আলোয় অন্ধকার পর্ব-৩৮

0
1618

#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 38

আকাশ ভোরা ঝলমলে মিষ্টি রোদ্দুর! আশেপাশে সবুজের বাক সোনালি আলোয় চিকচিক করছে! ছাদের কর্নারে দাঁড়িয়ে আস্ফি এক মনে দূরে তাকিয়ে আছে! কিছু সময় পর বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিলো। ছাদ ময় পায়চারি করতে করতে ফোন হাতে পিউয়ের পাঠানো ম্যাসেজ গুলো মনে মনে পরতে লাগলো! খুবি করুণ দেখাচ্ছে ম্যাসেজ গুলো! বারবার একি ম্যাসেজ করছে পিউ। ” একটি বার কথা বল আস্ফি খুব কষ্ট হচ্ছে আমার!” আস্ফি কল লিস্টে ঢুকে কল দিবে কি দিবেনা পিউকে! কনফিউজড হয়ে যাচ্ছে বারবার! কোথাও ইগো চলে আসছে কোথাও পিউয়ের প্রতি মনটা বারবার গলে যেতে চাইছে!

এসবের মাঝে ও ছাদে দ্বিতীয় কারো উপস্থিতি টের পেলো। আস্ফি দীর্ঘশ্বাস ফেলল! ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে পিছনে তাকালো। পিউকে আর কল দেওয়া হয়ে উঠলোনা! পিছনে তাকিয়ে আস্ফি অবাক হলো। কিয়াশা ছাদের ছোট ঘরে দাড়িয়েই রোদের জন্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আশপাশে দেখছে ওর হাতে কফির সুন্দর একটি মগ। আস্ফির গলা শুকিয়ে এলো ও মন চাইলো কফি খেতে। সত্যি বলতে সকাল সকাল একটা কফি খেলে মন্দ হয় না! কিন্তু গিয়ে নিয়ে আসতে ইচ্ছে করছে না। তখনি কিয়াশা ওর দিকে এগিয়ে এলো। আস্ফির হাতে কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে এক কর্নারে দিকে যেতে যেতে বলল,
–” রোদ আমার সহ্য হয় না! কিন্তু এতো মিষ্টি রোদ আগে শরীরে পরেনি মনে হচ্ছে! ”

হতভম্ব আস্ফি কফির মগের দিকে তাকিয়ে ছিলো! কিয়াশার কথায় ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
–” আমি তোমাকে কত ফোর্স করলাম এতদিন ছাদে আসতে। তুমি আসলে না দেখলে মিস করলে খুব!

কিয়াশা স্বাভাবিক ভাবেই অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,
–” ফোর্স করেছিলে বলেই আসিনি! ”

আস্ফি অদ্ভুত চোখে কিয়াশার দিকে তাকালো! কিছু একটা ভেবে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে প্রশ্ন করে বসলো,
–” ডেনিয়াল তোমাকে ডিলের জন্য ফোর্স করেছিলো? তাই তুমি রাজি হওনি? ফোর্স করা তোমার পছন্দ নয়?”

কিয়াশা চমৎকার হাসলো! বলল,
–” আসলে কথাটা সত্যি ফোর্স করে কিছু করা আমার পছন্দ নয়। ডেনিয়াল আমাকে ডিলের জন্য ফোর্স করেছিলো। দ্বিতীয়ত বাবা স্তব্ধ ইতালি যাওয়ার পর ওর সাথে কথা বলে তোমাদের গ্রুপের সাথে ডিল ফিক্সড করে ফেলে। তখন ডিল সম্পর্কে খুটিনাটি আমাকেই স্তব্ধকে বলতে হয় সে জন্য। আমার স্তব্ধের সঙ্গে বেশকিছু বার দেখা-সাক্ষাৎ করতে হয়। ডেনিয়াল তার স্বার্থ এর জন্য আমাকে ফলো করছিলো। সেটা অবশ্য আমি আগে যানতে পারিনি! সে স্তব্ধের সাথে আমাকে দেখে ভেবেই নেয় আমি স্তব্ধের সাথে রিলেশনে আছি তাই ওকেই ডিলটা দেওয়া হয়েছে! সে আমাকে বেশ কিছু দিন হুমকি ধামকি দেয় নানান ভাবে। স্তব্ধ সেসব জানত ও না করেছিলো আমাকে ওর সাথে কিছু দিন কথা না বলতে। কিন্তু তুমি তো জানো সময় মতো এই ডিল না হলে। ডেনিয়ালের ইচ্ছেটাই পূর্নতা পেতো। আমেরিকার সাথে সাথে ইতালিও ওর হাতে মুঠোয় চলে যেতো। জেদ চেপে গেলো আমি বাবার ইচ্ছে স্বপ্ন পূর্ণ করতে উঠে পরে লাগলাম। স্তব্ধের ফ্লাটে পর্যন্ত চলে যেতাম সবটাই ওই সাইকোটাকে যন্ত্রণার উপর রাখার জন্য দেখানোর জন্য আমি পিছ পা হবোনা অন্তত ওর ভয়ে। কিন্তু শেষে স্তব্ধের কথা সম্পূর্ণ সত্যি হয়। ও আমাকে বলেছিলো। ডেনিয়াল এনি টাইম আমাকে এটাক করবে। সেটাই হয়!”

আস্ফি কিশার কথা মনোযোগ সহকারে শুনে কফি একচুমুকে শেষ করে বলল,
–” এর জন্যেই ডেনিয়াল গ্লোবাল এর এতো রাগ আমার ভাইয়ের উপর! নাইস! বাট ইউ নো উয়ারিস, আমি ওকে বলে দিবো। হারকে জিতনে বালেকো বাজিগার কেহ্তেহে! মেরা ভাই বাজিগার হে বাজিগার! ”

কিয়াশা ফিক করে হেসে ফেলল আস্ফির কথার প্যাটার্ন দেখে! খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলল,
–” কিন্তু বেচারি টিয়া আমার বদলে ঐ সাইকোটার টর্চার সহ্য করেছে! এটা সব থেকে খারাপ ছিলো!” শেষে মন খারাপ করে বলল কিয়াশা!

এই কথা শুনে আস্ফি একদম চুপ হয়ে গেলো! কিছু ক্ষণ পর নিরবতা ভেঙে বলল,
–” যদি সব থেকে বেশি খারাপ কিছু এই গেমটাতে হয়ে থাকে সেটা এটাই হবে। টিয়া আমাদের প্রফেশনাল লাইফে জরিয়ে গেছে! এই গ্যামটা ভাই সব থেকে বেশি ইঞ্জয় করতো। কিন্তু আমি জানি সে এই গ্যামটার জন্য সারাজীবন একরাত শান্তিতে ঘুমুতে পারবেনা। শুধু মাত্র টিয়া আর এ জীবনেও সেফ হবে না বলে! একটা কথা কি জানো সময় থাকতে প্রিয় মানুষটার মূল্য বুঝতে হয়। হতে পারে সময় চলে গেলে তখন প্রিয় মানুষটার জন্য সব থেকে বেশি নিজেরি আফসোস করতে হয়! ভাই যদি আগেই নিজের ভালোবাসা বুঝেনিত তাহলে আজ এই দিন কখনও আসতো না। টিয়া বিনা দোষে শাস্তিও পেত না!”

কিয়াশা টিয়া স্তব্ধের প্রেম কাহিনী শুনেছে কবিরের মুখে! তাই ও বলল,
–” ওরা দুজন দুজনকে অতিরিক্ত ভালোবাসে তাইনা? ”

আস্ফি কিয়াশার দিকে তাকিয়ে বলল,
–” সেটা আমার তোমার ভাবনা থেকেও বেশি!”

কিয়াশা স্মিত হেসে বলল,
–” ভালোবাসা যতই হোক নিজের ইচ্ছেতে পৃথিবীতে কিছুই হয়না বুঝলে!”

আস্ফি মাথা নাড়িয়ে বলল,
–” ইউ রং! কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়। চেষ্টা করতে হয়! ভাই সেটাই করেনি! রীতিমতো ভয় পেয়েছে! ”

কিয়াশা হুট করেই বলল,
–” তুমিও তো একি কাজ করছো! টিয়ার ভবিষ্যৎ কল্পনা করে! তোমার গার্লফ্রেন্ড কে নিজের লাইফে আনতে ভয় পাচ্ছো!”

আস্ফি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিয়াশার কথা শুনে। বিস্ফোরিত চোখ গুলো যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে! কিয়াশা আস্ফিকে চমকাতে দেখে স্মিত হেসে নিচে চলে গেলো! আস্ফির বিস্ময় তাতে একটুও কমলোনা না বরং বেরে গেলো! মেয়েটা কেমন জাদুকরী সব বুঝে যায় চোখের ভাষায়! ভীষণ অদ্ভুত!

টিয়ার যখন ঘুম ভাঙে ও বুঝতে পারে কেউ ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে! টিয়া মুচকি হাসলো। ঘুরে পিছনে তাকিয়ে স্তব্ধের মুখের দিকে তাকালো! স্তব্ধ নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে ছিলো টিয়ার পিঠ। তাকিয়ে ছিলো। হাতে মাথা রেখে টিয়ার মিষ্টি স্নিগ্ধ মুখে! টিয়া ওর দিকে ঘুরতেও নিজের দৃষ্টি ফিরালো না! বরং আবার জরিয়ে ধরলো! টিয়া ওকে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জা পেলো। স্তব্ধের বুকে থেকে হাফসাফ করতে করতেই এক পর্যায়ে বলল,
–” আপনি ঘুমাননি এখনও? ”

স্তব্ধ কোমল দৃষ্টিতে ওর চোখে চোখ রেখে নির্লিপ্ত গলায় বলল,
–” তোমাকে দেখার তৃষ্ণা মিটছিলোনা! ঘুমাই কি করে? ”

স্তব্ধের নির্লিপ্ত উত্তরে এবার টিয়া লাল টোম্যাটো হয়ে গেলো! স্তব্ধের চোখে চোখ তুলে তাকাতে ভুলে গেলো! মৃদু কাঁপতে লাগলো শরীর ধীরে ধীরে! ও কোন রকমে হাত দিয়ে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো স্তব্ধের থেকে। স্তব্ধ ওকে নড়তেও দিলোনা! তাই টিয়া ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলল,
–” বাবা নিশ্চয়ই আমার অপেক্ষা করছেন নিচে যেতে হবে!”

স্তব্ধ দুষ্টু হেসে বলল,
–” বাবার বাবা তোমার সাথে আছে। তাই বাবা আজ অপেক্ষা করবেন না! ইউ নো হোয়াট আই মিন?”

টিয়া বোকা বোনে গেলো! ও ভেবেছিলো স্তব্ধ বাবার কথা শুনলে ওকে যেতে দিবে এই তীব্র অনুভূতির অদ্ভুত যন্ত্রণা থেকে। যেখানে স্তব্ধ ওর আশেপাশে থাকলেও ওর হাত পা আড়ষ্ট হয়ে থাকে। স্তব্ধ ওর পাশে না থাকলেও অনুভূতি শূন্য হয়ে পরে। ভালোবাসায় এত অদ্ভুত যন্ত্রণা কেন? ওর ভাবনার মাঝেই স্তব্ধ অতান্ত ক্লান্তিমাখা দূর্বল কণ্ঠে বলল,
–” মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে! টিয়াপাখি? ”

টিয়া এবার ভয়, অস্বস্তি, লজ্জা কাটিয়ে পূর্নদৃষ্টি মেলে স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠলো! কি অবস্থা হয়ে গিয়েছে স্তব্ধের চমৎকার মুখশ্রী? ফর্সা মুখে চোখের নিচের লাল আভা গুলো স্পষ্ট বলে দিচ্ছে। কত রাত না ঘুমের কারণ! টিয়ার হাত কখন থেকে স্তব্ধের এলোমেলো সিল্কি চুল গুলোতে হাত বুলাচ্ছে ও নিজেও জানে না। টিয়ার হাতের আদুরে স্পর্শে স্তব্ধের চোখ আনমনেই বন্ধ হয়ে আসে। ও গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়! টিয়া কোনও রকম লোজ্জা অস্বস্তি ছাড়া স্তব্ধকে দেখার সুযোগ পায়। সেটা এক ফোটাও মিস করতে দেয়নি সে। কিন্তু এক সময় প্রচুর প্রশান্তি স্তব্ধের পাশের শোয়ার উষ্ণতায় নিজেও আবার ঘুমিয়ে পরে!

তখন সময়ছিলো ১০ টা ও আবার যখন ঘুম থেকে উঠে তখন ৬ টা বাজে! সেটা দেখে একরকম আৎকে উঠে ও! স্তব্ধ ও রুমে আর ও সারাদিনে রুম থেকে বের হয়নি কি ভাববে সবাই? ভেবেই ভীষণ অস্বস্তিতে পরে যায় ও! স্তব্ধকে কোনও রকম ছাড়িয়ে নেয় আস্তে করে যেন ওর ঘুমের ডিস্টার্ব না হয়। তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতেই। দেখতে পায়! কিয়াশা সোফায় বসে ফোনে কথা বলছে হয়তো ওর বাবার সাথে! ড্রয়িং রুমে আশেপাশে চোখ বুলাতেই পেছন থেকে আস্ফি ওর মাথায় টোকা দিয়ে দুষ্টু কণ্ঠে বলে উঠলো,
–” বাহ বাহ বান্ধবী আমার হাসবেন্ড পেয়ে রাত দিন রুম থেকে বেরুতে পারছেনা! তা সুন্দরী রুম থেকে বেরুতে টাইম পেলি অবশেষে? ভাই ছাড়লো তোকে?”

টিয়া চমকে গেলো প্রথমে কিন্তু আস্ফির কথা শুনে ওর মাথা কাটা গেলো লজ্জায়! ওদিকে কিয়াশা ততক্ষণে ফোন রেখে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে মিটমিট হাসছে! টিয়া লোজ্জায় কোন দিকে পালাবে বুঝতে পেলো না! বেহায়া দুটোর চোখের দৃষ্টি থেকে রক্ষাও পেলো না!
কিয়াশা টিয়ার লজ্জা বাড়াতে অদ্ভুত ভঙ্গিতে বলে উঠলো ,
–” বুঝলে আস্ফি এক রাতেই আমাদের কথা ভুলিয়ে দিয়েছে স্তব্ধ ওকে। তাই বেরুতে ইচ্ছে করেনি হয়তো ওর!”

টিয়া করুণ চোখে তাকিয়ে রইলো দুজনের দিকে। রাগো হচ্ছে ওর দুটোর উপর! রেগে কিছু বলবে! তখনি কবিরের গলা শোনা গেলো,
–” কি হয়েছে এখানে? ”

ব্যাস টিয়া কিচেনে দৌড় লাগাতে এক মিনিট দেড়ি করলোনা আর! মুহূর্তে আস্ফি কিয়াশার হাসির রোল পরে গেলো ড্রয়িং রুমে। সবকিছুর মধ্যে কবির হতভম্ব হয়ে রইলো টিয়ার দৌড় দেখে!

চলবে!

[আমি চেক করিনা ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা করবেন! ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here