আমার_গল্পে_তুমি ৩৯_পর্ব

#আমার_গল্পে_তুমি ৩৯_পর্ব
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)

,
আর্দ্র ইয়ানা চা খায়ে অনেকক্ষণ হাঁটা হাঁটি করে তারপর বাড়ির দিকে রওনা দিলো, ততক্ষণে হালকা রোদ উঠে গেছে,, ওরা বাড়ি গিয়ে দেখলো ওঠানে রোদ পড়েছে সেখানে মাদুর বিছিয়ে ইয়ানার নানু আকাশ আর অনিককে কীভাবে সরিষার তেল মালিশ করতে হয় সেটা দেখাচ্ছে, আকাশ আর অনিক ও মন দিয়ে সেটা দেখছে যেনো এই মুর্হুতে এটা দেখা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই,, ইয়ানার নানু ইয়ানা আর আর্দ্র দেখে ওদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলল,, আরে তোমরাও এসে গেছো ইয়ানা আয় আয় এখানে এসে বস তোর বরকেও তেল মালিশ করা শিখিয়ে দেই ,,

কিহ আমি কখনোই এটা নেবো না, ইয়ানা তোমার নানুকে বলে দাও, আর এটা কীভাবে নেবো হাত পা কেমন চটচট করে,, নো।

একথা আমাকে না বলে পারলে নানুকে বলুন এই বলে ইয়ানা ওর নানুর পাশে গিয়ে বসে পড়ল,, আর্দ্র কে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনিক আর আকাশ আর্দ্রর কাছে গেলো,,,এই তোরা সেই কখন থেকে কি গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছিস শুনি, আর এতো ভোরে দুজনে কোথায় গিছিলি হুমম।

আকাশ ভাইয়া তুমি ঠিকি বলেছো তা আর্দ্র ভাই এতো সকালে কোথায় গিয়েছিলে, আর জানোত অনিক ভাইয়া গেলো রাতে না আমার ভীষণ জোরে হিসি পেয়েছিলো তো আমি যখন হিসি করতে কাঁপতে কাঁপতে বাইরে আসলাম তখন কি দেখেছিলাম জানো??

কি দেখেছো বলো বলো,,

দেখি যে আমাদের দ্যা গ্রেট আর্দ্র ভাই কল চেপে পানি তুলছে,, সেকি এক ভয়াবহ দৃশ্য আমি তো প্রথমে অন্ধকারে দেখে ভয় পেয়ে গিছিলাম তারপর দেখি ইয়ানা রুমের দরজা খুলে আর্দ্র ভাই এর দিকে এগিয়ে গেলো, তো রুমের দরজা খোলায় সেই আলো এসে আর্দ্র ভাই এর গায়ে পড়ায় আমি বুঝতে পারলাম যে ওটা আর্দ্র ভাই।

সেকি কান্ড তারপর তারপর,,

তারপর আর কি, এতোকিছু দেখে সেখানে কি আর দাঁড়িয়ে থাকা যায়, আমার বুঝি লজ্জা করে না তার উপর ভীষণ জোরে হিসি পেয়েছিলো আমি ওখান থেকে দৌড়ে চলে গিয়েছিলাম।

ইয়ানা কান পেতে ওদের কথা শোনার চেষ্টা করছিলো কিন্তু পারলো না কেননা ওরা ফিসফিস করে কথা বলছিলো,,, সেকি আর্দ্র!ভাই আমার তা তুই ওতো রাতে কল চেপে পানি তুলছিলি কেনো?? হুম হুম,, অনিকের কথায় আর্দ্র কেমন অস্থিতে পড়ে যায় তাই কোনো রকমে ওদের কিছু বলে পকেটে হাত রেখে রুমে চলে গেলো,, অনিক আর আকাশ আর্দ্রর কান্ডে হুহা করে হেসে উঠল।

শুনুন না,,,, হঠাৎ পিছন থেকে কারো নরম মোলায়েম কন্ঠ শুনে অনিক আর আকাশ পিছন ফিরে তাকালো দেখল একটা অল্প বয়সী মেয়ে ওদেরকে ডাকছে,, তুমি নিশ্চয়ই শিলা ইয়ানা অবশ্য তোমার কথা আমাদের বলেছে তুমি হলে ইয়ানার মামাত বোন তাই তো??

জি আপনি ঠিকি ধরেছেন, আপনি বুঝি ইয়ানা আপুর বরের বড় ভাই?? আর আপনার পাশে দাঁড়ানো ওটাই বুঝি আপনার ভাই আর ইয়ানা আপুর বর আর্দ্র?? , আকাশকে উদ্দেশ্য করে বলল শিলা।আসলে শিলা আর্দ্র কে আকাশ ভেবেছে আর আকাশকে আর্দ্র।

কাম সারছে এতো দেখি উল্টা পাল্টা করে ফেলছে কাকে কি বলছে,, ভাগ্যিস এখানে আর্দ্র নেই তাহলে তো কেলেংকারী হয়ে যেতো,, আসলে রাতে ইয়ানা সবার সাথে সবাইকে পরিচয় করায়ে দিছিলো কিন্তু শিলা সেখানে ছিলো না ও ঘুমিয়ে পড়েছিলো তাই সকালে উঠে আকাশকে দেখে ও ভেবেছে এটাই বুঝি ইয়ানার বর আর্দ্র।

আরে না তুমি ভু,, অনিক আর কিছু বলার আগেই পরশ এসে অনিক আর আকাশ কে ডেকে নিয়ে গেলো বলল খাওয়ার জন্য ডাকছে, ইয়ানা আর ওর নানু অনেক আগেই ওখান থেকে চলে গিছিলো।
,,,,,,
সবাই খেতে বসেছে ইয়ানা আসতে একটু দেরি হওয়াই শিলা গিয়ে আর্দ্রর পাশে বসে পড়েছে, আসলে ও ভেবেছে আর্দ্র হলো অন্তরার ভাই আকাশ তাই জন্য লাইন মারার চেষ্টা করছে,, শিলা আর্দ্রর গা ঘেষে বসায় আর্দ্র ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে শিলার দিকে তাকিয়ে সরে গেলো, আর্দ্রর তাকানো দেখে শিলা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল।

আকাশ আমার তো ভয় করছে এই শিলা কি জাবানি এখন আবার আমার ভাই এর কাছে ধমক না খায় আর্দ্রর মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে এখনি শিলাকে বড়সড় একটা রাম ধমক মারবে।

আমারও তো সেটাই মনে হচ্ছে অনিক ভাইয়া আর ইয়ানাটা গেলো কোথায় এদিকে তো ওর বরকে নিয়ে টানা হেঁচড়া শুরু হয়ে গেছে।

সরি সরি আমার আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো, সবাই তো দেখি বসে পড়েছে তা আমি বসবো কোথায়,,

ইয়ানা আপু ওনার পাশে তো জায়গা আছেই তুমি বরং ওনার পাশেই বসো,, আকাশ কে উদ্দেশ্য করে বলল শিলা।

কেনো ইয়ানা ওর কাছে গিয়ে বসবে কেনো, তুমি ওর কাছে গিয়ে বসো আর ইয়ানা তুমি আমার কাছে এখানে এসে বসো,, কুইক।

আর্দ্রর কথা শুনে শিলা আহত হলো কিন্তু ও মনে মনে ভাবতে লাগল ও ভুল কি বলে ছিলো ইয়ানা কে তো তার বরের পাশেই বসতে বলল তাহলে ওনি এতো রেগে গেলো কেনো, আর ইয়ানার বর আর্দ্র ভাইয়া ও তো কিছু বলছে না,, এমন বিরবির করতে করতে শিলা উঠে গিয়ে আকাশ এর পাশে বসল আর ইয়ানা এসে আর্দ্রর পাশে বসল,,, শিলা আকাশের পাশে বসতেই রোজা চোখ গরম করে আকাশের দিকে তাকালো, রোজার তাকানো দেখে আকাশ ঢোক গিলে অনিকের দিকে আরো ঘেঁষে বসল,, এটা কি করলেন শিলা কি ভাবলো বলেন তো, ও ছোট মানুষ আপনার পাশে নাহয় একটু বসেছিলো তাই বলে ওকে এভাবে ধমক দিবেন ভাগ্যিস এখানে মা বাবা কেউ নেই ওনারা অন্যরুমে ওনারা থাকলে কি ভাবতো,, ফিসফিস করে আর্দ্রর কানে বলল ইয়ানা।

যা খুশি ভাবুক তাতে আমার কি, আর তুমি আমার বউ তুমি আমার পাশে বসবে না তো কি অন্য কেউ বসবে, আর ওই শিলা নামের মেয়েটাকে আমার মোটেও পছন্দ হয়নি কেমন গা ঘেঁসে বসে ছিলো নিলজ্জ মেয়ে একটা, ইচ্ছে তো করছিলো কষে একটা চড় দিতে গায়ে পড়া মেয়ে।

ইস আস্তে বলুন সবাই শুনতে পাবে তো আর আমার জানামতে শিলা তো ওমন মেয়ে নয় হয়ত কোথায় ও ভুল হচ্ছে,, আচ্ছা যা হওয়ার হয়ছে আপনি এখন খেয়ে নেন আর গলা বেথ্যা কমছে??

হালকা হালকা আছে,,।

আর্দ্র আর ইয়ানার ওভাবে ফিসফিস করে কথা বলা দেখে শিলা অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে আবার আকাশ এর দিকে তাকালো দেখলো আকাশ রোজার দিকে তাকিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছে,, এদের এমন করা দেখে শিলা কিছু বুঝতে পারছে না খাওয়া বাদ দিয়ে শুধু একবার এদের দিকে তাকাচ্ছে তো আবার ওদের দিকে তাকাচ্ছে।
,,,,,,,,,,,,,,,,,
খাওয়া শেষে মেয়েরা সবাই মিলে পিঠা বানাতে বসেছে, বিভিন্ন রকমের পিঠা, অনিক আর আকাশ নারিকেল কাটতে ব্যাস্ত আর পরশ মগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নারিকেলের পানি খাওয়ার জন্য, আর্দ্রর একটু জ্বর জ্বর লাগছে তাই শরীলটা ভালো লাগছে না তাই রুমে শুয়ে আছে,, শিলা সুযোগ বুঝে চুপিচুপি প্লেটে কয়েক টা পিঠা সাজিয়ে আর্দ্রর রুমের দিকে গেলো গিয়ে দেখল আর্দ্র খাটের ওপর চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে,, শিলা দরজায় দাঁড়িয়ে এক ধ্যানে আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে আছে,, এর আগে এতো সুন্দর ছেলে ও কখনোই দেখেনি শিলা আস্তে আস্তে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে খাটের কাছে গেলো তারপর নিজের হাতটা বাড়িয়ে আর্দ্রর কপালে রাখতেই আর্দ্র চোখটা খুলে টপ করে বসে রেগে বলল,, এই নেয়ে তুমি এই রুমে কি করছো আর আমার কপালে হাত দিয়েছো কেনো।

আ,,আব আসলে আমিতো আপনাকে পিঠা দিতে এসেছিলাম আর আপনার গায়ে তো জ্বর আসুন আমি আপনার কপালে পানি পট্টি দিয়ে দিই।

তার কোনো দরকার নেই শিলা ওনাকে আমিই পানি পট্টি দিতে পারবো এই যে আমি নিয়ে আসছি তুই বরং এখান থেকে যা মামি তোকে ডাকছে।

আমি বুঝি না নিজের বর থাকতে ইয়ানা আপু অন্য ছেলের প্রতি এতো আগ্রহ কেনো,, কথাটা আর্দ্র মানে আকাশ ভাই কে বলতেই হবে,, মনে মনে কথাগুলো বলে শিলা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

আপনি ঠিক আছেন?? জ্বর কি বেড়েছে?? আমি পানি পট্টি এনেছি আসুন আমি দিয়ে দিচ্ছি তাহলে ভালো লাগছে।

রাখো তোমার এসব,, শোনো ইয়ানা তোমার এই মামাত বোনকে সাবধান করে দাও নয়ত কিন্তু আমার কাছে মার খাবে, এমন গায়ে পড়া মেয়ে আমার মোটেও পছন্দ নয়, তুমি ওকে ভালো করে বুঝিয়ে দিও নয়ত আমি এর পরের বার কিন্তু ছাড় দেবো নাহ।

আর্দ্রর বলা কথাগুলো ইয়ানাকে বড্ড বেশি ভাবাচ্ছে হঠাৎ করে শিলার কি হলো এমন করছে কেনো ওতো এমন ছিলো না তাহলে,,, ইয়ানার ভানার মাঝেই বাইরে থেকে সরগল শোনা গেলো ইয়ানা আর আর্দ্র রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে আসলে শিলা ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলল ,, দেখেছো ফুপি তোমার মেয়ের বর থাকতেও কেমন অন্য একটা ছেলের সাথে এক রুমে বসে আছে,, আসোলে ওনার কোনো দোষ নেই সব দোষ তোমার মেয়ের নিজের বর থাকতেও কেমন ওনার সাথে সব সময় লেগে থাকে শহরে গিয়ে তোমার মেয়ে খারাপ হয়ে গেছো,, লজ্জা পর্দা কিচ্ছু নেই খারাপ মেয়ে একটা।

চলবে,,,,,??

সকল ব্যাস্ততা শেষ এখন থেকে রেগুলার গল্প দেওয়ার চেষ্টা করবো 🥰🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here