অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া পর্ব_২৬

অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া পর্ব_২৬
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)

৪৯.
নায়েম উল্লাহ স্যার কে হঠাৎ চোখের সম্মুখে দেখে চমকে উঠল ইফদিয়ার। এতটা বছর পর তিনি কেনো তার সম্মুখে এসেছেন। তা উপলদ্ধি করতে পারছে না রমণী। তবে বার্ধক্যতার ফলে নায়েম স্যারকে বেশ বয়স্ক মনে হচ্ছে। তিনিও একজন মেয়েবাজ যুবক ছিলেন অতীতে। প্রাইভেট পড়ানোর নাম করে কত বার যে স্পর্শ করার বাহানা খোঁজতেন। ভাবতেও যেন ইফদিয়ার মেজাজ খিটখিটে ক্রোধান্বিত হয়ে উঠে। নায়েম ইতস্ততঃ বোধক ভাব করে গলা ঝেড়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে ইফদিয়ার। তবুও রমণী ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ক্যাফ এর রিজার্ভ করা চেয়ারে বসে ফোন নিয়ে গেঁটে যাচ্ছে। নায়েম ইফদিয়ার সঙ্গে বসার আক্ষেপ ত্যাগ করে নম্র কণ্ঠে বলে,

‘ইফদিয়ার জানি আমি যা করেছি। তা বেশ ঘৃণাজনক। তবুও বলব অতীতের ঘটনা ভুলে মাফ করে দিও।’

ইফদিয়ার শুনে অবাক হলেও ভাবমূর্তিতে প্রকাশ করল না। নিশ্চুপ ভঙ্গিমায় এটিটিউট ওয়ালা ভাব মুখভঙ্গিতে ফুটিয়ে রাখে। নায়েম প্রত্যাশিত উত্তর না পেয়ে পুনরায় আকৃষ্টময়ী দৃষ্টিতে বলে,

‘আমার সম্পর্কের ভাতিজা তোমাকে পছন্দ করে। তাকে বিয়ে করতে রাজি হলে উপকৃত হতাম।’

ইফদিয়ার হতবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নায়েম স্যার এর উপর। স্যার এর উক্ত বাণীর মমার্থ না বুঝতে পেরে রক্তিম ক্রোধময় কণ্ঠে প্রশ্নতুর করে উঠে।

‘মানে কি! আপনি কি আমার কাছে সম্বধন নিয়ে এসেছেন।’

‘ধরে নাও তাই বৈকি!’

‘তাহলে সেই মহামান্য ব্যক্তি কে!’

‘নিশ্চয় পরিচিত সে। এই এলাকার চেয়ারম্যানের ছেলে নাজমুল। সম্পর্কে আমি তার চাচা হয়।’

ইফদিয়ার আক্রোশে দাঁতে দাঁত চেপে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। সোজাসাপ্টা জবাবে ‘না’ বলে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে যেই প্রস্থান নিতে গেল। ওমনি নায়েম ইফদিয়ার হাত ধরে থামিয়ে দিল। রমণীর রাগের সীমা পেড়িয়ে গেল। এমনকি নায়েমও তার সীমানা লঙ্গন করে ফেলল। উচিৎ শিক্ষা দিতে ইফদিয়ার পিছু মোড়ে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল নায়েম এর গালে। ইতিমধ্যে তার কলিজায় যেন পানি এসে গেল। কত বছরের পুরুনো শোধবদ করতে পারল যেন সে! নায়েম কটমট দৃষ্টিতে ইফদিয়ার দিকে চেয়ে বলে,

‘তোর সাহস কেমনে হলো আমাকে চড় মারার!’

‘বেশ করেছি। তুই আর তোর ভাতিজা। ছেলে যেমন চাচাও তেমন। মেয়েবাজি তোদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। কি ভাবিস কি তুই! সম্মান দিতাম বলে মাথায় চেপে বসবি। শোন সময়টা অতীত নয় যে, তুই স্পর্শ করবি আর আমি মুখ বুজে সহ্য করে নেবো। দিজ ইজ প্রেজেন্ট টাইমিং। এই চড়টা মনে রাখিস! অতীতের কড়া প্রতিশোধ আদায় করে নিলাম। আরে আমি ভেবে ছিলাম তুই মরে গিয়েছিস। কিন্তু না তোর মত তোর ভাতিজাও জুটছে।
আরে আমি তো ভুলেই গেছি! তোরা যে এক গোয়ালের গরু। শোন ফাদার তোদের দেখলে জুতাপিঠা করতে বাধ্য হবো মাইন্ড ইট!’

নায়েম কে ব্যকুল ভাবে তোয়াক্কা না করে ইফদিয়ার সোজা ক্যাফ হতে বেরিয়ে গেল।

আজ সরকারি ছুটির দিকে ইফদিয়ার তিয়ানার সঙ্গে শপিংমল এর ক্যাফে দেখা করতে এসেছিল। তিয়ানাকে আসার পূর্বে বলে রেখেছিল। কিন্তু এসে তারই মেজাজ চটে গেল। অতীতের নায়েম স্যারকে অসৎ প্রস্তাবে উচিৎ শিক্ষা দিয়েছে সে। কিন্তু তিয়ানার সঙ্গে কথা আর হলো না। রাস্তার ফুটপাতে ভাবনা ঝেড়ে নিল মাথা থেকে ইফদিয়ার।
একটি রিকশা ডেকে উঠে পড়ে। এ মুহূর্তে তার বাসায় যাওয়া প্রয়োজন। বুক চেপে দৃঢ় শ্বাস ফেলল। যতই বাঘের মুখে চিৎকার করুক না কেনো! পুরুষ মানুষের সম্মুখে নারীর শক্তি দুরুহ। আল্লাহর নাম স্মরণ করে ইফদিয়ার ব্যাগ থেকে ফোনটা হাতে নিল। ফোনের বাটন প্রেস করার সঙ্গেই স্ক্রিনে ভেসে উঠে যাবিয়াজ এর গুমোট মুখশ্রী। সেটি দেখে ফিক করে হেসে ফেলে সে। অতীতে যাবিয়াজ এর মুখভঙ্গি ছিল গুমোট। আদৌ কি গুমোট প্রকৃতির রয়ে গেল মানুষটা! নাকি পরিবর্তনশীলতা তার মুখশ্রীতেও ফুটে উঠেছে। ইশ! না জানি কেমন জীবনযাত্রায় চলছে সে।
ইফদিয়ার আনমনে ভেবে রিকশার হ্যান্ডেল চেপে ধরে। মনের কৌঠায় একটি আশা রয়ে যায়।অতীতের প্রণয়ক্রীড়া দগ্ধ হলেও ভবিষ্যৎ স্মরণীয় হতে পারে প্রণয়কাব্যে।
বাসার প্রবেশদ্বারে পৌছে রিকশা ভাইকে ৩০টাকা দিয়ে নেমে পড়ে। বাসায় প্রবেশ করেই কোনো দিকে দৃষ্টি না দিয়ে সোজা রুমের দিকে হাঁটা ধরে। যাওয়ার পূর্বে মিটমিটি হাসির শব্দ অনুসরণ করে দেখে তার শ্রেয়িতা ভাবি মিটমিটিয়ে হাসছে। এবং তাকেই অনুধাবন করে চলেছে। ইফদিয়ার ভ্রু কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করে। পুরু ড্রয়িং রুমে চোখ বুলিয়ে দেখে শ্রেয়িতা ভাবী ছাড়া কেউ নেই। ইফদিয়ার ভাবল ভাইয়ের কথা ভেবে বোধ হয় ভাবী হাসছে! মনের ভ্রম ঝেড়ে রুমে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পর পরিষ্কার পরিপাটি পোশাক পরিহিত অবস্থায় নামাজের নিয়ত করে দাঁড়িয়ে যায়।
নামাজ শেষ হতে না হতেই বাসার ইলেকট্রিসি চলে যায়। যেহেতু রুমের মধ্যে পর্দা টাঙানো ছিল বিধায় রুমটা আঁধারে নিমিত্ত হলো। ইফদিয়ার হিজাব খুলে সযত্নে হ্যাঙ্গারে টাঙিয়ে রাখল। পর্দায় হাত দেওয়ার পূর্বেই হঠাৎ কেউ তার হাত চেপে ধরে। হেঁচকা টেনে ধরে শক্ত কোমল দড়ি দ্বারা হাত বেঁধে দিল। ইফদিয়ার ভয়ে জমে গেল।
মুখ ফুসকে ‘ভাইয়া’ বলে চেঁচিয়ে উঠার প্রয়াস করে। পরন্তু সম্ভব হলো না। তাকে হরণ করার ন্যায় কেউ হাত-মুখ বেঁধে দিল। ক্লান্ত হয়নি অদ্ভুত অবয়বটি। সে পুনরায় ইফদিয়ার কে চেয়ারে বসিয়ে শরীরের উপরও দড়ির প্রয়োগ করে। ভয়ে নিমীলিত হওয়া চুক্ষদ্বয় যেন ভিজে এলো ইফদিয়ার। চুক্ষদ্বয় উম্মুক্ত করেও কোনো মানবের ছাঁয়াও দেখতে পাচ্ছে না। রুমটা গুমোটপূর্ণ অন্ধকারে ছড়িয়ে আছে। জানালাটা নিতান্ত ছোট হওয়ায় আলো ক্রমশ সরু ভাবে প্রবেশ করছে রুমের অন্তে। বর্তমানে রোদময় রশ্নির অংশখানিকও চোখের পলকে পড়ছে না। কান্না সংবরণ করার প্রয়াস করেও পারেনি ইফদিয়ার। ফুঁপিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করে। সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা অবয়বটি চুপছে যাওয়া মুখ করে বাঁকা হাসি দিল। অস্পষ্ট কণ্ঠে গোঙানির শব্দ বের করে প্রশ্ন করে ইফদিয়ারকে।

‘তিমিরাচ্ছন্ন রুমে তোমার সঙ্গে অঘটন ঘটালে কেমন হবে!’

ইফদিয়ার কানে অবয়বের উক্ত বাণীটি কর্ণপাত হতেই কপাট কেঁপে উঠল। ভীতি-আতঙ্কতার মাত্রা তেজ হয়ে গেল তার মনে। শরীর প্রচন্ডবেগে কাঁপতে আরম্ভ করে ইফদিয়ার। ঠোঁটের উপর কাপড় বাঁধানো থাকায় কণ্ঠাবোধ প্রকাশ করতে পারছে না। অবয়ব বুঝেও না বুঝার ভান করে অন্য একটি চেয়ার টেনে ইফদিয়ার মুখোমুখি বসল। আলোর রশ্নি রুমের অন্তে না থাকার সুবিধার্থে অবয়ব রমণীর কোমল গালে হাতের ছোঁয়া দিল। বরফপিন্ডের মত জমে গেল রমণী। শরীরের কাঁপুনিতে যেন কেউ বরফ বসিয়ে শীতল করে দিয়েছে এমন মনে হচ্ছে ইফদিয়ার। অবয়ব নেশাক্ত দৃষ্টিকোণে রমণীর গালে ছোঁয়া দিতে থেকে বলে,

‘একটি কাগজে সই করতে হবে। তাহলেই ছাড়া পাবে!’

ইফদিয়ার অবয়ব এর পক্ষান্তরে জবাবদিহির ন্যায় গোঙানি দিল। মুখের বাঁধন খুলার জন্যেই মূলত গোঙানির শব্দ করছে সে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
অবয়বটি পুনঃপুনঃ ভাব নিয়ে কাপড়টা সরিয়ে দিল রমণীর ওষ্ঠজোড়ের মধ্য হতে। রমণী ঢোক গিলে শুকনো ওষ্ঠজোড়া জিহ্বা দ্বারা ভিজিয়ে নিল। অবয়বকে দেখার প্রচেষ্টায় অক্ষিদ্বয় নিম্র সূক্ষ্ম করে নিল। তবে ব্যর্থ ছাড়া কাঙ্ক্ষিত দৃশ্যে মানবের রুপ দেখতে সক্ষম হলো না সে। অবয়ব এর প্রশ্নের প্রতিত্তরে জিজ্ঞেস করে।

‘কি কিসের কাগজ! কে আপনি অপরিচিত হয়ে আমার রুমে কি করছেন।’

অবয়ব বিরক্তবোধ কণ্ঠে বলে,

‘কত কথা বলো তুমি। আই জাস্ট আক্স ডু ইউ সাইন দ্যা পেপার অর নট! ইফ নট দেন আই উইল ফিনিশ ইউ।’

ইফদিয়ার কাছে অবয়ব এর কণ্ঠস্বর বেশখানিক পরিচিত মনে হলো। কিছুক্ষণ পূর্বেও অবয়ব এর কণ্ঠস্বরে খাপছাড়া ভাব ছিল। কিন্তু বর্তমানে গাম্ভীর্যভরা গলার স্বরের ধ্বনি শুনে অন্য এক পরিচিত যুবক এর সঙ্গে অবয়বকে মেলানোর চেষ্টা করে। বোকার মত চেহারা করে ইনোসেন্ট বাচ্চার ন্যায় বলে,

‘আপনাকে কি চিনি!’

অবয়ব এর চেহারার প্রতিক্রিয়া ইফদিয়ার দৃষ্টিগোচর হলো না। অথচ অবয়ব রমণীর চুক্ষগোচরে শয়তানি হাসি ঠোঁটের ফাঁকে বজায় রেখে বলে,

‘দ্বি প্রশ্নতুর হওয়া আমার পছন্দ নয়। এই কাগজে সই করে দাও।’

অবয়ব একটি কাগজ এগিয়ে দিল ইফদিয়ার মুখোমুখি। রশ্নিহীনতায় রমণী কাগজের মধ্যে থাকা শিরোনাম লক্ষ করতে পারছে না। এবং অবয়বকে দ্বিতীয় প্রশ্ন করার সাহসও পাচ্ছে না। অস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির ন্যায় পুনরায় ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে ইফদিয়ার। আহ্লাদী কণ্ঠে ‘ভাইয়া’ বলে চেঁচিয়ে উঠতে লাগে। পরন্তু শব্দ রুম ভেদ করার পূর্বেই অবয়ব মুখ চেপে ধরে তার। রক্তিম চুক্ষদ্বয় দ্বারা ইফদিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে গেল। অত্যধিক রাগমিশ্রিত গলায় শান্ত কণ্ঠে বলে,

‘গলায় হাত রেখেছি। চেঁচানোর চেষ্টা করলেই চেপে জিহ্বা বেরিয়ে আনব। জাষ্ট সাইন দ্যা পেপার।’

ইফদিয়ার পুনরাবৃত্তি দুঃসাহস করেনি। অবয়ব এর কথার প্রেক্ষিতে কাগজে বাঁধনরত ডান হাত দিয়ে কাগজে সই দিল। অবয়ব চট করে কাগজটি হাতের মুঠোয় নিয়ে নিল। দাঁত কেলানোর মত প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করে সে। রমণীর দিকে স্থীর দৃষ্টি রেখে বলে,

‘বিয়ের সময় কন্যার ‘কবুল’ বলার কারণ কি জানো!’

ইফদিয়ার ভ্রু কুঁচকে সূক্ষ্ম চিন্তার ভাঁজ কপালে ফেলে বলে,

‘তা যে বিয়ে করছে তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন। আমাকে করছেন কেন আজিব!’

‘আই সে জাস্ট গিভ মি আন্সার।’

ইফদিয়ার আক্রোশ জমাচ্ছে অবয়বের প্রতি। অজানা অপরিচিত মানব কিনা ইচ্ছাকৃতভাবে তার সঙ্গে খেলা খেলছে। এটা সে মানতে নারাজ। চেঁচিয়ে উঠার ব্যর্থ চেষ্টা করেও যখন দেখল লাভ হচ্ছে না। তখন বাধ্য হয়েই নম্র কণ্ঠে বলে,

‘তিন কবুল বলতে হয়।’

‘দেন সে দ্যা থ্রি ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ডস।’

‘মানে কি আবোলতাবোল বকছেন!’

অবয়ব যেন আক্রোশে গাল চেপে ধরে ইফদিয়ার। রমণী আতঙ্কিত দৃষ্টিতে অবয়ব এর চুক্ষদ্বয় দেখতে সক্ষম হলো। কেননা রুমের মধ্যে দরজার নিচ অংশ হতে খানিক রশ্নি প্রবেশ করছে। সেই সুবিধার্থে অবয়ব এর বাদামী চোখের মণি স্পষ্ট দৃষ্টিকটু হচ্ছে ইফদিয়ার চুক্ষে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,

‘কি কি করছেন গা গাল ছাড় ছাড়ুন।’

‘কবুল বলো!’

‘মামার বাড়ির আবদার পাইছেন।’

‘দুধকলা খাওয়ানোর পূর্বে বলবে নাকি গলা চেপে মেরে ফেলব।’

‘মেরে ফেলুন তাও আপনাকে কবুল বলব না। আমি শুধু যাবিয়াজকেই কবুল বলব।’

অবয়ব শুনেছে কিনা বোধগম্য হলো না ইফদিয়ার। অবয়ব দিব্য একপাক্ষিক ধ্যানে রমণীর দিকে দৃষ্টিকোণ ফেলে রেখেছে। রমণী ভাবছে হয়ত তার কথার অাসর হয়েছে অবয়ব এর উপর। কিন্তু তার ধারণা ভুল করে দিয়ে ওষ্ঠে ওষ্ঠের দূরত্ব গুছিয়ে নিল অবয়ব। তার এহেন কান্ডে রমণীর গা চিমচিমাট পূর্ণ শীতলী কণায় পূর্ণ হলো। তার ওষ্ঠ অন্য কোনো পর পুরুষ এর ওষ্ঠে মিলেছে। তা ভাবতেই রমণীর ভীষণ কান্না পেল। মনের গহীন থেকে ‘যাবিয়াজ’ কে চিৎকার করে ডাকছে। কিন্তু অসভ্য অবয়ব যেন স্বাদতুর নেশায় ডুবেছে। যাবত কয়েক মিনিট পর রমণীর ওষ্ঠ ছেড়ে তার গলায় ওষ্ঠের ছোঁয়া দিয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়ল অবয়ব। ইফদিয়ার শ্বাসপ্রশ্বাস এর সঞ্চালন দ্রুতবেগে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি সে তার প্রাণআয়ু ফিরে পেল! অবয়ব পুনরায় নেশাক্ত কণ্ঠে বুদঁ হয়ে বলে,

‘কবুল বলে উদ্ধার করো নিজেকে। না হয় বাঘের খাঁচায় নিজেকে বিলিয়ে দাও।’

অবয়ব এর বাণীতে ইফদিয়ার ছলছল দৃষ্টিতে অস্পন্দিত কণ্ঠে বলে,

‘ভালোবাসি শুধু যাবিয়াজকে।’

অবয়ব দৃঢ় বিরক্তবোধ হয়ে ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। পকেটের মধ্যে হাত গুঁজে রমণীর ছলছল কাতর মুখপানে চেয়ে বাঁকা হেসে বলে,

‘কবুল বলো না হলে আমার এক ফোন কলে তোমার যাবিয়াজ এর প্রাণপাখি উড়ান দিবে।’

চমকিত দৃষ্টিতে শরীরের লোমহর্ষক কাটা দিয়ে দাঁড়ায় ইফদিয়ার। এতক্ষণ নিজেকে ধাতস্থ করে রাখলেও অবয়ব এর ভয়ানক প্রস্তাবে তার প্রিয় মানুষ এর ক্ষতি নিহিত। সে কেমনে নিজ স্বার্থে বিলিয়ে দিবে ‘যাবিয়াজ’ নামক মানুষটিকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। আনমনে তিন ‘কবুল’ বলে ফেলে ইফদিয়ার। তার ‘কবুল’ শব্দটি তিন বার পূর্ণ হতেই ইলেকট্রিসিটি ফিরে এলো। রুম আলোকিত হয়ে উঠে। তৎক্ষণাৎ ইফদিয়ার চুক্ষদ্বয় নিমীলিত করে নিল। আলোর আকস্মিক ঝিলিক চুক্ষদ্বয় সহ্য করতে পারেনি। কয়েক সেকেন্ড বাদে পিটপিট করে চুক্ষদ্বয় উম্মুক্ত করতেই চুক্ষ চড়কগাছ হলো। তার সামনে তারই দিকে মুগ্ধ মোহনীয় দৃষ্টিকোণে চেয়ে আছে যাবিয়াজ। ইফদিয়ার অবাকের শীর্ষে পৌঁছার উপক্রম! আদৌ তার প্রিয় মানুষটি সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে! নাকি এটি কোনো প্রকার দৃষ্টিভ্রম। যাবিয়াজ ইফদিয়ার মনবল বুঝতে পেরে মোহময় কণ্ঠে ‘ইফস্পরী’ শব্দে রমণীর নাম উচ্চারণ করে। ইফদিয়ার কর্ণে নামটি কর্ণপাত হতেই তার ঠোঁট প্রসারিত হয়ে গোলাকৃতির মত হা হয়ে যায়। তখনি কাশির শব্দ বের করে রুমে প্রবেশ করে ইসমাইল। রমণী নিজ ভাইকে হাস্যমুখশ্রীতে দেখে অবাক। সে এসে যাবিয়াজ এর কাঁধে হাত রেখে গর্ব সহিত মনোভূতি নিয়ে বলে,

‘কংগ্রেচ ব্রো।’

‘থ্যাংকস ব্রো। আজ থেকে আপনি শালাবাবু হয়ে গেলেন।’

‘নট এ টল।’

ইফদিয়ার বোকার মত চেয়ে আছে।

৫০.

কলেজ জীবনের গন্ডি পেড়িয়ে ওয়াসিবও ভার্সিটি পদে উত্তীর্ণ হয়েছে। বলতে গেলে এক পর্যায় ইফদিয়ার অতীত এর সঙ্গে জড়িত ছিল ‘ওয়াসিব’ নামক মানব। দু’বান্ধবী অবশ্য বোকা ছেলেটিকে চিনতো ক্লাস করার সুবিধার্থে।
কিন্তু কখনো আচ করতে পারিনি উক্ত মানবের হৃদয়ের এক তরফা ভালোবাসা। যা ছিল ইফদিয়ার মনের আড়ালে। ওয়াসিব কে তিয়ানা আর ইফদিয়ার মিলে বোকা বানিয়ে ছিল সিট বরাদ্দ রাখার জন্যে। আজও সেই কথা মনে পড়তেই মৃদু হেসে ফেলে তিয়ানা। সে ক্যাফে এসেছিল ইফদিয়ার সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু নিয়তি! ইফদিয়ার পরিবর্তে সম্মুখে দাঁড় করিয়ে দিল ওয়াসিবকে।
ক্যাফ এ এসে ইফদিয়ারকে পেল না। এতে একপক্ষে তার ক্রোধ হলেও ওয়াসিব এর সঙ্গে পুনরায় দেখা মিলার ফলে ভালো লাগা ছেয়ে গেল তিয়ানার মনে। ওয়াসিব সানগ্লাস খুলে সম্মুখে থাকা রমণীকে দেখে। সে ক্যাফে এসেছিল তার ভাইকে নিয়ে অফিস এর ডিল সম্পন্ন করতে। তার ভাই এখনো ক্যাফে আসেনি। সে বলেছিল আসবে! তারই অপেক্ষায় অপেক্ষারত ছিল। কিন্তু তিয়ানা কে দেখে পুরুনো বেলার কথা স্মরণে এলো। মৃদু হাসি ঠোঁটের ফাঁকে ঝুলিয়ে তিয়ানাকে বসতে অনুরোধ করল।
তিয়ানা এসে বসে বলে,

‘হোয়াইট এ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ ইয়ার!’

‘সেম হেয়ার। তুই আসলি আর সে আসেনি!’

তিয়ানা ব্যাপার বুঝতে পেরে তার অপেক্ষার কথা খুলে বলে ওয়াসিবকে। সে শুনে নিশ্চুপ ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ বসে রইল। পরক্ষণে মৃদু আলাপে খোঁজখবর নিয়ে তিয়ানা উঠে পড়ে। ওয়াসিব ভাবান্তর মুখে তিয়ানাকে বলে,

‘ইফদিয়ার কি জীবনে কাউকে ভালোবেসে ছিল!’

তিয়ানা ওয়াসিব এর দিকে তাকায়। কথাটি শুনে মুচকি হাসি দিল। যার উত্তর ইতিবাচক বুঝায়। ওয়াসিব নিজের ভাষ্যমতে মনের ধারণায় গেঁথে রাখা ‘ইফদিয়ার’ নামক রমণীকে মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল। হয়ত সম্ভব না মুছা তবুও জীবনে মুভ অন না করে থেমে থাকলে ক্ষতিটা নিজেরই হবে। তিয়ানাকে ‘আল্লাহ হাফেজ’ জানিয়ে উঠে পড়ে। ফোনের মধ্যে ওরাইবকে মেসেজ পাঠিয়ে বলে বাহিরে অপেক্ষা করতে। ওরাইবকে ক্যাফকে প্রবেশ করতে দেখেই উক্ত মেসেজটি করে। তিয়ানা এক পলক ওয়াসিব এর যাওয়ার পথে তাকিয়ে নিজেও রওনা দিল। উদ্দেশ্য বান্ধবীর বাসা।

ওরাইব এর সঙ্গে ওয়াসিব কবীর বাসায় চলে আসে। কবীর বাসা হঠাৎ ওয়াসিব কবীর এর নিজ বাবার বাসস্থানে। অফিস এর ডিল অফিসেই সম্পন্ন করে এসেছে তারা।
কিন্তু বাসায় এসে যে কান্ড ঘটবে সেটা কে জানতো!
ওরাইব চুপছে যাওয়া মুখ করে তার বাবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তারই পাশে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ওয়াসিব শিষ বাজিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে বাসার মধ্যে কোনো সার্কাস চলছে। তাদের বাবা জনাব ওবায়দুল কবীর তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলেন,

‘ওয়াসিব তোমাকে নিয়ে আর পারি না। এতো বদমেজাজী কাজ কেউ করে। আজ যদি ছেলেটার কিছু হয়ে যেত।’

‘ওহ ড্যাড আমি কি আর জানতাম ছেলেটা আমার মুখের উপর সিগরেট ফুঁকবে। জানলে ওখানেই ঘুষি মেরে দিতাম।’

ওবায়দুল অসহায় দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকান। এমনে সিগরেট খাওয়া ছেলেটাকে মেরে আধমরা করেছে। তার উপর ছেলে বলে কিনা আরেক ঘুষি মারবে। ওবায়দুল এর নাজেহাল চেহারা দেখে উনার স্ত্রীর ভীষণ হাসি পাচ্ছে। ছেলেরা দুষ্টু প্রকৃতির হয়েছে একদম নিজের বাবার মত। ওবায়দুল হাত দেখিয়ে বলে,

‘বাপ তুই গিয়া মাফ চেয়ে আস। না হলে তোর উপর কেস ঠুকবে।’

‘কি কেস ঠুকবে এতো সাহস তাহলে আমিও সিগরেট ফুঁকবার উপর ঘোর নন্দিত অপরাধের দ্বায়ে কেস মারব।’

ওরাইব অঢের কষ্টে নিজের হাসি চেপে ধরেছে। তার ভাইয়ের বলা যুক্তিগুলি যে হাস্যকর লাগছে।
ওয়াসিব এর কথা শুনে যেন মাথা ঘুরে উঠল ওবায়দুল সাহেব এর। কালই সবাইকে ইউকে যেতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে চান না কোনো গন্ডগোল হওয়ার। ওয়াসিব বাবার মনের কথা আন্দাজ করে ছেলেটার কাছে মাফ চেয়ে নিল। যে ক্ষতি করেছে তার পূরণ হিসেবে টাকা শোধ করে দিল। ওবায়দুল সাহেব দৃঢ় শ্বাস ফেলে বলে,

‘আসরের নামাজ এর পর রেডি হয়ে নিও তোমরা। ফ্লাইট কিন্তু ৭টায়।’

পরিবারের সদস্যগণ প্রস্তাব মেনে নিজ রুমে চলে যায়। ওরাইব তার ভাইয়ের যাওয়ার দিকে তাকায়। সে তার ভাইয়ের মনের কথা জানে। সে তিয়ানাকে দেখে ছিল। বিধায় প্রশ্নের সম্মুখীন করে ভাইকে দ্বিধায় অপদস্থ করতে চায়নি। হয়ত নেতিবাচক জবাবের সম্মুখীন হয়েছে তার ভাইটা। যা ভাইয়ের চেহারা দেখে বুঝল ওরাইব। ঠোঁট কামড়ে আনমনে বলে,

‘ইউকে ফিরে যায়। হয়ত ভবিষ্যৎ সেখানে আবদ্ধ।’

ওয়াসিব সুট বুট পরিহিত রুপে বসে পড়ে সোফায়। ওরাইব কে এতক্ষণ যাবত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সন্দেহ প্রবণ কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করে।

‘ওরাইব দাঁড়িয়ে আছিস কেন ভাই! যা রেডি হয়ে নে।’

ওয়াসিব এর কণ্ঠস্বরে সম্মতি ফিরে পেল ওরাইব। তার ভাইয়ের চিন্তায় বিভোর ছিল। যে সময়ের গতিবেগে এর দিকে হুঁশ ছিল না তার। দ্বিমত পোষণ না করে সে সোজা রুমে চলে যায়। ওয়াসিব পুনরায় মাথা ঘামায় না।

_________

তিয়ানা ইফদিয়ার বাসায় এসে জটকা খেল। তাও আবার জটকা স্বরুপ বান্ধবীর বিয়ে উপলক্ষে আয়োজন চলছে ইফদিয়ার বাসায়। একদিনে আয়োজন হচ্ছে তা হজম হচ্ছে না তার। শ্রেয়িতা থেকে জানতে পেরেছে ইফদিয়ার আর যাবিয়াজ এর কোর্ট ম্যারেজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে ঘরোয়াভাবে সম্পূর্ণ হলো তাদের বিবাহ। কাল বউভাত এর অনুষ্ঠান জাঁকজমকভাবে করে এলাকার লোকদের আমন্ত্রিত করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখল সকলে। ইফদিয়ার চুপছে যাওয়া মুখ করে বোরকা পরিহিত রুপে সোফায় বসে আছে। সাধারণভাবে রুমটা আলোকিত করে সাজানো হয়েছে। তথাপি ব্যবস্থা করে রেখেছিল ইসমাইল। তিয়ানাকে দেখে উচ্চস্বরে হাসি দিয়ে ডাকে সে। তিয়ানা রোবটের ন্যায় হেঁটে এসে দাঁড়িয়ে যায়। ইফদিয়ার দিকে ভাবমূর্তি দৃষ্টিতে তাকায়। বেচারী ইফদিয়ার না পারছে সইতে, না পারছে হাঙ্গামা করতে। তার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে বলতে, এ বিয়ে মানি না আমি। কিন্তু তার ভাইকে আনন্দিত দেখে সেই চিৎকার গলায় দমিয়ে নিল। তারই পাশে যাবিয়াজ মনমুগ্ধ মন্ত্রে তার ইফস্পরীর মুখপানে চেয়ে আছে। তার সম্মুখে জনবৃন্দ দাঁড়িয়ে আছে তার ব্যাপারে তোয়াক্কা না করে ইফস্পরীকেই দেখে চলেছে। তিয়ানা মৃদু কেশে যাবিয়াজ এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অতঃপর যাবিয়াজ স্বাভাবিক চুক্ষ নিক্ষেপ করে । তিয়ানা শয়তানি চাহনী এঁটে বলে,

‘জিজু মুনাফা দিয়ে দেন তাহলে দরজা ধরব না।’

ইফদিয়ার হতবম্ভ নয়নে তার বান্ধবীর দিকে তাকায়। রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। কটমট দৃষ্টিতে খেয়ে ফেলার মত মুখ করে নিল। তিয়ানা বোকা হাসি দিয়ে বলে,

‘আরে দোস্ত চেঁতিস কেন! তোর প্রিয় মানুষরে পেলি। বাসর করবি না বুঝি।’

কথাটি ইফদিয়ার কর্ণপাত হতেই কান গরম হয়ে গেল। ত্রপাট দৃষ্টিনত করে ফেলে। তখনি রবিউল সাহেব এর আগমন হলো। তিনি সচক্ষে লাঠি হীন হেঁটে আসলেন। ইফদিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,

‘আহ বউমা হয়ে হিরা রুপী মেয়ে পাবার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমার নালায়েক বেটার সুবদ্ধি হলো বটে।’

‘উফ ড্যাড সম্মানের বিরিয়ানী বানিও না।’

রবিউল সাহেব মিষ্টি বিতরণ করলেন ছেলের বিয়ের সুবাদে। আনন্দদায়ক পরিবেশে সকলে মেঁতে উঠেছে। শুভ দিন উপলক্ষে ফিরে এসেছে বন্ধুমহলে সেই স্মৃতি টানাপড়নের বন্ধুগণ।
ইফদিয়ার চোখ ভরে এলো। সামনেই দাঁড়িয়ে আছে হাস্যজ্জ্বল চেহারা নিয়ে ইসমাইল-শ্রেয়িতা-ইসরাইব(তাদের ছেলে) , এরফান-তিয়ানা , রুহিয়া ও তার হবু স্বামী এবং ফেরদৌস। যাবিয়াজ তার স্ত্রীর মনের অবস্থা লক্ষ করে দুষ্টু মনে হেসে প্রশ্ন করে।

‘ফিরে চাও কি পুরুনো সঙ্গের মিলনমেলা!’

ইফদিয়ার চমকিত দৃষ্টিতে তাকায় যাবিয়াজ এর পানে। সে যে তার মনের কথা উপলদ্ধি করবে ভাবতে পারিনি। তাদের বন্ধুগণের সঙ্গতা ফিরে পাওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে যাবিয়াজকে ছলছল নয়নে জড়িয়ে ধরে। সকলে দৃষ্টি সমবেত করে মুচকি মুচকি হাসি দিতে আরম্ভ করে। ইফদিয়ার যুবককে ছেড়ে সকলের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে মেঁতে উঠল।
কিন্তু সীমাহীন খুশির অন্তে কেউ যে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে সদ্য বিবাহিত দম্পতির দিকে চেয়ে আছে তা কারোর ধারণা নেই। সেই তীক্ষ্ম দৃষ্টির মালিক দূরান্তে দাঁড়িয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,

‘তোদের দাম্পত্য জীবনের শেষ দেখে ছাড়ব।’

চলবে……
(দুঃখিত🙂। ক্ষমা করবেন পড়াশুনার চাপে অনিয়ম হচ্ছে গল্প দেওয়ায়। এক দিন পর পর গল্প দিচ্ছি। আর রবিউল সাহেব এর অন্ধ হওয়ার পর তিনি সচক্ষে দেখতে পারছেন। তা শিগ্রী গল্পে বিস্তারিত জানবেন। সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন সবাই। ধর্য্য রাখবেন অনুরোধ রইল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here