উড়ো পাতার ঢেউ পর্ব: ২৪

0
529

#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ২৪
_________________

ক্যানিয়লকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। নাইন ওয়ান ওয়ানে কল করে জরুরি সেবা নেওয়া হয়েছিল। ক্যানিয়লের এই অবস্থা খবরটা ইতোমধ্যে মুহাম্মদ ইসহাকের কাছে পৌঁছেছে। হাসপাতালে মি. হেনরি উপস্থিত আছে। ইরতিজাও আছে। ইরতিজা ভয়েই অভিভূত। কে মেরেছে ক্যানিয়লকে সে এখনও বুঝতে পারছে না। এই এতটুকু সময়ের ভিতর কেউ কীভাবে মারলো?
মাথায় ভারি কিছুর দ্বারা আঘাত করা হয়েছে ক্যানিয়লকে। যার ফলে আঘাতটা খুব বাজে ভাবেই লেগেছে। আর পেটে ধারালো অস্ত্রের একটা অগভীর ক্ষত আছে। ওই ক্ষতটা না কি আগের সৃষ্টি হওয়া। ক্ষত স্থানে আঘাত লাগায় রক্তপাত ঘটেছে। ডক্টর এমনটাই বললেন। এক্ষেত্রে ইরতিজার ক্যানিয়লের গতকালকের বলা কথাটা সত্যি মনে হলো। ক্যানিয়লের বাড়িতে যে রক্ত ভেজা তুলা দেখেছিল ওটা ক্যানিয়লের রক্তই ছিল।
ক্যানিয়লের পরিবার কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে এলো। এসেছে মুহাম্মদ ইসহাক, সোফিয়া, ইয়াদা এবং নাইলা সালেম। ক্যানিয়লের ভাই-বোনদের ভিতর থেকে কেউ আসেনি? বিষয়টা ভেবে ভ্রুকুটি হলো ইরতিজার।
আরও কিছুক্ষণ পর এলো সামুরা এবং বোনদের ভিতর ছোটো যে জন সে, রাম্মিকা।
ক্যানিয়লের জ্ঞান ছিল না এতক্ষণ, কিছুক্ষণ আগে জ্ঞান ফিরলো।
রুমের ভিতর কীসব কথা হচ্ছে ইরতিজা বুঝতে পারছে না। সে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশও এসেছিল। মি. হেনরি কথাবার্তা বললো। ইরতিজাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যেহেতু সর্বপ্রথম ক্যানিয়লের কাছে সেই গিয়ে উপস্থিত হয়েছিল। ইরতিজা হাসপাতালে আছে অনেকক্ষণ ধরে। এরমধ্যে বাবার কল এলো। ইরতিজা রিসিভ করে বললো,
“হ্যালো আব্বু!”

“কোথায় আছো তুমি? জগিংয়ে বের হয়ে কোথায় চলে গিয়েছো? বাসায় না কি এখনও ফেরোনি?”

“আমি হসপিটালে আছি।” গলা নিচু করে বললো ইরতিজা। যতটা সম্ভব আস্তে কথা বলার চেষ্টা করছে।

আজাদ চৌধুরী অবাক এবং ব্যস্ত স্বরে বললেন,
“হসপিটালে কেন? কী হয়েছে তোমার?”

“আমার কিছু হয়নি। আমাদের এখানে একজন অ্যাটেম্পট টু মার্ডার হয়েছে শুনেছো নিশ্চয়ই? ওকে হসপিটালে আনা হয়েছে। সেখানে আছি আমি।”

“ওখানে কী করছো? এসব ব্যাপারে নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছ না কি? জলদি জলদি বাসায় চলে যাও ওখান থেকে।” সাবধানী কণ্ঠ আজাদ চৌধুরীর।

ইরতিজা মুখ নিস্তেজ করে বললো,
“আচ্ছা।”

আজাদ চৌধুরী আহত ব্যক্তির অর্থাৎ ক্যানিয়লের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। ইরতিজা বাবাকে বললো সব। ক্যানিয়লকে কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হবে।
ইরতিজার আসলে চলে যেতে ইচ্ছা করছে না। চলে গেলে সে ক্যানিয়লের সম্পর্কে জানবে কীভাবে? আর চলে যাওয়ার আগে একবার ক্যানিয়লের সাথে দেখা করেও যেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু ভিতরে ক্যানিয়লের পরিবারের লোকজন থাকায় সে ভিতরে প্রবেশ করলো না।
দরজার বাইরে থেকে ক্যানিয়লকে দেখে হসপিটাল ত্যাগ করলো। কে মারলো ক্যানিয়লকে? ক্যানিয়লের জন্য মনটা উদগ্রীব এবং চিন্তাযুক্ত। কষ্টও লাগছে তার! পাজি ছেলেটার জন্য হঠাৎ এমন অনুভব করছে কেন সে?

________________

বাড়ি আসার পরও ক্যানিয়লের ভাবনা সর্বক্ষণ গ্রাস করে রাখলো ইরতিজাকে। এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি পেল না মনে। বাইরে রোদ্রের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সুন্দর একটা দিন উপহার দিচ্ছে প্রকৃতি। অথচ তার মনে একরাশ কালো মেঘের মতো চিন্তা বিরাজমান। সাজিদ একটা পার্সেল পাঠিয়েছে আজকে। কিন্তু সেই পার্সেল একটু খুলে দেখার ইচ্ছা জাগেনি।
বাসায় আসার পর থেকে জুহির দেখা পায়নি। মেয়েটা ঘুমিয়ে ছিল না বাইরে ছিল জানে না। জুহি যখন ইরতিজার কাছে এলো ইরতিজা তখন বাসার পিছনের ছোটো লনটায় উদাসী মনোভাব নিয়ে বসে আছে। সে এসে ইরতিজার সামনের চেয়ারটা দখল করে বসে বললো,
“কোথায় ছিলে তুমি? সকাল থেকে না কি বাসায় ছিলে না?”

“হসপিটালে ছিলাম।”

“কেন? জ্বর করেছে?”
বলতে বলতে চেয়ার থেকে উঠে ইরতিজার কপালে হাত রাখলো জুহি।

ইরতিজা বললো,
“আমি ঠিক আছি। কিন্তু…” একটু থেমে জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি শোনোনি ঘটনাটা?”

জুহি অজ্ঞর মতো বললো,
“কোন ঘটনা? কোনো ঘটনা ঘটেছে? আমি টের পাইনি তো!”

“তুমি সত্যিই জানো না?”

“উফ ভণিতা করো না টিজা। বলো কোন ঘটনা সম্পর্কে কথা বলছো?”

“ক্যানিয়লের উপর অ্যাটাক করা হয়েছে! ও এখন হসপিটালে। জানো না তুমি?”

জুহি যেন আকাশ থেকে পড়লো,
“কী? ক্যানি হসপিটালে? এই খবরটা তুমি আমাকে এখন দিচ্ছ টিজা? তোমাকে দিয়ে কোনো কাজ হয় না।” শেষের কথাটা বিরক্তির শোনালো। জুহি দৌড়ে চলে গেল ঘরে।
কয়েক মিনিট পরই গায়ে জ্যাকেট পরে বেরিয়ে এলো। হাতে ব্যাগও দেখা যাচ্ছে।

“লেট’স গো।”

“কোথায়?”

“হসপিটালে। ক্যানি অসুস্থ এটা জানার পরও কি আমি বসে থাকবো?”

ইরতিজা অবাক। যে মানুষটাকে পছন্দ করে না সেই মানুষটার জন্য এত উদ্বিগ্নতা জুহির? না কি এখনও চুপি চুপি পছন্দ করে ক্যানিয়লকে? না কি কোনো এক সময় ক্যানিয়লকে ভালো লাগতো বলে এই উদ্বিগ্নতার সৃষ্টি? না কি ক্যানিয়ল চেনা পরিচিত এক জায়গার মানুষ বলে? তবে ইরতিজা হাসপাতালে যাওয়ার একটা সুযোগ পেয়ে আনন্দিত। তার তো বার বার মনে হচ্ছিল সে এক ছুটে হাসপাতালে গিয়ে দেখে আসে ক্যানিয়লকে।

হসপিটালে আসতে দশ মিনিটের মতো সময় লাগলো। উবারে করে এসেছে। আসার সময় বেশি উদ্বিগ্নতা জুহি দেখালেও, জুহির থেকে এখন ইরতিজার উদ্বিগ্নতাই বেশি। সে আগে আগে পা ফেলে এসেছে। ক্যানিয়লের রুমের কাছে আসতেই তার ব্যস্ত পা থেমে গেল। ইরতিজাকে থামতে দেখে জুহি বললো,
“কী হয়েছে?”

প্রশ্নের উত্তরটা ইরতিজার দিতে হলো না। জুহি নিজেই বুঝতে পারলো। ভিতরে কেউ একজন আছে ক্যানিয়লের সাথে। দরজার কাচের অংশটা দিয়ে দেখা যাচ্ছে খয়েরি ড্রেস পরা একজন মহিলা বসে আছে।
ভিতরের কথোপকথন শুনতে যাচ্ছে ইরতিজা এবং জুহি।

“আমি চাইনি তুমি এখানে আসো। কেন এসেছো? এখনই চলে যাও। তোমাকে দেখলেও আমি ঘৃণা বোধ করছি, সত্যিই করছি! চলে যাও।”

ক্যানিয়লের কথার প্রত্যুত্তরে মহিলাটি বললো,
“তুমি আহত, হসপিটালে আছো, এটা শোনার পরও আমি তোমায় দেখতে আসবো না? কাম অন ক্যানিয়ল, এতটা কঠিনও হতে পারো না তুমি! তুমি আমায় ঘৃণা করলেও আমি তো তোমায় ভালোবাসি।”
মহিলাটির কণ্ঠ কাতর শোনালো।

ক্যানিয়ল হাসলো। যদিও ওর চেহারায় আলতো কষ্টের প্রলেপ পড়ে আছে। ওই চেহারাতে হাসিটা অদ্ভুত দেখালো, সুন্দর দেখালো। এক কথায় বলতে গেলে অদ্ভুত সুন্দর দেখালো ওর হাসিটা। ও তুচ্ছ কণ্ঠে বললো,
“ভালোবাসা!” কথাটা বলে আবারও অদ্ভুত সুন্দর হেসে বললো,
“আহত কেন? আমি যদি মরেও যেতাম তাহলেও চাইতাম না তুমি আমায় দেখতে আসো। যদি আগে আমার মৃত্যু ঘটে তাহলে তুমি আমাকে দেখতে আসবে না! আমি চাই না তুমি আসো। আসবে না তুমি!”

এমন কথায় দগ্ধ হলেন বেলা লিমাস। বললেন,
“এমন কথা আর বলবে না ক্যানিয়ল!”

ক্যানিয়ল বড়ো করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে চোখ বুজলো। আধ শোয়া অবস্থায় আছে সে। এবার শান্ত ধীর কণ্ঠে বললো,
“চলে যাও। এখনই আমার ড্যাড এসে পড়বে। তার সাথে তোমার দেখা হওয়া নিশ্চয়ই ভালো কোনো ব্যাপার হবে না। তুমি এখানে বসে আছো বলে আমি কষ্ট পাচ্ছি! মনে হচ্ছে আমার হৃদয় চেপে ধরে আছে কষ্টের শত হস্ত! নিঃশ্বাস নিতে পারছি না আমি। তুমি চলে যাও, আমি একটু প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিই!”

মিস বেলা লিমাসের চোখে অশ্রু। হৃদয় ভার। উচ্ছল হয়ে ওঠা কান্নাকে ঢোক গিলে সামলে নিয়ে টুল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললেন,
“নিজের যত্ন নেবে, ভালো থাকবে, আর…”
কথাটা বলতে গিয়ে একটু থামলেন তিনি।
“আর পারলে আমাকে একটু কম করে ঘৃণা করবে!”
বেলা লিমাস দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলেন।
ইরতিজা ও জুহি সরে গেল দরজার সামনে থেকে।
বেলা লিমাস ওদের লক্ষ না করেই চলে গেলেন। তবে ইরতিজা লক্ষ করলো। বেলা লিমাসের সিক্ত চোখ জোড়াও চোখ এড়ালো না। বিষয়টা তার মনের ভাবনা গভীর করলো।
জুহি এতক্ষণের ঘটমান পরিস্থিতির জন্য বললো,
“চলো টিজা, ফিরে যাই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক লাগছে না।”

ইরতিজার মাঝে চলে যাওয়ার ভাব পরিলক্ষিত হলো না। সে প্রশ্ন করলো,
“মহিলাটিকে তুমি চেনো?”

জুহি মনে করার চেষ্টা করে বললো,
“মনে পড়ছে না। তবে চেনা চেনা লাগছে। হয়তো দেখেছি এর আগে।”

“মহিলা সম্পর্কে ক্যানিয়লের কী হয় এ বিষয়ে ধারণা আছে তোমার?”

“না।”

ইরতিজা দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো। আচমকা ঘটিয়ে ফেললো কাজটা। জুহি বলে উঠলো,
“যেয়ো না।”

ইরতিজা ভিতরে প্রবেশ করলেও জুহি প্রবেশ করলো না। এই মুহূর্তে তার ক্যানিয়লের সামনে যেতে কেমন যেন লাগছে। একটু আগেই ক্যানিয়ল একটা মহিলার সাথে কেমন কষ্টপূর্ণ কথা বললো। এখনই গিয়ে ক্যানিয়লকে ডিস্টার্ব করা কি উচিত কাজ?

ইরতিজা চুপচাপ এসে বেডের পাশে দাঁড়ালো, কোনো শব্দ করলো না। ক্যানিয়ল চোখ বুজে থেকেও বেশ বুঝতে পারলো ইরতিজা এসে পাশে দাঁড়িয়েছে। ইরতিজার থেকে পরিচিত পারফিউমের সুবাস নাকে এসে লাগছে। সে চোখ মুদিত অবস্থাতেই বললো,
“পাকিস্টানি গার্ল, চুপি চুপি কেন আসো? ঝড়ের বেগে শব্দ তুলে এসে আমাকে ভাসিয়েও তো নিতে পারো।”

কথাটায় হঠাৎ হৃদয় কেমন করে উঠলো ইরতিজার। ক্যানিয়ল চোখ মেলে তাকালো। ওর চোখে চোখ পড়তে ঘাবড়ে গেল ইরতিজা। দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
“কেমন বোধ করছো এখন?”

“একটা অসুস্থ মানুষ কেমন বোধ করতে পারে?”

“ভালো নেই তুমি।”

ক্যানিয়ল হাসলো,
“কিন্তু আমি ভালো আছি।”

ইরতিজা দুই পাশে মাথা নেড়ে বললো,
“ভালো নেই।”
ক্ষণকাল নীরব থেকে বললো,
“ওই মহিলা কে ছিল?”

“কোন মহিলা?” না জানার ভাণ করলো ক্যানিয়ল।

“একটু আগে যার সাথে কথা বললে।”

“লুকিয়ে লুকিয়ে শুনছিলে তুমি?”

“অপরাধ করেছি? মারবে আমাকে? ছু’রি দিয়ে আঘাত করবে?”

“অপরাধ করোনি।”

“কে সে?”

“চিনি না। প্রথম দেখা হয়েছে আজকে।”

“মিথ্যা কেন বলছো? সে তোমার মম। ইওর রিয়েল মাদার!”

‘ইওর রিয়েল মাদার’ কথাটা ক্যানিয়লের ধূসর রঙা আকাশকে পুরোপুরি কালো করে দিলো। সে একবারও চোখের পলক না ফেলে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে বললো,
“শি ইজ নট মাই মম!”

“নিজের মমকে ঘৃণা করো?”

“সে কি কেবল ঘৃণা পাওয়ারই যোগ্যতা রাখে না?”

“জানি না আমি। যদি সে কেবল ঘৃণা পাওয়ারই যোগ্যতা রাখে তাহলে তুমি তো অন্যায় করছো। তুমি অন্যায়ভাবে ভালোবাসো তোমার মমকে!”

ইরতিজার কথা দুর্বল করে দিচ্ছে ক্যানিয়লকে। কিন্তু সে বাইরে যথেষ্ট কঠিন থেকে বললো,
“আজেবাজে বকা বন্ধ করো মেয়ে।”

“বন্ধ করে দিলে তুমি খুশি হবে?”

ক্যানিয়ল কিছু না বলে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো অন্যদিকে।

ইরতিজা জানে না ক্যানিয়লের মমের সাথে ক্যানিয়লের কী হয়েছে। তবে সে ক্যানিয়লের বলা কথা এবং ক্যানিয়লের অভিব্যক্তি দেখে সহজেই বুঝতে পারছে, ক্যানিয়ল যদি নিজের মমকে ঘৃণা করে থাকে তার চেয়ে বরং ভালোবাসে বেশি। ইরতিজা এখনকার মতো এই বিষয়টার সমাপ্তি ঘটিয়ে দিলেও তার মন থেকে পুরো বিষয়টি জানার কৌতূহল কিন্তু দমেনি। ক্যানিয়ল অসুস্থ বলে সে এই প্রসঙ্গে কথা বলবে না আর। কিন্তু পরে অবশ্যই বিষয়টা খতিয়ে দেখবে।
ইরতিজা ক্যানিয়লের বেডের পাশে বসলো।

ক্যানিয়ল গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
“এত কাছে বসবে না। তোমার পারফিউমের বাজে গন্ধে আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে!”

ইরতিজা ক্যানিয়লের কথা বিশেষ গায়ে মাখলো না। ক্যানিয়লের উপর কোমল দৃষ্টি রেখে বললো,
“ইনশাআল্লাহ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে তুমি।”

“জানি, এইটুকু আঘাতে মরবো না আমি!”

ইরতিজা হাসলো। বেড থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে এক পা বাড়িয়ে আবার থামলো। হঠাৎ মনে পড়েছে এমন ভঙ্গিতে বললো,
“ও হ্যাঁ, তাড়াহুড়ো করে আসায় হিজাব পরে আসা হয়নি। আগামীতে নিশ্চয়ই তুমি কখনও হিজাব ছাড়া দেখতে পাবে না আমাকে। তোমার দেওয়া ওই হিজাবগুলো আর ফেরত পাবে না তুমি।”

ইরতিজার কথাগুলোয় প্রথমে বিস্মিত হলো ক্যানিয়ল। কথাগুলো যখন যথাযথ উপলব্ধি করতে পারলো তখন হাসলো।
ইরতিজাও একটুখানি হেসে পা বাড়ালো যাওয়ার জন্য। ক্যানিয়ল পিছন ডাকলো,
“দাঁড়াও।”

ইরতিজা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। ক্যানিয়ল বললো,
“কাছে এসো।”

ইরতিজা এগিয়ে এলো।
ক্যানিয়ল বললো,
“একটু নিচু হও।”

ইরতিজা অবাক হয়ে বললো,
“কেন?”

“আমি বলছি তাই।”

“কী করতে চাইছো?”

“বেশি কথা বলা কি পাকিস্টানিদের রক্তে মিশে আছে?”

ইরতিজা কথা না বাড়িয়ে হালকা একটু ঝুঁকলো ক্যানিয়লের দিকে। আচমকা ক্যানিয়লের একটা হাত উঠে এলো ইরতিজার ঘাড়ে। ইরতিজার মাথাটা আরও নিকটে টেনে নিলো সে। ইরতিজা ঘাবড়ে গেল। চোখে-মুখে ঘাবড়ে যাওয়া ভাবটা ছেপে গেল সরলতার সাথে।
ক্যানিয়ল খুব কাছ থেকে ইরতিজার চোখে স্থির দৃষ্টি রেখে বললো,
“জানো তো, আমি মানুষের সাথে খুব একটা মিশতে পারি না, কিন্তু আজবভাবে তোমার সাথে মিশে যাচ্ছি! সেই শুরু থেকে তোমার সঙ্গ ত্যাগ করতে পারছি না। বরং আরও নিজ থেকে গিয়ে সঙ্গ নিচ্ছি! এটা অদ্ভুত এবং অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার!”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here