আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
নুজহাত_আদিবা
পর্ব ১৩
— এমনিই জিজ্ঞেস করেছি। তুমি এত প্রশ্ন কেন করো বলো তো?
— প্রশ্ন আমি আগে করেছি না কি আপনি?
— তুমি!
— মিথ্যা কথা বলবেন না বলে দিলাম। আপনি আগে প্রশ্ন করেছেন আমাকে।
— আচ্ছা বাবা যাও,আমিই আগে প্রশ্ন করেছি। এবার খুশি?
— হুম।
— এবার বলো তোমার এমন কোনো ফ্রেন্ড আছে? যাকে তুমি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করো?
— হুম, আছে একজন।
— তাঁকে একটু বলো না, তোমাকে যে কোনো বাহানায় বাসা থেকে বের করতে।
— ইশ্ পারবো না আমি।
— প্লিজ, আমি তো চলেই যাবো কিছুদিন পর। তোমার সাথে একটু নিজের মতো করে সময় কাটাতে চাচ্ছি। একবার বাইরে চলে গেলে আবার কবে না কবে দেশে আসি।
— আমি আপনার পরিস্থিতিটা বুঝতে পারছি। কিন্তু, এখন সম্ভব না আসলে। আমি পারবো না আপনার কথা রাখতে। মাফ করবেন আমাকে।
— শোনো, তুমি তোমার ফ্রেন্ডকে বলো তোমাকে কোনো ভাবে বাসা থেকে বের করে যেন। এরপর বাকিটা আমার দায়িত্ব। একটু কষ্ট করো আমার জন্য। প্লিজ?
— আপনি আজকাল বেশি জালাচ্ছেন আমাকে!
–এখনই তো একটু জালাবো। তারপর তো চলেই যাবো। তখন দেখি কে জালায় তোমাকে!
— আচ্ছা, আমি চেষ্টা করবো কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছি না যে বাসা থেকে বের হতে পারবো কি না।
— আচ্ছা দেখো। আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য।
— হুম,
আমি এবার কল কেটে বসে রইলাম যে আমি কীভাবে আম্মাকে ম্যানেজ করবো। আম্মা আমাকে একা একা কখনোই বাসা থেকে বের হতে দেবে না। কিছুক্ষন চিন্তা- ভাবনা করে মনিরাকে কল দিলাম। মনিরা কল ধরেই বললো,
— কীরে কী খবর মেহুল?
— হুম ভালো, কিন্তু এখন এইসব কথা বাদ দে। একটু সাহায্য করতে পারবি আমাকে?
— কী সাহায্য?
— আমাকে যে কোনোভাবে বাসা থেকে বের করতে পারবি রে?
— হুম, কিন্তু কেন?
— সব বলবো তোকে। কিন্তু এখন তুই আমাদের বাসায় এসে আমাকে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের কর।
— আচ্ছা, আমি আসছি তুই অপেক্ষা কর।
— হুম আয় জলদি।
আমি কল কেটে এবার আম্মার ঘরে গিয়ে আম্মাকে বললাম,
— আম্মা একটা কথা ছিল।
আম্মা তখন কাপড় ভাঁজ করছিল। আম্মা কাপড় ভাঁজ করতে করতেই জবাব দিল,
— হুম শুনছি আমি।
— আম্মা মনিরার আসলে খুব শখ আমাকে একদিন ওদের বাসায় নিয়ে যাবে। আমি যাবো আম্মা? মনিরা আমাকে নিতে বাসায় আসছে।
— হঠাৎ?
— আমিও জানি না আম্মা। মাত্র আমাকে ফোন করে বললো।
— আমাদের বাসা থেকে ওদের বাসা কতদূর?
— আমি তো কখনো যাইনি আম্মা। তাই জানি না।
— হুম,
— আমি কী যাবো আম্মা?
— নাহ। একা একা কোথাও যেতে হবে না তোমাকে।
আমি এবার মন খারাপ করে রুমে চলে এলাম। পরিস্থিতি যা বুঝলাম আম্মা আমাকে বাসা থেকে আর বের হতে দেবে না। এরপর কলিংবেল বাজার শব্দ শুনে আমি দৌড়ে গেলাম। আমি জানি মনিরা ছাড়া আর কেউ আসেনি।
মনিরা বাসায় ঢুকেই বললো,
— আন্টি কোথায় দোস্ত?
— আম্মা আম্মার রুমে।
— আন্টির রুম কোনটা?
— ওই যে ওইটা।
মনিরা আম্মার রুমে ঢুকেই আম্মাকে সালাম দিলো। আম্মা মনিরার সালামের জবাব দিয়ে বললো,
— তুমি কখন এলে মা?
— এই যে আন্টি এই মাত্র।
— আচ্ছা বসো তুমি। আমি নাস্তা দিচ্ছি; নাস্তা খেয়ে যেও কিন্তু।
— আন্টি আসলে একটা কথা ছিল।
— হুম বলো মা।
— আন্টি মেহুলকে একটু আমাদের বাসায় নিয়ে যাই। আবার বাসায় পৌঁছে দিয়ে যাবো আন্টি। বেশি সময় লাগবে না আন্টি। প্লিজ আন্টি আপনি আর না করবেন না।
— মেহুলকে একা কোথাও বের হতে দেয় না তোমার আংকেল। তোমার আংকেল শুনলে রাগ করবে মা। আরেকদিন যাবে, আজকে সম্ভব না মা।
— আন্টি আমি এত কষ্ট করে আসলাম। একটু যেতে দিন না আন্টি। আপনি আংকেলকে একটু কল দিয়ে বলুন আন্টি। আংকেল কিছু বলবে না। প্লিজ আন্টি প্লিজ।
— আমি তোমার আংকেলকে বলে দেখছি এখন তাও যদি তোমার আংকেল না করে দেয়। তাহলে আমার হাতে কিছুই থাকবে না।
— জি আন্টি, বলে দেখুন একটু আংকেলকে।
এরপর আম্মা ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেলেন। আমি আর মনিরা এবার চিন্তা করতে লাগলাম যে, আব্বা কী আসলেই আমাকে যেতে দিবে?
আম্মা কিছুক্ষন পর আব্বার সাথে কথাবার্তা বলে এসে আমাদেরকে বললেন,
— তোমার আংকেল মেহুলকে নিয়ে যেতে বলেছে। কিন্তু, আসার সময় তোমার আংকেল গিয়ে মেহুলকে নিয়ে আসবে বলেছে।
— আচ্ছা আন্টি। আমরা এখন যাই তাহলে?
— আচ্ছা যাও সাবধানে যেও। এই মেহুল তুই ফোন নিয়ে যাস আমি কিন্তু ফোনে কল দেবো।
— আচ্ছা আম্মা।
আমি আর মনিরা আম্মার রুম থেকে বেরিয়ে পুরো থ! আমরা কেউই চিন্তা করতে পারিনি আম্মা এত সহজে অনুমতি দিয়ে দেবে।
এরপর আমি আর মনিরা আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে নিচে গিয়ে রিকশা নিলাম। রিকশায় উঠেই মনিরার প্রশ্ন শুরু হয়ে গেল। কেন ওকে এমন হুট করে ডেকে নিয়ে এলাম বাসায়?কেন বাসা থেকে বের হচ্ছি আমি? আমি এবার ফ্রি হয়ে মনিরাকে সব বললাম। মনিরা এসব শুনে আমাকে বলে,
— ওহ্ তাহলে তলে তলে এই কাহিনি? বাহ্ আজ একটা প্রেমিক থাকলে আমিও এভাবে ঘুরতে যেতাম প্রেমিকের সাথে।
— বাজে কথা বলবি না একদম। এমনিতেই মেজাজ গরম হয়ে আছে। এভাবে হঠাৎ করে বলা নেই কওয়া নেই কে দেখা করতে চায় বল? পুরোই পাগল!
— হুম, তোর প্রেমে পড়ে বেচারা পাগল হয়ে গেছে।
— আবার শুরু হয়ে গেল তোর?
— আমি কিছু বললেই দোষ? নিজে কথা বললে তাঁর কোনো দোষ নেই সব দোষ শুধু আমি কিছুই বললেই।
— তোর লেকচার বন্ধ হয়েছে? বন্ধ যদি হয়ে থাকে তাহলে বল আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?
— আমরা এখন আমাদের বাসায় যাচ্ছি। আমাদের বাসায় গিয়ে দুলাভাইকে কল দিয়ে আমাদের বাসার সামনে আসতে বলিস। তারপর তুই চলে যাস দুলাভাইয়ের সাথে।
— হুম বুঝলাম। তুই যাবি না আমাদের সাথে?
— তোদের মধ্যে আমি গিয়ে কী করবো? নতুন প্রেমিক-প্রেমিকা তোরা। নিজেরা নিজেদের মতো ঘুরাঘুরি করবি। আমার কাজ কী সেখানে?
— তবুও, তুই চল আমাদের সাথে।
— নাহ, তুই যা ;নিজেরা নিজেদের মতো সময় কাটা।
আমি আর জোর করলাম না মনিরাকে। আমি জানি ওকে বললেও কোনো লাভ হবে না। কারণ ও যা বলবে তাই করবে। তাই কিছু বলেও লাভ নেই।
ওদের বাসার নিচে রিকশা এসে থামলো। আমি রিকশা ভাড়াটা দিয়ে মনিরার সাথে ওদের বাসায় ঢুকে গেলাম। গিয়ে দেখি আন্টি বাসায় নেই। পরে শুনি আন্টি না কি ওনার বাবার বাসায় গিয়েছেন। মনিরাকে বলেছিল কিন্তু ওর না কি যেতে ইচ্ছে করছিল না। তাই ও যায়নি। আংকেল ও এখন অফিসে। বাসায় বলতে গেলে ও একাই।
— বসে আছিস কেন? দুলাভাইকে ফোন দিয়ে বল আমাদের বাসার সামনে আসতে।
— আসলেই বলবো না কি?
— নাহ! এমনি শুধু বসে থাক তুই।
মনিরার ঝারি খেয়ে আমি বর্ণকে কল দিলাম।
— হ্যালো বর্ণ।
— কী হলো? অনুমতি পেয়েছো আন্টির থেকে?
— হুম,
— সত্যিই!
— হ্যাঁ।
— কোথায় আসবো আমি?
আমি এরপর বর্ণকে মনিরাদের বাসার ঠিকনাটা দিয়ে বললাম এখানে আসতে। বর্ণ আমাকে আশ্বাস দিলেন উনি আসছেন।
আধা ঘণ্টা পরে বর্ণ ফোন দিয়ে জানালেন উনি এসেছেন। আমার এবার খুব ভয় লাগলো। আমি এবার মনিরাকে ভয় পেয়ে বললাম,
— আমার না খুব ভয় লাগছে রে।
— কেন?
— তুই জানিস না কেন?
— হুম, বুঝতে পেরেছি কিন্তু এত ভয় পাস না। কিছু হবে না আমি তো আছি। আমি তুই যাওয়ার পরই তোকে ফোন দিবো৷ কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবি তখন।
— আচ্ছা।
— হুম, এবার যা জলদি। ভাইয়া অপেক্ষা করছে কিন্তু।
— হুম যাচ্ছি আমি।
মনিরাকে আমাকে ওদের বাসার গেট অবধি আমাকে পৌঁছে দিয়ে এলো। এরপর বর্ণ আমাকে দেখে এগিয়ে আসলেন। আমি বর্ণ আর মনিরার পরিচয় করিয়ে দিলাম। বর্ণ মনিরাকে অনেক জোরাজোরি করলেন আমাদের সাথে আসার জন্য। কিন্তু, মনিরা এলো না। বারবার শুধু বললো,
— আপনারা যান ভাইয়া। আমি পরে আবার একদিন যাবো।
এরপরে বর্ণ আর কী বলবে? মনিরা বাসার গেটে ঢুকে গেল। এবার বর্ণ আমার দিকে ফিরে আমাকে বললেন,
— আচ্ছা, মেহুলিকা তোমাকে প্রশ্ন করি?
— হুম বলুন।
— তোমাকে আমার কাছে এত সুন্দর কেন লাগে বলো তো? তুমি কী আসলেই সুন্দরী না কি আমার চোখে তোমাকে সুন্দর লাগে?
— আপনার চোখের দোষ ওটা। আমি শুধু আপনার কাছেই সুন্দরী। আর কারো কাছে না।
–আর কারো কাছে সুন্দর হওয়া লাগবে না। আমার বউ আমার কাছেই সুন্দর। আর কারো কাছে আমার বউকে কেন সুন্দর লাগবে? অন্য কেউ তোমাকে সুন্দর বলবে এটা আমি মেনে নিতে পারবো না।
— বিয়ে শাদির খবর নেই এখনই বউ বউ শুরু করেছেন?
— তুমি বলো একবার তুমি আমাকে বিয়ে করবে। আমি এখনই তোমাকে কাজি অফিসে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।
— নাহ থাক, এত ঝামেলার দরকার নেই।
— নাহ, একবার মুখ ফুটে যখন বলেছো। তখন এখনই চলো।
— বর্ণ আপনি বেশি বাড়াবাড়ি করছেন কিন্তু।
— এটা মোটেও বাড়াবাড়ি না।
চলবে…#আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
#নুজহাত_আদিবা
#পর্ব ১৩
— এমনিই জিজ্ঞেস করেছি। তুমি এত প্রশ্ন কেন করো বলো তো?
— প্রশ্ন আমি আগে করেছি না কি আপনি?
— তুমি!
— মিথ্যা কথা বলবেন না বলে দিলাম। আপনি আগে প্রশ্ন করেছেন আমাকে।
— আচ্ছা বাবা যাও,আমিই আগে প্রশ্ন করেছি। এবার খুশি?
— হুম।
— এবার বলো তোমার এমন কোনো ফ্রেন্ড আছে? যাকে তুমি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করো?
— হুম, আছে একজন।
— তাঁকে একটু বলো না, তোমাকে যে কোনো বাহানায় বাসা থেকে বের করতে।
— ইশ্ পারবো না আমি।
— প্লিজ, আমি তো চলেই যাবো কিছুদিন পর। তোমার সাথে একটু নিজের মতো করে সময় কাটাতে চাচ্ছি। একবার বাইরে চলে গেলে আবার কবে না কবে দেশে আসি।
— আমি আপনার পরিস্থিতিটা বুঝতে পারছি। কিন্তু, এখন সম্ভব না আসলে। আমি পারবো না আপনার কথা রাখতে। মাফ করবেন আমাকে।
— শোনো, তুমি তোমার ফ্রেন্ডকে বলো তোমাকে কোনো ভাবে বাসা থেকে বের করে যেন। এরপর বাকিটা আমার দায়িত্ব। একটু কষ্ট করো আমার জন্য। প্লিজ?
— আপনি আজকাল বেশি জালাচ্ছেন আমাকে!
–এখনই তো একটু জালাবো। তারপর তো চলেই যাবো। তখন দেখি কে জালায় তোমাকে!
— আচ্ছা, আমি চেষ্টা করবো কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছি না যে বাসা থেকে বের হতে পারবো কি না।
— আচ্ছা দেখো। আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য।
— হুম,
আমি এবার কল কেটে বসে রইলাম যে আমি কীভাবে আম্মাকে ম্যানেজ করবো। আম্মা আমাকে একা একা কখনোই বাসা থেকে বের হতে দেবে না। কিছুক্ষন চিন্তা- ভাবনা করে মনিরাকে কল দিলাম। মনিরা কল ধরেই বললো,
— কীরে কী খবর মেহুল?
— হুম ভালো, কিন্তু এখন এইসব কথা বাদ দে। একটু সাহায্য করতে পারবি আমাকে?
— কী সাহায্য?
— আমাকে যে কোনোভাবে বাসা থেকে বের করতে পারবি রে?
— হুম, কিন্তু কেন?
— সব বলবো তোকে। কিন্তু এখন তুই আমাদের বাসায় এসে আমাকে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের কর।
— আচ্ছা, আমি আসছি তুই অপেক্ষা কর।
— হুম আয় জলদি।
আমি কল কেটে এবার আম্মার ঘরে গিয়ে আম্মাকে বললাম,
— আম্মা একটা কথা ছিল।
আম্মা তখন কাপড় ভাঁজ করছিল। আম্মা কাপড় ভাঁজ করতে করতেই জবাব দিল,
— হুম শুনছি আমি।
— আম্মা মনিরার আসলে খুব শখ আমাকে একদিন ওদের বাসায় নিয়ে যাবে। আমি যাবো আম্মা? মনিরা আমাকে নিতে বাসায় আসছে।
— হঠাৎ?
— আমিও জানি না আম্মা। মাত্র আমাকে ফোন করে বললো।
— আমাদের বাসা থেকে ওদের বাসা কতদূর?
— আমি তো কখনো যাইনি আম্মা। তাই জানি না।
— হুম,
— আমি কী যাবো আম্মা?
— নাহ। একা একা কোথাও যেতে হবে না তোমাকে।
আমি এবার মন খারাপ করে রুমে চলে এলাম। পরিস্থিতি যা বুঝলাম আম্মা আমাকে বাসা থেকে আর বের হতে দেবে না। এরপর কলিংবেল বাজার শব্দ শুনে আমি দৌড়ে গেলাম। আমি জানি মনিরা ছাড়া আর কেউ আসেনি।
মনিরা বাসায় ঢুকেই বললো,
— আন্টি কোথায় দোস্ত?
— আম্মা আম্মার রুমে।
— আন্টির রুম কোনটা?
— ওই যে ওইটা।
মনিরা আম্মার রুমে ঢুকেই আম্মাকে সালাম দিলো। আম্মা মনিরার সালামের জবাব দিয়ে বললো,
— তুমি কখন এলে মা?
— এই যে আন্টি এই মাত্র।
— আচ্ছা বসো তুমি। আমি নাস্তা দিচ্ছি; নাস্তা খেয়ে যেও কিন্তু।
— আন্টি আসলে একটা কথা ছিল।
— হুম বলো মা।
— আন্টি মেহুলকে একটু আমাদের বাসায় নিয়ে যাই। আবার বাসায় পৌঁছে দিয়ে যাবো আন্টি। বেশি সময় লাগবে না আন্টি। প্লিজ আন্টি আপনি আর না করবেন না।
— মেহুলকে একা কোথাও বের হতে দেয় না তোমার আংকেল। তোমার আংকেল শুনলে রাগ করবে মা। আরেকদিন যাবে, আজকে সম্ভব না মা।
— আন্টি আমি এত কষ্ট করে আসলাম। একটু যেতে দিন না আন্টি। আপনি আংকেলকে একটু কল দিয়ে বলুন আন্টি। আংকেল কিছু বলবে না। প্লিজ আন্টি প্লিজ।
— আমি তোমার আংকেলকে বলে দেখছি এখন তাও যদি তোমার আংকেল না করে দেয়। তাহলে আমার হাতে কিছুই থাকবে না।
— জি আন্টি, বলে দেখুন একটু আংকেলকে।
এরপর আম্মা ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেলেন। আমি আর মনিরা এবার চিন্তা করতে লাগলাম যে, আব্বা কী আসলেই আমাকে যেতে দিবে?
আম্মা কিছুক্ষন পর আব্বার সাথে কথাবার্তা বলে এসে আমাদেরকে বললেন,
— তোমার আংকেল মেহুলকে নিয়ে যেতে বলেছে। কিন্তু, আসার সময় তোমার আংকেল গিয়ে মেহুলকে নিয়ে আসবে বলেছে।
— আচ্ছা আন্টি। আমরা এখন যাই তাহলে?
— আচ্ছা যাও সাবধানে যেও। এই মেহুল তুই ফোন নিয়ে যাস আমি কিন্তু ফোনে কল দেবো।
— আচ্ছা আম্মা।
আমি আর মনিরা আম্মার রুম থেকে বেরিয়ে পুরো থ! আমরা কেউই চিন্তা করতে পারিনি আম্মা এত সহজে অনুমতি দিয়ে দেবে।
এরপর আমি আর মনিরা আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে নিচে গিয়ে রিকশা নিলাম। রিকশায় উঠেই মনিরার প্রশ্ন শুরু হয়ে গেল। কেন ওকে এমন হুট করে ডেকে নিয়ে এলাম বাসায়?কেন বাসা থেকে বের হচ্ছি আমি? আমি এবার ফ্রি হয়ে মনিরাকে সব বললাম। মনিরা এসব শুনে আমাকে বলে,
— ওহ্ তাহলে তলে তলে এই কাহিনি? বাহ্ আজ একটা প্রেমিক থাকলে আমিও এভাবে ঘুরতে যেতাম প্রেমিকের সাথে।
— বাজে কথা বলবি না একদম। এমনিতেই মেজাজ গরম হয়ে আছে। এভাবে হঠাৎ করে বলা নেই কওয়া নেই কে দেখা করতে চায় বল? পুরোই পাগল!
— হুম, তোর প্রেমে পড়ে বেচারা পাগল হয়ে গেছে।
— আবার শুরু হয়ে গেল তোর?
— আমি কিছু বললেই দোষ? নিজে কথা বললে তাঁর কোনো দোষ নেই সব দোষ শুধু আমি কিছুই বললেই।
— তোর লেকচার বন্ধ হয়েছে? বন্ধ যদি হয়ে থাকে তাহলে বল আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?
— আমরা এখন আমাদের বাসায় যাচ্ছি। আমাদের বাসায় গিয়ে দুলাভাইকে কল দিয়ে আমাদের বাসার সামনে আসতে বলিস। তারপর তুই চলে যাস দুলাভাইয়ের সাথে।
— হুম বুঝলাম। তুই যাবি না আমাদের সাথে?
— তোদের মধ্যে আমি গিয়ে কী করবো? নতুন প্রেমিক-প্রেমিকা তোরা। নিজেরা নিজেদের মতো ঘুরাঘুরি করবি। আমার কাজ কী সেখানে?
— তবুও, তুই চল আমাদের সাথে।
— নাহ, তুই যা ;নিজেরা নিজেদের মতো সময় কাটা।
আমি আর জোর করলাম না মনিরাকে। আমি জানি ওকে বললেও কোনো লাভ হবে না। কারণ ও যা বলবে তাই করবে। তাই কিছু বলেও লাভ নেই।
ওদের বাসার নিচে রিকশা এসে থামলো। আমি রিকশা ভাড়াটা দিয়ে মনিরার সাথে ওদের বাসায় ঢুকে গেলাম। গিয়ে দেখি আন্টি বাসায় নেই। পরে শুনি আন্টি না কি ওনার বাবার বাসায় গিয়েছেন। মনিরাকে বলেছিল কিন্তু ওর না কি যেতে ইচ্ছে করছিল না। তাই ও যায়নি। আংকেল ও এখন অফিসে। বাসায় বলতে গেলে ও একাই।
— বসে আছিস কেন? দুলাভাইকে ফোন দিয়ে বল আমাদের বাসার সামনে আসতে।
— আসলেই বলবো না কি?
— নাহ! এমনি শুধু বসে থাক তুই।
মনিরার ঝারি খেয়ে আমি বর্ণকে কল দিলাম।
— হ্যালো বর্ণ।
— কী হলো? অনুমতি পেয়েছো আন্টির থেকে?
— হুম,
— সত্যিই!
— হ্যাঁ।
— কোথায় আসবো আমি?
আমি এরপর বর্ণকে মনিরাদের বাসার ঠিকনাটা দিয়ে বললাম এখানে আসতে। বর্ণ আমাকে আশ্বাস দিলেন উনি আসছেন।
আধা ঘণ্টা পরে বর্ণ ফোন দিয়ে জানালেন উনি এসেছেন। আমার এবার খুব ভয় লাগলো। আমি এবার মনিরাকে ভয় পেয়ে বললাম,
— আমার না খুব ভয় লাগছে রে।
— কেন?
— তুই জানিস না কেন?
— হুম, বুঝতে পেরেছি কিন্তু এত ভয় পাস না। কিছু হবে না আমি তো আছি। আমি তুই যাওয়ার পরই তোকে ফোন দিবো৷ কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবি তখন।
— আচ্ছা।
— হুম, এবার যা জলদি। ভাইয়া অপেক্ষা করছে কিন্তু।
— হুম যাচ্ছি আমি।
মনিরাকে আমাকে ওদের বাসার গেট অবধি আমাকে পৌঁছে দিয়ে এলো। এরপর বর্ণ আমাকে দেখে এগিয়ে আসলেন। আমি বর্ণ আর মনিরার পরিচয় করিয়ে দিলাম। বর্ণ মনিরাকে অনেক জোরাজোরি করলেন আমাদের সাথে আসার জন্য। কিন্তু, মনিরা এলো না। বারবার শুধু বললো,
— আপনারা যান ভাইয়া। আমি পরে আবার একদিন যাবো।
এরপরে বর্ণ আর কী বলবে? মনিরা বাসার গেটে ঢুকে গেল। এবার বর্ণ আমার দিকে ফিরে আমাকে বললেন,
— আচ্ছা, মেহুলিকা তোমাকে প্রশ্ন করি?
— হুম বলুন।
— তোমাকে আমার কাছে এত সুন্দর কেন লাগে বলো তো? তুমি কী আসলেই সুন্দরী না কি আমার চোখে তোমাকে সুন্দর লাগে?
— আপনার চোখের দোষ ওটা। আমি শুধু আপনার কাছেই সুন্দরী। আর কারো কাছে না।
–আর কারো কাছে সুন্দর হওয়া লাগবে না। আমার বউ আমার কাছেই সুন্দর। আর কারো কাছে আমার বউকে কেন সুন্দর লাগবে? অন্য কেউ তোমাকে সুন্দর বলবে এটা আমি মেনে নিতে পারবো না।
— বিয়ে শাদির খবর নেই এখনই বউ বউ শুরু করেছেন?
— তুমি বলো একবার তুমি আমাকে বিয়ে করবে। আমি এখনই তোমাকে কাজি অফিসে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।
— নাহ থাক, এত ঝামেলার দরকার নেই।
— নাহ, একবার মুখ ফুটে যখন বলেছো। তখন এখনই চলো।
— বর্ণ আপনি বেশি বাড়াবাড়ি করছেন কিন্তু।
— এটা মোটেও বাড়াবাড়ি না।
চলবে…