#আমার_গল্পে_তুমি
//পর্ব-১৬//
#সাদিয়া
রৌদ্রজ্জ্বল দুপুর। রোদ ঝলমল করলেও তাতে সেই তেজ নেই। ঋতুর হিসেবে শীত চলে গিয়ে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন ঘটলেও শীত যেন একেবারে যেতে চাচ্ছে না।
জোহরের নামাজের পরপরই সারা দের বাসার উদ্দেশ্য যাওয়া হবে। এখন সবাই তৈরি হতে ব্যস্ত। আজকে সাদিয়া নিজেকে শুভ্র রঙে সাজিয়েছে। চোখে হালকা কাজল আর হিজাব। তৈরি হয়ে রুম থেকে বেরুতেই সাদিয়ার চোখ যায় সিঙ্গেল সোফায় বসে থাকা আরনাফের দিকে। আরনাফও আজে শুভ্র রঙের পোশাক পরিধান করেছে।
সাদিয়া অদ্ভুত দৃষ্টিতে আরনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। আজকে যেনো সাদিয়া কাছে আরনাফকে অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা অন্যরকম লাগছে।
আদিবা তৈরি হয়ে বেশ কিছুক্ষণ যাবত সাদিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে। সাদিয়ার সেদিকে কোনো খেয়াল নেয়। সে তো এখন আরনাফকে দেখায় মত্ত!
—নষ্ট চোখওয়ালা স্যারকে আজকে এমন আলাদা আলাদা লাগছে কেন? এমন তো আগে লাগেনি! আজকে কত্তো কিউট লাগছে। আবার হাসছেও। ইশ তার হাসিটা আজকে হঠাৎ করে এতো মোহনীয় কেন হয়ে গেলো? আগে তো এমন ছিলো না! আজকে কি হলো ব্যাটার? উমম কোনো ঘাপলা আছে!
—সাদিইইই!
আদিবার চিৎকারে সাদিয়া নিজের ভাবনার দোকন ও আরনাফকে দেখা বন্ধ করে আদিবার দিকে তাকায়।
—কোন ধ্যানে ছিলি তুই? এতোক্ষণ যাবত ডেকে যাচ্ছি তোর কোনো হেলদোল নেই।
কথাগুলো বলে আদিবা সাদিয়ার দিকে সন্দেহ প্রবণ দৃষ্টি প্রয়োগ করলো। সাদিয়া আদিবার এমন দৃষ্টিতে ভরকে গেলো। সে আমতা আমতা করে বললো,
—আ..আমায় ডাকছিস ক..কেন?
আদিবা মুচকি হেঁসে বললো,
—কিছুনা চল।
সাদিয়া আদিবার এই হাসির মনে বুঝলো না।সে কিছু না বলে আদিবার পিছন পিছন চললো।
.
ঘন্টাখানেক পর সকলে সারাদের বাড়িতে পৌছায়। তাদের গেইট আটকানো হলে তারা দশ হাজার টাকার বিনিময়ে ভিতরে যেতে সক্ষম হয়। দশ হাজারে কাজ হতো না যদি না কন্যা পক্ষের মেয়ে গ্যাংয়ের লিডার আরনাফকে দেখে ফিদা না হতো! সায়েবার যেন আরনাফের উপর থেকে দৃষ্টি সরছেন না। সে এক মনে আরনাফের দিকে তাকিয়ে আছে।
আদিবার ডান হাতের অবস্থা খারাপ। তার হাতের ক্ষতস্থান থেকে চুয়ে চুয়ে রক্ত ঝড়ছে। আদিবা কটমট করে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আর ওই দিকে বেচারি সাদিয়া অপরাধীর মতো তাকিয়ে আছে আদিবার দিকে।
—না তুই বল আমাকে! আজকে তুই আমাকে বলবি তোর সমস্যাটা কোথায়? কিসের এতো দুশমনি ছিলো তোর আমার হাতের সাথে? ইশশশ আমার নিরিহ হাতটার কি অবস্থা করেছিস তুই?
—আ..আ’ম সরি আদিবা। আমি খেয়াল করি আসলে।
—না আপনি কেন খেয়াল করবেন? করবেন না তো আপনি খেয়াল। আপনি তো এখন অন্য কারো খেয়ালে মত্ত। আসলে কি বলতো তোর কোনো দোষ নেই। এই সময় এমন হয়। এটা স্বাভাবিক।
আদিবার কথায় সাদিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—এই সময়ে মানে?
—মানে ওই যে প্রেমে পড়লে।
আদিবার কথায় সাদিয়া যেন অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলো।
—প্রেমে পড়লে মানে? কি যা-তা বলছিস তুই?
—ওই দেখ সাদি সায়েবা কিভাবে আরনাফ স্যারের সাথে চিপকে আছে!
—কোথায় কোথায়?
সাদিয়ার এমন ব্যাবহারে আদিবা শব্দ করে হেঁসে উঠে।
—তুই গেছিস সাদি! তুই গেছিস!
আদিবা হাসতে হাসতে বউ দেখতে চলে যায়। সাদিয়া আদিবার যাওয়ার দিকে বোকা চোখে তাকিয়ে আছে। সে আদিবার কথার আগা গোড়া কিছুই বোঝে নি।
আচমকা সাদিয়ার চোখ গেলো অদূরে বসে থাকা সায়েবার দিকে। সে নিজের মোবাইলে আরনাফের ছবি তোলার চেষ্টা করছে। এটা দেখে সাদিয়ার রাগ যেন আকাশচুম্বী! রাগে তার পুরো শরীর কাঁপছে। হঠাৎ সাদিয়ার খেয়াল হলো সে অযথাই রাগ করছে।
—অদ্ভুত আমি কেন রেগে যাচ্ছি? আমার তো রেগে যাওয়ার কথা না। সায়েবা স্যারের ছবি তুলছে তাতে আমার কি? আমি এতো রিয়েক্ট কেন করছি? আমার তো কিছু না এতে। তাহলে আমি রাগছি কেন? উফফ কি হচ্ছে আমার আমার সাথে। আমি এতো উইয়ার্ড বিহেভিয়ার করছি কেন?
সাদিয়ার চোখ আবারো সায়েবার দিকে গেলো। সায়েবার দিকে তাকাতে আবারো সাদিয়ার রাগ মাথা চড়া দিয়ে উঠলো। সাদিয়া ভীষণ অবাকও হলো।
—ন..না এটা হতে পারে না। আমি এমনটা করতে পারি না।
সাদিয়া তড়িঘড়ি করে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে সে স্বাভাবিক ভাবে বেরিয়ে আসলো। বেরিয়ে আসতেই সে আরনাফের সামনে পরে। সাদিয়াকে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে দেখে আরনাফ চিন্তিত হয়ে ওয়াশরুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো।
—কি হয়েছে ডাক্তার সাহেবা? আর ইউ ওকে?
সাদিয়া কোনো কথা না বলে চুপ রইলো। আরনাফ আবার জিজ্ঞেস করলো,
—আবার কি কেউ আপনাকে কিছু বলেছে ডাক্তার সাহেবা?
এবার সাদিয়া আরনাফের দিকে তাকালো। কিয়ৎক্ষণ স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সে প্রস্থান করলো। সাদিয়ার যাওয়ার দিকে আরনাফ বিরস মুখে তাকিয়ে আছে।
—আমি বুঝলাম না এই মেয়ের সমস্যা কি? সারা দুনিয়ায় মানুষের সাথে সে হেঁসে হেঁসে নেচে নেচে কথা কথা বলতে পারে অথচ আমার সামনে আসলেই তার মুখে ফেবিকলের আঠা গেলে থাকে। রিডিকিওয়াস!
আরনাফও নিজের জায়গায় চলে গেলো।
বিয়ে শেষে ফটোগ্রাফির পালা। যে যার মতো ছবি তুলছে। আরনাফও লুকিয়ে চুরিয়ে সাবধানে সাদিয়ার কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। সেই সাথে নিজের পুরোনো ওয়ালপেপারটা পাল্টে সাদিয়ার ছবিটা ওয়ালপেপারের সেট করে দিলো। মুচকি হেঁসে আরনাফ সাদিয়ার দিকে তাকালো। মেয়েটা হাসছে৷ মন খুলে হাসছে।
—শ্যামবতীদের চোখে কাজল মানায় অশ্রু নয়! শ্যাবতীদের ঠোঁটের কোণে উচ্ছ্বাসের হাসি মানায় বিষন্নতার নয়! শ্যামবতীদের মুখে চঞ্চলতা মানায় উদাসীনতা নয়!
সুষ্ঠু ভাবে সারা আর শান্তর বিয়েটা সম্পন্ন হলো। সারাকে সাদিয়ারদের বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো। মিসেস আফরোজা ধারাকে বরণ করে নিলো।
সব রীতি নিয়ম পূরণ করে সারাকে শান্তর রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। রুমের বাহিরে গ্যাং আদিবা ওতপেতে দাঁড়িয়ে আছে শান্তর অপেক্ষা করছে। তাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ করে কিয়ৎক্ষণ পর শান্তর আগমন ঘটলো। নিজের রুমের সামনে এমন জটলা দেখে শান্তর ভ্রুদ্বয় কুঁচলে এলো।
—কি ব্যাপার? তোরা এখানে ওতপেতে আছিস কেন?
—এইতো নববরের আগমন ঘটলো। আসুন নববর আসুন।
—নববধু শুনেছি কিন্তু এই নববর আগে কখনো শুনি নি। যাকগে কি হয়েছে খোলসা করে বলতো?
এবার গ্যাং লিডার আদিবা মুখ খুললো। শান্তর দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
—টাকা দাও।
—আমার কাছে কি তুই নিজের টাকা গচ্ছিত রেখেছিলি? বা আমি তোর থেকে টাকা ওধার হিসেবে নিয়েছিলাম?
এবার শান্ত একটু মনে করার ভান করে বললো,
—কই আমার তো মনে পড়ছে না।
আদিবা কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
—ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু। টাকা দাও বলছি।
—কি মুশকিল আমি কেন তোদের টাকা দিতে যাবো?
এবার জুনাইদ মাথা উঁচিয়ে বলে,
—টাকা না দিলে রুমে যেতে পারবে না।
—এতো গুলো মেয়ের মাঝে তুই কি করতে এসেছিস? লজ্জা লগে না এতোগুলা মেয়ের মাঝে থাকতে?
—মেয়ে কোথা সবতো আমার বড় আর ছোট বোনের দল।
—ইডিয়েট মানসম্মান রাখলি না কিছু।
—এতো কথা না বলে টাকা দাও।
—বাচ্চা মেয়ে একটা টাকা দিয়ে কি করবি?
—ভাইয়া আমি মোটেও বাচ্চা না। আমি এখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি।
নাফিসার কথায় সবাই হোহো করে হেঁসে উঠে।
—আচ্ছা বল কতো টাকা লাগবে?
—পঞ্চাশ হাজার।
আদিবার ডিমান্ড শুনে শান্ত খুকখুক করে কেশে উঠে
—আমি তোদের আমার অর্ধেক বেতন দিয়ে দেবো? সিরিয়াসলি?
এবার সে পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকার দুটো নোট বের করে আদিবার হাতে গুজে দিলো।
—পঞ্চাশ টাকা? আগে জানতাম তুমি বলদ এখন তো দেখছি তুমি একটা কিপ্টাও।
—শুধু কিপ্টামা না হাড় কিপ্টা।
ঝগড়াঝাটি শেষে বিশহাজর দুইশো দুই টাকায় শান্ত নিজের রুমে যাওয়ার অনুমতি পেলো।
—উফ এই আদিবা গ্যাংয়ের অত্যাচারে আমি ব্যাপক ভাবে অত্যাচারিত!
#চলবে….ইনশাআল্লাহ
(গল্পের সমাপ্তি অতি নিকটে 🐸)