আমার পুতুল বর লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম) পর্ব : ৫১

আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব : ৫১

১ সপ্তাহ পর___________

রেহান & মিহি ❤️🤍

ট্রিং ট্রিং ট্রিং …..

মোবাইল হাতে নিয়ে কে কল করেছে দেখতেই মিহির ভ্রু কুঁচকে গেলো।

~ হ্যালো..
~ একটু নিচে এসো তো…
~ অ্যা! নিচে? কোন নিচে? আব মানে কিসের নিচে আসবো?
~ তোমার বাসার নিচে…
~ আমার বাসার নিচে কি করতে যাবো আমি? তাও এই সময়ে….
~ আমি আসতে বলেছি তাই আসবে।
~ আরে কিন্তু নিচে যাবো কেনো সেটা তো বলবেন? সামহাউ আপনি কি আমার বাসার নিচে আছেন? চোখ বড় বড় করে বেলকনিতে দৌঁড়ে গেলো । আশে পাশে ভালো করে তাকিয়ে খেয়াল করলো রাস্তার অপরপাশে ল্যামপোস্টের নিচে বাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছে রেহান। মিহির মাথায় ঢুকছে না এই সময় রেহান এইখানে কি করছে? আর ওকে নিচেই বা নামতে বলছে কেনো? মিহি ভাবনায় মগ্ন ছিলো রেহানের ধমকে ওর ঘোর কাটলো।
~ জলদি নামো। টাইম নাই আমার।।
~ ক..কিন্তু..
~ জলদি মিহি!!
~ আসছি।।
ফোন কেটে মিহি গায়ে ওড়না জড়িয়ে ড্রয়িং রুমে এসে পা টিপে টিপে বাইরে বের হলো। বুকে হাত দিয়ে বির বির করে বললো,,
~ যাক বাবা ভালো হয়েছে ড্রয়িং রুমে কেউ ছিলো না তানাহলে হাজারটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। কিন্তু এই ধলা বাঁদরের হলো টা কি এই রাতের ১১ টায় বাসার নিচে ডাকছে কেনো?? সাহস কতো এই লোকের আমার বাসায় এসে আমাকেই কিনা ধমক দিলো আবার রাত বিরাতে দেখা করার জন্য এসেছে।।

মিহির কথার মাঝেই আবার রেহানের কল এলো। কল কেটে দ্রুত নিচে নেমে এলো। মিহি গেট দিয়ে বাইরে বের হতেই রেহান রাস্তার এপাশে মিহির সামনে এসে দাড়ালো। মিহি কিছু জিজ্ঞেস করতে নিবে তার আগেই রেহান ওকে থামিয়ে দিলো। ওর হাত ধরে বাইকের কাছে নিয়ে এলো। মিহির কোমর জড়িয়ে ধরে উচুঁ করে বাইকের উপর বসিয়ে দিয়ে ওর দুপাশে হাত রেখে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে মিহির চোঁখের দিকে তাকালো। মিহি হতভম্ব হয়ে রেহানকে দেখছে।

~ ক..কি হয়েছে আপনার? আমাকে ডাকলেন কেনো আর এভাবে এখানে বসিয়ে রেখেছেন কেনো?
~ তোমাকে অনেকদিন দেখি না। দেখার ইচ্ছে হলো তাই চলে এলাম। তাছাড়া অনেকদিন তোমার বক বক শুনতে পাই নি।
~ কিহ্হ্! এ..এসব কি বলছেন? দেখতে এসছেন আমাকে? ( নিজের দিকে আঙ্গুল তাক করে )
~ হ্যা দেখতে এসছি। মিস করছিলাম তোমায়। মিহির চোঁখের দিকে তাকিয়ে।
মিহি হা করে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে। এ কোন রেহান! এই রেহানকে তো ও চেনে না। অবাক হয়েই রেহানের কপালে হাত ছোঁয়ালো। তারপর গলায় ও ছুঁয়ে দেখলো। রেহান কপাল কুঁচকে মিহির দিকে তাকিয়ে বললো,,
~ কি হয়েছে?
~ চেক করছি।
~ কি চেক করছো?
~ আপনার শরীর ঠিক আছে কিনা? মানে জ্বর-টর এলো কিনা তাই দেখছিলাম।
~ আজব আমার শরীর খারাপ হতে যাবে কেনো? আমি একদম ফিট অ্যান্ড ফাইন আছি। তানাহলে তোমার সামনে এসে দাঁড়াতাম কি করে!!
~ সুস্থ আছেন বলছেন! তাহলে বোধয় আজ আকাশে চাঁদ উঠে নি।
~ কিসব বলছো মিহি! তোমার মাথার উপরেই চাঁদ জ্বলজ্বল করছে তাও তুমি বলছো চাঁদ উঠে নি? মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে নাকি তোমার?
~ আমার সত্যিই মনে হচ্ছে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাহলে এবার হয়ে যাবে। ধলা বাঁদর কিনা আমাকে দেখার জন্য, আমার বক বক শোনার জন্য এই রাতে আমার বাসার নিচে এসেছে। আবার নরম গলায় বলছে আমাকে নাকি মিস করছিলো। আমার তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না। কেউ আমাকে চিমটি দাও।
রেহান মিহির চুল ধরে টেনে দিলো। মিহি ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো। রেহানের হাত থেকে চুল ছাড়িয়ে নিয়ে ঠোঁট উল্টে ওর দিকে তাকালো। রেহান মুখ ফুলিয়ে বললো,,
~ একটা হাসি-খুশী মুড কি করে নষ্ট করতে হয় তা তোমার থেকে শেখা উচিত ।
~ আমি কি করলাম এখন আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা দেখেই তো বলছি!
~ বিশ্বাস হয়েছে তোমার?
~ হ্যা কিন্তু হঠাৎ আমাকে মিস করার কারণ কি?
~ তোমাকে চোঁখের সামনে দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তোমার সাথে ঝগড়া করাটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। মোটকথা পুরো তুমিটাই আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছো। তাই হয়তো এই দুরত্ব টা মানতে পারছি না। মনের অজান্তেই তোমাকে মিস করতে শুরু করেছি। আজকে একটু বেশিই তোমার কথা মনে পড়ছিলো থাকতে না পেরে দেখা করতে চলে এসেছি।
মিহি একদৃষ্টিতে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে। রেহানের কথাগুলো শুনে ও অবাক তো হয়েছেই সাথে খুশি ও হয়েছে। বারবার ঠোটেঁ হাসি আসতে চাইছে। আর না পেরে ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো,,
~ তো দেখা শেষ? আমাকে যেতে হবে ভাইয়া জানতে পারলে খবর আছে!!
~ উহু আর কিছুক্ষণ!
মিহি আর কিছু না বলে মাথা নামিয়ে ফেললো।

২০ মিনিট পর…..

~ লিসেন দেরি হচ্ছে আই হ্যাভ টু গো। এতো বেশি দেখতে হবে না চোখে ছানি পরে যাবে।
কথাটা বলে এক লাফ দিয়ে বাইক থেকে নেমে গেলো।
~ ওকে ফাইন গো।।।
মিহি গেটের সামনে গিয়ে আবার পিছন ফিরে তাকালো। রেহান একি জায়গায় দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মিহি ওকে হাত নেড়ে বাই বলে লাজুক হেসে ভিতরে চলে গেলো। রেহান ও মুচকি হেসে বাইক নিয়ে চলে গেলো। এদিকে পুরো ঘটনা মাহির মিহির বেলকনিতে দাড়িয়ে দেখেছে। মিহি কে উপরে আসতে দেখে নিজের ঘরে চলে গেলো। আসলে মাহির পানি নিতে বের হয়েছিলো আর তখনি মিহি কে পা টিপে টিপে বাইরে যেতে দেখলো। প্রথমে ডাক দিবে ভেবে ও দিলো না। মিহি যাওয়ার ৫ সেকেন্ড পর উকি দিয়ে দেখলো নীচে গেছে। মিহির বেলকনি দিয়ে সদর দরজা দেখা যায় কথাটা মনে পড়তেই ওর বেলকনিতে চলে গেলো। মিহি কে রেহানের সাথে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছে মাহির। ওর জানা মতে তো এরা দুজন একে অপরকে সহ্য করতে পারেনা। সবসময় ঝগড়া করে বেড়ায়। তাহলে হঠাৎ এই রাতে লুকিয়ে দেখা করছে কেনো? কোনো রিয়্যাক্ট না করে চুপচাপ কি হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করছিলো এখানে দাড়িয়ে।

মিহি রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দুম করে খাটে শুয়ে পড়লো।
~ উফফ এতো খুশি খুশি লাগছে কেনো আমার? ঐ ধলা বাঁদরের কথাগুলো বারবার কানে বেজে যাচ্ছে আর প্রতিবার মন নেচে উঠছে। এসব কি হচ্ছে? ইশ! আর কিছুক্ষণ থাকতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু ভয় ও হচ্ছিলো যদি ভাইয়া দেখে ফেলতো!! (ঠোঁট উল্টে )
ইইইই! মিহি কি সব চিন্তা করছিস? ঘুমা এসব উল্টা পাল্টা কথা ভাবিস না।
নিজেকে বুঝিয়ে বহু কষ্টে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো মিহি।।।

____________

অভ্র & নিধি 🖤🤍

~ কি তখন থেকে হুম, হ্যা করে যাচ্ছো? আমি কতো কি বললাম আদৌ শুনেছো তো?
~ আপনার মনে হচ্ছে না আপনি দিন দিন বাচাল হয়ে যাচ্ছেন? আগে তো বোমা ফাটলেও আপনার মুখ দিয়ে কথা বের হতো না! আর এখন এক নাগাড়ে বক বক করেই যাচ্ছেন? ( বিরক্তি হয়ে )
~ শুনো আমি এমন ই ছিলাম বাট তখন তুমি বেশি কথা বলতে এখন তুমি বলছো না বিধায় আমাকে তোমার বাঁচাল মনে হচ্ছে।
~ শুনুন আমি একমাত্র আপনার সাথেই বেশি বেশি কথা বলতাম। একটু আগেও বলেছি কিন্তু এখন আমার ঘুম পাচ্ছে। তাই চুপ করে আছি।
~ গুড! একমাত্র আমার সাথেই বেশি কথা বলবে। অন্য কারো সাথে এতো কথা বলার দরকার নেই। বিশেষ করে কোনো ছেলের সাথে! হ্যা ফ্রেণ্ড হলে একটু আধটু কথা বলতেই পারো কিন্তু তাও ফর্মালিটি মেইনটেইন করে চলবে।
নিধি ভ্রু কুঁচকে থমথমে গলায় বললো,,,
~ আবার বলুনতো আসলে এতো কিছু একসাথে মনে রাখতে পারবো না তাই রেকর্ড করে নিতাম আর কি।
~ আই এম সিরিয়াস নিধি!!
নিধি চোখ উল্টে ঘুম জড়ানো গলায় বললো,,,
~ আ অভ্র আমার এখন ঘুম পাচ্ছে তাই সিরিয়াস কথা চাইলে ও সিরিয়াসলি নিতে পারছি না। আপনি কালকে বরং আবার এই কথাগুলো বলবেন হ্যা? আমি এখন ঘুমাই!! গুড নাইট। ( টেডি জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো )
অভ্র মোবাইল সামনে এনে দেখলো এখনো কানেক্টেড কিন্তু অপরপাশ থেকে ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ ভেসে আসছে। তার মানে নিধি ফোন কানে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। অভ্র আনমনেই হেসে উঠলো। “পাগলি একটা” বলে ফোন কেটে দিলো।

___________

সূর্য & আরশি 🤍💙

আরশি ঘুমিয়ে আছে আর সূর্য ওর মাথার কাছে বসে মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, মুখের উপর চলে আসা চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিচ্ছে। কখোনো বা গাল ধরে টানছে। যতবারই সূর্য এমন করছে ততবারই আরশি ঘুমের মাঝেই সূর্যের হাত সরিয়ে দিচ্ছে। আরশির কাণ্ডে সূর্য ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসছে। ধীরে ধীরে আরশির পাশে শুয়ে ওকে নিজের দুই বাহু দ্বারা আবদ্ধ করে নিলো। কপালে, গালে ঠোঁট বুলিয়ে আরশি কে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here