উপন্যাস প্রপর্ণ পর্ব-৩২

0
2508

(আগেই বলেছি পর্ব কিন্তু খুব অগোছালো🙂)

#উপন্যাস_প্রপর্ণ(৩২)
#কুরআতুল_আয়েন

কয়েকদিন থেকে বেলীরা চলে আসে।ছোট্ট শিউলি চলে আসায় জাবেদার বুক যেনো ফাঁকা হয়ে গিয়েছে।একদফা কান্না করেও জাবেদা মনে যেনো কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেন না।বেলী একবার চেয়েছিলো থেকে যেতে।কিন্তু বুরাগের কড়া চাহনী দেখে বেলী আর কিছু বলার সাহস পায় নি।অগ্যাতা তাদের সবাইকেই রওনা দিতে হয়।আফিয়া ছোট্ট শিউলিকে কোলে রেখে বেলী আর বুরাগকে সময় কাটানোর সুযোগ করে দিয়েছেন।সব মিলিয়ে তারা সবাই খুব ভালোভাবেই পৌঁছে যায়।

বাসার সবাই শিউলিকে পেয়ে মহাখুশি।তার উপর বাসায় ছোট্ট শিশু থাকাও অনেক আনন্দের।কোহিনূর তো ছোট্ট শিউলিকে দেখেই চিল্লিয়ে বলে উঠলেন,

–“এতো আমাদের আরেক শিউলি।দুটো মানুষ এতো মিল হয় কীভাবে।”

বেশ অনেকক্ষণ সময় নিয়ে কোহিনূর ছোট্ট শিউলিকে আদর করলেন।সেই সাথে হাসি খুশি তো আছেই।তারা নিজেদেরকে অনেক বড় বড় মনে করছে।কারণ,তারা একদিক দিয়ে ফুপি আর খালাও হয়েছে।ছোট্ট শিউলির উপর সবার থেকে মনে হয় তাদের এই অধিকার অনেক বেশি।খুশি শিউলির গাল টেনে ধরে তো আবার নাক চেপে ধরে।এতে করে শিউলি যেনো চিল্লিয়ে কেঁদে উঠে।

শিউলিকে ঘুম পাড়িয়ে বেলী ঠিকভাবে শুইয়ে দিলো।আলমারি থেকে একটা নাইটি বের করে ফ্রেশ হয়ে পড়ে আসলো।ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে বিনুনি করছে।বুরাগ এতোক্ষণ বাহিরে ছিলো।শিউলির থাকার জন্য আলাদা একটা বেবি বেড সেট নিয়ে এসেছে।জ্যামের জন্য অনেকটা দেরি হয়ে যায় তার।তাই,বাসায় আসতে অনেকটা লেইট হয়ে গিয়েছে।

বেলী বুরাগকে দেখে বিনুনির লাস্ট অংশ টা করে বেঁধে নিলো।বুরাগ ততক্ষণে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।মিনিট দশেক সময় নিয়ে বুরাগ ফ্রেশ হয়ে আসলো।এসেই বুরাগ বেলীকে পাত্তা না দিয়ে মেয়ের দিকে এগিয়ে গেলো।মেয়েকে মনের স্বাদ মতো চুমু খেয়ে বেলীর দিকে এগিয়ে গেলো।বেলী মুখ ভেঙচি মেরে বারান্দায় চলে গেলো।

বুরাগ হেসে বেলীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।এমতাবস্থায় বললো,

–“বেলী তুমি হিংসা করছো?তাও আবার নিজের মেয়েকে।”

বেলী ভ্রু কুটি কুঁচকালো।তবুও কোনো কথা বলে নি।বুরাগ পুনরায় বললো,

–“কি ব্যাপার বেলী!চুপ করে আছো কেনো তুমি।”

বেলী লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,

–“আমাকে ভালোবেসেছেন কবে থেকে আপনি??”

বুরাগ আগে থেকেই জানতো বেলী তাকে এই প্রশ্ন টা করবে।যখন কেউ মনের কথা প্রকাশ করে তখনি এই প্রশ্ন টা করা মেয়েদের কাছে খুব কমন হয়ে যায়।মনে হয় এই প্রশ্ন টা না করলে তাদের মনে শান্তি মিলে না।বেলীকেও ঠিক এইরকম মনে হচ্ছে বুরাগের কাছে।তাই,বুরাগ কিছুটা মজার ছলে বললো,

–“তোমাকে তো আমি ভালোবাসি না বেলী।কি যে বলো না তুমি!তোমাকে কেনো ভালোবাসতে যাবো।শুধু স্বামী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।”

বেলী আহত দৃষ্টি নিয়ে তাকালো বুরাগের দিকে।বুরাগের মুখে এইরকম একটা কথা শুনবে তা ভাবনার বাহিরে ছিলো।চোখের কার্ণিশে পানিরা চিকচিক করছে।নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো,

–“তাহলে!ওইদিন কেনো বলেছিলেন আপনি এইসব কথা?তার মানে ওইদিন আপনি মিথ্যা বলেছিলেন আমাকে।”

–“ওইদিন অত্যধিক খুশির ঠেলায় মুখ ফঁসকে বলে ফেলেছিলাম।আর,তুমিও বেলী ব্যাপার টা সিরিয়াস ভেবে নিলে।তুমি খুব বোকা বেলী।খুবই বোকা।”

বেলী কিছু না বলে গুটিগুটি পা’য়ে বারান্দা থেকে রুমে চলে আসলো।বুরাগের কথাগুলো শুনে বেলী নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না।সে তো ভেবেছিলো সব ঠিক হয়ে গিয়েছে।তার মানে কিছুই ঠিক হয় নি।
বেলী বিছানায় শুয়ে শিউলিকে বুকে আগলে নিলো।শিউলির কপালে একরাশ চুমু খেয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।কিন্তু,বন্ধ চোখ দিয়ে অজোরে পানি পড়ছে।আর,ধরে রাখতে পারছে না নিজেকে।

বুরাগ বেলীকে এইভাবে দেখে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসলো বেলীর দিকে।বেলীকে বিছানা থেকে টেনে তুললো।এমন হওয়ায় শিউলির ঘুম ভেঙে যায়।সাথে সাথেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠে।শিউলির কান্না দেখে বুরাগ বেলী দু’জনেই সেদিকে তাকালো।বুরাগ শিউলির কান্নামাখা ছোট্ট মুখটায় তাকিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো,

–“তোর এখনেই কান্না করতে হলো।কতো কষ্ট করে তোর মা’কে একটু কাঁদিয়েছি ভেবেছিলাম কান্নাটা থামিয়ে আদর করবো মনভরে।কিন্তু তার আগেই তুই ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠলি।দুষ্টু মেয়ে!”

বেলী চোখের পানিটা মুছে নিয়ে শিউলিকে কোলে তোলে নিলো।রুমে হাঁটছে আর শিউলিকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু,শিউলি কান্না থামার নামেই নিচ্ছে না,এখনো আগের মতো কেঁদেই যাচ্ছে।বুরাগ তা সহ্য করতে না পেরে কড়া গলায় বললো,

–“মেয়েটার খিঁদে পেয়েছে বেলী।আর তুমি কিনা,না খাইয়ে ওকে নিয়ে হাঁটছো।ওকে তাড়াতাড়ি ফিড করাও।ওর কান্না যেনো আমি আমার কানে দ্বিতীয় বার আর না শুনি।শুনলে কিন্তু তোমার অবস্থা নাজেহাল হয়ে যাবে।”

বুরাগের কড়া গলার কথা শুনলেই বেলীর দু’চোখ ভরে আসে।এখনো তার ব্যতিক্রম হয় নি।বুরাগের এরূপ কথায় তাড়াতাড়ি করে বিছানায় বসে ফিড করাতে লাগলো।বুরাগে সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বারান্দায় চলে গেলো।বেলী সেদিকেই তাকিয়ে আছে।

বুরাগ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আর দূরের বিল্ডিংয়ের আলো গুলো দেখছে।তার মনে কত কথা উঁকিঝিঁকি বাইছে।আজকে স্নিগ্ধার কথা খুব মনে পড়ছে তার।স্নিগ্ধাকে এতো ভালোবেসেও তাকে ঠকিয়েছে।আর,অন্যদিকে বেলী বুরাগের একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কি কান্নাটাই না করছে।কিন্তু,তার মন জুঁড়ে এখন শুধু বেলীর অস্তিত্ব।সেখানে স্নিগ্ধার কোনো অংশ নেই।এমনকি বেলীকে ছাড়া সে একদম অচল।তাকে,বাবা হওয়ার আনন্দ দিয়েছে বেলী।জীবনের শ্রেষ্ঠ এক অনুভূতি।বুরাগ এতোকিছু ভাবনার মধ্যেই খেয়াল করলো বেলী শিউলিকে ঘুম পাড়িয়ে ঠিকভাবে শুইয়ে দিলো।এমনকি নিজেও গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো উল্টো দিক হয়ে।বুরাগ বুঝতে পেরেছে বেলী তার কথায় খুব আঘাত পেয়েছে।কিন্তু,বোকা বেলী এইটাই বুঝলো না বুরাগ এইসব মজা করে বলেছে।

বুরাগ বিছানার সামনে এগিয়ে গিয়ে শিউলিকে হালকা করে টেনে এক সাইডে নিয়ে নিলো।দু’পাশে বালিশ দিয়ে মাঝখানে গিয়ে নিজে শুয়ে পড়লো।পিছন দিক থেকে বেলীকে জাপটে ধরে শুয়ে রইলো।এমন হওয়ায় বেলী চট করে পিছন ফিরে তাকালো।ভ্রুকুটি কুঁচকে বুরাগের দিকে তাকিয়ে বললো,

–“ছাড়ুন আমাকে!আর শিউলিকে মাঝখানে দিন।না হলে নিচে পড়ে যাবে।”

বুরাগ বেলীকে আরো একটু জাপটে ধরে বললো,

–“তুমি কি বোকা বেলী!এতো বড় বড় বালিশ দিয়ে রেখেছি আর তুমি বলছো পড়ে যাবে।আমি কি এতোটাই কেয়ারলেস বাবা নাকি!যে মেয়েকে এমনভাবে শুইয়ে রাখবো যাতে সে নিচে পড়ে যায়।ওকে ওর মতো ঘুমোতে দাও।আর আমাকে আমার মতো তোমার সাথে থাকতে দাও।”

বেলী আর কিছু বলে না।চুপটি করে বুরাগের থেকে সরে আসতে নেয়।বুরাগ বেলীকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো।বেলীর মুখটা আঁকড়ে ধরে বললো,

–“খুব রাগ হয়েছে দেখছি।আমাকে পাত্তাই দিচ্ছো না।”

বেলী বুরাগের দিকে একপলক তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে ফেললো।চোখে তার পানি টলমল করছে।বুরাগ বেলীকে এইভাবে দেখেও কিছুই বলে নি।হুট করেই বেলীর নাইটির ফিতা টা খুলে দিলো।বেলী বুরাগের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই বুরাগ নাইটির পরের অংশ টা খুলে দেয়।নিজেও টি-শার্ট টা খুলে পাশে রেখে দেয়।বেলীর শরীর টায় এখন শুধু কালো ইনারটা জড়িয়ে আছে।বুরাগ সেদিকে একবার তাকিয়ে বেলীর গলায় মুখ ডুবিয়ে নিজের সাথে এক করে নিলো।বেলীর প্রথমে অভিমান কাজ করলেও ঠিকই পরে সেও বুরাগের ছোঁয়ায় ধরা দিয়েছে।বুরাগের সাথে নিজেকে মিশিয়ে রেখেছে।বুরাগ’ ভালোবাসি বেলী ‘এই কথাটা একটুপর পর বেলীর কানে এসে ফিসফিসিয়ে বলছে।আর প্রতিবারই বেলী কেঁপে উঠেছে।প্রথমে তার বিশ্বাস না হলেও পরে ঠিকই বিশ্বাস করেছে,বুরাগ তাকে ভালোবাসে।তার উপর বুরাগ বলেও দিয়েছে সে একটু আগে মজা করেই তাকে এইসব বলে ক্ষেপিয়েছে।বুরাগের মুখে পুনরায় ভালোবাসি কথাটা শুনে বেলী লজ্জায় কুঁকড়িয়ে যায়।এতোক্ষণ লজ্জা না লাগলেও এখন খুব লাগছে।
—-
সকাল হতে না হতেই হাসি আর খুশি দৌড়ে চলে আসলো বুরাগের রুমে।বুরাগ তখন শিউলিকে কোলে নিয়ে কথা বলছিলো।বেলী গোসলে যাওয়ার পর পরেই শিউলি কেঁদে উঠে।বেলী শিউলির কান্নার আওয়াজ পেয়ে বাথরুম থেকেই চেঁচিয়ে বুরাগকে ডেকে তুললো।দরজা খুলে মাথাটা বের করে শিউলিকে সামলাতে বললো।অগ্যাতা বুরাগ ঘুম থেকে উঠে দুচোখ কচলে শিউলিকে কোলে নিয়ে কথা বলতে শুরু করে দিলো।

হাসি,খুশি এসেই শিউলিকে কোলে নেওয়ার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে।বুরাগ দু’জনের এতো কৌতূহল দেখে না হেসে পারলো না।শিউলিকে হাসি আর খুশির মাঝখানে শুইয়ে দিলো।দু’জন শিউলিকে এতো কাছে পেয়ে গাল টিপা,নাক চেপে ধরা বা হাত ধরে খেলা শুরু করে দিয়েছে।ছোট্ট শিউলিও এবার কান্না থামিয়ে তাদেরকে দেখতে লাগলো।চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।আর,হাতের দু’আঙুল মুখে দিয়ে চুষতে লাগলো।খুশি তা দেখে চেঁচিয়ে বললো,

–“জানিস!হাসি আমিও নাকি এইভাবে আঙুল চুষে খেতাম।”

–“তুই খেতিস মানে আমিও খেতাম।কারণ,আমরা দু’জন তো জমজ।তার মানে,তুই যেটা করতি সেটা আমিও করতাম বা আমি যেটা করতাম সেটা তুইও করতি।”

–“জমজ হয়েছি বলে যে একরকম আচরণ করতে হবে তা তোকে কে বলেছে শুনি।এইরকম আঙুল চুষে শুধু আমিই খেয়েছি।তুই না।”

–“একদমই না খুশি।তুই মিথ্যা বলছিস।বুরাগ ভাইয়ার বাবুটাকে এখন তোর মতো করে ফেলতে চাইছিস।কেনো রে!আমি কি ছোটবেলা আঙুল চুষে খাই নি।সবাইকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেই বলবে আমিও খেয়েছি।”

এইরকম অনেক কথায় হাসি,খুশি বলতে থাকে।একপর্যায়ে তারা ঝগড়ার দিকে চলে যায়।বুরাগ বারান্দায় দাঁড়িয়ে দু’বোনের ঝগড়া দেখছে আর হাসছে।কিন্তু,ছোট্ট শিউলি এইসব দেখে ঠোঁট ভেঙে কেঁদে উঠলো।এমনভাবে কান্না করতে লাগলো যার প্রকোপে ছোট মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে।শিউলির কান্নার আওয়াজ পেয়ে বুরাগ দৌড়ে আসলো।হাসি,খুশিও চুপ হয়ে গিয়েছে।বুরাগ শিউলিকে কোলে নিয়ে বললো,

–“সব ছোট বাচ্চারাই ছোট বেলায় আঙুল চুষে খেয়েছে।এমনকি আমিও খেয়েছি।”

হাসি ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে বললো,

–“বলেছিলাম না আমি।শুধু এতোক্ষণ বাহাদুরি দেখালি তুই।”

খুশি কিছু না বলেই মুখ ভেঙচি মেরে চলে গেলো।তার এখন হাসিকে অসহ্য লাগছে।সুযোগ বুঝে এইটার প্রতিশোধ নিয়ে নিবে হাসির থেকে।
—-
রায়ান খুব দ্রুত হেঁটে লিফটের দিকে এগিয়ে গেলো।আর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তাকে একটা মিটিং এ জয়েন করতে হবে।লিফটের বাটন প্রেস করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।মিনিট পাঁচেক পর লিফট আসতেই রায়ান উঠে পড়লো।কিন্তু,বিপত্তি বাজলো লিফটের ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা অতি সুন্দর মেয়েটিকে দেখে।কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো মেয়েটির সামনে।পরে হুশ আসতেই তাড়াহুড়ো করে লিফটের ভিতরে চলে গেলো।রায়ান আড়চোখে অনেকবার তাকিয়েছে মেয়েটির দিকে।তবে রায়ান ভেবে পাচ্ছে না তার অফিসে এই মেয়ে কি করছে।তার উপর মেয়েটা বাঙালি।চেহারার গড়নও অনেক সুন্দর।দেখলেই চেয়ে থাকতে মন চাইবে।হুট করেই রায়ানের খুশির কথা মনে পড়ে যায়।আচমকাই বুকে একটা তীব্র ব্যথা অনুভব করতে লাগলো।এমন হওয়ায় রায়ান নিজেই নিজেকে ধিক্কার জানালো।পরমুহূর্তেই মনে মনে আওড়াতে লাগলো,

–“খুশি তো অনেক ছোট।ওর সাথে আমার বয়সের অনেক পার্থক্যও রয়েছে।তার উপর খুশি আমাকে সহ্যই করতে পারে না।কিন্তু,এইরকম একটা অপরূপা মেয়ের সামনে খুশি তো কিছুই না।তবে,খুশির কথা মনে পড়তেই আমার বুকের ভিতর টা কেনো এতো হাসফাঁস করছে।ইচ্ছে করছে খুশির কাছে এক দৌড়েই চলে যাই।”

রায়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।এখন তার এই মেয়ের দিকে তাকাতেও অসহ্য লাগছে।পকেটে হাত গুঁজে দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
___
মিটিং শেষ করে রায়ান নিজের কেবিনের বড় থাইগ্লাস টার দিকে এগিয়ে গেলো।বারবার শুধু খুশির চেহারাটা চোখে ভাসছে।এমনকি মিটিংয়েও মন দিতে পারে নি।রায়ান থাইগ্লাস টা দিয়ে বিদেশি মানুষদের আনাগোনা দেখছে।রাস্তায় নেই কোনো যানজট।সবাই নিজেদের মতো হাঁটছে।হঠাৎ করে টেলিফোন বেজে উঠায় রায়ান এইসব ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে টেলিফোনের কাছে এগিয়ে গেলো।টেলিফোন কানে চেপে ধরে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

–“ওকে।”

তার কিছুক্ষণ পরেই কেবিনের দরজার আওয়াজ পেয়ে রায়ান মাথা নিচু করেই বললো,

–“কাম।”

অপাশ থেকে মিষ্টি এক মেয়েলী কন্ঠের আওয়াজে রায়ান চট করে মাথা উপরে তুলে তাকালো।লিফটের ওই মেয়েটিকে দেখে রায়ানের ভ্রুকুটি কুঁচকে গেলো।কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললো,

–“প্লিজ সিট।”

মেয়েটি কাঁপা কাঁপা হাতে চেয়ার টা টেনে বসে পড়লো।শুকনো কয়েকটা ঢোক গিলে নিজেকে ঠিক করে নিতে লাগলো।

রায়ান কিছুক্ষণ মেয়েটার হাবভাব দেখে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই মেয়েটি এক চুমুকেই গ্লাসের পানিটুকু খেয়ে নিলো।রায়ান আড়চোখে তাকিয়ে বললো,

–“তুমি তো বাঙালী।তাহলে আমরা বাংলায় কথা বলতে পারি।তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি কিছু নিয়ে চিন্তিত।আচ্ছা তোমার নাম কি!”

মেয়েটি ভাঙা গলায় উত্তর দিলো,

–“জ্বি!আমার নাম অনামিকা।”

–“তা তুমি এইখানে কি করছো?”

মেয়েটি এবার ডুকরে কেঁদে উঠলো।এমন হওয়ায় রায়ান কিছুটা হকচকিয়ে যায়।রায়ান ভয়ার্ত গলায় বললো,

–“কি হয়েছে তোমার!এইভাবে কান্না করছো কেনো।”

অনামিকা মেয়েটি ক্রন্দনরত গলায় বলতে লাগলো,

–“আমি খুব বিপদে পড়ে আপনার কাছে এসেছি।বাংলাদেশ থেকে আমাকে পাচারকারী রা এইখানে অচেনা একটা শহরে নিয়ে এসেছে।আমি কোনোমতে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছি।একদিন হঠাৎ রাস্তায় এক মহিলার সাথে দেখা হয়।তারপর উনাকে সব বলার পর উনি আমাকে নিজের বাসায় নিয়ে যায়।প্রায় একসপ্তাহের মতো উনার কাছেই ছিলাম।এমনকি এখনো আছি।”

রায়ান চোখ পিটপিট করে বললো,

–“ভেরি সেড!এতো কিছু হয়ে গেলো তোমার সাথে।তো!তোমার বাবা মা কি কিছুই জানেন না।”

–“আমার বাবা মা কেউ নেই।আমি এতিমখানায় বড় হয়েছি।তবে,আমি পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি।”

–“হুম বুঝলাম।এখন আমার কাছে কেনো এসেছো তুমি।”

–“আমি আপনার কথা অনেক শুনেছি।তার ভিত্তিতেই আমি আপনার কাছে এসেছি একটা চাকরির খোঁজে।চাকরিটা আমার খুবই দরকার।দয়া করে আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না প্লিজ।”

রায়ান চুপ করে বসে রইলো।তার খুব খারাপ লাগছে মেয়েটির জন্য।রায়ান ঠিক করে নিয়েছে মেয়েটিকে তার পিএ করে নিবে।যেই ভাবা সেই কাজ।কাল থেকে জয়েন করতে বলেছে মেয়েটিকে।যাক!অত্যন্ত মেয়েটাকে সাহায্য তো করতে পেরেছে।রায়ানের ভেবেই অনেক ভালো লাগছে।
______
কেটে যায় আরো একমাসের মতো।এই একমাসে ছোট্ট শিউলি কিছুটা বড় হয়েছে।দেখতে আরো সুন্দর হয়েছে।বেলীর সামনে এইচএসসি এক্সাম।তাই,বুরাগ কড়া গলায় বলে দিয়েছে এখন শুধু পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতে।আর,শিউলিকে বুরাগেই সামলায়।সাথে বাড়ির প্রতিটি সদস্য তো আছেই।তাই,বেলী নিশ্চিন্ত মনে পড়ায় মনোযোগ দিলো।

অন্যদিকে,করিম সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর পালিয়ে থাকবে না।সে কালকেই চলে যাবে তার নিজ ঠিকানায়।তার যাওয়ার কথা একমাত্র তার মা জানে।করিম তার মা’কে কড়া গলায় না করে দিয়েছে তার আসার কথা টা গোপনীয় রাখতে।তবে,করিমের জন্য সেখানে কি অপেক্ষা করছে তা করিম নিজেও ভাবতে পারছে না।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here