আনকোরা পর্ব-১৬

0
2910

#আনকোরা

#রূবাইবা_মেহউইশ
১৬.

“একটা মানুষ জীবনে অনেকরকম পথ পেরিয়ে আসে।সব পথ তার পছন্দের কিংবা স্বচ্ছন্দের হয় না। আমি তোমার মা কিংবা ফুপুর মত কাছের নই তোমার আর না তাদের মত করে তোমাকে জানি। তবুও একজন নারী হিসেবে তোমাকে একজন শুভাকাঙ্ক্ষীর মত এইটুকু বলতে পারি, বিয়েটা ছেলে খেলা নয়। আমরা জানি এবং মানি আই হোপ তুমিও মানো জন্ম,মৃত্যু আর বিয়ে তিনটাই আল্লাহ তাআ’লা নিজে লিখে দিয়েছেন প্রত্যেকের ভাগ্যে। তোমার বয়সটা সংসার করার মত অবশ্যই হয়েছে। আমি সবটা জানি না তবে দিহানের মা যতটুকু বলেছেন সে জানা থেকে বলছি তুমি প্রচণ্ড আবেগি। আবেগ মন্দ কিছু না কিন্তু আবেগ দিয়ে বাস্তবতাকে অদেখা করো না। ওই ছেলেটার সাথে তুমি চাইলেই সম্পর্ক রাখতে পারো কিন্তু এতে শুধু মাত্র তুমি আর সে খুশি হবে। তাই বলে কি সুখীও হতে পারবে!” দিহানের চাচী থামলেন কথাগুলো বলে। চৈতীর দৃষ্টি ছাঁদের কিনারায় থাকা পাতা বাহারের ঝারের দিকে।কিন্তু মনযোগ ছিলো চাচীর কথাতেই। আজ যখন সে চাচীর মুখের ওপর কথা গুলো বলছিলো তখন তার মা শুধু চড় মারেনি এই প্রথম তিনি উচ্চস্বরে কিছু কথাও বলেছিলেন চৈতীকে। সব কথার মাঝে এও বলেছিলেন, “তোর মত কুলাঙ্গার সন্তান থাকার চেয়ে নিঃসন্তান থাকাও ভালো ছিল।”

এই প্রথম তার মায়ের কথা শুনে মনে হয়েছে সে সত্যিই সন্তান হিসেবে কুলাঙ্গার। যে মা তাকে কখনো তার অন্যায়ে একটা ধমকও দেননি সেই মা আজ তাকে মৃত হিসেবে দেখতেও আফসোস করবে না বলেছেন। মা চলে গেছে এই বাড়ি থেকে আর যেতে যেতে বলে গেছে সে যেন সেদিনই তাকে মা বলে সামনে যায় যেদিন সে দিহানের স্ত্রী রুপে সামনে যাবে। চৈতীর মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে। বা গালে তার চারটা আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট। এ জীবনে এই প্রথম সে মায়ের হাতের চড় খেয়েছে৷ দিহানের চাচীর বলা কথাগুলো সে নিজেই ভেবেছিলো সেদিন যেদিন রাতে দিহানের জ্বর হলো। কিন্তু সেই রাতে তার বারবার মনে পড়েছে অন্য একটা কথা। বিয়ে মেনে সম্পর্ক আগানো মানে মানসিক এবং দৈহিক দুই ভাবেই দিহানকে আপন করতে হবে। আর ঠিক এই আপন করার ভাবনাটাতেই সে হেরে গিয়েছিলো সে রাতে। তার এখনও মনে পড়ে আবছা আবছা দিহানের কাঁধে চড়া কিংবা তার হাতের কোলে চড়ে বুকে মিশে ঘুরতে যাওয়া। একটা সময় কত শ্রদ্ধার সাথে দেখতো সে দিহানকে। কিন্তু সবটাই ছিলো বড় ভাই ভেবে এখন সেই ভাইয়ের সাথেই কিনা তাকে অন্য এক সম্পর্ক তৈরি করতে হবে! ভাবতেই তার গা গোলায়।অনেক ভেবে সে চাচীকেই বলল তার মনের এই কথাগুলো। চাচী মানুষটা চমৎকার কথাবার্তায়। এখানেও তিনি দারুণভাবে চৈতিকে বুঝিয়ে দিলেন বিয়েটা কত পবিত্র সম্পর্ক। আর এমন আপন চাচাতো,মামাতো,ফুপাতো ভাই বোন ছোট বেলায় শুধুই ভাইবোন হলেও বড় হলে তা পরিবর্তন হতে পারে। এমন অহরহ হচ্ছে আর এটা নাজায়েজ কোন ব্যাপার নয়। বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কও তো নয় তাদের তবে সম্পূর্ণ ব্যপারটা মনস্তাত্ত্বিক। তুমি একটু সময় নাও ভাবো দিহানের প্রতি মনযোগ দাও আগের সম্পর্ক নয় বরং নতুন সম্পর্ক দিয়ে দাও দেখবে সময় লাগলেও তুমি পারবে। একটা সহজ কথা কি জানো, মানুষ যখন কাউকে ভালোবাসে তখন আবেগে কিংবা অতি ভালোবাসায় বলে আমি তাকে ছাড়া বাঁচবো না। তাই বলে কি সত্যিই কেউ প্রিয় কারো মৃত্যুতে মারা যায়! সর্বোচ্চ কেউ আপন কাউকে হারালে ভেঙে পড়ে, নির্লিপ্ত হয়ে যায় কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আবার পরিবর্তনও আসে।তুমি আর দিহান দুজনেই অন্য দুই ব্যক্তির মায়ায় আটকে আছো আর তাই এখন আগের সম্পর্কের যুক্তি খাড়া করছো। একটু সময় নাও আগেই সবার বিরুদ্ধে লড়াই করতে নেমে পড়ো না। চৈতি অবাক হয়ে শুনছে কথা গুলো। আরও অনেকটা সময় চাচী তাকে বোঝালো।

সন্ধ্যের পর দিলশাদ চা নাশতার আয়োজন করে ঐশীকে ডাকলো, দিহানের চাচী আর ময়না খালাকেও ডাকলো। কিন্তু চৈতীকে কেউ ডাকলো না। দিহান বিকেলে একটু বাইরে বেরিয়েছিলো তখনও ফেরেনি। চৈতী ঘরে শুয়েছিলো কিন্তু ঘুমায়নি। সে শুনেছে ফুপি কাকে কাকে ডাকছে। এই প্রথম তার কষ্ট লাগলো ফুপির তাকে অবহেলা করাটা। চোখ ছাপিয়ে জল গড়ালো কিছু সময়। সন্ধ্যে বাতিও জ্বালেনি সে আজ ভেবেছিলো এই নিয়ে ফুপি কথা শোনাবে। কিন্তু না তেমন কিছুও হয়নি। ঐশী এসে ডাকলো তাকে চা খেতে আর তখনই সে চোখ মুছে শোয়া থেকে উঠলো। পরিবর্তন সত্যিই দরকার হয়তো সময় লাগবে তবুও সে চেষ্টা করবে। ঐশীর ডাকে সে মুখ হাত ধুয়ে চলে গেল বসার ঘরে। দিলশাদ তাকে দেখেও যেন দেখলো না। তবে চাচী খুব খুশি হলেন তার উপস্থিতিতে। চা নাশতার পর্বটা তারা খানিকটা নিঃশব্দেই শেষ করলো। কিন্তু রাতের রান্নায় চৈতী বেশ হৈ চৈ ফেলে দিলো। ফুপির পাশে দাঁড়িয়ে অনেকটা জোর করেই পেঁয়াজ কাটলো। কাটতে কাটতে হাতের আঙ্গুল কেটে রক্ত বের হলো তবুও সে পেঁয়াজ কাটা বন্ধ রাখেনি। রান্নার শেষে সবাই যখন খেতে বসলো চৈতী তখন ফুপির পাশেই দাঁড়িয়ে থেকে সবাইকে খাবার সার্ভ করলো। ঐশীও করতে চাইলে তাকে জোর করেই খেতে বসিয়ে দিলো। দিহান বাড়ি ফিরে চৈতীর এমন পরিবর্তন দেখে মজা করেই বলে ফেলল, “এই বুড়িরে কে কি বলল আবার? ঢং করে দেখছি সব কাজই করছে!”

দিশান খাবার মুখে দিতে দিতেই বলল, “ঢং বলছো কেন ভাইয়া? আমাদের বুড়ি এখন বড় হয়েছে তাই সংসারের কাজে হাত দিয়েছে।”

কথাটা মজার ছলে হলেও দিহান গম্ভীর হয়ে গেল। গত তিনদিনে সে জ্বরে পড়ে দেখেছে চৈতী তার সেবা করেছে। কিন্তু সবটাই জোরের মুখে যা দিহান চায় না৷ সে অনেক ভেবেছে এই সম্পর্ক সহজে শেষ করা যাবে না। অন্তত অভ্র যখন পরিবারের খাতিরে পিছিয়ে পড়বে জেনেছে তখন তো একদমই না। কিন্তু সে তো চৈতীকে অনুগ্রহও করতে পারবে না। তার জীবনে দয়ার পাত্রী নয় চৈতী। দিহান খাওয়া শেষে ঘরে যেতেই চৈতীও গেল পিছু পিছু। টেবিলে তখনও সবার খাওয়া শেষ হয়নি।

দিহান ঘরে গিয়েই বিছানায় শুয়ে পড়লো তা দেখে চৈতী বলল, “এখনই ঘুমাবে?”

“কেন?”

“তোমার ঔষধ আছে রাতের।”

“আচ্ছা।”

“ঘুম পেলে ঔষধ আগে খেয়ে নাও।” বলেই চৈতী ঔষধের বক্সটা ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে এনে খাটে রাখলো। সাথে সাথেই আবার ডাইনিং থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো।

দিহান ঔষধ খেয়েই আবার শুয়ে পড়লো। ঔষধের কারণেই নাকি দূর্বলতা জানে না কিন্তু প্রচুর ঘুম পায় তার। দিহান শুতেই চৈতী ঘরের বাতি বন্ধ করে বেরিয়ে গেল। বাড়ির সকলের খাওয়া শেষ হয়নি৷ এখনও ফুপি,চাচী,ময়না খালা খায়নি চৈতীও তাই তাদের জন্য অপেক্ষা করলো। দিহানের চাচা, চাচী কাল চলে যাবেন তাই প্যাকিংয়ে হেল্প করছে ঐশী। পাশেই দিলশাদ বসে কথা বলছিলো। প্যাকিংয়ে শেষে সবাই খেতে বসলে চৈতীও যোগ দিল তাদের সাথে।

“কাল তো চলে যাবো এরপর আবার কবে সবার সাথে দেখা হবে জানি না। আদৌও হবে কিনা বা তাও জানি না।কিন্তু খুব করে চাইবো আবার যদি দেখা হয় তখন যেন চৈতী আর দিহানকে পাশাপাশি দেখি। ছেলে মেয়েদের সুখ দেখার চেয়ে বড় সুখ দুনিয়ায় আর কিছুই নেই।”

চাচী কথাগুলো বলে চলছে আর চৈতী মাথা নিচু করে খাবারে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করছে। দিলশাদ উদাস চোখে জায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে সে আমিন বলছে যেন তার জায়ের কথাটা সত্যি হয়। দিহান চৈতী পাশাপাশি হোক।

রাতের আঁধারে চাঁদ আজ অনুজ্জ্বল রুপ নিয়ে জেগে আছে।চৈতী জেগে আছে দিহানের পাশে শুয়ে।বেঘোরে ঘুমুচ্ছে দিহান। তার নিঃশ্বাসের ভারী শব্দ টের পাচ্ছে চৈতী। চাচীর কথাগুলো আর বাবা,মায়ের ইচ্ছে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তার মনে হলো সে দিহান ভাইকে দেখবে। খুব গভীরভাবে দেখবে, কাছ থেকে দেখবে এমনকি দিহান ভাইয়ের মনের ভেতরটাও পরখ করে দেখবে। বলা যায় না, ভালোলাগার শুরু তো বাহ্যিক সৌন্দর্য থেকেই হতে পারে! এরপর না হয় ভেতরের ভালোলাগাও খুঁজে নেবে। চাচী বলেছে সবটা মনের ব্যপার কিন্তু জোর করে মনকে কতটুকু বশ মানাতে পারে এটাই এবার দেখবে সে। শোয়া থেকে এবার উঠে বসলো চৈতী। খুব মনযোগে তাকিয়ে রইলো দিহানের দিকে। গাল ভর্তি খোঁচা দাঁড়ি, কপালের মাঝে লম্বালম্বি একটা রেখা। অবাক হওয়ার মত কিছু এই রেখাটা তাই চৈতী বেশ অবাক হলো। ঘুমন্ত মানুষের মুখে অমসৃণতা থাকতে পারে এটা তার জানা ছিলো না। আবার মনে হলো দিহানের হয়তো ঘুমের মধ্যেই কোনরকম পেইন হচ্ছে এই রেখাটা তারই প্রকাশ। এক দৃষ্টিতে অনেক সময় পার করেছে চৈতী কিন্তু দিহানের নড়াচড়ায় চৈতীর ধ্যান ভাঙলো। সে সরে গিয়ে শুয়ে পড়লো পাশ ফিরে। আজই প্রথম অনুভব হলো সে একজন পুরুষের পাশে শুয়েছে। তার দেহের পাশে উষ্ণ একটা দেহ নিথর হয়ে আছে। সে দেহে তার আলাদা এক অধিকার আছে আবার তার দেহেও সেই মানুষটার অধিকার আছে। আহ্ ভাবতেই আবার গা গোলাচ্ছে মানুষটা দিহান ভাই! চৈতী এবার নিজেকে প্রবোধ দিলো চাচীর কথা স্মরণ করতে লাগলো। দিহান ভাই নয় এখন আর। সম্পর্ক বদলে গেছে। ভাবতে হবে আরেকটু এগিয়ে এই মানুষটার মন আর দেহের সঙ্গী হতে হবে।

সকালের কাঁচামিঠে রোদ্দুর আর বাড়ির মানুষগুলোর শোরগোল। মিলেমিশে তৈরি হয়ে গেছে চমৎকার এক ভরা ভরা সকাল। চৈতী এ জীবনে অনেক আনন্দই উপভোগ করার সুযোগ পায়নি একক আর ছোট পরিবারে বড় হওয়ায়। একাকীত্ব কোন কোন ভাবেই ফাঁকফোকর পূর্ণ করে তার জীবনে গেঁথে ছিলো। সেই একলা থাকার দুঃখ গুলো ঘুঁচার সুযোগ এ বাড়ি এসে পেলেও সে উপলব্ধি করতে পারেনি মানসিক টানাপোড়েনের কারণে। কিন্তু আজকের সকাল তার অন্যরকম লাগছে। হতে পারে মন থেকে বিষাদের ঘড়া হটিয়ে দিতে চাইছে বলে তার দৃষ্টিও আজ অন্যরকম হয়েছে! ঐশী নতুন বউ হয়েও সকাল সকাল নানা রকম কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেই সাথে চাচা শ্বশুর-শ্বাশুড়ি চলে যাবে সেদিকেও তাদের দরকারি বিষয়াদিতে নজর রাখছে। চৈতী প্রথমে বুঝতে পারছিলো না সে কি করবে।তার কাজ সহজ করলো ঐশী নিজেই। সে ডেকে ডেকে কাজ দিচ্ছে আবার বুঝিয়েও দিচ্ছে কিভাবে কি করতে হবে। দিহান ঘুম থেকে উঠেই অবাক হলো। বাড়িতে হুলস্থুল কান্ড চাচা চাচীর যাওয়ার আগের মুহূর্ত বলে। নাশতার টেবিলটায় সবাই আজ একসাথেই বসলো। দিশানের পাশে ঐশী বসতেই চৈতীও চট করে দিহানের পাশে বসে গেল। টেবিল জুড়ে এখন চারটি জোড়া বসেছে। চাচা-চাচী, বাবা-মা, দিহান-চৈতী, দিশান-ঐশী।দিলশাদের কি হলো কে জানে সে এক পলক পুরো টেবিলে নজর দিয়েই নিচু স্বরে উচ্চারণ করলো, “মাশাআল্লাহ!”

দিহানের চাচী মহিলাটি বরাবরই আধুনিক আর সৌখিন। তিনি টেবিলে সবার উপস্থিতির পরই বললেন, “এখন একটা ফটো তুললে মন্দ হতো না!”

দিশানও সায় দিয়ে বলল, “আমি তুলি ছবিটা।”

“নাহ, তুমি বসো ময়নাকে ডাকি।” চাচী কথাটা বলেই ময়নাকে ডাকলেন। দিহানের বাবা দুই ছেলে আর ছেলের বউদের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে ফেললেন। তার একটি মাত্র মেয়ে অথচ এই আনন্দমুখর পরিবেশে মেয়েটি পাশে নেই। চোখে জল আসি আসি করতেই তিনি ঠোঁট টেনে প্রশস্ত হাসলেন৷ যেন হাসির আড়ালে দুঃখটা ঢাকা পড়ে অনেকটা মেঘের আড়ালে সূর্যের মতন!

চাচা-চাচী চলে যাওয়ার দিন দুই পর থেকেই দিহান বাবার সাথে অফিসে বসতে শুরু করেছে।শারীরিক ভাবে সে একদমই সুস্থ এখন৷ লুকিয়ে লুকিয়ে তার চট্টগ্রামে চাকরি খোঁজা তার এখনও জারি আছে। বন্ধুকে বলে রেখেছে ভালে কোন পদ পাওয়া গেলেই যেন তাকে জানায় সে ইন্টারভিউ দিবে। বাড়িতে অবশ্য এই নিয়ে সে মুখ খোলেনি। ভালোই চলছে দিন তাদের চৈতীও আবার পড়াশোনায় মন দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার এই চেষ্টার ফাঁকে সে আরো একটা কাজ খুব মন দিয়েই করছে। তা হলো, দিহানকে তিন বেলা খাবার বেড়ে খাওয়ানো, তার বাড়ি ফেরার সময়টাতে দরজার কাছে ঘুরঘুর যেন বেল বাজতেই সে দরজা খুলতে পারে।রাতে ঘুমানোর সময় বিছানা ঠিক করে দেওয়া আর আলমারির কাপড়গুলো সযত্নে গুছিয়ে রাখা। এই কাজগুলো সে ফুপি আর ঐশীকে দেখে দেখেই করছে। প্রথম কয়েকদিন দিহান খুব বিরক্তবোধ করলেও এখন আর সে কিছু বলে না। বরং তার একটু সুবিধাই হয় গোছানো কাপড় থেকে কাপড় বের করা কিংবা পরিপাটি বিছানায় ঘুমাতে। আজও অফিস থেকে ফিরেই সে বেল বাজিয়েছে। তবে আজ একটু থমকে গেছে ঘরে ঢুকতে গিয়ে। গেট খুলেছে ময়না খালা। মনে হলো চৈতী রান্নাঘরে কিংবা তার পড়ার ঘরে৷ নিজের ঘরে গিয়ে পোশাক বদলাতে গিয়েই আবার বাঁধলো বিপত্তি৷ আজ তার বাড়িতে পরার কাপড়গুলে গোছানো নেই। চৈতীকে ডাকার জন্য ঘর থেকে বের হতে যাবে তখনি দেখলো ডিভানে তার শুকনো কাপড়গুলো। সেখান থেকেই পরনের জন্য গেঞ্জি আর ট্রাউজার নিয়ে বিছানায় বসতেই দিলশাদ এলো কফি নিয়ে।

“কিছু কি লাগবে তোর?” কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করলো দিলশাদ।

“খিদে পেয়েছে কফি খেয়েই ভাত খাবো।”

“আচ্ছা তবে কফিটা শেষ করে আয় আমি তোর বাবাকে কফি দিয়ে আসি।” দিলশাদ উঠে চলে গেলেন। দিহান প্রশ্ন করতে চাচ্ছিলো চৈতী কোথায় কিন্তু করা হলো না। রাতের খাবার আজ দিহান একাই বসে খেল। বাকিরা সবাই পরে খাবে কিন্তু খাওয়ার টেবিলেও সে চৈতীকে দেখতে পেল না। এবার সে বিছানায় শুতে গিয়ে মনে হলো বিছানাটা আজ গোছানো নয়। এবার আর চুপ থাকা গেল না। সে চেঁচিয়েই ডাকলো মাকে।

“কিরে কি হলো চেঁচাচ্ছিস কেন?”

“চৈতী কোথায় বিছানা এত অগোছালো কেন? তাকে বলো বিছানা ঠিক করতে আমার ঘুম পেয়েছে খুব।”

দিহানের কপাল কুঁচকে আছে বিরক্তিতে। দিলশাদ তার কথা শুনে বুঝতে পারলপন চৈতী তাকে কিছুই জানায়নি। তাই তিনি নিজেই বললেন, ” চৈতী আজ রংপুরে চলে গেছে।”

চলবে
(সবাই বিরক্তিতে কাদা হচ্ছেন জানি তবুও বলবো আরো একটু হোন। গল্পটা তার নামের মতোই হবে আনকোরা, অভিনব। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here