#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১৩
ফুটপাতে ধীরপায়ে হাঁটছে ইর্তেজা। সে আজ রাগের বশে কি করে ফেলল নিজেই বুঝতে পারছে না। তার উচিত ছিল চুপচাপ সহ্য করার৷ কিন্তু বিষয় যেহেতু মাহাকে নিয়ে ছিল। সে চুপ থাকতে পারে নি। যে যে মাহার বিরুদ্ধে একটা শব্দটুকু বলবে তার দশা ঠিক এমনই হবে। ইর্তেজা দাঁড়াল। আশে পাশে শত শত মানুষ। কিন্তু সে নিজেকে একা দেখছে। কেও নেই তার পাশে। ইর্তেজা লম্বা নিশ্বাস ফেলে আবার হাঁটা ধরলো। কিছুটা দূর এগোতেই একটা গাড়ি স্পিডে পেছন থেকে এসে তার পথ আটকালো। ইর্তেজা গাড়িটা দেখে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলো। ইর্তেজা জানে গাড়িটা কার। তখনই গাড়ির দরজা খুলে শ্রাবণ বের হলো। ইর্তেজা শ্রাবণকে দেখে দ্রুত হেঁটে পাশ কাটিয়ে গেল। তা দেখে শ্রাবণ বলল,
“কি হলো তোমার ইর্তেজা? অভিমানী প্রেমিকাদের মতো করছো কেন?”
ইর্তেজা দাঁড়াল। ঘুরে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনার কাজের জন্যই যাচ্ছি। আপনি বাসায় যান আমি বাদশাহ’র কাছে যাব এখন। কাজ হয়ে গেলে কল দিয়ে বলে দেব।”
শ্রাবণ ইর্তেজার দিকে হেটে গিয়ে বরাবর দাঁড়িয়ে বলল,
“আচ্ছা যেও, তার আগে আমার মন থেকে সরি গ্রহণ করো। আমি সত্যি খুব বড়ো ভুল করে ফেলেছি।”
“সরি আমার বলা উচিত। আমি আজ অনেক বাজে ব্যবহার করেছি আপনার সাথে।”
“হ্যাঁ তা ঠিক। আমার ইচ্ছে করছে তোমার হাত দুটো টুকরো করে ফেলতে। কিন্তু করবো না। কারণ দোষ প্রথম আমিই করেছিলাম।”
ইর্তেজা চুপচাপ শ্রাবণের কথাগুলো হজম করছে। আজ খুব বিরক্ত লাগছে তার শ্রাবণকে। ইর্তেজাকে নিশ্চুপ দেখে শ্রাবণ বলল,
“জানি আমার উপর তোমার খুব রাগ। আচ্ছা কোনো একদিন সুযোগ পেলে যত ইচ্ছে প্রতিশোধ তুলে নিও আমার উপর।”
“এসব বলে আমাকে লজ্জিত করবেন না। আপনি এখন বাসায় যান।”
“চলো আগে তোমাকে তোমার জায়গায় পৌঁছে দিয়ে আসি।”
“না আমি কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই।”
“ওকে, নিজের খেয়াল রেখো আমি যাই।”
ইর্তেজা জবাব দিলো না। শ্রাবণ মুচকি হেসে গাড়িতে বসে চলে গেল। এই চেনা শহরে অচেনা লোকেদের মাঝে ইর্তেজা আবার হাঁটা ধরলো।
.
.
নামাজ আদায় করে ইরিনা ঘড়ির দিকে তাকাল। এতক্ষণে সাঈদের এসে পরার কথা৷ কিন্তু এখনো আসছে না। ইরিনার মনের আকাশে মেঘ জমাট হয়ে গিয়েছে। যে কোনো সময় দুঃখের বৃষ্টি নামতে পারে। ঝর্ণা তেল গরম করে নিয়ে ঘরে এসে ইরিনার পাশে বসলো। ইরিনা হারিয়ে আছে অন্য জগতে। ঝর্ণা ইরিনার পায়ে হাত রাখতেই ইরিনা চমকে উঠল। সে কিছুটা অনুভব করতে পারছে ঝর্ণার হাতের ছোঁয়া। ঝর্ণা বলল,
“কি হইলো কাঁপলেন কেন আপনে?”
“কিছু না, রান্না হয়ে গিয়েছে?”
“না, আজকে গ্যাস কম৷ দেরি হইবো।”
ইরিনা কিছু বলল না। ঝর্ণা যত্ন করে ইরিনার পায়ে মালিশ করতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করার পর ঝর্ণা বলল,
“আপা আইজকা সাঈদ ভাই আইলো না কেন?”
সাঈদের নাম শুনে ইরিনা ঝর্ণার দিকে আড়চোখে তাকাল। ঝর্ণা উত্তরের আশায় ইরিনার দিকে তাকিয়ে আছে। ইরিনা দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে বলল,
“আমি জানি না। হয় তো কলেজে কাজ বেশি।”
“মানুষটা আইলে অনেক ভালা লাগে আমার।”
ইরিনা ভ্রু কুঁচকে ঝর্ণার দিকে তাকাল। ঝর্ণা মাথা নিচু করে ফেলল। ইরিনা বিরক্ত হয়ে বলল,
“কি বলো এসব? তোমাদের বয়সে আকাশ জমিন পার্থক্য। আর এটা তোমার শুধু আবেগ বুঝলে?”
“যেডাই হোক আমার বহুত ভালা লাগে।”
ইরিনা ঝর্ণার হাত ধরে ফেলল। ঝর্ণা তাকাল ইরিনার দিকে। ইরিনার চাহনি দেখে সে ঢোক গিলল। ইরিনা রাগী কন্ঠে বলল,
“সাঈদ ভাই বলে ডাকছো তাকে। আবার সে আসলে তোমার ভালোও লাগে? দেখো ঝর্ণা তোমার এই বয়সে শুধুই আবেগ তৈরী হবে ভালোবাসা না।”
“আ..আপা আপনে রাগেন কেন?”
ইরিনা ঝর্ণার হাত ছেড়ে সোজা হয়ে বসলো। তার মাথা কাজ করছে না। ঝর্ণা মন খারাপ করে বলল,
“আপা ভালোবাসা আমাগো মতো মানুষের লাইগ্যা জন্মায় নাই৷ এগুলা বড়োলোক গো ফিলিক্স।”
“এটা ফিলিংস হবে। আর তুমি কি বড়োলোক গরীব নিয়ে বসে পরলে? সাঈদ কখনো মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ করে না। তুমি লিখে রাখো। যদি সাঈদ তোমাকে ভালোবেসেফেলে ও তোমাকেই বিয়ে করবে।”
“একটা কথা কই? রাগবেন না তো?”
“না বলো”
ঝর্ণা এদিক সেদিক দেখে ইরিনার দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলল,
“আমার মনে হয় সাঈদ ভাই আপনেরে পছন্দ করে।”
“ঝর্ণা তুমি আবার শুরু করলে?”
“আপা আপনে লেইখা রাখেন বিশ্বাস না হইলে আমার কথায়।”
ইরিনা ঝর্ণার সামনে হাত জোড় করে বলল,
“মাফ চাই বোন তুই চুপ থাক এখন। আর এই কথা ইর্তেজা আর সাঈদের সামনে কখনো বলবে না বুঝলে?”
“আইচ্ছা আপনে নিশ্চিন্ত থাকেন।”
ইরিনা একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে হেলান দিয়ে বসলো। আজকাল তারও মনে হচ্ছে সাঈদ তাকে পছন্দ করে। বেশ আজব চাহনি ছেলেটার। ইরিনা চোখ বন্ধ করলো। সাঈদের হাসিমুখ ভাসছে তার চোখের সামনে।
.
.
সাগরিকা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। তার মাথায় মাহা নাম ঘুরপাক খাচ্ছে। মনে করতে পারছে না। বিরক্ত হয়ে ঘরে চলে আসলো। শ্রাবণও ইর্তেজার পিছু পিছু বাহিরে গিয়েছে। একা থাকতে ভালো লাগছে না তার। খাটে বসে টিভি অন করলো। তখনই তার মোবাইল টন বেজে উঠল। দ্রুত গিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে মনে কল করছে। রিসিভ করে কানে ধরলো,
“কোথায় তুমি?”
“এখন অফিসে আছি। এসে পরবো এক ঘন্টার মধ্যে। তুমি খেয়ে নিও।”
“কি লাভ হলো আমার বাসায় থেকে? যার জন্য আছি সেই নেই।”
“আচ্ছা বাবা আমি আসছি। স্টাডি রুমে যাও টেবিলের উপর একটা ফাইল রাখা আছে। সেটা আলমারিতে রেখে দাও যত্ন করে।”
“ওকে তারাতাড়ি আসো তুমি আমার ভালো লাগছে না।”
“আসছি”
সাগরিকা কল কেটে স্টাডি রুমে গেল। টেবিলের উপরে রাখা। ফাইলটা দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। হঠাৎ দু’দিন আগের কিছু কথা মনে আসলো।
______
সাগরিকা চা বানিয়ে ঘরে আসলো। শ্রাবণ নেই৷ বাথরুমের দরজায় টোকা দিয়ে দেখে ভেতরেও নেই। সাগরিকা ভাবছে শ্রাবণ কি অফিস চলে গেল। তখনই স্টাডি রুম থেকে শ্রাবণের কন্ঠ ভেসে আসলো। সে সাগরিকাকে ডাকছে। সাগরিকা চা নিয়ে স্টাডি রুমে গেল। শ্রাবণ মনোযোগ দিয়ে ফাইল দেখছে। এমনিতে শ্রাবণের চোখে সমস্যা নেই কিন্তু স্টাডি রুমে এসে সে কাজ করার সময় চশমা পড়ে। বেশ মুগ্ধকর দেখায় তাকে। সাগরিকা মুচকি হেসে টেবিলের উপর কাপ রেখে বলল,
“আমাকে বলে আসতে তুমি এই রুমে আছো। তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে চা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।”
শ্রাবণ সাগরিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“সমস্যা নেই, বসো।”
সাগরিকা চেয়ার টেনে বসলো। শ্রাবণ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
“দিন দিন তোমার হাতের রান্না বেশ মজাদার হচ্ছে।”
“এটাকে চেঞ্জ ওভার বলে।”
“সাবধান! বেশি ওভার হলে সমস্যা।”
সাগরিকা হাসলো শ্রাবণের কথা শুনে। শ্রাবণ সাগরিকার হাসি দেখে মুচকি হাসলো। মন ভালো হয়ে যায় তার মেয়েটার হাসি দেখলে। সাগরিকা টেবিলে থাকা ফাইলগুলোর দিকে চোখ বুলাচ্ছে। এত এত ফাইল কেন সাগরিকা বুঝতে পারলো না। একটা ফাইল হাতে নিলো। এটা একটা জমির ডকুমেন্ট। সাগরিকা পৃষ্ঠা উল্টে দেখে ছবিসহ একটা লোকের ডিটেইলস। সাগরিকা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি জমি কিনবে না-কি বিক্রি করবে?”
“কিনবো, নতুন কাজ শুরু করবো ইন শাহ আল্লাহ।”
“হ্যাঁ এটাও কবরস্থান বানাবে তাই না?”
“একদম না, আমি এখন শুধু ভয় দেখাই মা’রি না কাওকে।”
সাগরিকা কিছু বলল না। লোকটার নাম পড়লো, আয়মান খলিল। পরের পৃষ্ঠায় আর একটা ছবিসহ নাম, আমজাদ খলিল৷ এটা একটা ছোটো বাচ্চার ছবি। বয়স ৩ হবে৷ সাগরিকা পরের পৃষ্ঠা উল্টালো। একটা ভদ্রমহিলার ছবি, রোকসানা বেগম। তার পরের পৃষ্ঠা উল্টালো, নাম লিখা সায়ান আহমেদ। পরের পৃষ্ঠা-ই শেষ পৃষ্ঠা। ছবি দেখে নাম পড়লো, মেহরুন্নেসা মাহা। শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল,
“জমি কেনার জন্য পরিবারের ডিটেইলস প্রয়োজন?”
“হ্যাঁ জায়গা বৈধ না-কি অবৈধ আবার পরিবারের সবার মত আছে কি-না জায়গা বিক্রি করায়৷ সব কিছু প্রয়োজন।”
“হুম বুঝলাম, আচ্ছা তুমি তোমার কাজ করো আমি গিয়ে দেখি রান্নার কি অবস্থা।”
“কিছুক্ষণ বসো আমার পাশে।”
“জনাব আপনি কাজ করুন৷”
সাগরিকা মুচকি হেসে চলে আসলো।
বর্তমান…..
সাগরিকা মাহার ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। এই মাহা-ই কি ইর্তেজার মাহা? ইর্তেজা বলেছিল মাহার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তার মানে আয়মান খলিল বা সায়ান আহমেদ৷ দুজন থেকে যে কোনো একজন মাহার স্বামী। সাগরিকার মাথা কাজ করছে না। যদিও সে চায় না এই বিষয় নিয়ে ভাবতে। কিন্তু তার ব্রেইন এই কথা ভাবতে তাকে বাধ্য করছে। ইর্তেজা শ্রাবণের সাথে কাজ করে। কোনো না কোনো একদিন ইর্তেজা নিশ্চয়ই এই ফাইলটা দেখবে। তখন কি যাবে ছেলেটার উপর দিয়ে ভাবতেই সাগরিকার মন খারাপ হয়ে গেল।
.
.
পার্লার থেকে কিছুটা দূরে গাড়িতে থামিয়ে বসে আছে ইর্তেজা ও বাদশাহ। সাথে শ্রাবণের ড্রাইভার এসেছে। রাস্তায় মানুষজন কম৷ ইর্তেজা বলল,
“এখানে কি সিসিটিভি ক্যামেরা আছে?”
“আছে, শ্রাবণ স্যার সেটার ব্যবস্থা করে ফেলেছে আমরা ধরা পরবো না।”
“আমার মন বলছে ফাঁসবো আমরা।”
“কিছু হবে না আপনি চিন্তা না করে রাস্তার দিকে তাকান৷ যে কোনো সময় তারা আসতে পারে।”
ইর্তেজা আবার সামনের দিকে তাকাল। অনেকক্ষণ কেটে গেল। তখনই একটা গাড়ি এসে পার্লারের সামনে দাঁড়াল। বাদশাহ বলল,
“গাড়ির নাম্বার সেম। হ্যাঁ এটাই তাদের গাড়ি।”
“তাহলে চলো”
দুজনই মাথায় টুপি ও মুখে মাস্ক পড়ে নিলো। গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে গেল ধীরপায়ে। সেই গাড়ি থেকে দুজন মহিলা বের হয়েছে। দুজনকেই বোরকা পড়া দেখে ইর্তেজা ও বাদশাহ থেমে গেল। একে অপরের দিকে তাকিয়ে একসাথে বলল,
“সর্বনাস! চিনবো কিভাবে?”
আবার সেই মহিলাদের দিকে তাকাল তারা। দুজনই চেহারা ঢেকে রেখেছে। তারা বের হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির সামনে। আর তাদের ড্রাইভার গাড়ি থেকে ব্যাগ বের করছে। বাদশাহ দ্রুত ছবি বের করে বলল,
“ইর্তেজা ভাই তারাতাড়ি ভালো মতো ছবিটা দেখুন। যার চোখ মিলবে সেই এই ভদ্রমহিলা।”
“তুমি দেখো আমি এসব বুঝি না।”
বাদশাহ কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ভালো মতো দেখলো। একজনের চোখের সাথে মিল পেয়ে বলল,
“পেয়েছি, আমরা ইনাকে তুলবো।”
“শিওর? ভেবে নাও একবার। ভুল হলে বস আমাদের কাঁচা গিলে খাবে।”
“আরে আমি শিওর, আসুন।”
তারা দুজন এগিয়ে গেল। ড্রাইভার পার্লারের ভেতর যেতেই। তার পিছু পিছু তারা এগিয়ে গেল। ইর্তেজা পকেট থেকে স্প্রে বের করে রুমালে মেখে নিলো। ভদ্রমহিলা পার্লারের দরজা দিয়ে প্রবেশ করার আগেই পেছন থেকে নাক চেপে ধরলো। ৫ সেকেন্ডের মতো ছটফট করে সাথে সাথে শরীর ছেড়ে দিলো। ইর্তেজা সাথে সাথে ধরে ফেলল তাকে। বাদশাহ তাদের ড্রাইভারকে ইশারায় বলল দ্রুত আসতে। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসতেই তারা দ্রুত গাড়িতে উঠে আসলো। ভদ্রমহিলাকে পেছনের সিটে শুইয়ে দিয়ে তারা সামনের দিকে বসলো। ইর্তেজার ভয়ে ধুকপুক করছে। টুপি আর মাস্ক খুলে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। বাদশাহ’র দিকে তাকিয়ে বলল,
“এটা কি করলাম আমি? আমি কাওকে কিডন্যাপ করলাম? এটা একদম ঠিক হয় নি।”
“ভাই আপনি অতিরিক্ত চিন্তা করছেন। শ্রাবণ স্যার আছে তো। আজ রাস্তা দেখেছেন কত ফাঁকা ছিল? এসব কিছুর ব্যবস্থা স্যার করেছে। কিডন্যাপ করা কি সহজ কাজ? কিন্তু আমরা কত সহজে করে ফেললাম।”
ইর্তেজা ভাবলো বাদশাহ ঠিক বলছে। শ্রাবণ করিয়েছে এই কাজ। পুলিশের চক্করে পরলে সত্যি কথা বলে দেবে।
_______
ফ্যাক্টরির সামনে গাড়ি থামিয়ে তারা গাড়ি থেকে বের হলো। ইর্তেজার ভয়ে হাত পা জমে যাচ্ছে। বাদশাহ ইর্তেজার উদ্দেশ্যে বলল,
“ভাই সাহায্য করুন আমার। আমি একা এনাকে কোলে নিতে পারবো না।”
ইর্তেজা এগিয়ে গিয়ে বলল,
“তুমি এমনিতেও বাচ্চা। সরো আমি নিচ্ছি।”
বাদশাহ মাথা নাড়িয়ে সরে দাঁড়াল। ইর্তেজা ভদ্রমহিলাকে কোলে তুলে নিলো। ফ্যাক্টরির ভেতরে গিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল।বাদশাহ’র দিকে তাকিয়ে বলল,
“বসকে কল দিই আমি গিয়ে। তুমি এখানেই বসো।”
“আমার পেট ফেটে যাবে। আমি এখন বাথরুমে যাব। আপনি এখানেই বসে স্যারকে কল দিয়ে আসতে বলুন।”
“আচ্ছা তুমি যাও।”
বাদশাহ চলে গেল দ্রুত। আর একটা চেয়ার নিয়ে ইর্তেজা বসলো। এক নজর ভদ্রমহিলাকে দেখলো সে। হাতে মেহেদী দেয়া৷ ইর্তেজা ভাবলো বাসায় যেহেতু বিয়ে, মেহেদী দেয়া স্বাভাবিক। শ্রাবণকে কল দিয়ে কানে ধরলো। রিসিভ হতেই ইর্তেজা বলল,
“বস ভদ্রমহিলার কিডন্যাপ করে ফেলেছি। আপনি তারাতাড়ি আসুন।”
অপরপাশ থেকে সাগরিকার কন্ঠ ভেসে আসলো।
“কিডন্যাপ? কার কিডন্যাপ করেছো তুমি ইর্তেজা?”
ইর্তেজা চমকে উঠল। তার সাথে কেন এমন হয় সবসময়?
শ্রাবণ বাথরুম থেকে বের হয়ে সাগরিকার দিকে এগিয়ো আসলো। তোয়ালে ঘাড়ে ঝুলিয়ে বলল,
“কি হলো? চোখ দেখে তো মনে হচ্ছে এখনই বেড়িয়ে যাবে।”
ইর্তেজা শ্রাবণের কন্ঠ শুনে ঢোক গিলল। আজ নিশ্চয়ই তার কপালে দুঃখ আছে। তার উচিত ছিল আগে শ্রাবণ কি-না কলের অপরপাড়ে তা যাচাই করা। হঠাৎ অপর পাড় থেকে সাগরিকার গর্জে উঠা কন্ঠ ভেসে আসলো। ইর্তেজা ভয়ে কল কেটে দিল। দাঁড়িয়ে পায়চারি করতে লাগল৷ বাদশাহ এসে ইর্তেজাকে চিন্তিত দেখে বলল,
“আপনার আবার কি হলো?”
ইর্তেজা বাদশাহকে সব বলল। বাদশাহ চেয়ারে বসে হেসে বলল,
“চিন্তা করতে হবে না। এতক্ষণে স্যার বিষয়টা ধামাচাপাও দিয়ে দিয়েছে।”
“তুমি শিওর?”
“জি, মানুষটার নাম শ্রাবণ আহমেদ বুঝলেন? আচ্ছা কিছু খাবেন? আমার তো ক্ষুধা পেয়েছে৷”
“আমার মাথা কাজ করছে না তোমার যা খুশি নিয়ে আসো।”
“ঠিক আছে।”
বাদশাহ দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরলো। হঠাৎ দাঁড়িয়ে বলল,
“ভদ্রমহিলা মরে গেলে সমস্যা। আজ খুব গরম। ইর্তেজা ভাই আপনি উনার হিজাবটা খুলে দিন। শ্বাস আটকে যদি মারা যায়?”
“আমি?”
“হ্যাঁ, শুধু হিজাবটা খুলে দিবেন।”
ইর্তেজা মাথা নাড়াল। বাদশাহ চলে গেল বাহিরে। ইর্তেজা ধীরপায়ে হেটে গিয়ে ভদ্রমহিলার বরাবর দাঁড়াল। ঝুঁকে এক নজর ভদ্রমহিলাকে দেখে হাত এগিয়ে আবার পিছিয়ে নিলো। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে তার। কিন্তু বাদশাহ ঠিক বলেছে শ্বাস আটকে যেতে পারে উনার। ইর্তেজা একটা একটা করে আলপিন খুলে দিতে লাগল। একটা আলপিন মাটিতে পড়ে গেল। চেয়ারের নিচে গড়িয়ে গিয়েছে। সে তুলার জন্য মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসলো। আলপিন হাতে নিতেই তার চোখ গেল ভদ্রমহিলার পায়ে। ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের পাশে একটা বড়ো লালচে তিল। ইর্তেজা যেন তার বুকে সজোরে ধাক্কা খেলো। ঠিক এমনই একটা তিল মাহার পায়ে আছে। দুটো মানুষের ঠিক একই জায়গায় একই ধরণের তিল থাকা সম্ভব? ইর্তেজার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল। ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে ভদ্রমহিলার আলপিন সব খুলে ফেলল। কাঁপা কাঁপা হাতে হিজাবটা খুলে থমকে গেল। নিমিষেই দু চোখে অশ্রু ভরে গেল। ধপ করে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো সে। সে তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল- “মাহা”।
চলবে……