অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া পর্ব_২২

অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া পর্ব_২২
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)

৪০.
এরফান ভার্সিটি ক্যানভাসে ইসমাইল কে রাগান্বিত অবস্থায় হকিস্টিক নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখে। এতে সে ভীষণ ভড়কে গেল। আনমনে ভাবে।

‘ইসমাইল ভাই হকিস্টিক নিয়ে কেন গেল! ভেতরে কি খেলা হচ্ছে!’

‘জান তোমার আইসক্রীম গলে কাপড়ে লেগে এবড়োথেবড়ো হয়ে যাচ্ছে! হেই কোথায় হারালে!’

তিয়ানা খেয়াল করল এরফান এর দৃষ্টি ভার্সিটির প্রবেশদ্বারে। এরফান এর সায় না পেয়ে এতক্ষণে ব্যাপারটা সে বুঝতে সক্ষম হলো। সে এরফানকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সম্মতি ফিরিয়ে আনল। এরফান তিয়ানার দিকে তাকিয়ে আনমনে বলা কথাটি বলে ফেলে।
তিয়ানা শুনে অবাক হয়ে বলে,

‘ইসমাইল ভাইয়া এখানে কেনো আসবেন! তাও আবার আপনাদের ভার্সিটিতে ঢুকে পড়লেন চলো তো গিয়ে দেখি।’

তিয়ানার কথায় এরফানও রাজি হয়ে গেল। তারা দুজন দুপুরবেলায় প্রতিদিনের মত ঘুরতে বের হয়। একে অপরের সঙ্গে হাত ধরে হাঁটে, আইসক্রীম খাই, সূর্য অস্তমিত হওয়ায় দৃশ্য উপভোগ করে। কিন্তু প্রতিবারের মত আজ এরফান বাইক স্ট্যান্ট করে রেখেছিল ভার্সিটির সামনে। এখানেই তিয়ানাকে অপেক্ষা করতে বলে আইসক্রীম নিতে গিয়ে ছিল। আইসক্রীম এনে একে অপরের সঙ্গে মিষ্টি আলাপন করে। এর মধ্যে ইসমাইল কে রাগান্বিত দেখে ব্যাপারটায় খটকা লাগে তার।

তিয়ানা ভয়ে এরফান এর হাত চেপে ধরে। তাদের সামনে মেঝেতে রক্তের ছড়াছড়ি। এক ছেলের মাথা ফেটেছে তো আরেক ছেলের দাঁত ভেঙ্গে মেঝের উপর পড়ে আছে। দু ছেলেকে বেদাধরক পিঠিয়েছে ইসমাইল। এই দুজন ছেলে অন্য কেউ নয়। বরঞ্চ সেই পূর্বের বখাটে ছেলে দুটো। যারা পূর্বে একবার শ্রেয়িতার সজ্ঞানে ইজ্জত হানি করার চেষ্টা করে ছিল নির্জন পার্কিং প্লেসে। ছেলে দুটো মুখ ফুটিয়ে অস্পষ্ট সুরে বলে,

‘আ আমাদের মা মাফ করে দেন ভা ভাই।’

ব্যস এটুকু কথার জোরে আরো একবার ছেলে দুটোর পিঠে হকিস্টিক এর বারি বসিয়ে দিল ইসমাইল। ছেলে দুটো কাতরসিক্ত অবস্থায় জ্ঞান হারালো। এরফান আর তিয়ানা কে দেখে মুটেও ঘাবড়ালো না ইসমাইল। কারণ সে নিজের সিদ্ধান্তে আর কর্মে অটুট। তার জানা আছে যে সে অন্যায়ভাবে ছেলে দুটোকে আহত করে নি। নিদারুণ তারা অন্যায় করেছে। যার পর্যাপ্ত শাস্তি পুলিশ এর আগে সে দিল।
ইসমাইল নিজের কাজ মিটিয়ে হকিস্টিকটি মেঝের উপর সজোরে ছুঁড়ে মারে। নিজের চোখ বুজে কয়েক সেকেন্ড শ্বাস-প্রশ্বাসন চালায়। পা চালিয়ে রুমের মধ্যে কয়েক কদম হেঁটে দাঁড়িয়ে গেল। চোখ খুলতেই তার শরীর অবশ ধরণের প্রাণীতে পূর্ণ হলো। যেন তার শরীরে কোনো প্রকাশ শক্তি নেই। তার চোখযুগলে কিছু দৃশ্য ভেসে আছে। সেগুলো স্মরণ করে পিটপিট করে চেয়ারে অজ্ঞানরত রমণীর দিকে দৃষ্টিকোণ রাখে ইসমাইল। রমণীর বিধ্বস্ত শরীর পরখ করার পূর্বে তার শরীরে নিজের ব্লেজার পরিয়ে দিল যুবক। তিয়ানা এতক্ষণ হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেও। নিজের আপুর বয়সী এক মেয়েকে চেয়ারে দেখে বিচলিত হলো সে। ইসমাইল এর দিকে প্রশ্নময় নয়নে তাকিয়ে তিয়ানা জিজ্ঞাসা করে।

‘ভাইয়া মেয়েটা কে আগে কখনো দেখিনি!’

তিয়ানার প্রশ্নে ইসমাইল জবাব দেওয়ার পূর্বে এরফান সাবলীল ভঙ্গিতে ‘শ্রেয়িতা’ বলে।
তিয়ানা ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকায়। বুঝার চেষ্টা করে এরফান মেয়েটিকে চিনে কেমনে! কে হয় সে। বাজে চিন্তা ধারণা আপাত মাথায় পুষতে দিল না তিয়ানা। কারণ ঘটনাটি এমন যে শ্রেয়িতাকে বখাটে দুই ছেলে রেপ করার চেষ্টা করছিল। এরফান হাত মুঠোবদ্ধ করে ফোন বের করে। চট জলদি ফেরদৌস কে পুলিশ নিয়ে ভার্সিটি আসতে বলে।
লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
ইসমাইল বিধ্বস্ত রমণীকে সযত্নে কোলে উঠিয়ে নিল। রমণীকে হসপিটালাইজ করার জন্যে বেরিয়ে পড়ে। এরফান আড়চোখে ইসমাইল এর যাওয়ার পানে তাকায়। আনমনে মুচকি হাসি দিল। তিয়ানার হাত আঁকড়ে ধরে ছেলে দুটোর দিকে হিংস্র দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। যতক্ষণ না পুলিশ তার ধারে কাছে না পৌঁছায়। ইসমাইল যাওয়ার পর তিয়ানা আবেদনসূচক কণ্ঠে বলে,

‘শ্রেয়িতা কে এর সাথে আপনার কি!’

‘যাবিয়াজ,আমি আর ফেরদৌস এর জানের টুকরো বোন। একই বর্ষের তবে অনুষদীয় বিভাগ ভিন্ন।’

‘ওহ কিন্তু জানো একটি বিষয় খেয়াল করেছি।’

‘কি সেটা!’

‘শ্রেয়িআপুর প্রতি ইসমাইল ভাইয়ার চোখে পসেসিভনেস, এক্টিভ কেয়ার ফিল দেখেছি। তোমাদের বন্ধু বা ভাইদের চেয়ে বারো ইসমাইল ভাই বুঝি আপন।’

এরফান মাথা চুলকানোর ভান করে মৃদু হাসি দিল। তৎমধ্যে ফেরদৌস পুলিশ কনস্টেবল নিয়ে ভেতরে আসে। এরফান অফিসার কে দেখে বলে,

‘স্যার বাজে মাল দুটো রেপ করতে উদ্যোগ নিয়ে ছিল। মেয়েকে কিডনাপ করার আগে ধরে ফেলা হয়েছে। প্লিজ অনুগ্রহ করে এরেস্ট করে একশ ঘা করে লাগাইয়েন। বিশেষ করে এদের মেইন পয়েন্টে গরম পানি ঢেলে দিবেন।’

অফিসার শুনে নিজের পুলিশ ইউনিফর্ম এর সঙ্গে পরা টুপিটা হাত দিয়ে ঠিক করে। কনস্টেবলকে চোখের ইশারায় হাতকড়ি পরাতে আদেশ করে। ইশারা অনুযায়ী কনস্টেবল গিয়ে হাতকড়ি পরিয়ে ছেলে দুটোকে টেনে হিচড়ে নিয়ে গেল। এরফান তপ্ত শ্বাস ফেলে তিয়ানার গালে হাত রেখে বলে,

‘জানো মানুষের মনে কখন শয়তানে কেমন ভাবে বাসা বেঁধে ধর্ষণ এর মত জঘন্য কাজ করতে উদ্দিন করে বলা বাহুল্য। তোমাকে ইসলামী রীতিমত বিয়ে করে আপন করব। মনে রাখবে মানুষের মধ্যে সুদৃষ্টি হলেও কুদৃষ্টি বহমান। হঠাৎ বদলী হয়ে যেতে পারে যে কেউ! আমার কথার মর্ম বুঝবে বলে ধারণা রইল।’

এরফান এর মূল্যবান বাণী শুনে তিয়ানা ঠোঁটে কোণে মৃদু হাসির রেখা টেনে বলে,

‘যথা আজ্ঞে মিয়া সাহেব।’

‘হবেন তো এই মিয়া সাহেব এর বেগাম!’

‘হুম ভেবে দেখব।’

এরফান গাল ভেটকিয়ে বাইক এর দিকে হাঁটা ধরে। তিয়ানা মুখ টিপে হেসে তার পিছে হাঁটা ধরে। ভার্সিটির মধ্যে কান্ড ঘটেছে। তা কেউ জানতে না পারে মত দারোয়ান কে এক হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দিল এরফান। বিনিময়ে আজকের ঘটনাটা ধামাচাপা করে দিল। কেননা এতে ভার্সিটির রেপুটিশনের উপর কথা উঠবে। ফলে শ্রেয়িতার চরিত্রের সঙ্গে ভার্সিটির প্রতিটা ছাত্র-ছাত্রীকে খারাপ নজরে দেখার প্রবণতা বেড়ে উঠবে। এই দিকটা ভেবে টাকাটা দিল এরফান। দারোয়ান পূর্বে ছিল না বরঞ্চ সেই পুলিশ এর সঙ্গে কথা বলার সময় অফিসারকে বলে ছিল। অফিসার ভার্সিটি এলে দারোয়ানকে সহ আনতে। এতে জায়গা সহজে বোধগম্য হবে অফিসারের। এরফান থেকে বিদায় নিয়ে দারোয়ান ভার্সিটির দরজা শুদ্ধভাবে তালাবদ্ধ করে দিল। তিয়ানা দূরে বাইকে বসে এরফান এর কার্যাদি পরখ করেছে।
অকস্মাৎ ফোনে কলের শব্দে তিয়ানা ফোনটি নিয়ে কানে ধরে। সালাম দিয়ে ‘কে’ বলে।
কিন্তু ভাবলেশনহীন শব্দ পাওয়ায় ভ্রু কুঁচকে এলো তার। ফোনটা আলগা করে চোখের সামনে দেখে নিল। নাম দেওয়া আছে ‘ছেড়ি’ হঠাৎ মেয়ে। আর এই ছেড়িটাই হলো ইফদিয়ার। যার কল রিসিভ করেছে তিয়ানা। ইফদিয়ার কিছু বলছে না দেখে তিয়ানা মুখ ফুলিয়ে বলে,

‘ছেড়ি কি মা হয়েছিস। মুখ বুজে আছিস কেন হে!’

ব্যস খিলখিলানো মিষ্টি হাসির শব্দ গুঞ্জন হলো ফোনের বিপরীত পাশ থেকে। ইফদিয়ার সরু দৃষ্টিতে তার সম্মুখে থাকা সাদা দেওয়ালে তাকিয়ে আছে। তীরন্দাজ এর মত হাতে তীর নিয়ে দেওয়ালে টাঙানো বোর্ডে নিক্ষেপণ করে। তিয়ানা শুনতে পেরে অবাক হয়ে বলে,

‘বাহ্! তীরন্দাজ হয়েছিস কবে থেকে।’

‘আজ থেকে তোর সঙ্গে ব্লুথ এ কথা বলতে বলতে।’

‘আমাকেও শিখাইয়া দিস।’

‘বললেই হলো।’

তিয়ানা ভেটকিয়ে ভাব নিল। পক্ষান্তরে হেসে বলে,

‘আচ্ছা দোস্ত কবে আসবি বল।’

‘তুই জানিস কেনো কল দিছি আমি।’

‘অবভিউয়াসলি তোর ভাইয়া বলে ছিল। আমার বাসায় রুম খালি আছে অনেক। তোর পুরু গোষ্ঠিসহ থাকলেও বুঝি রুম শেষ হবে না।’

‘হই ঢপবাজি। আমি আসব লাইক এইতো কাল বা পরশু।’

‘ওকে সি ইউ টুমোরো দোস্ত। আল্লাহ হাফেজ। আসসালামুয়ালাইকুম।’

‘আল্লাহ হাফেজ ওয়ালাইকুমাসালাম।’

৪১.

যাবিয়াজ ব্যাগ গুছাচ্ছে। রবিউল সাহেব উদাসীন হয়ে বসে আছেন। তিনি ছেলের কার্যাদি অনুভব করছেন। ইতিমধ্যে ফ্লাইট এর টিকেট বুক করে ফেলেছে যাবিয়াজ। আজ রাত ১টায় তাদের ফ্লাইট। রবিউল সাহেব ভ্রু কুঁচকে ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

‘বাবা তুই কি সিরিয়াসলি চলে যাবার জন্যে রেডি হচ্ছিস।’

যাবিয়াজ শুনে কিছু বলেনি। তার বাবার ব্যাগটা গুছিয়ে ধপ করে উনার পাশে বসে। উনার হাত নিজের হাতে মুষ্ঠিবদ্ধ করে বলে,

‘তোমার জন্যে যাবো। এটা আমার প্রধান দায়িত্ব সন্তান হিসেবে।’

রবিউল সাহেব এবার যেন জেদ নিয়ে বলেন,

‘আমার আমার বলে তিনবছর এর জন্যে চলে যাবার ডিসিশন কেন নিচ্ছিস।’

যাবিয়াজ তপ্ত এক শ্বাস ছেড়ে বলে,

‘তার মানে জেনে গেলে যে আমি তিনবছর এর জন্যে সেখানে সিফ্ট করাচ্ছি।’

রবিউল সাহেব অভিমান করে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। যাবিয়াজ মৃদু হেসে বলে,

‘খাবার রান্না করে রেখেছি ড্যাড। খেতে আসো।’

দুপুরের খাবারের পর্ব চুকিয়ে যাবিয়াজ তার বাবাকে ধরে রুমে নিয়ে যায়। যাতে রাতে হাঁটতে অসুবিধা না হয়। এই সময় একটু রেস্ট নিলে উনার শরীর ভালো লাগবে। বাবাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে চলে যেতে গেলে রবিউল সাহেব হাত ধরে ফেলেন। একটু আহ্লাদী কণ্ঠে আবদার করেন।

‘ইফদিয়ার মামুনির সঙ্গে একবার কথা বলতে চাই।’

যাবিয়াজ থ মেরে দাঁড়িয়ে গেল। তার ক্ষত মনটি ‘ইফদিয়ার’ নামক রমণীকে না দেখে বিষাদে ভরপুর হয়ে আছে। সে জানে না কিভাবে তার বাবাকে বিগত কয়েকদিনের ঘটনা কেমনে বলবে। বললে বুঝি হার্ট এ সমস্যা হলে! এমন রিস্ক সে নিতে পারবে না। ঢোক গিলে শান্ত ভঙ্গিমায় বলে,

‘হুম কালকে নিয়ে আসব।’

‘সত্যি বাবা!’

‘হ্যা পাক্কা প্রমিজ ড্যাড।’

রবিউল সাহেব ছেলের হাত টেনে ধরে হালকা ঝুঁকিয়ে আনেন। ছেলের কপালে আদুরে পরশ হিসেবে চুমু একেঁ দিয়ে বলেন,

‘ইফদিয়ার মামুনিকে আমার খুব পছন্দ তোর বউ হিসেবে।’

যাবিয়াজ আনমনে হেসে ড্যাড এর চুলে বিলি কেটে দিল। কাঁথা বুক অব্দি টেনে ড্যাডকে পরিপাটি করে রেখে বেরিয়ে গেল। এখনো আসরের আযান দেয়নি। তাই সে ভাবল একবার সবার সঙ্গে কফিশপে দেখা করে নিবে। ফোন বের করে এরফান কে বলে।

‘দোস্ত রাকতিয়ার কফিশপে চলে আয় শ্রেয়িতা ফেরদৌসকে নিয়ে।’

এরফান শুনে শ্রেয়িতার কথা বলার আগে কল ডিসকানেক্ট হয়ে গেল। তিয়ানা কে সবেমাত্র বাসায় পৌঁছে দিয়ে হোস্টেলে এসেছে এরফান। শ্রেয়িতার সঙ্গে হসপিটালে দেখা করতে যেতে চাইছিল। কিন্তু যাবিয়াজ এর কথা শুনে সর্বপ্রথম ফেরদৌস কে কল করে আসতে বলে। সে সময় ফেরদৌস পুলিশের সঙ্গেই চলে গেছিল। হোস্টেলে আসেনি। তাই এখন আসতে বলল।

কিছুক্ষণ পর….

যাবিয়াজ পূর্ব থেকেই টেবিল রিজার্ভ করে বসে আছে। তার বন্ধু-বান্ধব এখনো আসেনি। সে বসে ফোন স্ক্রুলিং করতে থাকে। ফোন এর মধ্যে ফেসবুক এর ভিডিও দেখছিল ডাটা অন করে। কি মনে করে নিউজফিড একবার স্ক্রুল করল। একদম প্রথমেই চলে এলো ইফদিয়ার আইডির লিংক। উপরে লিখা ‘ইফ ইউ ওয়ান্ট টু ফ্রেন্ড হার !’

যাবিয়াজ যেন মেঘ না চাইতেই জল পেয়ে গেল এমন দশা। তড়িঘড়ি ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু পরমুর্হুতে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট কেটে দিল ইফদিয়ার। ক্রোধ যেন যাবিয়াজ এর মাথায় উঠে গেল। বিড়বিড় করে বলে,

‘উড়নচন্ডী অপ্সরীমনি। নিজেকে ভাবওয়ালী বানিয়ে ঘুরছো। ঘুরো যত ঘুরার তত ঘুরো। যেদিন তোমায় নিজের করব সেদিন সব সুদ আমলে নিবো।’

দাঁতে দাঁত চেপে ইফদিয়ার আইডিতে ঢুকে। কি ভেবে যেন বাঁকা হাসি দিল যাবিয়াজ। আনমনে ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বলে,

‘হ্যাকিং ইজ দ্যা বেস্ট অপশন টু হ্যারাস ইউ।’

ইফদিয়ার আইডি এখনিই হ্যাক করতে চেয়ে করল না। কেননা এখন সময় কম। অস্ট্রেলিয়া গিয়ে তার ড্যাড এর অপারেশন শুদ্ধভাবে হওয়ার পর করবে ভেবে নিল। কারণ এখন সে কনসেনট্রেন্ড করছে তার ড্যাড এর অপারেশন এর ব্যাপারটাই। একবার অপারেশন হয়ে গেলে তার ড্যাড নিজের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। ভাবতেও যেন যাবিয়াজ এর বুকটা ধুকপুক করে খুশিতে নেচে উঠে। নিজের মধ্যে ধ্যানমগ্ন থাকায় হঠাৎ একজন রমণীর খিলখিলানির হাসি শুনতে পেল। শুনতেই যেন যাবিয়াজ এর মনে হলো হাসিটা ‘ইফদিয়ার’। পিছে ঘুরে দেখে কেউ নেই। মনের ভ্রমটা আজকাল মেয়েটির প্রতিই হয়। মুচকি হেসে ফোন স্ক্রল করে।

৪২.

আয়েশা মেয়েটি কে উদাসীন দেখে তার বাবা জাব্বার কাছে ডাকেন। মেয়েটি ধীরস্থির পায়ে হেঁটে এলো বাবার কাছে। জাব্বার মেয়েকে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করেন।

‘আমার মেয়েটার মুখ ফুলিয়ে রয়েছে কেনো হুম!’

‘কিছু না ড্যাড। যাবিয়াজ কে মিস করছি।’

জাব্বার আয়েশার মনের কথাটা বুঝতে পেরেছে পূর্বেই। কিন্তু এখন শুধু নিশ্চিত হওয়ার জন্যে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি চান না যাবিয়াজ মেয়ের স্বামী হোক। কারণ যাবিয়াজ কে দেখলে বুঝা যায় তার মনের কৌটায় উনার মেয়ের প্রতি কোনো প্রকার অনুভূতি নেই। তাই তো যেদিন যাবিয়াজ এনজিও থেকে নিজ বাসায় ফিরে এলো। ঐসময় উনার মেয়েকে বিন্দুমাত্র পাত্তা দিল না। এমন এক ভাব নিয়ে মেয়ের সামনে চলছিল যেন আয়েশা নামের কেউ বাসায় নেই। তিনি মেয়েকে অত্যধিক ভালোবাসেন। ফলে যাবিয়াজ ফিরে আসায় তিনি পরিবারসহ নিজ বাসস্থানে চলে আসেন। আসার সময় আয়েশা তার বাবার কাছে আকুতি মিনতি করেছিল। যেন যাবিয়াজ কে তার স্বামী বানিয়ে দিক। কিন্তু জাব্বার নিজের সিদ্ধান্তে অটুট ছিলেন। মেয়ের মনকে সায় না দিয়ে নিজের বন্ধু আর বন্ধুর ছেলের সামনে হাসিমুখে চলে গেলেন।
পূর্বের কথাগুলো ভেবে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে জাব্বার এর অন্তরাল হতে। তিনি মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বিলি কেটে বলেন,

‘জানিস আজ তোর ফুপাতো ভাই আসতেছে।’

আয়েশা কথাটি শুনে খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে উঠে। জাব্বার মুচকি হাসেন। আয়েশা বলে,

‘কবে কখন!’

‘আজ রাতেই আসবে।’

‘ওহ আমি গিয়ে রেডি হয়। পকেট লুটবো।’

জাব্বার মাথা নেড়ে যাইতে ইশারা করেন। আয়েশা নেচে নেচে রুমে চলে যায়।

চলবে….
(ভীষণ অসুস্থ থাকায় গল্প দিতে পারিনি কয়েকদিন। আজকে দিয়েছি। আর কয়েকদিন গল্প ছোট আকারে হবে। কারণ আমার শরীরে অসুস্থতা এখনো কাটেনি। রাতে যতটা না সুস্থ লাগছিল। দিনে পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়লাম। ক্ষমা করবেন। দোয়া করবেন যেন সুস্থ হয়ে যায়। হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here