল বোনের পক্ষ থেকে যাবিয়াজকে অনুরোধীয় কণ্ঠে বলে,

‘ভাই শোন মন খারাপ করিস না। আমার বোন যেমনভাবে কথা বলেছে সে মন থেকে এমন নয়। কিন্তু আজ কেনো জানি এমনটা বলল বুঝতে পারলাম না। বোনের হয়ে আমি সরি।’

যাবিয়াজ অস্থিরতা কাটিয়ে ইসমাইলকে আশ্বস্ত করে বলে,

‘ক্ষমা চেয়ে লজ্জা দিস না দোস্ত। কোনো একদিন তোর কাছেই না হয় লজ্জিত হয়ে পড়ি।’

ইসমাইল যাবিয়াজ এর কথাটি শুনে বলে,

‘বুঝলাম না কি বললি!’

‘আব না বাদ দেয়। তুই বল আর কিছু লাগবে!’

ইসমাইল ভেবে বলে,

‘আপাতত না।’

যাবিয়াজ অপেক্ষা না করে বেরিয়ে পড়ে। দুপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে ইফদিয়ার চিহ্ন, ঘ্রাণটুকু শিরশ্ছেদে নিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। তৃষ্ণার্ত চোখের ভাষা কে বুঝবে! হ্যাঁ সে শাস্তির যোগ্য! আজ ইফদিয়ার তার ভাইয়ের সামনে যাবিয়াজকে অপদস্থ করেছে। যেমনটা একবার যাবিয়াজ করেছিল। তফাৎ ছিল যাবিয়াজ অপরিচিত মানুষদের সামনে ইফদিয়ারকে বাজে চরিত্র এর উপাধি দিয়ে ছিল। আর ইফদিয়ার নিজের ভাইয়ের সামনে যাবিয়াজকে পাগল কুকুর নামে উপাধি দিল।
যাবিয়াজ আনমনে ভেবেই নিল। যে কালেই হোক যত জম্মেই হোক শাস্তি ভোগ করে হলেও তোমাকে নিজের আপন করার ওয়াদা রইল অপ্সরীমনি।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here