আনন্দ_অশ্রু পর্ব_৫

আনন্দ_অশ্রু
পর্ব_৫
#তাহসিনা_ইসলাম_অর্শা

তীব্রতা জড়িয়ে ধরে রাযিনকে। রাযিনের মাথা তীব্রতার বুকে চেপে ধরে
‘ একটু শান্ত হোন প্লিজ আপনি অসুস্থ।

তীব্রতার ভয় লাগছে ভীষণ। রাযিন কি ভাবে সব জেনেছে? তাহলে কি রাযিন তীব্রতার পিছু নিয়েছিলো! রাযিন খারাপ ব্যাবহার দূরে থাক কখনো তুই করে সম্মোধন করেনি তীব্রতাকে। কিন্তু আজ সে তুই তুকারি করছে তাকে। অবশ্য এর জন্য কারণও রাযিনের কাছে আছে। শুধু কারণ নয় বড় ধরনের কারণ আছে। আজকে তীব্রতা দোষী।

রাগে তীব্রতাকে সরাতে ধাক্কা মারে রাযিন। তীব্রতা টাল সামলাতে না পেরে পরে যায় ফ্লোরে, যেখানে রাযিন পানির গ্লাস ছুড়ে মেরেছিলো। তীব্রতার হাতে গ্লাসের একটুকরো ভাঙা কাচঁ গিয়ে বিধে৷ রাযিন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে উঠে দাঁড়িয়ে
‘ ডিভোর্স চাস তুই তাই না?

রাযিন চলতি পায়ে বেড রুমের দিকে অগ্রসর হয়। তীব্রতা হাত চেপে ধরে উঠে রাযিনের পিছন পিছন দৌড়ে যায়। রাযিন তীব্রতার সব কাপড় ফ্লোরে ছুড়ে ছুড়ে ফেলছে। রাযিনের লাল চোখে আবার পানি টলমল করছে, তীব্রতা আসতেই
‘ এই কাপড় গুলো গুছিয়ে নে ততক্ষণে আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দেবো, কিন্তু কি কারণে আমার সাথে এমন করেছিস তার জবাবদিহি তোকে করতেই হবে। তারপর বাসা থেকে বের হয়ে যাবি।

তীব্রতা রাযিনের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিদারুণ ব্যাথা হচ্ছে ভিতরে। স্পষ্ট হচ্ছে চোখের নোনা পানি ঝর ঝর করে গড়িয়ে যাচ্ছে নিচে। তীব্রতা একটু সামনে এগিয়ে যায় রাযিনকে ধরতে, তখনি রাযিন তীব্রতার হাত ধরে বেড রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় সে।
তীব্রতা দরজায় জোরে জোরে হাত দিয়ে ধাক্কা দিচ্ছে
‘ রাযিন প্লিজ এমন করবেন না। দরজা খুলুন। আমার কথাটা একটু শুনুন প্লিজ। রাযিন!!

রাযিন দরজার কাছ থেকে
‘ কি শুনবো আর আমি তীব্রতা? আমি তো ভেবেছিলাম তুমিও আমায় ভালোবাসো। হয়তো আমার থেকে বেশি। কিন্তু আমার থেকে তোমার কাছে যে অন্য কিছু অধিক দামী আমি ভাবিনি। কেন তাহলে তীব্রতা! কেন সেদিন আমায় আপন করে নিলে? কেন আমায় এতো যন্ত্রণা দিচ্ছো তীব্রতা? একটু কি ভালো থাকতে পারবো না আমি? তোমায় নিয়ে একটু ভালোই তো থাকতে চেয়েছিলাম আমি আর কি! কিন্তু তুমিও? এর থেকে তুমি আমায় মেরে ফেলতে..

তীব্রতা দরজায় ধরে কাদঁছে। দরজার সাথে মাথা লাগিয়ে
‘ চুপ করুন প্লিজ আল্লাহর দোহাই লাগে আপনি চুপ করুন।

তীব্রতা দরজায় ধরে কাদঁতে কাদঁতে ফ্লোরে বসে পড়ে

রাযিনও কথা গুলো বলে শব্দ করে কান্না করছে। দুজনেরই ভিতরে ভয়ংকর ভয় দু’জনকে হারানোর। এর মাঝে কিছু তিক্ততার ভীর। ভালোবাসি বলা হয়নি দুজনের তবে জানাজানি হয়ে গেছে তাদের অজান্তেই।

রাত প্রায় দুটো বাজে। রাযিন দরজা খুলে দেখে তীব্রতা ফ্লোরে হেলান দিয়ে এখনো বসে আছে। রাযিন ফাস্ট এইড বক্স এনে তুলো দিয়ে আস্তে করে তীব্রতার হাত মুছে দিতে নিলেই তীব্রতা জেগে উঠে। তীব্রতা জেগে উঠেই আগে রাযিনের গলা জড়িয়ে ধরে। রাযিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে তীব্রতাকে সরিয়ে তার হাত ব্যান্ডেজ করে দেয়। তারপর ড্রয়িংরুমের সোফায় গিয়ে বসে। তীব্রতা পিছন পিছন এসে রাযিনের সামনেই অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে

‘ আমি আপনাকে ভালোবাসি রাযিন ।

রাযিন তীব্রতার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে
‘ মিথ্যে কথা।

তীব্রতা আবার নিচে তাকিয়েই
‘ আমি আপনাকে ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি।

রাযিন গর্জন দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তীব্রতার বাহু ধরে ঝাকিয়ে
‘ তাহলে কেন ডিভোর্স দিতে চাইছো? কেনই বা তাদের কাছে গিয়েছো আমি যাদের সব চেয়ে বেশি ঘৃণা করি।

তীব্রতা রাযিনের চোখে ব্যাথা ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে
‘ কিন্তু আপনি তারিনকে ভালোবাসতেন। উনাকে ঘৃণা করেন না। উনি ফিরে এসেছে।

তীব্রতাকে ছেড়ে দেয় রাযিন। সোফায় চুপ করে বসে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে,
‘ আমি তারিনকেও ঘৃণা করি।

তীব্রতা ভ্রু কুঁচকে,
‘ কেন? আপনি তো জানতেন তারিন মারা গিয়েছে। তাহলে ঘৃণা কেন? আর ওই সময় কেন বললেন আপনি জানতেন যে তারিন মারা যায়নি?

তীব্রতার দিকে একবার তাকায় রাযিন তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
‘ কিছুদিন আগে আমি তারিনকে একটা শপিংমলে দেখেছিলাম। ডাক দেবো ভেবে সামনে গিয়ে দেখি ওর হাজবেন্ড আছে সাথে।

আমার দুনিয়া ঘুরাচ্ছিলো মনে হচ্ছিলো। যে তারিনকে আমি ভালোবাসতাম যে তারিন মারা গিয়েছে সে এখানে কি করছে! তারপর আমি আমার সেই বন্ধুর কাছে যাই, যে বলেছিলো তারিন মারা গিয়েছিলো। ওকে ভালোভাবে জিজ্ঞেস করার পর ও স্বীকার করে মিথ্যা বলেছিলো সে। তারিনের ভাই ওকে টাকা দিয়েছিলো তারিন মারা গেছে আমায় বলতে। আর তারিন যখন সুস্থ হয় তাকে নাকি বিয়ে দিয়ে দেয়, আর বলে ওর এক্সিডেন্ট হওয়ার পর আমি ওকে রেখে পালিয়ে গিয়েছিলাম। তাই ও আর দ্বিমত না করে বিয়ে করে নিয়েছিলো। ওর বিয়ের অনেক দিন পর আমায় জেল থেকে আমার ওই বন্ধুই ওদের কথায় ছাড়িয়ে নিয়ে আসে।

তারিনকে শপিং মলে দেখার কিছুদিন পর তারিন আমার সাথে যোগাযোগ করে দেখা করে। আমার কাছে ফিরতে চায় বলেছিলো। আমি ওকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, বলেছিলাম এখন আমি তোমায় ভালোবাসি। ও আগে তো যোগাযোগ করেনি আমার সাথে, আমি বেঁচে আছি নাকি মরে গেছে জানতে চাইনি ।

এখন বুঝতে পারছি আমায় বলে যখন কিছু কাজ হয়নি তখনি ও তোমার সাথে যোগাযোগ করে এমন করছে তাই না? আমায় ডিভোর্স দিতে বলছে তারিনই তাই তো?

তীব্রতা রাযিনের পাশে বসে
‘ কিন্তু তারিন তো আমায় বলেছিলো সে আপনার সাথে দেখা করেনি। ও আপনার সামনে আসলে নাকি আমায় ছেড়ে দেবেন আপনি।

‘ আরেহ বোকা মেয়ে ও তোমায় ভয় দেখিয়েছিলো। ও আমার সাথেই প্রথম দেখা করিয়েছিলো। তুমি ওর কথা কিছু জানতে না ভেবে আমি বলিনি কিছু তোমায়। কিন্তু তুমি ওদের সাথে কি করছিলে? যোগাযোগই বা হলো কি ভাবে?

তীব্রতা এবার একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলা শুরু করলো
‘ আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম বিয়ের কিছু সময় পরই। আপনার আমার প্রতি যত্ন আমাকে বার বার ভাবিয়ে তুলছিলো আপনার কথা। আমি তো ভেবেছিলাম কখনোই কাউকে ভালোবাসতে পারবো না। বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় ব্যথিত হয়েছিলাম ভীষণ কিন্ত আব্বুর দিকে তাকিয়েই আপনাকে বিয়ে করা। ভাবিনি ভালোবেসে ফেলবো। ভালোবাসলেও বলতে পারছিলাম না আমি। কিছু দিন আগে আমি ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে আপনার ডায়েরিটা পাই। যেখানে আপনার সব কিছু লেখা ছিলো। ডায়েরিটা পরে আমি দু’দিন শুধু কেদেঁছিলামই। তারিনের কথা সেখান থেকেই জানতে পারি।

ভালোবাসার মানুষের চাওয়া সবাই পূরণ করতে চায়, আমিও তার ব্যতিক্রম নয় । আমিও চেয়েছিলাম আপনার ফেমিলির কাছে আপনাকে ফিরিয়ে দিতে। তারা যেন আপনায় মেনে নেয়, সেই জন্য আমি একদিন ও বাড়িতে যাই। আমার পরিচয় দিয়ে ওদের অনেক রিকুয়েষ্ট করি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। উল্টো আমায় ভয় দেখায় এই ফ্ল্যাট নাকি ওদের, এই ফ্ল্যাটও নাকি নিয়ে যাবে।

তারপর আমি আশাহত হয়ে ফিরে আসি বাসায়। এর দুদিন পরই আপনার সৎ মা আমায় কল দেয় ওদের বাড়ি যাওয়ার জন্য। আমি খুশি হয়ে ওদের বাড়ি যায়। যাওয়ার পরই আপনার সৎ মা আর বাবা আমার সাথে তারিনের পরিচয় করিয়ে দেয় আমি হতবাক হয়ে যায়, কারণ উনি তো মারা গিয়েছিলো উনি কি ভাবে আসবে। তারপর ওরা আমায় বলে আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে তাহলে আপনার বাবা, সৎ মা আপনাকে ওদের কাছে রাখবে ওই বাড়িতে, আর তারিনকে বিয়ে করাবে আপনায়। তারিন বলে ও নাকি সেদিন মারা যায়নি হসপিটাল থেকে ভালো হয়ে দেশের বাহিরে চলে গিয়েছিলো।
আমি ওদের সাথে সাথে বলি আমি মরে গেলেও আপনাকে ডিভোর্স দেবো না।

আমি প্রচন্ডরকম হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসি আবার। ভেবেছিলাম এটা হয়তো তারিন নয়। আপনার সৎ মা হয়তো মিথ্যা বলছে তাই ঘরে এসে সব তন্ন তন্ন করে খুঁজছিলাম যদি উনার একটা ছবি পায় তারপর অবশেষে পেয়ে যায় আর মিলিয়ে দেখি ওটাই তারিন আপনার ভালোবাসা।

মন কে মানাতে পারছিলাম না কেন যেন আপনাকে হারানোর ভয় আমায় চেপে ধরছিলো। পরের দিন আবার কল দেয় আমায় ওদের সাথে দেখা করতে ওদের কাছে নাকি আমার একটি জিনিস আছে। ওটা নিয়ে আসতে। আমি ভাবতে থাকি কি এমন ওদের কাছে থাকতে পারে যেটা আমার! আবার ওদের বাসায় যাই, গিয়ে দেখি তারিনও আছে।

তারপর আপনার সৎ মা আমায় এমন একটি জিনিসের কথা বললো যার জন্য আমি আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বাধ্য হয়েছিলাম। ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয়েছি

রাযিন ভ্রু কুঁচকে মুখ শক্ত করে
‘ কি সেই জিনিস? আমাকে বলো

তীব্রতা রাযিনের দুহাত ধরে……..

চলবে………..

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভেবেছিলাম এই পর্বে গল্প শেষ হয়ে যাবে তবে শেষ হয়নি। আগামী পর্বে শেষ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। কেমন হয়েছে সবাই জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here