আমার ভিনদেশি তারা পর্ব-৫৮

0
1840

Story – আমার ভিনদেশি তারা
Writer – Nirjara Neera
পর্ব নং – ৫৮
———————————————–
শাড়িতে এত গুলো সেফটিপিন লাগানো হয়েছে যে ভালো করে দৌড়াতেও পারছিনা। উপরন্তু আঁচল টাও চুলের কারণে ঠিক করা হয় নি। তাই আঁচল আর চুল দুজনে সমান তালে আমার আগে দৌড়াচ্ছে। ঘর থেকে বাইরে বেড়িয়ে দাড়িয়েছি মাত্র। কিন্তু এমন ভাবে হাপাঁচ্ছি যেন কয়েক কিলোমিটার দৌড়িয়েছি। হাঁপাতে হাঁপাতে চুল গুলো সব মুখের উপর এসে বসেছে। কিন্তু সেদিকে আমার ভ্রুক্ষেপ নেই। চার দিকে ইতি উতি তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজছি। উঠানে মানুষের আনাগোনা তেমন নেই। শুধু এক কোণে তেরপাল ঠাঙানো হয়েছে। তেরপালের নিচে রাতে অতিথি দের খাওয়ানোর জন্য ছোট খাট রান্নার আয়োজন চলছে। সেটা তদারকি করছে তৈয়ব চাচু। যদিও বা তেমন জাঁকজমক ভাবে করা হচ্ছে না। তথাপি দুএকজন যারা আসবে তাদের জন্যই হালকা ভাবে রান্নার আয়োজন চলছে। ছাদে অতিথি দের খাওয়ানো চলবে। তাই মামা আর ভোলা চেয়ার গুলো ছাদের উপরে নিয়ে যাচ্ছে। স্টেজ ও ছাদে হবে। সেখানে ফুল দিয়ে সাজানোর কাজ চলছে। কিন্তু কই? কিছু তো দেখছিনা। তাহলে কি শুনেছিলাম? সব কি ভ্রম? নাকি আমি ভুল শুনেছিলাম।
“তাহমিনা! কি হয়েছে? এভাবে দৌড়ে চলে এসেছিস কেন?”
“হাহ্?”
আমাকে হুট করে দৌড়াতে দেখে পিছন পিছন মামী আর আমার ফুপাতো বোন দৌড়ে চলে এসেছে। আতঙ্কিত চেহারা বলে দিচ্ছে তারা কতটা ঘাবড়ে গিয়েছে। ফুপির মেয়েটা বলল
“আপু কি হয়েছে?”
আমার মন টা খারাপ হয়ে গেল। বললাম
“কিছু না। এমনি মনে হয়েছিল কে যেন ডেকেছে। তাই বেড়িয়ে এলাম।”
একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল। মামী বলল
“এজন্য দৌড়াতে হয়? আমরা কত ভয় পেয়েছি জানিস?”
আমি একটু করে হাসলাম। বললাম
“চল। আর ভয় পেতে হবে না।”
পিছন ফিরে চলে যেতেই আমার আঁচলে হালকা করে টান পড়লো। আমি একটু পিছনে ফিরলাম দেখার জন্য। একটা খরগোশ আমার আঁচল কে কুট কুট করে কামড়ানোর চেষ্টা করছে। ভ্রু কুচকে ফেললাম। খরগোশ কোথ থেকে এলো? নিচু হয়ে খরগোশ টাকে কোলে নিলাম। খরগোশ টা পালানোর চেষ্টাও করলো না। কিন্তু কোলে নিয়েই ভিড়মি খেলাম। আশ্চর্য্য… এ তো কাজু! এ এখানে কিভাবে এলো? ওকে তো হোস্টেল থেকে আমি আনি নি। তাহলে… ঝট করে সামনে তাকালাম। আমার হৃদপিন্ড টা আবার দ্বিগুণ জোরে শব্দ করা শুরু করেছে। আমার চঞ্চল চোখ আমার অনুমতি ছাড়ায় চারদিকে তন্নতন্ন করে কিছু খুজে ফিরছে।
“তাহমিনা! চল।”
আমি মামীর দিকে না তাকিয়ে বললাম
“মামী তুমি যাও। আমি এক্ষুনি আসছি।”
“এক্ষুনি আসছি মানে? কোথায় যাচ্ছিস? আর খরগোশ কোথায় পেলি?”
আমি এবার মামীর দিকে তাকিয়ে একটু করে হেসে বললাম
“মামী তুমি ভিতরে যাও। আমি এক্ষুনি আসছি।”
“কিন্তু…”
“আসব বলছি তো।”
“আচ্ছা! তবে জলদি আসবি। তোর আব্বা কে আমি জবাব দিতে পারবোনা কিন্তু।”
“জবাব দিতে হবে না। আমি এখনি চলে আসব।”
তবুও মামী ভ্রু কুঁচকে দাড়িয়ে রইলেন। আমি অধৈর্য্য গলায় বললাম
“যাও না মামী!”
“যাচ্ছি।”
আমার উপর সন্দিগ্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মামী ভিতরে চলে গেলেন আর আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। তারপর কাজু কে সাথে নিয়ে চারদিকে কিছু খুজতে লাগলাম। উঠানে হাতে গোণা কয়েকজন মানুষ ছিল। আমাকে এগুতে দেখে ছোট মামা ডাক দিলেন।
“কোথায় যাচ্ছিস।”
একটু হেসে বললাম
“এইতো সামনে। এখনি চলে আসব।”
কাজের চিন্তায় মামা আর কিছু বললেন না। যতই উঠান পার হয়ে যাচ্ছি ততই সবকিছু কেমন যেন নিরব হয়ে আসছে। এতটাই নিরব মনে হচ্ছে যে আমার পায়ের নুপুর গুলোর হালকা ঝুন ঝুন শব্দও শুনতে পাচ্ছি।
উঠানের শেষ মাথায় বাবলা গাছটার নিচে দাড়ালাম। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সবকিছু শূণ্য দেখেও আমার কায়া মন দুটোই ফিরে যেতে সায় দিচ্ছে না। উদ্দেশ্য হীন ভাবে সামনে পা বাড়াতেই থপ থপ শব্দ শুনলাম। যেন কেউ থপ থপ করে কাদায় হাটছে। আমি চারদিকে তাকাতে লাগলাম। পাশে রাস্তার নিচেই সবুজ ঘাসের বিছানা। সাথে ছোট ছোট বুনো গাছের ঝোপ। তারপর কয়েক ফুট নিচেই একটা ছোট্ট ডোবা আছে। তাই একটু একটু করে আমি নিচে নামলাম। কিন্তু নামতে গিয়েই থমকে দাড়ালাম। কারন কেউ একজন ওখানে দাড়িয়ে আছে। আমার চোখ সেটা বিশ্বাস করছে না। চোখ দুটো কচলে আবার তাকালাম। লিও…!
আমি হৃদপিন্ড দ্রুত গতিতে তার কাজ শুরু করে দিল। আমি একটু একটু নামতে লাগলাম। মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগলো। এক দৃষ্টিতে শুধু ওকে দেখছি। পড়নে কালো শার্ট। হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো। মাথায় কালো ক্যাপ। ব্লু ডেনিম জিনস টা হাটু পর্যন্ত গোটানো। ব্ল্যাক সানগ্লাস টা ভাজ করে বুকের সাথে আটকে রাখা। আর হাটু পর্যন্ত তার ফরসা পা কাদায় ডুবে আছে। কাঁধে বিশাল ব্যাগ। ব্যাগের সাথে এক জোড়া কেডস অনবরত ঝুলছে। হাতে মিনারেল ওয়াটারের বোতল। ট্রলি ব্যাগ টা ডাঙায় কাত হয়ে পড়ে আছে। আর লিও প্রাণপন চেষ্টা করছে কাদা থেকে পা তোলার জন্য। কিন্তু পারছে না। কাজু আমার কোল থেকে ঝাপ দিয়ে নেমে গিয়ে ট্রলি ব্যাগ টার উপর বসলো। আমি বিস্মিত চোখে লিও কে দেখছিলাম। বিশ্বাস হচ্ছে না লিও কে সত্যি দেখছি। শরীর টা মৃদু কাপঁছে। সেই কাঁপা গলায় লিও কে ডাকলাম
“লি-লিও?”
আমার ডাক শুনে হুট লিও মুখ তুলে তাকালো। তাকাতেই সে দীর্ঘ একটা প্রশস্ত হাসি দিলো। হাসির চোটে গালের দু দিকে আমার সুদীর্ঘ ময় ভালোবাসা দুটো ভেসে উঠলো। আমি মিস করেছিলাম অনেক এ ডিম্পল দুটো কে। উচ্ছাসিত কণ্ঠে সে হাত উপরে তুলে আমাকে ডাকলো
“মিইইরা…! কেমন আছো? আমি তোমাকে খুজে বের করেছি। হুররে!”
লিও দু হাত উপরে তুলে এক ধরনের উচ্ছাস প্রকাশ করলো। কিন্তু ওর ডাকটা শুনে আমার বুকের কোথাও ধক করে উঠলো। মুচড়ে উঠলো তার আশপাশ। চোখ দুটো বার বার ঝাপসা হওয়ার চেষ্টা করছে।
লিওর চেহারা টা রোদে পুড়ে টক টকে লাল হয়ে আছে। শার্টে আর মুখে কাদা শুকিয়ে লেগে আছে। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে কপালে আর গলায়।
আমি তাকে হাই বললাম না। কারণ তার অবস্থা দেখে। ভ্রু কুচকে বললাম
“কি করছো তুমি ওখানে?”
লিও নার্ভাস ভাবে একটু হাসলো। তারপর আবারো পা তোলার জন্য টান দিল। শেষে তুলতে না পেরে হতাশ গলায় বলল
“I am stuck Mira. Plz help me.”
আমি তার পায়ের দিকে ভালো করে তাকালাম। ছোট খাট ডোবা। শীত কাল তাই পানি শুকিয়ে গেছে। কিন্তু কাদা হয়ে আছে। কিভাবে লিও এখানে আটকে গেল সেটা বেশ চিন্তার বিষয়।
“মিইইরা!”
“হাহ!”
“হেল্প মি।”
“ওকে। একটু দাড়াও।”
আমি এদিকে ওদিকে তাকালাম। কাজু খোলা জায়গা পেয়ে শুধু এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছে। যেন আমার সাথে খোজাখুজি করছে। আমি বেশ কিছু শুকনা ডাল পেলাম। কিন্তু সেগুলো শুকনো খটখটে। একটু মোচড় দিতেই ভেঙে গেল। নাহ্ এগুলো হবে না। তেমন কিছু না পেয়ে শেষে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলাম। বললাম
“কিছু পাচ্ছি না। আমার হাত ধরেই উঠে আস।”
লিও সন্দিগ্ন গলায় বলল
“আমাকে তুলতে পারবে তো?”
“লিও!”
“ওকে ওকে উঠছি!”
লিও আমার হাত শক্ত করে ধরলো। আমি বললাম
“সাবধানে লিও! আমাকে টান দিও না। পড়ে যাব।”
লিও আমার হাত ধরে বলল
“সত্যি! তাহলে টান দেই। কি বলো? দুজনে একসাথে কাদাতে গড়াগড়ি খাই। দারুন হবে। হা হা হা।”
“শাট আপ। সব সময় মাথায় খালি ফাজলামি ঘুরে তাই না?”
“প্লিজ মিইইরা!”
“ঠিক আছে তুমি কাদায় গড়াগড়ি কর। আমি চললাম।”
এই বলে কাজুর দিকে তাকিয়ে বললাম
“কাজু চল এখান থেকে।”
লিওর হাত ছেড়ে দিতে উদ্যত হলে লিও শক্ত করে হাত টেনে ধরলো। তাড়াতাড়ি বলল
“স্যরি মিইইরা। এইতো উঠছি।”
আমি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে ওকে টানতে লাগলাম। আশ্চর্য্য! ওকে আমি টানছি ঠিক। কিন্তু ও নিজে থেকে একদম চেষ্টা করছে না। হা করে তাকিয়ে ওকে ডাকলাম
“লিও!”
সে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। চোখে খেলা করছে একরাশি চঞ্চলতা। আমি ডাকতেই তার চেহারা তে নিশ্চুপ দুষ্টু হাসি ভেসে উঠল। আরো জোরে আমার হাত চেপে ধরল। আমি প্রমাদ গুণলাম। কড়া চোখে লিও কে সাবধান করলাম। বললাম
“যা ভাবছো মাথা থেকে তা ঝেড়ে ফেলো। ভালো হবে না কিন্তু। আ-আমি তোমাকে…”
কথা শেষ হলো না। তার আগে লিও হেচকা টান দিলো। আমি ধপাস করে কাদায় পড়ে গেলাম। কাজু এদিক ওদিক লাফাতে লাগলো। যেন আমি পড়ে যাওয়াতে সে বেশ খুশি হয়েছে। লিও পেট ধরে হো হো করে হাসতে লাগলো। আমার লাল পাড়ের সাদা শাড়ি কাদায় লেপ্টে গেল। হাত দুটো তে চট চটা কাদা লেগে আছে। দেখে আমার মাথা গরম হয়ে গেল। মনে হচ্ছে এ কাদার ভিতর লিওর মুখ টা চেপে ধরি।
অনেক কষ্টে উঠে দাড়ালাম। লিও তখনো পেট ধরে হেসে যাচ্ছে। লিও কে হাসতে দেখে আমার কান দিয়ে গরম ধোয়া বেড়িয়ে যাচ্ছে। রাগে হাত কাঁপছে থর থর করে। চিৎকার করে বললাম
“WHAT….. IS……THIS…… LEO?”
লিও তখনো হেসে যাচ্ছে। আমার কথা যেন তার কানেই গেল না। আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না। ওর হাসতে থাকা চেহারা আমার কাছে অসহ্য লাগছে। তাই আমার কাদায় লেপ্টে থাকা হাতটা থপ করে ওর হাসি মাখা মুখে মেরে দিলাম। লিওর মুখের হাসি বন্ধ হয়ে গেল। পুরো ফরসা মুখটা টা থপথপে কাদায় জড়াজড়ি করছে। এবার বেশ শান্তি লাগছে আমার। প্রচন্ড সুখানুভূতি। ভীষণ মজা লাগছে লিওর কাদা মাখা থমথমে মুখ দেখে। জোর গলায় বললাম
“ভালো লাগছে? হাসো না এবার! হাসি কোথায় গেল?”
বেশ চিন্তিত ভাবে বিজ্ঞের মত মাথা নাড়তে আবার বললাম
“ওহ্! এবার আর বুঝি হাসি আসে না? সব হাসি কাদায় মিলিয়ে গেল?”
শেষ লাইন টা চিবিয়ে বললাম। লিও এখনো থম থমে কাদা মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আর ওর দিকে তাকালাম না। ডাঙায় উঠতে চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু এরকম প্যাচ মার্কা শাড়ি পড়ে কাদা থেকে উঠা বেশ ঝামেলা।
পা দুটো কে যেমন ভাবে কাদা চেপে রেখেছে, তেমন ভাবে শাড়ি। উফফ্ খুব বিরক্তিকর!
“মিইইরা!”
লিও বেশ আদুরে গলায় আমাকে পিছন থেকে ডাকলো। আমি তাকালাম। কিন্তু তাকাতেই থপ করে লিও আমার মুখে কাদা মেরে দিলো। মেরে দিয়েই সে আবার হাসতে লাগলো। অপ্রস্তুত থাকায় কিছুটা কাদা আমার নাকে মুখে ঢুকে গেল। আমি কাশতে শুরু করলাম। সামলাতে পারলাম না। ধপাস করে আবারো পড়ে গেলাম কাদায়। কাদায় পড়ে হাবু ডুবু খাচ্ছি। আমার নিঃশ্বাস আটকে আছে। কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। লিও হাসির চোটে এসব খেয়ালই করলো না। কিছুটা কাদা মনে হয়ে পেটেও চলে গেল। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। চিৎকার করে লিও কে ডাকতেও পারছি না। প্রাণ যায় যায় অবস্থা। অবশেষে কর্তার দয়া হল। সে আমাকে টেনে তুললো। আমি তখন খাবি খাচ্ছিলাম। দেখে সে তাড়াতাড়ি হাতের পানির বোতল টা আমার মুখের উপর ঢেলে দিল। আমি কাশতে লাগলাম। পানির বোতল টা কেড়ে নিয়ে ভালো করে কুলি করলাম। তারপর ধীরে ধীরে ঠিক হলাম। ভুস করে মুখ থেকে পানি ফেলে উঠতে চেষ্টা করলাম। লিও মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল
“স্যরি মিইইরা!”
আমি জবাব দিলাম না। শুধু কাদা থেকে উঠতে মনোযোগী হলাম। লিও আবারো বলল
“আমি স্যরি বলছি তো। এই যে কান ধরছি।”
তারপরও তাকালাম না। হাতড়ে ডাঙার লম্বা লম্বা দুর্বা ঘাস গুলো টেনে অনেক কষ্টে উঠে এলাম। পায়ের দিকে শাড়ি বেশ ওজন হয়ে আছে। সেটা নিয়ে হাটতে শুরু করলাম। লিও পিছন থেকে চিল্লিয়ে বলল
“আমার জন্য দাড়াও মিইইরা।”
আমি দাড়ালাম না। লিও কিভাবে যেন উঠে গেল। উঠেই দৌড়ে এসে ঝপ করে আমার হাত ধরলো। তারপরও আমি ওর দিকে তাকালাম না। লিও নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল
“আমার দিকে তাকাও।”
আমি তাকালাম না। পাথুরে দৃষ্টিতে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। লিও আবার ডাকলো
“মিইইরা!”
আমি তাকালাম না। লিও অধৈর্য্য গলায় বলল
“ঠিক আছে। তাকাবেনা এই তো? বেশ! একদম উচিত করেছি ফেলে দিয়ে। ভালো লেগেছে? শাস্তি হয়েছে?”
আমি কটমট করে লিওর দিকে তাকালাম। বললাম
“What do you mean?”
লিওর আরেকটু কাছে এসে ঘোলাটে চোখ দুটো আরো ঘোলাটে করে ফেলল। দাঁত চিবিয়ে বলল
“আমি ছিলাম না তাই তোমার সাহস বুঝি বেশি বেড়ে গিয়েছিল? যা ইচ্ছা তাই করছিলে না? এখন বুঝো মজা। আর আসবে আমাকে ফেলে?”
“What?”
“বলেছিলাম না কখনো পিছন থেকে গায়েব না হতে? ওয়াদা করেছিলে না আমাকে? বলো! কোথায় গেল সে ওয়াদা? আকাশে উড়ে গিয়েছে নাকি পাতালে লুকিয়েছে?”
আমি দমে গেলাম। লিও আবার বলল
“এটা তারই শাস্তি।”
লিও আমার হাতটা আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরল। আমি কিঞ্চিৎ ব্যথা পেলাম। কিন্তু লিও সেটা পরোয়া না করেই বললো
“যদি আর কখনো আমার পিছন থেকে গায়েব হও তবে…”
আমি হা করে বোকার মত জিজ্ঞেস করে ফেললাম
“তবে?”
“তবে…”
“তাহমিনা!”
কথা কেটে গেল ডাক শুনে। আমরা দুজনে চমকে উঠলাম। তাকিয়ে দেখলাম ছোট মামা। তাড়াতাড়ি লিওর কাছ থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নিলাম। ছোট মামা ধীর পায়ে এগিয়ে এলো। এ অবস্থায় আমাদের দুজন কে দেখে ছোট মামা ভীষণ ঘাবড়ে গেছেন। হা করে একবার আমার দিকে একবার লিওর দিকে তাকাচ্ছেন। আমার কাদা মাখা পুরো শরীরে চোখ বুলিয়ে বিস্মিত কণ্ঠে বললেন
“একি হাল করেছিস? কি হচ্ছে এসব?”
আমি নিজেই আবার নিজের দিকে তাকালাম। তারপর অসহায় দৃষ্টিতে মামার দিকে তাকালাম। লিও একেবারে আমাকে ভুত বানিয়ে ছেড়েছে।
মামা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লিওকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বললেন
“তাহমিনা…”
“মামা ও ও…!
কিছু বলার আগে হুট করে লিও মামা কে পায়ে ধরে সালাম করে ফেলল। মামা চমকে গেল। সালাম করে লিও হাত বাড়িয়ে দিল হ্যান্ডশেকের জন্য। এক গাল হাসি নিয়ে বলল
“হ্যালো! আমি উইলিয়াম এডওর্য়াড।”
মামা ইতস্থত করে হাত বাড়িয়ে দিলেন। আর বার বার আমার দিকে তাকাতে লাগলেন। লিও হ্যান্ডশেক করে বলল
“নাইস টু মিট ইউ।”
আমি নার্ভাস ভাবে একটু হেসে মামা কে বললাম
“মা-মামা এ-এ…!
সন্দিগ্ন গলায় মামা বললো
“লিও?”
“হ্যাঁ!”
মামা চমকে উঠলেন। বললেন
“সাংঘাতিক তাহমিনা! এ তো বাংলাদেশ চলে এসেছে। সহজে ছাড়বে বলে তো আমার মনে হচ্ছে না। এ কি জানে তোর বিয়ে হচ্ছে?”
“না মামা!”
“কি করবি এখন? কিছু ভেবেছিস?”
আমি মাথা নাড়লাম। কিছুই ভাবি নি। লিও আমাদের কথোপকথন এক বর্ণ ও বুঝতেছিল না। তাই অধৈর্য্য গলায় জিজ্ঞেস করে ফেলল
“কিছু বলছিলেন?”
আমি হেসে বললাম
“নাথিং লিও।”
“ওকে!”
চিন্তিত চোখে আমি মামার দিকে তাকালাম। মামা বলল
“উতলা হইস না। আমি দেখছি। আগে ঘরে চল।”
তারপর লিওর দিকে ফিরে বলল
“কি নাম বললে তোমার? এডওয়ার্ড তাই না?”
“ইয়েস!”
“চল ভিতরে চল। আর এ ব্যাগ টা আমাকে দাও।”
.
(চলবে)
.
শান্তিমত ইডিট করলাম। এর জন্য আমি আপনাদের কাছে অত্যন্ত দুঃখিত। প্রেশারে ভালো করে ভাবতে পারি নি। এবার আর আমার কাছে অগোছালো লাগছেনা। আপনাদের কেমন লাগছে জানাবেন। পরের পর্ব গুলো দ্রুত আসবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here