আয়নামতী পর্ব-৪০

0
1876

#আয়নামতী
#পর্ব_৪০
#পুষ্পিতা_প্রিমা

দিনটা শুক্রবার। ঝড়ের দিন। গত রাতটাতে তুমুল ঝড় বয়ে গিয়েছে। তবে আজ সকালেই ঝড় থেমেছে। আকাশে মেঘেদের কুন্ডলী ভেসে বেড়াচ্ছে। ভেজা একঝাঁক কাকপক্ষী উড়ে যাচ্ছে পশ্চিমাকাশে। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক বারোটা । জুমাবার। শায়খ চৌধুরী সাদা ধবধবে পাঞ্জাবী ও পায়জামা পড়ে বাড়ির বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন। ছেলে ও তার সাথেই প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ পড়তে যায়।
আনহিতা এদিকওদিক ছোটাছুটি করতে করতে আতর খুঁজে পেল। তড়িঘড়ি করে আতর নিয়ে নেমে এল বসার ঘরে। চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে যখন শায়খ চৌধুরীকে দেখলো না আবার চলে গেল নিজের ঘরের দিকে। তখনি সামনা-সামনি পড়লো তার পুত্রবধূ। তিনি নিজ থেকেই বললেন

‘ বৌমা তোমার শ্বশুরকে কোথাও দেখেছ?এই আতরটা দেওয়ার ছিল।

আয়না বলল

‘ দেখিনি আমি। মনে হয় মসজিদে চলে গিয়েছে।

‘ অনুকে ছাড়া তো বের হয় না তোমার বাবা। আতর খুঁজেছিল আমার কাছ থেকে। একটু দাঁড়াবে না আশ্চর্য!

চামেলি এল হনহনিয়ে। বলল

‘ বড়োচাহেব আতর নিয়া যাইতে বলতেছে।

আনহিতা আতর দিয়ে দিল।

‘ ছোটচাহেবরে তাড়াতাড়ি যাইতে বলছে। আর নাকি দাড়াইতে পারবে না।

আনহিতা বলল

‘ আচ্ছা তুই যাহ। আমি বলে আসছি।

‘ আমি যাচ্ছি।

বলল আয়না। আনহিতা মাথা দুলালো। আয়না ঘরের দিকে পা বাড়ালো। অনুরাগ টুপি খুঁজে নিয়ে মাথায় টুপি পড়ার আগেই আয়না ঘরের দিকে এল। বলল

‘ আপনার বাবা নাকি দাঁড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়ি যান। মেয়ে নাকি যে সাজগোছ করতে এতক্ষণ লাগে। আপনার মা ও আপনার বাবার জ্বালায় অতিষ্ঠ। পুরুষ মানুষ এত জ্বালাময় কেন?

অনুরাগ ফিরলো তার দিকে। হেঁটে এল নরম পায়ে। টুপি বাড়িয়ে দিল। আয়না টুপিটা মাথায় পড়িয়ে দিতে দিতে বলল

‘ ওভাবে কি দেখছেন?

‘ আর কি? দেখছি। তোমাকে।

‘ অত দেখাদেখির কি আছে?

‘ দেখছি আর কি। কত সুন্দর করে তুমি’ আপনার বাবা আর আপনার মা বলো । বেশ সুন্দর লাগে জানো? তোমাকে মানায় ও।

আয়না তাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। হেসে ফেলল অনুরাগ।
আয়নার বুক ধুকপুক ধুকপুক করতে লাগলো। বলল

‘ আমি,,

‘ নাহ আমি অসুন্দর তো বলিনি। তোমার খারাপ ও লাগার কথা নয় এতে। কিন্তু তুমি তারপরও কি বলতে চাচ্ছ আয়নামতী ? বলো দেখি।

ছলকে উঠলো আয়নার দুচোখ। চট করে মনটা ভীষণ রকম খারাপ হয়ে গেল তার।

‘ নামাজের সময় হয়ে এসেছে। তাড়াতাড়ি যান।

বলেই চলে যেতে চাইলে অনুরাগ হাতটা ধরে আটকালো। নিজের কাছে টেনে এনে বলল

‘ এত তাড়া কেন? মাত্র বারোটা পনের কি বিশ। নামাজ শুরু হবে পৌঁনে একটার দিকে। কেন পালাচ্ছ আয়নামতী? কি বলতে চেয়েছ বলে যাও।

‘ আপনি আমার সাথে খুব খারাপ করছেন প্রফেসর।

অনুরাগ তার হাতটা আর ও শক্ত করে ধরলো। খুব কম দূরত্বে আয়নাকে দাঁড় করালো। আয়নার দুহাত গিয়ে ঠেকলো তার বুকে। দাঁত গিজগিজ করে অনুরাগ বলল

‘ আমার সাথে তুমি খুব খারাপ করছ না? ওনারা তোমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি হয়। হয় না?

আয়না ভেজা চোখে তাকালো। নাক কাঁপছে তরতরিয়ে।

‘ হয়।

‘ তাহলে?

এই তুমি কি আমাকে এখনো শাস্তি দিয়ে যাচ্ছ আয়নামতী ? এতদিন দূর থেকে দিতে, আর এখন কাছে এসে দিচ্ছ। বিশ্বাস করো আগে এতটা ও কষ্ট আমার হতো না, যতটা এখন হচ্ছে। কবে কমবে এই শাস্তির পরিমাণ? আর কত? তোমার ভাবি তোমার মাকে আম্মা ডাকে না? নাকি এখনো বলে যাবে তুমি তোমার ভাবির মতো আদর্শ বৌমা নও।

‘ দরজা খোলা কেউ চলে আসবে।

কিছুক্ষণ থামলো অনুরাগ। তবে এক হাত দিয়ে আগলে ধরা কোমরে ছাড়লো না। অতঃপর কিছুক্ষণ পর বলল,

‘ আসুক। আমার কিচ্ছু যায় আসে না। পাঞ্জাবির উপরের বোতাম তিনটা লাগিয়ে দাও। ধস্তাধস্তির চোটে খুলে ফেলেছ।

আয়না থেমে গেল। চোখ দুটো টুইটুম্বুর হয়ে আছে। চোখ টিপলেই গড়গড়িয়ে ঝড়ে পড়বে জল ফোটা।

‘ কি হলো দাও! না দিলে ও সমস্যা নেই। আমি পারব না এমন নয়। তবে বউ সামনে থাকলে নিজের কাজগুলো করতে ইচ্ছে হয় না।

আয়না হাত দিল বোতামে। জমে থাকা জল ইতোমধ্যে গড়িয়ে পড়েছে। আঙুল দিয়ে চেপে মুছে দিল অনুরাগ। নরম গালে পুরুষ আঙুলির আদুরে ছোঁয়া লাগতেই জল আর ও বেশি গড়াতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর ডুকরে উঠলো আয়না। আবারও হাসলো অনুরাগ। মাথাটা টেনে এনে রাখলো বুকে। বলল

‘ তোমাকে কিছু বলা ও যায় না আয়নামতী। কেঁদে ভাসাও। আগে তো এমন ছিলে না। তবে আমি বুঝতে ও পারি এর কারণ কি? ভালোবাসি বলে বকা দিলে আর সেটা সহ্য করতে পারো না। বিশ্বাস করো আমার বেলায় ও ঠিক এমন। কথাটা তো রেগে বলতে পারতাম আমি। রাগ হয়েছিল। কিন্তু বলিনি। কারণ আমি দেখালে তুমি ও রেগে কিছু বলতে যেটা আসলেই তুমি মিন করতে চাও না। তাই রাগ করিনি। কিন্তু আমার অনুরোধ আপনার বাবা আর আপনার মা কথাগুলো এবার বদলে ফেলো। আদেশ নয় অনুরোধ, আবদার। মনে থাকবে?

আয়না মাথা নাড়তে নাড়তে গুঁজে গেল তার বুকে। মিনিট কয়েক পর অনুরাগ মাথা তুললো তার। দীর্ঘ চুম্বন দিল ললাটে। তারপর মাথাটা নিচু করে বলল
‘ আমার পাওনাটা।
চোখে জল আর মুখে হাসি এল আয়নার। দুহাতে ধরলো অনুরাগের মুখ। পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে কোমল ঠোঁটজোড়া ছোঁয়ালো কপালে আর চোখের পাতায়।
অনুরাগ পিটপিট করে চোখ খুললো। একটা হাতের তালু মেলে বলল
‘ তবে এই মুহূর্তে হোক প্রতিজ্ঞা যা আমার তা তোমার।
আয়না নিজের হাতটা তুলে রাখলো অনুরাগের হাতের তালুর উপর। মিহি গলায় বলল
‘ আপনার যা, আমার তা। একটা কথা বলি?
‘ বলো
পাঞ্জাবির পকেট থেকে ওয়ালেটটা চট করে টেনে নিল আয়না। বলল
‘ এটা আমার ও। ঠিক বলেছি?
সশব্দে হেসে ফেলল অনুরাগ। বলল
‘ দেখি নাও।
‘ নাহ। আব্বা দিলে নিতে দেখতাম আম্মাকে। নিজে নিত না।
ওয়ালেটটা দিয়ে ফেলল সে অনুরাগকে।
অনুরাগ হেসে বের করলো একটি হাজার টাকার নোট। বলল
‘ কথা শুনবে আর বখশিশ পাবে। কি ঠিক আছে তো, বউটা?
হেসে ফেলল আয়না। বুকে মাথা রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ থাকবে। সাথে বোনাস ও বাড়বে। ঠিক আছে?
‘ তথাস্তু রাণীসাহেবা।

বিঃদ্রঃ

আজকে শেষ করতে পারিনি। সময় হয়ে উঠেনি। এটুকু দিলাম। দুঃখিত পাঠক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here