উপন্যাস প্রপর্ণ পর্ব-৩১

0
2577

(কয়েকদিন লিখালিখি থেকে বিদায় নিলাম।তবে,খুব অল্প সময়ের জন্য।)

#উপন্যাস_প্রপর্ণ(৩১)
#কুরআতুল_আয়েন

নিজের মেয়েকে প্রাণভরে দেখে বেলী এখন ঘুমের দেশে তলিয়ে আছে।জাবেদা বাচ্চাটিকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন।বাচ্চাটিকে দেখে সবাই খুশিতে কেঁদে দিয়েছে।তার একটু দূরেই বুরাগ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সামনে এগিয়ে যেতে সাহস পাচ্ছে না।চোখ দুটো শুধু আটকে আছে সাদা তোয়ালে পেঁচানো বাচ্চাটির দিকে।এমনকি বাচ্চাটির মুখও দেখতে পাচ্ছে না।আফিয়া জাবেদার কোল থেকে নিয়ে বুরাগের দিকে এগিয়ে গেলেন।বুরাগ এবার পুরোপুরি দেখতে পেয়েছে।দেখেই চমকে উঠলো।আনমনেই বুরাগ বলে উঠলো,

–“এতো সুন্দর বাচ্চা আমার।”

আফিয়া আহাম্মক হয়ে গিয়েছেন বুরাগের কথা শুনে।একরাশ হতাশা নিয়ে পিছন ফিরে তাকালেন জাবেদা আর সুমনার দিকে।তাঁরা দু’জনেই বুরাগের এরূপ কথায় হাসছেন।তবে,আফিয়া মুখের স্বাভাবিক ভঙিমা পাল্টিয়ে এক ভ্রু উঁচু করে বললেন,

–“এইসব কি ধরনের কথা বুরাগ।তুমি না বাবা!বাবা হয়ে কি কেউ এইসব কথা বলে।”

বুরাগ অসহায় চোখে তাকালো মা’র দিকে।সে ভুল কি বলেছে।আর বলেছে তো কি হয়েছে!সে তো তার মেয়েকেই বলেছে।ভালো করে তাকিয়ে আবারও দেখে নিলো সাদা তোয়ালে পেঁচানো ফুটফুটে বাচ্চাটিকে।আফিয়া ছেলের মতিগতি দেখে হেসে ফেললেন।ধীর গতিতে কোলে এগিয়ে দিতে দিতে বললেন,

–“নিজের কোলে নিয়ে দেখো মনভরে।তোমারই তো মেয়ে।”

সাথে সাথেই বুরাগ হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।হাত দুটো অসম্ভব কাঁপছে।সেই সাথে চোখেও পানি টলমল করছে।মনে হচ্ছে এই গড়িয়ে পড়ে যাবে।আফিয়া বুরাগের কোলে দিয়ে ছোট ছোট হাত দুটোতে চুমু খেয়ে পুনরায় বললেন,

–“মা-শা-আল্লাহ!মা-শা-আল্লাহ!খুব ভালো থাকো তুমি সোনা।জানো তুমি কার কোলে উঠেছো!বাবার কোলে।এই যে তোমার বাবা।”

বুরাগ নিষ্পলক চেয়ে আছে বাচ্চাটির দিকে।কপালে গভীর একটা চুম্বন খেলো।সেই সাথে,নাকে আর গালেও।চোখ দিয়ে কয়েকটা ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লেও ঠোঁটে তার তৃপ্তির হাসি।হুট করেই বুরাগের বেলীর কথা মনে পড়ে যায়।মেয়ের থেকে চোখ ফিরিয়ে তাকালো ঘরের দরজার দিকে।কাউকে কিছু না বলে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে।আফিয়া বুরাগকে না করতে গেলেই জাবেদা হাত দিয়ে ইশারা করে আফিয়াকে আটকে দেন।যার ফলে,আফিয়া আর কিছু বলেন নি।অবশ্য,তিনিও চান তারা যেনো একটু আলাদা সময় কাটায়।অনেক তো মান অভিমানের খেলা চলেছে এবার না হয় সেগুলো মিটিয়ে নিয়ে তারা সুখে থাকুক।

বুরাগ নিঃশব্দে আঁতুড়ঘরে ঢুকে পড়লো।প্রথমেই তার চোখ পড়লো তার প্রেয়সীর দিকে।কতোদিন পর দেখলো তার প্রেয়সীর মুখটা।চোখ মুখেই বলে দিচ্ছে বেশ ক্লান্ত।বুরাগ বেলীর পাশে বসে বেলীর শুষ্ক ঠোঁট দুটোতে চুমু খেলো।এমন হওয়ায় বেলী কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো।তার ঘুমের গভীর রেশ অনেক আগেই কেটে গিয়েছে।চোখ বন্ধ করে শুধু শুয়ে ছিলো।তবে,এই স্পর্শ টার সাথে সে পরিচিত।এই স্পর্শ যে তার ভালোবাসার মানুষের স্পর্শ।এমনকি বুরাগের গা’য়ের মাতাল করা গন্ধ টাও বেলীর নাকে এসে লাগছে।তাহলে!লোকটা এসেছে তার কাছে।বেলীর মনে একরাশ অভিমান এসে ভিড় করলো।চোখ বন্ধ করেই মুখ টা ফিরিয়ে নিলো।সে তাকাবে না বুরাগের দিকে।কেনোই বা তাকাবে!এই কয়েকটা মাসে কি একবারও তার খোঁজ নিয়েছে।কেমন আছে সে!ভালো না বাসুক বউ তো হয়।অত্যন্ত সেই দিক থেকে একটি বার খবর নেওয়া উচিত ছিলো।বেলী কথা গুলো ভাবছে আর নিঃশব্দে কান্না করছে।

বুরাগ মুচকি হেসে বেলীর কানের কাছে মুখ নিয়ে গেলো।উন্মুক্ত গলা আর বুকের উপরের অংশ টায় মনভরে চুমু খেলো।প্রত্যেক টা চুমুতেই বেলী শিউরে উঠছে।তাও,সে নিজেই নিজের মনের সাথে পণ করে নিয়েছে তাকাবে না বুরাগের দিকে।বুরাগ বেলীর মতিগতি বুঝতে পেরে বললো,

–“বেলী!এই বেলী!তাকাও আমার দিকে।না তাকালে আমার ভালোবাসার কথা কীভাবে বলবো বলো!তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতেই চাই আমার ভালোবাসার কথা।”

বেলী ডুকরে কেঁদে উঠলো।বুরাগের মুখে ভালোবাসার কথা শুনার জন্য সে কবে থেকেই চাতক পাখির মতো অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে ছিলো।সেই দিনটা যে আজকেই তা বেলী ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারে নি।সে তো ভেবে নিয়েছিলো বুরাগ তাকে কখনো ভালোবাসার কথা বলবে না।শুধু স্বামীর দায়িত্ব,কর্তব্য পালন করে যাবে।কিন্তু,বেলী ভুল ছিলো।বুরাগও তাকে ভালোবাসে।বুরাগের ভালোবাসা পেতে সে সক্ষম হয়েছে।

বুরাগ বেলীর গলায় মুখ গুজে নিয়ে বলতে লাগলো,

–“তাকাবে না আমার দিকে!মানছি খুব কষ্ট দিয়েছি তোমাকে!তুমি যতোবারই ভালোবাসার কথা জানতে চেয়েছো ততবারই আমি তোমাকে এড়িয়ে গিয়েছে।তবে,এইখানে কিন্তু একটা কারণ আছে বেলী!আমি চেয়েছিলাম আজকের দিনেই আমি তোমাকে আমার ভালোবাসার কথা বলবো।আমার সন্তানকে কোলে নিয়ে।দেখো!দিনটা চলেও এসেছে।আর তুমি!অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছো।এই বেলী!ভালোবাসি তো।খুব ভালোবাসি।এবার একটু তাকাও না আমার দিকে।”

বেলী না চাইতেও বুরাগের দিকে তাকালো।ভেঙে গেলো নিজের সাথে করা পণ।নিজেকে খুব সুখী মনে করছে।ইচ্ছে করছে বুরাগের বুকে গিয়ে মুখ লুকাতে।উঁহুহু!তবে,এতো সহজে বেলী কিছুতেই বুরাগের কাছে ধরা দিবে না।একটু না জ্বালানো পর্যন্ত।
বেলী বুরাগের থেকে সরে এসে নিজ প্রচেষ্টায় উঠে বসলো।অশ্রুসিক্ত চোখে বুরাগের দিকে একবার তাকিয়ে মেয়েকে নিজের কোলে তোলে নিলো।বুরাগ কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।তবে,তার ভিষণ কষ্ট হচ্ছে।বেলী শান্ত কন্ঠে বললো,

–“চলে যান এইখান থেকে!আপনার আশেপাশে আমি আর আমার মেয়ে থাকতে চাই না।”

বুরাগ রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো বেলীর দিকে।বেলী প্রথমে থতমত খেয়ে গেলেও পরে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো।আমতাআমতা করে বললো,

–“এইরকম বাঘের মতো তাকিয়ে আছেন কেনো?মনে হয় খেয়ে ফেলবেন।শুনোন আমি ভয় পাই না।আমার দল ভারী হয়েছে,মেয়েকে আমি আমার দলে নিয়ে আসবো।”

বুরাগ অনেক কষ্টে হাসি চাপা দিয়ে রেখেছে।বেলীর আরো নিকটে গিয়ে বললো,

–“তাহলে তো আমার দল ভারী করার জন্য আরেক টা বাচ্চা নেওয়া দরকার।প্রসেস কি এখন থেকেই শুরু করে দিবো।নাকি সময় লাগবে তোমার।”

বেলী চোখ,মুখ কুঁচকে ফেলেছে।মনে মনে বুরাগকে একশো বকা দিয়েও শান্তি পাচ্ছে না।বেশরম!বেশরম!খুব বেশরম।

বুরাগ বেলীর নাকে ছোট করে একটা কাঁমড় বসিয়ে দিলো।ব্যথায় বেলী নাক চেপে ধরে।বুরাগ গলা পরিষ্কার করে বললো,

–“তোমার দল না বলো আমার দল ভারী হয়েছে।মেয়েরা সবসময় বাবার জন্য পাগল থাকে।দেখবে!আমার মেয়ে আমার দলেই আসবে।তোমার দলে না।”

–“চলে যান!এইখান থেকে।”

–“চলে গেলে তোমাকেও নিয়ে যাবো।”

–“আমি যাবো না আর আপনার সাথে।আমি এখানেই থাকবো।”

বুরাগ ঠোঁট কাঁমড়ে হেসে দিলো।কিছুটা আমোদিত গলায় বললো,

–“থাকো!না করেছে কে!তোমাকে বলার ইচ্ছাও ছিলো না আমার।বাধ্য হয়ে বলেছি আর কি।শুধুমাত্র মেয়ের জন্য।এতো ছোট বাচ্চাকে তো মা ছাড়া করতে পারি না।আমি এতোটাও পাষাণ না।তাই তো তোমাকেও নিয়ে যাবো!তবে,সেটা শুধুমাত্র আমার মেয়ের জন্য।”

বেলীর চোখ দুটো টলমল করছে।মেয়েকে বুকে আগলে রেখে ক্রন্দনরত গলায় বললো,

–“আপনি খুব খারাপ।খুব খারাপ!শুধু আমাকে কষ্ট দিতে জানেন।খুব তো বলেছিলেন,আমি যেনো আপনার আশেপাশে না থাকি।সেটাই তো করেছি।তাহলে নিতে চাচ্ছেন কেনো?আর,আমার মেয়েকে আমি আমার কাছেই রাখবো।কাউকে দিবো না।”

বেলীর কান্না দেখে বুরাগের নিজেকে এখন খুব অপরাধী লাগছে।জাপটে গিয়ে বেলীকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো।বেলীর ঘন কালো চুলে চুমু খেয়ে বললো,

–“আমাকে ক্ষমা করে দাও বেলী!রাগের মাথায় যা মুখে এসেছিলো তাই বলেছিলাম।আমি তোমাদের কাউকে ছাড়া থাকতে পারবো না।প্লিজ বেলী এই কষ্ট টা দিও না আমাকে।এই কয়েকমাসে তোমাকে ছাড়া আমি কীভাবে থেকেছি তা একমাত্রই আমিই জানি।এখন বলতে পারো আমি তো তোমার কোনো খোঁজ নেই নি।এটা ভুল বেলী!আমি তোমার অগোচরে,মা’র থেকে তোমার খবর নিয়েছি।আর দেখো!আমি এইখানে আসার পরে জেনেছি তোমার পেইন উঠেছে।তার আগে আমি একপ্রকার অস্থিরতা আর ভয় নিয়েই মাঝরাতে তোমাকে দেখার জন্য গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।”

বেলী অবাক হয়ে তাকালো বুরাগের মুখ পানে।বুরাগ বেলীর মুখ টা নিজের দু’হাতে আগলে নিয়ে বললো,

–“প্লিজ!আমাকে চলে যেতে বলো না।আমি তোমাদের ছেড়ে আর থাকতে পারবো না।”

বেলী মুখ ফুলিয়ে বললো,

–“ঠিকাছে!তবে,এইটা ভাববেন না আমি আপনার উপর রেগে নেই।আমি খুব রেগে আছি।”

বুরাগ বেলীকে আর কিছু বলতে দেয় নি।তার আগেই আলতো ভাবে বেলীর ঠোঁটে চুমু খেয়ে নিলো।বেলী সরু চোখে তাকালো বুরাগের দিকে।বুরাগ বেলীকে পাত্তা না দিয়ে মেয়ের সাথে কথা বলতে লাগলো।এই কথা সেই কথা বলতে বলতে অনেক কথাই বলে ফেলছে।বেলী শুধু মুচকি হাসছে বুরাগকে দেখে।
—-
রায়ান অনেকক্ষণ ধরে বুরাগকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করছে।ওইদিনের পর রায়ান আর কল দেয় নি।এমনকি বুরাগও না।রায়ান অফিসের এতো টাই চাপে ছিলো যার ফলে ভুলেই গেছিলো বুরাগকে ফোন দেওয়ার কথা।অন্যদিকে বুরাগও ব্যস্ত,আর চিন্তিত থাকায় রায়ানকে আর ফোন দিতে পারে নি।অনেকবার চেষ্টা করার পরও যখন বুরাগের ফোন বন্ধ পায় তখন রায়ান বুদ্ধি করে বাসার ল্যান্ডলাইনে ফোন দেয়।

খুশি তখন সোফায় বসে ছিলো।আজকে স্কুল যায় নি।শরীর খুব খারাপ লাগছে তার।তলপেটে কেমন একটা অসহনীয় ব্যথা অনুভব করছে।কোহিনূর ছাঁদে আছেন।কাপড় রোদে দিতে গেছেন।
যার কারণে,খুশিকেই ফোন টা ধরতে হয়।খুশি ফোন টা কানে চেপে ধরলো।

অপাশে ফোন রিসিভ হতেই রায়ান বললো,

–“হ্যালো!আমি রায়ান বলছি বুরাগ বাসায় আছে?”

খুশি রায়ানের কন্ঠ শুনে থম মেরে যায়।তার নিজের কাছে মনে হচ্ছে,সে ফোন ধরে খুব বিপদে পড়েছে।খুব বিপদ!যাকে বলে মহাবিপদ!!

রায়ান কোনো উত্তর না পেয়ে পুনরায় বললো,

–“হ্যালো!হ্যালো!”

খুশি ঝটপট উত্তর দিলো,

–“বুরাগ ভাইয়া বাসায় নেই।বেলীপুদের বাড়ি গিয়েছে মানে আমার নানু বাড়ি।”

রায়ান এবার থামে।খটকা লাগছে এইটা কে হতে পারে।হাসি না খুশি।পরক্ষণেই ভাবে,খুশি তো জীবনেও হবে না।একদন্ডও দাঁড়ায় না তার সামনে আবার কথা বলবে ফোনে।তাই,হাসি ভেবে রায়ান বললো,

–“আরে হাসি নাকি!!কেমন আছো তুমি??আমার কিন্তু এখনো মনে আছে তুমি আমাকে ক্যাবলা বলেছিলে।”

খুশি একদম রোবট হয়ে গিয়েছে।মুখটাকে কুঁচকে বললো,

–“আমি খুশি!হাসি না।”

রায়ানের মুখ চুঁপসে গিয়েছে।ভাবতেই পারছে না,এইটা খুশি।তাও আবার তার সাথে কথাও বলছে।রায়ানের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে।পরমুহূর্তেই ভাবে,রায়ান গললে চলবে না!ভুলে গেলি নাকি ওইদিন কীভাবে তোকে দেখে পালিয়ে গিয়েছিলো।তাই,মুখটাকে কঠিন করে কর্কশ কন্ঠে বললো,

–“কে খুশি!!ওহ বুঝতে পেরেছি ওই যে হাসির সাথে থাকে যে,মুখটাকে হুতুমপেঁচার মতো করে সে নাকি।সে হলে বলবো,তোমার নাম হুতুমপেঁচা দেওয়া দরকার ছিলো।খুশি রাখা একদম ঠিক হয় নি।হাসির সাথে হাসির নাম টা যায়।কারণ,হাসির মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকে।”

খুশি হা হয়ে গেলো রায়ানের কথা শুনে।পরমুহূর্তেই খট করে ফোন টা রেখে দিলো।ফোন রেখে দিয়ে খুশি রাগে সোফার রুম ছেড়ে নিজের রুমে চলে গেলো।মনে মনে সে রায়ানের উপর অনেক টা ক্ষিপ্ত হয়েছে।কোনোদিন যদি দেখা হয় তাহলে সে ছেড়ে দিবে না!এইটার প্রতিশোধ যেভাবেই হোক সে রায়ানের উপর থেকে নিয়ে ছাড়বে।

রায়ানের চোখ,মুখ আরো দ্বিগুণ কঠিন হয়ে গিয়েছে।হাতে থাকা সেলফোন টা মুঠো করে চেপে ধরে বিরবির করে বলতে লাগলো,আমার মুখের উপর ফোন কেটে দিয়ে তুমি মোটেও ভালো করো নি খুশি।এইটার শাস্তি তোমাকে পেতে হবে।ছাড়বো না আমি কিছুতেই!তোমাকে শাস্তি দিয়ে আমি নিজের মনকে শান্তি দিবো।
—-
করিম সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে আর পালিয়ে থাকবে না।নিজের বাড়িতে ফিরে আসবে।আব্বা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও আম্মা তো নেয় নি।বাড়ি গিয়ে না হয় আব্বাকে বুঝিয়ে বলবে।এক দুই দিন রাগ করে থাকলেও পরে ঠিকই রাগ কমে যাবে।রোকসানার কাছ থেকে সেদিকের খবর জেনে নিয়ে একদিন সময় করে বাড়ি চলে আসবে।ব্যাপার টা রোকসানাকেও জানাবে না।বাড়ি গিয়ে না হয় রোকসানাকে পড়ে বলে দিবে।

লিটন নতুন কাজের খোঁজ করছে।তার জমানো টাকা সব শেষ হয়ে গিয়েছে।ভেবে নিয়েছে কাল থেকেই কাজের সন্ধানে লেগে পড়বে।কাজ পেলেই সে স্নিগ্ধাকে ফেলে দিয়ে চলে যাবে।এখন স্নিগ্ধার টাকা দিয়ে চললেও তাকে অনেক কথা শুনতে হয়।সে কিছুতেই কথা শুনে থাকতে পারবে না।
_______
বেলী এখন অনেক টাই সুস্থ আছে।বেলী আর বুরাগ দু’জনে মিলেই বাচ্চাটির নাম শিউলি রেখেছে।যেহেতু!বাচ্চাটি অনেকটাই শিউলির মতো দেখতে তাই বেলী বলার আগেই বুরাগ বলেছে,ওর নাম শিউলি রাখা হবে।বুরাগের কথা শুনে সেদিন বেলী তৃপ্তির হাসি টেনেছিলো।এমনকি জাবেদাও খুব কেঁদেছিলেন।উনার এখন শিউলির কথা বারবার মনে পড়ে যায়।বাচ্চাটিকে আগলে রাখলে উনার কাছে মনে হয় উনি শিউলিকে আগলে রেখেছেন।জাবেদা ভাবেন,শিউলি যেদিন মারা গিয়েছিলো সেদিনেই তো এই ছোট্ট শিউলি বেলীর গর্ভে আসে।তাহলে,কি মহান আল্লাহ তা’য়ালা একজনকে নিয়ে তার অভাব টা আরেকজনকে দিয়ে ঘুঁচিয়ে দিয়েছেন।জাবেদা আর কিছু ভাবতে পারেন না!উনার খুব ইচ্ছা করছে শিউলির কাছে যেতে।শিউলিকে একপলক দেখতে।যা ভাবা এখন নিতান্তই ভুল।

বেলী গোসল করে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালো।বিছানায় ছোট্ট শিউলি ঘুমিয়ে আছে।তাও আবার মুখে দু’আঙুল দিয়ে।বেলী আয়নায় সেটা দেখে এগিয়ে গেলো শিউলির দিকে।মুচকি হেসে মুখ থেকে আঙুল দুটো বের করে দিয়ে পুনরায় আয়নার সামনে এগিয়ে আসলো।বুরাগ দরজায় দাঁড়িয়ে বেলীকে পরোক্ষ করছে।বুরাগ ধীর গতিতে এগিয়ে গেলো বেলীর দিকে।বেলীকে নিজের সাথে চেপে ধরে যখনি আদর করতে যাবে তখনি ছোট্ট শিউলি গলা ফাটিয়ে কেঁদে উঠলো।

বুরাগের আচমকাই তেড়ে আসা আর মেয়ের কান্নার আওয়াজ দুটো একসাথে হওয়াতে বেশ খানিকটাই ভয় পেয়ে যায় বেলী।মেয়ের কান্নার আওয়াজ পেয়ে বুরাগ হতাশার দৃষ্টিতে তাকালো বেলীর দিকে।বেলী মুখ ভেঙচি মেরে বুরাগকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো বিছানায়।বিছানায় বসে ছোট্ট শিউলিকে কোলে নিয়ে ব্রেস্ট ফিডিং করাতে লাগলো।বুরাগকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বেলী উল্টো ঘুরে বসে পড়লো।পিছন ফিরে তাকিয়ে বললো,

–“সব দোষ আপনার!আপনি না আসলে ও এখন ঘুম থেকে উঠতো না।কারণ,আপনার আভাস পেলেই ও ঘুম থেকে উঠে যায়।”

বুরাগ কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বললো,

–“যত দোষ নন্দ ঘোষ।দোষ করলেও আমার দোষ না করলেও আমার দোষ।এইভাবে বলা উচিত ছিলো,যত দোষ বুরাগ ঘোষ।”

বেলী আরো কিছু বলতে যাবে আবারও ছোট্ট শিউলি কেঁদে উঠলো।বুরাগ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,

–“আমাকে বকা বা দেখা বা ভালোবাসার অনেক সময় পাবে।এখন আমার মেয়েকে ভালোভাবে খাওয়ায়।তবে,আজকে একদম ছাড়া পাবে না।রাতে,সব সুদে আসলে বুঝে নিবো।”

বেলী বুরাগের কথায় কাঁদো কাঁদো করে মুখ করে বললো,

–“ছাড়া পেয়েছিলাম কবে।প্রতিদিনই তো নিজের সাথে চেপে ধরে রাখেন।আপনি তো দিনদিন আরো বেহায়া হয়ে যাচ্ছেন।আপনার তেড়ে আসা দেখলেই আমার এখন ভয় করে।এক বাচ্চার বাপ হয়েছেন এবার তো একটু নিজেকে সংযত রাখুন।”

বেলীর কথার ধরণ দেখে বুরাগ ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো।বেলী এখনো কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে আছে বুরাগের দিকে।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here