আর একটিবার পর্ব-২৩

0
695

#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২৩

সাগরিকা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিকে। সে আড়ালে সব কথা শুনেছে তাদের। এতদিন সে ভাবছিল আজমাইন বেঁচে আছে। শ্রাবণ তার যাতে ক্ষতি না করে, এর জন্য শ্রাবণের কথার মতো চলতো। সাগরিকাকে দেখে শ্রাবণ থমকে গেল। ইর্তেজার দিকে তাকাল রাগী দৃষ্টিতে। ইর্তেজা শ্রাবণের চাহনি দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আমাকে এভাবে কেন দেখছেন?”
শ্রাবণ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“বলেছিলাম না আস্তে বলতে?”
“এখন সব দোষ আমার?”
“তোকে পরে দেখছি।”
বলেই শ্রাবণ সাগরিকার দিকে দৌড়ে আসলো। সূর্য সাগরিকার আগে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“দূর থাকুন আমার বোনের কাছ থেকে।”
“সূর্য, এটা আমাদের পার্সোনাল ম্যাটার।”
“পার্সোনাল ম্যাটার? সিরিয়াসলি শ্রাবণ আহমেদ? বিষয় আজমাইন ভাইয়াকে নিয়ে আর আপনি বলছেন এটা আপনাদের পার্সোনাল ম্যাটার?”
শ্রাবণ সাগরিকার দিকে তাকাল। সাগরিকা এখনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে এখনই কান্না করে দেবে। সাগরিকা ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজা ঢোক গিলল। সাগরিকা হঠাৎ তাকে এভাবে কেন দেখছে। সাগরিকা ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে যেতে ইর্তেজাকে বলল,
“কি যেন বলেছিলে? ম্যাম, বস আপনাকে অনেক ভালোবাসে। উনি কখনো এমন কোনো কাজ করবে না যাতে আপনি কষ্ট পান। এমনই কিছু একটা বলেছিলে, তাই না ইর্তেজা?”
ইর্তেজা মাথা নিচু করে ফেলল। শ্রাবণ দ্রুত সাগরিকার দিকে এসে বলল,
“সা..সাগরিকা, আ..আমার কথা শোনো। আ..আমি আসলে…”
“চুপ থাকো শ্রাবণ, তোমার মুখ থেকে একটা কথা শুনতে চাই না।”
“তুমি না শুনলে আমি এক্সপ্লেইন করবো কিভাবে?”
“কি এক্সপ্লেইন করবে তুমি?”
সাগরিকা চিৎকার করে বলল কথাটা। তার এতোটাই কষ্ট হচ্ছে, যেন কলিজা ফেটে এখনই র*ক্ত বেরিয়ে যাবে। সাগরিকা ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। শ্রাবণ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সাগরিকা আবার বলল,
“আমার আজমাইনকে তুমি মে*রে ফেললে শ্রাবণ?”
শ্রাবণ রাগী কন্ঠে চিল্লিয়ে বলল,
“ও তোমার আজমাইন না। খবরদার সাগরিকা, আমি ছাড়া তোমার জীবনে দ্বিতীয় আর কেও থাকবে না।”
“দ্বিতীয়? আরে দ্বিতীয় তো তুমি ছিলে। আমার আর আজমাইনের মাঝে এসেছিলে তুমি।”
শ্রাবণ সাগরিকার বাহু ধরে বলল,
“আমার পুরো কথা শোনো প্লিজ।”
সূর্য এসে সাগরিকাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“অনেক হয়েছে। আমি আর সহ্য করবো না। যে ভয়ের কারণে আমি চুপ ছিলাম সেই কারণ আর নেই। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি এত নিচে নেমে গিয়েছিলেন।”
সূর্য কান্না জড়িত কন্ঠে বলল। সাগরিকা সূর্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। সূর্য সাগরিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“আমি তোমাকে আর এখানে থাকতে দেবো না। অনেক হয়েছে। তুমি এতদিন এখানে ছিলে ভাইয়াকে মুক্ত করানোর জন্য। সে তো অনেক আগেই মুক্ত হয়ে গিয়েছে।”
সাগরিকা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আমার আজমাইন আর নেই সূর্য। আমি অপরাধী হয়ে গেলাম। আমার জন্য ও ম*রে গেল।”
শ্রাবণ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। বুকের বা পাশে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে তার। এতদিন সাগরিকা যে বলতো সে শ্রাবনকে ভালোবেসে ফেলেছে? তাহলে আজমাইনের জন্য এত কাঁদছে কেন? সূর্য শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি আপনাকে শেষবারের মতো বলছি। আপনি আমার বোনকে রেহাই দিন এবার।”
“কিসের রেহাই? আমি সাগরিকাকে কখনো কষ্ট দিয়েছি? আমি সবসময় ওকে ভালোবেসেছি। ওর জন্য কি না করেছি? এত সহজে আমি ওকে ছাড়ছি না।”
সাগরিকা সূর্যকে ছেড়ে শ্রাবণের বরাবর দাঁড়িয়ে বলল,
“সহজে ছাড়বে না? আমাকেও মা*রবে এখন? তো মে*রে ফেল প্লিজ। আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না।”
শ্রাবণ সাগরিকার গালে হাত রেখে বলল,
“তুমি এমন কেন করছো? তুমি না বলেছিলে আমাকে ভালোবাসো। তো কেন আজমাইনের জন্য আমাকে ঘৃণা করছো বলো তো।”
সাগরিকা শ্রাবণকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“একসাথে থাকলে একটা বোবা প্রাণীর প্রতিও মায়া জন্মে যায়। তুমি তো তাও মানুষ।”
শ্রাবণ সাগরিকার দিকে তাকিয়ে রইল। সাগরিকা চোখের পানি মুছে ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি সব জানতে তাই না? তুমি সব জানতে কিন্তু আমাকে বলো নি। অথচ আমাকে বলতে শ্রাবণ আমাকে অনেক ভালোবাসে।”
“আপনাকে উনি সত্যি অনেক ভালোবাসে। তাই তো উনি এত কিছু করলো আপনার জন্য। আজমাইনকে উনি ইচ্ছে করে মারে নি। হ্যাঁ উনার দ্বারা একটা ভুল হয়েছে। উনি লুকিয়েছে আপনার কাছ থেকে এসব। যা উনার একদমই উচিত হয়নি।”
শ্রাবণ রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
“তোকে এত কথা কে বলতে বলেছে? তোর কথা শুনে সাগরিকা আমাকে আরো ভুল বুঝবে।”
“খু”’ন আপনি করেছেন। ম্যামের কাছ থেকে লুকিয়েছেন আপনি। বলেছিলাম না সব বলে দেন। কিন্তু শুনেন নি আমার কথা।”
শ্রাবণ ইর্তেজার কলার ধরে বলল,
“মুখ বন্ধ রাখ নাহলে তোকেও মে*রে ফেলবো।”
সাগরিকা তালি বাজাতে বাজাতে বলল,
“বাহ, খুব সুন্দর কথা বললে শ্রাবণ। যে উচিত কথা বলবে তাকেই মে*রে ফেলবে তাই তো?”
ইর্তেজা নিজেকে ছাড়িয়ে সাগরিকাকে বলল,
“আমি চাই না ভুল বুঝাবুঝি হোক। ম্যাম আপনি উনাকে মাফ করে দিন।”
সাগরিকা সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল,
“দেখলি সূর্য! এই ছেলের মাথাটাও গিয়েছে শ্রাবণের সাথে থাকতে থাকতে।”
ইর্তেজা নিশ্চুপ হয়ে গেল। সে জানে সে যা যা বলছে সব ভুল। খু’নের মাফ নেই। শ্রাবণ দৌড়ে এসে সাগরিকা হাত ধরে বলল,
“আমাকে আর একটিবার সুযোগ দাও সাগরিকা। আমি ওয়াদা করছি অনেক ভালো হয়ে যাব অনেক। তুমি যা বলবে তাই করবো।”
সাগরিকা তালিচ্ছ্যের হাসি দিয়ে বলল,
“যা বলবে তাই করবো। পারবে আজমাইনকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে?”
“এমন কোনো কথা বলো না যেটা করা আমার পক্ষে সম্ভব না।”
নিজের হাত ছাড়িয়ে সাগরিকা বলল,
“তাহলে যেতে দাও আমায়। আমি তোমাকে সহ্য করতে পারছি না।”
“আমাকে ছেড়ে যেও না সাগরিকা। আমি ম*রে যাব তোমাকে ছাড়া।”
“তো ম*রে যাও। তোমার মতো অমানুষ বেঁচে থাকলেই দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে।”
সূর্য এসে বলল,
“আপু শান্ত হও। ওর যদি লজ্জা শরম থাকে তোমাকে থামাবে না। চলো আমার সাথে।”
সূর্য সাগরিকা হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। শ্রাবণ থমকে দাঁড়িয়ে আছে। সাগরিকা একটা বারো তার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না। শ্রাবণ চিৎকার করে সাগরিকাকে ডাকলো। না, তবুও সাগরিকা তার ডাকে সাড়া দিলো না। শ্রাবণের নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। চোখ ঘোলাটে লাগছে। হাত পা থরথর করে কাঁপছে। শ্রাবণ পড়ে যেতে নিলো দ্রুত ইর্তেজা এসে তাকে ধরে ফেলল। শ্রাবণ ইর্তেজাকে দেখে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল,
“ছাড় আমায়, তোকে বলেছিলাম না বাসায় আসলে আজমাইনের কথা তুলবি না? দেখ কি হলো! আমার সাগরিকা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। একবারো আমার দিকে তাকায় নি। ঘৃণা করে আমার সাগরিকা আমায়।”
শ্রাবণ ঘনঘন নিশ্বাস নিতে লাগলো। ইর্তেজা আবার এসে বলল,
“আপনি শান্ত হোন। আমি ওয়াদা করছি ম্যাম ফিরে আসবে আপনার কাছে।”
শ্রাবণ রাগী দৃষ্টিতে ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“সাগরিকাকে আমি ফিরে না পেলে তোর জীবন তছনছ করে দেবো। আমি সাগরিকাকে না পেলে তুইও তোর মাহাকে পাবি না।”
ইর্তেজার মাথা গরম হয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমার মাহাকে মাঝে আনবে না বলে দিচ্ছি। নাহলে ভুলে যাব তুমি কে।”
“কি করবি তুই?”
“তুই জানতে চাস আমি কি করতে পারি?”
ইর্তেজা আর শ্রাবণ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল একে অপরের দিকে। শ্রাবণ বলল,
“আমি শ্রাবণ আহমেদ, যা বলি তাই করি। তুই ভাবতেও পারিস না আমি কি কি করতে পারি।”
“আমি ইর্তেজা, তত পর্যন্ত ঘুমন্ত বাঘ হয়ে থাকবো যত পর্যন্ত কেও আমার বোন আর মাহাকে মাঝে না আনবে। একবার তারা মাঝে আসলে আহত বাঘ হয়ে যাব। আর একটা সুস্থ বাঘের থেকে আহত বাঘ বেশি ভয়ংকর হয়। এই কথা নিজের মাথায় ঢুকিয়ে রাখ শ্রাবণ আহমেদ।”
বলেই ইর্তেজা হাঁটা ধরলো। শ্রাবণ হাতমুঠো শক্ত করে রেখেছে। রাগে চিল্লিয়ে বলল,
“আমাকে তুই হুমকি দিলি ইর্তেজা?”
ইর্তেজা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
“উঁহু, আমি তো ওয়ার্নিং দিলাম। রাগ তোলার জন্য কিছু না পেয়ে আমাকে মাঝে টানলি কেন? ঠিক আছে, আমিও প্রস্তুত আছি।”
“তোর কাউন্টডাউন শুরু। নিজেকে বাঁচাতে পারলে বাঁচিয়ে দেখা আমার কাছ থেকে।”
ইর্তেজা বিরক্ত হয়ে ঘুরে হাঁটা ধরলো। শ্রাবণ তাকে অকারণে মাঝে কেন নিয়ে আসলো বুঝতে পারছে না। ইর্তেজা দ্রুত বেরিয়ে এদিক সেদিক দেখলো। সাগরিকা আর সূর্যকে দেখা যাচ্ছে না। ইর্তেজা দ্রুত গতিতে হাঁটা ধরলো। সূর্যের বাসায় যাচ্ছে সে। বাসায় গিয়ে দেখে দরজায় তালা ঝুলানো। তারা এখানে আসে নি তো কোথায় গিয়েছে? ইর্তেজা দাঁড়িয়ে থেকে চিন্তায় ডুবে গেল।
.
.
শ্রাবণ সাগরিকার ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। ছবির উপর হাত বুলিয়ে বুকের সাথে ধরে বলল,
“আমার উপর কেন এত রাগ তোমার? আর একটিবার সুযোগ দাও প্লিজ। ওয়াদা করছি অনেক ভালো হয়ে যাব। তুমি গর্বিত হবে যে আমি তোমার স্বামী। তুমি আমার না হলে তোমাকে আমি..তোমাকে আমি মে*রে ফেলবো সাগরিকা।”
শ্রাবণ সাগরিকার দিকে দিকে তাকিয়ে আবার বলল,
“সত্যি বলছি, তুমি আমার না হলে আর কারো হতে দেবো না।”
শ্রাবণের চোখ গড়িয়ে পানি পরলো। তখনই দু’টো ছেলে আসলো এগিয়ে। শ্রাবণকে উদ্দেশ্য করে একজন বলল,
“বস, যা যা বলেছেন সব প্রস্তুত করেছি। এখন কি করবো?”
শ্রাবণ ছবির দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল,
“সবাইকে তুলে নিয়ে আসো। আর হ্যাঁ, সাগরিকার যাতে কিছু হয়। তার একটু কষ্ট হলে তোমার জান নিয়ে নেবো।”
“ওকে বস”
ছেলে দু’টো চলে গেল। শ্রাবণ ছবির উপর হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
“বিশ্বাস করো ইচ্ছে করে মারি নি। অনেক রাগ হয়েছিল আজমাইনের কথা শুনে। তুমি তো আমার। তোমার মনে অন্য কেও কেন থাকবে বলো? তোমার মনের ভেতর থাকার অধিকার একমাত্র আমার।”
শ্রাবণ ছবির উপর চুমু দিয়ে আবার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো।
.
.
সাগরিকা কপালে হাত দিয়ে বসে আছে। কাঁদবে? কাঁদলে তো আজমাইন ফিরে আসবে না। নাহলে এতক্ষণে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতো। সূর্য পেছনে ফিরে সাগরিকার দিকে তাকাল। বোনকে সে বাসা থেকে কিছুটা দূর নিয়ে এসেছে। যাতে কিছুক্ষণ শান্তিতে নিশ্বাস নিতে পারে। বাসায় নিয়ে গেলে শ্রাবণ তাদের খুঁজে বের করতো। সাগরিকা মাথা তুলে সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। ফিরে যাবো শ্রাবণের কাছে?”
“ভাইয়ার মৃ*ত্যুর কথা জানার পর পারবে তার সাথে থাকতে?”
“সূর্য আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে আজমাইনের জন্য। কিন্তু শ্রাবণকে ঘৃণা করতে পারছি না। জানিস, ও আমার অনেক যত্ন নেয়। আমার জন্য সব করতে পারে।”
“কিন্তু ভাইয়ার মতো প্রাণ দিতে পারবে না।”
সাগরিকা মাথা নিচু করে ফেলল। চোখের কোণায় অশ্রু জমে চোখ টলমল করছে। চোখের সামনে আজমাইনের চেহারা ভাসছে। কি মধুর সম্পর্ক ছিল তাদের। খুনসুটি ঝগড়া লেগেই থাকতো। সাগরিকা কখনো বলতে পারবে না আজমাইন তাকে কষ্ট দিয়েছিল। এমন একজন মানুষ তার কারণে কত ভয়াবহ মৃ*ত্যু পেলো। আচ্ছা, আজমাইন কিভাবে ম*রেছে? শ্রাবণ কি অনেক কষ্ট দিয়ে মে*রেছে তাকে? সাগরিকা বুক কাঁপছে। সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল,
“সূর্য, তোর কি মনে হয়! শ্রাবণ আজমাইনের লা*শের সাথে কি করেছে?”
সূর্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“আমি আন্দাজ করতে পারছি না। ওর কাছ থেকেই জানা যাবে।”
“আমাকে নিয়ে যাবি?”
“কোথায়?”
“আজমাইনের বাসায়”
.
.
ইর্তেজা ফুটপাতে হাঁটছে। সাগরিকাকে খুঁজেছে অনেক জায়গায় কিন্তু পায়নি। হার মেনেছে ইর্তেজা। সে জানে শ্রাবণ কোনো মতো সাগরিকাকে খুঁজে বের করবেই। ইর্তেজা দাঁড়াল। কোথায় ফাঁসলো সে? মাহা আর ইরিনাকে নিয়ে ভয় করছে তার খুব। লম্বা নিশ্বাস ফেলে আবার হাঁটা ধরলো। বাসায় পৌঁছে দেখে দরজা খোলা। ভেতরে ঢুকে চেয়ারে বসে ঝর্ণাকে ডাকলো। সাড়াশব্দ নেই। ইর্তেজা ভ্রু কুঁচকালো। দ্রুত উঠে ইরিনার ঘরে গেল। ঘরে কেও নেই। কিন্তু ইরিনার মোবাইল ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে আছে। ইর্তেজা দ্রুত গিয়ে মোবাইল হাতে নিলো। ভয় করছে তার। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আপু বলে ডাকলো। জবাব নেই। মাহাকেও ডাকলো। এখনো কোনো জবাব আসলো না। ইর্তেজা দৌড়ে রান্নাঘরে গেল ঝর্ণাও নেই। দ্রুত ঝর্ণার নাম্বারে কল করলো। সিম বন্ধ বলছে। ইর্তেজা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তখনই মোবাইলে কল আসলো। শ্রাবণের নাম্বার ভাসছে স্ক্রিনে। ইর্তেজা রিসিভ করে কানে ধরলো।
“হ্যালো”
“সাগরিকাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না ইর্তেজা।”
“আমিও অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাই নি।”
“আমি জানি না সাগরিকাকে না পেলে আমি কি করবো।”
ইর্তেজা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল,
“শ্রাবণ আহমেদ, আপনার চিকিৎসার প্রয়োজন তা কি জানেন? আপনি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছেন।”
“তোকে কে বলেছিল সাগরিকার সামনে আমাকে খারাপ করতে।”
“উচিত কথা বলেছিলাম আমি। ভুল করেছিলেন আপনি সাগরিকাকে কিছু না বলে।”
“আমার সাথে গেইম খেলছিস তুই?”
ইর্তেজা থতমত খেয়ে গেল। শ্রাবণের মাথা হয়তো খারাপ হয়ে গিয়েছে। তাই তো যা মুখে আসছে বলছে। শ্রাবণ আবার বলল,
“তুই জানিস না ইর্তেজা আমি কি কি করতে পারি।”
ইর্তেজার মাথায় র*ক্ত উঠে গেল। রাগী কন্ঠে বলল,
“এই ফিল্মি ডায়লগ না দিয়ে কি করবি করে দেখা।”
“ওকে ওয়েট”
শ্রাবণ নিজের কান থেকে মোবাইল সরিয়ে ইরিনার কানে ধরলো, “ডাক তোর ভাই কে।”
ইর্তেজা চমকে উঠল এই কথা শুনে। অপর পাশ থেকে ইরিনার কন্ঠ ভেসে আসলো,
“ইর্তেজা, ইর্তেজা কোথায় তুই?”
“আপু তুমি ঠিক আছো তো?”
অপর পাশ থেকে ইরিনার জবাব আসলো না। শ্রাবণ মোবাইল সরাতেই একটা ছেলে ইরিনার মুখে কাপড় বেঁধে দিলো। শ্রাবণ গিয়ে মাহার কানে মোবাইল ধরে বলল,
“তোর বয়ফ্রেন্ডকে বল আমার সাগরিকাকে যেভাবেই হোক নিয়ে আসতে নাহলে এদিকে র*ক্তের বন্যা করে ফেলবো।”
মাহা শ্রাবণের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শ্রাবণ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“এভাবে কি দেখছিস? থাপ্পড় মেরে সব দাঁত ফেলে দেবো।”
মাহা রাগে গর্জে উঠল,
“কি করবি তুই? তোর মতো গু*ন্ডা আমার আব্বু পকেটে নিয়ে ঘুরতো। এসব হুমকি শুনে আমি ভয় পাই না।”
মাহা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ইর্তেজা যাই হোক তুমি ওর একটা কথা শুনবে না।”
শ্রাবণ রাগের বশে মাহার গালে সজোরে চড় মেরে দিলো। ইর্তেজা টের পেয়ে চিৎকার করে বলল,
“শ্রাবণ আমার মাহা আর বোনকে ছেড়ে দে।”
শ্রাবণ মোবাইল কানে ধরে বলল,
“তোর মাহাস সাহস কি করে হলো আমাকে চোখ দেখানোর? সাগরিকাকে নিয়ে আয় নাহলে ওর চোখ বের করে ফেলব আমি।”
“তুই আমার বোন আর মাহাকে মাঝে টেনে ভালো করিস নি। এখন আমার থেকে নিজেকে কিভাবে বাঁচাবি ভাবতে থাক।”
ইর্তেজা কল কেটে দৌড়ে গেল।

শ্রাবণ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। মাহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ইর্তেজা বেশ সাহসী। সে ভাবছে আমার সাথে লড়াই তে পারবে সে।”
মাহা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ ঝুঁকে মাহার চোখে চোখ রেখে বলল,
“ইর্তেজা যেমন তোমার জন্য পাগল আমিও আমার সাগরিকার জন্য পাগল। ইর্তেজার কারণে আমি সাগরিকাকে হারাতে চলেছি। আবার আমার জন্য ইর্তেজা তোমাকে হারাতে চলেছে। দেখি দুই পাগলের মধ্যে কোন পাগলের জিত হয়।”

সময় ঘনিয়ে গেল। এখন সময়টা সন্ধ্যা। শ্রাবণ তার বাসাতেই তাদের তুলে নিয়ে এসেছে। ইরিনা রাগে কটমট করছে। ইর্তেজাকে বলেছিল এসব থেকে দূর থাকতে। কিন্তু ছেলেটা শুনে নি। মাহার দৃষ্টি দরজার দিকে। সে জানে ইর্তেজা আসবে। তার চিন্তা হচ্ছে ইরিনার জন্য। ইরিনা ঔষধ না খেলে অসুস্থ হয়ে পরবে। মাহা শ্রাবণের দিকে তাকাল। ইজি চেয়ারে বসে সিগারেট টানছে। মনে মনে শ্রাবণের চোদ্দগুষ্টিকে গালাগাল করলো মাহা। সে বুঝতে পারছে না ইর্তেজা কেন এই মানুষটার সাথে ছিল এতদিন? মাহা আবার দরজার দিকে তাকাল।

শ্রাবণ ইজি চেয়ারে বসে উপরে থাকা ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে আছে। কাঁচের তৈরী ঝুমুর। চারপাশে লাইট লাগানো। লাইট গুলো জ্বালালে পুরো হলরুম আলোয় ভরে যায়। সাগরিকার অনেক পছন্দের এটা। শ্রাবণ মুচকি হাসলো। তখনই একজন বলল,
“বস, ম্যাম এসেছে।”
শ্রাবণ দ্রুত চোখ খুলে দরজার দিকে তাকাল। সাগরিকা দাঁড়িয়ে আছে। শ্রাবণ উঠে দাঁড়াল। চোখে অশ্রু জমে গিয়েছে আনন্দে। তখনই ইর্তেজা আসলো। সাগরিকার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পকেট থেকে রিভলবার বের করে সাগরিকার মাথার পাশে রেখে শ্রাবণের দিকে তাকাল। শ্রাবণ চমকে উঠল। ইর্তেজা সাগরিকার দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলল,
“আমি চাই নি আপনাকে বিসর্জন দিতে। মাফ করে দিয়েন।”
“আমাকে এমনিতেও ফিরতে হতো। শ্রাবণের সাথে আমার অনেক হিসাব এখনো বাকি আছে। এখন চুপ থাকো। শ্রাবণ যাতে না বুঝতে পারে এই রিভলবারে গু*লি নেই।”
ইর্তেজা শ্রাবণের দিকে তাকাল। শ্রাবণ রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
“তোর সাহস তো কম না। আমার সাগরিকাকে ব্যবহার করছি তুই।”
“তোর থেকেই তো শিখেছি। তুই আমার বোন আর মাহাকে ব্যবহার করলে আমি সাগরিকাকে কেন ব্যবহার করতে পারবো না?”
“তোর বোন আর মাহার টুকরো টুকরো করে ফেলবো।”
“তাহলে আমিও সাগরিকাকে মে*রে ফেলবো।”
শ্রাবণ হাতমুঠো শক্ত করে ফেলল। ইর্তেজা সাগরিকাকে হাঁটতে বলল। সাগরিকা ধীরপায়ে হেটে গেল। ইর্তেজা সাগরিকার মাথায় রিভলবার ধরে রেখেছে। সাগরিকা দাঁড়িয়ে শ্রাবণকে বলল,
“দেখো তোমার গুনাহের শাস্তি আমি পেতে যাচ্ছি। এখন শান্তি লাগছে তো তোমার।”
শ্রাবণ সাগরিকার কথা শুনে ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজা বলল,
“আমার বোন আর মাহাকে যেতে দে শ্রাবণ। তাহলে আমিও তোর সাগরিকাকে ছেড়ে দেবো।”
“আগে আমার সাগরিকাকে যেতে দে।”
“তাহলে আগে আমার বোনকে ছাড়।”
শ্রাবণ নিজে গিয়ে মাহা আর ইরিনার হাতের বাঁধন খুলে ফেলল। ইর্তেজাকে বলল,
“দুজনকেই ছেড়ে দিলাম। আমার সাগরিকাকে ফিরিয়ে দে।”
ইর্তেজা মাহাকে ইশারায় বলল ইরিনাকে নিয়ে বের হতে। মাহা মাথা নাড়িয়ে ইরিনার দিকে হেটে আসলো। হুইলচেয়ার ঠেলে ইর্তেজার দিকে এগিয়ে আসলো। সাগরিকা ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“যাও তোমরা, আর নিজের কথা রাখবে।”
“কিন্তু, আপনি..”
“আমার যা হওয়ার হবে তুমি যাও।”
ইর্তেজা রিভলবার নিচু করতেই সূর্য পুলিশদের নিয়ে আসলো। শ্রাবণ ও তার লোকেরা চমকে উঠল। শ্রাবণ সাগরিকার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল। সাগরিকা শ্রাবণের দিকে তাকাল। পুলিশরা কাছে আসতেই শ্রাবণ সাগরিকার হাত ধরে টেনে পকেট থেকে রিভলভার বের করে সাগরিকার গলায় ধরে দাঁড়াল। সবাই দাঁড়িয়ে পরলো এই দৃশ্য দেখে। সাগরিকার শান্ত দৃষ্টি শ্রাবণের দিকে। সে জানতো এমন কিছুই হবে। শ্রাবণ নিজেকে বাঁচানোর জন্য যে কিছু করতে পারে। শ্রাবণ সাগরিকার দিকে অশ্রু চোখে তাকিয়ে বলল,
“ধোঁকা দিলে তুমি আমায়?”
“এত বছর তুমি আমায় ধোঁকায় রেখেছিলে। অনুভব করতে পারছো আমার কেমন লেগেছে?”
“তোমাকে ভালোবেসে কি আমি ভুল করেছি?”
“কাওকে ভালোবাসা ভুল না। ভালোবাসায় ভোগ না ত্যাগ করা শিখতে হয়।”
“তুমি কখনোই আমার ভালোবাসা বুঝো নি সাগরিকা। আজমাইনকে মুক্ত করতে চেয়েছিলাম। তার আগেই আমার লোক কল দিয়ে বলে প্রচুর ব্লাড লস হওয়ায় আজমাইন ম*রে গিয়েছে। ভয়ে বলি নি। আমি মৃ*ত্যু থেকেও বেশি ভয় পাই তোমার থেকে দূর হওয়া। কিন্তু ম*রতেও ইচ্ছে করে না। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে তোমার থেকে দূর হওয়া। তুমি জানতে চেয়েছিলে আমি তোমার জন্য কি কি করতে পারি, দেখবে?”
সাগরিকা তাকিয়ে রইল শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ উপরে তাকাল। সে ঝুমুরের বরাবর নিচে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রাবণের চাহনি দেখে সাগরিকাও তাকাল। ভ্রু কুঁচকালো। সে যা ভাবছে শ্রাবণ কি সত্যি তাই করবে? সাগরিকা “শ্রাবণ” নাম ধরে ডাকতেই শ্রাবণ সাগরিকাকে ধাক্কা দিয়ে দূর ঠেলে ঝুমুরের বরাবর গু*লি করলো। সাগরিকা মাটিতে ছিটকে পরলো। মাহা গিয়ে তাকে ধরলো। ঝুমুরের একটা শিকড় ভেঙ্গে গিয়েছে। একজন পুলিশ শ্রাবণকে থামানোর জন্য হাতে গু*লি করলো। গু*লি শ্রাবণের বাহুতে লাগলো। শ্রাবণ থেমে গেল। পুলিশ দৌড়ে গেল তার শ্রাবণ আবারো ঝুমুরে ২ টো গু*লি করলো। শিকড় ভেঙ্গে ঝুমুর পড়ে গেল শ্রাবণের উপর।

চলবে…….

[গল্প যেভাবে মন চায় সেভাবে লিখা যায়। তাই গল্পের মোড় ঘুরতেও পারে। যদিও আমি এন্ডিং ভেবেছি কেমন দেবো। তবুও আপনাদের থেকে জানতে চাই শ্রাবণের সাথে কি হওয়া দরকার। ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিয়েন❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here