অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া পর্ব_৩০
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
৫৯.
কোমল রঙিন সন্ধ্যায় মৃদু বাতাস বয়ে যেতে আরম্ভ করে। জানালার ধার হতে প্রাকৃতিক সূর্যাস্তের রঙিলা রুপালি মনে হচ্ছে। প্রকৃতির অপরুপা সৌন্দর্য্যে ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে শত শত পাখি। সবচেয়ে বেশি কোলাহল সৃষ্টি করছে কোকিলের ব্যস্ত ভঙ্গিতা। আকাশে ডানা মেলে শান্ত উৎফুল্ল মনে উড়ছে। সেই সঙ্গে কুহু শব্দের ডাক যেন আলোড়ন গড়ছে আনন্দের মিলনবন্ধনের। মাগরিব এর আযান প্রতিধ্বনিত হলো। চৌপাশ জুড়ে ‘আল্লাহ আকবর’ শব্দ দুটি দ্বারা জনগণকে আহ্বান জানানো হচ্ছে নামাজের জন্যে। বিস্তরণ আঁখিযুগল গিয়ে থেমে যা প্রিয়সীর নিকটে। যাবিয়াজ টেবিলের কাছে এসে ইফদিয়ার কে ধ্যানমগ্ন হয়ে ভাবনায় ব্যস্ত দেখে মৃদু হেসে বলে,
‘বউটা কি কাগজ খাওয়ার ধান্দায় আছে!’
আকস্মিক যুবকের মুখে বেক্কলমার্কা বাক্য শুনে রমণী হতবাক। বিস্ময় ভরা চাহনী নিক্ষেপ করে যাবিয়াজ এর উপর ইফদিয়ার। গম্ভীরপূর্ণ কণ্ঠে বলে,
‘মানুষ বুঝি কাগজ খায়।’
‘মানুষ খাবে কেন তোমার মত পেত্নী খাবে।’
‘কি আমি পেত্নী তো আপনি কোন গাছের ফুল হে! আপনি তো এক প্রকার ধানিলঙ্কা।’
যাবিয়াজ ভাব নিয়ে চলে যেতে নিলে ইফদিয়ার হাত আঁকড়ে ধরে তার। যুবক থেমে যায় মুখ ফিরিয়ে প্রেয়সীর সন্নিকটে এসে দাঁড়িয়ে যায়। রমণী আমতা আমতা করে তার হাত ছেড়ে নিজের মাঝেই শাড়ির আঁচল ধরে কুঁচলাতে লাগল। যুবক বুঝতে না পারলেও আপাতত কোনো প্রশ্ন করল না। সে নিজ মনে ওযু করতে চলে গেল। ইফদিয়ার দেখে নিজের মাথায় চাপড় মেরে বিড়বিড় করে বলে,
‘ইস! জিজ্ঞেস করতে গিয়েও পারলাম না। কেমনে করব যদি রেগে বোম হয়। তবুও জিজ্ঞেস করা ছাড়া উপায় নেই। এই তিন মাসে কি হয়ে ছিল তা না জানা অব্দি শান্তি মিলবে না।’
ইফদিয়ার মুখশ্রীতে গাম্ভীর্যতা ভর করল। তা করার মূল কারণ রয়েছে। কিন্তু সময়সাপেক্ষে নামাজের জন্যে প্রস্তুত হলো। কিছুক্ষণ পর ওযুর সমাপ্তি ঘটিয়ে হিজাব পরিদান করে জায়নামাজ বিছিয়ে নিল। ইতঃপূর্বে যাবিয়াজ মাথায় টুপি পরে মসজিদে যাওয়ায় পূর্বে প্রিয়তমা ইফস্পরীর কপালে গভীর পরশ একেঁ প্রস্থান করে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
ইফদিয়ার মুচকি হেসে নামাজে মনোনিবেশ করল।
কিছুসময় পর…
যাবিয়াজ নামাজ শেষ করে বের হতেই দেখতে পেল এরফানকে। সেও মসজিদে এসেছে তা অজানা ছিল। এরফানও অবাক এগিয়ে কোলাকুলি করার পর স্বহাসি দিয়ে বলে,
‘কি ব্যাপার মহাশয়। এখনো মুখ লুটকিয়ে রেখেছিস কেন।’
যাবিয়াজ এর মুখশ্রীতে সারা রাজ্যের গাম্ভীর্যতা এসে ভীড় করল। এরফান-র কাঁধে হাত রেখে বলে,
‘বলছি চল টংবাজারে গিয়ে চা খেয়ে গল্প জমায়।’
এরফান তার বন্ধুর মনের পেরেশানির ব্যাপারটা বুঝতে সক্ষম হলো। সে তার উক্তিতে দ্বিমত পোষণ করেনি। মৃদু হেসে দুজন চলে এলো টংবাজারে। টং মামা দুজন নতুন যুবক দেখে খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করে।
‘কি খাইবেন ভাইজান!’
‘মামা দুখান চা দেন।’
‘আইচ্ছা ভাইজান বইয়েন।’
এরফান পূর্বজ্ঞান সমেত যাবিয়াজ কে বলে,
‘এবার বললে খুশি হতাম।’
যাবিয়াজ শুনে এক পলক এরফান-র দিকে তাকায়। পুনরায় দৃষ্টি সহিত করে সম্মুখে তাকায়। ব্যস্ত নগরীর যানবাহন চলছে। টংবাজারের পাশ দিয়ে গাড়ি, রিকশা, ট্রাক ধেয়েধেয়ে করে চলছে আপন মনে। বয়স্ক, যুবক-যুবতী স্কুল-কলেজ এর পোশাক পরিহিত ছাত্র-ছাত্রীরাও হেঁটে চলছে। দীর্ঘ হতাশময়ী নিঃশ্বাস ছেড়ে এরফানকে বলে,
‘সমস্যার বিষয় নেই। তবে আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে ইফদিয়ার সব জেনে গেছে।’
এরফান উক্তি না বুঝতে পেরে বলে,
‘কি জেনে গেছে!’
‘গত তিনমাস আগে কি ঘটেছিল তা।’
এরফান শুনে বড় বড় আঁখিযুগল নিক্ষেপ করে যাবিয়াজ-র উপর। শুকনো ওষ্ঠদ্বয় জিহ্বা দিয়ে মৃদু ভিজিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
‘তুই কেমনে বুঝলি ভাবী কি কিছু বলেছে!’
‘না সে আমার রাগের ভয়ে জিজ্ঞেস করতে পারছে না। তবে সে না বললেও আমি বেশ বুঝেছি।’
‘তাহলে লুকিয়ে কি লাভ! যা হবার হবে। তুই ভুল কিছু করিসনি সেটা তুইও জানস ভাবীও জেনে যাবে।’
‘চিন্তা এতে নয় আবাল।’
এরফান সরু আঁখি দিয়ে ভস্মীভূত নয়নে যাবিয়াজ এর দিকে তাকায়। যুবক দেখে বলে,
‘কি ওমন চোখ দিয়ে গিলে খাওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারবি না।’
‘হই তাও তুই শোধরাবি না। বাচ্চার বাপ হওয়ার বয়সেও বুঝি আমাকে আবাল বলা ছাড়লি না হারাম*দা তুই।’
‘তুই কোন জাতের কচু তাহলে!’
এরফান কিছু বলবে তার পূর্বে টং মামার ডাকে পশ্চাতে দৃষ্টিনন্দন করে। টং মামা সহস্তে দু’টি চায়ের মগ এগিয়ে দিল। যাবিয়াজ এরফান চা নিতেই টং মামা পুনরায় নিজ কাজে মনোনীত হলো। এরফান ইতিমধ্যে চায়ের মগে চুমুক দিয়ে প্রশ্ন করে।
‘এখন বল চিন্তা কিসে করছিস! ভাবী জেনেছে সেটা ভালোই তো কথা।’
‘উহুম তোর ক্ষেত্রে হয়ত ভালো কথা। কিন্তু আমার নয়। কারণ ঘটনা ঘটে সমাপ্তি ঘটেছিল তিন মাস পূর্বেই। পুনরায় কেউ এর খোলাসা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। ইফদিয়ার কাছে অজানা ঘটনা জ্যান্ত হওয়ার রহস্য নিশ্চয় আছে।’
কথার ইতি টেনে চায়ের মগে চুমুক দিল যাবিয়াজ। এরফান তার পুরু কথন শুনে চট করে বলে,
‘একটাই উত্তর এখন গিয়ে সোজাসাপ্টা জিজ্ঞেস করবি।’
যাবিয়াজ প্রত্যত্তরে মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। সে নিজ মনেও ভেবে রেখেছিল। বাসায় গিয়ে কোনো প্রকার দ্বিধাদ্বন্দতায় না ভোগে ইফস্পরীর মুখোমুখি হবে। এরফান-র সঙ্গে খানিক সময় কাটিয়ে দিল চা খাওয়ার উপভোগটা করে।
বাসায় এসে ডোরবেল বাজিয়ে উঠে। রবিউল সাহেব দরজার সন্নিকটে ছিলেন। তিনি উঠে দরজা খুললেন। ইতঃপূর্বে রান্নাঘর হতে ইফদিয়ারও ঘার্মাক্ত দশায় দরজা খুলতে আসছিল। শ্বশুরআব্বাকে দরজা খুলতে দেখে সম্মুখে গেল না। যাবিয়াজ সালাম দিয়ে বাবার সঙ্গে সোফায় বসল। ইফদিয়ার টিস্যু দ্বারা ঘার্ম মোচন করে আঁচল শুদ্ধভাবে পেঁচিয়ে নিল। হাতে নাস্তার ট্রে নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে আসে। যাবিয়াজ আড়চক্ষে ইফস্পরীর দিকে পরখ করলেও তা ছিল ইফদিয়ার অগোচরে। রমণী হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল খানিক মুহূর্ত। মূলত যুবক এর দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রয়াত চেষ্টায় রয়েছে। কিন্তু যাবিয়াজ জ্ঞাতব্য হলেও বিষয়টি আমলে নিল না। সে গাম্ভীর্য ভাব নিয়ে বাবার সঙ্গে নাস্তা করছে আর টিভির দিকে দৃষ্টি রেখেছে। ইফদিয়ার মনে নেমে এলো কালো আঁধারের ঝড়। তার স্বামী কিনা বুঝতে পারছে না তার স্ত্রীর মনের কথা! অনেকক্ষণ পেড়িয়ে গেল তবুও যুবক কোনো কথা না বলায় অনুরক্ত মনখারাপী নিয়ে রুমে চলে গেলো। ইফস্পরীর যাওয়ার পর মুহূর্তেই যাবিয়াজ স্বচক্ষ নিক্ষেপ করে রমণীর উপর। সেও দৃঢ়ভাবে দমিয়ে রেখেছিল নিজেকে। বৃথা চেষ্টা করছিল নিজের মনইচ্ছা পূরণ করতে। কিন্তু ইফস্পরীর বেদনাময়ী চাহনী সহনশীল হলো না তার। সে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে উঠে রুমের দিকে চলে এলো।
ইফদিয়ার অতীব আগ্রহদীপ্ত হয়ে জানতে চেয়ে ছিল। কিন্তু হিতে বিপরীত হবে সে ভাবেনি। সে ভাবেনি যাবিয়াজ রাগ করবে। এখন তারই মন খারাপ হয়ে গেল। আকস্মিক কারো উষ্ণতার ছোঁয়ায় চমকে উঠল রমণী। যাবিয়াজ চমকে দিয়ে ইফস্পরীর ঘাড়ে নাকের ঘর্ষণ দিয়ে মৃদু স্বরে বলে,
‘অভিমান করো না ইফস্পরী। তোমার মনে উদয় হওয়া সকল প্রশ্নের উত্তর দিব। তবে তুমি বলো কেমনে জেনেছ সব কিছু।’
ইফদিয়ার পুনঃপুনঃ ইতস্ততঃ বোধ না করে সরাসরি বলতে আরম্ভ করে।
অতীত….
তিন দিন পূর্বে তিয়ানার সঙ্গে এতিমখানায় খাবার বিতরণ করতে এসেছিল ইফদিয়ার। মাসের একদিন সময় করে শুক্রবার এ ইফদিয়ার স্বইচ্ছায় খাবার বিতরণ করতে আসে সেখানে। আজও ব্যতিক্রম হয়নি। খাবার বিতরণ পর্বের সমাপ্তি ঘটিয়ে ইফদিয়ার পলিথিনজোড়া গুছিয়ে নিল। তিয়ানা বক্সগুলি বেঁধে ড্রাইভার এর হাতে ধরিয়ে দিল। যাবিয়াজ কোনো ভাবেও ড্রাইভার ছাড়া যেতে দিচ্ছিল না। বিধায় বাধ্য হয়ে দু’বান্ধবীকে ড্রাইভারসহ আসতে হলো। তিয়ানাকে গাড়ির কাছে পাঠিয়ে ইফদিয়ার এতিমখানার মহাশয় এর সঙ্গে কুশল বিনিময় করে কিছু পরিমাণ টাকা উপহার দিয়ে গাড়ির কাছে এগিয়ে গেল। গাড়ির সন্নিকটে যাওয়ার পূর্বেই কেউ ‘এ মেয়ে’ বলে চেঁচিয়ে উঠে। কণ্ঠটি বেশ অপরিচিত বয়স্ক মানুষের মনে হলো ইফদিয়ার। সে পিছে ফিরে পরখ করল। এলাকার চেয়ারম্যান সাহেব এগিয়ে আসছেন। উনাকে সম্মুখে দেখে খানিক ভড়কে গেল রমণী। তবুও নিজেকে সামলে ভদ্রতার কাতিরে দাঁড়িয়ে রইল। মোখলেস মির্জা তথা চেয়ারম্যান সাহেব এসে বেশ রাগমিশ্রিত কণ্ঠে বলেন,
‘তোমার বেশি পাখনা বুঝি মেয়ে। আমার ছেলে কি ওমন দোষ করল যার কারণে তাকে হসপিটাইলাজড করে দিল তোমার স্বামী। তিনমাস ধরে শয্যাশায়ী হয়ে আছে আমার পুত্র। হু দেখে নিব সব কটাকে।’
মৃদু চেঁচিয়ে হুমকি দিয়ে নিজে প্রস্থান নিলেন। ইফদিয়ার বেকুব কায়দায় থমকে রইল। তার মনে উদয় হলো তিনমাস পূর্বে কি ঘটেছিল! প্রশ্নের জবাব শুধু যাবিয়াজ থেকে পাবে। এটা ভেবে গাড়িতে বসে রওনা দিল।
ভাবনার পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে ইফদিয়ার যাবিয়াজ-র দিকে প্রশ্নতুর চাহনী নিক্ষেপ করে। কিন্তু যুবক এর চাহনীতে বিস্ফোরণ জনীত লালবর্ণ রক্তিম চুক্ষদ্বয় দেখে ঘাবড়ে গেল রমণী। যাবিয়াজ তিক্ত কণ্ঠে বলতে আরম্ভ করে।
‘মনে আছে তোমাকে ভিডিও পাঠিয়ে ছিল নাজমুল এ। তার ঐ নোংরা নৃশংসতার শাস্তি দিতেই আমি আর এরফান তৎপর হয়ে উঠে ছিলাম। তাকে রাতের গভীরেই কিডনাপ করে জঙ্গলের ধারপ্রান্তে নিয়ে আনি। তুমি তখন নিদ্রামগ্ন ছিলে। তাই আমার বাসার বাহিরে যেতে কোনো প্রকার বাঁধাবিপত্তি ছিল না। এরফান কিডনাপ করেছিল নাজমুলকে রাস্তার মোড় থেকে। শা*লার বদ*মাইশি করার জন্যে নিষিদ্ধ পল্লীতে যাচ্ছিল। এহেন মুহূর্তে এরফান দেখে ক্লোরোফর্ম শুকিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। যেহেতু নাজমুল পূর্ব হতেই মদ গিলে মাতাল ছিল সেহেতু অজ্ঞান হতে সময় লাগেনি। এরফান এর বেজায় কষ্ট করা লাগল না উঠিয়ে নিয়ে গেল পুরাতন পুড়াবাড়ির রাস্তায়। যেখান দিয়ে জঙ্গলের রাস্তা শুরু হয়। নির্জন সেই পরিবেশ। মানুষের আনাগোনা খুবই কম। এরফান তাকে গাড়িতে আঁটক করে আমাকে ঠিকানা পাঠিয়ে দিল। আমিও বাইক নিয়ে চলে যায়। বাইক নতুন গ্যারাজে পড়ে থাকে। স্বাভাবিকতর অফিসিয়াল কাজে আমি গাড়ি ব্যবহার করি। ভিন্নতর হলে বাইক নিয়ে চলে যায়। ওখানে পৌছে লক্ষ করলাম মহাশয় জ্ঞানহীন অথচ তার কারণে না জানি কত প্রাণ পৃথিবী থেকে বিলীন হয়েছে। তার উপর তোমার সঙ্গে করা অন্যায়। সব যেন আমার বিবেকে আগুনের মত ধাবিত হলো। সহ্য হলো না তার কলার টেনে বালির উপর ফেলে দিয়ে মারা শুরু করি। এরফানও ক্ষত বসাতে থাকে। এতে বেচারার হাত-পা বুকের মধ্যিখান অংশ প্রায় ভেঙ্গে যায়। কিন্তু ক্লান্ত হয়নি শান্ত হয়নি মনটা। ফলে গাড়ির ভেতর থেকে কেরোসিন বোতল নিলাম। এরফান দেখে আতঁকে উঠেছিল।’
বাক্যপ্রকরণের ন্যায় বলা কথা থামিয়ে নিল যাবিয়াজ। দম ফেলে এক গ্লাস পানি ঢগবগ খেয়ে নিল। ইফদিয়ার বাকরুদ্ধ হয়ে শুনছে। যাবিয়াজ কোনভাবে নাজমুলকে প্রাণে মেরে ফেলেনি তো! ভাবনার প্রসিদ্ধতা যাচাই করার পূর্বেই ঝেড়ে ফেলল মস্তিষ্ক হতে। যাবিয়াজ পুনরায় বলতে লাগে।
‘কেরোসিন ঢেলে দিয়ে পুরু শরীর গিলা করে ছিলাম নাজমুল এর। পকেটে ম্যার্চিজ ছিল। কেননা ষড়যন্ত্র এর স্বীকার হলে এসব যন্ত্র একটুআধটু লাগে। তবে কখনো সিগরেট খেয়েছি বলে ভেবো ইফস্পরী। ওমন হারাম জিনিসে হাত দেয়নি। তবে ইচ্ছে হতো দেওয়ার। কারণটা একান্ত তুমি ছিলে। অবহেলার পাহাড় বানিয়ে। তবুও সংযত হওয়া মুসলিম এর উপর ফরজ। সেই ভিত্তিতে আমিও। ফলে ম্যার্চিজ এর আগুন ধাউ করে জ্বলতেই এরফান এসে ভয়ার্ত গলায় বলে ছিল। “দোস্ত জান নিয়ে ফেলবি!”
ঐসময় বাঁকা হেসে শুধু একটা কথায় বলে ছিলাম।
“মরণ যন্ত্রণা কেমন তা একটু সেও ভোগ করুক। শত মেয়ের শরীর নিয়ে নৃশংস যন্ত্রণার খেলা খেলতে মজা পাই। এবার এইও বুঝবে মরণ যন্ত্রণা কি জিনিস!”
এরফান নাজমুল এর পুরু তথ্য সম্পর্কে অবগত ছিল। কারণ আমি তাকে দায়িত্ব দিয়ে ছিলাম অস্ট্রেলিয়া বসবাসরত অবস্থায়। সে এখানকার সব খবরাখবর আমাকে দিত। শ্রেয়িতা তোমার সম্পর্কে টুকটাক যা জানতে পারতো সেসব জানিয়ে দিতো। কিন্তু বর্হিভাগে ঘটে যাওয়া নাজমুল এর ব্যাপারটা জানতো না।
পরবর্তীতে সে দ্বিমত পোষণ করেনি ছেড়ে দিল আমাকে। আমি গিয়ে স্বজ্ঞানে ম্যার্চিজ এর আগুন লাগিয়ে দিলাম তার শার্টের হাতায়। তৎক্ষণাৎ আগুন এর প্রবাহ বাড়ন্ত হলো। নাজমুল অজ্ঞান হতে জ্ঞানপূর্ণ হলে চেঁচিয়ে উঠে। অথচ বেচারা জ্বলতে আরম্ভ করে। কিন্তু বের হওয়ার কোনো রাস্তা পায় না। আমরা যে তাকে বন্দীশালার মত জায়গায় আঁটক করছিলাম। এরফানও তৃপ্তি সহকারে দৃশ্যটি আমার সঙ্গে উপভোগ করছিল। জানো ইফদিয়ার যে কাজটি আমি করেছি এর প্রতি আমার বিন্দুমাত্র আফসোস নেই। নাজমুল এর মত জালেম নোংরা বদমাইশ আরো পেলে এভাবেই আগুন লাগিয়ে মেরে ফেলতাম। কিন্তু আল্লাহ বিচার করেন। বিধায় তাকে প্রাণে মারিনি। বরঞ্চ তার হাত-পা-মুখ যখনি ছাই হতে লাগে কালো কচকচ হয়ে গেল। তখনি তার উপর পানি ঢেলে শান্ত করে আগুন নিভিয়ে দিলাম। খেয়াল হলো বদমাইশ জ্ঞানশূন্য। এরফান অর্ধ ছাই হওয়া নাজমুল কে তুলে হসপিটাল এর রাস্তায় ফেলে দিল।’
ইফদিয়ার মাঝ কাহিনির মধ্যে বিরতির পথ টেনে প্রশ্ন করে উঠে।
‘মানে ওভাবে রাস্তায় ফেলেছেন কেউ সন্দেহ করে ফেললে কি করতেন! এমনি চেয়ারম্যান বুইড়া হুমকি মারছে।’
যুবক বিচলিত হলো না উল্টো বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,
‘ওই বুইড়ার কোনো সম্মান নেই আমার সামনে। বয়সে যত বড় হোক না। তার মন সে তুলনায় নিম্নমানের। ওর ছেলেকে অাধমরা করে আমিই তো কল করে হসপিটালের নাম বলে ছিলাম।’
ইফদিয়ার কথাটি শুনে হা হয়ে যায়। আপনাপনি মুখ ফুসকে বলে,
‘অভিনেতা একখান।’
যাবিয়াজ হু হু করে হেসে ইফস্পরীর কোমর টেনে কাছে এনে জড়িয়ে ধরে। ইফদিয়ার হতভম্ব নয়নে ছাড়া পেতে চাইলে যুবক তীক্ষ্ণ গলায় বলে,
‘এতক্ষণ কাহিনি শুনিয়ে গলা শুকিয়ে দিলে। এবার এর বরপাই করে দাও।’
ইফদিয়ার স্বামীর ইঙ্গিত বুঝতে পেরে লজ্জায় দৃষ্টি নুয়ে এপাশ ওপাশ তাকিয়ে লাজুক হাসি দিল। সম্মতি পেয়ে যাবিয়াজ কোলে উঠিয়ে নিল ইফস্পরীকে।
৬০.
নাজমুল হসপিটালের স্ক্যাচার বেডে পরম আহত দশায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে রইল। তার মুখ-হাত-পায়ে ব্যান্ডেজ জড়ানো রয়েছে আজ তিনমাস ধরে। খুব গুরুতর ভাবে পুড়েছে। সেই সঙ্গে চিকিৎসাধীন ডক্তর জানিয়েছেন যে, বিশেষজ্ঞ ডক্তর বিহীন নরমালী ট্রিটমেন্ট চলবে। অবশ্য এ নিয়ে চেয়ারম্যান সাহেব বেশ ক্ষমতা জোর লাগায়। কিন্তু সবদিকে ক্ষমতা চলে না। রোগী যে হয়েছে সে নিজের কর্মফলের দ্বায়ে। শত ডক্তর চিকিৎসা দিলেও সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৪% এর মত। তবুও চেয়ারম্যান সাহেব এর করুণ আকুতি মেনে তারা চিকিৎসা চালিয়ে গেল।
তারা জানিয়ে ছিল,
‘রোগী যেমন ছাই হয়েছে তেমন তার শরীরের হাড়গুলো ভেঙ্গে গিয়েছে। বরঞ্চ শুধু ভাঙ্গন হয়নি ক্ষয়ও হয়েছে। আপনার ছেলে অ্যালকোহল ধুমপান খেয়ে নিজের শরীরের ক্ষয় বাড়িয়ে নিজেই বিপদ ডাকিয়েছে। ফলাফল একটিই আপনার ছেলের পঙ্গুত্ব বহন করবে। বলতে গেলে সে অস্টিওপোরোসিস রোগের শিকার। এর সমাধান আছে যা বছর পেড়িয়ে যাবে কিন্তু আপনার ছেলের সহনসীমার বাহির হতে পারে। এজ পার আই সে বাট আই রিয়েলি ডোন্ট হোপ ইট!’
ডক্তর এর কথায় পুনঃ জবাব দেওয়ার মুখ রইল না মোখলেস মির্জার। একমাত্র সন্তান ছিল তাও আজ নিজ শাস্তির ফল ভোগ করছে। এখন তিনি কি করবেন! হে শাস্তি দিবেন বলে ঠিক করে নিলেন। যে করেই হোক পুনরায় ঘটনা রটিয়ে ছাড়বেন।
তিনি তেঁতো হয়ে বিড়বিড়িয়ে বললেন।
‘বাবা তুই শুয়ে থাক চিন্তা করিস না। তোর বাপ জিন্দা আছে। সে তোর যন্ত্রণার শাস্তি দিবে ওদের। জীবন নরক করে দেব। যে জাল বুনেছিলাম তিনমাস পূর্বে। সে জাল থামিয়ে ছিলাম ছেলের জেদের কাছে হার মেরে। বাবা তুই কেন জেদ করেছিলি যে নিজে সব করবি। আমি করলে গুন্ডাপান্ডা ঠিক করে উঠিয়ে নিতাম। কিন্তু তুই না শুনায় ঐ যাবিয়াজ কেমনে জিতে গেল দেখলি। তবু আমি তোর বাপ দেখ ক্ষমতা আছে আমার। আমি ঠিক শাস্তি ঠিক মানুষের উপর চালাবো।’
তিনি তীক্ষ্ণ মেজাজে পূর্বকালীন সেই ফোন কলে কল দিলেন। অপরপাশ এর ব্যক্তির গম্ভীরতা বুঝে তিনি বলেন,
‘শোন পূর্বের আঁটকবদ্ধ কাজ সম্পূর্ণ করে ফেল। কিন্তু এবার স্ত্রী নয় অন্য একজনকে আঁটক করবি।’
অপরপাশ এর ব্যক্তিটি গম্ভীর কণ্ঠে তরল পানীয় পান করে উচ্চস্বর সৃষ্টির ন্যায় শব্দ করে বলে,
‘কে!’
‘মেয়ের মাকে।’
‘হোয়াইট আপনি জা…।’
‘একাউন্ট এ পূর্বের চেয়েও চারগুণ এমাউন্ট ভর্তি হয়ে যাবে।’
অপরপাশ এর ব্যক্তি দৃঢ় শ্বাস ফেলে আশ্বাস দিয়ে বলে,
‘কবে কখন!’
‘কাল রাতেই চাই। মরণ আমিও দেবো তাদের।’
অপরপাশ এর ব্যক্তির কার্যে ভাবান্তর হলো না। সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ফোন কেটে দিল। ‘ঠিকানা দিয়ে দিবেন’ সংক্ষিপ্ত উক্তিটি মেসেজ করে পাঠিয়ে দিল অপরপাশ এর ব্যক্তি। অচেনা ব্যক্তি ফোনটা পকেটে গুজে হাতে থাকা গ্লাসে পুনরায় চুমুক দিল। ঠান্ডা আভাস পাচ্ছে শীতের সময়ে শীতল পানীয় যেন শরীরটা জমজমাট বানিয়ে ফেলেছে। চেয়ারম্যান এর কার্যসম্পাদন সে করবে শুদ্ধভাবে। তবে কার্যকরী হবে হিতে বিপরীত পদক্ষেপে। নিজেই বাঁকা হাসি দিল অচেনা ব্যক্তিটি।
চলবে…….
(গল্পটা খাপছাড়া হয়ে যাচ্ছে তাই না পাঠকগণ! তবে আর বেশি পর্ব নেই শিঘ্রই শেষ পর্ব পেয়ে যাবেন। ব্যস আর দুটি পর্ব বাকি তারপর আপনাদের যা রহস্য জানতে চেয়েছিলেন সব জেনে যাবেন ইন শা আল্লাহ।)