আনন্দ_অশ্রু পর্ব_৩

আনন্দ_অশ্রু
পর্ব_৩
#তাহসিনা_ইসলাম_অর্শা

ভিতরে অজানা রঙের ভয়ে রাঙিত হচ্ছে লাল রঙা হৃদয়। শেষ কিছু মুহুর্ত! কিছু শেষ মুহুর্ত দু’হাতে খামছে ধরতে চাচ্ছে তীব্রতা। যদি আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রেখে এই মুহুর্ত গুলো থামানো যায়! যদি সময় আটকে যেতো এই মুহুর্তে। যদি এই মুহুর্ত বন্দি হয়ে থেকে যায় মনে। যেই মুহুর্ত নিয়ে বাকি জীবন বাঁচার আকুতি দেখছে তীব্রতার দুচোখ! কিছু সুন্দর স্মৃতি অন্তত চায়। যে স্মৃতি নিয়ে বাকি পথ চলা যাবে নীরবে। এই মুহুর্ত আর স্মৃতিরাই তো বাঁচিয়ে রাখে মানুষকে। মানুষ তো সব সময় পাশে থাকেনা, থাকে তো শুধু স্মৃতিই। দুচোখ বেয়ে অশ্রুধারা পড়ছে রাযিনের কাধে।

তীব্রতার দু-হাতের মুষ্টি আরো শক্ত হলো, ধরে রেখেছে রাযিনের পিঠ, মনে মনে আবার বলছে
‘ আমার যে ডিভোর্স নিতেই হবে।

কিছুক্ষণ পর তীব্রতার গরম লাগতে শুরু করে অনেক, রাযিনের জ্বর অনেক বেড়ে গেছে। রাযিনকে শুইয়ে তীব্রতা আবার পানি ঢেলে জল পট্টি কপালে দিয়ে নিজের শরীর পরিষ্কার করে কাপড় বদলে নেয়। তারপর ফ্লোরে পড়া বমি পরিষ্কার করে মুছে দেয় ফ্লোর। রাযিনের জ্বর ভাত খাওয়ালে আরো বাড়বে ভেবে পরোটা আর আর মুরগীর মাংস রান্না করে তীব্রতা। রাযিনকে একটা পরোটা খাইয়ে আবার ঔষধ খাইয়ে দেয়। তারপর পাশে বসে মাথায় বিলি কেটে দেয় পরম যত্নে৷

বিকেলে বেল্কুনিতে বসে বসে রাযিনের ডায়েরির পাতা উল্টাচ্ছে তীব্রতা। রাযিনের হাতের লেখা খুবই সুন্দর যা দেখে মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে তীব্রতা। এই ডায়েরির প্রতিটি পাতা পড়া হয়ে গেছে তীব্রতার। তবুও বার বার পড়তে ভালো লাগে। বিশেষ করে তীব্রতাকে নিয়ে যেই পাতা গুলোতে লেখা আছে সেই গুলো তীব্রতা বার বার পড়ে।

রাযিনের ছোট থেকে বেড়ে ওঠা আবার তারিনকে নিয়েও অনেক কিছু লেখা আছে। রাযিন আর তারিনের যেদিন বিয়ে হয় এর পরের দিন অব্দি লিখেছিলো রাযিন। এরপর হয়তো ডায়েরি লিখা বন্ধ করে দিয়েছিলো। বা লেখা হয়নি আর। তারপর আবার তীব্রতার সাথে যেদিন বিয়ে হয় সেদিন থেকে লেখা আছে তীব্রতাকে নিয়ে। অনেক গুলো পৃষ্ঠা পাল্টানোর পর তীব্রতা হাত ছুঁয়ে দেয় সেই লেখায় যেখানে লিখা
” আবার ভাবিনি কখনো কাউকে বিয়ে করবো মনে আর ঘরে জায়গা দেবো। কিন্তু পরিস্থিতিতে পড়ে বিয়ে করতে হলো আজ।

পরের পাতা উলটানোর পর
‘ মেয়েটা প্রচন্ড ভালো তবে আমার সাথে তেমন ভালো করে কথা বলেনা। তার নামেই আমি মুগ্ধ ” তীব্রতা” কেন যেন ভালো লেগেছে ভীষণ নামটা। যেখানে তীব্র অনুভূতির সঞ্চয় ঘটছে। কিন্তু সে হয়তো আমায় পছন্দ করেনা। আমার তাকে আরো সময় দেওয়া উচিত হয়তো।

আরো কিছু পাতা পরিবর্তন করতেই লিখা
‘ আমি ভালোবেসে ফেলেছি মেয়েটাকে। ভাবতে পারিনি আবার কাউকে ভালোবাসবো এই ভাবে। তবে ভালোবেসে ফেলেছি ভীষণ রকম।

তীব্রতা হাত দিয়ে ছঁয়ে দিচ্ছে লেখা গুলো আর চোখ দিয়ে পানি ঝরছে অনবরত। তীব্রতারও হয়তো আর কখনো এমন ভাবে বলা হবে না রাযিনকে সেও ভালোবেসেছিলো। তার কষ্ট গুলো ভাগ করে নিতে চেয়েছিলো সেও। পৃথিবীর সকল সুখ দিবে ভেবেছিল তীব্রতাও।
কিন্তু চাইতে খুব বেশি দেরি হয়ে গিয়েছে, তার জন্যই আফসোস তীব্রতার। কেন আগে এই ডায়েরিটা তার হাতে আসেনি ভেবেই চেপে ধরে ডায়েরিটা বুকে আর কেঁদে দেয় শব্দ করে। ডায়েরিটা আরো আগে পেলে হয়তো আরো কিছুদিন থাকা হতো রাযিনের সাথে সুন্দর স্মৃতি বানানোর জন্য ।

ডায়েরিটা খুলে আবার পড়তে নিবে তখনি তীব্রতার ফোন টুংটাং আওয়াজ করে বেজে উঠে। তীব্রতা ফোনের দিকে তাকাতেই বিব্রত আর বিরক্তবোধ করে। তাও ফোনটা নিয়ে অন্য আরেকটা রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।
ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কর্কশ রুক্ষতায় পরিপাটি একটা আওয়াজ ভেসে আসে। তীব্রতা অনিচ্ছা সত্ত্বেও হ্যালো বলে কথা শুরু করে। কিছুক্ষণ কথা শুনে তীব্রতা বলে

‘ আমি বলেছি আমি ডিভোর্স নেবো। রাযিনের শরীর অনেক খারাপ আমাকে আর ক’টা দিন সময় দিতে হবে। ওর কিছু হলে আমিও বাঁচবো না মনে রাখবেন। আগে উনি সুস্থ হোক তারপর না হ….

তীব্রতা আর কিছু বলতে পারলো না তার আগে ওপাশ থেকে কথা বলছে ওই পাশের মানুষটা। তীব্রতা সব কথা শুনে

‘ আচ্ছা আমি রাত আটটায় আপনার সাথে দেখা করবো, আপনার বাড়িতেই। এখন রাখছি আমার রাযিনের কাছে যেতে হবে।

তীব্রতা ফোন কেটে দরজা খুলতেই দেখে রাযিন দাড়িঁয়ে আছে দরজার বাহিরে। মুখটা তীব্র মলিন হয়ে আছে। তীব্রতা ভয় পাচ্ছে কিছু শুনেনি তো আবার রাযিন! তীব্রতা রাযিনের একটু কাছে যেতেই রাযিন তীব্রতাকে বলছে

‘ কখনো থেকে ডাকছি তোমায়, সারা না পেয়ে উঠে এসেছি। এক গ্লাস পানি দেবে?

তীব্রতা রাযিনকে একটা চেয়ারে বসিয়ে
‘ আপনি বসুন আমি এখনি নিয়ে আসছি।

তীব্রতা পানি এনে দিতেই রাযিন এক ঢোকে সবটুকু পানি খেয়ে নেয়। তারপর বলে
‘ জ্বরে গলাটা একদম শুকিয়ে গিয়েছিলো। কেমন যেন স্বপ্ন দেখছি আরো জানো, আমি একটা ঘরে বন্দি হয়ে আছি কেউ নেই আমার পাশে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো আমার। আর কে জানি চিৎকার করে বলছিলো বার বার ” তুই একদম একা থাকবি, একদম একা।

তখনি তীব্রতা জড়িয়ে ধরে রাযিনকে। ভিতরটা
ভেঙে যাচ্ছে মনে হচ্ছে তীব্রতার, কিন্তু কিছু বলতে পারছে বা রাযিনকে। তীব্রতারও ভয় হচ্ছে ভীষণ। তীব্রতা কিছুক্ষণ এই ভাবে থেকে ছেড়ে দেয় রাযিনকে। মাথা নুইয়ে চলে যেতে নিলেই রাযিন এক হাত ধরে তীব্রতার।

রাযিন তীব্রতার চোখে তাকিয়ে দেখে পানি। কিছু সময় চুপ থেকে
‘ আমার এখন জ্বর নেই। বাজার-সদাই কিছু লাগবে? লাগলে এখন নিয়ে আসি।

তীব্রতার রাগ হচ্ছে রাযিনের কথা শুনে জ্বর নিয়ে বলছে বাজার করবে উনি। মুখ শক্ত করে।
‘ না কিছু লাগবে না সব আছে, আর যদি কিছু দরকার পড়ে আমি নিয়ে আসবো আপনার এখন এই ভাবে বাহিরে যেতে হবে না।

‘ সারাদিন তো ঘরেই শুয়ে আছি।

‘ তো কি হয়েছে দরকার পড়লে আরো শুয়ে থাকবেন। চারদিন, পাঁচদিন, একমাস একবছর। এতো বাহির বাহির করেন কেন? আমরা মেয়েরা কি ভাবে সারাদিন ঘরে বসে থাকি?

‘ আচ্ছা, আচ্ছা কোথাও যাবো না রাগ করো না। আমি তো এমনি বলেছি যদি কিছু লাগে!

তীব্রতা চলে যেতে নিলেই আবার রাযিন তীব্রতাকে নরম সুরে
‘ তীব্রতা…

তীব্রতা কয়েক পা সামনে গিয়েই আবার থেমে
‘ হুম

‘ তুমি ডিভোর্সের কথা এমনি বলেছিলে তাই না?

তীব্রতা চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে নিঃশব্দে চলে যায় ওখান থেকে, রাযিনের কথার কোন উত্তর না দিয়ে।

রাত ৮ টার প্রায় একটু আগে তীব্রতা তৈরি হয় বের হওয়ার জন্য। রাযিন ঘুমিয়ে আছে। জ্বরটা বাড়বে বাড়বে মনে হচ্ছিলো তাই আরেকবার ঔষধ খাইয়ে দিয়েছে তীব্রতা। রাযিনের মাথায় হাত বুলিয়ে বের হয়ে যায় তীব্রতা। আর তখনি চোখ মেলে তাকায় রাযিন। বড় বড় পায়ে বেরিয়ে পরে সেও।

তীব্রতাকে ফলো করছে রাযিন। তীব্রতা সামনেই একটা রিকশায় বসে আছে, আর পিছনের একটা রিকশায় রাযিন। ফলো করতে করতে একটা বাড়ির সামনে এসে থমকে যায় রাযিন। তীব্রতা সেই বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে। আর রাযিন সেই বাড়ির দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে যায়, চোখে পানির আনাগোনা শুরু হয় তার ……….

চলবে………..

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা বেশি বড় হবে না। পরবর্তী পর্বেই গল্পের সব রহস্যের খুলে যাবে। কেমন হচ্ছে গল্পটা অবশ্যই জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here