একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব:২১
কলরব টর্চ জ্বালানোর সাথে সাথে কুহু বসে গেল আর পিহুকেও হাত টেনে বসালো। কলরব কাওকে দেখতে না পেয়ে টর্চ নিভিয়ে ফেললো। কলরবের বাবা বললেন,
– কি ব্যাপার?
– না মনে হলো সেখানে কেউ দাঁড়িয়ে ছিল।
– থাকলে থাকুক গান শুনতে যে কেউই দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।
– হুম সমস্যা নেই তো। জাস্ট কৌতূহলের কারণে দেখেছিলাম আরকি।
ইরিন বললো,
– গান তো শেষ এখন আর কে আসবে?
– উহু গান শেষ না।
– কে গাইবে তুমি আর বাবা? হা হা হা হি হি হা হা।
কলরবের মা বললেনন,
– কূজনরে তোর ভাই আর খালুর গান শুনলে তুই আর বেঁচে জাহরার কোলে ফিরতে পারবি না।
কূজনও হাসতে লাগলো।
ইফতেখার সাহেব বললেন,
– মাষ্টারনী তুমি তো টিয়া পাখি আঁকতে বললে কাকের চেহারা বানিয়ে ফেলো। কি বলিস কলরব??? হা হা হা।
কলরব তার বাবার কথায় তাল মিলিয়ে বললো,
– আর বাস্কেটবল..!
ইরিন বললো,
– আমি কিন্তু গান, ছবি আঁকা আর বাস্কেটবল সবগুলোই পারি।
কূজন বললো,
– ওরে আমার সোনার হরিণ!
কলরব বললো,
– বাস্কেটবল কে শিখিয়েছে তোকে? আমি শিখিয়েছি।
– ঘাট হয়েছে আমার।
– এই কূজন আমার জন্যে একটা গান গেয়ে শুনাবি তুই, ওদের গাইতে হবে না।
– কোন গানটা বলো।
– মেরে সামনে বালি খিড়কিমে ঐটা আছে না পারিস?
– হুম।
– শুরু কর।
কূজন একাই শুরু করলো,
” মেরে সামনে বালি খিড়কি মে
এক চান্দকা টুকরা রেহতা হে
আফসোস হে কি বো হামসে কুছ উখরা উখরা রেহতা হে”
কলরব উঠে দাঁড়ালো। আস্তে আস্তে ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ালো তারপর মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে কুহুদের ছাদের দিকে ধরলো। কুহু আর পিহু রেলিং ঘেঁষে বসে গান শুনছিলো। কলরব হেসে বললো,
– ফ্রেঞ্চ ফ্রাই???
পিহু বললো,
– অবশ্যই।
পিহু কথাটা বলে জ্বিব কামড়ে ধরলো আর কুহু পিহুকে পা দিয়ে লাথি দিলো।
কলরব ফিরে এসে বাটিতে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর বিস্কিট নিলো। তারপর উঠে আসতেই ইফতেখার সাহেব বললেন,
– কোথায় যাচ্ছিস?
– পাশের ছাদে দুইজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গান শুনছিলো।
– ওহ্ বলে কলরবের বাবা পিছন ফিরে তাকালো।
– কই কাউকে দেখতে পাচ্ছি না যে?
– ওরা বসে আছে রেলিং ঘেঁষে তাই।
ইরিন বললো,
– কারা ভাইয়া?
– তোর টিচার আর ওর বোন।
– কুহু আপু???
কূজন তখন চোখ বন্ধ করে গান গাইছিলো,
” জিস রোজ সে দেখা হে উসকো
হাম শামা জ্বালানা ভুল গায়ে
দিল থামকে অ্যায়সে বেঠে হে
কাহি আনা জানা ভুল গায়ে
আব আঠ পেহের ইন আখোমে বো চাঞ্চাল মুখরা রেহতা হে
মেরে সামনে বালি খিড়কি মে এক চান্দকা টুকরা রেহতা হে ”
কুহুর কথা শুনে কূজন চোখ খুললো। কূজনের এখন ছাদ থেকে লাফ দিয়ে মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। কুহু কি ওর পিছু ছাড়বে না? কূজন দেখতে পেলো কলরব রেলিং এর কাছে যেয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে কি যেন বলছে।
– ফুলটুশী উঠে দাঁড়াও।
কুহু দাঁত কিড়মিড় করে উঠে দাঁড়ালো আর পিহুর দিকে রাগে কটমট করে চাইলো।
পিহু ঢোক গিলতে গিলতে উঠে দাঁড়ালো আর বললো,
– আপুণি তুই কি আমাকে বাসায় যেয়ে মারবি??
কুহুর রাগে কান্না চলে আসছে চোখ দিয়ে। পিহুর কি খুব দরকার ছিল কলরবের সামনে এই কথাটা বলার? সে কি এতোটাই রাগী নাকি??
কলরব পিহুর দিকে বাটিটা ধরে বললো,
– নাও। আর তুমি করেই বলি হ্যা??
পিহুর তখন কলরবের কথা কানে যাচ্ছে না সে আছে নিজের চিন্তায়। একে তো তার জন্যই কুহুকে ছাদে আসতে হয়েছে আর এখন সে কি বললো।
কলরব বাটি থেকে একটা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই পিহুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
– নাও তোমার আপু কিছু বলবে না।
পিহু এমনিতেও কোথাও গেলে কুহু না বলা পর্যন্ত কিছু খায় না আর কলরবের হাত থেকে তো কখনোই কিছু নিবে না। কলরব এবার কুহুর দিকে বাড়িয়ে ধরলো। কুহুও নিলো না। কলরব এবার বললো,
– কুহু নাও মা বানিয়েছে।
কুহু রাগে ফুসতে লাগলো।
ইফতেখার সাহেব কলরবের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,
– আরে নিচ্ছো না কেনো? মামণিরা নিয়ে নাও।প্রতিবেশীর হক আছে তো।
কুহু এবার একটু হাসলো। তারপর বললো,
– না আঙ্কেল থেঙ্ক ইউ। আমরা মাত্র চা খেয়ে এসেছি।
কলরব বললো,
– পিহু তুমি অন্তত নাও।
– না ভাইয়া থেঙ্ক ইউ।
কলরবের বাবা বললেন,
– আরে নাও তো এই কলরব ওর হাতে দে।
পিহু কুহুর দিকে তাকালো।
কুহু রাগে পিহুর দিকে তাকাচ্ছেই না।
– নাও ধরো।
পিহু কলরবের হাত থেকে একটা নিল।
কলরব কুহুকে দিতেই কুহু বললো,
– না না আঙ্কেল আমি খাবো না।
– আরে নাও আমি বলছি নয়তো কিন্তু রাগ করবো।
কলরব সাথে সাথে হাতে একটা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই উঠিয়ে কুহুকে দিল। কুহু চুপচাপ নিল কিন্তু নেওয়ার সময় খেয়াল করলো কলরব কুহুকে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই দেওয়ার সময় হাত দিয়ে একটুখানি ভেঙে রাখলো। কলরব বাটিটা পিহুর হাতে দিয়ে বললো,
– নাও তোমার আপু কিছু বলবে না।
কলরব কথাটা বলেই চলে এলো। কলরব হাতে থাকা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এর একটুখানি অংশ হাসতে হাসতে খেয়ে মাদুরে বসলো। কূজন ভালো করে তাকিয়ে তাকিয়ে এতোক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বুঝলো কলরব আর আঙ্কেল
কুহু আর সেদিন ছাদে দেখা মেয়েটার সাথে কথা বলছিলো। কূজন চশমাটা খুলে পরিস্কার করলো তারপর চোখে দিয়ে আবার দেখলো। এরপরো বিশ্বাস করতে পারছে না যে সে কুহুকে দেখছে। তাই ইরিনকে বললো,
– কলরব ভাই আর আঙ্কেল কাদের সাথে কথা বলছিলেন এতক্ষণ?
– কুহু আপু আর পিহু আপুর সাথে।
কূজন অবাক হয়ে বললো,
– ওহ্ ওরাই কি তোমার টিচার?
– না কুহু আপু আমার টিচার আর পিহু আপু কুহু আপুর বোন।
চলবে…