#আয়নামতী
#পর্ব_৩৬
#পুষ্পিতা_প্রিমা
অনুরাগ অনেক করে বলার পরে আয়না যেতে রাজি হলো না। আয়শা বেগম বলল
‘ থাকুক কিছুদিন। তুমি এসে তোমার বউরে দেইখা যাবা জামাই। খবরদার সপ্তাহ পরপর আসবানা। তোমার গাড়ি ভাড়া দেওয়া লাগেনা শ্বশুরবাড়ি আসতে। প্রত্যেকদিন এসে এসে দেখে যাবা।
অনুরাগ কোনোমতে জবাব দিল ‘ আচ্ছা আম্মা। মনে থাকবে। ”
আয়না ঘরে বসা ছিল । আয়ান এসে বলল
‘ টুনি তোর টুনা চলে যাচ্ছে।
‘ তো আমি কি করব?
আয়ান হেসে দিল। বলল
‘ এত রাগ সামলায় কিভাবে জামাই বাবু? বেশি জ্বালাস বোধহয়।
আয়না গাল ফুলিয়ে তাকালো। আয়ান হেসে ফেলল। বোনের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে ফেলল। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
‘ আহা বনুটা ওভাবে তাকাস কেন? আমি তোর পক্ষে সবসময়। টুনাটুনির সংসারে রাগারাগি তো হবেই।
‘ ওই লোককে টুনা বলবে না। যদি বলো তাহলে আমাকে টুনি ডাকবে না। ওই লোক আমাকে তার বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছে।
আয়ান সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল
‘ সত্যি? আমার টুনিকে সত্যি এরকম বলেছে?
আয়না ঘনঘন মাথা নাড়ালো। আয়ান হেসে ফেলল। বোনের মাথায় স্নেহের পরশ দিয়ে বলল
‘ টুনি এখনো সেই টুনিই থেকে গেল।
‘ আমি দোয়েল, ময়না হবো না।
আয়ান উচ্চস্বরে হেসে ফেলল। বলল
‘ আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। হস না। তুই টুনি থেকে যাহ।
‘ ওই লোক কি চলে গেছে?
‘ হু।
আয়না মাথা তুললো। বলল
” আচ্ছা। উঠোনে যাই তাহলে। বাবু ওখানে তো?
‘ হু।
আয়না যেতেই নামিরা এল। বলল
‘ উফ বেচারা চৌধুরী সাহেবের কপালটাই খারাপ। এত নাকানিচুবানি খাওয়ায় তোমার বোন। আমি ভাবতেই পারছিনা এতটা সহ্যশক্তি ও থাকে পুরুষ মানুষের?
‘ থাকে থাকে। যেমন আমার।
নামিরা খিক করে হেসে দিল। আয়ানের বুকে আলতোভাবে চাপড়ে দিয়ে বলল
‘ যাহ, পাজি ছেলে।
____________
আয়না রূপা আর সায়ানকে পেয়ে সবটা ভুলে গেল। হাসিতেখুশিতে কয়েকটা দিন পার হলো। অনুরাগ দেখতে আসার সময় আনহিতা নিজ হাতের নারকেল নাড়ু বানিয়ে পাঠাবে বলল ছেলেবউয়ের জন্য। শায়লা বেগম বলল
‘ দাদুভাই বউ নিয়ে এসো। তরকারি ও ঝাল কম হচ্ছে আজকাল। মিঠা তরকারি ভালো লাগেনা।
অনুরাগ বলল
‘ একটুখানি বকেছি বলে এতদিন বাপের বাড়ি? মেয়েমানুষের সাথে লড়তে না যাওয়ায় ভালো। আমাকে বউ ছাড়া থাকতে হলো এতদিন। ধুরর।
আওয়াজ করে হেসে ফেলল শায়লা বেগম। বলল
‘ আর বকা দিবা? আমি ও যেতাম তোমার দাদা একটু বকলে। খেতাম না৷ জোর করে খাওয়াতো। মাথার চুল আঁচড়াতাম না। চুল আঁচড়ে দিত। বাপের বাড়ি উঠলে সপ্তাহ নয় মাসে ও নামতাম না।
‘ খবরদার বুড়ি এসব কূটনামি আমার বউকে শিখিয়ে দেবে না। নইলে আমি শেষ।
শায়লা বেগম হাসতে হাসতে বসে পড়লেন। বললেন
‘ দাদুভাই নাতবৌ তো তোমাকে সেইরকম ভাবে ফাঁসিয়ে দিল।
‘ সব কপাল দাদীজান। যারে আমি বাসি ভালা, সে আমারে ডাকে কালা,
‘ কি দুঃসংবাদ দাদুভাই। কালো ডাকে? আমার দাদুভাই কি কালো?
‘ নাহলে পছন্দ না করার আর কিছুই দেখিনা।
আনহিতা এসে বলল
‘ সোহাগ সব রেডি করা আছে। তুমি কি এখন বেরোবে?
‘ হ্যা।
‘ আজ কি বউ ফিরবে?
‘ জানিনা। সঠিক বলতে পারব না।
‘ ঠিক আছে। ফিরতে না চাইলে জোর করোনা। আবার এখানে এসে রাগারাগি করবে। যখন মন চায় তখন ফিরুক।
‘ পারেনা একেবারেই না ফিরতে।
বলেই আনহিতার হাত থেকে ব্যাগটা হাতে নিয়ে নিল অনুরাগ। সালাম জানিয়ে বেরিয়ে গেল। শায়লা বেগম বলল
‘ এই নাতবৌ কবে যে ঠিকঠাক হবে আল্লায় জানে।
____________
শ্বশুরবাড়ি থেকে নাশতা পাঠাইছে তুই খাবি না? আশ্চর্য! তোর শ্বাশুড়ি বানাইছে।
” আমার মিষ্টি জিনিস খেতে ইচ্ছে করছেনা আম্মা। রেখে দাও।
আয়শা বেগম আর জোর করলো না। বলল
” জামাই একটা কথা বলতে বলছে তোকে। বলুম?
‘ বলো।
‘ তোরে তার সাথে চইলা যাইতে বলতেছে। আমি জোর করতাছি না বাছা আমার। তোর মন চাইলে যাবি না চাইলে যাবি না। আমাদের লগে থাকবি।
চুপ করে থাকলো আয়না। আয়শা বেগম বলল
‘ তোর ঘরে গিয়ে বসছে। কথাবার্তা সেড়ে নিস। খবরদার রাগারাগি করবি না। যা হওয়ার সব হয়ে গেছে। সেগুলো এখন অতীত। সবটা ভালো করে শুরু কর। ভালো মানুষের হাতে তোর দিছে আল্লায়। ধরে রাখ। হারাইলে আফসোসের শেষ থাকবো না।
‘ আম্মা আমি তো,,
‘ হয়ছে আমারে বলতে হইবো না। আমি সব জানি। যাহ। অনেক্ক্ষণ ধরে বইসা আছে।
আয়না গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেল। অনুরাগের কোলে সায়ান ছিল। আয়নাকে ঘরে ঢুকতে দেখে চেঁচিয়ে উঠলো। হাত ঝাড়তে লাগলো কোলে উঠার জন্য। আয়না হাত বাড়িয়ে বলল
‘ আসো আব্বা।
অনুরাগ দিল না। জিজ্ঞেস করলো
‘ কেমন আছ আয়নামতী?
‘ ভালো৷
‘ আজ যাবে? ওইদিনের জন্য সরি। রাগের বশে কি বলে ফেলেছি খেয়াল ছিল না।
সায়ানকে কোলে না নেওয়ায় কেঁদে ফেলল সে। নামিরা দৌড়ে আসলো। বলল
‘ আসো আসো আব্বা। আঙ্কেল কথা বলুক ফুপীর সাথে। অনেক জ্বালিয়েছ।
সায়ান মাকে দেখে কোলে ঝাপ দিল। নামিরা তাকে আদর করতে করতে নিয়ে গেল।
‘ কিছু বললে না।
‘ যাব।
অনুরাগের ঠোঁটের কোণায় হাসি।
‘ কিন্তু শর্ত আছে।
‘ আবার কি?
‘ আমাকে আয়নামতী ডাকবেন না। যখন তখন ছুঁবেন না। হুটহাট কাছে চলে আসবেন না। পাশে চুপচাপ ঘুমাবেন। জড়িয়ে ধরবেন না। মানলে যাব নয়তো যাব না।
অনুরাগ বলল
‘ একদম। সব মানব।
অতঃপর মনে মনে বলল
‘ আজ থেকে আরও বেশি বেশি ছুঁবো, বেশি আয়নামতী ডাকব। সবকিছুর পরিমাণ বাড়বে আয়নামতী। আগে তো বাড়িতে তুলি।
খুশিখুশি মনে আয়না বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে এল। আনহিতা হাঁফ ছাড়লো। যাক বউটার রাগ ভাঙছে এই অনেক। অনুরাগকে তিনি ভালোমতো শাঁসিয়ে দিলেন
‘ সোহাগ বউ রেগে গেলে তুমি সেখান থেকে সরে যাবে। এই সংসারে মন বসতে ওর তো সময় লাগবে। তুমি ও ওর সাথে ঝগড়ায় নামলে তো হবেনা।
অনুরাগ চুপচাপ মাথা নাড়ালো। শায়লা বেগম অনুরাগের সামনেই আয়নাকে বলল
‘ নাতবৌ তোমার বরের বোধহয় এই পাঁচদিন ঘুম ও হয়নি বউ ছাড়া। দেখো কালো হয়ে গেছে চোখের নিচ। এমনিতেই তুমি নাকি কালো ডাকো।
আয়না ঠোঁট টিপে হাসলো। মিনমিন করে বলল
‘ বিস্কিট কালার।
অনুরাগ বলল
‘ দাদীজান ভুলভাল কথা বলো না। কত চিন্তা আমার জানো? ওজন্য ঘুম হয়নি। তুমি কি জানো?
বলেই চলে গেল অনুরাগ৷ হেসে ফেলল শায়লা বেগম। আয়নার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল নিজের ঘরে। বলল
‘ নাতবৌ সামনে তোমার দাদাশ্বশুরের মেজবান। অনেক আত্মীয় স্বজন আসবে দূর দূরান্ত থেকে। বিয়েতে তো এসেছিল তোমার সাথে কারো তেমন পরিচয় হয়নি। এইবার পরিচয় হয়ে যাবে। অনু মামা খালা সবাই, আমার বাপের বাড়ির ও সবাই আসবে। তুমি হলে এই বাড়ির বউ। একমাত্র ছেলের একটা মাত্র বউ। কিছুদিন পর এই সংসারের চাবি তো তোমার হাতে উঠবে। তুমি হবে বড়গিন্নি।
আয়না চুপচাপ শুনলো।
শায়লা বেগম একটা গহনার বাক্স বের করলো বড় আলমিরা থেকে। মোটা একটি ভারী গহনা তুলে বলল
‘ একটা কথা বলি তোমায়। তুমি তো জানো কুহেলীর কথা। সে যখন বউ হয়ে এসেছিল এই বাড়িতে তখন আমি খুব নারাজ ছিলাম সবার উপরে। কারণ সে চলচ্চিত্রের মানুষ। কিন্তু আমি একদিন অসুস্থ হলাম সে আমার সেবাশুশ্রূষা করলো। আমার তার উপর মন গললো। কিন্তু তাকে আমার মনে ধরলো না কোনোমতে। তাই আমি তাকে পরখ করতে শুরু করি। দেখি তার সবকিছুর উপরে লোভ। শাড়ি,গহনা, টাকা। যত পায়, ততই চায় সে। আমার কাছে একটা ইমিটেশনের গহনা ছিল। আমি ওটা তাকে দেই। সে নিয়ে ও নেয় । আসলো ঘটনাটা বিয়ের অনেক পরে ঘটেছে। একদিন আমি তাকে ডেকে বললাম
‘ নাতবৌ গয়নাটা একবার পড়িও।
সে আমাকে মুখের উপর নাক তুলে জবাব দিল
‘ আমি ওসব ইমিটেশনের গয়না পড়িনা। আপনার কি আমাকে দেখে অতটা সস্তা মনে হয়?
অথচ আমি যখন তাকে সেটা দিচ্ছিলাম তখন তার চোখ দুটো খুশিতে জ্বলছিল। পরে কিভাবে জানলো কে জানে। আমি তো সেইদিনই বুঝে গেলাম ওই মেয়েকে। গয়নাটা সোনার হলে কথাটা সুন্দর করে বলতো ওই মেয়ে। নকল হওয়ায় আমাকে গর্জে কথাটা বললো যা আজ পর্যন্ত আমার ছেলের বউ ও বলেনি। আমাদের দ্বারা অনেক বড় বড় ভুল হয়েছে নাতবৌ। তুমি সব শোধরে দিয়েছ। আমি একটা ভালো মনে নাতবৌ পেয়েছি । আমার ছেলে আর ছেলের বৌ একজন বিশ্বাসী বউমা পেয়েছে। আর আমার দাদুভাই একজন সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষ পেয়েছে। তাই তোমার জন্য এটা। আমি এটা আমার নাতির বউয়ের জন্য বানিয়ে রেখেছিলাম বহুবছর আগে। অনিরটা অনিকে বিয়ের সময় দিয়ে দিয়েছি। এটা অনুর বউয়ের জন্য। কুহেলী ওইদিন নকল গয়নাটা যদি পড়তো আমি এটা ওকে দিয়ে দিতাম। উপরওয়ালা ও বোধহয় সেটা চাননি। এটা তোমার জন্য বরাদ্দ ছিল।
আয়না তখন ও চুপচাপ। গম্ভীর। শায়লা বেগম গয়নার বাক্সসহ আয়নাকে দিল। বলল
‘ নাও। পড়ো তোমার দাদাশ্বশুরের মেজবানের দিন। অনেকে নতুন দেখবে তোমায়। এই বাড়ির যোগ্য বউ। জানি আমাদের উপর অনেক রাগ তোমার। বিশ্বাস করি আমি, একদিন সব মুছে যাবে। সকল অভিযোগ তুমি সরিয়ে নেবে। রাগ কমে যাবে। এইবার সত্যি করে বলোতো
‘ আমাদের কি একটুও আপন মনে হয় না?
আয়না মাথা নিচে নামিয়ে বসে থাকলো। শায়লা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বলল
‘ ভুল থেকেই মানুষ শিক্ষা নেয়। আমরা ও ভুল থেকেই শিখেছি। যদি অনুর সাথে তোমার বিয়েটা প্রথমবার হয়ে যেত আমাদের ভুলগুলো আমরা কখনোই দেখতে পেতাম না। আমাদের শিক্ষার খুব দরকার ছিল। একবার ঠকে যাওয়ার খুব দরকার ছিল। ঠকেওছি। কুহেলী সব আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। বুঝিয়ে দিল কতবড় রত্ন আমরা শুরুতেই হারিয়ে ফেলেছিলাম মাত্র সমাজের প্রচলিত সংস্কার মানতে গিয়ে। আমাদের ভুলের কারণে আমার দাদুভাই ও অনেক কষ্ট পেয়েছে। আমাদের ভুলের শাস্তি তুমি আমার দাদুভাইকে দিওনা। ভালো থাকো তার সাথে। একটা ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে এসো। আমাদের তো একটা খেলার সাথী প্রয়োজন তাই না? অমি চলে গেলে বাড়িটা খালি হয়ে থাকে। একটা বাচ্চাকাচ্চা এলে আমাদের বাড়িটা সবসময় কোলাহলে ভরপুর থাকবে। আর কিচ্ছু চাই না নাতবউ। এইবার মরলে ও শান্তি।
আয়নার চোখের কোটরে চিকচিক করা জলের কণা। সে এত ঘাড়ত্যাড়ামি করে কেন? এদের এত বিশ্বাস পাওয়ার জন্য? নাহ তারা যাতে দূরে সরিয়ে দেয় এজন্যই। কিন্তু সব উল্টোটা। সবাই পাগল এরা। সবাই। সে এত ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই নয়।
শায়লা বেগম টেনে এনে জড়িয়ে ধরলেন আয়নাকে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
‘ আহা এই চিকচিক করা জলগুলো যদি অনু দেখত!
____________________
মেজবান উপলক্ষে বাজারের লিস্ট হচ্ছে। অনিমা সোফায় বসে বসে লিখছে যা যা বলছে শায়খ চৌধুরী। শেষমেশ আঙুল ব্যাথা হলো। আয়নাকে ডেকে বলল
‘ এই মেয়ে এদিকে আসো। লিস্টটা লিখো দেখি। লেখা কত সুন্দর দেখি৷ আসো।
আনহিতা বলল
‘ নাম ধরে ডাক অনি। তোমার ছোট ভাইয়ের বউ।
‘ আমার ছোট ভাইয়ের বউ। আমি যেভাবে ইচ্ছা ডাকব। গালি তো দিচ্ছি না। আমি শাসন ও করব।
আয়না গিয়ে চুপচাপ সোফায় বসলো। শায়খ চৌধুরী পায়ের উপর থেকে পা টা নামিয়ে বসলো। মিটমিট করে হাসলো আনহিতা আর শায়লা বেগম। যাক ছেলের বউকে তাহলে একআধটু মান্য করে। আয়না লিখলো যা যা শায়খ চৌধুরী বললো। অনিমা বলল
‘ বাহ লিখা তো সুন্দর। তোমার মা পড়ালেখা না করিয়ে বিয়ে দিয়ে দিল কেন?
‘ আপনার ভাই জোর করে করেছে।
জিভে কামড় দিয়ে ফেলল অনিমা। তবে বলল
‘ ঠিক আছে। আমার ভাই তো তোমাকে আনপড়া রেখে দেয়নি। কলেজে তো পড়াচ্ছে।
আয়না কথা বললো না। লিখায় মনোযোগ দিল। তখনি বাজারের ব্যাগ হাতে অনুরাগ বাড়িতে এল। আনহিতা সব নিয়ে নিল। অনিমা বলল
‘ ভাই আমার জিনিসগুলো এনেছিস? টাকা দেব না তোকে। তোর জামাইবাবুকে বলিস না।
অনুরাগ হেসে দিল। বলল
‘ আচ্ছা লাগবে না তোর টাকা । ধর তোর জিনিস। আমিই দিলাম।
অনিমা হেসে এগিয়ে গেল। ভাইয়ের গাল টেনে দিয়ে বলল
‘ কি ভালো ভাইটা আমার!
অনুরাগ আবার হাসলো। আঁড়চোখে আয়নাকে কি যেন লিখতে দেখে ভাবলো
‘ আবার কি লিখিত অভিযোগ জমা দিচ্ছে নাকি আয়নামতী?
আনহিতা বলল
‘ দাও ওটা ও দাও। উপরে গিয়ে মুখহাত ধুয়ে আসো।
অনুরাগ সেটা দিল না। বলল
‘ মা ওটা তো।
‘ কি ওটা?
আয়না তাকালো চোখ তুলে। আবার লিখায় মনোযোগ দিল। অনিমা থেমে গিয়ে বলল
‘ মা ওর বউয়ের জন্য কিছু এনেছে বোধহয়। সব কি দেখতে আছে?
আনহিতা “ওহ” বলে দ্রুত সরে পড়লো। অনুরাগ মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল
‘ এগুলো তো কিছুই না, শুধু ওই,,
অনিমা বলল
‘ যাহ ব্যাটা তোর আমতাআমতা শুনলেই কান ব্যাথা হয়।
অনুরাগ ব্যাগটা নিয়ে চলে গেল। কিন্তু ঘরে গিয়ে একঘন্টার মতো বসে থাকলো আয়নার অপেক্ষায়। আয়নামতী তাকে দেখা দিল না ভুলেও। অনুরাগ গিয়ে দেখতে পেল আয়না আবার রান্নাঘরে। বিরক্ত হলো অনুরাগ। তার বউকে এরা তার ঘরে পাঠায় না কেন? আশ্চর্য!
তাকে এভাবে ঘুরঘুর করতে দেখলো শায়লা বেগম। আয়নাকে ডাক দিল। আয়না গিয়ে জিজ্ঞেস করল
‘ কিছু লাগবে দাদীজান?
শায়লা বেগমের মনটা জুড়ে গেল। বলল
‘ তোমার জামাইজান ছটপট করতেছে বউয়ের জন্য। দেখে আসো কি এনেছে।
আয়না খিক করে হেসে ফেলে বলল
‘ জামাইজান?
শায়লা বেগম আবার ও হাসলো। আয়না হাসতে হাসতে এগোলো। হাসি থামলো না তার। অনুরাগ তাকে ঘরের দিকে যেতে দেখে স্বস্তি পেল। ধপাধপ দরজা বন্ধ করে দিল আয়না ঘরে ঢুকার সাথে সাথে। বলল
‘ সারাক্ষণ ওখানে কি? জামাই বেঁচে আছে কি মরে গেছে খোঁজ ও তো নাও না।
আয়না বলল
‘ কেন খুঁজছিলেন?
‘ আমার পা টিপার জন্য।
রেগে বলল অনুরাগ৷
‘ আশ্চর্য! আমি চলে যাচ্ছি।
অনুরাগ বলল
‘ নাহ। তোমার জন্য ওই ব্যাগে কিছু এনেছি। দেখো।
‘ শাড়ি এনেছেন?
‘ কিভাবে জানলে?
আয়না ফিরলো তার দিকে। বলল
‘ বুঝতে পারি।
‘ আর ও কিছু এনেছি।
‘ চুড়ি এনেছেন?
‘ আর ও কিছু এনেছি।
‘ নূপুর এনেছেন।
‘ আর ও কিছু।
‘ ব্লাউজ, পেটিকোট।
হেসে ফেলল অনুরাগ।
‘ আর ও কিছু এনেছি।
‘ সাহস থাকলে মুখে বলুন।
‘ কাছে এসো কানে কানে বলি।
‘ নির্লজ্জ। যাব না।
‘ আমি ও জোর না করলে বলব না। অতটা মুখ পাতলা নই আমি।
অনুমান করো ওসব বাদে আর ও কিছু একটা এনেছি।
‘ মেহেদী?
‘ তুমি ও কি আজকাল আমাকে পড়তে পারছ আয়নামতী?
‘ খানিকটা। সত্যি হলো তো।
‘ আর ও কিছু এনেছি।
‘ আর কি?
চিন্তায় পড়লো আয়না। কপালে ভাঁজ পড়লো। নাকের ডগা বিন্দু বিন্দু ঘামে ভেজা। অনুরাগ হাসলো। বলল
‘ পারবে না তো?
‘ পারব। গলার চেইন?
‘ ঠিক।
‘ আর ও একটা জিনিস এনেছি।
‘ কি?
‘ অনুমান করো।
‘ আংটি?
একগাল হেসে ফেলল অনুরাগ। বলল
‘ বুদ্ধিমতী বউ আমার।
‘ আর বোকাসোকা বেকুব, বিস্কিট কালার জামাই আমার।
ভেংচি কেটে বলল আয়না।
আচমকা আয়নার কোমরে হাত গলিয়ে কাছে টেনে নিল অনুরাগ। নাকে নাক ঘষে বলল
‘ আমি আর বেকুবপুরুষ নেই আয়নামতী। চালাক হয়ে গেছি। বুদ্ধিমতীর সাথে থেকে থেকে বুদ্ধিমান হয়ে গেছি। আর তুমি আমার সাথে থেকে থেকে আমাকে ভালোবেসে ফেলছ। খুব বেশি জোরাজোরি না হলে এভাবেই থাকো। সবসময়। সারাজীবন। তোমাকে আজ দারুণ মিষ্টি দেখতে লাগছে আয়নামতী।
আয়না নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। বলল
‘ আমার কাজ আছে।
অনুরাগ আবার পেছন থেকে আষ্টেপৃষ্টে ধরলো। বলল
‘ এড়িয়ে যাচ্ছ কেন? ভালো হচ্ছেনা৷ আরেকটু থাকো৷
আয়না শক্ত হয়ে দাঁড়ালো৷ বলল
‘ আপনি কুহেলীকে ও এভাবে ধরতেন নাকি?
অনুরাগের হাত আলগা হয়ে এল। আয়না সরে পড়তেই অনুরাগ আবার ও এ টেনে ধরলো তাকে । ঘাড়ে নাকমুখ ডুবিয়ে বলল
‘ ধরেছি একবার।
আয়না ঝামটি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। বলল
‘ বলেছিলাম আমাকে যখনতখন ছুঁবেন না। যান কুহেলীর কাছে। একবার কেন একশবার ধরেন। যা ইচ্ছা তাই করেন। খবরদার আমার কাছে আসবেন না।
অনুরাগ উচ্চস্বরে হেসে ফেলল। বলল
‘ আমি এই আয়নামতীকেই মিস করছিলাম। এজন্যই মিথ্যে বলা।
কুহেলীকে ছোঁয়া হাত দিয়ে যদি তোমাকে ছুঁতে হতো তাহলে সেই হাত আমি কেটে ফেলতাম। আর কুহেলীকে দেওয়া হৃদয় দিয়ে যদি তোমায় ভালোবাসতাম সেই হৃদয়টা ছিঁড়ে নিতাম। আমি তো আমার সবটা একদম পবিত্র করে তোমাকে দিয়েছি আয়নামতী। তারপরও তোমার মন গলেনা ভাই। এই দুঃখ আমি কই রাখি?
আয়না তেড়ে এল। অনুরাগকে ধাক্কা দিয়ে বলল
‘ আমার মাথায় বেয়াদব পুরুষ মানুষ।
অনুরাগ হেসে ফেলল। বলল
‘ আহা আয়নামতী এত জ্বলে কেন?
আয়না বলল
‘ এইগুলো আমি একটা ও পড়ব না। শাড়ি পড়ব না। কিচ্ছু পড়ব না।
অনুরাগ একদম দূরত্ব কমিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসলো আয়নামতীকে। এলোমেলো চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে দীর্ঘ চুম্বন দিল কানের নিচে। অতঃপর বলল
‘ আমি পড়িয়ে দেব।
আয়না একদম জোরে ঠেলে দিল তাকে। কান ঢলতে ঢলতে বলল
‘ অতক্ষণ লাগে বেয়াদব পুরুষ?
অনুরাগ হা করে তাকিয়ে থাকলো।
‘ কতক্ষণ লাগলো পাঠক? আমি তো ঘড়ি দেখিনি।
চলবে,