আমার_গল্পে_তুমি ১৬_পর্ব

আমার_গল্পে_তুমি ১৬_পর্ব
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)

,
মাথাটা বেথ্যায় ছিঁড়ে যাচ্ছে তবুও আস্তে করে চোখটা খুললাম দেখলাম আমি আমার নিজের রুমে কপালের উপর হাত দিয়ে দেখি ভিজা একটা কাপড়ের টুকরো অনেক কষ্টে উঠে বসলাম পাশে তাকিয়ে দেখি আর্দ্র চেয়ারে বসে ফোন দেখছে,, আমি হালকা কাশি দিতেই ওনি ফোন রেখে আমার দিকে তাকালো,,, এই মেয়ে তুমি নিজেকে কি মনে করো হ্যাঁ তুমি অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকবে আর আমি সব কাজ ফেলে তোমার সেবা করবো?? ভুলে যেওনা আমরা এখানে কাজ করতে এসেছি বেড়াতে আসিনি সো এর পর থেকে এমন করবে না যদি করো তাহলে তোমাকে রেখেই চলে যাবো যত্তসব, কথাগুলো বলে আর্দ্র গটগট করে রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো ,।

কি হলো এটা ওনি আমাকে এতোগুলো কথা শুনালো কেনো কি করেছি আমি, হ্যাঁ কালকে বৃষ্টি তে ভিজতে ভিজতে হোটেল থেকে একটু দূরে চলে গিছিলাম পরে রাস্তা চিনতে পারছিলাম না তারপর মাথাটা কেমন বেথ্যা করছিলো আর তো কিছু মনে নেই।,,, ইয়নার ভাবনার মাঝেই হোটেলের একজন স্টাপ খাবার নিয়ে আসলো।

ম্যাম খাবারটা খেয়ে নিন স্যার পাঠিয়েছে।
আচ্ছা আপনি কি বলতে পারবেন যে আমি এখানে কীভাবে আসলাম আমি তো বাইরে ছিলাম।
আসোলে ম্যাম অতিরিক্ত বৃষ্টি তে ভেজার জন্য জ্ঞান হারিয়ে হোটেল থেকে একটু দূরে পরেছিলেন তখন আমাদের হোটেলের একজন দেখতে পেয়ে আমরা স্যারকে বলি তারপর স্যারই আপনাকে কোলে নিয়ে হোটেলে নিয়ে আসে আর রাতে আপনার অনেক জ্বর হয়েছিলো স্যার ডাক্তার নিয়ে আসলে ডাক্তার আপনাকে দেখে চলে যাওয়ার পর স্যারই আপনার মাথায় জলপট্টি দিয়েছিলো আর এখন আপনি একদম সুস্থ, যাই বলেন ম্যাম স্যার কিন্তু অনেক ভালো আর কেয়ারিং।

কিহ মিস্টার আর্দ্র আমাকে কোলে করে নিয়ে এসেছিলো?? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না,, আসোলে লোকটার বাইরে টা অনেক শক্ত অনেক কঠোর আর ইগোতে ভরা কিন্তু মনটা ভালো হুমম এর জন্য ওনাকে একটা ধন্যবাদ দেওয়াই যেতে পারে।
,,,,,,,
আআআআআআআআ,, এভাবে রুমের মধ্যে কেউ শুধু টাওয়াল পড়ে ঘুরে বেড়ায় ছিঃ আপনার একটু লজ্জা নেই।

ইউ?? তুমি এখানে কি করছো আর এটা আমার রুম আমি এখানে যেভাবে ইচ্ছে থাকবো তাতে তোমার কি?? আর তুমি যাও এখান থেকে তোমার জন্য কাল সারারাত ঘুমাতে পারিনি এখন আমি একটু রেস্ট নেবো দেন দশটার দিকে বেড়োতে হবে।

আমি অসুস্থ তবুও আমাকে দিয়ে কাজ করাবে হার্টলেস একটা ,,, আচ্ছা শুনুন আমি এখানে আপনাকে ধন্যবাদ দিতে এসেছিলাম।
কিসের জন্য??
কালকে আমার এতো কেয়ার নেওয়ার জন্য কালকে আপনি না থাকলে,,,,
হয়েছে তোমার বলা শেষ ?? তাহলে শোনো আমি তোমার কেয়ার করেছি আমার সুবিধার জন্য কেননা তুমি যদি আজকে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকতে তাহলে আমাকেও তোমায় দেখার জন্য সব কাজ ফেলে বসে থাকতে হতো আর ওদিকে আমার কোম্পানির লস হতো,, এই জন্য আমি তোমার কেয়ার করেছি এতে অন্যকিছু ভাবার দরকার নেই,, এখন যাও গিয়ে একটু রেস্ট নিয়ে নাও একটু পর আমার সাথে বেড়োতে হবে।

তারমানে ওনি ওনার নিজের সার্থের জন্য এমনটা করেছেন, কি খরাপ লোক ,,, যাও বা ধন্যবাদ দিতে চেয়েছিলাম সেটাও দেবো না ,,, আমি আসছি।
কেমন লোক হৃদয় বলতে কিছুই নেই ভিতরে বাইরে ইগোতে ভরা ,, সেদিনকার মতো সব কাজ শেরে আমরা সন্ধ্যার দিকে হোটেলে ফিরলাম, কালকেও থাকার কথা ছিলো কিন্তু কাজ শেষ হয়ে গেছে তাই আমরা কালকেই চলে যাবো ,, সারা দিন এতো কাজ করেছি সারাক্ষণ ওনার পিছু পিছু থাকতে হয়েছে,, বাড়ি গিয়ে আবার পড়তে হবে সামনের মাস থেকে আবার আমার ফাইনাল ইয়ারের পরিক্ষা, ক্লান্ত শরীলটাকে বিছানয় এলিয়ে দিলাম এখন একটা লম্বা ঘুম দিতে হবে।

আর্দ্র হোটেলে এসে রুমে আসার সময় দেখল একদল ছেলেমেয়ে গিটার নিয়ে গান গাইতে গাইতে রুমে যাচ্ছিলো আর্দ্রর পাশের রুমেই,, আর্দ্র ওদের কাছে গিয়ে বলল একটু সময়ের জন্য গিটার টা দিতে যদিও আর্দ্রর বাড়িতে গিটার আছে আজকে ওদের দেখে বাজাতে মন চাচ্ছে তাই চাইলো গিটারটা নিয়ে ব্যলকণিতে গিয়ে মেঝেতে বসে গিটারে সুর তুললো গান গাইলো না শুধু গিটার বাজাচ্ছে,, গানের সুর শুধু ,, ইয়ানা কেবলি চোখটা বন্ধ করেছিলো তখনি গিটারের সুর শুনে উঠে বসল ,, এতো সুন্দর করে কে গিটার বাজাচ্ছে ,, এক পা দু পা করে বেলকনিতে গেলো ইয়ানা তারপর পাশে তাকিয়ে দেখলো আর্দ্র চোখ বন্ধ করে একমনে গিটার বাজাচ্ছে মাঝে মাঝে চোখ খুলছে।

এনি এতো সুন্দর করে গিটার ও বাজাতে পারে?? ওনার মতো হৃদয়হীন মানুষের মধ্যে ও এতো সুন্দর সূর আছে ভাবা যায় ,,, ইয়ানা ও চোখ বন্ধ করে আর্দ্রর গিটারের সূর অনুভব করতে লাগল ,, হয়ত এখান থেকেই এদের ভালোবাসার সূচনা হবে।

সকালে ইয়ানা ব্যাগে সব কিছু ভরে বেডের উপর ফোনটা নিয়ে ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে নিচে গেলো খেতে কেননা আর্দ্র বলেছে যে আজকে সকাল সকাল বেরোতে হবে তাই একে বারে রেডি হয়ে নিচে নেমেছি,, আর্দ্র স্যার তো বলেছিলো বাস ছাড়বে নয়টায় এখন কেবল আটটা বাজে হাতে এখনো ঘন্টা খানিক মতো সময় আছে তাই ইয়ানা খেয়ে হোটেলের একজন স্টাফ কে বলল ওকে যেনো বাজারটা চিনিয়ে দেয় ও কিছু কেনাকাটা করবে, তো সেই অনুযায়ী হোটেলের লোকটা ইয়ানাকে সবকিছু বলে দিলো ইয়ানা সেই মোতাবেক হালকা কিছু শপিং করতে চলে গেলো।
,,,,,
এই মেয়েটা কে নিয়ে কি করবো আমি সাড়ে আটটার বেশি বেজে গেছে ওনার কোনো পাত্তাই নেই মন চাচ্ছে ওকে রেখেই চলে যায় ,, কোথায় গেছে কে জানে।
স্যার আপনাদের তো আজকে যাওয়ার কথা ছিলো তাহলে আপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?? কাউকে খুঁজছেন??
হুমম কালকে যে মেয়েটা অঙ্গান অবস্থায় পড়ে ছিলো মানে আমার সাথে যেই মেয়েটা এসেছে ওকে দেখেছেন কোথাও??
হ্যাঁ দেখেছি তো ওনি একটু আগে ওই বাজারের দিকে গেছে।
,, হোয়াট?? বাজারে গেছে?? ওকে তো ,,, আর্দ্র রেগে গজগজ করতে করতে হোটেল থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ইয়ানাকে ফোন করল কিন্তু ইয়ানা ফোন ধরল না, , ধরবে কিভাবে ওর ফোন তো ও সাইলেন্ট করে ব্যাগে রেখেছে ,, আর্দ্র রেগে আগুন হয়ে একের পর এক ইয়ানাকে ফোন করেই যাচ্ছে ,, এদিকে ইয়ানা মনের সুখে শপিং করছে তারপর ওর মনে পড়ল নয়টার সময় তো ওদের বাস তড়িঘড়ি করে ব্যাগ থেকে ফোনটা বার করে দেখল নয়টা দশবাজে আর আর্দ্র গুনে গুনে ওকে দশবার কল দিয়েছে ,, এইরে আজকে তো আমার অবস্থা খারাপ ওনি যে রাগী, আচ্ছা ওনি আবার আমাকে রেখে চলে যায়নি তো?? তাহলে তো আমি শেষ, ইয়ানা আর্দ্র কে ফোন করতে গেলে ওর ফোনটা বেজে উঠল আর্দ্র কল দিয়েছে ইয়ানা ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে রাখতেই আর্দ্র বলল,, পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাস স্টপে আসো নয়ত আমি চলে যাবো তোমাকে রেখেই।

আরে কিন্তু,, যাহ কেটে দিলো এখন আমি এতো ব্যাগ নিয়ে যাবো কীভাবে?? ইয়েস আইডিয়া ,,, ইয়ানা সব গুলি শপিং ব্যাগ ভাজ করে ওর ব্যাগের ভেতর ঢুকায়ে দৌড় দিলো,,, দৌড়ে বাস স্টপে এসে হাঁপাতে লাগলো তারপর ফোনটা বার করে দেখল অলরেডি সাড়ে নয়টা বাজে আর আর্দ্র ওর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ইয়ানা একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,,, বাস কি চলে গেছে?? ব্যাস আর্দ্রর রাগ বাড়ানোর জন্য ইয়ানার এই একটি কথাই যথেষ্ট ছিলো আর্দ্র রেগে বোম হয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,,,

তো?? তোমার জন্য কি এখনো বসে থাকবে?? এই তোমার কোনো কমনসেন্স নাই?? তোমাকে আমি কালকে কত বার করে বললাম যে আজকে সকাল নয়টায় বাস তবুও তুমি সেই লেট করলে আসোলে তোমাকে রেখে আমার চলে যাওয়াই ভালো ছিলো।

ইয়ানা চুপ করে মাথা নিচু করে আছে তারপর আস্তে করে বলল,, এতো রাগ করার কি আছে পরের বাসে গেলেই তো হয়।

হুমম তোমার জন্য এখানে ঢাকাগামী বাস অনেক গুলি রাখা হয়েছে যাও যাও উঠে পড়ো,, যত্তসব,, আর্দ্র ইয়ানাকে বকা শেষে পকেটে হাত দিয়ে দেখল ওর মানিব্যাগ নেই,,, ওহ শিট।

কি হয়েছে??
আমার ওয়ালেট মনে হয় চুরি হয়ে গেছে??
কিহ?? তাহলে এখন যাবো কীভাবে?? নিজের ওয়ালেট সামলে রাখতে পারে না আবার আমাকে জ্ঞান দেয়।
কিছু বললে??
না,, বলছি কি এখন তাহলে কি করবো আমরা ঢাকা ফিরবো কীভাবে??
কেনো তোমার কাছে টাকা নেই?? তোমার টাকা দিয়ে ফিরবো তারপর আমি ওখানে গিয়ে দিয়ে দেবো।
,, আসোলে আমি তো ওতোটাকা আনিনি আসার সময় তো আপনিই টাকা দিয়ে দিলেন যেহেতু অফিস থেকে এসেছি তাই সব খরচ আপনার এই জন্য আমি টাকা আনিনি শুধু এক হাজার টাকা এনেছিলাম।
,,, হবে একহাজার টাকাতেই হবে দাও।
,, টাকা নেই তো,, ভয়ে ভয়ে বলল ইয়ানা।
,, নেই মানে কি করেছো??
,, ইয়ে মানে শপিং করে সব টাকা ফুরাই গেছে এখন ব্যাগে একশো টাকার একটা নোট আছে দেবো??
,, নাহ ওটা তুমি চিবায়ে চিবায়ে খাও ইডিয়ট,, রাগে কড়মড় করে বলল আর্দ্র।

চলবে,,,,,,??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here