অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া পর্ব_২০
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
৩৬.
দুই দিন পর…
রাত ৯টা ইসমাইল তার বোন ইফদিয়ার কে ধরে গাড়ি থেকে বের হলো। তাদের দিকে স্থীর অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে যাবিয়াজ। এশারের নামাজের পর পর রওনা হয়ে ছিল ইসমাইল গাড়ি নিয়ে। বোনকে সঙ্গে আনার বিশেষ কারণ হলো তাকে খুশি করা। মেয়েটার চেহারায় কেনো যেন চঞ্চলতা নিভে গিয়েছে। একদম স্বচ্ছল নারীর মত গাম্ভীর্য ফুটে উঠেছে। কথাবার্তায় আগের মত পটুরতা লক্ষ হয় না। সে ভাবে বোধ হয় পরিবেশ বদলির কারণে বোনটা নেতিয়ে পড়েছে।
ইসমাইল আর এনজিও ক্যানভাসের সদস্যগণ এসেছে গৌরীঘোনা ইউনিয়নে ভর্তের দেউল এ (ভরত রাজার দেউল)।
ইসমাইল এর পিছু নিয়ে বাকিরা প্রবেশ করে। ইফদিয়ার গরম লাগছে। রাত হয়েছে তবুও বাতাসের আভাসও যেন চিহ্নিতহীন। বোরকার অন্তরালে অস্থীর অবস্থা। গলা শুকাতে আরম্ভ করেছে। ইসমাইল বোনকে দেখে বলে,
‘বোইন গরম লাগলে বল এসির ব্যবস্থা করি।’
‘না ভাইয়া কিছুক্ষণ পর চলেই যাব। এখন না হয় হাঁটি।’
ইসমাইল আর ইফদিয়ার একসঙ্গে গৌরীঘোনা ইউনিয়ন এর ফুটপাতে ধীরস্থির করে হাঁটছে। ইসমাইল হাতজোড়া পিছনে একত্রিত করে মোড়ে রেখেছে। ইফদিয়ার মনে শ্রেয়িতার কথা চলছে। সে উল্লাসী গলায় ইসমাইল কে বলে,
‘ভাই শোন না শ্রেয়িতা আপুকে কি দেখতে সনাতন ধর্মের মনে হয়!’
ইসমাইল ভ্রু কুঁচকে সরু দৃষ্টপাত করে বলে,
‘হঠাৎ এ প্রশ্ন!’
‘আসলে আপুর কথাবার্তা, মুখের হাবভাব দেখে মুসলিম এর সদাচরণের পূবার্ভাস পায়।’
ইসমাইল চমকিত নয়নে ইফদিয়ার দিকে তাকায়। তার মনেও অনেকটা সময় শ্রেয়িতা নামক মেয়ে মানুষটিকে রহস্যময়ী লাগে। সে যা প্রকাশ্য করছে ভেতরে সে তা মুটেও নয়। ইসমাইলকে চুপ থাকতে দেখে ইফদিয়ার কৌতূহল দমাতে না পেরে বলে,
‘বলছো না যে!’
‘দেখ বোইন আমি এ সম্পর্কে কথা বলতে চায় না। বি ফরগেট দিজ টুপিক। দিজ ইজ জাস্ট রিডিকিউলাস!’
ইফদিয়ার মুখ ভেটকিয়ে মনে মনে হতাশ হয়ে বলে,
‘রিডিকিউলাস নাকি লাভকিউলাস খুব ভালোই বুঝি।’
ইসমাইল বোনকে বেঞ্চের মধ্যে বসার আদেশ করে বাদাম কিনতে গেল। বোরকার নেকাপ উঠিয়ে প্রাকৃতিক হাওয়া অনুভব করতে নিজেকে দাতস্থ করল সে। কিন্তু বাতাসের মধ্যে আকস্মিক কড়া পারফিউম এর ঘ্রাণ ঘ্রাণশক্তির মাধ্যমে অনুভব করে সে। চোখ বুজা অবস্থায় অনুভব করলেও এখন চোখ খুলতে বাধ্য হলো। চোখ উম্মুক্ত করতেই দেখে যাবিয়াজ একমনে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার মানুষটার লজ্জা বলতে কিছু নেই! সে ইফদিয়ার খুব নৈকট্যে অর্জনের লক্ষ্যে পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। তার পা থেকে যাবিয়াজ এর দাঁড়ানো জায়গার ব্যবধান খুব বেশি নয়। মানুষ দেখলে ভাববে এই বুঝি, স্বামী স্ত্রীর উড়না বা হিজাব ঠিক করে দিচ্ছে! ইফদিয়ার ঘৃণ্য নজরে যাবিয়াজ এর চোখ বরাবর চোখ রাখে। যাবিয়াজ এর সহ্য হচ্ছে না প্রিয় মানুষের ঘৃণ্য নজরদারি। এই ডাগর চোখের নয়নে সে তার প্রতি অমায়িক ভালোবাসা দেখতে চেয়ে ছিল। সেই চোখে আজ একরাশ ঘৃণা শুধু মাত্র তারই ভুলের কারণে।
যাবিয়াজ ঢোক গিলে এক পলক ইফদিয়ার কে আপাদমস্তক দেখে নিল। আহ্লাদী কণ্ঠে হাসার চেষ্টা করে বলে,
‘আব অপ্সরীমনি একা বসে কেনো আছো!’
ইফদিয়ার জবাব দিল না। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ভাবলেশনপূর্ণ ভাব নিয়ে গেম খেলতে মগ্ন হলো। যাবিয়াজ পুনরায় চেষ্টা করে বলে,
‘অপ্সরীমনি আমার কথা কি শুনতে পাচ্ছো!’
ইফদিয়ার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে তার পাশে অন্য কোনো মানব বলতে কেউ নেই। চেহারার গাম্ভীর্যতা প্রমাণ করে দিচ্ছে সে পরিপূর্ণভাবে এড়িয়ে চলছে যাবিয়াজকে।
যাবিয়াজ করুণ দৃষ্টিতে একবার গৌরীঘোনার প্রবেশদ্বারে পরখ করে। কারণ ইসমাইল সেখানে দাঁড়িয়ে বাদাম কিনছে। কেনা তার প্রায় শেষের পথে ছিল। কিন্তু মাঝপথে আঁটকে রেখেছে এরফান আর ফেরদৌস। তারা মন ভুলিয়ে কোনোভাবে যাবিয়াজ একে ইফদিয়ার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে। যাবিয়াজ তার ইদুঁর কপালে সইয়ে যাচ্ছে ইফদিয়ার ঘৃণ্য দৃষ্টিকোণ।
সে আর না পেরে ইফদিয়ার হাত থেকে ছুঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নিল। এতে ইফদিয়ার চুপ করে দৃষ্টি পায়ের দিকে রাখে। যাবিয়াজ করুণ চোখে ইফদিয়ার দিকে তাকিয়ে আহত গলায় বলে,
‘আ আমি জানি ইফদিমনি তোমাকে নিজের অজান্তে ভুলভ্রান্তে অপদস্থ করেছি। নানান বাজে-নোংরা চরিত্রের উপাধি তোমার শরীরের উপর ঠাহর করে দিয়েছি। এর যোগ্য শাস্তি প্রাপ্য আমার । কিন্তু প্লিজ আমাকে একটি বার সুযোগ দাও। আমি আর কখনো তোমায় অবিশ্বাস করব না। সবসময় তোমার প্রতি সুপ্ত আস্তানাময় ঘর বাঁধব যাতে বিশ্বাস ভরপুর থাকবে। ইফদিপরী শুনছো আমি কি বলেছি আ…।’
ঠাসস করে শক্ত দেহের অধিকারী পুরুষ এর আহত মনকে ক্ষতবিক্ষত করার ন্যায় চড় বসিয়ে দিল ইফদিয়ার। চড়টা এতটা জোরাল ছিল যে পুরু গৌরীঘোনার চৌপাশে শব্দ হলো। এখানকার পরিবেশ বেশ শান্তশিষ্ঠ থাকায় একটু শব্দ বিকট শব্দে পরিণত হতে সময় লাগে না। ইসমাইল শব্দের অনুকরণে পিছে তাকায়। এরফান ফেরদৌস হতবম্ভ চোখে তাকায়। তারা জানে এমন কিছু হওয়ার ছিল যাবিয়াজ এর সঙ্গে। কারণ সে কম কষ্ট দেয় নি মেয়েটিকে। একজন নারীর মূল্যবান সম্পদ তার সতিত্ব। যাবিয়াজ সেই সতিত্বকে কাটগড়ায় দাঁড়িয়ে মন্দ-অমন্দ যাচাই করেছে। ইফদিয়ার এর জায়গায় অন্য কেউ হলে যাবিয়াজ কে জেলের ভাত খাওয়ায়তো। তবে মেয়েটিকে দেখে বুঝা দায় সে আজও নিজেকে কেমনে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
যাবিয়াজ শক্ত হয়ে মূর্তির মত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। সকলে যে দৃশ্যটি দেখেছে তাতে তার কিছুই যায় আসে না। ইফদিয়ার কর্কশকণ্ঠে বলে উঠে।
‘হাউ ডেয়ার ইউ রাবিশ! আমার ফোন আমারি হাত থেকে নেওয়ার জন্যে স্পর্শ করার অধিকার কে দিয়েছে আপনায়! জানেন যে আমি আপনার বসের বোন। লজ্জা করে না মেয়ে দেখলে হ্যারাস করতে। আরে আমার ভাইয়া সাধু বলে আপনার চরিত্র বুঝতে পারছে না। কিন্তু আমি মেয়ে সবই বুঝি। একা মেয়ে পেলে নিজের সুখ মেটানোর কামনায় চলে আসেন। আপনাদের মত ছেলেকে একজম্মে কি দুই জম্মেও যেন চোখের সামনে না দেখি!’
ইসমাইল এসে ধমকে দিল ইফদিয়ার কে। রমণী তীক্ষ্ম চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে গটগট করে পা ফেলে বেরিয়ে গেল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
ইসমাইল সকলকে চলে যেতে বলে। সে অসহায় পথিক এর মত যাবিয়াজ এর সামনে এসে দাঁড়ায়। মনে তার একরাশ প্রশ্নের সমাহার মুখে রয়েছে শান্ত ভঙ্গি। ইসমাইল যাবিয়াজ এর কাঁধে হাত রেখে বলে,
‘বোনের সঙ্গে তোমার কিসের শত্রুতা আমি জানি না। তবে বলব সময় থাকতে নিজেকে শোধরাতে শিখো। যা নিজের তা নিজের করে রাখতে শিখো। পরবর্তীতে পোস্তাতে হবে।’
যাবিয়াজ সটান দাঁড়িয়ে রইল। ইসমাইল বোনের জন্যে এক মিনিট দেরি না করে পিছু নিল। বোনটাও বড্ড জেদি প্রকৃতির হয়ে গেছে। বাসার ভেতরে পা ফেলে সাবধানে নিজ রুমে চলে যায় ইফদিয়ার। বিছানায় শ্রেয়িতা ঘুমিয়ে আছে। তার চেহারায় ক্লান্তি ফুটে উঠেছে। তার শরীরটা উদ্দিন দেখাচ্ছে। ইফদিয়ার আনমনে ভাবে।
‘শরীর খারাপ তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছে মনে হয়।’
ওয়াশরুম থেকে পরিষ্কার হয়ে বেলকনির মধ্যে চলে এলো। সেখানের স্ফট সোফার উপর গা হেলিয়ে দিল। আনমনে আসমানের দিকে আহত চোখজোড়া রাখে। মনে প্রণয়ের দগ্ধ আরম্ভ হয়েছে। তলপেটের ব্যথা কমেছে অনেকটা। তবুও নামাজ এর দিন শুরু হয়নি। না হলে সে এখন বসে থাকতো না। জায়নামাজে মাথা ঠেকিয়ে অশ্রুসিক্ত করতো। তথাপি মনের কোণায় পূর্বের স্মৃতি নিয়ে স্মরণ করে। নিজের হাতের দিকে তাকায় ইফদিয়ার। যে হাত দিয়ে যাবিয়াজ এর গালে চড় লাগিয়ে ছিল। সেই হাত রক্তিম আভায় পূর্ণ হয়েছে। বেশ জোরে মেরেছে যাবিয়াজ এর গালে। ডুকরে কেঁদে উঠে ইফদিয়ার। পারছে না আর আঁটকাতে।
ফুঁপিয়ে আহত কণ্ঠে বলে,
‘কেনো বুঝলেন না আমার মনটা ! কি ক্ষতি করে ছিলাম আপনার। ভালোবেসেছি বলে যা নয় তা বলে ছিলেন। ভুল জেনে এখন সামনে এসে আদিক্ষ্যাতা দেখাচ্ছেন আর আমি রাজি হয়ে যাব। আমিও মানুষ। আজ আপনাকে যথার্থ শাস্তি দিয়েছি। যে শাস্তি আপনি আমায় নর্দমার পানিতে ফেলে দিয়ে ছিলেন। তার চেয়ে বড় শাস্তি প্রদান করেছি আপনার সম্মানের উপর। যেদিন ভালোবাসার মান্য করতে শিখবেন ঠিক তখনি আপনি আমার অস্তিত্বে নিজের ছোঁয়া আপীল করতে পারবেন।’
শ্রেয়িতা ইফদিয়ার ফুঁপানো শুনে সজাগ হয়ে গিয়ে ছিল। সে বেলকনির দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে ইফদিয়ার আহত কথাগুলি শুনে ফেলে। তার চোখ থেকেও গড়িয়ে পড়ে দুমুঠো অশ্রুজল। ভালোবাসলে বুঝি এত পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। জীবনটা জানি কুল কাঠের আগুনের ন্যায় ছাই হচ্ছে সবার। হাসিখুশি থাকতে এই একদিন তো পরের দিন দুঃখে শোকে মরতে হয়।
শ্রেয়িতা তার কাছে যেতে নিলে পরে কি ভেবে যেন থেমে যায়।
আনমনে ইফদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘পরীর মত নিষ্পাপ মেয়েটি যাবিয়াজ এর কপালে হিরার ন্যায় উদয় হয়েছে। তাদের মান-অভিমান এর রেখাটা যেন সূক্ষ্ম হয়ে আসুক। অভিমানী পাহাড়টা যেন বরফ পিন্ডের ন্যায় গলে যাক। ইফদিয়ার যেন পূর্বের ন্যায় যাবিয়াজ কে ভালোবাসুক।’
শ্রেয়িতা ইফদিয়ারকে দেখে বুঝতে পারল সে ক্ষুধার্ত। শরীর বেশ শুকিয়ে গেছে। সে ভেবে পুনরায় বিছানায় গেল। কাঁথা বুক অব্দি টেনে ড্রয়ারে থাকা গ্লাস দিয়ে ঠুংঠাং শব্দ করে। ইফদিয়ার চমকে গেল। চোখ-মুখ উড়না দিয়ে মুছে নিজেকে স্বাভাবিক শান্ত করল। পূর্বের ন্যায় শব্দটা আসায় ইফদিয়ার ধীরেসুস্থে বেলকনির দরজা খুলে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে। বিছানার দিকে নজর পড়ে। শ্রেয়িতা হামি দিয়ে উঠছে। সে যে আগে থেকেই সজাগ তা ইফদিয়ার অজানা। শ্রেয়িতা হামি দেওয়ার ভান করে আড়চোখে ইফদিয়ার কে দেখল। ইফদিয়ার গলা ঝেড়ে শ্রেয়িতার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে।
শ্রেয়িতা যেন এই সুযোগটার জন্যে অপেক্ষা করছিল। সে ভ্রু কুঁচকে পিছে ফিরে দেখে ইফদিয়ার কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে সন্দেহপ্রবণ নিয়ে কড়া আদেশে বলে,
‘ইফুডল না খেয়ে কি শুকনো শেয়াল হতে চেয়েছো। পেট এতো ঢুকল কেনো! আসো খাবার খাবে।’
শ্রেয়িতা এক প্রকার জোড় করে ইফদিয়ার কে বিছানায় বসিয়ে দিল। নিজেকে গিয়ে খাবার বেড়ে খাওয়ে দিতে থাকে। রুমের বাহিরে ডাইনিং রুমের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে ইসমাইল। শ্রেয়িতার প্রতি একদন্ত স্নেহ-অনুরাগ ঘিরে বসেছে তার মনে। কিন্তু সেই যে ‘ধর্মের দেয়াল’ এর কথা মনে পড়তেই চোখ সরিয়ে নিল। বিড়বিড় করে বলে,
‘নিষিদ্ধ জিনিসে বুঝি আগ্রহতা বহুত ! কিন্তু আমি যে পারব না সেই আগ্রহতাকে গ্রাহ্য করতে।’
ইসমাইল শ্রেয়িতার ভাবনার সঙ্গে নিশ্চিত হলো। তার কারণে ইফদিয়ার বোনটা পেটের মধ্যে দানা-পানি প্রবেশ করিয়েছে। না হলে ক্ষুধার্ত হলেও মুখ ফুটিয়ে বলবে না যে, খিদে লেগেছে। তবে পূর্বের ঘটনাটা তাকে বেশ ভাবাচ্ছে। তার কোমলতা মনের বোনটির মধ্যে কখনো হিংসা-বিদ্বেষ এর প্রভাব দেখেনি। সবসময় মুগ্ধতর প্রাণচঞ্চলতা নিয়ে চলতে দেখেছে। হঠাৎ কয়েকমাসে বোনের মধ্যে ম্যাচিউরিটির মত পরিবর্তন দেখে তারও বেশ মন খারাপ হয়।
সে তো চঞ্চল বোনকেই চাই। এমন মনমরা বোনের মুখে হাসি ফুটাতে যতই হোক সে চেষ্টা চালিয়ে যাবে। তার চেয়ে বড় কথা বোনের পরিবর্তনশীলতার পিছনে রহস্য জানা।
ইসমাইল মনজুড়ে ইফদিয়ার রহস্য উদঘাটন করার জন্যে ভাবতে থাকে।
তখন গাড়ির হর্নের উচ্চ শব্দে খেয়াল করে দেখে
জগৎ শন্দ্রনাথ উনার দুইপুত্র বাসায় প্রবেশ করছে। ইসমাইল খাবারের টেবিলে অপেক্ষা করছিল তাদের। জগৎ শন্দ্রনাথ ছেলেদের পরিষ্কার হতে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি নিজেও রুমে গেলেন।
লক্ষ্মীনা বিছানায় বসে কিছু একটা ভাবনায় মগ্ন ছিলেন। দরজা খুলার শব্দে ভাবনাকে মাথা থেকে ঝেড়ে নিল আপাততঃ। জগৎ শন্দ্রনাথকে দেখে সযত্নে এসে কাবার্ড থেকে পোশাক বের করে ডাইনিং রুমে গেলেন। তিনিও খাবার খান নি। কেননা স্বামী ছাড়া খেতে পছন্দ করেন না। মিসেস হালিমা ইতিমধ্যে মিসেস জাবিয়ার ওষুধ সেবন করিয়ে দিয়েছেন। আজকাল তিনি অসুস্থতা সেরে উঠতে পারছেন। হাত-পা নড়চড় করছে ধীরস্থিরে। মিসেস হালিমার উক্ত কথায় পরিবারের নেমে আসে খুশির বর্ষণ। ইসমাইল যেন কেঁদেই দিবে মত অবস্থা। লক্ষ্মীনা খুশিতে পূর্জার দরবারে গিয়ে মিষ্টিমুখ করালো মূর্তির মত সাজিয়ে রাখা দেবীকে। ইসমাইল মনের গহীন থেকে আল্লাহর শোকরিয়া প্রার্থনা করে।
শ্রেয়িতা ঘুম পাড়িয়ে দিল ইফদিয়ার কে। নিজের কাঠকাঠুনি সাফল্য করতে পেরে দম নিয়ে শ্বাস ছাড়ল। ইফদিয়ার তো খাবার খাওয়ার সময়ই ফুঁপিয়ে উঠছিল। ফলে শ্রেয়িতা বারংবার জিজ্ঞাসা করে। শেষে তার সঙ্গে না পেরে ইফদিয়ার কান্না করার কারণ বলে দিল। শ্রেয়িতা জেনেও অবুঝ এর মত করে সব জেনেছে এমন ভান করল। সে নিজেও কান্নার মত মুখ করে বলে,
‘চিন্তে করো না। হয়ত ভুল সে বুঝছে। তবে দেরি হয়নি এখনো ইফুডল। যেহেতু মানুষ মাত্রই ভুল সেহেতু চোখে দেখা দৃশ্য সত্য ভাবা ছিল যাবিয়াজ এর বোকামি। কিন্তু এতে তার এক তরফা ভালোবাসা লুকিয়ে ছিল। মানে বুঝছো?’
অবুঝ পিচ্চি মেয়ে ইফদিয়ার নাক ফুলিয়ে হিচকি তুলে মাথা এপাশ ওপাশ নেড়ে না বুঝায়। শ্রেয়িতা ঠোঁটটা হালকা প্রসারিত করে বলে,
‘মানে হলো যদি না সে তোমায় ভালোবাসতো তাহলে কেনো এতটা অভিমান হয়ে ছিল তার! কেনো করেছিল তোমার সঙ্গে সহস্র অত্যাচার! কারণ একটাই সে তোমায় মনপ্রান্তে জায়গা দিয়ে ছিল। কিন্তু একটা কথা আছে না! সুখ পাখি আসতে না আসতে উড়াল দেয়। তেমনটাই হলো তোমাদের মাঝে। যাবিয়াজ ভালোবেসে তোমায় আপন করতে উঠেপড়ে লেগেছিল। কিন্তু ওই যে বিপদ নামক শব্দটি এসে তোমাদের মধ্যকার অনুভূতি-এক তরফা দুজনের ভালোবাসা কে নিমিশেষে ছিন্ন করে দিল। তোমার সঙ্গে ভুলবশত ইসমাইল কে তোমার ভাই নয় বরং বয়ফ্রেন্ড ভেবে নিয়ে ছিল যাবিয়াজ। এখন যদি দৃশ্যটি তোমার ক্ষেত্রে অনুরুপে প্রসারিত হত। তাহলে যাবিয়াজ যা করেছে তুমিও তাই করতে। আইম রং অর রাইট!’
ইফদিয়ার হাল ছেড়ে দিল। এবার যেন তার গলা ফাটিয়ে কান্না করতে মন চাচ্ছে। আজ সে সীমানা লঙ্গন করে মনটাকে ভেঙ্গেই দিয়েছে যাবিয়াজ এর। কিন্তু দোষ কার এতে! দুজনেরই দোষ। একে তো সে কখনো তার পরিবার সম্পর্কে যাবিয়াজ কে অবহিত করে নি। তার উপর যাবিয়াজ এর কটুক্তি কথাগুলো বলার সুযোগ দিয়ে মিথ্যে দৃশ্যকে সত্য দৃশ্য কি না তা সামনে আনার চেষ্টা করেনি। তবুও শ্রেয়িতার শেষাক্ত কথায় সে ঘাবড়ে গেল। আসলেই যদি যাবিয়াজ এর জায়গায় সে হতো। আর যাবিয়াজ অন্য মেয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে গাড়ি নিয়ে ঘুরাঘুরি করতো! তখন না জানি তার মধ্যে কি চলতো মনে! বেহায়া মনে তখন বিচ্ছেদ এর মত দুর্ঘটনা রটিয়ে ছাড়তো। ভুল বুঝাবুঝি পাহাড় সমেত বাড়তো। শ্রেয়িতা ভাতের লোকমা ইফদিয়ার মুখে তুলে দিচ্ছে। সঙ্গে ইফদিয়ার ধ্যানমগ্ন চেহারা লক্ষ করছে। সে জানে ইফদিয়ার মনে যাবিয়াজ এর মত অনুশোচনা কাজ করছে। ইফদিয়ার খাওয়া শেষ হলে শ্রেয়িতা জোড়পূর্বক তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিল। না হলে মেয়েটা অযথা ভেবে মাথার কোষগুলোকে মেরে ফেলতো। হাত ধুয়ে সে নিজেও খাবারের পর্ব চুকিয়ে রুমে এলো। ঘুম আজ তার চোখে হানা দিবে না। কারণ অনেক ঘণ্টা আগ পর্যন্ত ঘুমিয়েছে।
৩৭.
গভীর রাত যাবিয়াজ ছাদে গিটার হাতে নিয়ে বসে আছে । খালি গলার সঙ্গে অদক্ষ গিটার নিয়ে আহ্লাদী শখ পূরণ করছে। উদ্দেশ্য একটি কোনোভাবে যদি মনের বেদনাকে সুর হিসেবে তুলতে পারে। ছোট থেকে গিটার বাজানোর শখ তার। কিন্তু কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ না থাকায় গিটারের তারে ঠুং ঠুং করে নেড়ে আওয়াজ করতো।
আজও ব্যতিক্রম নয়। তবে তখনকার দিন আর এখনকার দিনে তফাৎ রয়েছে। ছোট যাবিয়াজ আজ অনেক বড় হয়ে গেল। ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র। নিজের হাতে মুঠোয় অনেক কিছু করতে পারবে। গিটারের হ্যান্ডেলে মাথা দিয়ে যাবিয়াজ নিজ গালে হাত দিয়ে স্পর্শ করে। গালটা খানিক ব্যথা করছে। কিন্তু সে ছেলে শক্ত দেহের গড়নে বেড়েছে। ইফদিয়ার চড় মারাটা ছিল ইদুঁরের মত নরম। না হলে তার গাল ফুলতো। তবে তার গাল ফুলে নি কিন্তু খানিক রক্তিম আভা বুঝা যায়। মেয়েদের মত হলে চড় খেয়ে তার গাল ফুলে যেতো। ইফদিয়ার পুচকির আচরণগুলো তার মনে কোণায় উঁকি মারছে। গিটারের উপর হাত দিয়ে সংকোচন করে নেড়ে নেড়ে শব্দ তুলল। শব্দের তালে গেয়ে উঠে।
‘বেখেয়ালি মেয়ে বিই তেরা
হিই খায়াল আয়ে~
কিউ বিসারনা হেয় জারুরি
ইয়ে সাওয়াল আয়ে~
তেরে নাসদিইকিউ কি খুশি
বেয়েহিসাব তিই
ইজচ্ছে মেয়ে ফাসলে বিই
তেরে বেয়েমিসাল আয়ে~
মেয়ে যো তুমছে দূর হোন
কিউ দূর মেয়ে রাহুন
তেরা গুরুন হুউন
আহ তুহ ফাসলা মিটা
তুহ খাওয়াব সা মিলা
কিউ খাওয়াব তোর ডুউন~
ও ও ও ও ও ও ও
হঠাৎ মুষলধারে নামে ঝুম করে বৃষ্টির এক অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য। পানির টুপ টুপ শব্দ হওয়ায় যাবিয়াজ গান থামিয়ে দিল। বৃষ্টি বিলাসে সে আগ্রহী কিন্তু সে এখন আগ্রহহীন দৃষ্টিতে বৃষ্টি দেখছে। কারণ তার প্রাণভোমরা হিনা বৃষ্টির পানিও অচল।
মুষলধারে বৃষ্টির দিকে অপারগ হয়ে তাকিয়ে আছে যাবিয়াজ। ‘কাবির সিং’ এর ‘বেয়েখেয়ালি’ গানটি যেন তার চলমান জীবনের সঙ্গে সাদৃশ্যময়।
দরজা খুলে পরক্ষণে ভেতরে প্রবেশ করলেন রবিউল। লাঠি ভর করে এগিয়ে গেলেন ছেলের কাছে। তিনি বৃষ্টির পানি অনুভব করছেন শুধু দেখার সাধ্যতা নেই। সেই অন্ধ চোখে ছেলের আহত দৃষ্টি, বেদনাময় মুখশ্রী দেখতে পারছেন। তিনি ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলেন,
‘অনুভূতি বাসা বাঁধে ছোট থেকে। জানিস বাবা হূমায়ুন আহমেদ এর স্বীকারুক্তিগুলো তোর জম্মের পর থেকে শুনে এসেছি। তার সব স্বীকারুক্তির মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় কোনটি!’
যাবিয়াজ ভাবক দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকায়। রবিউল এর চোখযুগল একদৃষ্টিতে বৃষ্টির দিকে স্থীর হয়ে আছে। উনার এক হাত এখনো যাবিয়াজ এর কাঁধে স্পর্শ করা। তিনি মুচকি হেসে বলেন,
‘পৃথিবীতে অনেক ধরনের অত্যাচার আছে । ভালোবাসার অত্যাচার হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ানক অত্যাচার। এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কখনো কিছু বলা যায় না, শুধু সহ্য করে নিতে হয়। তোর মাকে ছাড়া যাবত জীবন কিভাবে পাড় করেছি মুখে ব্যক্ত করলেও হৃদয়ের ব্যক্ত করা শেষ হবে না। আজও মনে হয় তোর মা বুঝি আমার সঙ্গে অভিমান করে বসে আছে। আর আমি সাধ্যমত অভিমান ভাঙ্গতেও পারেনি। আমিও চাই তোর মায়ের অভিমান ভেঙ্গে তার সঙ্গে পরকাল জীবন কাটিয়ে দিতে। কিন্তু ওই যে তোর মা আমাদের ভীষণ ভালোবাসতো। ফলে তোর জন্যে আমায় দায়িত্ববান বানিয়ে চলে গেল না ফেরার দেশে।’
যাবিয়াজ বাবাকে আঁকড়ে ধরে কেঁদে ফেলে। এত কষ্ট তারও সহ্য হচ্ছে না। রবিউল সাহেব নিজের চোখের পানি বাঁ হাত দিয়ে মুছে নিলেন। ফুঁপিয়ে কেঁদে চলা ছেলেটিকে এক হাতে আগলে নিলেন। দৃঢ় আত্মবিশ্বাস রত কণ্ঠে তিনি যাবিয়াজকে বলেন,
‘প্রকৃত ভালোবাসাই কেবল তোর আত্মাকে জাগ্রত করতে সক্ষম।
এই ভালোবাসায় জয়ী হওয়া এতটা সহজতর নয়। তোর থেকে ভালোবাসার যুদ্ধে অপর ব্যক্তির মনে পুনরায় বিশ্বাস গড়তে হবে। তার প্রতি তোর বিশ্বাস।’
রবিউল সাহেব বলে ইঙ্গিত বুঝাতে নিজের তর্জনী আঙুল যাবিয়াজ এর হৃদপিন্ড বরাবর বসায়। রবিউল সাহেব বাকিটা ছেলের বুঝদার মস্তিষ্কের উপর সেরে রুম হতে প্রস্থান করলেন। রুমে গিয়ে পকেট থেকে ফোনটায় স্পর্শ করলেন। দু-তিন সেকেন্ড পর পকেটে ঢুকিয়ে বিছানা গা ছেড়ে শুয়ে পড়লেন।
________
পরেরদিন…
তিয়ানা নতুন কলেজে এডমিশন নিয়েছে। তার শারীরিক অসুস্থতা পরিপূর্ণ ভাবে সেরে গিয়েছে। চিকেন পক্স থেকে পরিত্রাণ পেয়ে কয়েকদিন বেড রেস্টে ছিল। কলেজ থেকে ফিরতি সময়ে বাইক এর বুঁ বুঁ বুঁ শব্দ শুনতে পেল। তিয়ানা রুহিয়ার সঙ্গে কলেজে এসেছিল। যেহেতু তাদের সঙ্গে মনিরামপুরে ইফদিয়ার নেই। সেহেতু তারা দুজন একই সঙ্গে কলেজে ভর্তি হয়েছে।
এখন কাগজপত্র পূরণ করে রিসিটবুক হাতে নিয়ে রিক্সা খুঁজছে তিয়ানা। রুহিয়া তার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে গাড়ি করে চলে যায়। কিন্তু রুহিয়া উদাসীন ছিল তখন। কারণ সে কোনোভাবেও তিয়ানাকে একা ছাড়তে চাচ্ছিল না। তবে তিয়ানার নিজ মুখের জোড় লাগিয়ে রুহিয়াকে পাঠিয়ে দিল। অবশ্য রুহিয়া আর তার চাচাতো ভাই একে অপরকে ভীষণ ভালোবাসে। সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি কাবাবের হাড্ডি হতে গাড়িতে উঠে যাবে কেনো! ভেবেই রুহিয়াকে যেতে বলে।
‘ধুর ছাতা একটা রিক্সাও থামে না কেন!’
বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে এলো তিয়ানার। চোখজোড়া খালি রিক্সার জন্যে নরজদারি করছে। বাইকের তীব্র শব্দ পুনরায় তার কানে ভেসে আসায় সম্মতি ফিরল তিয়ানার। সে পিছে ঘুরে দেখে এক যুবক হেলমেট পরিহিত অবস্থায় তার দিকে তাকিয়ে আছে। তাও আবার রাইডার লুক দিয়ে বাইকে ঠেস মেরে দাঁড়িয়ে আছে। তিয়ানা চোখ সরিয়ে নিল। যুবকটা মুচকি হেসে এসে কোলে উঠিয়ে নিল তিয়ানাকে। রাস্তার ফুটপাতে যুবকের এহেন কাজে অবাকের শীর্ষে পৌঁছে যায় তিয়ানা। চিৎকার কে মানুষ জোরো করতে আরম্ভ করে।
যুবকটি মানুষের সমাগম দেখে ঢোক গিলে হেলমেট খুলে। তিয়ানা যুবককে দেখে থ হয়ে যায়। যুবক এর চোখে স্পষ্ট রাগ দেখতে পেল তিয়ানা। যুবক চোখের ইশারায় চারপাশ তাকাতে বলে।
তিয়ানা চারপাশে তাকিয়ে দেখে মানুষ ঘিরে ধরেছে। অনেকে মোবাইল নিয়ে ভিডিও করতে প্রস্তুত হচ্ছে। সে সকলের হতবুদ্ধির কাজ দেখে মৃদু চিৎকার করে বলে,
‘মাফ করবেন আসলে স্বামীকে হেলমেট পড়া দেখে বুঝতে পারিনি।’
মানুষজন আর ভীড় জমালো না। একে একে চলে যায় আর একাকিত্বে পড়ে তিয়ানা আর যুবকটি। যুবক এবার তিয়ানার হাত আঁকড়ে ধরে বলে,
‘আজ হবুজামাই কে জেলে ভাত খাওয়ানোর জন্যে ভালোই ফাঁদ গড়ে ছিলে।’
তিয়ানা মুখ ফুলিয়ে বলে,
‘সরি এরফান। আমি ভাবছি অন্য কোনো…।’
এরফান ক্যানভাসে অফ ডিউটি হিসেবে ইঞ্জয় করছিল। কিন্তু মনকে ঠাহর করতে পারছিল না বিধায় ঘুরতে গিয়ে ছিল। মনিরামপুরে নিজের বাসা এক পরখ দেখে। রওনার পথে তিয়ানাকে কলেজ থেকে বের হয়ে যেতে দেখল। তখনি কান্ড হয়ে যায়।
এরফান এর ভাবনামত তিয়ানাকে বলে। সে শুনে আফসোস এর কণ্ঠে বলে,
‘বোকামি করলাম সরি।’
‘উহুঁম চলো কফি খেতে।’
তিয়ানাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এরফান তার মাথায় হেলমেট পরিয়ে দিল। সময়টা যেহেতু সূর্য অস্তমিত হওয়ার। অতঃপর উপভোগ না করে দুজনের মনটাই মানছে না। তাই অহেতুক কথা না বাড়িয়ে এরফান বাইক স্টার্ট দিল।
চলবে….