আমার পাপের জীবনি পর্ব-৫

0
2256

আমার পাপের জীবনি
সত্য ঘটনা অবলম্বনে
৫ম খন্ড
Nusrat Haq……

আসলাম যেদিন সকালে ল্যান্ড করবে সেদিন আমাকে এয়ারপোর্টে থাকতে ফোন করে বললও তুমি অবশ্যই আসবে।।

আমি যেহেতু বউ আর আমাকে এখনও তুলে নেওয়া হয়নি তাই যেতে লজ্জা পাচ্ছি লাম।

আমি– দূর কি বলো তোমাদের পরিবারের সবাই থাকবে আমি যেতে পারবো না। আমার লজ্জা লাগবে।

আসলাম– এত কিছু বুঝি না তুমি আমার অনেক সাধনার ফল। টানা ২ থেকে আড়াই বছরের মতো তোমার পিছনে ব্যয় করেছি। আসতে তোমাকে হবেই।

আমি — কখনও না।। আসবো না আমি বলে দিলাম আমার লজ্জা লাগে।

আসলাম — আচ্ছা যাও আসতে হবে না। আল্লাহ হাফেজ ৷

আমি বুঝতে পেরেছি সে রাগ করেছে কিন্তুু কি করবো তার পরিবারের মানুষ কি বলবে। তাই লজ্জাই আর যায়নি।
এদিকে সে আসার আগের দিন আমি দোকান বন্ধ করে আমাদের বাড়িতে চলে যায়।
কারণ সমাজের চোখে আমি খারাপ না। তাই আমি চেয়েছি সে আমাকে আমাদের বাড়ি থেকেই উঠিয়ে নিয়ে যাক।
কারণ তার ও পরিবার আছে। আর আমি দোকান করতাম এটা সবার চোখে শোভনীয় নয়।

সে দেশে এসেই আমাকে ফোন করেনি কিন্তুু বিমান থেকে নামার সাথে সাথে আমাকে এসএমএস দেয় সে ভালো মতো নেমেছে।
এখন বাড়ির জন্য রওনা দিচ্ছে।।

আমি এয়ারপোর্টে যাইনি কেন সেজন্য খুব রাগ৷
সে দেশে আসার ৩ দিন পরই আমাকে ৮০ জন বরযাএী নিয়ে তুলে নিয়ে যায়। ছোট খাটোর মতো একটা অনুষ্ঠান হয়৷ কিন্তুু জাঁকজমকপূর্ণ ছিলো না।
এটা দুজনেরই ২য় বিয়ে।

তাদেড বাড়িতে যাওয়ার পর সবাই আমাকে দেখতে আসে।
সালাম করতে করতে কোমর শেষ। সালামি ৯ হাজার টাকা পেয়েছি।
আর গহনা সব মিলিয়ে সাত ভরির মতো পেয়েছি।।
রাতের বেলা আমাকে বাসর ঘরে দেওয়া হলো।
আমার দু হাত ভর্তি মেহেদী। পড়নে লাল রঙের একটি শাড়ি।
আয়নাতে নিজেকে নিজে দেখে লজ্জা পেয়ে যাচ্ছি আমি।।
মনে হচ্ছে এটা আমার ১ম বিয়ে। আর আমি ১৭ বছরের একটা যুবতী।

সে কিছুক্ষণ পর রুমে এলো। এসেই গাল ফুলিয়ে বসে আছে।
আমি সালাম দিলাম। সে সালাম নিলো আর কিছু বলছে না।
এভাবে ১০ মিনিট যাওয়ার পর সে নিজে থেকে বলছে আমি তোমার উপর খুব রাগ করেছি।
তোমার সাথে কথা বলি না।

আমি– হু ভালো।
আসলাম– এয়ারপোর্টে আসো নি কেন তোমাকে দেখলে খুব খুশি হইতাম।
আমি– এখন দেখো।
আসলাম আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বললও হু দেখছি তো তোমাকে।
আচ্ছা কথা দাও আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।
আগের জনও আমাকে ছেড়ে মাটির নিচে চলে গেছে।
খুব কষ্টে সেই শোক সামলেছি।
যদি তুমি ও আমাকে ছেড়ে চলে যাও এ কষ্ট আমি নিতে পারবো না। হয় মারা যাবো না হয় কোমায় চলে যাবো।

আমি– জানি না আল্লাহ যা করেন। আল্লাহর হাতে সব৷
আমার সাথে কখনও প্রতারণা করো না।

আসলাম– একটু ভরসা আর বিশ্বাস রেখে দেখো।
অতীতের সব ভুলে শুধু আমার মাঝে ডুবে থাকো।

আমি– হু।।

আসলাম– চলো নামাজ পড়ে নি।
আমি— চলো।

তারপর দুজনে নামাজ আদায় করে নিলাম৷

আসলাম আমার খুব কাছে আসলো আমার ঠোঁট জোড়া তার ঠোঁটের ভিতরে নিলো৷
তার দুজন দুজনাতে মেতে উঠলাম।

তার বুকেই ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুম ভাঙলো সকাল ৮ টায়। কি যে এক লজ্জা বলার মতো না। তাও শাড়িটাও বুকের উপরে নেই৷।

তার বুক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে শাড়ি ঠিক করে যখনই খাট থেকে নামতে যাবো সে হাত টান দেয়৷ আর বলে আরেকটু শুয়ে থাকো না।

আমি– দূর পাগল মানুষে কি বলবে। আমি নতুন বউ যদি এত দেরিতে ঘুম থেকে উঠি৷

আসলাম– কে কি বললও সেটা আমার দেখার বিষয় না। আর সবাই জানে নতুন বিয়ে হলে মানুষ কি করে।
আরেকটু থাকো।

আমি– দূর ছাড়ো ত।নিজেকে তার কাছ থেকে ছাড়িয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
তারপর সবুজ রঙের একটি শাড়ি পড়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে রুমের দরজা খুলে সামনের রুমের দিকে গেলাম।
আমাকে দেখে আমার শাশুড়ী ভীষণ খুশি।
আমার একটা বড় জা আছে আর একটা ননস।
তারা ২ ভাই ১ বোন। আমার জামাই সবার ছোট। মেজো হলো আমার ভাসুর আর ননস বড়ো। তিনি ও সিঙ্গাপুর থাকেন।
মোট কথায় জয়েন ফ্যামিলি। আমাকে দেখে আমার জা বললও কি গো কেমন ঘুম হলো।
সারা রাত কি ঘুমালে না কি ঘুম পাড়ালে।

আমি লজ্জা ই হেসে দিলাম।

জা– লজ্জা পেয়েও না এমন রাত আমারও এসেছিলো।। সারা রাত তাকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে কেটেছে।

আমার শাশুড়ী এসে বললও নাস্তা দাও বউকে।

আমাকে জিজ্ঞেস করলো আসলাম উঠেছে।
আমি– না উঠেনি।
শাশুড়ী — তা তুমি এত সকালে উঠলে কেন।
নতুন নতুন বিয়ে হলে দিনের ১ টাই ও ঘুম থেকে উঠে না মানুষ। আর আমার আসলাম টা বিদেশে থাকে। তাকে সময় একটু বেশি দাও।
আমি– লজ্জায় চুপ থাকলাম।
শাশুড়ী — নাস্তা খেয়ে রুমে গিয়ে আরেকটু ঘুমিয়ে নাও৷

জা— বৌ যাও যাও ঘুমিয়ে নাও।। রাতে তো আর ঘুমাতে পারবেনা। টেবিলে বসো নাস্তা দিচ্ছি৷

আমি টেবিলে বসলাম। নাস্তা দিয়েছে খাচ্ছি।
আমার সাথে আমার জা আর শাশুড়ী ও বসলো।
তারা গপগপিয়ে খাচ্ছে। আর আমি নতুন বউ তাই আস্তে আস্তে খাচ্ছি।
আমাকে আমার শাশুড়ী বললও এত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই তাড়াতাড়ি খাও।
তখন আমার শশুর এর ফোন আসলো বিদেশ থেকে। তিনি ও সিঙ্গাপুর প্রবাসী..
আমার সাথে একটু করে কথা বলে আমার শাশুড়ীর সাথে কথা বলতে শুরু করলো।
আমার শাশুড়ী ও নাস্তা খাওয়া অর্ধেক রেখে রুমে চলে গেলো ফোন নিয়ে।

আমার জা আমাকে বললও আগামী ২ ঘন্টা তে ও ফোন রাখবে না। মাঝে মাঝে আমার শাশুড়ী আর শশুর এর ভালোবাসা দেখলে হিংসা হয় এ বয়সে এসেও এত যে ভালোবাসে একজন আরেক জনকে।

আমার জা নাস্তা খেয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো।
আমি ও আমার নাস্তা শেষ করে তার পিছু পিছু চলে গেলাম৷
তাকে সাহায্য করতে চাইলে সে দিলো না বললও রুমে যাও এখন।
আমার জন যখন সিঙ্গাপুর থেকে আসবে তখন সব কাজ তুমি করবে। তখন আমি রুম থেকে ও বের হবো না।
এখন তোমার জন এসেছে আমি করি। তিনি হেসে দিলেন।
মোট কথা তাদের পুরো পরিবার এর সবাই সিঙ্গাপুর প্রবাসী।
আমি রুমের দিকে গেলাম দেখলাম আসলাম এখনও ঘুম।
কাল রাতের ফুল গুলো সব আমি পরিস্কার করে একপাশে রাখছিলাম।
ঠিক সে সময়ে তিনি বললেন নাস্তা দাও।
আমি রান্না ঘরের দিকে গেলাম নাস্তা দিতে। জাকে বললাম ভাবি নাস্তা খাবে বলছে।
তখন তিনি আমাকে পরোটা বের করে দিলেন।
আর নাস্তা দিলেন বললেন এগুলো টেবিলে দাও আর উনাকে ডাক দাও৷
আমি ডাক দিলাম উনি নাস্তা খেতে আসলেন৷
আর এদিকে আমার জায়ের জামাই সিঙ্গাপুর থেকে কল দিলেন।
তিনি গেলেন কথা বলতে৷

তখন কাজের মেয়ে আমাকে বললও পাক্কা ২ ঘন্টাই ও মোবাইল ছাড়বে না কেউ।
আজকে আমাদের সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে।
আমি হেসে বললাম সমস্যা নেই আমি আছি তো।
তখন আমি নিজেই রান্না শুরু করে দিলাম।

তখন আমার বর এসে বলতে লাগলো কোথায় আমি নতুন বিয়ে করেছি কোথায় আমি প্রেম করবো তা না উল্টো মা ভাবি দুজনেই প্রেম করতে চলে গেলো।
সে মেজাজ দেখিয়ে বাহিরে গেলো।

আর আমি রান্না শুরু করে দিলাম। চিংড়ি মাছ,গরুর মাংস, সবজি আর ডাল,এবং বেগুন ভর্তা।
সব করা শেষ।
তখন মা আসলো কথা শেষ করে। তখন কাজের মেয়ে বললও তুমি ৩ ঘন্টা কাটিয়ে ছো৷ আর ভাবি এখন পযন্ত আড়াই ঘন্টা রান্না শেষ আরো কতক্ষণ কথা বলো গিয়ে যাও।

মা হেসে দিয়ে বললও তুমি নতুন এসেছো আর আজ থেকেই রান্না করতে হলো। যাও আরাম করো গিয়ে।
আমি করছি এখন।

আমি এসে তাদের ঘরটা দেখতে লাগলাম। মোট ৬ টা রুম। ৪ টা বাথরুম ১ টা কিচেন। ১ টা বারান্দা।

——————–

শিমুল চিকিৎসার জন্য ভারতের উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
আমার ডেলিভারি হয়েছে বেশিদিন হচ্ছে না তাই আমি যাইনি।
বাচ্চা দের দেখাশোনা করছি। একটা কাজের মেয়ে রেখেছি।

বেশ কয়েকমাস কেটে গেলো। শিমুল এর সাথে ফোনে যোগাযোগ হয়। তার অবস্থা তেমন ভালো না মাথার চুল সব উঠে গেছে।
আর আমার ছোট বাচ্চা টাও বড়োটার মতো স্পেশাল চাইল্ড।।
এ দুঃখ আমি কোথায় রাখি আমার দুটো বাচ্চা ই স্পেশাল চাইল্ড।।
এদিকে 6 মাস যাওয়ার পরপরই টাকা শেষ হয়ে যায় কারণ ক্যান্সারের চিকিৎসা খুব ব্যয়বহুল।।
তখন ৭ মাস পর শিমুল আবার দেশে আসলো। এসে আমাকে বললো যে ওর কিছু জায়গা বিক্রি করবে।।
আবার জায়গা বিক্রি করে প্রায় 25 লাখ টাকার মত পেলো আবার সে 25 লাখ টাকা নিয়ে আবার ভারতে রওনা দিল।
এবার তার কিডনি একটা ড্যামেজ হয়ে গেল।
সে 25 লাখ টাকা ব্যায় করে আবার নতুন একটা কিডনি শরীরের সংযোজন করল।।
আসলে শিমুল বেঁচে থাকতে চেয়েছে সে বলেছে আমার সব সম্পত্তি বিক্রি করে হলো আমি বেঁচে থাকতে চাই।।
আর আশেপাশের মানুষ সব সময় বলে আমার বোনের অভিশাপে নাকি আমাদের সংসারে এত অশান্তি নেমে এসেছে।।
আমি তা কখনোই বিশ্বাস করিনা আসলে বিশ্বাস করতে চাই ও না।।
বাচ্চাদের চিকিৎসা আর শিমুলের চিকিৎসা করতে করতে প্রায় সব সমপওিই বিক্রি করে দেওয়া হয়।
এর মধ্যে শিমুল তার মায়ের চিকিৎসার জন্য জায়গা বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা দেয়।
কারণ তার মাসের হার্টের সমস্যা হয়েছিলো।
গজব নেমেছিলো আমার উপরে।
———+++——–

দেখতে দেখতে সংসার জীবনের হাসি-আনন্দ ২ মাস কেটে যায়।
আসলে আমি এত ভালো পরিবারে বউ হয়ে এসেছি যা আপনার বলে বোঝাতে পারবোনা।
আমার শাশুড়ী জা আমাকে চোখে হারাই।
আমার জা যেন একজন মাটির মানুষ।
কিন্তুু আফসোস বিয়ের ১৭ বছরে ও একটা বাচ্চা হয়নি।
অথচো এটা নিয়ে পরিবারে কোন আক্ষেপ নেই৷
উল্টো আমার জা মন খারাপ করলে সবাই বলে আল্লাহ না দিলে কি করার আছে৷
আমার জা আর ভাসুরেরে ভালোবাসা যেন দিন দিন বাড়ে।

চলবে…

ভালো সাড়া পেলে। আজকে শেষ করবো।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here