একটুখানি পর্ব : ১৯

0
724

একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব: ১৯
কূজন তাড়াতাড়ি করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায়। কূজন সরাসরি কলরবের রুমে যেয়ে কিছুক্ষণ চুপটি মেরে বসে থাকে। তারপর উঠে ওয়াশরুমে যেয়ে চশমাটা খুলে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দেয়। চশমা হাতে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোজা বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে পড়ে। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতেই কুহুর চেহারা ভেসে উঠছে। কূজনের বেশ ভালোও লাগছে কুহুকে নিয়ে ভাবতে।
কলরব বাইক গ্যারেজে রেখে বাসায় না যেয়ে সোজা ছাদে চলে এলো। কলরব ছাদে এসেই কুহুদের ছাদের দিকে তাকালো। কুহুকে এখনো আসতে না দেখে ঘড়ির দিকে তাকালো। না দেরি হয়নি, এই সময়েই কুহু ছাদে আসে। পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করেও যখন কুহুকে ছাদে দেখলো না কলরবের তখন মনে পড়লো বাস্কেটবল নিয়ে আসেনি সে। তাই কলরব দৌড়ে অনেকটা ঝড়ের গতিতে বাসায় যেয়ে নিজের রুম থেকে বাস্কেটবল নিয়ে আবার ঝড়ের গতিতে ছাদে চলে এলো। ছাদে এসে হাপাতে হাপাতে বাস্কেটবল কুহুদের ছাদে ছুঁড়লো। আসলে পিহুকে পিছন থেকে দেখে হঠাৎ করে কুহু ভেবেছিল কলরব। পিহু বাস্কেটবলের আওয়াজে পিছনে ফিরতেই কলরব আস্তে করে বললো,
– উপস্।
পিহু কিছু বললো না নিজের কাজ করতে লাগলো। কলরব একটু এগিয়ে যেয়ে পিহুকে বললো,
– সরি!
পিহু কলরবের দিকে ফিরে তাকিয়ে আবার নিজের কাজ শুরু করে দিল। কলরব একটু কেশে বললো,
– আপনার বোন আসেনি যে?
– সবসময় যে তাকে আসতে হবে সেটা তো নয়।
– আমি যতদূর জানি ইরিনকে তো আপনার বোনই পড়ায়।
পিহু কিছুটা ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে গেল। মনে মনে ভাবলো ছেলে তো বহুত চালাক। কিন্তু নিজেকে সামলে নিল পিহু, সেও কি কম নাকি? তারপর বললো,
– কেনো ইরিনকে তো আপু পড়িয়েছে আজকে।
এবার কলরব ভ্যাবাছ্যাকা খেলো। ইশ্ কুহুর জন্য সে পাগল হয়ে গিয়েছে। মাথাটা পুরাই গেল বোধহয়। কলরব কুহুকে ছাদে না দেখতে পেয়ে ভেবেছে সত্যি অসুস্হ আর তাই হয়তো ইরিনকেও পড়ায়নি। কলরব একটু ভেবে বললো,
– ইরিন আসলে বেশ পড়া চোর হয়ে গিয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ওর টিচার ওকে কি পড়া দিয়েছে, সেটা কমপ্লিট করেছে কিনা? ও আমাকে বললো আজকে নাকি ওর টিচার আসেনি।
– মাত্র পড়িয়ে এসেছে।
– ওহ্ আমি বাসায় ছিলাম না তো তাই।
কলরব কথাটা বলেই সেখান থেকে চলে আসে। কলরব চলে যেতেই পিহুও ছাদের দরজা পেরিয়ে সিঁড়ির কাছে আসে, কুহু সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। কুহুকে দেখেই পিহু হাতের কাপড়গুলো কুহুর হাতে দিয়ে বললো,
– পোলা তো নয় একখান আগুনের গোলা।
– তোরা এতক্ষণ কি থেকে কি বললি সব আমার মাথার উপর দিয়ে গেল।
পিহু তার দুই গালে দুই হাত চেপে বললো,
– কলরব ছেলেটা সেই চালাক। কীভাবে কথা ঘুরিয়েছে দেখেছিস? প্রথমে কিন্তু ছাদে এলি না কেনো সেটাই জানতে চেয়েছিল যেই আমি চটাং করে উত্তর দিলাম কথা ঘুরিয়ে ইরিনের উপর নিয়ে গেল।
কুহু এতক্ষণে কাহিনী বুঝতে পারলো যদিও ওদের সব কথাই শুনছিলো কিন্তু দুজনের কথা কোনদিক দিয়ে যাচ্ছিলো তা সে বুঝেনি। ইরিন মিথ্যে বলেছে শুনে তো ভেবেই নিয়েছিল ইরিনকে বেশ বড়সড় একটা বকা দিবে। এখন বুঝতে পেরে বললো,
– যাক তুই তো ভালোভাবেই উত্তর দিয়েছিস।
– আরে বাপ এখনো বুঝিস না কেনো? কলরব কি বলছিল তা যেমন আমি বুঝেছি ঠিক কলরবও বুঝতে পেরেছে আমার সবগুলো কথা, যতোই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে শুধরানোর চেষ্টা করি না কেনো।
– এই বন্ধ কর তো।
কুহু নীচে নেমে এলো তরতর করে, আর পিহু সেখানেই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো।
..
কলরবের পুরো বিরক্ত লাগছে। আবারো এক সপ্তাহ পর কুহুকে দেখতে হবে তাকে। সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললো আর এসব করবে না সরাসরি বিয়ের কথাটায় বলে ফেলবে কুহুকে। তারপর যা হবার হবে। কলরব রুমে এসে দেখলো কূজন অবেলায় ঘুমিয়ে আছে। শরীর খারাপ করেনি তো আবার?? কূজনের কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আছে কি না, না নেই।
কলরব বেশ কিছুক্ষণ মন খারাপ করে বসে রইলো তারপর গেল মায়ের রুমে।
মায়ের পাশে বসে আস্তে করে বললো,
– মা একটা কথা ছিল।
– যা বলবি বলে ফেল। তোকে কি আবার কূজনের রোগে ধরলো নাকি?
– না মানে আসলে হয়েছে কি..
– আরে বল না।
– উফ্ বলছি তো শুনো না..
– কুহুকে নিয়ে কিছু বলবি?
– না না কুহুকে নিয়ে না।
– তাহলে??
– এমনিতেই ভালো লাগছিলো না তাই এসেছি।
– যা ভাগ মিথ্যে বলতে এসেছে।
কলরব আর মায়ের কাছে বসলো না। মা যে কথা বের করে ফেলবে তা সে ভালো করেই জানে।
কলরব চলে যাওয়ার পর কলরবের মা একা একাই কতক্ষণ হাসলো। সন্ধ্যার দিকে কূজনকে কোথাও না দেখতে পেয়ে কলরবের মা কূজনকে খুঁজতে লাগলো। শেষে দেখলো কূজন ঘুমিয়ে আছে। কূজনের পাশে বসে কূজনের দিকে কতক্ষণ চেয়ে রইলো। কূজনকে দেখলেই বোঝা যায় কূজন জাহরার ছেলে। একদম মায়ের মতো হয়েছে, দেখতেও আবার চালচলনেও। কলরবের মা কূজনকে ডেকে তুলে বললো,
– এই অবেলায় কেউ ঘুমায়?
– না আসলে এভাবেই শুয়ে ছিলাম কখন চোখ লেগে গেছে বলতেই পারিনি।
– আচ্ছা উঠ।
– খালামণি আজ কিন্তু তুমি গান শোনাবে।
– আহ্লাদ!
– তোমার মতো আহ্লাদী খালা থাকলে আহ্লাদ তো করবোই।
কলরবের মা হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ালো। তারপর বললো,
– ঠিক আছে, তবে আমি একা না তুই আর ইরিন সহ গানের আসর বসবে।
– ইরিনও পারে???
– হুম তুই আর ইরিন আমার মতো গানের প্রতি দূর্বল। কলরবটা আবার তোর মায়ের মতো হয়েছে গান পারে না।
– আচ্ছা ইরিন তো অনেক ভালো আর্ট পারে।
– তোর খালুর মতো এতো ভালো আঁকতে পারে না। তোর খালুর ছবির এক্জিবিশনও হয়, কিন্তু ছবি বিক্রি করে না।
– কি বলো কি?
– হুম একটা ছবির দাম পঞ্চাশ লাখ টাকাও হয়েছিল কিন্তু পত্রিকা সাহেব বিক্রি করেননি।
– বাববা!
– আচ্ছা তুই হাত মুখ ধুয়ে নে আমি আগে স্নেকস জাতীয় কিছু বানাই তারপর সবাই মিলে ছাদে যাব।
– ওয়াও ছাদে, আজ তো আবার জোছনা!
– এজন্যই ছাদে মজা হবে।
কূজন বিছানা ছেড়ে খালামণির পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
– খালামণি একটা বিষয় কি তুমি জানো?
– কি?
– আমাকে মা বা বাবা কেউই কোনোদিন তুই বলে বলে না।
কলরবের মা কূজনের গাল ছুঁয়ে বললো,
– আমি এমনই।
– এজন্যই তোমাকে অনেক বেশি ভালো লাগে।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here