#আন্তঃনগরের_ভালবাসা
লেখকঃ আবির খান
পর্বঃ ০৬
পরদিন সকালে বেরিয়ে গেলাম চাকরির পত্রিকা আনতে। পাড়ার মোড়েই পত্রিকা বিক্রি করে। পেয়েও গেলাম চাকরির পত্রিকাটা। বাসায় এনে খুব মনোযোগ সহকারে চাকরি খুঁজতে থাকি৷ খুঁজতে খুঁজতে ৪/৫ বড়ো কোম্পানির চাকরি বিজ্ঞপ্তি পেলাম। একটা কোম্পানির কালই পরীক্ষা। অনলাইনে এপ্লাই করতে হবে৷ কিন্তু আমার তো কোন ফোনই নেই। মরিয়মকে ডাক দিলাম। ও ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো।
— বোন তোর ফোনটা একটু দে তো। একটা চাকরির জন্য এপ্লাই করবো।
~ ওমা ভাইয়া! তোমাকে আব্বু ফোন কিনে দেয় নি?
— আরে লাগবে না। এমনিই অনেক খরচ করেছেন আমার পিছনে।
~ কি যে বলো। এই নেও।
মরিয়ম ওর ফোনটা দিলে আমি অনলাইনে চাকরির জন্য এপ্লাই করি। আমার প্রতিটা রেজাল্ট ভালো থাকায় নিজের উপর একটা বিশ্বাস ছিল। কিন্তু কোন প্রস্তুতি ছিল না আমার। সেটার জন্যও একটু চিন্তা হচ্ছিলো। মরিয়মকে ফোন দিয়ে বললাম,
— অসংখ্য ধন্যবাদ। ভার্সিটি যাচ্ছিস?
~ হ্যাঁ ভাইয়া। তুমি যাবে আমার সাথে? আমার ফ্রেন্ডসদের সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিব নি। চলো।
— নারে আজ না৷ অন্য কোন দিন৷ কাল আমার পরীক্ষা। সেটার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে৷
হঠাৎই পিছন থেকে বাবা এসে আমার কাঁধে হাত রাখেন আর বলেন,
— এটা নে।
আমি তাকিয়ে দেখি লেটেস্ট আইফোন। আমি পুরো অবাক হয়ে যাই। আর বলি,
— এটা দিয়ে কি করবো বাবা?
— এখন আপাতত এটা চালা। আমি সন্ধ্যায় আসার সময় তোর জন্য আরেকটা নতুন ফোন নিয়ে আসবো নি।চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিবি না? অনলাইনে দেখ কি কি পড়া যায়৷ নে ধর৷
আমি না চাওয়া স্বত্ত্বেও ফোনটা নিলাম খুশি হয়ে। কারণ আমার সত্যিই দরকার ছিল ফোনটার এখন। কিন্তু বাবাকে বললাম,
— বাবা বেশি দামী ফোন কিনে দিবেন না৷ অল্প দামের নরমাল ফোন দিলেই হবে৷ অবশ্য আমার চাওয়াই ঠিক না।
— ধুর কি যে বলিস না। আমার ছেলেকে আমি একটা ফোন কিনে দিব না? এটা তো আমার অধিকার৷ তুই যখন ইনকাম করবি আমার মতো, তখন তুইও কিছু কিনে দিস আমাদের৷
— ইনশাআল্লাহ ইনশাআল্লাহ। আমি তো সেটাই চাই। দোয়া করবেন।
— আমাদের দোয়া তোর সাথে সবসময় আছে।
— ধন্যবাদ।
এরপর চাকরি সংক্রান্ত অনলাইনে অনেক কিছু দেখা শুরু করলাম। এর আগে কখনো চাকরির জন্য কোথাও এপ্লাই করিনি। জানি না কি হবে। তবে বাবা অনেক কিছু বললেন৷ তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। অনেক কিছুই জানলাম। পরদিন সকাল ১০ টায় রাজশাহীর একটা সরকারি স্কুলেই পরীক্ষা ছিল। বাবা আমাকে গাড়িতে দিয়ে আসলেন। এবং বললেন গাড়ি এখানেই থাকবে। আসার সময় যেন গাড়িতেই আসি। আমি আচ্ছা বলে পরীক্ষা দিতে চলে যাই। হলে গিয়ে নিজের সিটে চুপচাপ বসে পড়ি। আমার ঠিক পাশেই একজন মেয়ে এসে বসেন। আমার বয়সীই হবে হয়তো। তিনি আমাকে কিছুক্ষণ দেখে বলেন,
~ এক্সকিউজ মি ভাইয়া কিছু মনে না করলে একটা কথা ছিল। জিজ্ঞেস করি?
— জি অবশ্যই৷
~ আপনার ডান হাতটা এভাবে আছে কেন? আপনি বাম হাত দিয়ে আবার কলম ধরে আছেন। কোন সমস্যা?
আমি একটু হাসলাম। হেসে বললাম,
— জি, আমার ডান হাতটা প্যারালাইজড।
আমার কথা শোনা মাত্রই মেয়েটার মুখের অবস্থাটা মুহূর্তেই পরিবর্তন হয়ে যায়৷ সে আমার কাছ থেকে একটু দূরে সরে বসেন৷ মনে হচ্ছিল আমি কোন ছোঁয়াচে রোগ নিয়ে বসেছি। মেয়েটা ভুল করেও আর আমার দিকে তাকালো না৷ আমি কিঞ্চিৎ হাসলাম। আর মনে মনে ভাবলাম, দুনিয়াতে এখনো কিছু অবুঝ মানুষ বেঁচে আছে৷ যারা অন্যকে ছোট করে দেখে। তাদের ফিলিংসটা বুঝে না। যাই হোক পরীক্ষা শুরু হলে স্যার আমার ব্যাপারটা বুঝে আমাকে অনেক সাহায্য করেন৷ যেটা খুব ভালো লেগেছিল। উনার জন্য পরীক্ষাটা ভালো হয়। স্যারকে ধন্যবাদ জানিয়ে হল ত্যাক করি। সত্যিই পরীক্ষার আগের হালকা প্রস্তুতিটা অনেক কাজে দিয়েছে। সবগুলো প্রশ্নের উত্তরই সঠিক ভাবে দিলাম। হয়তো একটা বা দুটো উত্তর ভুল হতে পারে। তবে পরীক্ষা মাশাল্লাহ অনেক ভালো হয়েছে। অবশ্য পরীক্ষার মাঝে অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষগুলো তাদের আচরণে আমার অসহায়ত্বকে মনে করিয়ে দিলেও আমার মনোবল ভাঙতে পারে নি। আমার দৃঢ় ইচ্ছা আমাকে দুর্বল করে নি। এভাবে আমি গুণে গুণে মোট পাঁচটা কোম্পানিতে পরীক্ষা দি। প্রতিটি পরীক্ষায়ই অনেক ধরনের এক্সপেরিয়ান্স হয়৷ সবগুলোই নেগেটিভ এক্সপেরিয়ান্স ছিল। তবে আমি ভেঙে পড়িনি। এখন শুধু অপেক্ষা করছিলাম রেজাল্টের।
অন্যদিকে,
মরিয়ম আর জান্নাত একসাথে ক্যাম্পাসে বসে আছে। মরিয়ম জান্নাতকে বলে,
~ কিরে তুই সেদিন বললি বাসায় আসবি কিন্তু আর তো আসলিই না। পুরো একমাস হয়ে গেল।
~ আসলেই তো। ভুলেই গিয়েছিলাম রে।
~ কেমন বেস্ট ফ্রেন্ড তুই আমার বাসায় আসার কথাই ভুলে গিয়েছিস। যাহ তোর সাথে আর কথাই নেই।
~ আরে আরে বান্ধপীটা আমার রাগ করে না। যা কালকে তো শুক্রবার? আমি সকাল সকাল এসে পড়বো। তোর নতুন ভাইটাকেও তো দেখা হলো না এখনো। কেমন আছেন সে? আর তোরা কিভাবে একটা অপরিচিত ছেলের সাথে মিলেমিশে আছিস? সত্যিই আমি বুঝতে পারছি না৷ অবাক লাগে আমার কাছে।
~ এইইই আমার ভাইয়ার নামে উলটা পালটা বলবি না খবরদার। ভাইয়া অসম্ভব ভালো। মানে বলার বাইরে। আমার চেয়ে বাবা-মা ভাইয়াকে বেশি আদর করে ভালবাসে তাও আমার মন খারাপ হয় না। জানিস কেন?
~ কেন?
~ ভাইয়াটার মনে অনেক কষ্ট। আমাদের বুঝতে দেয় না৷ কিন্তু আমরা বুঝি। একবার ভাব তো, তোর একটা হাত কাজ করে না বলে তোর আপন পরিবারের লোক যদি তোকে ঘরছাড়া করতো তখন তোর কেমন লাগতো?
জান্নাত মরিয়মের কথা শুনে ভাবনায় পড়ে যায়। ও তো ভেবেই অনেক কষ্ট পাচ্ছিল। আর সেখানে মরিয়মের ভাইয়ের সাথে এমনটা হয়েছে। মরিয়ম আবার বলে,
~ জানিস ভাইয়া আমাকে অনেক ভালবাসে। আমাকে তার কষ্ট গুলো এসে বলে। বাবার এতকিছু থাকতেও সে নিজের যোগ্যতায় চাকরি খুঁজছে। সেখানে গিয়েও অনেক মানুষ নাকি তাকে কটূক্তি করেছে। তাকে হেও করেছে। আমার শুনেই কান্না পাচ্ছিলো। ভাইয়া যে কিভাবে এসব মেনে নেয় আমি জানি না। আমার সামনে আমার ভাইয়াকে কেউ কিছু বললে আমি তাকে মেরেই ফেলবো।
~ আচ্ছা শান্ত হ। তোর কথা শুনে তোর ভাইটাকে এবার আমার সত্যিই সত্যিই দেখতে ইচ্ছা করছে অনেক।
~ কাল চলে আসিস। আমার ভাইটা এত্তো হ্যান্ডসাম আর ভালো, দেখিস তুই প্রথম দেখাই প্রেমে পড়ে যাবি। হিহি।
~ হ্যাঁ তোর মাথা। চুপ করতো। ভালো কথা মনে করেছিস রে। জানিস আমি একটা বিষয় খেয়াল করেছি।
~ কি দোস্ত?
~ আমাদের ক্লাসের নিলয় আছে না?
~ হ্যাঁ। ও আবার কি করেছে?
~ ও মনে হয় আমাকে প্রপোজ করতে চায়। আমাকে পছন্দ করে মেইবি। কয়েকদিন বলার চেষ্টাও করেছে বেচারা। কিন্তু পারে নি। হাহা।
মরিয়ম গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
~ তোর ওকে ভালো লাগে?
~ জানি না ঠিক। কিন্তু আজকাল ও যে আমাকে অ্যাটেনশন গুলো দিচ্ছে আমার তো মজাই লাগছে। দেখি কি হয়৷
~ চল বাসায় যাই। ভালো লাগছে না আর।
~ কিরে কি হলো তোর?
~ কিছু না চল।
~ আরে বল না৷
~ নিলয় ছেলেটাকে আমার ভালো লাগে নি। সেদিন দেখেছি ওর ফ্রেন্ডসদের নিয়ে সিগারেট খেতে।
~ বলিস কি? কিন্তু সিগারেট খাওয়া আজকাল কমন হয়ে গিয়েছে।
~ আচ্ছা বুঝছি তো তোর ওকে ভালো লেগেছে৷ যা না ওর সাথে গিয়ে রিলেশন কর। ওই ফালতু ছেলের চেয়ে আমার ভাইয়া অনেক গুন ভালো।
~ আরে আরে রাগ করছিস কেন? আমি কি বলেছি নাকি যে আমি ওর সাথে রিলেশন করবো। জাস্ট একটু সামান্য ভালো লাগে। এই আর কি।
~ ভালো হইছে। এবার চল বাসায় যাবো।
~ ভাইরে ভাই তোর যে কি রাগ।
এরপর জান্নাত আর মরিয়ম যে যার বাসায় চলে যায়।
আজ শুক্রবার। সকালে বাবার সাথে নামাজ পড়ে এসে আবার ঘুম দিয়েছিলাম। বোন এসে ডেকে উঠিয়েছে। উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেলাম। নাস্তা খেতে খেতে বাবা জিজ্ঞেস করলেন,
— রেজাল্ট দিবে কবে আবির?
— এইতো আর দু তিন দিন পর৷
পাশ থেকে মা বলে উঠলেন,
~ চিন্তা করিস না, আমার মন বলছে তুই সব জায়গায়ই চান্স পাবি৷
— ইনশাআল্লাহ। একটা ভালো কোম্পানিতে চাকরি পেলেই হয়।
~ মা আজকে কিন্তু জান্নাত আসবে একটু পর। ভালো করে রান্না করো।
~ কি বলিস জান্নাত আসবে আজকে?
~ হ্যাঁ।
আমি বোকার মতো তাকিয়ে ছিলাম। মা আমার অবস্থা বুঝে বললেন,
~ জানিস আবির জান্নাত খুব ভারী মিষ্টি একটা মেয়ে। মরিয়মের বেস্ট ফ্রেন্ড। আমাদের বাসায় প্রায়ই আসে। মেয়েটার বাবা-মাও অনেক ভালো। আমার খুব ভালো লাগে মেয়েটাকে।
— হুম শিকদার ভাই মানুষটা একদম মনের মানুষ। ওনার জন্য কত মানুষের যে উপকার হয়েছে বলার বাইরে।
~ মরিয়ম জান্নাত আসলে তোর ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিস কিন্তু।
মায়ের কথা শুনে ও হাসতে হাসতে বলে,
~ হাহা। ও আবির ভাইয়াকেই দেখতে আসছে।
সবাই হেসে দেয়৷ আমি চুপচাপ খাওয়া দাওয়া করি। আমার এসবে একদম ইন্টারেস্ট নেই। আমি খাওয়া দাওয়া করে আমার রুমে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসি। বাবা সেদিন ফোনের সাথে একটা ল্যাপটপও কিনে দিয়েছেন। আমি ত নিতেই চাইনি৷ তাও তিনি জোর করেই দিয়েছেন। আমি ল্যাপটপে বিভিন্ন চাকরি, বিজনেস রিলেটেড আর্টিকেল, ভিডিও, ডকুমেন্টস ইত্যাদি দেখছিলাম মন দিয়ে। এতই ডুবে ছিলাম যে দেখতে দেখতে কখন যেন অনেকগুলো সময় পাড় হয়ে যায়। ঘড়িতে সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাজে। আবার জুমার নামাজে যেতে হবে বলে ল্যাপটপটা অফ করি। যেই অফ করে উঠে পিছনে ঘুরে তাকাই আমি পুরো থ। একটা বেশ সুন্দরী মেয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকেই দেখছে। আমি তাকে আমার রুমে দেখে পুরো হকচকিয়ে যাই৷ কে এই মেয়ে? আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটা বলে উঠে….
চলবে…?
সবার ভালো সাড়া চাই তাহলে খুব তাড়াতাড়ি পরবর্তী পর্ব দেওয়া হবে। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। আগের এবং পরবর্তী পর্বের লিংক কমেন্ট দেওয়া হবে। ধন্যবাদ।