আর একটিবার পর্ব-২২

0
711

#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২২

প্রায় ১ ঘন্টা ধরে বৃষ্টি পরছে। বৃষ্টির রাতে ঘুম ভালো হয়। কিন্তু সাঈদের চোখে ঘুম নেই। বিছানায় শুয়ে একবার এপাশ আর একবার ওপাশ ফিরছে। চিন্তাভাবনা তার ঘুম কেড়ে নিয়েছে। তার মন বলছে ওয়ালেট ইর্তেজাদের বাসায় রেখে এসেছে। যদি কেও খুলে দেখে ফেলে ইরিনার ছবি? সাঈদ উঠে বসলো। অস্থির লাগছে তার। মোবাইল হাতে নিলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১ টা। এখন তো সবাই ঘুম। আর কাকেই বা কল দেবে? সাঈদ মোবাইল রেখে আবার শুয়ে পরলো।

ইরিনা শুয়ে আছে চোখ খুলে। বালিশের নিচে সাঈদের ওয়ালেট। ইরিনা ডান দিকে তাকাল। মাহা ঘুমাচ্ছে। ইরিনা বালিশের নিচে হাত ঢুকিয়ে ওয়ালেট বের করে খুলল। ছবিটা ইরিনার জন্মদিনে তোলা। সাঈদ নিজেই তুলেছিল। ইরিনার কাছে এক কপি ছবি আছে। সাঈদ নিজের কাছে কেন রেখেছে ছবিটা? ইরিনা বুঝে নিয়েছে সাঈদ তাকে ভালোবাসে। কিন্তু এটা কি আদৌও সম্ভব? ইরিনা ওয়ালেটটা রেখে লম্বা নিশ্বাস ফেলল। কাল কি সাঈদকে জিজ্ঞেস করবে? এসব ভাবতে ভাবতে কিছু সময় কেটে গেল। হঠাৎ খুব জোরে বজ্রপাতের শব্দ আসলো আর সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে গেল। বজ্রপাতের শব্দ শুনে মাহা লাফ দিয়ে উঠল। ভয়ে তার বুক কাঁপছে। মাহা উঠেছে বুঝতে পেরে ইরিনা মাহার হাত ধরে বলল,
“মাহা ডোন্ট ওয়ারি আমি আছি তোমার পাশে।”
“আ..আপু অন্ধকার কেন এখানে? হায় আল্লাহ আমি কি অন্ধ হয়ে গিয়েছি?”
ইরিনা ফিক করে হেসে বলল,
“ধ্যাত পাগলী, বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে। তুমি শুয়ে থাকো আমি ইর্তেজাকে ডেকে বলছি জেনারেটর চালু করতে।”
মাহা হেলান দিয়ে বসলো। ভয়ে ঘাম ছুটছে তার। ইরিনা কয়েকবার ইর্তেজাকে ডাকলো। কিন্তু ইর্তেজার কোনো সাড়াশব্দ নেই। মাহা বলল,
“আপু আমি গিয়ে ডাকবো? ও হয়তো ঘুমাচ্ছে।”
“আচ্ছা যাও, দাঁড়াও মোবাইল নিয়ে যাও টর্চ অন করে নিও।”
ইরিনা মাহার কাছে মোবাইল দিলো। মাহা টর্চ অন করে খাট থেকে নেমে এগিয়ে গেল। দরজা খুলে বাহিরে গিয়ে ইর্তেজার ঘরের কাছে গেল। দরজা বন্ধ করা। মাহা ইর্তেজাকে ডাকলো। কিন্তু ভেতর থেকে সাড়াশব্দ নেই। মাহা ভ্রু কুঁচকালো। ইর্তেজা কি আদৌও ভেতরে আছে? মাহা দরজার কড়া ঘুরিয়ে দেখে দরজা খোলা। দরজা ঠেলে ভেতরে গিয়ে পুরো ঘরে টর্চ ঘুরিয়ে দেখে ইর্তেজা নেই। ইর্তেজাকে ডাকলো। কিন্তু এখনো কোনো সাড়াশব্দ নেই। মাহা ঢোক গিলল। ভয় করছে তার। হঠাৎ পেছন থেকে কেও তার মুখ চেপে ধরলো। মাহার হাত থেকে মোবাইল মাটিতে পড়ে টর্চ বন্ধ হয়ে গেল। কানে ইর্তেজার কন্ঠ ভেসে আসলো,
“হুশশ, আমি।”
ইর্তেজার কন্ঠ শুনে মাহা শান্ত হলো। ইর্তেজা তার মুখ ছাড়তেই মাহা ঘুরে ইর্তেজাকে ধাক্কা দিলো। ইর্তেজা হাসলো। মাহা বিরক্ত হয়ে ঝুঁকে মোবাইল হাতে নিয়ে পাওয়ার অন করলো। ডিসপ্লে কিছু ফেটেছে। মাহা রাগী কন্ঠে বলল,
“বেয়াদব, অসভ্য ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি।”
ইর্তেজা হেসে এগিয়ে গিয়ে মাহার গাল টেনে বলল,
“এই বাড়িতে আমি ছাড়া আর কোনো ভূত নেই।”
“হ্যাঁ জানি তুমিই সবচেয়ে বড়ো ভূত।”
“হুম, আর তুই আমার ভূতনি।”
মাহা হেসে দিলো। টর্চ অন করে বলল,
“জেনারেটর চালু করো প্লিজ। চারপাশ অন্ধকার। আমার কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে”
টর্চের আলো মাহার চেহারায় পরছে। ইর্তেজা মুচকি হেসে তাকিয়ে রইল তার দিকে। সে বলে বুঝাতে পারবে না মাহা তার জন্য কি। ঘুম ভালোবাসে মেয়েটাকে। মাহা বার বার এদিক সেদিক দেখছে। মেয়েটা এত ভীতু কিভাবে হলো? ইর্তেজার মায়া আরো বেড়ে গেল। মাহা ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“যাও না তারাতাড়ি।”
“যাচ্ছি”
ইর্তেজা ঘুরে ঘর থেকে বের হলো। মাহাও তার পিছু পিছু গেল। ইর্তেজা জেনারেটর চালু করতেই চারপাশ আলোকিত হয়ে গেল। এখন শান্তি লাগছে মাহার। ইর্তেজা মাহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“নেন ম্যাম আপনার জীবন আলোকিত করে দিলাম।”
“সত্যি তুমি আমার জীবন আলোকিত করে দিলে।”
ইর্তেজা মুচকি হেসে মাহার নাক ধরে টানলো।
“এখন তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পরবো। আপু একা ঘরে। আমিও যাই। আর একটা বাহানা বানাতে হবে।”
“বাহানা কেন?”
“মোবাইলের ডিসপ্লে নষ্ট হয়ে গিয়েছে তোমার কারণে। আমি কি সত্যি কথা বলবো যে তুমি..”
মাহা এইটুকু বলে থেমে গেল। ইর্তেজা এক ভ্রু উঁচু করে বলল,
“আমি কি?”
“কিছু না আমি যাই।”
বলেই মাহা পালালো। ইর্তেজা দাঁড়িয়ে হাসছে।

মাহা ঘরে গিয়ে দেখে ইরিনা ঘুমিয়ে পরেছে। চুপচাপ দরজা বন্ধ করে মোবাইল রেখে ইরিনার পাশে শুয়ে পরলো। হঠাৎ ইরিনার কন্ঠ ভেসে আসলো।
“এত দেরি হলো কেন মাহা?”
মাহা আমতা আমতা করে বলল,
“আপু, আসলে ইর্তেজা ঘুম ছিল। আবার অন্ধকার থাকার কারণে আমার চেয়ারের সাথে পা বেজে মোবাইল পড়ে গিয়েছিল। ডিসপ্লে একটুখানি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সরি।”
“সমস্যা নেই, তুমি ঠিক আছো?”
“হুম”
“আচ্ছা শুয়ে পরবো এখন।”
মাহা মাথা নাড়িয়ে ঘুরে শুয়ে পরলো। ইরিনা নিঃশব্দে হাসলো।

পরেরদিন……
সাগরিকা ড্রইংরুম পরিষ্কার করাচ্ছে সার্ভেন্টদের দিয়ে। শ্রাবণ এখনো ঘুম। বেশ কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বাজার শব্দ আসলো। সাগরিকা সবাইকে কাজ করতে বলে গিয়ে দরজা খুলল। ইর্তেজা দাঁড়িয়ে আছে। সাগরিকা মুচকি হেসে তাকে ভেতরে আসতে বলল। ইর্তেজা সালাম দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। সাগরিকা দরজা বন্ধ করে বলল,
“তোমার সাহসের প্রশংসা করতেই হবে। শ্রাবণ তোমর উপর রেগে আছে জানার পরও আসলে।”
“মাফ চাইতে এসেছি।”
“কেন মাফ চাইবে তুমি? আমি শ্রাবণকে বলেছি সব। আচ্ছা ইর্তেজা মাহা তোমাকে দেখে কেমন রিয়েক্ট করেছে। জানো আমি সারা সময় ভেবেছি তোমাদের এত বছর পর দেখা হলো। সে কি বলেছে তুমি কি বলেছো।”
“বলবো ম্যাম সব বলবো। তার আগে বস এর সাথে আমার কথা বলতে হবে।”
“আচ্ছা তুমি বসো আমি শ্রাবণকে ডাকছি।”

সাগরিকা ঘরে গেল। শ্রাবণ উঠে গিয়েছে। বাথরুমে আছে সে। সাগরিকা বিছানা গুছাডে লাগলো। শ্রাবণ বের হয়ে সাগরিকাকে দেখে মুচকি হাসলো। পা টিপে টিপে গিয়ে সাগরিকাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। সাগরিকা হেসে বলল,
“রোম্যান্স পরে করে নিও। ইর্তেজা এসেছে তোমার সাথে দেখা করতে।”
“আমার রোম্যান্সে বাঁধা দেয়া পাবলিকদের আমি ঘৃণা করি।”
“হয়েছে ঢং, এখন যাও আমি ঘর গুছিয়ে আসছি। আর খবরদার ওর সাথে ভালো ব্যবহার করবে।”
শ্রাবণ সাগরিকাকে ছেড়ে খাটে বসে বলল,
“আর কি কি বলতে হবে ম্যাম?”
“আপাতত ব্যবহার ঠিক রাখলেই হবে।”
শ্রাবণ সাগরিকার হাত ধরে চুমু দিয়ে বলল,
“তোমার জন্য সব করতে পারি।”
“সেটা আমি জানি, এখন যাও তারাতাড়ি।”
শ্রাবণ দাঁড়িয়ে সাগরিকার কপালে চুমু দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ইর্তেজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ইর্তেজা দাঁড়াল। শ্রাবণ হাত আড়াআড়িভাবে ভাজ করে বলল,
“কি চাই?”
“বস আই এম সরি”
“তুমি আমাকে জিজ্ঞেস না করে এত বড়ো ডিসিশন কেন নিলে? একবার বলে দেখতে আমায়।”
“রিয়েলি সরি বস, আপনি চিন্তা করবেন না আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি। আপনি আমার সাথে চলুন আমি এখনই আপনাকে জমি নিয়ে দিচ্ছি।”
“এখন আর লাগবে না। বসো এখন কিছু কথা আছে।”
.
.
ফুল স্পিডে বাইক চালিয়ে সাঈদ ইরিনার বাসায় আসলো। তার কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে চিন্তায়। কলিংবেল বাজাতেই মাহা এসে দরজা খুলল।
“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম, ইর্তেজা বাসায় আছে?”
“ও তো সকাল সকাল উঠে কোথাও চলে গিয়েছে। আপনি ভেতরে আসুন এসে পরবে।”
সাঈদ ভেতরে গিয়ে বসলো। বার বার এদিক সেদিক দেখছে। ইরিনা হয় তো ঘরে। মাহা সাঈদকে বসতে বলে ইরিনার ঘরে গেল। সাঈদ দ্রুত রান্নাঘরে গেল। ঝর্ণা কাজ করছে। সাঈদ দ্রুত তার সামনে গিয়ে বলল,
“ঝর্ণা, একটা হেল্প লাগবে।”
ঝর্ণা সাঈদকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আপনে আবার আইসেন?”
“হ্যাঁ আমি আসছি কারণ আমি বেহায়া। এখন প্লিজ একটা হেল্প করো।”
“কিয়ের হেলেপ?”
“গতকাল আমি আমার ওয়ালেট রেখে চলে গিয়েছি ভুলে। তুমি দেখেছো কোথাও?”
“ওয়ালেট আবার কি?”
“মানিব্যাগ, আমি ভুলে রেখে চলে গিয়েছি।”
“আমি জানি না, আমার উপরে সন্দেহ কইরেন না। আমি গরীব হইতে পারি কিন্তু চোর না।”
“আহা ঝর্ণা তুমি কেন আমাকে ভুল বুঝো বলো তো? ওয়ালেটের ভেতর ইরিনার ছবি ছিল। যদি কেও দেখে ফেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।”
“মনের কথা কইতে পারেন না কিন্তু মানিব্যাগে ছবি নিয়া ঘুরেন। আপনে অনেক আজব।”
“আল্লাহর ওয়াস্তে আস্তে বলো কেও শুনে ফেললে আমি শেষ।”
“আপনে না বললে আমিই আপাকে যায়া বইলা দিমু।”
সাঈদ ঝর্ণার হাত ধরে বলল,
“তুমি না আমার লক্ষী বোন। প্লিজ আমার ওয়ালেট খুঁজে দাও। আমার ভয়ে হাত পা কাঁপছে।”
তখনই দরজার পাশ থেকে মাহার কন্ঠ ভেসে আসলো,
“কি হচ্ছে এখানে?”
সাঈদ আর ঝর্ণা দরজার দিকে তাকাল। মাহা ভ্রু কুঁচকে রেখেছে। ঝর্ণা হাত ছাড়িয়ে বলল,
“ভাবী, সাঈদ ভাই আসলে.. ভাই বলেন না কি হইসে।”
ঝর্ণা সাইদকে ফাসিয়ে ঘুরে কাজ করতে লাগলো। সাঈদ আমতা আমতা করছে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। মাহা তাদের অস্বস্তি হতে দেখে বলল,
“ভাইয়া, আপনাকে আপু ডাকছে।”
সাঈদ হাতমুঠো শক্ত করে ফেলল। মায়া মায়া চেহারা বানিয়ে ঝর্ণার দিকে তাকাল। ঝর্ণা দাঁত বের করে হেসে বলল,
“আপা ডাকে তারাতাড়ি যান।”
সাঈদ মাথা নিচু করে রান্নাঘর থেকে বের হলো। সাঈদ যেতেই মাহা ঝর্ণার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“ঝর্ণা, কি হচ্ছিল এখানে জানতে পারি?”
“ভাবী ভুল ভাইবেন না আমায়। হেই তো আমার ভাই লাগে।”
মাহা আর কিছু বলল না। এটা তাদের পার্সোনাল লাইফ ভেবে ইগনর করলো।

সাঈদ ইরিনার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভয় করছে তার খুব। বাহিরে সাঈদ দাঁড়িয়ে আছে। ইরিনা তার উপস্থি অনুভব করলো। সে সাঈদকে ডাকলো ভেতরে। সাঈদ মনে সাহস নিয়ে ভেতরে গেল। ইরিনাকে সালাম দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। ইরিনা বালিশের নিচ থেকে ওয়ালেট বের করে সাঈদের দিকে এগিয়ে দিলো। সাঈদ ওয়ালেট দেখে হেটে গেল। হাতে নিয়ে বলল,
“এখানে রেখে গিয়েছিলাম। আমি তো ভাবলাম চুরি হয়ে গিয়েছে হয়তো।”
“আমি দেখেই যত্ন করে রেখেছিলাম।”
“আপনাকে ধন্যবাদ”
“দেখে নাও সব ঠিক আছে কি-না।”
“আপনারা তো আমার আপনই। দেখতে হবে না।”
“তবুও সাঈদ, দেখে নাও।”
ইরিনা স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই কথা বলছে। সাঈদ নিশ্চিন্তের নিশ্বাস ফেলল। ইরিনাকে সে চিনে। অন্যের ব্যক্তিগত জিনিস কখনো দেখবে না। সাঈদ হাসিমুখে ওয়ালেট খুলল। সাথে সাথে তার হাসি উড়ে গেল। ইরিনার ছবিটা নেই। সাঈদ ইরিনার দিকে তাকাল। ইরিনা শান্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সাঈদ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ছবিটা কোথায় গেল? ইরিনা কি দেখেছে ছবিটা? সাঈদ মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বলল,
“হ্যাঁ ঠিক আছে”
“সত্যি সব ঠিক আছে?”
সাঈদের বুক কাঁপছে। ওয়ালেট পকেটে রেখে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। ইরিনা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল,
“সত্যি করে বলো তো। তোমার বন্ধুর বোন আমি। তা-ও বড়ো। তোমার থেকেও বড়ো আমি। তবুও কেন সাঈদ?”
সাঈদ কলিজা মোচড় দিয়ে উঠল। নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে তার। মাথা নিচু করে ফেলল। ইরিনা আবার বলল,
“ইর্তেজা জানতে পারলে তোমাদের বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যাবে। আমি আমার ছোটো ভাইয়ের সামনে যেতে লজ্জা পাবো। আমি চাই না আমাদের সবার জীবন কঠিন হয়ে যাক।”
সাঈদ নিশ্চুপ। ঠিক এই কারণে সে ভয় পাচ্ছিল ইরিনাকে মনের কথা বলতে। ইরিনা আবার বলল,
“সাঈদ, যদি আমাকে মন থেকে সম্মান করে থাকো তাহলে সব ভুলে যাও।”
সাঈদ চোখ তুলে ইরিনার দিকে তাকাল। ধীরে ধীরে ইরিনার সামনে গিয়ে বলল,
“একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
“হুম”
“আমাদের বয়সের ব্যবধানই আসল কারণ?”
“সাঈদ, বয়সের ব্যবধানের কথা বলছি না। আমাদের সম্পর্ক গুলো ভালো মতো দেখো তুমি।”
“আমি ছোটোবেলা থেকে আমাদের মাঝে একটাই সম্পর্ক দেখতে পেয়েছি। আর সেটা হলো ভালোবাসার।”
“স্টপ ইট, আমি তোমার সম্পর্কে কখনো এটা ভাবতেও পারি না। আর তুমি ভালোবাসার দাবী করছো?”
“তো আমি কি করবো এখন?”
“ভুলে যাবে সব। আমাকে নিজের মন থেকে মুছে ফেলো।”
সাঈদ জবাব দিলো না। নিঃশব্দে তাকিয়ে রইল ইরিনার দিকে। ইরিনা তার চাহনি দেখে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে বলল,
“আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। আমি চাই না তোমাকে ঘৃণা করতে।”
সাঈদ রাগী কন্ঠে বলল,
“কেন ঘৃণা করবেন আমায়? কি করেছি আমি?”
ইরিনা সাঈদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি তোমার লিমিট ক্রস করেছো।”
“লিমিট ক্রস? সত্যি করে বলুন, কখনো আপনার সাথে বেয়াদবি করেছি? কখনো আমার ব্যবহার দেখে আপনার মনে হয়েছে আমি আপনাকে খারাপ নজরে দেখেছি?”
ইরিনা জবাব দিলো না। তার গলায় কান্না আটকে আছে। সাঈদ ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে লাগলো। গাল বেয়ে চোখের পানি পরছে তার। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে পানি মুছে বলল,
“আমি জানতাম আমার জীবনে এমন দিন আসবে। নিজেকে প্রস্তুত রেখেছিলাম। কিন্তু কি করবো? এই মন আপনাকে ছাড়া আর কারো কথা ভাবতে পারে না। তাই আমার কষ্ট হচ্ছে। জানি না আপনাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো আমি।”
ইরিনা হাতজোড় করে বলল,
“হাতজোড় করছি চুপ থাকো প্লিজ। কেও শুনে ফেলবে।”
“ধুর, শুনলে শুনুক। আমার এখন যায় আসে না।”
ইরিনা রাগী কন্ঠে বলল,
“যাও এখনই। আর কখনো এই বাসায় আসবে না।”
সাঈদ হাত এগিয়ে বলল,
“আমার ছবি ফেরত দিন চলে যাচ্ছি।”
“না, তুমি ভুলে যাবে আমায়। তোমার কাছে আমার আরো ছবি থাকলে সব ফেলে দেবে।”
“একদম চুপ”
সাঈদের ধমক শুনে ইরিনা চমকে উঠল। সাঈদ আবার বলল,
“আমাকে নিজের জীবন থেকে দূর করতে পারবেন। কিন্তু আমার মন থেকে নিজেকে বের করতে পারবেন না। আপনার কোনো অধিকার নেই আমার জীবনের উপর।”
“এবার সত্যি লিমিট ক্রস করছো।”
“হ্যাঁ করেছি, চুপচাপ আমার আমানত আমাকে ফেরত দিন।”
“দেবো না”
সাঈদ নিজেকে শান্ত করে বলল,
“আচ্ছা আমি ওয়াদা করছি আর কখনো আপনার সামনে আসবো না। আপনার এই ছবিটা আমি এত বছর অনেক যত্নে রেখেছিলাম। হ্যাঁ আরো অনেক ছবি আছে আমার কাছে। আপনার প্রত্যেকটা ছবি আমার কাছে অনেক মূল্যবান। প্লিজ ফিরিয়ে দিন।”
সাঈদের কান্নাজড়িত কন্ঠ ইরিনা বুকে গিয়ে লাগছে। বালিশের নিচ থেকে ছবিটা বের করে মাথা নিচু রেখে এগিয়ে দিলো। সাঈদ ছবিটা নিয়ে বলল,
“ধন্যবাদ, আসি।”
সাঈদ ঘুরে হাঁটা ধরলো। ইরিনা চোখ তুলে তাকাল সাঈদের দিকে। হাঁটতে পারলে হয়তো দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলতো আমিও ভালোবাসি তোমায়। কিন্তু পারবে না। হয়তো রাজি হয়ে যেত। হবে না, কারণ সে সাঈদের জীবনকে আরো কঠিন করতে চায় না।
.
.
ইর্তেজা আর শ্রাবণ বসে কথা বলছে৷ সাগরিকা ঘরে গিয়েছে। শ্রাবণের কোনো কথা ইর্তেজার মাথায় ঢুকছে। শ্রাবণ বলছে সে ভালো হয়ে যাবে আবার রেগে আগুন হয়ে বলছে যার যত শত্রু আছে সবগুলোকে মে*রে ফেলবে৷ ইর্তেজা এক সময় বিরক্ত হয়ে বলল,
“বস, আপনি আমাকে স্পষ্ট ভাবে বলুন তো আমাকে কি করতে বলছেন?”
“ইর্তেজা, যত পর্যন্ত আমার শত্রু গুলো বেঁচে আছে আমার প্রত্যেক কাজে ওরা বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করবে। আমি যে কাজ গুলো জীবনে করিও নি সেসবের অপবাদও আমার নামে দেয় তারা।”
“তো এখন আমি কি করবো?”
“আমার হয়ে তুমি বিল্ডারদের সাথে কথা বলবে। কাজ অবশ্য আমি সামলাবো।”
“আপনি আমার আর অগ্নি পরীক্ষা নিবেন?”
“তুমি আছো বলেই আমি নিশ্চিন্তে আছি। ধন্যবাদ আমার এত সাহায্য করার জন্য?”
“ম্যামকে আজমাইনের কথা বলেছেন?”
“আস্তে ইর্তেজা সাগরিকা শুনে ফেলবে।”
“তার মানে আপনি এখনো বলেন নি আজমাইন আর বেঁ*চে নেই?”
“না, আমি যদি বলি আজমাইনকে আমি ভুল করে মে*রে ফেলেছি। ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আর আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।”
তখনই পেছন থেকে সূর্যের কন্ঠ ভেসে আসলো, “দেখলে আপু? আমি তোমায় বলেছিলাম আজমাইন ভাইয়ার সাথে ও নিশ্চয়ই কিছু করেছে।”
ইর্তেজা আর শ্রাবণ দ্রুত পেছনে তাকাল। সাগরিকা আর সূর্য দাঁড়িয়ে আছে।

চলবে……..

[আপনারা কি জানেন? গল্প শেষের দিকে। আচ্ছা, শ্রাবণের শাস্তি কে কে চান? তার সাথে কি হওয়া উচিত বলুন তো।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here