একটুখানি পর্ব :৫

0
980

একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব :৫
কলরব বেশ কিছুকক্ষণ ধরে আতর খুঁজছে কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না। অবশেষে বিরক্ত হয়ে মাকে ডাকলো,
– মা! মা!
– কি হলো ডাকছিস কেনো?
– শুনো না আতর কোথায় রেখেছি খুঁজে পাচ্ছি না। একটা না দুটা না তিন তিনটা আতরের বোতল এভাবে গায়েব হয়ে গেল কীভাবে।
– আমার কাছে।
– মা তাড়াতাড়ি দাও তো।
– গায়েব করেছি কি তাড়াতাড়ি দেওয়ার জন্য নাকি?
– মা তুমি আবার শুরু করলে?
কলরবের মা শাড়ির আঁচল নাড়াতে নাড়াতে বললেন,
– ছাদে আয় তো একটু আমার সাথে।
– এই রোদের ভিতর? ওহো মা তুমি কি চাও তোমার এই হ্যান্ডসাম ছেলেটা ভর দুপুরে ছাদে উঠে পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাক?
– তুই কি চাস তোর জুম্মার নামাজের দেরি করতে?
– ওকে মাই লর্ড আসছি।
কলরব প্রায় দশ মিনিট ধরে তার মায়ের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তার মা বেশ সুন্দর করে দাঁড়িয়ে গুণগুণ করে গান গাইছে,
“আমার স্বপ্ন যে সত্যি হলো আজ”
কলরব রোদ ঢাকার জন্যে তার মায়ের আঁচল মাথার উপর ধরে রেখেছে। কলরব আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরও যখন দেখছে তার মায়ের গুণগুণ করা বন্ধই হচ্ছে না তখন বললো,
– মা বাবা তো নীচেই আছে ডেকে দিব?
– কেনো?
– তোমার তো গান শোনাতে ইচ্ছা করছে তাই ডাকবো?
– না।
– মা আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।
– “মেরে সামনেবালী খিড়কি মে এক চান্দকা টুকরা রেহতা হে..”
– মা আমি আসছি।
কলরব চলে যেতে পা বাড়ালেই কলরবের মা বলে,
– কয়দিন ধরে প্রেম করছিস?
– প্রেম আর আমি?
– না আমি।
– হ্যা তুমিই তো এখনো বাবার সাথে প্রেম করো।
– হ্যা তা তো করি তবে তোর বাবা বেশ সাহসী প্রেমিক তোর মতো ঐ
আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি
আর মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থেকেছি টাইপের প্রেমিক না।
সে হলো যাব পিয়ার কি তো ডারনা কিয়া টাইপের হিরো।
– আর তুমি হলে ড্রামা কুইন।
আমি আসছি মা।
– হুম নামাজ থেকে ফিরলে তোর সাথে কথা বলবো।
কলরব চলে যেতেই কলরবের মা আবার গুণগুণ করতে করতে বাসায় ফিরে এলেন। তিনি বেশ ভালো করেই জানেন কলরব এই বাড়িতে আসার পর থেকেই ছাদে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ের সাথে কথা বলে। তিনি বেশ কয়েকদিন দূর থেকে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করেছেন এমনকি একদিন টাঙ্কির পিছনের দাঁড়িয়ে থেকে তাদের কথপোকথন শুনেছেনও। মেয়েটা কোনো কথায় বলেনি উনার ছেলের সাথে বরং মেয়েটাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিল মেয়েটা বেশ ইতস্ত বোধ করছিল। আর কলরবও তেমন কোনো কথাই বলেনি শুধু বাস্কেটবল টা ছুঁড়ে ফেলে মেয়েটাকে ডেকে বলেছে সেটা দেয়ার জন্য। আবার আপনি বলে সম্বোধন করেছে।কলরবের মা প্রথমে ব্যাপারটা হালকা ভাবে নিয়েছেন তবে এখন মনে হচ্ছে কলরব মেয়েটাকে পছন্দ করে।
..
কূজন মসজিদ থেকে ফিরেই নিজের বেডরুমে যেয়ে নিজের লাগেজ গুছাতে শুরু করে। লাগেজ গুছানো শেষেই লাঞ্চ করার জন্য ডাইনিংরুমে যেতেই হাসানাদ
সাহেব বলে উঠেন,
– কিসে যাবে কূজন?
– বাবা ট্রেনে করে যাব।
– কেনো ড্রাইভারকে বলি গাড়ি বের করতে।
– না বাবা ট্রেন জার্নিটা জাস্ট দারুণ লেগেছে আমার।
– তুমি আবার ট্রেনে আসলে কখন?
– এবার ট্রেনেই এসেছি।
– ওহ্।
– এসি তে যাবে তো?
– হুম।
– আসার সময় কীভাবে এসেছো?
– না এসিতে আসতে পারিনি আসলে কোনো প্লেন ছিল ট্রেনে আসার হঠাৎ ইচ্ছা হলো তাই চলে এলাম। টিকিট আবার ব্ল্যাকে কেটেছি।
– তোমার জানালার পাশের সিট পেয়েছিলে?
– না বাবা তবে একটা মেয়ে হেল্প করেছিল।
– তা তুমি তার জন্য কি করলে?
– ট্রেন থেকে নেমে একটা বই কিনে গিফ্ট করেছি।
– ভালো করেছো। মেয়েরা তো জানালার পাশের সিটে বসার জন্য যানবাহনে পেট্রোল বোমাও ছুঁড়তে পারে সেখানে সে তোমাকে নিজে সিট ছেড়ে বসতে দিয়েছে।
– হুম বেশ ভালো লেগেছে মেয়েটাকে।
– নাম জানো?
– হুম কুহু।
– বাড়ি কোথায়?
– ফেণী।
– কিসে পড়ে?
– জানি না।
– কেনো জানো না? জানা উচিত ছিল তোমার।
– ওহো বাবা তুমিও না।
– কেনো তুমি নিজেই তো বললে মেয়েটাকে তোমার বেশ ভালো লেগেছে।
– আমি সেভাবে ভালো লাগার কথা বলিনি।
– তাহলে?
– বলতে চেয়েছি মেয়েটা অনেক হেল্পফুল।
– ওহ্। আচ্ছা কাউকে ভালো লাগলে বলবে আমাকে। আমাকে বলতে না চাইলে তোমার মাকে বলবে।
– ঠিক আছে।
– হ্যারে কূজন মেয়েটা দেখতে কেমন ছিল?
– মা আমি তেমন একটা খেয়াল করিনি তবে বেশি সুন্দরী না আবার খারাপও না।
– ওহ্।
..
কলরবের কথা ছিল নামাজ শেষে বাসায় ফেরার কিন্তু সে ফিরছে রাত এগারোটায়। তাও চুপিসারে কারণ জানে মা আবার তাকে জেরা করা শুরু করে দিবে।কলরব বেডরুমে ঢুকেই গায়ের পাঞ্জাবীটা খুলে একটা টি- শার্ট পরে নেয়। জিনস্ প্যাণ্টটাও চেঞ্জ করে ট্রাউজার পরে ফেলতে মন চাইছে কিন্তু চেঞ্জ না করেই শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করতেই কুহুর চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো আর মনে পড়ে গেলো কুহুকে প্রথম দেখার দিনটা।
বাসার সব ফার্ণিচার সেট করে রাখার পর হঠাৎ বাস্কেটবলটা নজরে পড়েছিল তার। কলেজের পর আর তেমন একটা বাস্কেটবলের দিকে পড়াশুনার চাপে নজর দিতে পারেনি কলরব। এডমিশন তারপর ভার্সিটির পড়াশুনা সাথে টিউশনি সব মিলিয়ে তেমন একটা ধরা হয়নি প্রিয় বাস্কেটবলটাকে। হঠাৎ চোখে পড়ায় সেদিন কলরব বাস্কেটবলটা নিয়ে ছাদে চলে গিয়েছিল। অনেকদিন ধরে খেলা হয়না দেখে প্র্যাক্টিস করতে করতে হঠাৎ বলটা পাশের ছাদে চলে যায়। সেখানে তাকাতেই দেখে কুহু কাপড় হাতে দাঁড়িয়ে। কুহুকে বলটা পাস করতে বলাতে যখন কুহু কাঁপা হাতে বলটা কলরবদের ছাদে দিল কলরবের খুব হাসি পেয়েছিল। তারপরো হাসিটা চেপে বলেছিল কুহুকে বল পাস করা শিখাবে। কলরব এই একটা কাজ করতে খুব ভালোবাসে। কাউকে কিছু শিখানো সেটা হোক পড়াশুনা আর হোক না অন্য কেনো অন্যকিছু সে বেশ খুশি মনেই সেটা করে।
তাই সে কলেজে পড়ার সময় থেকেই স্টুডেন্ট পড়ায়। এখন অবশ্য পড়ায় না কিছুূদিন হলো বাদ দিয়ে দিয়েছে। কুহুকে যে সে প্রথম দেখায় পছন্দ করেছিল ঠিক তা নয়। সে এমনিতেই জাস্ট বল পাস করাটা শিখানোর জন্য এমন করতো। কলরবের বাবা মা দুজনই স্কুল শিক্ষক হয়তো তাদের সাথে থেকে থেকেই শিক্ষক শিক্ষক একটা ভাব এসে পড়েছে তার মাঝে। কুহুকে যে সে ভালোবেসে ফেলেছে সেটা সে বুঝেছে কুহুকে এই বারোদিন ছাদে দেখতে না পেয়ে। আসলে বারো দিন না চার দিন কারণ সে তো শুধু শুক্রবার ও শনিবারেই ফ্রি থাকে আর তখনই ছাদে যায়। প্রচন্ড রকমের মিস করা শুরু করেছিল যখন শুক্রবারের পরও শনিবারে কুহুর দেখা পায়নি সে। তখন সে বুঝেছিল সে আসলে কুহুকে বল পাসিং শিখাতে শিখাতে মন, দিল, জান,প্রাণ, হৃদয় সব পাস করে দিয়ে দিয়েছে। বুঝতে পেরেই কলরব আরো অস্হির হয়ে পড়ে কুহুর জন্য আর তাই ইরিনকে পাঠায়। কলরবের বেশ হাসি পাচ্ছে যে সে এতো দেরি করে বুঝেছে যে কুহুকে তার এতোটাই পছন্দ। অন্তত যখন মুখ দিয়ে না চাইতেও ফুলটুশী কথাটা বের হয়ে গিয়েছিল তখনই বোঝার দরকার ছিল। কলরব কথাগুলো ভাবতে ভাবতে একটু জোরেই হেসে ফেলেছে আর সাথে সাথে রোমের লাইট জ্বলে উঠে। কলরব চোখ খোলে তাকিয়ে দেখে তার মা এসেছে। কলরব উঠে বসতেই কলরবের মা বলে,
– পালিয়ে আর কোথায় যাবি? তোর আর তোর বাবার ঘুরে আবার আমার কাছেই আসতে হয়।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here