আয়নামতী পর্ব-৪২

0
1866

#আয়নামতী
#পর্ব_৪২
#পুষ্পিতা_প্রিমা

দুপুরের তেজীয়ান রোদবালিকার শান্ত, নিস্তেজ হওয়ার সময়। ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে দোয়েল ডাকছে বাড়ির আঙিনায়। মাস কয়েক তখন পেরিয়ে গেছে।
আয়নাদের বাড়ির উঠোনে এসে থামলো রিকশা। হুড নামানো রিকশার। তাতে বসা চৌধুরী বাড়ির বউ। বাড়ির গাড়িতে চড়ে আসবে না বলেছিল তাই এই অবস্থা । অনুরাগ ও এল। কিন্তু মুখটা তার থমথমে। ফুলিয়ে রাখা।

সায়ান দাঁড়ানো ছিল উঠোনের মাঝখানে অনুরাগের দেওয়া সেই গাড়িতে । যেটা সায়ান হাঁটতেই চাইলেই এগিয়ে যাবে।
পায়ের তালু বসানো শিখছে এখনো। আয়নাকে রিকশা থেকে নেমে নিকাব তুলতে দেখামাত্রই খুশিতে হাত নাড়তে নাড়তে গড়গড়িয়ে হেঁটে এল। আয়না হেসে এগিয়ে গেল দ্রুত পায়ে। গাড়িটা থেকে চট করে কোলে তুলে নিয়ে গালে আদরে আদরে ভরিয়ে দিল। বুকের সাথে চেপে ধরে রেখে বলল

‘ আব্বা হেঁটে হেঁটে মেয়েকে দেখতে যাবে কখন?

সায়ান কচি কচি দাঁত দেখিয়ে হাসতে লাগলো। আয়না বলল

‘ উফ কি সুন্দর হাসে আমার আব্বাটা। টুস করে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। আব্বাকে একা ছেড়েছে কেন সবাই? আমার আব্বাকে কেউ আদর করেনা?

সায়ান নিজের অজান্তেই মাথা দুলালো। আয়না ঠোঁট টেনে বলল

‘ কেউ আদর করেনা? সবাইকে মারব আজ। কেউ কেন আমার আব্বাকে আদর করেনা?

আয়শা বেগম এলেন ধীরপায়ে হেঁটে। অনুরাগ আর আয়না পা ছুঁয়ে সালাম করলো। আয়শা দুজনের মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল

‘ অনেক অনেক বছর আল্লাহ বাঁচায় রাখুক। জামাই তোমার মুখ শুকনা ক্যান? বউ রাইখা যাইতাছো তাই? তোমার বউয়ের অযত্ন করবোনা কেউ। নিশ্চিন্তে থাকো।

অনুরাগ মাথা দুলিয়ে বলল

‘ না এমনি।

তার কোলে সায়ান। খিকখিক করে হাসতে থাকলো সে। আয়শা বেগম বলল

‘ ওমা ফুপুরে পাইয়্যা তো আমার মানিকের মুখ থেকে হাসি সরে না। ও আল্লাহ এই হাসি দেখলেই মন জুড়ায় যায়। আল্লাহ সবসময় হাসিখুশি রাখুক আমার ভাইরে।

অনুরাগ তার গালে আদর দিল। বলল

‘ তোমার পাজি ফুপীর সাথে একদম কথা বলবে না।

আয়না ততক্ষণে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছে। নামিরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। নামিরা হেসে বলল

‘ আরেহ ননদিনী শ্বশুরবাড়ি কি খুব দূরে? যখন মন চায় তখন চলে আসবে।

‘ আসতে দেয় না তো।

‘ বউপাগলা জামাইয়ের কবলে পড়েছ একদম ভালো হয়েছে। তোমার ভাই আমাকে যেতে দেয়?

আয়না মুখ তুললো। বলল

‘ একদম ভালো কাজ করে।

নামিরা বলল

‘ আমি ও বলে দেব চৌধুরী সাহেবকে যেন একদম এখানে না আসতে দেয়।

‘ ভাবি?

হেসে ফেলল নামিরা। আয়নাকে টেনে এনে আবার জড়িয়ে ধরলো। একটু থেমে বলল

‘ আমার সমস্ত বড় পাওয়াগুলোর মধ্যে একটা তুমি। আমার ননদিনী কম, বোনটা বেশি তুমি আর বন্ধু। আমি সত্যিই খুব ভাগ্যবতী, যে এমন একটা পরিবার পেয়েছি। একটা স্বামী, সংসার, মা, বাবা আর একটা বোন। ভালো থাকার জন্য মানুষের আর কি চায়? এর চাইতে বেশি প্রয়োজন নেই তো।

আয়না তাকে ছেড়ে দাঁড়ালো। বলল

‘ আমার ভাই, আম্মা আব্বা আর বাবু, রূপুকে দেখে রাখার বড় দায়িত্ব তোমার কাঁধে। ভালো রাখার দায়িত্ব। তার ও আগে যেটা দরকার সেটা হচ্ছে, নিজে ভালো থাকা। খুব ভালো থেকো, আর আমার পরিবারটাকে দেখে রেখো। মানুষগুলোকে ভালো রেখো।

আয়শা বেগম এলেন দুজনের কথার মাঝখানে। বললেন

‘ হয়ছে এদের । শুরু করে দিছে গল্পগুজব। আমাগো জামাই আসছে কারো খেয়াল নাই? নাশতা পানি কি দিমুনা?

আয়না বলল

‘ লন্ডন থেকে তো আসেনি। এসেছে ভালো কথা। বসুক, জিরোক। খাবে আর কি। না খেয়ে তো আসেনি। সবসময় বাড়াবাড়ি।

নামিরা হেসে বলল

‘ আম্মা আপনার জামাইয়ের জন্য তো কিছুই নাই। কি হবে এখন?

‘ মশকরা করবানা বউ। বাবু বসুক, আমি নালিশ করুম তোমার নামে। বলুম তোর বউ আজকাল আমার লগে মশকরা করে।

নামিরা হেসে ফেলল। সাথে আয়না ও।
আয়শা বেগম হনহনিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। নামিরা বলল

‘ জানো আয়না আম্মা এভাবে কথা না বললে আমার ভালোই লাগে না। খুব ভালো লাগে এই খ্যাঁকখ্যাঁক মার্কা কথাগুলো।

আয়না বলল

‘ এখন কি হবে? তোমার নামে তো নালিশ দেবে বলছে।

” সে তো আয়ান যখন আসে তখনই দেই।

‘ কি বলে?

” বাবু তোর বউ আমার লগে মশকরা করে। ঠান্ডা পানি ঘাটাঘাটি করে আমার ভাইয়ের জ্বর বাড়ায়। মাথায় তেল দিতে আলসেমি করে। আর ও কত কি!

‘ ভাইয়া কি বলে?

‘ শুনে আর হাসে।

‘ আম্মাটা ও পারে। আব্বা কিছু বলে না?

‘ আম্মাকে সারাক্ষণ বকে। বলে,বউ ভালা পাইছো নইলে তোমার গালি শুনে একদিনেই পালাইতো তোমার পোলারে ছেড়ে।

আয়না হাসিতে ফেটে পড়লো। বলল

‘ এসব চলে এখানে?

________

দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে অনুরাগ চলে গেল। যাওয়ার সময় আয়নাকে বলে গেল

‘ আমি ঢাকা থেকে ফিরেই তোমাকে নিয়ে যাব? এক মাস রাখব না।

‘ কখন যাচ্ছেন?

‘ তিন চারদিনের মধ্যে। একমাস রাখব না কেমন?

আয়না হেসে ফেলল। বলল

‘ আপনি এত পাগল কেন? আগে তো ফেরেন ঢাকা থেকে। সাবধানে থাকবেন। খুব বোকা আপনি, এত সহজ সরল হওয়া ঠিক না। মানুষ ঠকায়।

‘ না আমি এখন চালাক হয়ে গেছি। আমার বউয়ের সাথে থেকে থেকে। এখন আমি আয়নামতীর জামাই।

বলেই একগাল হাসলো সে। মায়াভরা চোখে চেয়ে বলল

‘ আমি ঢাকা থেকে ফিরলেই নিয়ে আসব কেমন?

‘ আচ্ছা আচ্ছা। এখন আসুন। একা একা বের হবেন না। সঙ্গে আপনার লোক রাখবেন। আপনাকে সবকিছু বলতে হয়।

‘ সবাইকে নিয়ে শহরে চলে যাব। নতুন বাড়িটাতে গিয়ে উঠবো। সব কাজ শেষ। ইলেকট্রিসিটির কাজ চলছে। বাড়িতে কেউ থাকবে না। তোমাকে ও নিয়ে যাব। আমার তো কষ্ট হয় এখান থেকে এদিকওদিক যাতায়াত করতে। তোমার বাগান ঠিক থাকবে। আমি লোক রেখে দেব। তুমি সপ্তাহে সপ্তাহে এসে দেখে যাবে। ঠিক আছে?

‘ আচ্ছা ঠিক আছে। দেখা যাবে ওসব। এখন যান। বাড়ির ফোনে কল করবেন।

‘ তোমার একটা ফোন দরকার। তাই না?
আমি কালই নিয়ে আসব কিনে। ও আল্লাহ আমার বউয়ের ফোন নাই এটা খেয়াল ও ছিল না আমার।

আয়না হেসে ফেলল। বলল

‘ কথায় কথায় আমার বউ আমার বউ কি আবার? আমি অন্য কারো বউ হতে যাচ্ছি নাকি আশ্চর্য!

‘ অন্য কারো বউ মানে কি? আমার দশটা বউ থাকলে একটা কথা। একটা বউ আছে ওটাই আমার বউ।

আয়না আবার হাসলো। বলল

‘ আপনি আসলেই খুব বেকুব একটা মানুষ। আমি বেকুব মানুষগুলোকে একদম সহ্য করতে পারি না।

‘ বেকুব মানুষটাকেই তো ভালো বাসো। সহ্য করো। চোখে হারাও। একটু বকলেই কেঁদে ভাসাও। আমি বেকুব হয়ে ও ধন্য।

‘ হয়েছে। এখন যান।

‘ আরেকটু থাকি না?

‘ ফোন নিয়ে তো কালই আসবেন।

‘ ও হ্যা। তাহলে তো চলে যেতেই পারি। আচ্ছা চলে যাই।

‘ আসি!

‘ আচ্ছা আসি। আল্লাহ হাফেজ বেকুব সাহেবের বউ।

আয়না খিক করে হেসে উঠলো।

_________

অনুরাগ তার পরের দিন হাজির হলো ফোন নিয়ে। সিম কার্ড দিয়ে আয়নাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেল আবার। আয়না ফোন পেয়ে অনেক খুশি হলো।
আয়শা বেগম মেয়েকে নিজ হাতে কত রকমের রান্না করে খাওয়ালেন। আজহার সাহেব তাজা ইলিশ আনলেন বাজার থেকে। আয়শা বেগম আয়ানকে কত কিছু আনতে বললেন। আয়না শেষমেশ বিরক্ত হয়ে বলল

‘ আমাকে দিয়ে আসো। আমি তোমাদের জ্বালায় আর পারিনা।

নামিরা হেসে বলল

‘ আমাকে ও আম্মা এমন জ্বালা জ্বালাতো। এখন তোমার সময়।

প্রায় দুই কি তিনদিন পার হলো। অনুরাগ তখন ঢাকায় চলে গিয়েছে। মাস খানেক তার থাকার কথা। আয়নার গর্ভে সন্তানের তখন পাঁচ কি ছয় মাস। আনহিতা আর অনুরাগের ফোনের জ্বালায় অতিষ্ঠ আয়নামতী। এক মাস পার হলো এভাবে। অনুরাগের আর ও আগে আসার কথা। তবে ভীষণ ব্যস্ত থাকার কারণে সে আর ফিরতে পারলো না। তাই আনহিতা তাকে নিজে এসে নিয়ে গেল। রাগে ফুলেফেঁপে থাকলো আয়না। প্রফেসর কথা রাখেনি। ফোনও বন্ধ রাখলো। কোনো কথা নেই আর।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে অনুরাগ ফিরলো প্রায় ঠিক উনচল্লিশ দিন পর। হাতে, কপালে ব্যান্ডেজ। রুক্ষ চেহারা। আনহিতা ছেলেকে দেখামাত্র হায়হায় করে উঠলো। কেঁদে ভাসালো। অনুরাগ বলল

‘ আহা এরকম করো না তো মা। আয়নামতী জন্য খারাপ হবে। কিছু হয়নি। ওউ একটু গাড়ির সাথে লেগে,,

আয়না তাকে দেখলো। ঘর থেকে আর বের হলো না। অনুরাগ ঘরে গেল। আয়নাকে চুপচাপ দেখে বলল

‘ কাজ আর কাজ। তারমধ্যে হাতে আঘাত লেগেছে। তো কি আর করার? চারদিন হসপিটালে কাটালাম। কাউকে জানাতে বারণ করেছি। তেমন কিছু তো হয়নি।

আয়না কোনো জবাব করলো না। অনুরাগ আয়নার সামনাসামনি গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো মনোযোগ আকর্ষণের জন্য কিন্তু পারলো না। আয়না কাপড় ভাঁজ করায় মনোযোগ দিল। অনুরাগ তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। একটু কাছাকাছি।
গলা কাত করে বলল

‘ বউয়ের সেবা পাওয়ার আশায় চলে এসেছি। নইলে আর ও অনেক কাজ।

কোনো জবাব এল না আয়নার কাছ থেকে।

‘ ফোন ও তো বন্ধ করে রেখে দিয়েছ। জানাতাম কিভাবে? কথা বলো না কেন?

আয়না চুপচাপ ঘর থেকে বের হয়ে গেল। অনুরাগ তার পেছন পেছন ছুটলো। ডাকল

‘ আমার বাচ্চাকাচ্চা যদি তোমার মতো হয়। তাহলে তো আমার জন্য খুব খারাপ হবে আয়নামতী। আমি কয়জনকে সামলাবো? আরেহ রাগ কমবে কখন ভাই?

আয়না চুপচাপ এগোলো রান্নাঘরের দিকে। অনুরাগ ও পিছু পিছু গেল কেউ না থাকায়। আয়না রান্নাঘরে ঢুকে সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে দিল। অনুরাগ ঠাঁই দাঁড়িয়ে রাখলো দরজার বাইরে।
শায়লা বেগমের কাছে গিয়ে বলল

‘ কথা বলছেনা।

‘ বলবে কেন? এমন সময় মেয়েরা অত চিন্তা নিয়ে থাকতে পারে না। তোমার বুঝা উচিত।

‘ আরেহ ফোন বন্ধ ছিল ওর। জানাতাম কি করে?

‘ আমাদের বাড়ির ফোনে জানাতে পারতে।

অনুরাগ চুপ করে থাকলো। চুপচাপ হেঁটে চলে গেল। রাতের খাওয়ার সময় ও তারদিকে একটু তাকায়নি আয়না। একটা মানুষ এতটা পাথর সেজে থাকতে পারে জানা ছিল না অনুরাগের। খাওয়া দাওয়া শেষে শরীর খারাপ লাগলো আয়নার। দোতলার বারান্দায় লাগানো ফুলগাছগুলো ভেসে আসা গন্ধে গা গুলালো। গলার কাছে আটকে রইলো কিছু একটা। যেন মুহূর্তেই সব উলটপালট করে দিয়ে গলগল করে বেরিয়ে আসবে। বিছানা গুছিয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়লো সে। বারান্দার চেয়ারে বসে থাকা মানুষটি ঘরে এল প্রায় অনেকটা সময় পার হওয়ার পর। ঘুমন্ত অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নারীটি একান্ত তার ভাবতেই মন খারাপ মুহূর্তেই দূর হয়ে গেল। ঠোঁটের কোণায় ফুটে উঠলো চমৎকার হাসি। সমস্ত চিন্তা যেন এক লহমায় কেটে গেল। কেটে গেল সকল অবসাদ,ক্লান্তি। বুক ভার হলো খুশির ঢেউয়ে, একারণে যে এই লৌহ মানবী তাকে হারানোর ভয় পায়। তার ব্যাথায় ব্যাথিত হয়। তার বুকে ঠাঁই পেলে শান্তি হয়। তার স্পর্শে রঙিন হয়। তার জন্য ফোঁটা ফোঁটা অভিমান জমিয়ে রাখে। আরেকটু বেশি আদুরে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য রাগ দেখায়। রাগ ভাঙানোর কাজটা খুবই সহজ মনে হলো অনুরাগের। এইতো ঝাপটে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে কপাল,কপোল ভিজিয়ে দিলেই রাগ পানি হয়ে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়বে অশ্রুকণা হয়ে। ঠিক তাই হলো।
অনুরাগ এক হাত দিয়ে শক্ত করে ধরতেই ঘুমোনোর ভান করা আয়নামতী শিউরে উঠলো। হাত ঠেলে দিল। অনুরাগ আর ও আষ্টেপৃষ্টে ধরলো। আলগোছে হাতটা রাখলো উঁচু হওয়া পেটের উপর। শান্ত হয়ে গেল আয়নামতী। হাতটা সরিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু পারলো না। শেষমেশ বলল

‘ ছাড়ুন আমাকে। দূরে যান। দমবন্ধ লাগছে আমার।

অনুরাগ সরলো না একদম। আরেকটু কাছে ঘেঁষে মুখ ঢেকে দেওয়া উটকো চুল সরিয়ে দিয়ে গুঁজে দিল কানের পেছনে। সারামুখে উষ্ণ চুম্বনে রাঙিয়ে দিয়ে বলল

‘ আমি এবার থেকে সব বলব তোমাকে। একদম পাক্কা৷ হেরফের হবে না কথার।

‘ সরুন। আমাকে বলতে হবে না কিছু। আমি তো শত্রু আপনার। আপনার যায় হোক আমার তাতে কি? কিচ্ছু যায় আসে না আমার। জেনেশুনেই তো আপনাকে বরণ করেছি। মরণ ও মেনে নিতে পারব। দূরে যান। আমার কাছে কি?

অনুরাগ চুপসে গেল। ভিজে থাকা চোখের কোণা বেয়ে টুপটাপ জল গড়িয়ে পড়লো আয়নার।

‘ কেন কাঁদছ? আমি কি করেছি?

আয়না জোরে ঠেলে দিল তাকে। বলল

‘ একদম ভালো সাজতে আসবেন না। এই আপনার কিছু হয়ে গেলে, কারো কিচ্ছু হবে না। কিচ্ছু হবে না। সব আমার হবে। আমি এত ঝুঁকি নিয়ে থাকতে পারছিনা। আপনি কেন আমায় এত চিন্তায় রাখেন?

‘ আমার তো কিচ্ছু হয়নি। তুমি আজকাল উলটপালট ভাবছ। মুড সুয়িং বলে ইংরেজিতে।

‘ একদম ইংরেজি শিখাতে আসবেন না আমাকে।

গরম চোখে তাকিয়ে বলল আয়না।

একটু করে হাসার চেষ্টা করলো অনুরাগ। বধূটিকে টেনে এনে পিষ্ট করলো বুকের সাথে। কপালে শক্ত চুমু দিয়ে মাথার চুলে এলোমেলো বিলি কেটে কেটে বলল

‘ ঠিক তো। ইংরেজি প্রফেসরকে কথায় কথায় ধমকানো মহিলাকে ইংরেজি শিখানোর সাধ্য কার?

আয়না নরম হয়ে গেল। বুকের সাথে লেপ্টে রইলো, হাতটা অনুরাগের পিঠের দিকে পড়ে রইলো। অনুরাগ ফিসফিস করে বলল

‘ দেখি অনেক আদর খেয়েছ। এবার আমার বাচ্চাটাকে একটু আদর করি। নইলে সে ও রেগে বুম হয়ে থাকবে। সবাই তো আবার রাগের ফ্যাক্টরী।

আয়নার চোখে তখন ঘুম। পাশ ফিরে বেশিক্ষণ শুতে পারেনা আজকাল। সোজাসুজি ঘুমাতে ভালো লাগে। অনুরাগের হাতটা তুলে উঁচু হয়ে আসা পেটে রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। অনুরাগের সেখানে কান লাগিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করলো একটি ছোট্ট প্রাণের উপস্থিতি। হৃদয় পুলকিত হলো অজানা খুশিতে, বাবা হওয়ার আকাঙ্ক্ষায়।
উদরে উষ্ণ স্পর্শের ছোঁয়ায় বারবার ঘুম ছুটে যাচ্ছিল আয়নার। শেষমেশ বলে উঠলো

‘ আমি ঘুমাচ্ছি প্রফেসর৷

অনুরাগ উঠে এল। সোজা হয়ে শোয়া আয়নার বুকে আলতো করে মাথা রেখে বলল

‘ আমি ও ঘুম আয়নামতী।

চলবে,,
টাইপিং মিসটেক হতে পারে। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here