আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প নুজহাত_আদিবা পর্ব ১১

আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
নুজহাত_আদিবা
পর্ব ১১

বর্ণ যখন প্রথমবার হ্যালো বললেন তখনও আমি জবাব দিলাম না। এবার বর্ণ বেশ বিরক্তি নিয়েই বললেন,

— কে বলছেন আপনি?

আমি এবার হালকা গলায় বললাম,

— মেহুলিকা।

— মেহুলিকা! তুমি আমাকে কল ও দিয়েছো? রিয়েলি! আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না। একটা চিমটি কাটো তো আমাকে।

— ফোনে কীভাবে চিমটি কাটা যায় তাঁর মাধ্যম আমার জানা নেই। জানা থাকলে অবশ্যই দিতাম।

— ধুর! তুমি কী একটু ও রোমান্টিক হতে পারো না? ভালো লাগে না আমার।

— আপনার ভালো লাগার জন্য কী? এখন আমাকে রোমান্টিক কীভাবে হওয়া যায় সেটা জানতে হবে?

— তোমার প্রশ্ন কী শেষ হবে মেহুলিকা? এবার এসব ছাড়ো। আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনো এখন।

— হুম বলুন।

— কী করছো তুমি মেহুলিকা?

— এই কথাও আবার এত মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে?

— অবশ্যই। আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেই হবে।

— হুম বুঝলাম।

— তো বলো, কী করছো এখন?

— কিছু না, এমনি বসে আছি। আপনি?

— আমি ও সেম।

–আচ্ছা আপনি এখন যেখানে আছেন ওখানে কী কোনো ছোট বাচ্চা আছে?

— কেন? এটা মনে হলো কেন?

— না,ছোট বাচ্চারা যখন কোনো খেলনা দিয়ে খেলে তখন যেই আওয়াজ হয়। এটা এখন আপনার ওপাশ থেকে পাচ্ছি।

— তুমি তো বেশ বুদ্ধিমান মেহুলিকা।

— মেয়েরা বুদ্ধিমান হয় না বুদ্ধু। মেয়েরা বুদ্ধিমতী হয়।

— ওই একই হলো সব।

— মোটেও একই জিনিস না সব।

— আচ্ছা, ম্যাডাম আমিই ভুল। আপনিই ঠিক বলেছেন।

— এত কিছু না বলে যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বলুন।

— হুম, তুমি ঠিক ধরেছো। আমার সামনে আমার বোনের মেয়ে। মানে আমার ভাগ্নী বসা। ও খেলছে বিছানায় বসে বসে খেলনাপাতি দিয়ে।

— বাহ্ বয়স কত ওর?

— এইতো, এক বছর হলো কিছুদিন আগে।
— মাশাল্লাহ্। নাম কী বাবুর?

— আয়রা।

— ওরে বাবাহ্, ওর নাম কী আপনার পায়রাগুলোর সাথে মিলিয়ে রেখেছেন না কি?

— হিহি, তুমি বুঝলে কীভাবে?

— আমি নিশ্চিত হয়ে বলিনি। আন্দাজে ঢিল ছুঁড়েছি আর লেগে গেছে।

— হাহা, ভালোই কথা জানো দেখছি।

— কথা আবার মানুষ জানে কীভাবে? কথা তো মুখ থেকে বের হয়। কথা কী জানার জিনিস না কি?

— তুমি না পারোও বটে মেহুলিকা!

— আপনার কাছে একটা প্রশ্ন ছিল আমার। আসলে ঠিক প্রশ্ন না আমি একটা জিনিস জানতে চাই আপনার কাছে।

— হুম বলো।

— যখন আপনি আমাকে চিরকুট লিখে পাঠাতেন তখনকার কথা এটা। পায়রাগুলো তো আপনার ছিল। তাহলে হিসাবমতে পায়রাগুলো আপনাদের বাসার ছাঁদ থেকে আসার কথা। তাহলে, আপনাদের বাসার ছাঁদ থেকে না এসে পায়রাগুলো ; আপনাদের পাশের বাসার ছাঁদ থেকে কেন আসতো?

— আমি খাবার ছুঁড়ে দিতাম আমাদের ছাঁদ থেকে ওই ছাঁদে। তাই, পায়রাগুলো তখন ওই ছাঁদ থেকেই আসতো।

— বাহ্ কী বুদ্ধি মাথায়! এত বুদ্ধি নিয়ে ঘুমান কীভাবে? বালিশে আপনার মাথা আটে?

— হুম, আটে আটে! হাহা!

— শুধু শুধু হাসবেন না বলে দিলাম।

— আচ্ছা, যাও হাসবো না আর।

–আচ্ছা, আপনি যখন চিঠিগুলো লিখতেন তখন তো আপনি বাসায় ছিলেন না। তাহলে চিঠিগুলো কীভাবে লিখে পাঠাতেন?

— কে বলেছে? আমি ছিলাম না। আমি তখন বাসায়ই ছিলাম।

— কই আমি তো একবারও দেখিনি। ওই রুমেও তো আপনি ছিলেন না।

— ওই রুমে ছিলাম না। কিন্তু, বাসায় ছিলাম। তুমি তো বাসা থেকে বের হও না বেশি। বাসা থেকে বের হলে ঠিকই দেখতে।

— হুম, আচ্ছা আমি এখন রাখছি।

— এত তাড়াতাড়ি? থাকো না আরেকটু।

— পরে আবার কথা হবে। এখন কাজ আছে ; রাখছি এখন।

— আচ্ছা, তোমার ফেসবুক আইডি নেই মেহুলিকা?

— হুম, আছে তো। কিন্তু কেন?

— কেন মানে? তোমার আইডির নাম বলো। আমি ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠাবো।

— আপনার কিছু করতে হবে না৷ সময় হোক আমিই রিকুয়েষ্ট দিবো আপনাকে। এখন রাখছি বায়।

আমি কলটা কেটে ফোনটা বিছানার একপাশে রেখে দিলাম। চিন্তা হচ্ছে খুব, মনে হচ্ছে কোনো অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়িয়েছি আমি।

কিছুক্ষন পরে ফোন চেক করে দেখি বর্ণ ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়ে রেখেছে। আমি সাথে সাথেই একসেপ্ট করিনি। আমার কথা শুনেনি। অতএব এখন ওনার শাস্তি হলো তিন-চার দিন ঝুলে থাকা। এখন থাকুক ঝুলে। আমি আমার সময়মতোই রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করবো।

এর পাঁচ মাস পর বর্ণ একদিন আমাকে ফোন দিয়ে জানালেন যে উনি বাসায় আসছেন। আমিও মনে মনে বেশ খুশি হলাম উনি বাসায় আসছেন শুনে।

বিকালবেলা বারান্দায় গিয়ে দেখি বর্ন হাজির। আমাকে দেখে হাত নাড়িয়ে বোঝাচ্ছে যে সে এসেছে। আমিও ইশারা দিয়ে বোঝালাম যে আমি তাঁকে দেখেছি।

বর্ণ বারান্দায় এসে আমার সাথে কথা বলতে চাইলে; আমি বর্ণকে থামিয়ে দিয়ে বললাম যে, আমরা রাতে কথা বলবো।

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি শুধু অপেক্ষা করতে লাগলাম যে, কখন আব্বা আম্মা ঘুমাবে আর আমি বর্ণের সাথে একটু কথা বলবো। ওইদিন আব্বা, আম্মা ঘুমাতে গেলেন রাত একটায়। সাধারণত আব্বা, আম্মা দুজনেই বারোটা থেকে সাড়ে বারোটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু আজকে কী হলো কে জানে। আজকে একটু দেরি করেই ঘুমাতে গেলেন। আমি আর কী করবো? আব্বা, আম্মা ঘুমাতে যাওয়ার পর আস্তে করে রুমে ঢুকে রুম ভিতর থেকে বন্ধ করে দিলাম। এরপর খুব সাবধানে বারান্দায় ঢুকলাম।

বারান্দায় গিয়ে দেখি, বর্ণ সাহেব বারান্দায় বসে বসে ঝিমাচ্ছেন। আমি এবার মজা করে বর্ণকে রাগানোর জন্য বললাম,

— বাহ্ বারান্দা এত পছন্দ? বারান্দায়ই ঘুমিয়ে পড়েছেন দেখছি। আচ্ছা থাক, আপনি ঘুমান আমি এখন যাই।

বর্ণ এরপর বসা থেকে উঠে একবারে আমাকে বললেন,

— আমি মোটেও ঘুমাচ্ছি না। তুমি যাচ্ছো কোথায়? ইশ্ মেহুলিকা ভালো লাগে না কিন্তু আমার।

— ভালো না লাগলে আর কী করার থাকতে পারে বলুন? ঘুমিয়ে পড়ুন, ঘুমালে সব ঠিক হয়ে যায়।

— ঘুমালে সব ঠিক হয়ে যায়। এটা তোমাকে কী বললো? এইসব অদ্ভুত বিদ্যা কে শেখায় তোমাকে?

— যে-ই শেখাক তাতে আপনার কী?

— আমার অনেক কিছু। এইসব অদ্ভুত আজগুবি বিদ্যা শিখে তুমি আমার উপরে প্রয়োগ করো। আমি তো সরল সোজা মানুষ তাই কিছু বলতেও পারি না।

— কী! আপনি আর সরল সোজা? বাহ্ আমি তো জানতাম আপনার মনে জিলিপির মতো প্যাঁচ।

— হুম, তোমাকে বলেছে তো!

— আপনি কিন্তু ঝগড়া করছেন বলে দিলাম!

— করলে করেছি।

— আপনার ঝগড়া শেষ হলে বলুন কী বলবেন।

— তোমাকে অনেক খুশীর একটা খবর দিবো। জানো আমি স্কলারশিপ পেয়েছি। আমি কানাডায় চলে যাচ্ছি।

–মানে!

— হ্যাঁ, আমার পাসপোর্ট, ভিসা সব রেডি। এখন ২৮ তারিখে আমার ফ্লাইট।

— কবে হলো এত কিছু?

— বেশ কিছুদিন আগেই।

— বেশ কিছুদিন আগে আর আপনি আমাকে এখন বলছেন?

— কেন তুমি খুশী হওনি?

— হুম হয়েছি, তবে আগে জানালে আরও খুশী হতাম।

— আমি আসলে সরাসরি তোমাকে বলতে চাচ্ছিলাম কথাটা। তাই তোমাকে আগে জানাইনি।

— দেশে আসবেন কবে?

— আমার ইচ্ছে ওখানেই সেটেল হয়ে যাওয়া। দেশে ঘুরতে আসবো তবে ওখানেই সেটেল হয়ে যেতে চাই।

— হুম বুঝলাম।

— হুম, ঘুমাবে না?

— হ্যাঁ, কিন্তু আরেকটু পরে। কালকে ক্লাস নেই। তাই দেরিতে ঘুমালেও সমস্যা নেই।

— ওহ, চলো আমরা তাহলে গল্প করি।

— আচ্ছা,

— বিকালে কথা বললে না কেন?

— আম্মা, আব্বা সবাই তখন বাসায় কীভাবে কথা বলবো আমি?

— তুমি আংকেল আন্টিকে এত বেশী ভয় পাও কেন?

— আমি না, ওনারা আমাকে নিয়ে বেশি ভয় পান।

— হ্যাঁ, তোমাকে এত বেশি পাহারা দিয়ে কেন রাখে বলো তো? কারো সাথে কথা বলতে দেন না তোমাকে। কারো মিশতে দেন না বেশি। বাইরেও যেতে দেন না। এটা আসলে কোনো জীবন হলো? এরচেয়ে তো জেলখানা ভালো।

— সবকিছুর পেছনেই একটা কারণ থাকে বর্ণ। এসবের পেছনেও আছে এবং ছিল।

— আমি না কিছুই বুঝতে পারলাম না। একটু খোলাখুলি ভাবে বলো তো।

— আসলে আমার এই অবস্থার জন্য দায়ী আমার বড় আপা। ওনার জন্যই আব্বা, আম্মা আমাকে জেলখানার মতো বন্দী করে রেখেছেন।

— তোমার বড় আপা। মানে ওই আপাটা? ওই যে কী নাম যেন অমালিকা। হ্যাঁ, অমালিকা-ই। অমালিকা আপু কেন তোমার সাথে এমন করবে?

— অমালিকা আপা আমার বড় আপা নন।

— মানে?

— অমালিকা আপা আমার মেজ আপা।

— তাহলে তোমার বড় আপা কে?

— চন্দ্রালিকা আপা।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here