আনন্দ_অশ্রু পর্ব_৪

আনন্দ_অশ্রু
পর্ব_৪
#তাহসিনা_ইসলাম_অর্শা

রাযিন সেই বাড়ির দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে যায়, চোখে পানির আনাগোনা শুরু হয় তার। চিরচেনা সে বাড়ি। একি আছে তবে রঙ পাল্টে গেছে। কিন্তু বুকের বেগতিক ধুকপুক সেই একই রকম আছে আজো৷ বুকের ধুকধুক বেড়ে গেছে, আওয়াজ হচ্ছে ভীষণ সেখানে। ভিতরে উত্তাপ আগ্নেয়গিরির মতো ভয়ানক রুপ নিচ্ছে।
কিন্তু তীব্রতা? তীব্রতা কি করছে এখানে? অদ্ভুত অজানা শিহরণ জাগছে মনে। তীব্রতার কথা মাথা থেকে সরেই গিয়েছিলো রাযিনের।

কিন্তু রাযিন ভিতরে কি ভাবে যাবে? এই বাড়িতে থাকার জন্য কত আকুতি মিনতি করেছিলো রাযিন। কিন্তু তার সৎ মা আর জন্ম দাতা পিতা তা হতে দিলো না। এরপর আর কখনো পা রাখেনি এই বাড়িতে সে, কিন্তু আজ আবার এই বাড়ির সামনে এনে তাকে দাঁড় করিয়ে দিলো নিয়তি। এখন কি ভাবে যাবে সে এই বাড়িতে! কিন্তু তীব্রতা এই খানে কি করছে? ফোনে কি তাহলে সে এই বাড়ির কারো সাথেই কথা বলছিলো? কিন্তু কার সাথে বলছিলো কথা? আর এদের সাথে পরিচয়ই বা হলো কি ভাবে তীব্রতার৷ হাজার খানিক প্রশ্ন নিয়ে পা বাড়ালো রাযিন বাড়ির ভিতরের দিকে।

তীব্রতা বসে আছে ড্রয়িং রুমের সোফায়। বাড়ির কাজের লোক একজন এসে পানি দিয়ে গেছে তীব্রতাকে। তীব্রতা এক ঢোকে সবটুকু পানি খেয়ে নিয়ে তারিনের দিকে তাকালো। পাশেই বসে আছে রাযিনের বাবা আর সৎ মা।
সৎ মায়ের মুখে ভীষণ রকমের বিরক্তবোধ তীব্রতার চোখ এড়ালো না। রাযিনের সৎ মা বিরক্তি নিয়ে তীব্রতাকে উদ্দেশ্য করে
‘ এতোক্ষণ লাগে এই টুকু আসতে?

তীব্রতা ভদ্রতা বজায় রেখে
‘ আসলে আন্টি রাযিনের জ্বরটা অনেক বেশি উনাকে ঔষধ খাইয়ে ঘুমানোর অপেক্ষা করায় দেরি হয়ে গেছে একটু।

রাযিনের বাবা তীব্রতাকে নরম সুরেই
‘ রাযিন এখন ভালো আছে তো?

তীব্রতার অস্বস্তি হচ্ছে। একজন পিতা তার সন্তানকে এই ভাবে দূরে সরিয়ে কিভাবে রাখতে পারে? এতো অসুস্থতার কথা শুনে একবারো দেখতে গেলো না নিজের সন্তানকে! রাযিনের ডায়েরিতে যা লেখা ছিলো এদের তার থেকে আরো বেশি নির্মম লাগছে। তীব্রতা জোর করে কৃত্রিম হাসি দিয়ে
‘ জ্বী এখন একটু সুস্থ ।

রাযিনের সৎ মা মনে হচ্ছিলো শুধু ছটফট করছে কিছু বলতে । এতো ভনিতা না করে উনি তীব্রতাকে সরাসরি
‘ দেখো তুমি রাযিনকে ছেড়ে দিলে ও অনেক ভালো থাকবে। একটা বেটার লাইফ পাবে। আমি তোমায় গ্যারান্টি দিলাম আমি ওকে এর থেকে বেটার লাইফ দেবো। তাছাড়া ওর ভালোবাসা বেঁচে আছে, যার জন্য কিনা সে প্রায় পাগল হতে বসেছিলো। তুমিই ভাবো রাযিন যদি একবার জানতে পারে তারিন মরেনি বেঁচে আছে তাহলে সে কি করবে? সে তো এমনিতেও তোমায় ছেড়ে দেবে তার চেয়ে তুমি ওকে ছেড়ে দাও আমি ওকে আমাদের কাছে নিয়ে আসবো আর তারিনকেও ঘরের বউ করে আনবো। তুমিও মোটা অংকের টাকা পাবে। তাছাড়া সে একটা ফেমিলি পাবে। যেটা তুমি এসে প্রথমদিন আমায় বলেছিলে, রাযিনকে মেনে নিতে তার পরিবার হতে৷ তাই হবে। এবার তুমি বলো তুমি কি চাও।

তীব্রতা তাকিয়ে আছে ফ্লোরের দিকে। কেন যেন চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়ছে নিচে।

তীব্রতাকে নিচে তাকিয়ে থাকতে দেখে তারিন তীব্রতার দিকে তাকিয়ে
‘ তুমি যদি ওকে না ছাড়ো তাহলে আমি রাযিনের সামনে যাবো। আর আমি জানি রাযিন আমায় একবার পেলে আর ছাড়বে না কখনো। আমি শুধু কোন ঝামেলা চাচ্ছি না তাই তোমায় কষ্ট করে ওকে ছেড়ে দিতে বললাম। তোমার যত টাকা লাগবে আমিই দেবো। আর ওকে আমিই ফেমিলি দেবো, ওর আব্বু আম্মুর সাথে ও থাকতে পারবে। বাকিটা তুমি ভেবে নাও কি করবে।

তীব্রতা মাথা এবার উপরে তাকিয়ে
‘ ভালোবাসা টাকায় কেনা যায়না আপু। আপনি খুব বড় লোক হতে পারেন তাবে আমার টাকার প্রয়োজন নেই। আমার বাবার যথেষ্ট টাকা আছে তার মেয়েকে ভরণপোষণ দেওয়ার মতো। যাইহোক আমি এসব কথা বলতে এখানে আসিনি। আর আমাদের ডিলও এটা নিয়ে হয়নি। আমি যা চেয়েছি আমায় তাই দিতে হবে। আর আমি তা রাযিনকে কখনোও জানাবো না কথা দিলাম। আমি ডিভোর্স পেপার যখন রাযিনের কাছ থেকে সাইন করিয়ে আনবো আর তখনই আমি সাইন করবো। এক হাতে পেপার দেবো আরেক হাতে আপনারা আমার জিনিস আমায় দেবেন।

রাযিনের আব্বু কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাযিনের সৎ মা উনাকে থামিয়ে

‘ দেবো দেবো এই ভাবে বলার কি আছে। আমার কথা নড়চড় হয়না। তাছাড়া এতে আমাদের ক্ষতি নেই৷ কিন্তু রাযিনকে কোন মতেই এটা জানাবে না। আর ডিভোর্সের পর কোন রকম যোগাযোগ রাখবে না। তোমাদের ডিভোর্স হয়ে গেলেই তারিন রাযিনের সামনে যাবে। ওকে সামলে নেবে ওর চিন্তা তোমার আর করতে হবে না।

তীব্রতা তারিনের দিকে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আবার রাযিনের সৎ মায়ের দিকে তাকিয়ে
‘ এই আপু কি আদৌ রাযিনকে ভালোবাসতো? নাকি ভালোবাসার সংজ্ঞাই আমি জানি না। ভালোবাসা হয়তো এমনও হয়।

তীব্রতার কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে তারিন। তীব্রতাকে তারিন কিছু কটু কথা বলতে যাবে তার আগেই রাযিনের সৎ মা
‘ তোমার এতো সব ভাবতে হবে না, রাযিন ভালো থাকলেই তো হলো।

তীব্রতা উঠে দাঁড়ায় চোয়াল শক্ত করে হাত মুষ্টি করে শক্ত করে নিজের কাধে ঝুলানো ব্যাগটায় ধরে,
‘ উনি ভালো থাকবে উনার ভালোবাসার কাছে এটাই চাই৷ আর আমার চাওয়াও পূরণ হবে আর কি চাই বলুন। রাযিন একটু সুস্থ হলেই আমি উনাকে সাইন করিয়ে আমিও সাইন করে পেপার নিয়ে আসবো। এখন আসি আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে উনি একা বাসাতে।

তীব্রতা দরজার সামনে যেতেই পিছন থেকে রাযিনের আব্বু তীব্রতাকে
‘ রাযিনের খেয়াল রেখো। আর কোন সমস্যা হলে আমায় জানিয়ো।

তীব্রতা সাথে সাথে পিছনে ঘুরে
‘ কি হবে জানিয়ে? লাভ আছে কি জানিয়ে কোন? আমার তো মনে হয়না আপনি যেতে পারবেন। আমি খেয়াল রাখবো আসি।

অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে রাযিন উঠে গিয়েছে কিনা টেনশন করছে তীব্রতা। প্রিয় মানুষের সুস্থতা সব প্রিয় মানুষ গুলোরই প্রার্থনা কিন্তু কেন যেন তীব্রতা চাচ্ছে রাযিন আরো ক’টা দিন পর সুস্থ হোক যাতে আর কিছু মুহুর্ত অন্তত কাটানোর সময় পায় তীব্রতা।

কষ্ট হচ্ছে ভীষণ কিন্তু তীব্রতাই বা কি করবে? আর কোন পথ নেই যে এটা ছাড়া। আর রাযিন তার ভালোবাসার মানুষের সাথে ভালোই থাকবে।

ফ্ল্যাটে ঢুকতেই তীব্রতার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। বিস্মিত ভয় নিয়ে আরো সামনে যায় তীব্রতা। পুরো ঘরে সব উলোটপালোট হয়ে আছে। কোন কিছু আর তার নির্দিষ্ট জায়গায় নেই। তীব্রতার ভয় করছে এমন অবস্থা দেখে। রাযিনের কিছু হয়নি তো? কে বা এসব করেছে? তীব্রতা একটু সামনে যেতেই দেখে ডাইনিং টেবিলে বসে আছে রাযিন। হাতে ভরা পানির গ্লাস৷

তীব্রতা রাযিনের দিকে তাকিয়ে অবাক হচ্ছে এমন অবস্থা ওকে কখনো দেখেনি। চোখ ফোলে লালচে হয়ে আছে৷ তীব্রতা রাযিনের একটু কাছে যেতে যেতে
‘ রাযিন আপনি ঠিক আছেন?

রাযিন হাতে থাকা গ্লাস ছুড়ে মারে ফ্লোরে তীব্রতা চোখ বন্ধ করে ফেলে
‘ ডিভোর্সের বিনিময়ে কি চাস তুই ওদের কাছ থেকে? আর তুই কি ভেবেছিস তারিন যে বেঁচে আছে আমি জানি না? আমায় বল কি এমন চাস তুই আমার থেকে দামী তোর কাছে।

তীব্রতা জড়িয়ে ধরে রাযিনকে। রাযিনের মাথা তীব্রতার বুকে চেপে ধরে
‘ একটু শান্ত হোন প্লিজ………

চলবে………

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আন্তরিক ভাবে দুঃখিত দেরি হবার জন্য। সামনের পর্বেই গল্প শেষ করে দেবো ইনশাআল্লাহ। কেমন হয়েছে সবাই জানাবেন অনেক ক্লান্তি নিয়ে লিখেছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here