#আমার_বোনু
#Part_18
#Writer_NOVA
— আপা-আপনি!
ঊষার বিস্মিত গলা শুনে সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। তার ঠোঁটে এক চিলতে হাসি। তবে সেটা আকাঙ্খিত মানুষটাকে দেখতে পাওয়ার নাকি অন্য কিছুর ইঙ্গিতে তা ঊষার বোধগম্য হলো না। সে দাঁড়িয়ে মুখের হাসি টেনেই জিজ্ঞেস করলো,
— কেমন আছো ঊষা?
ঊষা হঠাৎ করে মুখটা কঠিন করে ফেললো। কড়া গলায় জবাব দিলো,
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
অসহায় গলায় সে বললো,
— আমাকে জিজ্ঞেস করলে না কেমন আছি?
ঊষা মুখ ঘুরিয়ে তার উত্তর দিলো,
— প্রয়োজন মনে করছি না।নিশ্চয়ই ভালো আছেন। খারাপ থাকলে তো আর এখানে আসতে পারতেন না।
সে কথা বুঝতে পেরেছে এমন ভাব করে মাথা নাড়িয়ে ঊষার কথার তাল মিলিয়ে বললো,
— তাও ঠিক কথা!
ঊষা সামনে এগুতে এগুতে বললো,
— হঠাৎ এখানে কেন পিয়াস সাহেব? আপনি না বিদেশে ছিলেন।
পিয়াস নামের ছেলেটা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। যেটা ঊষার কাছে রহস্যময় লাগলো। তার এতখন ভয় করলেও এখন করছে না। বরং সে পিয়াসের ওপর ঢেঢ় বিরক্ত।
হুট করে এত সকালে তার আগমনে ঊষা যে বিরক্ত তা বুঝতে পেরেছে পিয়াস। কিন্তু এছাড়া যে কিছু করার ছিলো না। ঊষাকে অনেক দেখতে ইচ্ছে করছিলো। তাই দেরী করেনি। সকালবেলা এয়ারপোর্ট থেকে নেমেই ঊষাদের বাড়িতে হাজির। পিয়াস একগাল হেসে বললো,
— তোমাকে না খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো জানো। দেরি করিনি তাই।
ঊষা নিজের বিরক্তিটা লুকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— এখন নিশ্চয়ই দেখেছেন।সো, যেতে পারেন।
পিয়াস দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো,
— তাড়িয়ে দিচ্ছো?
— অনেকটা তাই।
থেমে দম টেনে ঊষা বললো,
—আমার ভাইয়ুরা এলে সিনক্রিয়েট হয়ে যাবে। তাছাড়া আমার হাসবেন্ড রাগ করতে পারে।প্লিজ আমায় আর কোন ঝামেলায় ফেলেন না।এমনি বহু ভেজালে পরেছি আমি আপনার জন্য।
ঊষার বিয়ে হয়ে গেছে। তাই সে তার হাসবেন্ডের কথা বলেছে।এই কথাটা মনে হতেই পিয়াসের মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। হাসবেন্ডের কথা শুনেই সে হতবাক। চোখ দুটো ছলছল হয়ে গেলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
— তোমার বিয়ে হয়ে গেছে?
ঊষা নির্লিপ্তভাবে উত্তর দিলো,
— হুম!
— মিথ্যে কথা! আমি বিশ্বাস করি না।
— আপনার বিশ্বাস-অবিশ্বাসে আমার কিছু আসে-যায় না।
পিয়াসের চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো। চোখ দুটো প্রচন্ড জ্বালা করছে। চোখের পানির ফোঁটাগুলো পিয়াস নিচে পরতে দিলো না। দৃষ্টি উপরের দিকে দিয়ে শার্টের হাতায় চোখ মুছলো। ঊষা তা দেখেও কিছু বললো না। পিয়াস তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
— যার জন্য এতদূর থেকে এলাম সেই নাকি অন্য কারো হয়ে গেছে। এর থেকে বড় কষ্ট কি হতে পারে।
ঊষা উত্তর দিলো না। সে একটা জিনিস খেয়াল করেছে। সেটা হলো ছেলেটা কারণে-অকারণে হাসে। পিয়াসের মুখে এখনো হাসি। তবে তা কষ্ট লুকানোর। আবার শার্টের হাতায় চোখ মুছলো। ঊষা কিছু বলার আগে পিয়াস হাত দিয়ে থামিয়ে বললো,
— তোমার নতুন জীবন সুখের হোক। সেই কামনা করি। তবে একটা কথা জানো কি ঊষা?
ঊষা জিজ্ঞাসা সূচকভাবে উত্তর দিলো,
— কি?
পিয়াস দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। সে শ্বাসের শব্দ ঊষার কানে এসে বারি খেলো। তারপর সে বললো,
— তোমাকে পাওয়ার আক্ষেপ আমার সারা জীবন থাকবে। এ আক্ষেপ শেষ হওয়ার নয়। তুমি আমার হলেও পারতে! কিন্তু বিধাতা কেন রাখলো না তা তিনি ভালো জানেন।
পিয়াসের কথায় একরাশ বিষন্নতা প্রকাশ পেলো। ঊষার এই প্রথম পিয়াসের জন্য খারাপ লাগলো। ছেলেটা তো কোন দোষ করেনি। জন্মদিনের ফাংশনে তাকে দেখে পছন্দ করেছিলো৷ তারপর বিয়ে করার জন্য পাগলামি করেছে। তবুও ওর প্রতি ঊষার কেমন জানি একটা চাপা ক্ষোভ কাজ করেছে। ওর জন্য এত দ্রুত জিবরানের সাথে বিয়েটা হয়ে গিয়েছিলো। সাথে ঊষার মনে অজানা ভয়ও কাজ করেছিলো। পিয়াস ফিরে আসলে কি ঘটবে সেই আশঙ্কায়। কিন্তু পিয়াসের বর্তমান আচার-আচরণে সে কিছুটা অবাক। পিয়াস করুন কন্ঠে বললো,
— আসি! ভালো থেকো।
ঊষা কিছু বলার আগেই পিয়াস হনহন করে সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো। ঊষার বুক চিড়ে একটা চাপা শ্বাস বের হয়ে গেলো।
দোতালায় সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপ হাতে সবকিছু লক্ষ্য করছিলো জিবরান। সে প্রথম থেকে এখানে দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমানে তাকে একটু চিন্তিত দেখাচ্ছে। বিরবির করে আপনমনে বললো,
— এত সুন্দর ব্যবহার কেন পিয়াসের? কোন ঘাপলা নেই তো! আমার এখন ঢেঢ় সন্দেহ হচ্ছে।
★
লিফটের সুইচ টিপে সোজা হয়ে দাঁড়ালো আরান। ছয় তালায় যেতে হবে তাকে। হাতে একটা ছোট প্যাকেট। সম্ভবত সেখানে কিছু ঔষধপত্র আছে।মিনিট খানিকের মধ্যে পৌঁছে গেলো। আরান লিফট থেকে বের হয়ে গন্তব্যের দিকে ছুটলো। বাম দিকে আট কদম যাওয়ার পর A5 নামের ফ্লাটে কোলিং বেল চাপলো। প্রথমবার বেল বাজানোর পর কারো রেসপন্স এলো না। দ্বিতীয়বার বাজানোর আগে খট করে দরজা খুলে গেলো। বিদেশি এক ছেলে দরজা খুলে উঁকি দিলো। শুদ্ধ বাংলায় জিজ্ঞেস করলো,
— কাকে চাই?
আরান বিদেশি ছেলের মুখে স্পষ্ট বাংলা শুনে বেশ অবাক হলো। মুখে বিস্মিতভাব বজায় রেখে ভ্রু চুলকে বললো,
— আমি মাসফি ভাইয়ের কাছে এসেছি।
— ওহ আচ্ছা। ভেতরে আসুন।
আরান ভেতরে ঢুকলো। ছেলেটা পিছন ঘুরে সরু চোখে আরানকে এক পলক দেখে জিজ্ঞেস করলো,
— আপনি মাসফি বসের কি হোন?
আরান জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
— আমি উনার ছোট ভাই।
ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে বললো,
— আরান!
আরান অচেনা ছেলের মুখে নিজের নাম শুনে চমকে উঠলো। মাথা চুলকে বোকা ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো,
— আপনি কি আমায় চিনেন?
ছেলেটা হাসলো। নিচুস্বরে বললো,
— আপনি মাসফি বসের চাচাতো ভাই তাই না?
আরান মাথা ঝাকালো। সে স্বভাবতই প্রশ্ন করে বসলো,
— আমি আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।
ছেলেটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
— আমি জিকু! মাসফি বসের এসিস্ট্যান্ট।
আরান হাতটা লুফে নিলো। হ্যান্ডশেক করতে করতে বললো,
— ওহ আচ্ছা। আপনাকে আগে কখনও দেখিনি তো, তাই চিনতে পারিনি।
জিকু হাত ছাড়িয়ে এক টুকরো হাসি বিলিয়ে দিলো। চোখ দুটো এদিক সেদিক ঘুরিয়ে বললো,
— আপনার কথা মাসফি বসের কাছে অনেক শুনেছি। আপনাদের দুজনের ছবিও দেখেছি। সেই সুবাদে চিনি।
আরান সৌজন্যমূলক হাসি দিলো। এদিক সেদিক তাকিয়ে জিকুকে জিজ্ঞেস করলো,
— ভাই কোথায়?
জিকু স্বাভাবিক গলায় বললো,
— সোজা গিয়ে বামের রুমটায় তাকে পাবেন।
আরান, জিকুকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভেতরের দিকে চলে গেলো। রুমের দরজা ভিড়ানো ছিলো। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখলো মাসফি অদিতির মাথায় চিড়ুনি করে দিচ্ছে। আরান জিজ্ঞেস করলো,
— কেমন আছো ভাই? কেমন আছিস আপু?
মাসফি চিড়ুনি রেখে এক পলক আরানের দিকে তাকালো। অদিতি মুচকি হাসলো। কিন্তু উত্তর দিলো না। আরানের সাথে অদিতির আবার বেশ ভাব। মাসফি মাথায় আবার চিরুনি চালান করে বললো,
— হুম ভালো তুই?
আরান ঔষধের প্যাকেটটা মাসফির পায়ের কাছে রেখে খাটে বসলো। দুই হাত খাটের ওপর রেখে মাথা নিচু করে উত্তর দিলো,
— আলহামদুলিল্লাহ।
মাসফি তীক্ষ্ণ চোখে ঔষধের প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— ঔষধ কে পাঠিয়েছে রে?
আরান মাথা না উঠিয়ে বললো,
— পাপা।
আরানের উত্তর শুনে মাসফির চোখ জোড়া আরো তীক্ষ্ণ হয়ে গেলো। সাথে কপালে চিন্তার ভাজ পরলো।দ্রুত তাড়াহুড়ো করে উঠে ঔষধের প্যাকেট হাতে নিলো। তারপর আরানকে আদেশের সুরে বললো,
— তুই একটু অদিতির চুলে বিনুনি করে দে। আমি আসছি।
মাসফি দৌড়ে বের হয়ে গেলো। আরান অবাক চোখে ভাইয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। সেসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করলো না। তবে সে চিন্তায় পরে গেলো। জীবনে সে কারো চুলে বেনুনি করেনি। এখন সে কিভাবে পারবে? ভাই তো তাকে আচ্ছা ঝামেলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে গেলো। সে আর দেরী করলো না।চুপচাপ অদিতির কাছে গিয়ে বসলো। চিরুনি হাতে নিয়ে বেনুনী করার ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো।
~~~আমরা সমাঝোতার মাধ্যমে সমস্যা মিটমাট না করে অভিমানে সম্পর্ক নষ্ট করতে বেশি পারদর্শী🥀।
#চলবে
গল্প আবার আগামী পরশু পাবেন। ঈদ নিকটবর্তী, বাসার কত কাজ বাকি। এখন সেদিকেই মন দিতে হবে।