আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প নুজহাত_আদিবা পর্ব ১৯

আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
নুজহাত_আদিবা
পর্ব ১৯

এরপর আমরা মেয়ে কাজিনরা মিলে শুরু করলাম ডান্স রিহার্সাল করা। ডান্স রিহার্সাল করার সময় একেকজন একেক রকম ভাবে গানের সাথে নাচানাচি শুরু করেছিল। পরে রিহা সবাইকে বকে আবার নতুন করে শিখিয়েছে। আসলে কাজিনরা সব একসঙ্গে থাকলে এমনটা হর-হামেশা-ই হয়।

ডান্স প্র্যাকটিসের মাঝখানে দুপুরে একটু ব্রেক ছিল সবার। এরপর দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার ডান্স প্র্যাকটিস শুরু।

পরের দিন বড় ফুপির বড় মেয়ে নিহা আপুর হলুদের অনুষ্ঠানে। আমরা সবাই আগের দিনের ডান্স রিহার্সাল অনুযায়ী ডান্স করলাম। সবাই এই ডান্সের দৃশ্যটুকু ভিডিওতে ধারণ করলো। হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর বাসায় গিয়ে সবাই নিজ নিজ আইডিতে ডান্সের ভিডিওটা পোস্ট করলো। রিহা ওর আইডিতে ডান্সের ভিডিওটা পোস্ট করে আমাকে ট্যাগ করলো। আমি এজন্য আর পরে আলাদা করে ভিডিওটা পোস্ট করিনি।

রাতের বেলা আমরা কাজিনরা সব একসাথে শুয়েছি। ওপর-নিচে ঢালাই বিছানা আরকি। বর্ণের সাথে ফোনে কথা বলা তো সম্ভব না এখন। তাই, ম্যাসেজেই কথা বলছিলাম। বর্ণ আমাদের ডান্সের ভিডিওটা দেখেছেন। এরপর ভিডিও দেখা শেষ করে আমাকে ইনবক্সে এসে বললেন,

— তুমি বেশ ভালো ডান্স করতে পারো মেহুলিকা। আমাদের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে তুমি কিন্তু ডান্স করবে বলে দিলাম।

— হুম আমি ডান্স করি আর আম্মা আৃাকে এসে ঝাড়ু দিয়ে পিটাক আরকি। আম্মা আব্বা দুজনের কেউই এসব পছন্দ করেন না। অনেক রিকুয়েষ্ট করার পরে এবার একটু কাজিনদের সাথে ডান্স করতে দিয়েছে। তাও বলে দিয়েছে শুধু মেয়ে কাজিনদের সাথে যেন ডান্স করি।

— তো? আমার বউ আমার সাথে ডান্স করবে তাতে কার কী? নিষেধ করলেই যে শুনতে হবে এমন কোনো কথা আছে?

— আপনার যুক্তির সাথে কেউ পারবে না। হুহ!

— পারার চেষ্টা করেও লাভ নেই। আমিই জিতবো।

— হয়েছে হয়েছে অনেক হয়েছে। এখন এই টপিক বাদ দিন। আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল।

— হুম বলো।

— আজকে আপনার প্রোফাইলে দেখলাম কয়েকটা মেয়ের সাথে ছবি তুলে আপলোড করেছেন। কে এগুলো?

— আমার কলিগ, ফ্রেন্ডস।

— আপনার কলিগ আর ফ্রেন্ডসরা কী শুধু মেয়েরাই হয়? ছেলেরা কী দোষ করেছে? মেয়েদের পেছনে পেছনে এত বেশি ঘুরাঘুরি করবেন না বলে দিলাম।

— আচ্ছা, এরপর থেকে আর ঘোরাঘুরি করবো না। সরাসরি রুম ডেটে চলে যাবো।

— ছিহ্ বর্ণ!

— হুম, কোনো মেয়ের সাথে কথাই বলবো না। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলবো ডেটে যাবেন?

— বর্ণ!

— তোমার কেন জ্বলেরে বন্ধু? তোমার কেন জ্বলে?

— আমার মোটেও জ্বলে না। আমি তো আর লাইট না যে জ্বলবো।

— হুম, হুম না জ্বললেই ভালো।

— হুহ্।

— আচ্ছা মেহুলিকা তোমার হাত খরচ লাগে না?

— হুম কিন্তু বাসা থেকে আমাকে দেওয়া হয় তো।

— যতই দেওয়া হোক। তোমার যা কিছু লাগবে আমাকে বলবে তুমি।

— আমার কিছু লাগবে না বর্ণ। যতটুকু যা আছে সেটাই যথেষ্ট আমার জন্য।

— তবুও। কিছু যদি লাগে তাহলে বলবে আমাকে।

— হুম।

— তুমি হাতে মেহেদী দাওনি মেহুলিকা?

🤧– হুম দিয়েছি, কিন্তু কেন?

— তোমার মেহেদী রাঙা হাতের একটা ছবি পাঠালেও তো পারো।

— ওহ, এই ব্যাপার? আচ্ছা, আপনি অপেক্ষা করুন। আমি ছবি তুলে পাঠাচ্ছি।

আমি আমার দু’হাতের মেহেদীর ছবি তুলে পাঠালাম বর্ণকে। হাতের ছবিটা অবশ্য রিহা তুলে দিয়েছে।

আমি বর্ণকে আমার হাতের মেহেদীর ছবি পাঠানোর সাথে সাথেই বর্ণ ছবিটা সিন করলেন।

— পরে না চোখের পলক। কী তোমার হাতের ঝলক।

— আবার শুরু করেছেন বর্ণ আপনি?

— আমার কী দোষ? এত সুন্দর করে মেহেদী হাতে দিয়ে ছবি পাঠালে আমার মনটা আনচান আনচান করে। কবে যে তোমাকে বিয়ে করে আমার ঘরে তুলবো!

— আপনার মাথায় কী শুধু বিয়ে আর বিয়েই ঘোরে?

— হুম, তুমি তো আমার বউ। তোমাকে বিয়ে করবো না তো আর কাকে বিয়ে করার চিন্তা করবো?

— বাজে কথা বন্ধ করুন। চুপ একদম চুপ।

— আচ্ছা, আংকেল আন্টি তোমাকে বিয়ে দিবে না? মানে এই ব্যাপারে কিছু বলে না তোমাকে?

— হুম, এজন্যই তো পাত্র দেখা হচ্ছে আমার জন্য।

— তুমি আমাকে এটা আগে কেন বললে না?

— আগে বললে কী হতো?

— অনেককিছুই হতো। আমাকে বাসা থেকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশে এসে তাড়াতাড়ি যেন বিয়ে করে নেই। আমি তো আগেই বলেছিলাম যে আমার একটা পছন্দ আছে। তাই আমার জন্য কেউ মেয়েও দেখছে না। তুমি এই ব্যাপারটা আমাকে আরও কিছুদিন আগে বললে ভালো হতো।

— আমি তো এতকিছু জানতাম না। জানলে অবশ্যই জানাতাম।

— আচ্ছা, দেখছি আমি কী করা যায়। তবে মনে রেখো খুব জলদি দেশে আসছি৷ তোমাকে বউ করে নিয়ে আসবো কথা দিলাম।

— ও বাবা তাই না কি? তা কবে আসছেন?

— ডেটটা আরও কিছুদিন পরে জানাচ্ছি। একেবারে শিওর হয়ে তারপর জানাবো আমি।

— আচ্ছা।

এর মাঝখানে আমার কাজিনের বিয়ে বউভাতের অনুষ্ঠানের ঝামেলা সব শেষ হলো। সব ঝামেলা মিটিয়ে বাসায় আসতে আসতে মোটামুটি একটু রাত হয়ে গেল। বাসায় এসে রুমের দরজা বন্ধ করে যখন ফ্রেস হবো তখন দেখি বর্ণ কল দিচ্ছে। শরীরটা খুব ক্লান্ত ছিল। ভেবেছিলাম, বর্ণের কল আজকে আর ধরবো না। কালকে কথা বলবো একেবারে। কিন্তু, আমার মন সেটা মানলো না। আমি বর্ণের ফোন কেটে সরাসরি ভিডিও কল দিলাম।

বর্ণ কল রিসিভ করেই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

— হা করে আছেন কেন? কী হলো আবার? নেটে প্রবলেম না কি? একটু পরে কল দিবো?

— আরে ধুর, ওইসব নেট -ফেটের কথা বাদ দাও। তোমাকে তো আজকে আমার বউ লাগছে পুরো।

— সাজলে মানুষকে সুন্দর লাগে। বউ বউ লাগে তা তো জানতাম না।

— হুম সাজলে সবাইকে সুন্দর লাগে কিন্তু আমার মেহুলিকা সাজলে তাঁকে বউ বউ লাগে।

— হুম বুঝলাম। আপনার দেশে আসার ব্যাপারটার কী হলো? কবে আসছেন?

— সামনের মাসের ১৭ তারিখ বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিবো। আজকে তো ১ তারিখ মাসের। খুব বেশিদিন সময় নেই।

— বাহ্ তাহলে তো ভালোই। এখন আল্লাহর রহমতে ঠিকঠাক ভাবে বাংলাদেশে এসে পড়ুন। অপেক্ষা করছি আমি।

— হুম তাতো আসবোই। বলো তোমার জন্য কী আনবো? তোমাকে আমার সেভাবে কিছুই দেয়া হয়নি।

— আমার বেশি কিছু লাগবে না। আমার জন্য শুধু একটা বর্ণ কিনে নিয়ে আসবেন। আমার শুধু বর্ণ-ই লাগবে। অন্যকিছু হলে চলবে না বলে দিলাম।

–হাহা, বর্ণ শুধু একটাই। কিন্তু বর্ণ তাঁর মেহুলিকার জন্য। তাই দুঃখিত আমি তোমাকে কোনো বর্ণকে দিতে পারবো না।

— আমার বর্ণই লাগবে। ওই মেহুলিকা টেহুলিকাকে চিনি না আমি। আমাকে বর্ণ কিনে দিতে হবে।

— হাহা, নিয়ো তুমি বর্ণকে। কিন্তু তোমার একটা সতীন আছে। তাঁর নাম মেহুলিকা।

— ওইসব সতীন-টতীন মানি না আমি। বর্ণকে আমিই নিবো।

বর্ণ হেসে ফোনে একটা চুমু খেলেন। বর্ণের এমন কান্ড দেখে আমিও বর্ণকে চমকে দেওয়ার জন্য;ফোনের ক্যামেরাতে একটা চুমু খেলাম। হুম, কাছে থেকে না হোক দূর থেকেই নাহয় হোক ভালোবাসা বিনিময়।

বর্ণের দেশে আসতে আসতে মোটামুটি একটু দেরিই হলো। ডেট কিছুদিন পিছিয়ে গেল। প্রথমে ডেট পিছিয়ে যাওয়ার কথা শুনে মন খারাপ হয়েছিল খুব। কিন্তু, পরে বর্ণ ঠিকঠাক বাংলাদেশে এসে পৌঁছানোর পর মনটা ভালো হয়ে গিয়েছে। আজকে সকাল সাতটায় বাংলাদেশে এসেছে বর্ণ। বর্ণকে রিসিভ করতে বর্ণের সব কাজিনরা এয়ারপোর্টে গিয়েছিল। আমারও ইচ্ছে ছিল অবশ্য এয়ারপোর্টে বর্ণকে গিয়ে রিসিভ করার। কিন্তু সেটা সম্ভব না।

বর্ণ সকালে আসলেও আমার সাথে বর্ণের এখনও দেখা হয়নি। বর্ণ জার্নি করেছে ক্লান্ত তাই হয়ত রেস্ট নিচ্ছে। আমিও সেজন্য বর্ণকে আর বিরক্ত করিনি।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here