একটুখানি
#লামিয়া চৌঃ
পর্ব:৪
হাসানাদ সাহেব বেড টি এক চুৃমুকেই শেষ করে তাঁর স্ত্রী জাহরা খাতুনকে ডাকলেন।
– জাহরা! জাহরা!
– আমাকে ডেকেছেন?
– হুম ডাকছিলাম।
– কিছু লাগবে?
– হুম।
– বলুন।
– আমার ছেলেটা উঠেছে ঘুম থেকে?
– মাত্র ডেকে তুলে এসেছি।
– আচ্ছা তুমি আজ খিচুড়ি করো তো কয়েকদিন ধরে খেতে ইচ্ছে করছে।
জাহরা বেগম হাসিমুখে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
– ভুনা?
– ঠিক তাই।
স্ত্রী চলে যাওয়ার পর হাসানাদ সাহেব পাইপ টানতে টানতে এগুলেন ছেলের রুমের দিকে। ছেলের রুমে পা দিতেই হাসানাদ সাহেব একগাল হেসে ছেলের বেডে যেয়ে বসলেন। হাসানাদ সাহেবের স্ত্রী বলেছিলেন ছেলেকে ঘুম থেকে তিনি জাগিয়ে তুলেছেন। হাসানাদ সাহেব বেশ ভালো করেই জানতেন উনার ছেলে এখনো বেড ছেড়ে উঠেনি। বেশ প্রফুল্ল মনেই তিনি ছেলেকে ডেকে বললেন,
– কূজন! বাবা আমার এখনো
উঠোনি ঘুম থেকে?
কূজন হাত দিয়ে বেডসাইড টেবিলের উপর রাখা চশমাটা নিয়ে চোখে দিয়েই উঠে বসতে বসতে বললো,
– গুড মর্নিং বাবা।
– মর্নিং মাই সান।
– তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম বাবা।
হাসানাদ সাহেব কিছুটা হেসে বললেন,
– তোমার মা যখন এসেছিল তোমাকে ডাকতে তখনও নিশ্চয় এভাবেই তোমার মাকে বলেছো তোমার জন্যই
অপেক্ষা করছিলাম মা।
– হুম বলেছি।
– আচ্ছা তুমি সবসময় দুজনকেই একই কথা বলো কেনো? সেই ছোটবেলা থেকেই তুমি আমাকেও এই কথা বলে আসছো আবার তোমার মাকেও একই কথা বলে আসছো। কেনো বলোতো? আসলে তুমি কার জন্য অপেক্ষা করো বলো তো।
কূজন মুচকি হাসি দিয়ে তার বাবার প্রশ্নের জবাবে বললো,
– দুজনের জন্যই। আমি চাই দুজনই তাদের ছেলেকে সকালে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার আনন্দটা পাক।
– ভালোই বলেছো তবে দুজন একসাথে ডাকলে কেমন হয়?
– ভালোই তবে এটাতে একটা অন্যরকম মজা পাই।
– তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আজ খিচুড়ি হবে।
– এখনই আসছি বাবা।
হাসানাদ সাহেব ছেলের রুম থেকে বের হতে হতে ভাবলেন ছেলেটা একদম তার মায়ের মতন হয়েছে, হাসি ছাড়া যেন কোনো কথাই বলতে পারে না।সবাইকে কীভাবে খুশি রাখতে হয় তাও জানে।
বাবা বের হতেই কূজন ড্রেসিংরুমের দিকে পা বাড়ায়। সে অনেক আগেই ফ্রেশ হয়ে গিয়েছে শুধুমাত্র বাবার জন্য আবার বেডে শুয়ে অপেক্ষা করছিলো। ব্লু জিনস্ আর ব্ল্যাক শার্ট পড়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে কালো ফ্রেমের চশমাটা কোথায় রেখেছে মনে করার চেষ্টা করছে। হঠাৎ দেখে চশমাটা রিডিং টেবিলের উপর। চশমাটা চোখে দিয়ে ব্লু স্নিকারস্ পায়ে দিয়ে কিচেনের দিকে যায়। কিচেনে যেয়েই মাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– মা তুমি এত্তোগুলো ভালো এখন তাড়াতাড়ি করো তো বাইরে বের হতে হবে। তুহিনরা অপেক্ষা করছে।
– এই তো বাবা হয়ে গেছে এখনই দিচ্ছি তোমাকে। কয়টায় ফিরবে?
– তুমি যখন বলবে মা।
– এটা কেমন কথা? তুমি এতদিন পর এসেছো বন্ধুদের সাথে যতক্ষণ ইচ্ছা আড্ডা দিবে। আমি কি তোমাকে টাইম বেঁধে দিব নাকি? জাস্ট জিজ্ঞাসা করেছি তোমার জন্য কি লাঞ্চের ব্যবস্থা করবো নাকি একেবারে ডিনারের?
– তোমার আর বাবার সাথেই লাঞ্চ করবো। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে দুপুরেই এসে পড়বো।
– তুমি এতো ভালো কেনো?
– অ্যাওয়ার্ড কোথায়?
– আনবো আনবো।
– কি আনবে?
– একটা মিষ্টি বউ আনবো তোমার জন্য।
– তাহলে তো আমার অবস্হাও বাবার মতো হয়ে যাবে। মিষ্টি বউ এসে ডায়াবেটিকস এর রোগী বানিয়ে দিবে।
– তাই বুঝি?
– তিন সত্যি।
– এই শুনো গাড়ি নিয়ে যেও কিন্তু।
– ওকে মা।
..
কলরব দশ মিনিট ধরে বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছে এখনো ইরিনের আসার নাম গন্ধ নেই। বিরক্ত হয়ে কলরব বাইক থেকে নেমে বাসার দিকে যেতেই ইরিনকে দেখলো গেইট পার করে সে বেরিয়ে এসেছে। কলরব আবার ফিরে বাইকে যেয়ে বসলো। ইরিন পিছনে বসতেই বাইক স্টার্ট দিল কলরব।
– তুই কি কোচিং এ যাচ্ছিস নাকি বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস? এতো সাজা লাগে নাকি??
– কোথায় এত সাজলাম?
– সাজতে সাজতে আমার অফিস টাইমের দেরি করিয়ে দিলি।
– সরি ভাইয়া।
– ওকে ওকে। কিন্তু দরকার কি এত সাজগুজ করার?
– আমি করেছি তো তাই ভালো লাগেনি তোমার। ভাবি সরি কুহু আপু যদি করতো তাহলে তো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে।
– কুহু আবার কখনো সাজে নাকি?
– সাজবে না কেনো?
– আমি তো কখনো দেখিনি।
– তোমার জন্য কি ছাদে সেজে সেজে আসবে নাকি?
– একদিন তো জুতার দোকানেও দেখেছিলাম আবার আরেকদিন ওর কলেজের সামনেও দেখেছি কিন্তু সাজতে তো দেখিনি।
– কুহু আপু তো বোরকা পরে বাইরে যায় সাজবে কেনো?
– বোরকা পরেও মেয়েরা সাজে তো।
– কুহু আপু সেরকম না।
– তো বললি কেনো সে সাজে?
– সাজেই তো আমি দেখেছি।
– তুই কখন দেখলি?
– ঐ যে ভাবিদের ধুর আপুদের বাসায় গিয়েছিলাম না তখন দেখেছি।
– কুহু তো তখন এখানে ছিলই না।
– ছবি দেখেছি পিহু আপুর মোবাইলে। সেই সাজ দেয় তোমার কুহু।
– সত্যি বলছিস??
– আজ্ঞে আমার হবু ভাবির বর।
– ইশ্ আমি কখন দেখবো?
– তুমি তো মনের কথাই বলো না।
– মনের কথা বলার কথা মানে তুই কি আমাকে কুহুর সাথে প্রেম করতে বলছিস?
– অনেকটা তেমনই।
– কুহু জীবনেও প্রেম করবে না।
– বলেই দেখো না। মেয়েরা প্রথম এমন ভাব নেয় কিন্তু পরে নিজেরাই গলে যায়।
– তোর ভাবি সেরকম না।
– আমার ভাইকে বাংলাদেশের কোনো মেয়ে রিজেক্ট করবে বলে আমার মনে হয় না।
– কেনো তোর ভাই কি প্রিন্স হ্যারি?
– না তাহলে তো বলতাম পৃথিবীর কোনো মেয়েই আমার ভাইকে রিজেক্ট করবে না। তা তো বলিনি তবে আমার ভাই মিস্টার ইবনাত কলরব যে কিনা সবকিছুতে এত অলরাউন্ডার তাকে কেনো রিজেক্ট করবে?
কি নেই তোমার? স্কুল কলেজের ফার্স্ট বয় ছিলে। তার উপর বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়ন। দেখতে পুরাই ডার্ক হ্যান্ডসাম। ড্রেসিং চয়েজও সেই লেভেলের। কখনো এক ধাঁচের কিছু পরো তুমি? প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন স্টাইল মারো। আর তোমার সানগ্লাস উফ্। সানগ্লাস পরে যখন বাইকে করে যাও তখন আমার বান্ধবীরা আমাকে বলে,
– উফ্ তোর ভাইটা আরেকটু ছোট হতে পারলো না তাহলে বয়ফ্রেন্ড বানাতে পারতাম।
– এতো পাম্পিং কেনো? কিছু লাগবে??
– হুম ভাবি লাগবে।
– ভাবছি বাবাকে বলেই দেই কুহুর কথা।
– তাড়াতাড়ি বলো।
– বিসিএস টা হোক তারপর বাবাকে পাঠাবো কুহুর বাবার কাছে।
– একটুর জন্য মিস হয়ে গেল তোমার,ভাইবাতে যেয়ে বাদ পড়ে গেলে।
– প্রথমবার ভাইবা পর্যন্ত গিয়েছি এটাই কয়জন পারে?
– বিসিএস এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে কেনো? তুমি তো আর বেকার না ভালোই চাকরি করছো। সেলারি ও ভালো পাও।
– হ্যা চাইলে এখনো পাঠানো যায় বিয়ের প্রস্তাব।
– তুমি বলতে না পারলে বাবাকে আমি বলি?
– আরে না বাবা তো বন্ধুর মতো বাবাকে আমিই বলবো।
– তাড়াতাড়ি করো কিন্তু।
– এখন আপনি নামুন আমরা এসে পড়েছি।
– বাই ভাইয়া।
– লক্ষী বোন।
– লক্ষী ভাবির বর।
– ইশ্ ঘায়েল করে দিলি।
..
কলেজ থেকে ফিরেই কুহু যে ঘুম দিয়েছে উঠেছে একদম বিকেলের দিকে। পাঁচটার সময় লাঞ্চ সেরেই ছাদে চলে এসেছে কুহু। আকাশে কিছুটা মেঘ করেছে দেখতে ভালোই লাগছে। কুহু ভাবলো যেহেতু আজ রবিবার নিশ্চয় কলরব আসবে না তাই সে বেশ ফূর্তিতে কিছুক্ষণ ছাদে থেকে তারপর কাপড় নিয়ে নীচে চলে যাবে। হঠাৎ কুহুর মনে হলো গতকাল তো শনিবার ছিল শুক্র শনিতে তো কলরব বিকেলে ছাদেই থাকে তাহলে গতকাল কেনো আসেনি? কুহু সেদিন যে শক্ত করে কথা বলেছিল তাই রাগ করেছে কি? পরক্ষণেই কুহুর মনে হলো ভালোই হয়েছে আসেনি। কুহু তাহলে বেঁচে গিয়েছে।
চলবে…