আমার ভিনদেশি তারা পর্ব -৬

0
2446

Story – আমার ভিনদেশি তারা
Writer – Nirjara Neera
পর্ব নং – ৬
————————————————
আমার যখন ঘুম ভাঙলো তখন উইনিপেগ শহরে তখন সূর্যের মিষ্টি আলো ছড়িয়ে পড়েছে। রোদের নরম আলো চারদিকে সুন্দর ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তার কিছুটা জানালা গলে আমার মুখের উপর পড়েছিল। ফ্লোর থেকে উঠে বসলাম। বাইরে থেকে টুং টাং মিষ্টি শব্দ ভেসে আসছে। আমি ধীরে ধীরে বাইরে বেড়িয়ে এলাম।
প্রফেসর হুডের বাড়ির পাশেই একই আকৃতির আরেকটি বাড়ি। মাঝে খানে কাঠের সীমানা। আর টুংটাং শব্দ টা ওই দিক থেকেই আসছে। কৌতুহল নিয়ে কাঠের সীমানার কাছে আসলাম। উঠানে দুজন ফুট ফুটে বাদামী চুলের ছেলে মেয়ে সাইকেল চালাচ্ছে। তাদের সাইকেল বেলের শব্দই এতক্ষন কানে আসছিল। টুং টাং… টুংটাং। মনে মনে হাসলাম। আমিও অনেক সাইকেল চালিয়ে ছিলাম ছোট বেলায়।
.
বাচ্চা দুটির হাসির কল কল ধ্বনিতে চারদিক মুখরিত হয়ে উঠেছে। পাশেই ছোট্ট ঝোপ গুলো তে হলুদ রংয়ের ছোট ছোট ফুল ফুটে আছে। সেখানে নানান রংয়ের প্রজাপ্রতি উড়ে বেড়াচ্ছে।
ছবির মত একটা দৃ্শ্য। যেন ভ্যানগগের আঁকা কোনো ছবি। মোহনীয় করে রাখে মুহুর্ত গুলো কে।
আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। হুশ ফিরল মিসেস হুডের ডাকে। খাওয়ার জন্য তিনি আমাকে ডাকছিলেন। প্রফেসর হুড আগেই তার ভার্সিটিতে চলে গিয়েছেন। উনার ক্লাস ছিল। ক্লাস সেরে এসেই আমাকে নিয়ে যাবেন। কিছু ফর্মালিটি পূরন করতে।
বাড়ির কিছু দূরেই ম্যানিটোবা ইউনিভার্সিটি টা। তাই আসা যাওয়া তেমন সমস্যা না।
ঘন্টা খানেকের মধ্যে প্রফেসর হুড এসে গেলেন। রাতে হয়তো চেহারা ভালো করে দেখিনি। ডোরা কাটা শার্ট পড়া এ বৃদ্ধ কে অনেক টা দেবতা জিউসের মতই মনে হচ্ছে। ফর্সা শরীরে খানিকটা লাল আভা ছড়িয়ে আছে।
তিনি খেতে খেতে আমাকে বাংলাদেশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন
“টাহমিনা তোমার পিতামাতা ভালো আছে তো?”
“জি প্রফেসর। ওরা ভালো আছে”
“আমি তোমার জন্য এয়ার পোর্টে যেতে পারি নি। সে জন্য আমি দুঃখিত।”
“ইটস ওকে প্রফেসর”
“আজ তোমাকে নিয়ে যাবো ভার্সিটিতে। দেখবে সেখান এক ঝাঁক বন্ধু পেয়ে তোমার খুব ভালো লাগবে। তখন তুমি বাড়ির কথা ভুলেই যাবে”
“আচ্ছা”
“আর তোমার জন্য হোস্টেলে একটা রুমের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ২/১ দিনের ভিতরেই সেটা পেয়ে যাবে। ততদিন তুমি আমার এখানে থাকতে পারো।”
“ধন্যবাদ প্রফেসর”
“বাড়িতে ফোন করেছো?”
“না করি নি”
“কি বলছো? এখনো করো নি?”
“না মানে… আজকে করবো”
.
প্রফেসরের সাথে রাস্তায় বেড়িয়েছি। কিছুক্ষন পরেই ম্যাক ডারমোট এভে উঠেছি। একবারে সোজা রোড। কোথাও একটু বাঁকা নেই। সব কিছু কেমন ঝকঝকে তকতকে। রোডের দুপাশে সোনালি পাতার গাছের ফাকে ফাকে সূর্যটা উকি দিচ্ছে। ম্যাপল গাছের সারি সারি লাইন দেখে কানাডা বাসীর ম্যাপল প্রিয়তার কথা আন্দাজ করা যায়।
আমি সাদা কালোর উপর লং সুতির টপস পড়েছি। সাথে নেভি ব্লু রংয়ের পাজামা। চুল গুলো পনি টেইল করে বেধে নিয়েছি। একটা সাদা স্কার্ফ মাথায় দিয়ে গলার সাথে এক প্যাচ দিয়ে বুকের উপর ফেলে রেখেছি। পিঠের ব্যাক প্যাকে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস। মোট কথায় পুরোটা প্রস্তুত আমি।
যেতে যেতে প্রফেসরের সাথে অনেক কিছু নিয়েই কথা হচ্ছিল। তিনি সবকিছুই আমাকে চিনিয়ে দিচ্ছেন।
আমি সব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম। ভার্সিটির কাছাকাছি পৌছে গেছি সেটা আশ পাশ দেখেই বুঝে ছিলাম। কারন আশে পাশেই এক ঝাক তরুণ তরুণী রা এগিয়ে যাচ্ছিল। তাদের পোশাক পরিচ্ছদে নিঃসন্দেহে বলে দিচ্ছিলো এরা স্টুডেন্ট। তবে একটু নার্ভাস হয়ে গেলাম। কারন সবার মাঝে ২/১ তরুণী এমন ছিল যারা শর্ট স্কার্ট বা হাটুর উপরের ছোট্ট প্যান্ট দেখে। তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু সেটা আমার জন্য দৃষ্টি কটু ছিল। যা হোক তাদের সবকিছুই এ পরিবেশের জন্য মানান সই। তাই পরিবেশ টা দেখে আমার মন টা ভরে উঠলো। চমৎকার একটা পরিবেশ। এমন পরিবেশে আমি পড়া লেখা করবো ভাবতেই অদ্ভুত আনন্দ হল আমার।
.
দূর থেকে ইউনিভার্সিটি টাকে কোনো রাজ মহলের মতই মনে হচ্ছে। বিশাল বড় চারটা থাম যেন সগৌরবে দাড়িয়ে আছে। সেটা প্রশাসনিক ভবন।
ভিতরে প্রবেশ করেই চক্ষু ছানা বড়া। আমি আসলেই ভাবিনি এত বড় একটা ক্যাম্পাসে আমি পড়ালেখা করবো। হা করে তাকিয়ে ছিলাম শুধু। এ সব কিছুই আমার জন্য নতুন। তাই এত সব সৌন্দর্য্য এক সাথে হজম করতে আমার কষ্ট হচ্ছি।
.
ফর্মালিটি সব পূরন করার পর প্রফেসর হুডের সহায়তায় ক্লাস রুটিন এবং প্রয়োজনীয় বই এবং নোট সংগ্রহ করলাম। এরপর প্রফেসর হুড ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে যেতে বললেন। উনাকে সায় জানিয়ে কিছু দূর আসতেই আমার মনে হল ওরিয়েন্টশন ক্লাস কোথায় হবে সেটাই তো আমি জানি না। কিন্তু প্রফেসর হুড কে আবারো বিরক্ত করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। এমনি তেই তিনি আমার জন্য অনেক করেছেন। তাই নিজে থেকে খোজার চেষ্টা করতে লাগলাম।
ক্যাম্পাসের এ মাথা ও মাথা হাটছিলাম কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না ওরিয়েন্টেশন কোথায় হচ্ছে।
শেষে বাধ্য হয়ে সাহায্য নিতেই হল। একজন হাস্যোজ্জল তরুণীর কাছে জিজ্ঞেস করতেই সে আমাকে সযত্নে ক্লাস টা চিনিয়ে দিল। আমি কৃতজ্ঞ হলাম এদের বন্ধুভাবাপন্ন মনোভাব দেখে।
ওরিয়েন্টেশন ক্লাস খুব চমৎকার গেল। আমি ক্লাস আর ক্যাম্পাস সম্পর্কে খুটিনাটি সব জানতে পারলাম। এছাড়া বিভাগীয় টিচার এর পরিচয় জানলাম। একটা মেয়ের সাথে ও পরিচয় হল। সে নর্থ ডাকোটা থেকে এসেছে। নাম এডালিন। আমাদের বয়স একই। তবে ও কিছুটা লম্বা আমার চাইতেও। হতে পারে পরবর্তিতে আমরা ভালো বন্ধুও হতে পারি।
.
(চলবে)
.
পর্ব টা অনেক ছোট তাই আমি দুঃখিত। তবে আমিও কষ্ট পাচ্ছি আপনাদের রেসপন্স না দেখে। ৬০০+ মানুষের কাছে পোষ্ট টা পৌছে। কিন্তু লাইক ১০০+ ও হতে অনেক কষ্ট হয়। আমি কিন্তু এই লাইক কমেন্টের মাধ্যমেই অনেক অনুপ্রেরনা পাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here