আপনিময় তুমি সিজন1 পর্ব-২১

0
2321

#আপনিময়💓তুমি [ An unexpected crazy love ]
#Written By: Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr [ Mêhèr ]
Part: 21……..

.
.
.
রাইসার মুখে এই কথা শুনে আনহার মেজাজটাই বিগড়ে গেল… ও গিয়েই রাইসার গালে খুব জোরে কষে একটা থাপ্পড় মারল। রাইসা ব্যলেন্স করতে না পেরে টেবিলের উপর গিয়ে পরে যায় যাতে ওর ঠোঁটটা কেটে যায়। ইহান দ্রুত গিয়ে রাইসাকে তোলে আর রাইসা ইহানকে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয়……

এইটা দেখে আনহার রাগ আরো বেড়ে যায়…. ও রাইসাকে ইহানের বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে আরেকটা থাপ্পড় মারতেই ইহান আনহার হাত ধরে নেয়….

আনহা: কষ্ট লাগছে নাকি আপনার। এতটা ভালোবাসা রাইসার জন্য….

এইটা শুনে ইহান আর নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারে না। অনেক কষ্টে চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে…..

ইহান: রাইসা এখান থেকে যা…..

রাইসা: কিন্তু…..

ইহান: যাহ এখান থেকে…… [ খুব জোরে চিল্লিয়ে ]

রাইসা আর কথা না বলে বেড়িয়ে যায়…..

আনহা: ওকে বাইরে পাঠানোর কি দরকার ছিল। আমাকে বলতি আমি চলে যেতাম…..

[ বলে বেড়িয়ে যেতে নেয় তখনি ইহান আনহাকে টেনে বেডের উপর ফেলে দরজা বন্ধ করে দেয় ]

ইহান: এতক্ষন কি বললেন আপনি….. [ রাগে ইহানের গা কাপছে ]

আনহা: বুঝতে পারছিস না …. তুই আর রাইসা…. [ বেড থেকে উঠতে উঠতে ]

কিছু বলার আগেই ইহান আনহাকে থাপ্পড় মারতে ধরে। এইটা দেখে আনহা নিজের হাত দিয়ে মুখ ঢেকে চোখ বন্ধ করে নেয়। কিন্তু ইহান থাপ্পড় মারতে গিয়েও মারে না। ইহান আবার আনহাকে বেডে শুইয়ে ওর উপর আধো শোয়া হয়ে খুব জোরে আনহার গাল চেপে ধরে…..

ইহান: যদি রাইসাকে ভালোবাসতাম তাহলে বছর ধরে আপনার জন্য মরতাম না। যদি রাইসাকে চাইতাম তাহলে এত কিছু হওয়ার পর আপনাকে বিয়ে করতাম না। ওকে যদি ভালোই বাসতাম তাহলে আপনি আমার সাথে এত কিছু করার পর আপনাকে সহ্য করতাম না ছুড়ে ফেলে দিতাম…….

[ ইহান এতটাই জোরে আনহার গাল চেপে ধরেছে মনে হচ্ছে গাল দাতের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে। অসম্ভব ব্যাথা লাগছে আনহার গালে…….

আনহা: তাতো দেখতেই পাচ্ছি। কতটা ভালোবাসা আমার জন্য আর ওই রাইসার জন্য…..

ইহান: হুমম ভালোবাসি খুব ভালোবাসি। তবে সেটা ওকে না ওর মনটাকে যেটা সবসময় আমার জন্য ভাবে। You know what anha…. ওর ভালোবাসায় আর কিছু থাক বা না থাক আমার জন্য কেয়ার আছে যা আপনার মধ্যে আমি ওয়াইফ হিসেবে দেখিনি। আমি ভালোবেসেছি তাই বুঝি কতটা কষ্ট হয় যখন ভালোবাসার মানুষটা অন্য কারো কাছে থাকে তখন কেমন লাগে…. আর আমি ওর ভালোবাসাকে ভালোবাসি। কারন সবাই আপনার মত হার্টলেস হয় না। নিজের জেদ রাখার জন্য যেকিনা নিজেকেও শেষ করতে পারে…..

আনহা: ওওও তাহলে আর কি??? যে আপনাকে এতটা ভালোবাসে তার ভালোবাসার মুল্য দিয়ে তার কাছেই চলে যান….. আমার কাছে থাকতে হবে না। আমি তো বলিনি আমার কাছে থেকে আপনার কেয়ার করা মানুষকে কষ্ট দিতে….

ইহান: আপনি কি নিজের স্বভাব কোনোদিন চেঞ্জ করবেন না। এতটুকু কি খারাপ লাগে না আপনার…….

আনহা: নাহহহ লাগে না…..

ইহান আনহার থেকে উঠে খুব জোরে দেয়ালে কয়েকটা ঘুশি মারে….. তারপর দেয়ালে হাত দিয়ে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে…… ইহান জোরে জোরে বড় বড় নিশ্বাস নিতে থাকে….. আনহা উঠে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে চায়…..…..

ইহান: আনহা আমার কথা শুনুন… [ শান্ত গলায় দেয়ালে বামহাত ভর দিয়ে আর ডানহাতের দুই আঙুল দিয়ে নিজের কপাল স্লাইড করে ]

আনহা: আমার আর কিছু শোনার নেই…. [ বলে বেড়িয়ে যায় ]

ইহান: আনহা….. [ কিন্তু আনহা শুনল না। তাই রেগে পাশে থাকা টেবিলটা লাথি দিয়ে ফেলে দেয় ]

,
,
,
,
,
,
,
ইহান আনহার পিছনে ওর কাছে যেতেই দেখে বাইরে দাঁড়িয়ে রাইসা কাদছে আর ওর ঠোঁটে রক্ত জমে আছে…… ও রাইসার কাছে যায়…….

রাইসা: কেন এসেছ তুমি?? চলে যাও। কোনো কথা বলতে চাই না।

ইহান আর কিছু না বলে রাইসাকে জড়িয়ে ধরে…..

ইহান: সরি। আনহা এমন কিছু করবে আমি ভাবতে পারিনি….

রাইসা: ছাড় আমাকে তোমার বউ দেখলে আবার…. [ বলেই হু হু করে কেদে উঠে ]

ইহান: যে দেখার দেখুক তাতে আমার কিছু আসে যায় না। [ তারপর ইহান জোর করে রুমে নিয়ে যায়। আর ওর ঠোঁটে মলম লাগিয়ে দেয় ]

রাইসা: ও কি তোমায় এতটুকু ভালোবাসেনা ইহান…..

এইটা শুনে ইহান থমকে যায়…. শুধু একটা মুচকি হাসি দেয়।

রাইসা: যে মেয়ে তোমাকে এতটুকু বিশ্বাস আর ভালো না বাসে তার সাথে কিভাবে থাকবে তুমি……

ইহান:…….

রাইসা: তুমি কোনোদিন কি ওর সাথে সুখি হতে পারবে??? তুমি নিজের হাতে নিজের সবটা শেষ করে দিয়েছ ইহান…..

এইটা শুনে ইহান রাইসাকে জড়িয়ে ধরে।

ইহান: ভালোবাসি ওনাকে। বড্ড বেশি তাইত চেয়েও কিছু করতে পারছি না।

রাইসা: তাইত দেখছি না গিলতে পারছ না উগড়াতে….

ইহান: তুই শুয়ে পর….

রাইসা: আবার ওই বাজে মেয়েটার কাছে যাচ্ছ….

ইহান: তুই চুপচাপ ঘুমা… [ তারপর রাইসার গায়ে কাথা টেনে লাইট বন্ধ করে চলে আসে ]

,
,
,
,

,
,
,
বাইরে এসে ইহানের মাথাটা আরো গরম হয়ে যায়…. আনহা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।

ইহান: আপনি এখানে কি করছেন….

আনহা: আমি…..

তখনি ইহান আনহাকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে যায়।

ইহান: আস্তে কথা বলুন রাইসা ঘুমচ্ছে…..

আনহা: এত কিসের রাইসা রাইসা তোর মুখে…. এত কিসের ভালোবাসা ওর প্রতি….[ ছলো ছলো চোখে ]

ইহান খুব জোরে আনহাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।

ইহান: সমস্যা কি আপনার….??? কি চাই আপনার??? আপনি তো বলেছেন আমাকে ভালোবাসেন না। থাকতে চান না আমার সাথে। আমি কোনো মেয়ের কাছে গেলেও কিছু আসে যায় না আপনার…. তাহলে এখন কেন এমন ভাবে রিয়েক্ট করছেন….

আনহা:……..

ইহান: আপনি যে কি চান আপনি তাই জানেন না….. আপনার তো কোনোকিছু যায় আসে না তাই আমি অন্য কোনো মেয়ের কাছে গেলে আপনার সমস্যা হওয়ার কথা না। শুধু যাবই না দরকার হলে আমি অন্য মেয়েকে বিয়ে করে আপনাকে….

আর কিছু বলার আগেই আনহা ইহানের গলা জড়িয়ে ধরে নিজের ঠোঁট দুটো ইহানের ঠোঁটে মিশিয়ে দেয়। এমন কিছু ইহান হয়ত স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। ওর চোখ গুলো এতটাই বড় হয়ে গেছে যেন খুলে আসবে…….

কিছুক্ষন পর আনহা ইহানের থেকে সরে আসে। আর ইহান পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে…. ওর মাথা কাজ করছে না। এখনো ঘোরের মাঝে আছে। কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া কাহিনীটা মনে পরতেই ইহানের মাথা হ্যাং করছে….. ইহান বার বার নিজের ঠোঁটে হাত দিচ্ছে……

ইহান: আনহা আপনি….

আনহা আর কিছু না বলেই একটা ভাব নিয়ে চলে যেতে চাইল… কিন্তু তার আগেই ইহান আনহার হাতটা ধরে ফেলে…. তারপর আনহাকে টেনে নিজের কাছে আনে……

ইহান: একটু আগে ওটা কি ছিল???

আনহা:……. 😡 [ নিচের দিকে তাকিয়ে রেগে ]

ইহান: কিহল…

আনহা ইহানের হাতটাকে ছিটকে ফেলে দিয়ে বিছানায় শুয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরে ওপাশ ফিরে…. আর ইহানের সবটা মাথার উপর দিয়ে যায়…… ইহান গিয়ে সোফার উপর শুয়ে পরে। আর বার বার আনহার দিকে তাকায়……
,
,
,
,
,
,
,

,,
,

,
,সকালে ঘুম থেকে ইহান উঠে দেখে আনহা অনেক আগেই উঠে গেছে। ইহান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়…. তারপর খাবার টেবিলে যায়। দেখে আনহা নিজেই সব খাবার বানিয়ে সার্ভ করছে। আর রাইসা টেবিলে বসে পেপার পরছে…… ইহান কোনো কথা না বলে চুপচাপ টেবিলে বসে পরে…… আর আনহা চুপচাপ ইহানকে খাবার বেড়ে দেয়। আনহার নিরবতা অদ্ভুত লাগছে ইহানের কাছে। তারপর ও খেয়ে বেড়িয়ে যায়…….
,
,

,
,
কিছুক্ষন পর রাইসাও বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়…..

আনহা: কোথায় যাচ্ছ…???

রাইসা: তার কৈফিয়ত তোমাকে দিতে বাধ্য নই আমি….

আনহা: ইহানের কাছে তাইত…..

রাইসা: হুমম তাই…. এতে তোমার কিছু বলার আছে…..

আনহা: তুমি ভুলে যেও না ইহান আমার হাসবেন্ড….. 😡

রাইসা: ওও এখন মনে পড়ল ইহান তোমার হাসবেন্ড এতদিন মনে ছিল না। 😡

আনহা: একটাও বাজে কথা বলবে না…

রাইসা: বাজে কথা কি??? আমি ইহানকে যেমন ভালোবাসি ইহানো আমাকে ভালোবাসে বুঝলে নাহলে কাল আমাকে মারার জন্য তোমাকে মারতে যেত না……

আনহা: এই মেয়ে বাজে কথা বন্ধ করো। ইহান আমাকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের কথা ভাবতেও পারে না। ও শুধু আমাকে ভালোবাসে।।

রাইসা: কেন ভাবতে পারে না??? কি দিয়েছ তুমি ওকে। কতগুলো কষ্ট, ব্যাথা আর অপমান ছাড়া। কোনো ছেলে যদি তার ওয়াইফের থেকে অবহেলা পায় তাহলে সে অন্য মেয়ের প্রতি আকর্ষিত হতে কতখন….

আনহা: ইহান এরকম নয়….

রাইসা: তুমি কিভাবে বলতে পারো….

আনহা: আমি ওকে খুব ভালো জানি….

রাইসা: ভুল জানো…. যদি জানতে তাহলে এমন করতে না। আর একটা কথা ইহানকে আমি তোমার থেকে আর কষ্ট পেতে দেব না।

আনহা: মানে….

রাইসা: সেইটা পরে দেখতে পাবে…. [ বলে বেড়িয়ে যায় ]

,
,
,
,

,,

,
,
রাইসা বেড়িয়ে যায় আর আনহা ওখানেই বসে পরে….. রাইসা ইহানের কাছে যায়…..

ইহান: তুই এখানে….???

রাইসা: আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই….

ইহান: বল…. [ ফাইল দেখতে দেখতে ]

রাইসা:………. [ কিছু বলে ]

ইহান: What… 😡😡😡 তুই কি পাগল হয়ে গেছিস….??

রাইসা: হুমম…. বাকিটা তোমার ডিসিশন। তুমি যদি আমার প্রস্তাবে রাজি না হয় তাহলে আনহা সবটা জেনে যাব। মানে আমি বাধ্য হয়ে আনহাকে সবটা জানিয়ে দেব…..

ইহান: তুই এটা করতে পারিস না রাইসা….

রাইসা: আমি এটাই করব… [ ইহানের গলা জড়িয়ে ধরে ]

ইহান: রাইসা তুই…….

রাইসা: আমার প্রস্তাবে রাজি না হলে আনহার যে তোমাকে বিশ্বাস করে না তাও…. Go gua Gone হয়ে যাবে….

ইহান:……..

রাইসা: এবার বল তুমি রাজি কিনা।

ইহান: বিয়ে কোনো ছেলে খেলা নাকি। আমি তোকে বিয়ে করার কথা বললে সবাই মেনে মেবে….

রাইসা: সবাই নাচবে….

ইহান: আর আনহার সাথে তো আমার ডিবোস হয়নি তাহলে???

রাইসা: তুমি কি বাচ্চা নাকি।

ইহান: মানে….

রাইসা: আজব বাংলাদেশের ছেলেরা কি দুই বিয়ে করে না। নাকি তাদের ২টো বউ নেই। একটা কথা কি আমাকে বিয়ে করতে রাজি না হলে এবার তোমাকে আনহা নিজেই তোকে ছেড়ে দেবে বাকিটা তোমার উপর…. আর আমাকে বিয়ে করলেও তো আনহা তোমার বউ থাকবে । মানে…..

ইহান:…….

রাইসা: এখন ডিসিশন কি???

ইহান: আমি রাজি…….,

রাইসা: এইনা হলে আমার….. [ চোখ মেরে ] যাই হোক চলো….

ইহান: চলো কই…..

রাইসা: বাসায়… বিয়ের খবরটা সবাইকে দিতে হবে না।

ইহান: তুই যা।

রাইসা: ওকে😘😘😘

,
,
,
,
,
,
,

,
,,
আনহা রুমে ছিল চেচামেচি শুনে বাইরে আসে…..

আনহা: কি হচ্ছে এসব…??? এত কিছু কেন??

রাইসা: বিয়ে বাড়ি বলে কথা একটু তো সাজ সজ্জা দরকার। এমনি এমনি কি বিয়ে করব নাকি….

আনহা: বিয়ে করবে মানে.।।।

রাইসা: ও তোমাকে তো বলাই হয়নি। এ বাড়িতে বিয়ে হবে….

আনহা: বিয়ে হবে মানে কার….???

রাইসা: আমার আর ইহানের…. 😘😘😘

আনহা: What??? কি বাজে কথা বলছ??? আমি ইহানের ওয়াইফ….. …

রাইসা: So what….??? আমি ইহানের মুখে যতদুর শুনেছি তুমি ইহানের সাথে থাকতে চাও না। তাই আমার আর ইহানের বিয়েতে সবচেয়ে বেশি লাভ তোমার। তুমি ইচ্ছে করলে তখন চলে যাবে…. 😘😘😘

আনহা: ইহান কি জানে এসব.……

রাইসা: তুমিও না ও যদি নাই জানে তাহলে বিয়েটা কিভাবে হবে। বর ছাড়া বিয়ে হয়……… [ বলে চলে গেল ]

আর আনহা ওখানেই ধপ করে বসে পড়ল….
,
,
,
,
,

,
,
,
,
[ বাকিটা পরের পর্বে জানবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here