একটুখানি পর্ব :৬

0
969

একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব: ৬
কলরবের মা ছেলের বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে ছেলের কান ধরে বললেন,
– মিথ্যে বলেছিস কেনো আমার কাছে?
– আহ্ মা ছাড়ো না।
– কান টেনে ছিঁড়ে ফেলবো।
– আরে কোনো মিথ্যে বলিনি মা।
– আবার মিথ্যে।
– না আমি মিথ্যা না সত্যি বলছি কুহুর সাথে আমার তেমন কিছুই নেই।
– না হলে ছাদে কি করিস? প্রেম করা হচ্ছে ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে? তুই কি হাই স্কুলে পড়ুয়া ছেলে?
– মা প্রেম করি না তো শুধু ওকে ভালো লাগে।
– তো বলিস না কেনো?
– এমনি তে বলিনি।
কলরবের মা কলরবের কান ছেড়ে বিছানায় বসলেন সাথে সাথে কলরব লম্বা হয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে শোয়ে পড়লো। কলরবের মা হাসতে হাসতে বললেন,
– পুরো দস্তুর ছয় ফিটের ছেলে আমার একটা মেয়েকে মনের কথা বলতে ভয় পায় কেনো?
– ভয় পাবো কেনো?
– অবশ্যই পাস নয়তো ছয়মাস মুখে কুলুপ এঁটে থাকতি না। তোর বাবা যখন আমাকে দেখতে এসেছিল তখন তোর নানা বিয়ে দিতে চাইনি। অল্প বেতনের মাস্টারের কাছে কেই বা মেয়ে বিয়ে দিতে চাইবে? তোর দাদাকে যখন আব্বা না করে দিয়েছিলেন তখন তোর বাবা চলে আসার সময় আমার আব্বাকে বলে এসেছিল যদি আমাকে না পায় তাহলে আর কাউকে কোনোদিন বিয়ে করবে না। আর তুই সেই বাবার ছেলে হয়ে ছয় মাস ধরে বল খেলেছিস। লজ্জাজনক!
– মা মজা নিচ্ছো?
– বলিসনি কেনো কুহুকে?
– আমি নিজেও তো আগে বুঝিনি কুহুকে কয়েকদিন না দেখে বুঝতে পেরেছি কুহু আমি ভালোবাসি।
– এখন বলছিস না কেনো?
– মা কুহু তো বোঝে কিন্তু তার দিক থেকে তো কোনো সাড়া পাইনা।
– হয়তো সেও বোঝেনাআর বোঝলেও সে কি এসে তোকে সেধে সেধে এসে বলবে নাকি?
– তাই যেন হয়।
– আচ্ছা তোর বাবাকে কি পাঠাবো কুহুর বাবার কাছে?
– না মা পাঠানোর দরকার নেই।
– আমি শিউর উনি মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যাবেন।
– তাইতো না করছি কারণ এতে কুহু বাধ্য হয়ে আমাকে বিয়ে করবে নিজ ইচ্ছায় করবে না।
– আপনার কি তাহলে প্রেম করার শখ হয়েছে? এসব প্রেম করার ইচ্ছা আাদ দিতে হবে।
– না মা আমি তো জাস্ট এইটুকু চাই যে কুহু আগে আমাকে কাছ থেকে দেখুক চিনুক তারপর তুমি নাহয় ওর বাসায় যেও।
– ঠিক আছে আপনার কাজ হয়ে যাবে জাঁহাপনা।
– এখন আসতে পারো।
– জো হুকুম মেরি আকা।
কলরব আর তার মা দুজনই হেসে দিল একসাথে।
..
কুহু ছাদে এসে কলরবকে দেখেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কেনো ফেলে সে নিজেও বুঝতে পারে না। কেনো যেন মনে হচ্ছে কুহু কলরবের জন্যই ছাদে এসেছে। কথাটা ভাবতেই কুহু মুখে একরাশ বিরক্তি ফুটিয়ে চলে যেতে নেয় তখনই কলরব বললো,
– কাপড় না নিয়েই যে চলে যাচ্ছো?
কুহু কি বলবে ভেবে না পেয়ে
চুপচাপ কাপড় নামাতে থাকে। কলরব আবার বললো,
– আচ্ছা আমি কি তোমার নাম জানতে পারি?
কুহু বিরক্তি নিয়ে কলরবের দিকে তাকাতেই কলরবের নজরে পড়ে কুহুর জোড়া ভ্রুগুলো। কলরবের খুব ইচ্ছে করছে কুহুকে বলতে তার ভ্রু গুলো খুব সুন্দর তবে ইচ্ছেটা দমিয়ে রেখে সে আবার বললো,
– এই শনিবারে অফিস থেকে টু্রে গিয়েছিলাম তো তাই আসতে পারিনি।
কুহুর মনে হচ্ছে যে কলরব কাজটা ইচ্ছে করে করেছে কারণ ছেলেরা একটা ট্রিক খুব ভালো করে মেয়েদের উপর এপ্লাই করে। কিছুদিন পিছন পিছন ঘুরে তারপর কয়েকদিন আর দেখা দেয় না এতে করে মেয়েটা ছেলেটাকে মিস করতে শুরু করে দেয় আর ছেলেটা সেটা ভালবাসা বলে চালিয়ে নেয়।
আর কলরবও কুহুর সাথে এমন কাজটাই করেছে আর সে গলেও যাচ্ছে।কথাটা ভাবতেই কুহু তাড়াতাড়ি করে ছাদ থেকে নেমে চলে আসে। কুহু আজ এতোটাই ভাবনায় মগ্ন ছিল সে খেয়ালই করেনি কলরব আজ খালি হাতে ছাদে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো।
কুহু বাসায় যেতেই দেখে একজন মহিলা বসে সার মায়ের সাথে কথা বলছে। পিহু মায়ের পাশেই বসে আছে। কুহুকে দেখে পিহু চোখের ইশারায় ঐ মহিলার পাশে বসে থাকা মেয়েটাকে দেখায়। কুহু বুঝতে পারে কলরবের মা আর বোনন এসেছে। কুহু কলরবের মাকে সালাম দিয়ে হাসি মুখে কেমন আছে জিজ্ঞাসা করেই নিজের রোমে চলে যায়। পিহু হলে জীবনেও হাসি মুখে কথা বলতো না এমনকি কুহু শিউর কলরবের মা যদি পিহুকে কিছু জিজ্ঞাসা করে পিহু শুধু সে প্রশ্নের জবাবই দিবে নিজ থেকে ভাল আছে কিনা জিজ্ঞাসা করা তো দূরের কথা। কুহু আবার মেহমানদের সাথে খুব সাবলীলভাবে হাসি মুখে কথা বলে। কুহু অজানা অচেনা একটা মানুষের সাথে দীর্ঘক্ষণ ধরে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারে। এই একটা গুণ সে খুব ভালো করে রপ্ত করেছে। কুহু ঘরে বসে বসে ভাবছে কলরবের মা কেনো এসেছে এখানে? কলরব আর কুহুর বিষয়ে কথা বলতে তো নয়?
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here