আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প নুজহাত_আদিবা পর্ব ৯

আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
নুজহাত_আদিবা
পর্ব ৯

ছাঁদে গিয়েছিলাম ছাঁদের গাছগুলোতে পানি দিতে। ওই দিনের পর থেকে আর ছাঁদে ও আসিনি।

ছাঁদের গাছে পানি দেওয়ার পর যখন নিচে নেমে চলে আসছিলাম। তখন পেছন থেকে আবার ডাক শুনলাম। গলাটা আমার চেনা তাই আমি সারা দেইনি কোনো প্রকার। এরপর আবার যখন ডাক দেওয়া হলো পেছন থেকে আমি এবার ফিরে তাকালাম। আমি অবশ্য জানি এটা কে। তাই প্রথমে কোনো সাড়া দেইনি।

— সারাদিন এমন থম মেরে বসে থাক কেন?

— তাতে আপনার কী সমস্যা?

— এতে আমার অনেক সমস্যা। তোমার বয়সী মেয়েরা সেজেগুজে, সুন্দর জামাকাপড় পরে নাচবে, খেলবে, হাসবে। কী সুন্দরই না লাগবে। ইশ! আর তুমি কী করো? একেবারে বিধবা মানুষের মতো থম মেরে বসে থাক। একেবারে চুপচাপ! কার বিরহে বিলীন হয়ে এভাবে বসে থাক গো? আমার না কি!

— আপনার মাথায় সমস্যা আছে। ডক্টর দেখান জলদি। নাহলে পরে হিতে বিপরীত হতে পারে।

— মাথায় সমস্যা আছে বলেই তোমার প্রেমে পড়েছি। তুমিই নাহয় এবার আমাকে সুস্থ করে দাও।

— আপনি তো ভারী বেহায়া! গায়ে পরে এসে কথা বলেন! যখন দেখতেই পাচ্ছেন আমার আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তাহলে আমাকে জোর করছেন কেন?

— ❝প্রেমে পড়লে একটু-আকটু বেহায়া মানুষ হয়-ই। যে ব্যাক্তি প্রেমে পরে প্রেমিকার সাথে একটু বেহায়াপনা করে না। সে ব্যাক্তি আসলে কোনো জাতের প্রেমিক-ই না।❞

— হুম আপনি ভারী জাতের প্রেমিক! একটা মানুষকে বিরক্ত করে আবার বলেন এটা না কী প্রেম! প্রেমের গুষ্টি উদ্ধার করেছেন আপনি।

— আমার প্রেম বুঝবে না তুমি। যেদিন বুঝতে পারবে আমার মতো তুমিও প্রেমে পড়বে।

— রাখুন আপনার প্রেমের গল্প। আমি যাচ্ছি।

আমি এটা বলে নিচে চলে এলাম৷ ছাঁদে এতক্ষন যাঁর সাথে কথা বলেছি সে আসলে বর্ণ। এই বর্ণ নামের লোকটা আসলে খুব গায়ে পরা টাইপ। আমাকে দেখলেই কথা বলতে আসে। আমি যতই নিষেধ করি ততই বেশি করে উনি এটা করেন৷ বর্ণ খুব একরোখা টাইপ একজন মানুষ। যেটা বলবে সেটা করবেই!

সন্ধ্যা বেলায় সবে মাত্র পড়তে বসেছি। আব্বা তখন ড্রয়িংরুমে। আর আম্মা ঘরে টিভি দেখছেন। এমন সময় টুং করে কলিংবেলের আওয়াজ। আমি গিয়ে টুপ করে গেট খুলে দেখি ওমা এ দেখি বর্ণ। হায় কপাল! বর্ণ বাবাজী এখানেও হাজির! আমাকে দেখে চোখ টিপ দিয়ে বর্ণ বললেন,

— আংকেল কোথায়?

আমি উত্তর দিতে যাবো যখনই, আব্বা এসে বললেন,

— কীরে কে এসেছে রে মেহুল?

— আমি চিনি না আব্বা তুমি দেখ।

আব্বা আমাকে ঠেলে দরজার সামনে গিয়ে বললেন,

— কে বাবা তুমি?

— আংকেল আমি বর্ণ। আমার আব্বু আপনাকে নিচে ডাকছে আংকেল।

— তুমি যাও বাবা। আমি এখনই আসছি।

বর্ণ আব্বার কথা শুনে চলে গেল। বর্ণ চলে যাওয়ার সাথে সাথে আব্বা ও বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন। যাওয়ার সময় আমাকে বলে গেলেন গেটটা লাগিয়ে দিতে। আমিও ভদ্র মেয়ের মতো গেট লাগিয়ে দিয়ে আবার পড়তে বসে গেলাম। কিন্তু মাঝখানে খুব চিন্তা হচ্ছিল। বর্ণ আসলে কেন আব্বাকে ডেকে বাইরে নিয়ে গেলেন? আমার ব্যাপারে আব্বাকে আবার কিছু বলেননি তো? আমার বিষয়ে আব্বাকে কিছু বললে তো সর্বনাশ! আব্বা আম্মা আমাকে মেরে মাটির নিচে পুঁতে রাখবেন তাহলে!

এরপর রাতে ডিনার করতে বসেও খুব চেষ্টা করলাম আব্বার পেট থেকে কথা বের করতে। বর্ণ আসলে আব্বাকে ঠিক কী বলেছেন এটা জানার খুব চেষ্টা করলাম। কিন্তু নাহ! কোনো লাভ হয়নি। আব্বা সেই প্রসঙ্গে কোনো কথাই আর বলেননি।

রাতে বেলা সবাই যখন ঘুমিয়ে গেল। তখন আমি আবার পা টিপে টিপে বারান্দার দরজা খুললাম। বারান্দার বাতি জ্বালিয়ে দিলাম। এরপর মুখ দিয়ে হালকা আওয়াজ করলাম। এই আওয়াজ শুনে বর্ণ কী বুঝলো কে জানে। বর্ণ সুরসুর করে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বারান্দায় গ্রিলের সামনে দাঁড়ালেন। এসেই আমাকে প্রশ্ন করলেন,

— কী খবর সুন্দরী? তুমি আমাকে আজ হঠাৎ ডাকলে না কি? আমাকে মিস করছো না কি?

— আপনাকে মিস করতে যাবো কেন? আপনাকে মিস করে আমার কী লাভ?

— প্রেম ভালবাসায় লাভ লোকসান খুঁজছো তুমি?

— আপনার জেনে কী কাজ বলুন? আপনার আজগুবি কথা বাদ দিন। এবার আমার কথা শুনুন।

— তাই তো শুনতে এসেছি। বলতে তো পারবোনা আমি নাহয় শুনলামই।

— আপনি আবার শুরু করেছেন এইসব ফালতু কথা বলা!

— আচ্ছা, যাও আর বলবো না।
বলো কী বলতে এসেছো? মানে আমায় ডেকেছো কেন?

— আপনি তখন আব্বাকে ডেকে কোথায় নিয়ে গিয়ে ছিলেন? কী বলেছেন আব্বাকে?

— আমি তো ডাকিনি। আমার আব্বু ডেকেছিল আংকেলকে। কেন ডেকেছেন এটা আব্বু ভালো জানেন। আমি তো বলতে পারবো না আব্বু কেন আংকেলকে ডেকেছেন।

— ওহ, আচ্ছা আমি যাচ্ছি।

— মেহুলিকা শুনো একটু….

— আমার ঘুম পাচ্ছে। ভালো থাকবেন। শুভ রাত্রি।

আমি এটুকু বলেই বারান্দা থেকে রুমে ঢুকে বারান্দার দরজা বন্ধ করে দিলাম রুমের ভেতর থেকে।

পরেরদিন আমার সারাদিন অন্য দিনের মতে স্বাভাবিকই কাটলো। কিন্তু রাতে ঘটলো আরেক ঘটনা। আম্মা ভুলে আমার ঘরের জানালা খুলে রেখেছিলেন। কেন খুলেছিলেন তাঁর সঠিক কারন আমি জানি না। আমি স্বাভাবিক ভাবেই রুমে ঢুকে বিছানা করতে শুরু করলাম। কলেজে ক্লাস ছিল আজকে। সেই হিসেবে আজকে ঘুম থেকে একটু তাড়াতাড়িই উঠতে হয়েছে। তাই আজ খুব ঘুম পাচ্ছে। ঘুম আমি ঠিকমত তাকাতেও পারছিলাম না।

বিছানা করে মাত্র শরীরটা যখনই এলিয়ে দিবো। তখনই বর্ণ মুখে শিস বাজিয়ে ইশারায় আমাকে ডাকতে লাগলেন। টলমল পায়ে বারান্দায় ঢুকলাম আমি। আজ ইচ্ছেমত ঝারবো ব্যাটাকে। আমাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না ঠিকমত। আমি বারান্দায় ঢুকেই বর্ণকে বললাম,

— কী হয়েছে! বলুন কী সমস্যা আপনার?

— কোনো সমস্যা নেই। আমার শুধু তোমাকে একটু দেখতে মন চাচ্ছিলো। তাই ডাকলাম তোমাকে।

— আপনাকে একটা কথা বলি?

— হুম বলো বলো।

— একটা মানুষকে আপনার ভালো লাগতেই পারে। আপনি ভালোবাসতেই পারেন। তাই বলে যে তাঁকে পেতেই হবে এমন কোনো কথা নেই।

— মানে? এসব কী বলছো মেহুলিকা!

— যা বলছি ঠিকই বলছি। ভুল তো কিছু বলিনি। আমি আপনাকে ভালোবাসি না। আমার আপনাকে ভালো লাগেও না। আপনার উচিত আমার জীবন থেকে সরে যাওয়া। এভাবে আর কতদিন বলুন? আমি আপনার কাছে হাত জোর করছি প্লিজ আমাকে এভাবে বিরক্ত করবেন না। আমার এসব ভালো লাগে না।

— আমি তোমাকে বিরক্ত করছি?

— জী, এটাকে তো এক প্রকার বিরক্ত করাই বলে তাই না? এভাবে শিস বাজিয়ে একটা মেয়েকে ডাকাডাকি করা কী খুব ভদ্র লোকের কাজ? এই কাজ তো বখাটে ছেলেরাও খুব ভালোভাবে করতে পারে। আপনার ভালোবাসা কী এতই তুচ্ছ? ভালোবাসার মানুষকে না পেলে বুঝি আপনিও এমন বখাটেপনা করবেন? তাহলে আপনার আর বখাটে ছেলেদের মধ্যে পার্থক্যটা কী রইলো? আপনি আমাকে ভালোবেসে বখাটেপনা করেন। আর ওরা স্বভাবতই বখাটেপনা করে।

— বেশ! আমিও বললাম আমি তোমার ধারেকাছেও ঘেঁষবো না আর। আমার ভালোবাসা আসলেই এত তুচ্ছ পর্যায়ের না। ভালো থেকো মেহুলিকা। ভালোবাসার বিনিময়ে এত অবহেলা পাবো জানলে সেই ভালোবাসার প্রকাশ আমি কখনোই করতাম না।

আমি আর কিছু না বলে নিঃশব্দে রুমে চলে এলাম। জানি, বর্ণের হয়ত আমার বলা কথা গুলো শুনতে খারাপ লেগেছে। তবে,নিজের ভালোর জন্য আমাকে এটা করতেই হতো।

ভালোবাসার ফাঁদে পা দিয়ে একজনের পরিণাম কতটা ভয়াবহ হয়েছিল তা তো দেখেছি একবার। আমিই আবার ভালোবাসায় ফেঁসে গিয়ে সেই একই ভুল করবো? নাহ কখনোই না।
কথায় আছে না? নিজের ভালো পাগলও বুঝে! আর আমি তো একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ। তাহলে আমার ভালো আমার বুঝতে অসুবিধে কোথায়?

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here