আমার_গল্পে_তুমি ১৫_পর্ব

আমার_গল্পে_তুমি ১৫_পর্ব
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)

,
মেঘে ঢাকা আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে গাড়ি, এইসব পাহাড়ি রাস্তায় যে সে ড্রাইভ করতে পারে না অভিজ্ঞ ড্রাইভার ছাড়া,, আর্দ্র সামনে বসেছে আর ইয়ানা এবং ম্যানেজার পিছনে,, ইয়ানা সারা রাস্তা গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দেখতে দেখতে এসেছে, যতই কাজের জন্য আসা হোক ফাস্ট টাইম আসলে ফিলিং টাই অন্যরকম খুব ইচ্ছে করছে , শৈল প্রপাত, প্রান্তিক লেক, বগালেক, কেওক্রাডং, তজিংডং, মিরিঞ্জা, রিজুক জল প্রপাত, নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র, নীলগিরি, স্বর্ণমন্দির, ক্যওজাদি পাহাড়, আলীর সুড়ঙ্গ, তিন্দু পাথর ছড়া, রাইংখং পুকুর আরো যতসব দর্শনীয় স্থান আছে সব গুলি একেবারে দেখে তারপর যায়, না না মন চাচ্ছে এখানে পাহাড়ের উপর ছোট্ট একটা কুঠির বানিয়ে ওখানে সারাজীবন থেকে যায়,, উফফ এতো সুন্দর কেনো পৃথিবী,, কিন্তু আমর এতোসব কিছুই দেখা হবে না কেননা তিন দিনের জন্য আসা আর আমি জানি এই তিনদিন আমার গাম্বাট রাগী বস কাজ ছাড়া কোথাও যাবে না,, ইস আজকে যদি একটা কাজের বর থাকবো তাহলে তাকে নিয়ে সবকিছু দেখতাম।,
আমাদের হোটেলে পৌঁছাতে প্রায় বিকেল হয়ে গেলো আর্দ্র স্যার তিন জনের জন্য তিনটা রুম নিয়েছে,, তিনটা রুমের কি দরকার ছিলো দুটো নিলেই তো হতো, একটায় আমি আর একটা ওনারা দুজন কিন্তু না ওনি আবার কারো সাথে নিজের বেড শেয়ার করে না ঢং,, আমি আমার রুমে এসেই ব্যাগটা বিছানায় ফেলে ব্যালকণিতে চলে গেলাম,, সেকি এক অপরূপ দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে গেলো,,, পাশে তাকিয়ে দেখি আর্দ্র স্যার, তারমানে আমার পাশের রুমটা ওনার,, এখন একটু বিশ্রাম নিয়ে ঘুমিয়ে নাও রাতে আমি সব কাজ বুঝিয়ে দেবো আর সকালে আমাদের মিটিং আছে।

এতোক্ষণ একটা মুডে ছিলাম কিন্তু ওনার কথায় সব ফুস হয়ে গেলো,, আমি মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ রুমে এসেছেই বেডে সটান হয়ে শুয়ে পড়লাম সাথে সাথে আমার চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে আসলো।,ঘুম ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ভাঙ্গলো সন্ধ্যার ও পর,, আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে সোফায় বসে হালকা কিছু খেয়ে আর্দ্র স্যার এর অপেক্ষা করতে লাগলাম বেশ কিছুক্ষণ পরই ওনি আসলেন।

যাক রাইট টাইমে এসেছো আচ্ছা তাহলে শুরু করা যাক শোনো,

, আরে দাঁড়ান আগে ম্যানেরজার স্যার তো আসুক তারপর নাহয় শুরু করবেন।

ম্যানেজার আসবে না,, ওনি চলে গেছে।

আর্দ্র কথা শুনে আমার চোখ কোটোর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম ম্যানেজার স্যার চলে গেছে মানে??

মানে হলো এখানে আসার পর ওনার ফোনে ফোন আসে ওনার ওয়াইফ সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে অনেক আঘাত পেয়েছেন মাথায় তাই ওনি চলে গেছেন।

কিহ ওনি চলে গেলো আর আপনি আমায় জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না,,।

কীভাবে জানাবো তুমি তো এসেই ঘুমায় গিছিলে,, এতো কথা না বলে কাজের কথা শোনো,,, কাল সকালে আমার একটা পেজেন্টেশন আছে আর সেটা তুমি তৈরি করবে আর,, এভাবে অদ্ভুদ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেনো?? পরে যদি বলো যে বোঝোনি তখন আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম।

তারমানে এই তিনটা দিন ওনার সাথে একা থাকতে হবে, ওনি যতই ভালো হন তবুও ভয় করছে এভাবে কীভাবে ওনার সাথে থাকবো,,।

কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না.
জ,,জি শোনেছি আপনি বলুন,, তারপর ওনি আমায় পুরো কাজ বুঝিয়ে দিলেন, পুরোটা সময় ওনি ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কথা বলেছিলেন আর আমি একবার ওনার দিকে তো একবার ল্যাপটপের দিকে তো আবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম আমার সব কিছু ঠিক আছে কি না,, প্রায় অনেক সময় ধরে ওনি আমায় বোঝালেন।
ডিনার করে একেবারে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ো আর হ্যাঁ কেউ দরজা খুলতে বললে খুলবে না ওকে।

কেনো আপনি কোথায় যাচ্ছেন??

কেনো তুমি তো আমায় বিশ্বাস করতে পারছো না তাহলে আমি থাকলেই কি আর না থাকলেই কি,, থাকলে যদি আবার উল্টা পাল্টা কিছু করি, তুৃমি তো এটাই ভাবো,, বাইরে যাচ্ছি।

ওনি নিজে একা একা এই রাতের শহরের সুন্দরর্য উপোভোগ করবে আর আমি আবাল এর মতো একা একা রুমে বসে থাকবো ধ্যাত,, ।
,,,,,,
এসেই ঘুমাইছিলাম বিধায় এখন আর ঘুম পাচ্ছে না তাই ব্যালকণিতে বসে আছি, ওনার রুম অন্ধকার মনে হয় এখনো আসিনি কোথায় গেছে কে জানে, আচ্ছা আমি ওনাকে নিয়ে এতো ভাবছি কেনো ওনি যেখানে খুশি যাক তাতে আমার কি হুমম,, একটু আগেই মায়ের সাথে কথা বলেছি তাই ফোনে গান দিয়ে ফোনটা পাশে রেখে বাইরের দিকে তাকিয়ে সময়টা অনুভব করছিলাম, তখনি পাশের ব্যালকণির দরজা কোলার আওয়াজ আসলে তাকিয়ে দেখি আর্দ্র পরনে থ্রী কোয়াটার প্যান্ট আর গায়ে লাল রঙের একটা টিশার্ট চুল গুলো এলোমেলো , ফর্সা গায়ে লাল রংটা ভালোই মানিয়েছে তাই জন্যই আমিও কেমন হাবলার মতো ওনার দিকে তাকিয়ে আছি।

কাল নয়টার মধ্যে রেডি হয়ে থাকবে দশটা থেকে মিটিং অনেকটা পথ যেতে হবে বোঝেছো??

ওনার কথায় আমার হুশ ফিরলো আমি মাথা নারিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে থেকেই হ্যাঁ বললাম, ওনি ব্যালকণির রেলিং ধরে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,,, অনেক রাত হয়েছে এভাবে বসে না থেকে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো যাও কাল সকাল সকাল উঠতে হবে।

ধ্যাত ভালো লাগে না ভালো করে সময়টা অনুভব করতেই দিলো না ওনাকে বকতে বকতে রুমে চলে আসলাম কি করবো ঘুমতো আসে না তবুও চোখ বন্ধ করে বেডের উপর ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকলাম এভাবেই কখন ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পারি নাই,,, সকালে সাংঘাতিক একটা স্বপ্ন দেখে লাফিয়ে উঠে বিছানার উপর বসে পড়লাম।

এ আমি কি স্বপ্ন দেখলাম এটাও সম্ভব?? আমি এতো দিন স্বপ্নে যাকে দেখতাম সে আসলে আর্দ্র স্যার?? আজকে তার মুখটা দেখলাম হায় হায় এটা কেমন করে হলো,, ওনিই কেনো দেশে কি আর কোনো ছেলে ছিলো না শেষ মেষ ওনাকেই আমার স্বপ্নে আসতে হলো,, আমার স্বপ্নে দেখা রাজকুমার ভিলেন এ পরিনত হলো

সারাদিন ওনার সাথে কাজ করার পর বিকেলের দিকে কাজ শেষ হয়ে গেলো আর এই পুরোটা সময় আমি থেকে থেকে শুধু ওনার দিকে তাকাচ্ছিলাম, চারটার মধ্যে আমরা হোটেলে ফিরে আসলাম রাত হতে এখনো অনেক সময় বাকি এতোটা সময় কি করবো আর সাহস করে ওনাকে বলতেও পারছিনা যে স্যার চলুন একটু ঘুরে আসি, এটা বললেই গম্ভীর কণ্ঠে বলবে আমরা এখানে কাজ করতে এসেছি কোনো ট্যুরে আসিনি সো এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো হম???

আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে বাইরে আসলাম আশেপাশে একটু ঘুরে দেখার জন্য আর্দ্র স্যার হয়ত রুমে,,, থাক ওনি ওনার মতো আমি আমার মতো ঘুরি ওনাকে লাগবে না,,, হোটেলের সামনের দিকে হাঁটছিলাম তখনি দেখি একটা ক্যাপল মনে হয় নতুন বিয়ে হয়েছে হানিমুনে এসেছে, কেমন একজন আরেকজন এর হাত ধরে রেখেছে ওনাদের জিগাস করলাম যে কোথায় গিয়েছিলো বলল নীলগিরি,, এটা শুনার সাথে সাথে এক বালতি আফসোস হতে লাগল কেনো আমি বিয়ে করলাম না বিয়ে করলে আমিও এমন বর নিয়ে ঘুরতে পারতাম আফসোস নিয়ে হাঁটতে ছিলাম তখনি মেঘ ভেঙ্গে ভারি বর্ষণ শুরু হয়ে গেলো,, বৃষ্টি আসার কোনো নিদিষ্ট সময় নেই তবুও আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আমার মন ভালো করতেই মেঘেরা সব এক জোট হয়ে বৃষ্টি স্বরুপ আমার উপর পরছে,,আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে দুহাত সামনে বাড়িয়ে দিয়ে ভিজতে লাগলাম।

মিটিং থেকে ফিরেই আর্দ্র ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরেছিলো সারা দিন এতো বকবক করেছে যে ওর মাথা ধরে গেছে প্রায় অনেক সময় ঘুমিয়েছে হঠাৎই রুমের দরজায় নক করার শব্দে ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো শুয়ে থেকে উঠে বসে বলল,,দরজা খুলায় আছে ভিতরে আসুন , তখনি হোটেলের একজন লোক এসে বলল।

স্যার আপনার ওয়াইফ হোটেলের বাইরে অঙ্গান হয়ে পরে আছে। ,

হোয়াট?? আমার ওয়াইফ মানে??

আসোলে কালকে আপনার সাথে যে মেয়েটা আসলো মানে ওনিতো আপনার ওয়াইফ ওনিই অঙ্গান হয়ে পড়ে আছে জলদি যান।

ইয়ানা?? ওর আবার কি হলো হঠাৎ করে।

চলবে৷,,,,,,??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here